#চিলেকোঠার_প্রেম
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
#পর্ব_২৯
তনয়া রেগেমেগে নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। আরশি চেয়েও বাঁধা দিতে পারলো না। এখন না জানি আবার কোন ঝামেলায় জড়ায় তনয়া?? পরিস্থিতি সামাল দিতে আরশিও সেদিকে ছুট লাগালো। তনয়া গিয়ে ইফতির সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,’এই যে মিস্টার,আপনি এখানেও ঝগড়া বাঁধিয়েছেন?
আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কি ঝগড়া ছড়িয়ে আছে?? আমার পনেরশো টাকা মেরে দিব্যি চিল করছেন তাই না??আমার টাকা ফেরত দিন তাড়াতাড়ি??’
ইফতি অবাক হলো তনয়াকে দেখে। কিন্তু সে বিরক্ত ও হলো খুব। এমনিতেই এক ঝামেলায় পড়েছে আবার আরেক ঝামেলা এসে হাজির। ইফতি বিরক্ত স্বরে বলল,’তুমি এখান থেকে যাও। কোন কথা বলতে চাই তা তোমার সাথে।’
‘আমার ও সেই ইচ্ছা নেই। আমার টাকা ফেরত না দিয়ে কোথাও যেতে পারবেন না আপনি।’
ইফতি তনয়ার কথায় কান না দিয়ে সার্ভেন্টকে ঝাড়তে ব্যস্ত হয়ে গেল। সে বলল, ‘এই রেস্টুরেন্ট আমি বন্ধ করে দেব। জাস্ট দেখবে শুধু। খাবারের মধ্যে টিকটিকির লেজ!!ম্যানেজারকে ডাকো তাড়াতাড়ি!!’
ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যাওয়া সার্ভেন্ট জবাব দিলো,’স্যার এরকম তো কখনোই হয় না। কিন্তু আজ কিভাবে হলো বুঝতে পারছি না। আপনার হয়তো কোন ভুল হচ্ছে।’
এতে গর্জে উঠলো ইফতি বলল,’তোমার সাহস হলো কিভাবে আমার মুখের উপর কথা বলার?? তোমার চাকরিও আমি নিয়ে নেব।’
তনয়া এবার হিসাব মেলাতে পারলো যে কেন ঝগড়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই এই ছেলের কারসাজি এসব। তাই সে বলল,’কোন টিকটিকির লেজ ফেজ নেই খাবারে। এই ছেলটা ধান্দা করছে। আমার টাকা নিয়েছে এখন বিন টাকায় এখানে খেতে চাইছে। আ’ম সিওর এই ছেলেটার কাছে টাকা নেই।’
তনয়ার কথায় বারবার বিরক্ত হচ্ছে। সে গলা খেকিয়ে বলে,’বেশি বোঝ তুমি?? আমার কাছে টাকা আছে কি না নেই তা তুমি জানো কিভাবে??’
‘তাহলে ওয়ালেট দেখান আমরাও দেখি??’
ইফতি পকেটে হাত দিয়ে ওয়ালেট বের করে তনয়ার হাতে দিলো। মনে মনে বিশ্বজয়ের হাসি দিল তনয়া। এটাই তো ও চাইছিল। ইফতি ততক্ষণে বিরক্তিতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তনয়া ওয়ালেট চেক করে বলল, ‘ঠিক আছে!! আপনি যথেষ্ট ধনী ব্যক্তি। আপনার ওয়ালেট।’
থাবা মেরে ওয়ালেট নিয়ে পকেটে পুরো ফেললো ইফতি। সে তনয়ার দিকে না তাকিয়ে আবার সার্ভেন্টকে বকতে লাগলো। তনয়া আরশিকে নিয়ে বের হয়ে আসলো। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তনয়া বারবার রেস্টুরেন্টের দিকে উঁকি দিতে লাগল। আরশি জিজ্ঞেস করল,’কি রে গাড়িতে ওঠ?? এভাবে উঁকি দিচ্ছিস কেন?? আবার ঝগড় করার সাধ জেগেছে তোর??’
‘তুই গাড়িতে ওঠ আমি পরে উঠব।’
‘পরে উঠবি মানে??বাড়িতে যাবি না??’
‘উফফ কথা বলিস না তো চুপচাপ গাড়িতে ওঠ।’
আরশি গাড়িতে উঠে বসলো আর তনয়া ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। অবশেষে তনয়ার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইফতি বের হলো। সে তনয়ার দিকেই তেড়ে আসছে। তনয় চট জলদি গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলল। ইফতি গাড়ি ধরতে পারলো না সে চেঁচিয়ে বলল,’বেয়াদব মেয়ে!! আমার টাকা নিয়ে পার পাবে তুমি??’
গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করলো তনয়া। ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,’যেমন কুকুর তেমন মুগুর। আমার টাকা নিয়েছিলেন না??তাই আমি আমার টাকা ফেরত নিলাম।’
রাগে গজগজ করছে ইফতি। এতদিন ও সবাইকে বোকা বানিয়েছে আর আজকে একটা মেয়ে ওকে বোকা বানালো!!রাগে সে নিজের বাইকে লাথি মারলো। গাড়িতে বসে বসে তনয়া মন খুলে হাসছে। আর আরশি অবাক হয়ে দেখছে। তনয়ার হাসি থামছেই না দেখে আরশি জিজ্ঞেস করে,’পাগলের মতো হাসছিস কেন??কি হয়েছে বলবি তো??’
কষ্টে হাসি থামালো তনয়া বলল,’বদমাইশ ছেলেদের কিভাবে টাইট দিতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে। সেদিন আমার টাকা নিয়েছে আর আজ আমি সিম্পল।’
‘ওয়ালেট চেক করার নামে টাকা নিয়েছিস তুই??’
মাথা ঝাকালো তনয়া,আরশিও হেসে ফেলে। দু’জনে খুনসুটির মধ্যে দিয়েই বাড়িতে ফেরে।
আজ সারাদিন একটুর জন্যও আরাদের মুখটা দেখেনি সায়েন। ছটফট করছে কঙ্খিত মানুষটার মুখটা এক পলক দেখার জন্য। অথচ সে মানুষটা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকগুলো দিন সে আরাদকে দেখেনি। অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল সায়েনের। এতদিন পর সে অভ্যাসটা ভেঙে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলেছে আরাদ। রুমে বসেই দিন কাটিয়েছে সায়েন। বিকেলের দিকে একটু ছাদে গিয়েছেল। সূর্যাস্তের পর আবার ফিরে এসেছে নিজের রুমে। সন্ধ্যায় ও আরাদের দেখা নেই। কিন্তু সন্ধ্যার পর তো আরাদ ফিরে আসে। তাহলে কি আজকে আসেনি?? কিছু একটা ভেবে সায়েন গুটিগুটি পায়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো। উপর থেকে ড্রয়িং রুমে চোখ বুলায় সে। নাহ কেউ নেই। তাহলে আরাদের রুমে একবার যাওয়াই যায়। কিন্তু যাওয়ার জন্য যেই না সায়েন পিছনে ঘুরেছে অমনি সে চমকে উঠে। বুকটা ওর ধকধক করছে। বুকে হাত দিয়ে সে নিলিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইল। সন্দিহান চোখে নিলিমা বেগম প্রশ্ন করলেন,’তুমি এখানে কি করছো??তাও এই সন্ধ্যাবেলায়??’
শুকনো ঢোক গিলে তাকালো সায়েন। মনের মধ্যে নিলিমা বেগমের করা প্রশ্নের জবাব খুঁজতে লাগল। কিন্তু ভাগ্য ওর সহায় নেই। মনের মধ্যে হাতরে কোন উওর সে খুঁজে পেল না। ভয়ে সে সব কথাই ভুলে গেছে। সায়েন এখনও এবাড়ির কারো পরিচয় ঠিকমতো জানে না। শুধু তামিম তনয়া আর আরশিকেই চেনে। তাই নিলিমা বেগমকে দেখে ঠিক চিনতে না পারলেও সে ঠিক বুঝে গেছে যে এটা আরাদের মা। যদিও নিলিমা বেগমের সাথে আরাদের চেহারার কোন মিল নেই। আরাদ দেখতে ওর বাবার মতোই হয়েছে। কিন্তু আরশি দেখতে ওর মায়ের মতো। তাই সায়েন বুঝতে পারলো যে এই ভদ্রমহিলাই আরাদের গর্ভধারিনী মা। এজন্য সায়েন একটু বেশি ভয় পাচ্ছে। কথা বের কতে গিয়ে বারবার ঢোক গিলছে। কিন্তু কথা কিছুতেই বের হচ্ছে না। সায়েনের এরকম অবস্থা দেখে নিলিমা বেগম প্রশ্ন ছুঁড়লেন,’আরাদের রুমের সামনে কি করছো তুমি??’
সায়েনের অবস্থা এখন আরো নাজেহাল। দু’হাতে ওড়নার প্রান্ত মুঠো করে ধরে রেখেছে। শরীরের সব ভর সে ওড়নার উপর চালাচ্ছে। নিলিমা বেগম বেশ বিরক্ত হলেন। তিনি ফের কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই পেছন থেকে এক নারী কন্ঠ ভেসে আসে,’ম্যাম আমার খোঁজেই এসেছেন।’
পিছন ফিরে তাকালেন নিলিমা বেগম। কবিতা কফির কাপ হাতে সামনের দাতকপাটি বের করে হাসছে। এই মেয়েটাকে যেন পছন্দই করে না নিলিমা বেগম। তিনি কিছু না বলেই সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালেন। কি যেন ভেবে থমকে দাড়িয়ে সায়েনের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, ‘চিলেকোঠার ঘর থেকে যেন কখনো বের হতে না দেখি তোমাকে??কথাটা মনে রেখো??’
মাথা নাড়লো সায়েন। নিলিমা বেগম সায়েনকে অপছন্দ করে সেটা সায়েন জানে। নাহলে প্রায় পনের দিন পার হয়ে গেছে একটা দিন ও নিলিমা বেগম সায়েনের সাথে কথা বলেনি। ব্যস্ত পায়ে নিলিমা বেগম সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে গেলেন। কবিতা বুকে হাত রেখে জোরে শ্বাস নিলো বলল,’এই দু’জন মহিলা আমার সামনে থাকলে আমার শ্বশন ক্রিয়া কাজ করে না।’
বলেই কবিতা সায়েনের দিকে এগিয়ে গেল। কফির ট্রে সায়েনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আরাদের রুমের দিকে ইশারা করলো। এর মানে কবিতা কফিটা আরাদের জন্যই এনেছে। নিলিমা বেগমের হাত থেকে সায়েনকে বাঁচাতে সে মিথ্যা বলেছে।
‘স্যার তোমাকে ভেতরে যেতে বলেছে।’
আর কথা বাড়ালো না সায়েন। দরজার নব ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকলো সে। ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে চোখ পড়লো আরাদের দিকে। টাউজার পরে উদাম গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত আরাদ। চুলের পানিকণাগুলো ছিটকে পড়ছে আয়নার উপর। মাথা নিচু করে ফেলল সায়েন। আরাদ না তাকিয়েই সায়েনের অস্তিত্ব টের পেয়ে বলে,’দরজা আটকে দাও।’
কেঁপে উঠলো সায়েন। এই ছেলে আবার দরজা আটকাতে বলছে কেন??মতলব সুবিধার ঠেকছে না সায়েনের। কিছু তো ঘাপলা নিশ্চয়ই আছে। সায়েন দরজা আটকালো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েই রইল। তোয়ালেটা রেখে আরাদ নিজেই এসে দরজা আটকে দিলো। তারপর বিছানার উপর থেকে শার্ট নিয়ে পরলো। কিন্তু এতে কোন লাভ হলো না। কারণ শার্টটা সম্পূর্ণ নেটের। পুরো শরীর দেখা যাচ্ছে আরাদের। আরাদ যখন শার্টের বোতামগুলো লাগাতে ব্যস্ত তখন সামনে দাঁড়ানো রমনির আখিপল্লব আরাদকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত। সে আরাদের সবকিছু অবলোকন করে চলেছে ছোট্ট দুটো চোখের দ্বারা। কিন্তু আরাদ সায়েনের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই সায়েন তার দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। লজ্জার লাল রঙে ছেয়ে গেল সায়েনের গাল। চোখজোড়া আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল তার।
গাঁয়ের কম্পন আরো বেড়ে গেল ঠান্ডা অধরের স্পর্শে। সে চোখ মেলে তাকালো। আরাদ মাত্রই সায়েনের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে সরে দাঁড়িয়েছে। সায়েন তাকানো মাত্রই সে কফির কাপ টেনে নিলো সায়েনের হাত থেকে। কফির কাপে শব্দ করে চুমুক দিয়ে হাসি সমেত তাকালো সায়েনের দিকে। সায়েন এখনও আগের দৃষ্টিতে আরাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাদ দ্বিতীয় বার কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,’তোমার লাজে রাঙা গালে চুমু না খেয়ে পারলাম না। তবে এরজন্য সরি আমি বলব না। তোমার দোষেই চুমু খেয়েছো তুমি।’
সায়েনের চোখ দুটো আগের থেকে কিন্ঞ্চিৎ বেশি প্রসারিত হলো। লজ্জা পেলে যে চুমু নামক শাস্তি পেতে হয় তা আজ সে প্রথম জানলো। লজ্জা পাওয়া বুঝি দোষের কাজ??মনের মধ্যে প্রশ্নটা আওড়াতে লাগলো সে। অনেকটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেছে সায়েন। হঠাৎ কোমড়ে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে হুস ফিরল সায়েনের। চকিতে তাকালো আরাদের দিকে। নিজের কাছে সায়েনকে টেনে নিয়ে আরাদ বলল,’খুব মিস করছিলে বুঝি??’
সায়েনের ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো। তবে কথা বের হলো না। আরাদ আবার বলে উঠলো, ‘জবাব খুজে পাচ্ছো না তাই তো?? সত্যি বলো না সায়েন??এখনও ভালোবাসো তুমি আমাকে!! তোমার এই একটা কথা শোনার জন্য চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছি আমি।’
সায়েন এবার কিছুটা শক্ত হলো। আগে ভালোবাসা শব্দটা শুনলে নরম হয়ে যেতো সে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন এই শব্দটা ওকে শক্ত করে দেয়।
‘কাকে ভালোবাসি বলব আপনাকে??হুহ,হাসালেন যার শুরটা মিথ্যা দিয়ে ছিল তার ভালোবাসা কিভাবে সত্যি হয়??’
আরাদ কাতর কন্ঠে বলল,’একবার শুধু ভালোবাসি বলেই দেখো,মিথ্যা কি তা তুমি নিজেই ভুলে যাবে। সব ভালোবাসা কিন্তু সত্যি দিয়ে হয় না। একবার ভেবেই দেখো, সত্যি দিয়ে ভালোবাসা শুরু হলেও কিন্তু সে ভালোবাসা সবক্ষেত্রে টিকে না?? আবার অনেক সময় মিথ্যা দিয়ে শুরু ভালোবাসা যুগ যুগ ধরে টিকে থাকে ধরার বুকে। ধরে নাও ওর মধ্যে আমার ভালোবাসা ও আছে। কিন্তু আমার ভালোবাসা সম্পূর্ণ পিওর। সেটা আমার থেকে তুমি বেশি জানো কিন্তু মুখে স্বীকার করছো না।’
দমে গেল সায়েন। আরাদের সাথে কথায় সে কখনও পেরে ওঠেনি এবং ভবিষ্যতে পারবে বলে মনে হয় না। আরাদ নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে সায়েনের মুখের উপর আছড়ে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিলো। কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ রেখে আবার চোখ খুলল সায়েন। বেশ কড়া গলায় সে বলল,’তাহলে আমাদের বিয়ের কথাটা বলতে পারছেন না কেন??কেন বলছেন না?? আবার নতুন মিথ্যা খেলায় কেন মেতেছেন?? আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করেছেন জানতে পারলে সবাই আপনাকে ছিঃ ছিঃ করবে তাই??বলবে একটা বিধবা তার উপর ক্রিমিনাল মেয়েকে আরাদ ওয়াদের বিয়ে করেছে?? আপনি তো আমার থেকে ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করেন??’
সায়েনের ঠোঁটে আঙুল চেপে সায়েনকে চুপ করিয়ে দিলো আরাদ। ফিচেল গলায় বলল, ‘তোমাকে সবার সামনে আনার সাহস আছে আমার। কিন্তু তোমাকে সবার সামনে এনে কি হবে যদি তুমি আমার না হও। তুমি তো আমার হয়েও নেই। মন থেকে সম্পর্কের মান দিতে না পারলে বাইরের মানুষকে জানিয়ে কি লাভ??তাই বলে এই না যে তোমাকে সবার সামনে আনবো না!! অবশ্যই সবাই জানবে মিসেস ওয়াহেদের কথা। কিন্তু তার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন। ততক্ষণে আমার উপর একটু বিশ্বাস রাখো সায়েন। এই আরাদকে দ্বিতীয় বার ভুল বুঝো না।’
পর পর কয়েকবার ঢোক গিলে সায়েন আরাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। সচরাচর সে খুব কম কথাই বলে। তাই চলে যেতে উদ্যত হলেই আরাদ এক টানে সায়েনের ওড়না টেনে নিয়ে নিজের গলায় পেঁচিয়ে নিলো। সায়েন কে কিছু বলতে না দিয়েই সে পা বাড়ালো সুইচ বোর্ডের দিকে। সায়েন মুখ খোলার আগেই সাদা বাতিটি নিভে গেল। এবং সাথে সাথে নীলাভ ড্রিম লাইটটা জ্বলে উঠলো। সায়েন কিছু বলার আগেই সায়েনকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিলো আরাদ। দুহাতে জড়িয়ে ধরলো নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই বুঝতে পারছে না সায়েন। ওর এখন কি করা উচিত তাও বুঝতে পারছে না সায়েন। আরাদ সায়েনের ঘাড়ে কপাল ঠেকিয়ে বলল,’আমাদের বিয়ের পনেরো দিন পার হয়ে গেছে সায়েন অথচ দেখো এখন পর্যন্ত বাসর হলো না। অবশ্য দোষটা আমারই। সবকিছু হুটহাট করে করে ফেললাম। তবে একদিন আমাদের বাসর ঠিকই হবে।’
আরাদের কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই চো বন্ধ করে ফেলে সায়েন। লাগামহীন কথা বলতে আরাদ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বোধহয়। সবসময় এরকম কথ বলবেই বলবে। সায়েন চুপ করে আরাদের স্পর্শ আর নিশ্বাস অনুভব করছে। ঘাড়ে আরাদের তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে আরাদের। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালালো না। মুখে না মানলেও মনে মনে আরাদের বাহুডোরে নিজেকে রাখতে ইচ্ছে করছিল সায়েনের। তাই সে চুপ করে আছে। কিন্তু তা বুঝি আর হবে না। দরজায় কড়াঘাতের শব্দে উঠে বসলো দু’জনে। সায়েন কিছু না বুঝলেও আরাদ বুঝলো কে এসেছে!!গলা থেকে সায়েনের ওড়না খুলে সায়েনকে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আরাদ। ড্রিম লাইটের আলোয় পাতলা শার্ট খুলে টিশার্ট পড়ে নিলো সে। দরজা খোলার আগে বিছানায় বসা সায়েনের দিকে তাকিয়ে বলে,’ফিরে এসে যেন তোমাকে পাই!!এবার যদি না পাই তাহলে খবর আছে।’
বলেই আরাদ বের হয়ে চলে গেল। সায়েনও হাঁটু মুড়ে চুপচাপ বসে আরাদের অপেক্ষা করতে লাগলো
#চলবে,,,,,,,,,,,,
#চিলেকোঠার_প্রেম
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
#পর্ব_৩০
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমটায় গুটিসুটি মের বসে আছে সায়েন। ড্রিম লাইট এখনও জ্বলছে। ওড়নাটা নিজের সাথে ভালো করে পেঁচিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে সায়েন। এসির টেম্পারেচার বাড়ানো তাই সায়েনের শীত লাগছে। ওর রুমে টেম্পারেচার লো তে থাকে সবসময়। কারণ এসির নিচে থাকার অভ্যাস নেই ওর। হাত দিয়ে নিজের বাহু আঁকড়ে ধরে বসে আছে সায়েন। প্রায় ঘন্টার বেশি সময় পার হয়ে গেছে এখনও আরাদের দেখা নেই। সেই কখন বেরিয়েছে আরাদ। কি করছে কে জানে??সায়েন আপন মনে অতীতে স্মৃতিচারণ করতে লাগলো। সেই সময়গুলো মধুর ছিল। সময় করে আরাদের সাথে দেখা করা। মা’কে ফাঁকি দিয়ে খাবার নিয়ে চিলেকোঠার ঘরে যাওয়া। মাঝেমধ্যে আরাদ সায়েনের রুমে চলে আসতো তখন ভয়ে সায়েন জমে যেতো। এসব ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল সায়েনের। সায়েনদের চিলেকোঠার ঘরটা ছিল অত্যন্ত নোংরা। অনেক বছর বন্ধ থাকায় সেখানে ভ্যাপসা গন্ধ পেতো সায়েন। কিন্তু আরাদ ওই নোংরা স্থানে থাকতো শুধু মাত্র সায়েনের জন্য। অথচ আরাদ বিরাট অট্টলিকায় থাকতে পছন্দ করে। এসি রুম ছাড়া সে থাকতেই পারে না। এতে কি বোঝা যায় না যে আরাদ সায়েনকে ঠিক কতখানি ভালোবাসে!!!সায়েন সবই বুঝতে পারছে। মনের অনুভূতি গুলো আবার নাড়া দিয়ে উঠছে। হাঁটু মুড়ে তারপর হাত রেখে মাথা এলিয়ে দিলো সায়েন। বারান্দার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে সে। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের টেবিলে থাকা ফটোফ্রেমের দিকে তাকালো সায়েন। আবছা আলোয় আরাদের ছবিটা জ্বলজ্বল করছে। ব্ল্যাক সুট আর সাদা শার্ট পরা আরাদ। ডান হাত দিয়ে বা হাতের ঘড়িটা আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছে। গভীর চাহনি তার,সায়েন কি যেন ভেবে হাত বাড়িয়ে ফটোফ্রেমটা হাতে নিতেই দরজা খুলে গেল। আচমকা দরজা খোলায় ভড়কে গেল সায়েন। এবং হাত থেকে ফটোফ্রেমটা পড়ে গেল তবে ভাঙলো না। কারণ মেঝেতে কার্পেট বিছানো আছে। সায়ন দ্রুত উবু হয়ে মেঝেতে থাকা ফটোফ্রেমটা হাতে নিয়ে চোখ তুলে সামনে তাকালো। আরাদ ঠিক ছবির মতোই গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে সায়েনের উপর। জোরপূর্বক হেসে সায়েন ফটো টা আগের জায়গায় রেখে দিলো। আরাদ এগিয়ে এসে সায়েনের মুখোমুখি বসলো। সায়েনের অবাক লাগছে আরাদকে দেখে। একটু আগেই কেমন হাসিখুশি ছিল আরাদ কিন্তু এখন কি হলো?? বাহিরে গিয়ে কি কোন ঝামেলা পাকিয়ে এসেছে??হবে হয়তো??সায়েন তাই প্রশ্ন করে বসলো,’কি হয়েছে??কোন সমস্যা??’
ম্লান হাসলো আরাদ। সায়েনের দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে বুকে টেনে নিলো সায়েনকে। আরাদের একহাত সায়েনের কোমড়ে গভীর ভাবে স্পর্শ করেছে আরেকহাত পিঠের উপর গলিয়ে সায়েনের বাহু ধরে রেখেছে।
‘জীবনে চলার পথে যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে সেই জীবন কখনো সুন্দর হয় না।’
আরাদ সায়েনের জবাব পেল না শুধু সায়েনের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনলো। আরাদ আবারো বলে উঠলো,’মানব জীবনে চলার পথে সমস্যা আসবেই আসবে। এটা যেমন স্বাভাবিক তেমনি এই সমস্যাকে সমাধান ও করতে হবে। নিজেকে শক্ত রাখো সায়েন। আর শেষবারের মতো আমাকে বিশ্বাস করো। কথা দিলাম এবারের বিশ্বাসে ঠকবে না তুমি। শুধু ভালোবাসা পাবে।’
সায়েন ভাবলো সেও কি জড়িয়ে ধরবে আরাদকে?? হাত দুটো উঠিয়েও উঠালো না। ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আরাদকে বিশ্বাস না করার কারণ নেই। সায়েন নিশ্চুপ হয়ে আরাদের হৃদস্পন্দন এর শব্দ শুনতে লাগলো। ‘কথা দিলাম এবারের বিশ্বাসে ঠকবে না তুমি’ এই কথাটা বারবার নিজের মনের মধ্যে আওড়াতে লাগলো। আরাদকে জড়িয়ে ধরার আকাঙ্ক্ষা তার বাড়তেই লাগলো কিন্তু সেই সাহস টুকু মনে সন্ঞ্চয় করতে পারলো না সায়েন। তবে আরাদের বুকে মাথা রাখতে বেশ লাগছে সায়েনের। যাকে মন থেকে বের করে দিয়ে অন্য পুরুষকে মনে বসাতে চেয়েছিল সেই পুরুষটাই চিরদিনের জন্য মনে মধ্যে গেঁথে গেছে। ভাগ্যের চাকা কখন কোনদিকে মোড় নেয় তা কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
আযানের ধ্বনি কানে আসতেই ঘুমটা ভেঙে গেল সায়েনের। কিছুক্ষণ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করলো সে। উঠার চেষ্টা করে পারলো না উঠতে। ভারি কিছুর অস্তিত্ব টের পেল নিজের শরীরে। পাশ ফিরে তাকাতেই আরাদের ঘুমন্ত মুখটা চোখে পড়লো ওর। সায়েন বুঝতে পারলো যে সে আরাদের রুমেই আছে। কাল রাতে আরাদ ওকে চিলেকোঠার ঘরে যেতে দেয়নি। নিজের পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছে। সায়েন খেয়াল করলো আরাদের একটা হাত ওর পেটের উপর রেখে ঘুমাচ্ছে। তবে ওতো শক্ত করে ধরে রাখে নি আরাদ। হাতটা আস্তে করে সরিয়ে দিতেই ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো আরাদ। সায়েন কিছু পল আরাদের পিঠের দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। খুব ধীর পায়ে চিলেকোঠার ঘরে ফিরে গেল সে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নিল। দু’দিন ধরে ফজরের নামাজ পড়তে পারে না সায়েন। তার ঘুমই ভাঙে না। তা আজকে ঘুম ভাঙাতে বেশ খুশি হলো সায়েন। নামাজ আদায় করে ছাদে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো সে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে চারদিক মুখরিত হলো পাখপাখালির কলকাকলিতে। পাখিদের গুঞ্জন ভালোই লাগে সায়েনের। সূর্যের প্রখর আলো চোখে আসার সাথে সাথে সায়েন তার কাঙ্খিত ঘরটিতে ফিরে আসলো। এবং তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কবিতাকে দেখা গেল। খাবারের প্লেট হাতে কবিতা রুমে প্রবেশ করলো। সায়েনকে খাবার দিয়ে টুকটাক কথা বলে কবিতা নিজের কাজে চলে গেল সে।
___________
কাল রাত থেকে তনয়ার মনটা ভিশন খারাপ। আরশির ও সেইম অবস্থা। দু’জনে পরিপাটি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হলো ওরা। বাড়ি থেকে বের হতেই আরাদের একগাদা ধমক খেল দু’জনেই। প্রশ্ন করা আরাদের একদম পছন্দ নয় আর তনয়া তা করেছে বলে ধমক খেয়েছে। কান্না কান্না ভাব দু’জনের মধ্যে এসে গেছে। তবুও ওরা আরাদের ভয়ে কাদলো না। ওদের ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আরাদ নিজের গন্তব্যে চলে গেল। তনয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলে,’ধুর আজকে ক্লাস করব না আমি। তুই থাক আমি গেলাম।’
বলেই উল্টোদিকে হাঁটা ধরলো তনয়া। আরশি পিছু পিছু যেতে যেতে বলে উঠলো,’আরে আমি কি একা একা ক্লাস করব নাকি?? আমিও যাব।’
দু’জনে ভার্সিটি থেকে দূরের একটা পার্কে গেল। ইট সিমেন্টের তৈরি বসায় জায়গায় বসলো। তনয়া গালে হাত দিয়ে বলল,’ভাবি সবটা জানতে পারলে কি হবে আরশি??’
তনয়া আরশির দিকে তাকালো না। কিন্তু ও ঠিকই বুঝতে পারছে আরশিও চিন্তায় মরছে।
আরশি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে ওঠে, ‘আমি জানি না তবে ভাবির জন্য আমারও কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়া করতে চাইছে টা কি??যদি সামিউক্তাকেই বিয়ে করবে তাহলে ভাবিকে বিয়ে করার মানে কি??’
‘সেটাই তো ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতে গেলাম আর দেখলি না কি ধমক দিলো। ভাবি অনেক কষ্ট করেছে আরশি। আমার কান্না পাচ্ছে খুব। ভাইয়ার এংগেজমেন্টের দিন কি হবে আরশি??’
তনয়ার চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। বিষন্ন মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে দু’জনেই।
‘রংধনুতে ওতো রং নেই যত রং মেয়েদের মধ্যে থাকে।’
পুরুষালী কন্ঠে দু’জনেই চকিতে তাকালো। ইফতি পকেটে হাত গুজে শয়তানি হাসি দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তনয়ার কান্না উবে গিয়ে রাগে পরিণত হলো। খানিকটা চেঁচিয়ে সে বলল,’আপনি ফলো করছেন কেন আমাকে??অসভ্য ছেলে একটা। আপনাকে আমি পুলিশে দেব। আকাশ ভাইয়াকে ফোন করলে এখনই করলে চলে আসবে।’
ইফতির মনে সংশয় দেখা দিলো। আকাশের সাথে ওর ঘোর শত্রুতা। তাই সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,’দিতে পারো নো প্রবলেম। তবে পুলিশ ও মেয়েদের এই রং ধরতে ব্যর্থ তাই তো প্রতিনিয়ত পুরুষ নির্যাতিত হয়েও কিছু করতে পারে না।’
‘বেশি কথা বলেন আপনি। দেখুন আমাদের এক থাকতে দিন। এমনিতেই মন ভালো নেই আমাদের। আপনার সাথে ঝগড়া করার মুডে নেই আমরা।’
ইফতি যেন প্রাণ ফিরে পেল। এই দূর্বলতাকেই সে কাজে লাগাবে। সেদিনের পর থেকে ইফতি ভেবে নিয়েছে আর ঝগড়া করবে না সে। কারণ ঝগড়া করে তনয়ার সাথে পেরে ওঠ যাবে না। তাই বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। ইফতি গিয়ে তনয়া আর আরশির মাঝে বসে পড়লো। ইফতির হঠাৎ এরকম করায় দু’জনেই সরে বসলো। হাতের তালুতে অন্য হাত ঘষতে ঘষতে বলল,’মেয়েদের মুড সুয়িং অহরহ ঘটে। কিন্তু তোমাদের মুড সুয়িং কি জন্য হয়েছে?? বয়ফ্রেন্ড ধোঁকা দিয়েছে??’
আরশি তনয়া কটমট চোখে তাকালো ইফতির দিকে। ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে ইফতি বলল,’জাস্ট রিল্যাক্স!!আমি ভেবে নিয়েছি।’
তনয়া রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘আপনাকে কেন এতোসব বলতে যাবো??চলে যান এখান থেকে??’
‘উফফ তুমি বুঝতে চাইছো না!!মানছি আমাদের মাঝে একটু ঝগড়া হয়েছে তাই বলে কি সবসময় ঝগড়াই করব নাকি??ফ্রেন্ড তো হতেই পারি??যদি তোমাদের আপত্তি না থাকে। তাই তোমাদের মন খারাপের বিষয়টা আমাকে বলতে পারো?? ভালো লাগবে।’
‘আপনার ধান্দা কি বলুন তো?? আবার কোন মতলব আটছেন??’
বোকা হাসি দিয়ে ইফতি বলল,’ধান্দা থাকলে এতক্ষণ ঝগড়া করতাম ভালোভাবে কথা বলতাম না।’
আরশি তনয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’তনয়া তুই চুপ থাক তো??উনি হয়তো অনুতপ্ত তাই এসেছেন।’
ইফতি তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,’তোমার নাম তনয়া??আমি ইফতি??আর তুমি??’
মুচকি হেসে আরশি নিজের নাম বলে দিলো। ইফতি আবার ওদের মন খারাপের কথা জানতে চাইলে আরশি সবটা খুলে বলল। ইফতি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে আরশির কথা শুনলো। তার পর বলল,’এরকম প্রেম আমি জীবনেও শুনিনি। সিনেমায় তো কতই কাহিনী দেখি। কিন্তু বাস্তবে এই প্রথম। লাভ স্টোরিটা একদম অন্যরকম। চিলেকোঠার প্রেম দিয়ে শুরু আবার শেষমেষ সেই চিলেকোঠা!!এক্সিলেন্ট। কিন্তু তারপর কি হলো??’
এবার তনয়া মুখ খুলল,’ভাইয়ার এংগেজমেন্ট ঠিক হয়েছে সপ্তাহ খানেক পর। এতে ভাইয়ার ও সম্মতি আছে। আর সে সবকিছু ভাবির থেকে লুকিয়ে রাখতে বলেছে। আমি বুঝতে পারছি না যে হঠাৎ ভাইয়া এই সিদ্ধান্ত কেন নিলো??’
ইফতি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল,’ডালমে কুছ কালা হেয়। আচ্ছা আমাকে ইনভাইট করো কেমন??আমি গিয়ে সব রহস্যের উদঘাটন করে দেব।’
ইফতির কথায় বেশ বিরক্ত বোধ করলো তনয়া। মুখ বাঁকিয়ে বলল,’এংগেজমেন্টের দিন গিয়ে কোন মহাভারত শুদ্ধ করবেন আপনি??যতসব ফাউল লোক।’
‘আমার বুদ্ধিকে অপমান করো না। এই ইফতি যা বলে তাই করে ছাড়ে।’
তনয়া দুহাত জোর করে বলল,’অনেক করেছেন আপনি দয়া করে আর কিছু করবেন না। এই আরশি চল। এর বকবক শোনার থেকে ক্লাস করা ঢের ভালো।’
তনয়া আরশির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ইফতি হেসে জোরে চেঁচিয়ে বলল, ‘ওই লাভ বার্ডস দেখার জন্য বিনা দাওয়াতে তোমাদের বাড়িতে যাব আমি। মিলিয়ে নিও।’
বাড়িতে এসে আরো বিরক্তিতে পড়লো তনয়া আর আরশি। নিলিমা এবং হাসি বেগম আত্মীয়দের লিস্ট বানাচ্ছে। এখন থেকেই ওনার আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। যা দেখে ওরা দুজনেই বিরক্ত। নিজের রুমে গিয়ে ওর আর বের হলো না।
সন্ধ্যার পর দুজনেই খাটের উপর বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। দরজায় টোকা পড়ার শব্দে দুইজনেই বই ছেড়ে দরজার দিকে তাকালো। এসময়ে সায়েনকে দেখে ওরা দুজনেই চমকে গেল। সাথে একরাশ বিষন্নতা এসে ভর করলো ওদের মুখে। সায়েন এগিয়ে এসে মুচকি হাসলো। তনয়া নিজের পাশে জায়গা করে দিয়ে বলে,’এখানে বসো!!তুমি এসময়ে??’
‘বিরক্ত করলাম তোমাদের??আসলে একা একা ভালো লাগছিল না তাই??’
‘আরে ভাবি তেমন কিছু না। হঠাৎ এলে তাই তনয়া বলেছে!!ভালো করেছো এসেছো।’
আরশির মুখপানে অবাক হয়ে তাকালো সায়েন। এই প্রথম ভাবি বলে ডাকলো সে সায়েনকে। সায়েন মুখে হাসির রেখা টানলো বলল,’নেক্সট এক্সাম কোন মাসে?? আমার বইগুলো বাড়িতে ফেলে এসেছি। পড়তে বসার কোন চান্সই নেই। আর ভার্সিটি তো!!’
তিনজনে এসব নিয়েই কথা বলতে লাগলো। কিন্তু সায়েন খেয়াল করলো আজকে তনয়া আর আরশির মন ভালো নেই। একটা কথা বলেই ওরা চুপ করে যায়। পরের কথা সায়েনই শুরু করে। জিজ্ঞেস করলে ওরা কিছুই বলে না। কথা বলার মাঝেই দরজা দিয়ে আরাদকে যেতে দেখলো সায়েন। আরাদ ব্যস্ত পায়ে চলে গেল কোনদিকে না তাকিয়ে। আরাদ কি দেখেছে সায়েনকে?? বোধহয় না,যেভাবে চলে গেল!!সায়েন ঘাড় ঘুরিয়ে আবার ওদের সাথে কথা বলায় মন দিলো।
নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো আরাদ। দু’দিন ধরে বেশ পরিশ্রম করতে হচ্ছে ওর। এর সাথে আবার নতুন একটা যোগ হয়েছে। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে আকাশকে ফোন করলো সে। আকাশ ফোন রিসিভ করেই কিছু বলল সে আরাদকে। মুচকি হেসে আরাদ বলল,’গুড, ছয়দিনের মধ্যে সব খবর চাই আমার। উক্ত দিনটার জন্য অপেক্ষায় আছি আমি।’
ফোন কেটে চোখ বন্ধ করে ফেলে আরাদ। সায়েনের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। যা আরাদের ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলল। এই একটা মুখ আরাদকে প্রশান্তি দেয়। তাই চোখ বন্ধ করে কল্পনায় সেই মুখখানা দেখতে ব্যস্ত আরাদ।
রাত্রি বেশ গভীর,ছিমছাম পুরো বাড়ি। কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ। চিলেকোঠার ঘরে শুয়ে আছে সায়েন। কিন্তু ঘুম আসছে না। মনটা আরাদের কাছে চলে গেছে। আজকে একবারে জন্য ও আরাদ এলো না বলে বেশ অভিমান হয়েছে সায়েনের। কিন্তু হঠাৎ দরজার কড়াঘাতে উঠে বসে সায়েন।
#চলবে,,,,,,,,