চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-৪১+৪২

0
638

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৪১

মানুষের জীবনে কখনো এমন ঘটনা ঘটে যা জানার পর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। শ্বাস টেনে নিলেও তা ছাড়তে ভিশন কষ্ট হয়। ভারি বুক আর ভারি নিঃশ্বাস দুটোই যন্ত্রনাদায়ক।
ঠিক সেরকমই অবস্থা হয়েছে আরাদের। তামিমের ফোন পেয়ে ছুটে যায় আরাদ। আশেপাশের সব জায়গায় খোঁজে সায়েনকে। কিন্তু আশ্চর্য কোথাও নেই সায়েন। হঠাৎ করে গেলো কোথায় সায়েন?? ইতিমধ্যে আকাশও চলে এসেছে। সেও সব জায়গায় ইনফরমেশন পাঠিয়ে দিয়েছে সায়েনের ব্যাপারে। এটুকু সময়ের মধ্যে যাবে কোথায় সায়েন??তনয়া আরশিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে আরাদ। এই মুহূর্তে আরাদের মাথা একদম কাজ করছে না। সায়েনকে যে খুঁজে পেতেই হবে। তিনটা বছর সায়েনের থেকে দূরে ছিলো। কিন্তু এই পাঁচটা মাসে ওর প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে সায়েন। ওকে ছাড়া থাকা আরাদের পক্ষে অসম্ভব। সারারাত খোঁজাখুঁজির পরও সায়েনের কোন হদিস পাওয়া গেল না। ভোর বেলায় ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরলো আরাদ। বাড়ির কেউই দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। আরাদ গিয়ে সোফায় বসে পড়লো। দৃষ্টি ওর মেঝেতে নিবদ্ধ। চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কেউই আরাদের ভাবগতিক বুঝতে পারছে না। আরশি তনয়া এখনও কাঁদছে। আরশি বলল,’আ’ম সরি ভাইয়া। আমার জন্যই এসব হয়েছে। আমার ভাবিকে একা ছাড়া ঠিক হয়নি। যদি আমি ভাবির সাথে যেতাম তাহলে এসব হতো না। আ’ম রিয়েলি সরি।’

আরাদ চোখ তুলে শান্ত চোখে আরশিকে দেখে নিলো। কি বলবে সে??আর এখন বলেই বা কি হবে? আগে সায়েনকে খুঁজতে হবে। আরশির মুখে ভাবি ডাক শুনে নিলিমা আর হাসি বেগম দু’জনেই চমকালেন। নিলিমা বেগম মেয়েকে প্রশ্ন করলেন,’ভাবি কাকে বললি তুই?সায়েনকে??’
আরশি জবাব দিলো না। মুখ ফসকে ভাবি বলে ফেলেছে সবার সামনে। আরশির উওর না পেয়ে তিনি আরাদকে জিজ্ঞেস করে, ‘আরশি কি বলছে আরাদ??সায়েনকে ভাবি বলছে কেন??’
আরাদ করুন কন্ঠে বলল,’মা প্লিজ এখন এসব বলার সময় নয়। আমি সায়েনকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করো??’
আরাদকে উত্তেজিত হতে দেখে ইমজাদ ওয়াহেদ মুখ খুললেন,’আমি বলছি কেন আরশি সায়েনকে কেন ভাবি বলছে।’
হাসি বেগমও নিলিমা বেগমের মতো উৎসুক দৃষ্টি মেলে তাকালেন। ইমজাদ ওয়াহেদ বলতে লাগলেন,’যেদিন সায়েনকে এই বাড়িতে আরাদ প্রথম নিয়ে আসে সেদিনই ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। সায়েন আরাদের স্ত্রী। এটা ওইদিন আরাদ আমাদের জানায়। কিন্তু তখন বাড়ির পরিস্থিতি ভালো ছিল না। তোমরা সামিউক্তাকে নিয়ে মেতে ছিলে। তাই আরাদ সত্যিটা বলেনি। কিন্তু একদিন না একদিন তো সবাইকে সত্যি জানতেই হবে। তাই আজকে বলে দিলাম।’

স্তব্ধ হয়ে গেলেন নিলিমা বেগম। এতবড় সত্যি লুকানো হয়েছে তার থেকে। তাও আবার এতো দিন ধরে!!বিষয়টা তিনি হজম করতে পারলেন না। থম মেরে বসে রইলেন। আরাদকেও কোন প্রশ্ন করলেন না। পরিস্থিতি বেগতিক,এখন কিছু না বলাই শ্রেয়।
সবাই চুপচাপ, নিঃশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে চার দেয়ালের মাঝে। আরাদ সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। ফোনটা বেজে উঠতেই তাড়াতাড়ি রিসিভ করলো সে। আকাশের কল ছিল। সে কোন খোঁজ পায়নি সেটাই জানালো। ফোন রেখে হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। সায়েনকে ছাড়া থাকা অসম্ভব।

কিছু সময় চুপচাপ কেটে গেল। বেলা একটু গড়িয়ে গেল তবুও সবাই আগের স্থানে স্থির বসে আছে। তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। কেউ কোন প্রতিত্যুর করলো না। একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলতেই একটা মেয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। তার কোলে বাচ্চা। তিন থেকে চার বছর হবে হয়তো। মেয়টা ভেতরে আসতেই সবাই অবাক হয়ে সেদিকে তাকালো। কারণ কেউই চেনে না মেয়েটাকে। এমনকি আরাদ ও না। তবে মেয়েটার পেছন থেকে একজন পুরুষ এগিয়ে এসে দাড়াতেই সোজা হয়ে বসল আরাদ। বেশ অবাক হয় সে ফাহিমকে এই সময় দেখে। তবে এবার বেশ ক্ষোভ জন্মায়। কারণ এর আগের বার সায়েন যখন আরাদকে ছেড়ে চলে যায় তখনও ফাহিমের উপস্থিতি ছিলো। তাহলে এবারও কি আগের মতোই,,,,!!রাগ হলো আরাদের। এবার যদি ফাহিম কিছু করে তবে ওকে ছেড়ে দেবে না। আগের বার ক্ষমা করলেও এইবার সে কিছুতেই ক্ষমা করবে না। ফাহিম আরাদের দিকে তাকিয়ে বুঝলো যে আরাদ ওকে দেখে রেগে গেছে।
ফাহিম গায়ের শার্টটা টেনে ঠিক করে বলল, ‘আমি ফাহিম আপনারা আমাকে হয়তোবা চিনেন না তবে আরাদ চেনে।’
অতঃপর ফাহিম পাশের মেয়েটার দিকে ইঙ্গিত করে বলল,’মাই ওয়াইফ এন্ড মাই প্রিন্সেস।’
বলেই হাসলো ফাহিম। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো সবাই বেশ অবাক হয়েছে।সবার চাহনিকে উপেক্ষা করে ফাহিম ওর মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে চোখের ইশারা করতেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। একটু পর আবারো ফিরে আসলেন তবে একা নয়। তার একহাত সায়েনের হাত ধরে আছে। সায়েনকে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। আরাদের চিন্তিত গম্ভীর মুখে হাল্কা হাসি ফুটে উঠল। আরাদ উঠে দাঁড়াতে নিলে ফাহিম ইশারায় থামিয়ে দিলো। আরাদ আগের জায়গায় বসে সায়েনের দিকে তাকিয়ে রইল। ভালো করে দেখে নিলো সায়েনকে। হাতের কব্জিতে এবং মাথায় ব্যান্ডেজ। মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে সায়েন। আরশি তনয়া ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সায়েনকে। কান্নারত কন্ঠে তনয়া বলল,’তুমি ঠিক আছো ভাবি??জানো ভাইয়া কতো খুঁজেছে তোমাকে। সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’
সায়েন মাথা নেড়ে বলল,’আমি ঠিক আছি।’

আরাদের ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে সায়েনকে জড়িয়ে নিতে কিন্তু পারছে না। ভেতরের ছটফট করছে সে। ফাহিম আরাদের সামনাসামনি সোফায় বসে। ফাহিমের স্ত্রী রিয়া মেয়েকে নিয়ে ফাহিমের পাশেই বসলো। সে ইশারায় সায়েনকেও তার পাশে বসতে বলল। সায়েন তাই করলো। ফাহিম কোন ভনিতা না করেই বলে উঠলো,’উপকারির উপর ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই হয়তো উপরওয়ালা কাল আমাকেই পাঠিয়েছিল। তাই সেখানে আমার আগমন ঘটিয়েছে।’
বলেই সে এক পলক সায়েনের দিকে তাকালো। তারপর আরাদের দিকে তাকিয়ে বড় একটা শ্বাস ফেলে বলেতে লাগলো,’কাল যখন ব্লাস্ট হয় তখন আমি আর আমার স্ত্রী বাড়িতে ফিরছিলাম। হঠাৎ করেই সায়েন আমাদের গাড়ির সামনে এসে পড়তেই সাথে সাথে ব্রেক করি। গাড়ি থেকে নেমে দেখি রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে। তখন আমিই হসপিটালে নিয়ে যাই। পরে জানতে পারি সায়েনকে সবাই হন্নে হয়ে খুঁজছে। ভাবলাম আরেকটু টেনশন দেই আরাদকে। তাই রাতে আর জানাইনি। তাছাড়া সায়েনের তখনও জ্ঞান ফেরেনি। ডক্টর বলেছে দেরি হবে জ্ঞান ফিরতে। তাই এখন এলাম। এজন্য সরি বলতে পারব না কিন্তু আরাদ।’
বলেই মুচকি হাসলো ফাহিম। আরাদ হাসতে পারলো না। সে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘শত্রুতা তাহলে এখনও রয়ে গেছে??’

‘কিছুটা তো থাকতেই হবে তাই না??সব শত্রুদের বন্ধু হতে নেই।’

এবার আরাদ ফিচেল হাসলো। মুখ ফুটে কিছু বলল না। ইমজাদ ওয়াহেদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললেন,’তোমাকে ধন্যবাদ!!আমরা সবাই কালকে থেকে চিন্তিত ছিলাম। আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।’

ইমজাদ ওয়াহেদ কে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘নো‌ আঙ্কেল!! আমার উপকার টা সামান্য। তার থেকে অনেক বড় উপকার আমি আরাদের থেকে পেয়েছি। যাই হোক আপনারা আমার উপর কৃতজ্ঞ হবেন না। এতে আমার খারাপ লাগবে।’
ফাহিমের মুখের এরকম স্বাভাবিক কথাবার্তা আরাদকে অবাক করে দিয়েছে। বলতে গেলে ভুতের মুখে রাম নাম। রিয়া আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,’তুমি সায়েনকে রুমে নিয়ে যাও। এখন ওর রেস্টের প্রয়োজন। ডক্টর আজকের দিনটা ওকে হসপিটালে রাখতে বলেছিল। কিন্তু সায়েনের জোরাজুরিতে আসতেই হলো।’

আরশি তাই সায়েন কে নিয়ে চলে গেল। ওরা চলে যেতেই রিয়া সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আপনারা সবাই একটু খেয়াল রাখবেন সায়েনের। এই অবস্থায় একটা এক্সিডেন্ট বুঝতেই তো পারছেন। ডক্টর ছাড়তে চাইছিল না। অনেক কষ্টে মানিয়েছি। ডক্টর বলেছেন কয়েকদিন সম্পুর্ন বেড রেস্টে রাখতে। যদিও সব ঠিক আছে কারো কোন ক্ষতি হয়নি। তবুও সবাই একটু সতর্ক থাকবেন।’

সবাই চমকে গেছে রিয়ার কথায়। নিলিমা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,’কি বলছো তুমি?এই অবস্থায়, আবার বলছো সব ঠিক আছে?? মানে কি??’
ফাহিম আর রিয়া একে অপরের দিকে তাকালো। যেনো ওরাও অবাক হয়ে গেছে। রিয়া বলল,’মানে আপনারা জানেন না??সি ইজ প্রেগন্যান্ট। আড়াই মাস চলছে। আশ্চর্য!! আপনারা এতো কেয়ারলেস কেনো??’
এবারের ঝটকা মেনে নিতে পারলেন না নিলিমা বেগম। তার অগোচরে এতো কিছু হয়ে গেল অথচ তিনি জানতেই পারলেন না। তার পক্ষে বসে থাকা সম্ভব নয়। গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেলেন নিজের রুমে। আরাদ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। দৌড়ে সিঁড়ি ভেঙে চলে গেল। চিলেকোঠার ঘরে ঢুকতেই আরশি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো। আরাদ সায়েনের কথা জিজ্ঞেস করতেই আরশি জানালো সায়েন ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে গিয়েছে। আরশি মাথা নিচু করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সায়েনের বের হতে দেরি হলো। হাতে চোট পাওয়ায় দরুন একটু সমস্যা হলো। বের হতে প্রথমে চোখ গেল আরাদের দিকে। বসে ছিল আরাদ এতক্ষণ তবে সায়েনকে দেখে সে উঠে দাঁড়ালো। হালকা হেসে এগিয়ে গেল সায়েন।
আরাদ বিলম্ব না করে জড়িয়ে ধরে সায়েনকে। প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় আরাদের মন। ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। ভেবেছিল এই বুঝি আবার সায়েনকে হারিয়ে ফেলল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে সায়েনকে। ডানহাতে চোট থাকায় বাম হাত আরাদের পিঠে রাখলো সায়েন। আরাদকে আজকে খুশি লাগছে। চুম্বনে ভরিয়ে দিল তার প্রেয়শির সারা মুখ। জড়িয়ে নিলো ফের নিজের বক্ষে। চোখের কোণে জমা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। নিজেকে সৌভাগ্যবতি মনে করছে সায়েন। এরকম ভালোবাসা কজনেরই ভাগ্যে থাকে। আরাদ সায়েনকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বলল,’আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম সায়েন। তোমাকে হারাতে আমি চাইনা। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল সায়েন। থ্যাঙ্ক গড তুমি ঠিক আছো।’

‘আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয়নি।’

আরাদ সায়েনের হাতজোড়া নিজের মুঠোবন্দী করে নিয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘আমাদের যে ছোট্ট প্রিন্সেস আসছে তা তুমি বললে না কেন??’
মাথা নিচু করে হাসলো সায়েন। দৃষ্টি নত রেখেই বলল,’আমিও জানতাম না। কালকেই ডক্টর জানালো।’

‘কি??তুমি নিজের পরিবর্তন খেয়াল করোনি?’

‘আমি বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো এমনি অসুস্থ আর আপনি চিন্তা করবেন বলে বলিনি।’

আরাদ কিছুটা রাগি স্বরে বলে,’এইভাবেই সব লুকিয়ে যাও আমার থেকে?? তবে আর লুকানো যাবে না। এখন থেকে যদি সব কথা না বলো তাহলে তোমাকে পানিশমেন্ট পেতে হবে।’
সায়েন মাথা নেড়ে বলল,’ওকে!!’

‘আচ্ছা যখন গাড়ি ব্লাস্ট হয় তখন কোথায় ছিলে তুমি??আর ফাহিমের গাড়ির সামনে গেলেই বা কিভাবে??’

‘আমি তো গাড়িতে ফোন আনতে গিয়েছিলাম। ড্রাইভার আঙ্কেল ছিল না। গাড়ির দরজা লক করা ছিল তাই আমি আঙ্কেলকে খোঁজার জন্য আশেপাশে তাকাই। পেয়েও যাই। ওনাকে ডাকার পরও উনি সাড়া দিচ্ছিল না। সামনের দিকে হেঁটেই যাচ্ছে। আমি একটু এগোলাম। হঠাৎ করেই উনি কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আশেপাশে ভালো করে তাকালাম কিন্তু পেলাম না। আর তখনই তাকিয়ে দেখি আমাদের গাড়িটা ব্লাস্ট করেছে। দৌড়ে কাছে যাওয়ার আগেই আরেকটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে। তারপর আর কিছু মনে নেই। সকালে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি।আর তারপর ডক্টরের কাছে থেকে জানতে পারি,,,,,!!!’

আরাদ আবারও জড়িয়ে ধরে সায়েনকে। কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার পরশ। আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে সায়েন। তারপর নিজেও জড়িয়ে ধরে আরাদকে।

ফাহিম চলে গেছে। সবাই এখন যার যার রুমে। তনয়া আরশি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। তনয়ার থেকে জানতে পারলো সায়েন প্রেগন্যান্ট। এতে আরশিও খুশি হলো। তবে মায়ের কথা ভেবে চুপসে গেল সে। নিলিমা বেগম এরপর কি করবেন?? নিশ্চয়ই নতুন কোন ঝামেলা হবে এবার। তবে ঝামেলাটা বেশ বড়সড় হবে বলেই আরশির ধারনা। তনয়া বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে আছে। মনটা ওর ভালো নেই। ইফতিকে ওই অবস্থায় দেখার পর থেকে ওর মনটা বিষিয়ে গেছে একদম। সত্যিই কিছু কিছু মানুষের মুখোশের আড়ালে ঘৃণ্য চেহারা লুকিয়ে থাকে তা আজ ভালো করে বুঝতে পারছে তনয়া। হাতের উল্টোপিঠে শেষ অশ্রু বিন্দু মুছে নিলো সে। ভেবে নিলো আর কাঁদবে না। একজন খারাপ মানুষের জন্য কেন ও কাঁদবে?? শক্ত হয়ে বসে রইল তনয়া। এমন সময় আরশি এলো। তনয়ার দিকে ওর ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ইফতি ফোন করেছে। কালকেও অনেকবার করেছিল। তখন পরিস্থিতি খারাপ ছিল তাই বলিনি। এখন ধর,,,,’

‘কথা বলব না আমি। ফোন কেটে দে। আর এখান থেকে যা।’

আরশি অবাক হয়ে বলল,’কেন কথা বলবি না। তোর ফোনের কি হয়েছে?? তুই নাকি ওর ফোন ধরছিস না তাইতো আমকে ফোন করলো। নে ধর,,,’

রাগ চটে গেল তনয়ার মাথায়। এক আছাড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিলো ফোনটা। রেগেমেগে বারান্দা থেকে চলে গেল। আরশি বোকার মত দাঁড়িয়ে নিজের ভেঙে যাওয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করে তনয়ার কি হলো যে এতো রেগে গেল???

#চলবে,,,,,,,,

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৪২

বিয়ের পাঁচ মাসে নিলিমা বেগম কোন ক্ষণের জন্যও চিলেকোঠার ঘরটিতে পা রাখেনি। কিন্তু আজকে হঠাৎ আসায় সায়েন একটুখানি নয় বেশ অবাক হয়েছে। নিলিমা বেগমের গম্ভীর মুখটা ভাবাচ্ছে সায়েনকে সাথে ভয়ও পাচ্ছে সায়েন। কারণ,কালকেই সে জানতে পেরেছে যে নিলিমা বেগম আরাদ আর সায়েনের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গেছেন। এও জানেন সায়েন মা হতে চলেছে। এই ভেবেই সায়েনের ভয়টা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এসি অন থাকা সত্ত্বেও কুল কুল করে ঘামতে শুরু করেছে সায়েন। গলাটাও বেশ শুকিয়ে এসেছে। একা থাকার দরুন ভয়টা একটু বেশি পাচ্ছে সায়েন। আরাদ থাকলে একটু ভালো লাগতো। সায়েনকে এভাবে হাঁসফাঁস করতে দেখে নিলিমা বেগম এগিয়ে গেলেন সায়েনের দিকে। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসা ছিল সায়েন। নিলিমা বেগমকে আসতে দেখে উঠতে নিলেই তিনি ইশারায় সায়েনকে ওভাবেই বসে থাকতে বললেন। সায়েনও তার কথার নড়চড় করলো না। নিলিমা বেগম এগিয়ে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে সায়েনের পাশে বসে বাড়িয়ে দিলো পানির গ্লাসটা। কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেলো সে। নিলিমা বেগম গম্ভীর মুখে বললেন,’আরাদ বললো তুমি নাকি আমাকে খুব ভয় পাও??আমি কি কখনো তোমাকে বকেছি না খারাপ ব্যবহার করেছি?’

হালকা কেঁপে উঠলো সায়েন। নম্র নয়নে তাকালো সামনে বসা মধ্যবয়সী মহিলাটির দিকে। কাল বিলম্ব না করে অকপটে সে জবাব দিলো,’আসলে আমার মাকেও ভয় পেতাম আমি। কখনো মায়ের মুখের উপর কথা বলতাম না। তবে মা কিন্তু খারাপ ছিল না। আমাকে বোঝার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। তবুও একটা ভয় কাজ করতো আমার মাঝে। সেখান থেকেই এই ভয়টা। কাটিয়ে উঠতে পারছি না।’
মুচকি হাসলেন নিলিমা বেগম তারপর বললেন,’তোমাদের বিয়ের কথা আরাদ জানাতে বারণ করেছিল তাই তো?’
হ্যা বোধক মাথা নাড়ে সায়েন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিলিমা বেগম মনের কথা অভিব্যক্ত করতে শুরু করলেন,’আরাদের মুখে যেদিন প্রথম তোমার কথা শুনি আপত্তি করিনি। ওর খুশিতেই আমরা খুশি। কিন্তু যখন তুমি চলে গেলে তখন থেকে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল ও। কিছুতেই বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারছিলাম না। তুমি ওর কপালে ছিলে বোধয় এতো কিছু। যখন জানতে পারি তোমার ব্যাপারে তখন আমি আরাদকে বলি তোমাকে যেন নিজের জীবনে ফের না জড়ায়। আরাদ কিছু বলেনি, শুধু বলেছিল তুমি নিজেই নাকি আরাদকে চাও না। এতে সন্তুষ্ট হয়েছিলাম আমি। তোমাকে যেদিন এই বাড়িতে নিয়ে আনা হলো ওইদিনও আমার আপত্তি ছিল। মায়ের মন তো। ভেবেছিলাম তুমি থাকলে হয়তো আরাদের কোন বিপদ হয়ে যাবে। আরাদ আমাকে বলেছিল তোমাকে বোঝার চেষ্টা করতে। আমি তাও করিনি। কিন্তু যদি আরো আগে সেটা করতাম তাহলে হয়তো ভালো হতো। এতে দোষটা আমারই তাই না?’

সায়েনের চোখে ছলকে উঠলো পানি। এতকিছুর পরও কত শান্তভাবে কথাগুলো বলছেন নিলিমা বেগম। একদম সায়েনের মায়ের মতোই। এক ধ্যানে সে তাকিয়ে রইল শ্বাশুড়ির দিকে। সায়েন মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই নিলিমা বেগম বলে উঠলেন,’এখন থেকে পিছনের সব কথাই আমি ভুলে গেছি। তুমিও ভুলে যাও। চেয়েছিলাম ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে দেব। তা আর হলো কই। তোমার এই অবস্থায় তো এত ধকল নেওয়া সম্ভব না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বড় অনুষ্ঠান করবো না। তবে কিছু আত্মীয় আছে ওনারা আসবে তোমাকে দেখে যাবে এই আরকি। তবে আজকে নয় তুমি সুস্থ হও তারপর।’
বাধ্য মেয়ের মতোই মাথা নাড়ায় সায়েন। নিলিমা বেগম কথা বাড়ান না। উঠে চলে গেলেন। তিনি চলে যেতেই হাসলো সায়েন। মহিলাটি একদম ভিন্ন। মুখ দেখে বোঝাই যায় না যে তার ভেতরে নমনীয়তা আছে। এসব ভাবতে ভাবতেই আরাদ এসে ঢুকলো রুমের ভেতর সাথে কবিতাও এলো। আরাদের কিছু জিনিস পত্র এনে রাখলো সে। সায়েন অবাক হয়ে বলে,’এসব কেন এনেছেন??’

আরাদ ল্যাপটপটা টেবিলের উপর রেখে বলল,’আজ থেকে তোমার সাথে এখানে থাকব আমি। তাই আমার কিছু কিছু জিনিস পত্র আনলাম।’

সায়েন আর কথা বলল না। কারণ সকালে সে আরাদের কাছে ধমক খেয়েছে একা বাথরুমে যাওয়ার জন্য। কাল থেকে সে সায়েনকে শুধু ধমকেই যাচ্ছে। কোন কিছুই একা করতে দিচ্ছে না। আরাদের মুখের উপর কথা বলা তো ঝাড়ি খাওয়া তাই সায়েন চুপ করে গেল। কবিতা একেক করে সব রেখে চলে গেল। সায়েনের পাশে বসে ল্যাপটপ ঘাটতে লাগলো আরাদ। সায়েন হতাশ হয়ে তাকালো আরাদের দিকে। কাল থেকে বিছানায় বসিয়ে রেখেছে সায়েনকে সে। একটুও নড়তে দিচ্ছে না। সায়েনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরাদ ওকে বুকে টেনে নিল। সায়েনও মাথাটা এলিয়ে দিলো আরাদের বুকে। সায়েনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অন্যহাতে ল্যাপটপের কি-বোর্ডে আঙ্গুল চালাচ্ছে সে। শান্তি অনুভব করে সায়েন। ডানহাতটা আরাদের বুকের উপর রেখে চোখজোড়া বন্ধ করে দিলো। এই মানুষটার ভালোবাসা ছেড়ে যে কোথাও যেতে পারবে না সায়েন। হাজার বকা খেয়ে যদি এক চিমটি খাঁটি ভালোবাসা পায় তাহলে এরকম বকা খাওয়ার জন্য সে প্রস্তুত। আরাদ নিজের হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সায়েনকে।

_____________

সামিউক্তার বাড়িতে ফোর্স নিয়ে এসেছে আকাশ। যা দেখে সামিউক্তার বাবা অবাক হয়ে গিয়েছেন। দু’দিন আগেই তো সামিউক্তার জামিন হয়েছে। কিন্তু ওর ভাইয়ের জামিন নামঞ্জুর করেছে হাইকোর্ট। তবে সামিউক্তার কেস থেমে নেই চলছে। সাজা অনুযায়ী আবার ও সামিউক্তাকে জেলে যেতে হবে। পুলিশ দেখে সামিউক্তা দাঁড়িয়ে পড়লো। কিন্তু সে বেশি অবাক হলো আরাদকে দেখে। রক্তচক্ষু নিয়ে এগিয়ে আসছে সামিউক্তার দিকে যা সামিউক্তার মনে ভয় সৃষ্টি করছে। আরাদ গিয়েই থাপ্পড় বসিয়ে দিলো সামিউক্তার গালে। একটা নয় পরপর তিন টা। চড় মারা শেষে গলা চেপে ধরে সামিউক্তার। শ্বাস আটকে গেল ওর। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। সামিউক্তার বাবা মা দৌড়ে গেল আরাদকে ছাড়াতে কিন্তু পারছে না। অবস্থা খারাপ দিক এগোচ্ছে দেখে আকাশসহ দুজন পুলিশ মিলে আরাদকে ছাড়িয়ে নিল। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’আমি ওকে জানে মেরে ফেলব। ওর সাহস কিভাবে হয় সায়েনের দিকে হাত বাড়াবার?? পুলিশের হাতে না দিয়ে ওকে মেরে মাটিতে পুঁতে ফেললেই ভালো হতো।’
মা’কে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সামিউক্তা। আরাদের বলা কথাগুলো আরো ভয় পাইয়ে দিচ্ছে সামিউক্তাকে। সামিউক্তার বাবা আরাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’তুমি কিন্তু বেশি করছো আরাদ। আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস তোমার হয় কিভাবে?’

‘ভাগ্য ভালো আপনার মেয়ে এখনো জীবিত আছে।’
সামিউক্তার বাবা কিছু কথা বলার জন্য উদ্যত হলে আকাশ বলে উঠলো,’আপনি আপনার মেয়েকে ছাড়িয়ে এনেছেন ঠিকই কিন্তু সামলে রাখতে পারেননি। আমরা ওকে আবার অ্যারেস্ট করতে এসেছি তবে অন্য কারণে। জেল থেকে বের হয়েই ক্রাইম করেছে আপনার মেয়ে। সায়েনকে মারার চেষ্টা করেছিল সে। ট্রাকের ড্রাইভার এবং তার জবানবন্দি সাপেক্ষে আপনার মেয়ের নাম আছে। অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টি নিয়েই এসেছি আমরা।’
সামিউক্তার বাবা অবাক হয়ে গেল। মেয়েটা এতো নিচে নেমে এসেছে ভাবতেই ওনার ঘৃণা হচ্ছে। ছেলেমেয়ে দুটোকে সঠিক শিক্ষা দিতে উনি ব্যর্থ ভেবেই মাথা নিচু করে ফেললেন। সামিউক্তা বলল,’আমি কিছু করিনি বাবা। ওরা মিথ্যা বলছে।’

‘মিস সামিউক্তা,একটা কেস অলরেডি খেয়ে বসে আছেন। এবার এই কেসটা আরো জটিল হবে। চলুন আমাদের সাথে।’

দুজন মহিলা পুলিশ টানতে টানতে সামিউক্তাকে নিয়ে গেলেন। ছাড়া পেয়ে যে এরকম জঘন্য কাজ করবে তা ভাবেনি আরাদ। তাহলে সায়েনকে সে কোথাও একা ছাড়তো না। তবে এবার আর কোন ভুল আরাদ করবে না। কঠোর শাস্তি যাতে সামিউক্তাকে দেওয়া হয় তার ব্যবস্থাই করবে সে।

আকাশ আর আরশির বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। মাত্র সপ্তাহ খানেক বাকি। শপিং এ ব্যস্ত তনয়া। সবটাই ওর ঘাড়েই পড়েছে। সায়েন এই অবস্থায় না থাকলে হয়তো ওকে হেল্প করতো। কিন্তু তা আর এখন সম্ভব নয়।আর আরশি তো বিয়ের কনে। ওকে দিয়ে তো এতো কাজ করানো যায় না। এই ক’দিনে সে ইফতির মুখোমুখি হয়নি। তবে কাল শপিং মলে দেখা হয়েছিল। তামিম ছিল বিধায় ইফতি কথা বলতে পারেনি। ইফতিকে তনয়া ভুলে যাবে ভেবেছে। তাই ওকে ভোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ইফতির মতো ছেলেকে ভালোবাসা যায় না। ইফতির কথা ওর এখন মনেও পড়ে না। বিয়ের এতো কাজের চাপে মাথা থেকে ঝেড়ে বের করে দিয়েছে ইফতিকে। কিন্তু ইফতি দমেনি, অনবরত ফোন করে তনয়াকে। নিজের মনের কথা বলার আগেই সে তনয়ার কাছে খারাপ প্রমাণিত হয়ে গেছে। রোজ না আসলেও প্রায়ই রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে থাকে। নিষ্পলক চেয়ে থাকে বারান্দার দিকে। ভাবে এই হয়তো তনয়া আসবে কিন্তু না তনয়া আসে না। প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরে যায় সে। এই কয়দিনে ইফতির অবস্থাও বেগতিক। নিজের যত্ন নিতেও সে বেমালুম ভুলে গেছে। ইফতি ভাবছে ওর এরকম অবস্থা কি দেখেছে তনয়া?হয়তো খেয়াল করেনি। এখন তো সে ইফতিকে ঘৃণা করে। ওর দিকে তাকানোর সময়টুকুও তো তনয়ার নেই।
ইফতিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরশি মনে মনে সব বুঝে নিয়েছে। কিন্তু তনয়া সেদিনের পর থেকে মুখ খোলেনি। আরশি বারান্দা থেকে রুমে আসলো। দেখলো তনয়া খাটের উপর বসে বসে সব হিসাব মিলাচ্ছে। খাটভর্তি শাড়ি আর গয়না ছড়ানো ছিটানো। আরশি আসতেই তনয়া বলে উঠলো,’শোন এই শাড়িগুলো মা’কে দিয়ে আয়। সব মধ্যবয়সী মহিলাদের দেওয়া হবে। তোর গাঁয়ে হলুদে সবাই পড়বে।’
আরশি শাড়িগুলো একপাশে ঠেলে দিয়ে বলে, ‘ইফতি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তনু। আমি শিওর তোর জন্যই অপেক্ষা করছে সে।’

তনয়া থেমে গেল। কিছু সময় চুপ থেকে বলে,’বাদ দে ওসব অনেক কাজ এখনো বাকি।’

‘তনু তুই আমার থেকে কথা লুকাচ্ছিস কেন?আমি জানি তোরা দুজন দুজনকে পছন্দ করিস ভালোবাসিস। কিন্তু তাহলে এরকম করছিস কেন? বেচারা কষ্ট পাচ্ছে প্লিজ এরকম করিস না।’

তনয়া বেশ রেগে গেল বলল,’তুই যদি কখনো জানতে পারিস তুই যাকে ভালোবাসিস সে একটা খারাপ ছেলে। ড্রাগস নেয়,বাজে নেশা করে তাহলে তাকে আর ভালোবাসবি?ইফতি আমাকে কখনো ভালোবাসেনি। এটা ড্রাগসের মতোই একটা নেশা। নেশা কেটে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করবি না আমাকে।’
শাড়িগুলো নিয়ে তনয়া রুম থেকে বের হয়ে গেল। আরশি তপ্ত শ্বাস ফেলল শুধু। পুরো বিষয়টা এখনও ওর অজানা। তার মানে আকাশ এসব বলতেই চেয়েছিল ওরা শোনেনি। আকাশ তাহলে সবটাই জানে। আরশি ফোন নিয়ে ডায়াল করলো আকাশের নাম্বারে।

কয়েকদিন পেরিয়ে গেল দেখতে দেখতেই। আজকে আরশির গাঁয়ে হলুদ। পুরো বাড়ি সেজেছে সেজন্য। রঙ বেরঙের বাতি জ্বলছে চারিদিকে। বাড়ির বাগানটাও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। হলুদের স্টেজ বাগানেই সাজানো হয়েছে। সবাই রেডি হচ্ছে যার যার নিজের মতো। বাড়িতে আরাদের আত্মীয় স্বজনে গিজগিজ করছে। একটুও ফুসরত নেই কারো। বিয়ে বাড়িতে এরকম অহরহ ঘটে। চিলেকোঠার ঘরে তৈরি হচ্ছে সায়েন। কবিতা সায়েনকে সাহায্য করছে। শাড়ি নয়, বাসন্তি রঙের ল্যাহেঙ্গা পড়ছে। বাসন্তি রং টা দেখতে অনেকটা হলুদ রঙের মতোই লাগে। ভারি নয়,হালাকাই ল্যাহেঙ্গাটা। তনয়া পছন্দ করে কিনে এনেছে। ভালোই লেগেছে সায়েনের। হালকা সাজগোজ করে তৈরি হলো সায়েন। আরাদের আত্মিয়রা দেখবে সায়েনকে। অসুস্থ থাকায় নিলিমা বেগম কাউকে আনেননি। শেষে ঠিক করলেন আরশির বিয়েতে তো সবাই আসবে তখন না হয় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। কবিতার সাথেই বাইরে এলো সায়েন। অস্থির নয়নে চারিদিকে কঙ্খিত মানুষটিকে খুঁজে বেড়ালো কিন্তু পেলো না। তাই বাধ্য হয়েই গেল নিলিমা বেগমের কাছে। সবার সাথে পরিচিত হলো সায়েন। তবে কারো মুখে কোন অযৌক্তিক কথা শুনতে হলো না সায়েনকে। আগেই সবার মুখ আরাদ বন্ধ করে রেখেছে যাতে সায়েনকে কেউ কথা শোনাতে না পারে। তবুও সায়েন আর আরাদের অগোচরে নিলিমা বেগমকে অনেকেই অনেক কথা বলেছে। নিলিমা বেগম তাতে কান দেননি উল্টে তাদের কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। আর এই সব কিছুই হয়েছে সায়েনের অগোচরে। কারণ এসব শুনলে সায়েন কষ্ট পাবে যা কেউই চায় না। তাই কবিতাকে সবসময় সায়েনের পাশে থাকতে বলেছে যাতে কেউ সায়েনকে কটু কথা শোনাতে না পারে।
আরাদকে খুঁজে চলছে সায়েনের চোখ জোড়া। বোনের বিয়ের সব আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর কথাই ভুলে গেছে। একটু কি ওকে সময় দেওয়া যেতো না বা এক বার চোখের দেখা?? ভেবেই ফুঁসে ওঠে সায়েন। তবে তা ভেতরেই রয়ে গেল বাইরে প্রকাশ করলো না। সবার সাথে হেসে হেসেই কথা বলছে সে।
আরশিকে সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর করে। হলুদের সাজে সে বসে আছে স্টেজে। একে একে সবাই হলুদ লাগাতে ব্যস্ত আরশিকে। তনয়াও সায়েনের মতো ল্যাহেঙ্গা পড়ে নিজেকে কৃত্রিম সাজে সাজিয়েছে। হলুদ মাখানো হয়েছে আরশিকে সেভাবেই সেলফি তুলছে ওরা। কোথা থেকে যেন তামিম এসেও যোগ দিলো তাতে। তনয়া গিয়ে সায়েনকেও ডেকে আনলো। ফ্যামিলি ফটো তুলবে,সবাই উপস্থিত থাকলেও আরাদ লাপাত্তা। এতে সবার মনক্ষুন্ন হলেও কিছু করার নেই। কারণ আরাদ বাড়িতেই নেই। কোথায় যেন চলে গেছে সে। এমনকি আরশিকে হলুদ মাখাতেও পারেনি।
হলুদের অনুষ্ঠান শেষে চিলেকোঠার ঘরে ফিরে গেল। চেঞ্জ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কিন্তু ঘুমালো না,চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না কিছুতেই। আরাদের উপর একরাশ অভিমান জমেছে ওর। আজকে এতো সুন্দর একটা দিনে কোথায় চলে গেল?? আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে রাত আরো গভীরে চলে গেছে তা সায়েন টেরও পেলো না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠলো তবে ফিরে তাকালো না। তবে সায়েন বুঝলো যে আরাদ এসেছে। চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরলো সায়েন।

#চলবে,,,,,,,,,,,