চিরবন্ধু পর্ব-০৫

0
78

চিরবন্ধু ৫

দায়িত্ব আর কর্তব্যের মধ্যে নিহিত থাকা স্বামী-স্ত্রীর চাইতে পরস্ত্রী হতে একজন চমৎকার প্রেমিকা হয়ে উঠা, পরস্বামী হতে একজন যত্নবান প্রেমিক হওয়ার পথটা ভীষণ সহজ ছিল তাদের জন্য। মাইলের পর মাইল দূরত্ব তাদের সেই সুযোগটা করে দিয়েছিল। দুরুদুরু বক্ষে তাসনিয়া ছেলেমেয়েদের রেখে রাঙামাটির সেই বাড়িটাতে ছুটে এসেছিল গোফরানের অসুস্থতার কথা শুনে, অথচ লোকটা তাকে কি সুনিপুণভাবে বোকা বানিয়ে একা একা হেসে গেল!
নিজের ভেতরকার সমস্ত দ্বন্দ্ব, হাজারো প্রশ্নের উত্তর সেদিন গোফরান পেয়ে গিয়েছিলো তাসনিয়ার অশ্রু টলমল করা অক্ষিকোটরে। অন্তরের ভাষা যেন চোখের পানির প্রত্যেকটা ফোঁটায় ফোঁটায় লেখা ছিল! এটাই সত্যি যে, গোফরান সিদ্দিকীর জীবনে এমন সুন্দর মুহূর্ত কভু আসেনি। স্বচক্ষে এত নিকট হতে এমন দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য তার হবে কে ভেবেছিল! অথচ মানুষ ভাবে জীবন তাকে কি চরমভাবে ঠকিয়ে দিয়ে গেল! একজন সেনা কর্মকর্তার সাথেও ডাঁট বজায় রেখে চলা গোমড়ামুখো পরস্ত্রীর কাছেই যে তার জীবনের নিভে যাওয়া প্রদীপের শিখা আবারও জ্বলবে গোফরান কি তা কভু ভেবেছিল? ভাবেনি। অথচ তার ভাবনার দোলাচলে দোল দোল খেতে জীবনে বসন্ত চলে এল। সেই বসন্ত আবার প্রকৃতির নিয়মে চলা চিরায়ত বসন্ত নয়। ভালোবাসা খাঁটি হলে চৈত্র মাসের খাঁ খাঁ রৌদ্রমাখা দুপুরটাও বসন্তের মতো মনে হয়, প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমে প্রিয় মানুষীর শাড়ির আঁচলের হাওয়া মনে হয় বসন্তের দখিনা বাতাস, দোলখাওয়া কাপড়ের রশিতে বসে বিশ্রীসুরে ডেকে যাওয়া কাকের খাঁ খাঁ ডাক শুনেও মনে হয় যেন কোকিল ডেকেছে পাছে! ভালোবাসা ভীষণ অন্ধ। ভুল মানুষের সাথে হলে তুমি নিঃশেষ, আর সঠিক মানুষ, সে তো অন্ধের যষ্টি।
মুঠোফোনের আলাপে দুজন দুজনের দুএকটা খোঁজ নেয়া মানেই প্রেম নয়। প্রেম! সে তো চিরসত্য, কঠিন, দুর্লভ অথচ কি ভীষণ স্নিগ্ধ! খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি তার ভালোমন্দ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া, খোঁজ না পেলে বিচলিত হওয়া, তার কন্ঠ শোনার অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে থাকা, আকুল হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার প্রতিটি কথা শ্রবণ করা, তার কঠোর কথায় কষ্ট পাওয়া, মজার কথায় হেসে উঠা, তার অল্প এড়িয়ে যাওয়া দেখে নিদারুণ মনোকষ্টে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া, আত্মিক কোনো বন্ধন নেই অথচ তাকে দেখতে না পাওয়া কিংবা হারিয়ে ফেলার যে অদ্ভুত একটা ভয়, বেলাশেষে তাকে ভেবে বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটের কোণায় হাসিটানা, চোখ বুঁজার আগে একটিবার তার মুখখানা কল্পনা করে নেয়ার নামকে প্রেম বললেও কম পড়ে যায়। অথচ কেউ কেউ প্রেম বলতে দুটি বর্ণমালাকে চেনে।

সুনসান একটা বাড়িতে সে একা আছে তাই কর্মস্থল থেকে বরাবরের মতো খুব দ্রুতই বাড়ি ফিরে এসেছে গোফরান। তাসনিয়ার দিন কেটেছে ফোনকলটা কানে লাগিয়ে। মিনি আর জুবরান বাড়ির সবার সাথে কেমন আছে তা নিয়ে সর্বক্ষণ চিন্তামগ্ন ছিল তাসনিয়া। বাবার সাথেও অনেক কথাবার্তা হলো। রান্নাঘরের কাজকর্ম শেষ করে এক মগ কফি নিয়ে বারান্দায় এসে বসেছিল একটা বই নিয়ে। কয়েকবছর আগের তাসনিয়া হলে সে ভীষণ ভয় পেত একা থাকতে। কিন্তু এখন ভয় পায় না সে। তবে বন্য পশুপাখির হাঁকডাক ভেসে এলে তখন অন্যকথা। দরজা খুলে দেয়ামাত্রই সামরিক ইউনিফর্ম পরিহিত গোফরান সিদ্দিকীকে দেখে একচোট হাসলো সে। হাসিটা ফিরিয়ে না দিয়ে তিনি চেয়ে রইলেন নির্বিকার।
প্রেমিকারা সন্ধ্যায় নাকি শাড়ি পড়ে? অথচ তাসনিয়ার গায়ে দোল খাচ্ছে একটা থ্রিপিস। সোজা সিঁথির দুপাশে কোঁকড়াচুলের বাহার, মুখে এক টুকরো হাসি, তাতে প্রেমিকার মতো সলজ্জ হাসি নেই। তারপরও সে গোফরানের একজন দুর্দান্ত চঞ্চলা প্রেমিকা। জিভ এঁটে থাকা মিনির মা হয়ে উঠা মহিলাটি যেন হুট করে হয়ে উঠা ভীষণ বাচালতা। গোফরান পা বাড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করতে যেতেই মুখের উপর ফটাফট বলে বসলো,
– পরিমিত ডিস্টেন্স কমাতে চাইলে আপনার কড়কড়ে গালটাতে একটা সুপার ডুপার শেভিং ক্রিম লাগিয়ে নিয়ে রেজার চালান অতিদ্রুত।
বলেই অর্ধ খাওয়া কপির মগটা গোফরানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। ওই ঠান্ডা হয়ে আসা কফির মগে একটা চুমুক ভীষণ বিদঘুটে বটে তবে স্বাস্থ্যের পক্ষে মন্দ নয়।
গোসল সেরে আসতেই গরম খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে গেল। গাম্ভীর্য আলাপের মধ্যে দিয়ে সূক্ষ্ম খোঁচার আঘাত দিতে সে ভুললো না। এই আঘাত অতি আনন্দের। এতে রক্ত ঝড়েনা, ঝড়ে ফুল। ছড়ায় শুভ্র ধৌত ভালোবাসার সুবাস।
– বাড়ি কবে ফিরবো?
গোফরান চোখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ভয় করছে?
– করছে বললে মিথ্যে বলা হবে। না অতটাও না। কিন্তু…
– আরও এক সপ্তাহ থাকতে হবে।
হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো তাসনিয়া।
– আরও এক সপ্তাহ! যদি ফিরে এসে দেখেন আমি নিখোঁজ তখন?
– আমিও নিখোঁজ হবো।
– মানেটা কি?
– আমি নিখোঁজ হলে আপনি ফিরে আসবেন তাই। আপনি ফিরে এলে আমিও ফিরে আসবো।
– বড্ড চালাক।
গোফরান গর্বিত হাসলো। তাসনিয়া বলল,
– কিন্তু যদি অনিচ্ছা স্বত্তেও নিখোঁজ হই?
– এনাফ তানজিম। একটা মানুষ আর কত হারাবে!
তাসনিয়া হেসে উঠলো। এই তো রেগে গেল।
– হাসার কিছু বললাম?
– না। কিন্তু আপনার চেহারা দেখে আমার বড্ড হাসি পাচ্ছে। রেজার দ্রুত চালানোর কারণে কেটে যা-তা হয়েছে দেখছি।
– সেরে যাবে।
– তা তো যাবেই। কিন্তু আমার কথা শোনার কারণ কি? আমি আমার বেপরোয়া প্রেমিকের খোঁজে ছুটে এসেছি। সো পরিমিত ডিস্টেন্স কমালে পাপ হবে না?
গোফরান জবাবটা খাওয়াদাওয়া শেষ করার পর দিয়েছিল যখন সে গোফরানের দেয়া পছন্দের নীল শাড়িটা পড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আঁচল উড়াচ্ছিলো বন্য হাওয়ার তালে তালে।
দুজন স্বচ্ছ প্রেমিক আর প্রেমিকার প্রেম যেমন হয়, যতটুকু হয় ঠিক ততটুকুই ছিল তার উত্তর। দূর থেকে দুটো হৃদয় একে অপরকে গভীরভাবে জানাশোনার পর কাছ থেকে আরও একবার জানাশোনা, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খতিয়ে নেয়া, অনুযোগের সুরে অভিযোগের সমাপ্তি, অনেক কথা, গল্প, ব্যাথা, হাজারো ক্ষতের উপশম হিসেবে দুটো হৃদয়ের ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন, সোডিয়ামের আবছা আলোয় মনের মতো করে গভীর পর্যবেক্ষণে এই প্রথম দুটো মুখ একে অপরকে কাছ থেকে দেখে প্রতিটি লোমকূপ অব্দি পড়ে নেয়া, চোখ, নাক, ঠোঁট প্রতিটির কোণায় কোণায় রোপন করা ভালোবাসার মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ। তাসনিয়া আচমকা অট্টহাসিতে ফেটে পড়তেই গোফরান অবাক কন্ঠে শুধালো,
– হঠাৎ কি হলো?
তাসনিয়া হাসতেই থাকলো। তার বাহুদ্বারা তখনো গোফরানের কন্ঠ বন্দী। আর গোফরানের বাহুতে সে। তার হাসি থামছেনা দেখে গোফরান চেয়েই রইলো। তাসনিয়া তার কড়কড়ে গালের দুপাশে আলতো করে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
– কোনো প্রেমিক তার প্রাক্তনের গল্প বর্তমান প্রেমিকাকে বলে?
– বলে। কারণ আপনি আমার স্ত্রীও।
– স্ত্রী কবে হলাম?
– আমাদের বিয়ে হলো না?
– ওটা নয়। মনেরও তো বিয়েশাদি দরকার।
– সমস্যা নেই। কাল ছুটি। দু’জন বসে মালা গাঁথবো। তারপর মালা বদল শেষে বিয়ে করে নেব।
তাসনিয়া জোরে হেসে উঠলো। সে পাগলামি করে, আর এই কর্নেল তাতে সায় দেয়। তার হাসি থামে না। মনে পড়েনা কবে এমন হেসেছে! জুবরান যদি দেখতো হয়ত বাবার প্রতি তার সম্মান আরও বেড়ে যেত এই ভেবে শুধু তার জীবনে নয় মায়ের জীবনেও সুপারম্যান হয়ে এসেছেন তিনি।
– আপনি হাসতে ভালোবাসেন?
তাসনিয়া আবারও হাসলো। রেজারের হালকা চাপে কেটে যাওয়া অংশে আঙুল বুলিয়ে গালটা টেনে দিতে দিতে বলল,
– হ্যা। হাসতে তো টাকা লাগে না। এমন একটা মানুষ লাগে। আপনিও হাসুন। আপনি হাসতে ভালোবাসেন না?
গোফরান হাসে। ঝুঁকে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে মনে মনে আওড়ায়,
– আপনি হাসতে ভালোবাসেন আর আমি হাসতে থাকা আপনাকে।

অতঃপর মালা গাঁথা শেষে দুই মনের কারচুপি বিয়েও সম্পন্ন হলো পরের দিন। হাতাহাতি করে হাসিখুশি দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটির মধ্যে দিয়ে রান্নাবান্না খাওয়াদাওয়া শেষে নতুন দম্পতি দিনের শেষভাগে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে যখন একে অপরকে অনুভবে ব্যস্ত ছিল ঠিক তখনি আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি বর্ষণ হলো তাদের সমস্ত অন্ধকার অতীত ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়ার জন্য। ওভাবেই চাঁদটা ডুবে গেল, নীল আকাশটা হারিয়ে গেল, ঝমঝম শব্দ ভারী হলো, ঝড়ো ঝাপটায় দুই দেহ ক্রমশ হালকাপাতলা ভিজে উঠলো কিন্তু অনুভবের প্রহর এক জায়গায় থেমে রইলো। দুজন একে অপরের সাথে আকন্ঠ ডুবে থাকার পর মনে হলো তারা একে অপরের কাছে অসম্পূর্ণ উপন্যাসের শেষ ছিঁড়ে যাওয়া পাতাটি। যেটি খুঁজে পেতে বহু ভুল মানুষের সাথে আলাপ ঘটেছে তাদের। কেন এমন হলো ভেবে শেষ অশ্রু বিসর্জন দেয়া তাসনিয়ার চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলটুকু গোফরানের বুকে পরম উষ্ণতা ঢেলে দিয়েছিল তখন।
তার নগ্ন পিঠের কালশিটে দাগগুলি চোখে পড়ায় আচমকা চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছিলো গোফরানের।
– প্লিজ আর নয় তানজিম। যে পিঠের কালশিটে দাগের কারণ তার আঘাতের জায়গা মনে দেয়া উচিত নয়। আর যে একসাথে মনকেও আঘাত করেছে তার জায়গা পায়ের নীচেও দেয়া উচিত না। আমি আর কাঁদতে দেখতে চাই না তোমাকে। প্লিজ স্টপ।
কথাগুলো তাসনিয়ার কান্নার বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ঝড়ের বেগের মতো। গোফরান তার কাঁপুনি দিতে থাকা শরীরটা নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে বলল,
– খুব রুক্ষভাবে বলার জন্য সরি। তবে হ্যা আমি এটাই করেছি। আমার মনকে যে বিষিয়ে দিয়েছে আমি তাকে আমার পায়ের নীচেও জায়গা দিইনি।
তাসনিয়া মুখ তুলে তার দিকে অনিমেষ চেয়ে থেকে ভাবলো,
– তাকে ঘৃণা করতে হবে, বাঁচতে হলে তাকে ভুলতে হবে এটা তো সে ভুল করেও ভাবেনি। এমন সুন্দর মুহূর্তও তো তার সাথেও কেটেছে। তখন তার তিক্ত অতীত ছিল না। হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল সে ভালোবাসার লাল নীল সাগরে ডুবে ছিল অহর্নিশ। অন্য একটা পুরুষের বাহুডোরে সে থাকবে এমন তো কথা ছিল না। তারপরও এমন হলো। কোনো দোষ না করেও তাকে প্রতিটা পদে পদে প্রতারিত হতে হয়েছে। তার অবুঝ ছেলেটাকেও ফেলে মানুষটা চলে গিয়েছে তাকে অথৈ সমুদ্রের মাঝপথে নামিয়ে দিয়ে। আবারও যদি এমন কিছু হয়! এবার বাঁচা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাকে বাঁচতে হবে ছেলেটার জন্য। নিজের রক্ত না হয়েও যে নিজের অংশ হয়ে উঠেছে সেই মেয়েটির জন্য। আর ভাঙতে পারবে না সে।
ধীরেধীরে নিজেকে বন্ধনমুক্ত করে, হঠাৎ ঝড়ের মুখে পড়ে আশ্রয় নেয়া বুকের মধ্যে থেকে সরে
“সরি! আই থিংক উই শুড টেক মোর টাইম” বলে নিজেকে বহুদূরে সরিয়ে নেয়ার পর গোফরানেরও মনে হলো “শী ইজ রাইট। যার তার মতোই পুরুষ মানুষকে ঘিরে একটা বিষাক্ত অভিজ্ঞতা আছে তার সহজেই কাউকে বিশ্বাস করে ফেলার কথা নয়।
কিন্তু সে করেছে। সে নিজেও প্রতারিত হয়েছে অমনই একটা মহিলার কাছে। কিন্তু তানজিমের মতো মানুষকে চিনতে তার ভুল হয়নি। আজ না হোক কাল তানজিমও তাকে চিনতে পারবে। তারা দুজনেই ঘর করতে চেয়েছিলো! আগেও এখনও।

তারপরের দিন সন্ধ্যায় বারান্দার চেয়ারে বসে গোফরানের জন্য অপেক্ষা করছিলো তাসনিয়া। সম্পর্কটা যে গতিতে গড়ে উঠেছিল আচমকা সেই গতিতে আবারও হালকা হয়ে এসেছে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে। আজ একটা শক্তপোক্ত সরি বলে নেবে সে। নিজেকে দূরে সরিয়েছে ঠিক কিন্তু মাঝরাত্রিরে ঘুম ভাঙার পর নিজেকে ঠিক ওই বক্ষঃস্থলে আবিষ্কার করেছে সে। টিফিনবাক্সটা নিয়ে তার দিকে চেয়ে ম্লানমুখে
“এখানে এনে বিপাকে ফেলার জন্য সরি”
বলে চলে যাওয়ার সময় তাসনিয়ার হঠাৎ করে মনটা কেমন করে উঠেছিলো। কালকের পর থেকে উনি নিজেই তার সাথে কথা বলতে জড়িমায় ভুগছেন। আর এখন তার খারাপ লাগছে। মনুষ্যজাতি এমনই। ভালোর কদর করতে জানে না। অথচ তিনি কোনো সীমা লঙ্ঘন করেননি, এমন কিছুও চেয়ে বসেনি তার কাছে। নিজের ব্যবহারের জন্য নিজেরই লজ্জা হচ্ছে তার।
জিপ গাড়ির শব্দ পেয়ে দ্রুত নীচে নেমে এসে দরজা খুলতেই সে দেখলো জুবরান আর মিনি মা মা ডেকে ছুটে আসছে। তাসনিয়া তাদের দেখে খুশি হয়ে গেল। গোফরানের সাথে কথা বলতে বলতে ফিজা আসছে। কাছে আসতেই ফিজা তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– ওরা একটুও দুষ্টুমি করছিলো না। ভাইয়া নিয়ে আসতে বললো তাই আনলাম।
তাসনিয়া জুবরান আর মিনিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– মনে হচ্ছে কতদিন দেখিনি।
দুজনেই মায়ের গালে চুমু খেল। মিনি বলল,
– মা জানো স্কুলে জুবরানের একটা নতুন বন্ধু হয়েছে।
– কেমন বন্ধু?
– খুব ভালো। জুবরানকে বলেছে ও আমারও বন্ধু হতে চায়।
– তাই? তাহলে তো বেশ ভালো।
জুবরান বলল,
– মা ও স্কুলে সবার সাথে ঝগড়া করে। চুল টেনে দেয়।
তাসনিয়া কপাল কুঁচকে তাকাতেই মিনি তার বুকে গুঁজে গিয়ে বলে,
– ওরা আমার চুল টেনে দিয়েছে তাই আমিও দিয়েছি।
তাসনিয়া হেসে তার গালে চুমু খেয়ে বলল,
– আচ্ছা ওসব বিচার পরে হবে। এখন বলুন দুজনে কি খাবেন?
জুবরান বলল,
– বাবা অনেক কিছু খাইয়েছে। আর খাব না।
– কি খাইয়েছেন ওদের?
তাসনিয়া দেখলো গোফরান ঘরে চলে গিয়েছে ততক্ষণে । ফিজা বলল
– ভাইয়া ঘরে। সেনানিবাসের ওখানে নামার পর দেখলাম ভাইয়া ওদের জন্য অলরেডি আইসক্রিম, চিপস, পিৎজা, বার্গার এইসব কিনে রেখেছে। ওরা শুধু আইসক্রিম আর একটা করে চিপস খেয়েছে। বাকিগুলো প্যাকেটে আছে। আর রাতের জন্য সাসলিক, এগ কাবাব আর কয়েকটা ফিশকাবাব এনেছি আমি। তুমি একটু দেখবে? আমাকে একটা লম্বা শাওয়ার নিতে হবে। অসহ্য গরম পড়ছে।
– আচ্ছা তুমি যাও।
তাসনিয়া প্যাকেট থেকে জিনিসগুলো সব বের করে গোছগাছ করে ঘরে যেতেই দেখলো গোফরান বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে মাথা মুছতে মুছতে বলল,
– ওখানে কিছু খাবারদাবার আছে।
তাসনিয়া তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
– হ্যা আমি দেখেছি। ওদেরকে হঠাৎ নিয়ে এলেন যে? আমাকে তো বলেননি।
– তুমি এখানে একা থাকছো তাই ওদিকে আমার কাজে মন বসছে না। ওরা থাকলে আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারব। তাই নিয়ে এলাম।
– ওহহ।
– ইয়েস। আমি কি এক মগ কফি পেতে পারি?
– হ্যা।
– থ্যাংকস।
তাসনিয়া ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে ফিরে তাকাতেই দেখলো গোফরানও চেয়েছিলো। সে তাকানোর সাথে সাথে অন্যদিকে ঘুরে মাথা মুছতে লাগলো।

জুবরান বেলুন ফোটাচ্ছিলো তার স্নিপার টয় গানটা দিয়ে। ফিজা বেলুন ফুলিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে। জুবরান ফোটাচ্ছে। দূরত্ব বাড়িয়ে দিতেই সে কিছুতেই বেলুনগুলো ফোটাতে পারছেনা। একগুচ্ছ বেলুন নিয়ে মিনি হাসতে হাসতে খেলছে একা একা।
ফিজা বলল,
– জুবরান লুজার।
জুবরান বলল,
– না আমি এখনি ফাটবো। দেখবে।
বলতেই বলতেই ট্রিগার চাপ দিতেই গুলি ছুটলো কিন্তু বেলুন ফাটলো না। ফিজা হেসে ফেললো। হাঁটতে হাঁটতে গোফরান জুবরানের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। মিনি বাবা বলে ডেকে উঠতেই জুবরান ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। মিনি দৌড়ে এসে বাবার গালে গাল ঘষে চুমু খেয়ে চলে গেল খেলতে। জুবরান চেয়ে রইলো। গোফরান ভুরু উঁচিয়ে বলল,
– হোয়াট হ্যাপেন্ড? শুট।
জুবরান শুট করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো।
– এগেইন।
জুবরান আবারও শুট করলো। এবারেও ব্যর্থ হলো। পরপর কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার পর গোফরান দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়ে তারপাশে হাঁটুভেঙে বসে বলল,
– মনে করো ওই বেলুনগুলো তোমার এনেমি। যাদের হাত থেকে তোমার দিকে গুলি ছুটে আসছে। এখন তুমি কি করবে?
জুবরানকে ভীত দেখালো। চেয়ে রইলো চুপচাপ। গোফরান বলল,
– লক্ষ্য স্থির করো। লক্ষ্য মানে ওই বেলুনগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি। তার দিকে মনোনিবেশ করো। মনে করো ওই নীল রঙের বেলুনটি তুমি ফাটবে তাহলে শুধু সেটিকেই দেখো । বাকিগুলো ভুলে যাও।
জুবরান প্রশ্ন করলো,
– বাকিরা যদি আমাকে শুট করে তখন?
গোফরান হাসলো তার প্রশ্নে। এই ছেলে তার ভবিষ্যৎ। তার কর্ণধার। সে উত্তর দিল,
– তোমার সবচাইতে বড় শত্রু তোমার দুর্বলতা। তোমাকে কেউ তখনই আঘাত করতে পারবে যখন তোমার অবস্থান, তোমার দুর্বলতা সম্পর্কে সে জেনে যাবে। তুমি তোমার দুর্বলতা তোমার শত্রুদের কখনোই বুঝতে দেবে না। তুমি প্রথমেই নিজের জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজে নেবে, তারপর তোমার লক্ষ্য স্থির করবে, তোমার শত্রুদের দুর্বলতা খুঁজে বের করবে, তারপর আক্রমণ করবে। একটা কথা মনে রেখো, খেলার মাঠে তুমি খেলোয়াড়। সেখানে প্রতিযোগীরা থাকে। কিন্তু যুদ্ধের মাঠে তুমি যোদ্ধা, সেখানে তোমার প্রাণঘাতী শত্রুরা থাকে। তাদের কাছে কখনোই আপোস নয়, কখনোই নিজেকে চিনতে দেয়া নয়। এবার শুট করো। রেড, ব্লু, অরেঞ্জ। ফাস্ট।
জুবরানের হাত কাঁপতে লাগলো । ফিজার দিকে চাইলো একবার। কফির মগ হাতে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মাকেও। তারপর টয় গানটা তুলে একচোখ বন্ধ করে একদৃষ্টে অনেকক্ষণ বেলুনগুলির দিকে চেয়ে রইলো। কম্পিত অঙ্গুলি দ্বারা ট্রিগারে চাপ বসাতেই কমলা, নীল, লাল, তিনটে বেলুন পরপর ফাটিয়ে দিতেই গোফরান হেসে উঠে হাততালি দিয়ে বলল,
– এক্সিলেন্ট!
ফিজা মিনি হাততালি দিতে দিতে বলল,
– জুবরান পেরেছে! ইয়াহু। ব্র্যাভো জুবরান।
জুবরানের হাত থেকে টয় গান পড়ে গেল। গোফরান হাতের মুষ্টি বাড়িয়ে তার মুষ্টির সাথে ঠেকিয়ে বলল,
– জুবরান সব পারবে। পারবে না? পারতেই হবে। জুবরান না পারলে কে পারবে? মিনি তো ভীতুর ডিম। জুবরানই পারবে। জুবরান ইজ মাই ব্রেভ বয়।
জুবরানের মুখ কালো হয়ে এল। গোফরান কাছে টেনে নিয়ে গালে আদর দিয়ে বলল,
– হাসো হাসো। বিজয়ীরাই তো হাসে।
জুবরান হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে কান্নায় পরিণত হলো। বাবা থাকলে সে সব পারবে। সব ক্রেডিট তার বাবা ম্যাজিকম্যানের। তার বাবা তার আদর্শ, তার সুপারম্যান। যার সবাইকে ভালো রাখার ক্ষমতা আছে। তাকে, মাকে, মিনিকে। সবাইকে। হি ইজ আ রিয়েল ম্যান। সে গোফরানের কাঁধে মাথা ফেলে শক্ত করে ধরে রেখে ফুঁপিয়ে উঠে বলল,
– আই লাভ ইউ সো মাচ বাবা। ইউ আর মাই হিরো।
গোফরান তৃপ্তির হাসলো। পিঠ চাপড়ে চাপড়ে বলল,
– ঠু। ইউ আর এ স্ট্রং ম্যান। হোপ আই নেভার সি ইউ ক্রাই এগেইন। বি স্ট্রং।
জুবরান চোখের পানি মুছলো। হাসলো। তারপর আবদার করলো,
– ক্যান আই পাপ্পি ইউ লাইক মিনি?
গোফরান সশব্দে হেসে উঠলো। জুবরান তার গালে গাল ঠেকিয়ে আদর করতে গিয়ে আবারও কেঁদে ফেললো। বাবাকেও সে এমনভাবে আদর করতো। বাবাও ঠিক এমনভাবে হাসতো। মা এমনভাবে দূরে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকতো। কিন্তু আজকের মতো মায়ের চোখে কান্না থাকতো না, মা তখন হাসতো। এই যে মা কাঁদছে তা কষ্টের না। প্রাপ্তির। যা সে আর মা হারিয়েছিলো।
তাকে রেখে গোফরান তাসনিয়ার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে ভেতরে চলে গেল। তাসনিয়া জুবরানের কাছে আসতেই জুবরান ছুটে এসে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল
– আই লাভ ইউ ঠু মাম্মা।
তাসনিয়া তাকে কয়েকটা চুমু দিল। জুবরানও দিল। বলল,
– বাবা লাভস মি ভেরি মাচ, ইউ ঠু। ডু ইউ মাম্মা?
তাসনিয়া নিরুত্তর চেয়ে রইলো।

ফোনে কথা বলা শেষ হতেই গোফরান যখন পিছু ফিরলো তাসনিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। বলল,
– কিছু বলবে?
তাসনিয়া এগিয়ে এসে বলল,
– জ্বি।
গোফরান প্রশ্ন শোনার জন্য মুখিয়ে আছে। তাসনিয়া তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, – থ্যাংকস।
– কারণ?
– জুবরানকে একটা সুস্থ জীবন দেয়ার জন্য।
– ইটস মাই রেসপনসেবলিটি। থ্যাংক ইউ ঠু ফর ব্যিং এ গুড মাদার টু মিনি।
তাসনিয়া সাথে সাথেই বলল,
– এন্ড সরি।
– সেটা কেন?
– কাল রাতের জন্য। আই থিংক আমার অমনটা করা উচিত হয়নি। এক্সট্রিমলি সরি।
– আমার কিছুই অস্বাভাবিক লাগেনি।
– তাহলে এত অস্বাভাবিক আচরণ করছেন কেন?
– এতদিন অস্বাভাবিক আচরণ করে এসেছি। আমার মনে হয় আজকেই আমি স্বাভাবিক আচরণ করছি। তানজিম আই অলসো থিংক উই শুড টেক মোর টাইম। আমাদের পছন্দ অপছন্দ একসঙ্গে মিলেছে বলে আমরা একই পথে নিঃসঙ্কোচ হাঁটতে পারিনা। আমিও একজনের সাথে চার বছর ধরে সংসার করেছি। আর এটাই সত্যি যে আই লাভড হার। কিন্তু সে আমার বিশ্বাস ভালোবাসার অমর্যাদা করেছে দেখামাত্রই আমি তাকে আমার জীবন থেকে আউট করে দিয়েছি। আমি চাইনি তার ছায়া মিনির উপর পড়ুক। এটাও ভাবিনি আমাকে আবারও কাউকে ভালোবাসতে হবে।
সেম তোমার মতো। কিন্তু আমি আর কোনো ভুলে জড়াতে চাইনা। জানিনা এ কয়েকমাসে কি থেকে কি হয়ে গেল! আমি নিজেকেই চিনতে পারছিনা।
সবকিছুর মূলে আমাদের ভালো থাকাটা জরুরি। আমার মনে হয় আমরা আগেই ভালো ছিলাম। যেহেতু দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক। আমরা জানি আমাদের কি করা উচিত। কতটুকু ডিস্টেন্স মেইনটেইন করা উচিত শারীরিক মানসিকভাবে।
তাসনিয়া তার হাত চেপে ধরে বলল,
– আ’এম রিয়েলি সরি কর্নেল। আপনি আমার উপর সত্যিই রাগ করেছেন। আমি বুঝতে পারছি।
– আমি রাগ করিনি। তোমার উপর রাগ করা যায় না।
বলেই সে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। তাসনিয়া বলল,
– প্লিজ ডোন্ট ক্রিয়েট অ্যানি মোর ব্যারিয়ার্স বিটউইন আস। এই কয়েকদিনের সবকিছু কি মিথ্যে তাহলে? আমি মানছি আমি এখনো সবকিছু ভুলতে পারছিনা কিন্তু গত কয়েকমাস, আর গত কয়েকদিনের সব মিথ্যে হয়ে যেতে পারেনা।
– ইটস থ্রু কিন্তু তুমি দেখো আমাদের ফোনালাপ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল তারপর আবারও..
প্লিজ তানজিম আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ মিনি’স মাদার। বাকি সব ভেসে যাক।
বলেই গোফরান চলে গেল। তাসনিয়া নীচের ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো। তারপর ফিজার কাছে গিয়ে বসলো। বলল,
– ফিজা তুমি কি তোমার ছোট ভাইয়াকে রেঁধেবেড়ে খাওয়াতে পারবে এই কয়েকটা দিন। আগামী শনিবারে পর্যন্ত। আমার স্কুলে ডাক এসেছে। যেতেই হবে।
ফিজা বলল
– হ্যা। কিন্তু হঠাৎ এই কথা! ভাইয়া তো কিছুই বললো না।
– তোমার ভাইয়া কি বলবে। আমি উনাকে বলতে চাচ্ছিনা শুরুতেই। তুমি রাজী হলে বলব।
ফিজা বলল,
– হ্যা। খাওয়াতে পারবো। সমস্যা নেই তো। আমি এমন অনেকবার ভাইয়ার সাথে গিয়েছিলাম যখন ক্যাম্প ছিল। মিনিকে নিয়ে থাকতাম।
– আচ্ছা। তাহলে আমি কালই রওনা দিচ্ছি। ফিজা সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে বলল,
– আর ইউ ওকে?
তাসনিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
– হ্যা। আমি যাই গোছগাছ করে নিই।

গোফরান মেজর জেনারেলের সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত ছিল। ফোনালাপ শেষ হতেই জুবরান এসে বলল,
– বাবা আমি মা আর মিনি চলে যাব কাল সকালে।
গোফরান কপাল কুঁচকে বলল,
– কে বলেছে?
– মা বলেছে। মায়ের স্কুলের হেডটিচার বকুনি দিচ্ছে।
– ওহহ। আমার একটা ফোনকল আছে। শেষ করে আমি যাচ্ছি তোমার মায়ের কাছে। তোমরা কোথাও যাচ্ছ না। ওকে?
জুবরান খুশি হলো। মায়ের থমথমে মুখ দেখে সে বুঝে গিয়েছিলো মা কোনো কারণে বাবার উপর রাগ করেছে, কিংবা কষ্ট পেয়েছে।
গোফরানের কাছে ফোনের উপর ফোন আসছিলো। সে জরুরি কথা বলায় ব্যস্ত ছিল। ফিজাও কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাচ্ছিলো না। আবার কি হলো কে জানে?
গোফরান পায়চারি করতে করতে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পেল একটা গাড়ি এসে থেমেছে তার জিপটার পাশে। আর গাড়িটা থেকে নেমে এল একজন সুন্দরী নারী। পিঠ পর্যন্ত খোলা লাল চুল। গায়ে কালো রঙের একটা কূর্তি। হাতে দামী ঘড়ি পড়া। দামী ফোন। তাকে খুবই আতঙ্কিত দেখাচ্ছে। এলোমেলো খাপছাড়া গতিতে ছুটে এল তার দিকে। বলল,
– অনেক কষ্টে খুঁজে পেয়েছি বাড়িটা। পুলিশ এদিকে আসবে। প্লিজ আমাকে বাঁচাও। আমি খুনটা করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
গোফরান চড়া মেজাজে বলল,
– তাহলে কে করেছে? আমার এসব কাজে আমাকে জড়াচ্ছ কোন সাহসে?
– আমি তোমাকে সবটা বলছি গোফরান। আমাকে সময় দাও। ভেতরে চলো। বিশ্বাস করো খুনটা আমি করিনি। এসব ইচ্ছে করে করছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য।
– কে?
– বলছি তোমাকে।
মিনি গোফরানের পেছন থেকে উঁকি দিয়ে মহিলাটিকে দেখামাত্রই খুশি হয়ে গেল।

চলমান….