চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-৪৩

0
606

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৪৩

শুভ্র রঙের পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে রুমে ঢুকলো আরাদ। সায়েনকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে হাতঘড়ির দিকে তাকালো সে। আড়াইটা বাজে,ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে সায়েনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো আরাদ। সায়েনকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো। এই ঘুমন্ত মুখটা দেখেই তো সে প্রথম এই সাধারণ রমনিটির মায়ার পরেছিল। পরে তা ভালোবাসায় রুপ নেয়। সেদিনের কথা মনে পড়তেই হাসিটা আরো গাঢ়ো হলো আরাদের। ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করলো সায়েনের বন্ধ চোখের পাতায়। সায়েন তবুও চোখ খুলল না। বুঝতে চাইলো যে আরাদ কি করছে?? এরপর আরাদ সায়েনের ঠোঁট স্পর্শ করতেই ঝটকা মেরে উঠে বসলো সায়েন। আচমকা সায়েনকে উঠতে দেখেও আরাদের কোন ভাবান্তর হলো না। সে বসে রইল আগের ন্যায়। মুখের হাসিটা এখনও আগের মতোই বিদ্যমান। সায়েন রাগন্বিত কন্ঠে বলে,’রাত বিরেতে কি শুরু করেছেন?ঘুমাতে দেবেন না নাকি? আপনার ঘুম নাই বা পেতে পারে কিন্তু আমার ঘুম পেয়েছে।’

আরাদ বসা থেকেই জবাব দিলো,’ওহ আচ্ছা, তুমি ঘুমাচ্ছিলে বুঝি??’
সায়েন মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে বলল,’তা দিয়ে আপনি কি করবেন শুনি? এতক্ষণ যেখানে ছিলেন সেখানেই যান।’

আরাদ উঠে গিয়ে সায়েনের পাশে বসলো। পাঞ্জাবির বোতাম গুলো খুলে দিয়ে বলল, ‘রাগ করেছো??’
কথাটা সায়েনের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিলো অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো। সে জবাব দিলো না। মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলো।আরাদ আরেকটু এগিয়ে গিয়ে সায়েনকে কাছে টেনে নিলো। মুখ ডুবালো সায়েনের ঘন কেশে। সে বুঝতে পেরেছে তার অভিমানীনির এক রাশ অভিমান হয়েছে। তাই সে অভিমান ভাঙাতে বলল,’আমাদের প্রিন্সেস কি আমার মতো হবে নাকি তোমার মতো??’

আরাদকে দূরে সরাতে চেয়েও সায়েন পারলো না। শক্ত বাঁধন খোলা ওর পক্ষে সম্ভব নয় তাই সে উওর দিলো,’মায়ের মতো হবে।’

সায়েনকে ছেড়ে চমকিত নয়নে তাকালো আরাদ। অব্যক্ত গলায় বলল,’শ্বাশুড়ি মা!!ওহ মাই গড!!’
সায়েন ক্রোধ দৃষ্টি মেলে তাকালো আরাদের দিকে। আরাদ মেকি হেসে বলল,’নাহ,ঠিক আছে। সেরকমই হবে আমার কোন সমস্যা নেই। তবে দেখো তখন যেন আমাকে আবার চিলেকোঠার ঘরে লুকিয়ে না থাকতে হয়।’

সায়েন হাসলো না। রাগটা ওর এখনো কাটেনি। আরাদ ওর হাত দুটো ধরে আদুরে গলায় বলল,’প্লিজ রাগ করো না সায়েন। আসলে জোনায়েদ কে আনতে ইয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম। এতো দিন দেশের বাইরে ছিল ও। আরশির বিয়ের জন্য এসেছে। আবার চলে যাবে। তুমি তো জানো ও আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। তাই দেরি হয়ে গেছে।’

সায়েনের রাগ একটু হলেও কমলো। কন্ঠস্বর নমর করে বলল,’আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর কথা বলবেন না হয়।’

আরাদ আর কি করবে চলে গেল ফ্রেশ হতে।টাউজার আর গেঞ্জি পরে সে বের হলো। সায়েন বিছানায় হাঁটু মুড়ে বসে আছে। আরাদ এসে ওর পাশে টান হয়ে শুয়ে পড়ল। সায়েন একপলক আরাদকে দেখে নিয়ে সেও শুয়ে পড়লো। সায়েনের হাতটা আরাদ মুঠোয় নিল। সায়েনের দিকে ফিরে তাকাতেই সায়েন বলল,’আপনি কিভাবে জানেন আমাদের মেয়ে হবে??’

আরাদ হেসে জবাব দিলো,’ওটা সিক্রেট, তুমি দেখে নিও আমাদের কিউট প্রিন্সেস হবে ঠিক তোমার মতোই। তোমার মতো করে হাসবে কথা বলবে। রাগ করলে ঠিক তোমার মতোই ঠোঁট ফোলাবে। আর আমি দেখব।’

‘নাহ, আমার বেবি আমার মতো হবে না,ওর বাবার মতো হবে।’

‘উহু, আমার মতো হবে না তোমার মতো হবে।’

সায়েন অবাক হওয়ার ভান করে বলল,’আমি কি বলেছি আমার বেবি আপনার মতো হবে? আমি বলেছি ওর বাবার মতো হবে।’

‘তাহলে আমি কে??’

সায়েন অপর পাশ ফিরে শুয়ে মুচকি হেসে বলল,’কি জানি??’

আরাদ এবার বোকা বনে গেলো। পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সায়েনকে। কোমড়ে হাত দিয়ে শুড়শুড়ি দিতে দিতে বলল,’কি জানি?তাই না!!দেখাচ্ছি মজা।’

সায়েন হাসতে হাসতে আরাদের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। রাতটা দুষ্টুমি করেই কাটিয়ে দিলো দু’জনে।

আজকে আরশির বিয়ে,বহু প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজকে সে নিজের প্রিয় মানুষটির অর্ধাঙ্গিনী হতে চলেছে তার সাথে কষ্টও হচ্ছে। এতদিন এই বাড়ির সাথে অনেক স্মৃতি গড়ে উঠেছে ওর। তনয়ার সাথে কাটানো সময় আর দুষ্টুমি গুলো খুব মিস করবে সে। নিজের রুমে বসে হাতের মেহেদির গাঢ় রঙের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশের নামটা স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো নামটার উপর। তখনই একটা নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো,’আর কাঁদতে হবে না বিয়ের কনে। আপনাকে সাজাতে হবে এখন। কান্না করে সাজ নষ্ট করলে মাইর হবে শুধু।’

তনয়ার কথায় চোখ তুলে তাকালো আরশি। চোখের কোনে তখনও জলরাশি বিদ্যমান। তনয়া ওর পাশে এসে বসতেই জড়িয়ে ধরে তনয়াকে। অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে বলে, ‘আই উইল মিস ইউ!!’

এবার তনয়ার চোখেও পানি চলে আসে। কোনরকমে নিজেকে সামলিয়ে সে বলে,’মি টু। কিন্তু এখন তো সাজতে হবে তাই না। আর ভার্সিটিতে তো রোজ দেখা হবে। নো টেনশন ডু ফুর্তি।’
কান্নার মধ্য দিয়ে হেসে ফেলে আরশি। পার্লারের মেয়েরা আরশিকে সাজাতে শুরু করে দিল। তনয়াও রেডি হয়ে নিলো। সন্ধ্যার পর বিয়ে বাড়ি আরেকটু জমজমাট হয়ে উঠলো। এরপর তো সব ঠান্ডা করে দিয়ে চলে যাবে বরপক্ষ তাই এখন এতো জমজমাট হয়ে উঠছে। তনয়া গোল্ডেন কালারের ল্যাহেঙ্গা পড়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাজতে হয়েছে। আরশির জন্যও খুব খারাপ লাগছে ওর। যতই আরশির সামনে হেসে উড়িয়ে দেয় মনের কোন এক কোণে খারাপ লাগাটা বিরাজ করছে ঠিকই। এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে সব কিছুর তদারকি করছে তনয়া। ভার্সিটির কিছু ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করেছে। তাদেরকেই আপ্যায়ন করছে। ভিড়ের মাঝে হাঁটার সময় হাতে টান পড়তেই ঘুরে তাকালো সে। তবে ইফতিকে দেখে সে মোটেও অবাক হলো না। তাই সে শান্ত ভাবেই বলল,’হাত ছাড়ুন, এখানে অনেক মানুষ আছে দেখলে খারাপ ভাববে। আপনাকে কে খারাপ ভাববে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমার সম্মানে আমি এতটুকু দাগ লাগতে দিতে পারব না।’

তনয়ার হাত ছেড়ে দিলো ইফতি। অনুনয় করে বলল,’তাহলে একান্ত কথা বলি??না করো না প্লিজ। আমি সত্যি তোমাকে কিছু বলতে চাই। এরপর নাহয় আর কথা বলো না। তবে লাস্ট বার আমার কথাটা শোনো??’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বড় শ্বাস ফেলে তনয়া বলল,’ঠিক আছে, চলুন আমার সাথে।’

তনয়া বাড়ির বাগানের অপর পাশে নিয়ে গেল ইফতিকে। ওখানটায় এখন কেউ নেই। তাই ওখানেই কথা বলা যাবে। তনয়া ঘুরে দাঁড়িয়ে ইফতির দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,’কি বলবেন??আর হ্যা আমার কাছে বেশি সময় নেই যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।’

মাথা নিচু করে মৃদু হাসলো ইফতি। তারপর তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,’সত্যি কি তোমার সময় নেই আমার জন্য?নাকি সবই বাহানা মাত্র?’
উওর দিলো না তনয়া। তবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ওর অজানা। তাই কথা ঘোরাতে বলল, ‘এটাই কি আপনার কথা??’

‘নাহ কথা তো এটা না। আমি অন্যকিছু বলতে চাই। এর পর হয়তো তোমার সাথে আর দেখা নাও হতে পারে তাই ভাবলাম কথাগুলো বলে যাওয়াই ভালো।’

তনয়ার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। অজানা ভয় জেঁকে ধরলো মনের ভেতর। কিন্তু চেহারায় তা প্রকাশ পেলো না। ইফতি তার কথা শুরু করল,’জানো তনয়া আমার লাইফটা সম্পূর্ণ আলাদা। তোমরা যেমন বাবা অথবা মা কিংবা ভাইবোনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারো আমি তেমন পারি না। বাবার সাথে কথা বলতে চাই তো তার সময় হয় না। অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মায়ের সাথে খোলাখুলি কথা বলতে চেয়েও পারিনি। কেমন যেন লাগতো। তাই ঠিক করি অন্তত ভাইয়ার সাথে সব কথা শেয়ার করাই যায়। কিন্তু না,ভাইয়া পড়াশোনায় ব্যতিব্যস্ত। তার কথা বলার টাইম নেই। আর এটাই আমার অসম্পূর্ণ জীবনের গল্প। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা ঘোরাঘুরি বাজে নেশায় জড়িয়ে ফেলি। কিন্তু ওদের সাথেও মন খুলে কোন কথাই শেয়ার করতে পারি না। কিন্তু লাইফে ফার্স্ট টাইম তোমার সাথে মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পেরেছি। আমার পছন্দের রং কি আমি কি খাই?? কি আমি অপছন্দ করি!
কোথায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করি!!এসব কিছু আমার পরিবারের কেউই জানে না। শুধু মাত্র তুমি জানো। আমাকে পরিবর্তন করতে আমার পরিবার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু ফলাফল জিরো। আর তুমি না চাইতেও আমাকে বদলে দিয়েছো। এজন্য ধন্যবাদ তোমাকে!! কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছো যে এতকিছুর পর তুমি আমাকে ছেড়ে যাও তাহলে আমার এই পরিবর্তনের কি দরকার ছিল??’

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো ইফতি। এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে তাকালো তনয়ার দিকে। স্তব্ধতা বিরাজ করছে তনয়ার মধ্যে। চোখে পানি টলমল করছে। ইফতি আবার বলে উঠলো,’খুব বেশি ভালোবাসি তোমাকে। এই কথটা বলতে আমি বেশি সময় নিয়ে ফেললাম বলে সরি। আমার মনে হয়েছিল তোমার উওরটা দেওয়া জরুরি তাই দিলাম। কিন্তু দেরি করে ফেলেছি বলে তোমার প্রশ্নটা তুমি তুলে নিয়েছো!! তারপর ও থ্যাঙ্কস আমাকে পরিবর্তন করার জন্য। ভালো থেকো আসি!!!’

কথা শেষ হওয়া মাত্র ইফতি সেখানে এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না। ঘুরে হাটা শুরু করে দিল। পেছন ফিরে তাকালো না তনয়ার দিকে। ওর জন্য যে তনয়া অশ্রু ঝরাচ্ছে তা কি সে জানে? শুধু নিজের কথাগুলো চটপট বলে এলো কিন্তু তনয়ার যে কিছু বলার ছিল তা কি ইফতি জানতে চেয়েছে??ইফতি চলে যাচ্ছে কিন্তু তনয়া আটকাতে পারছে না। কিন্তু ওর ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ইফতিকে আটকাতে। জোর করে অধিকার খাটাতে,”চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। তুমি আমার জন্য বদলেছো তাই আমার কাছেই থাকবে। আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।” কিন্তু কথাগুলো তনয়ার মনের ভেতরেই রয়ে গেল। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়েই চমকে উঠে তনয়া। পেছনে না ফিরেই চোখ মুছে ঘুরে তাকালো সে। সায়েনকে দেখে ঘাবড়ে গেল। আমতা আমতা করেই বলে উঠলো,’ভাবি তুমি এখানে??’

‘মানুষ সত্যিকারের ভালোবাসা পায়না আর তুমি ফিরিয়ে দিচ্ছো?? এবার যদি ইফতিকে তুমি হারিয়ে ফেলো তাহলে হয়তো আর ফিরে নাও পেতে পারো। দেখ আমি কিন্তু ভাবিনি যে তোমার ভাইয়ার সাথে আদৌ আমার দেখা হবে কি না?তিনটা বছর তো কম সময় নয়। কিন্তু আমার ভাগ্য চেয়েছিল বলেই তোমার ভাইয়াকে পেয়েছি আমি। কিন্তু সবার ভাগ্য কি এক হয়?? তোমার ভাগ্যে হয়তো নাও থাকতে পারে। তাই ইফতিকে আটকাও। আমার থেকে তুমি বেশি ভালো চেনো ইফতিকে। তোমার জন্য যেহেতু ও বদলেছে সেহেতু ওকে তুমি নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে। একটা ভালো সুন্দর জীবন দিতে পারবে ওকে। তাই দেরি করো না। আটকাও গিয়ে, নাহলে দেরি হয়ে যাবে।’

সায়েনের কথাগুলো ভেতরে নাড়া দিয়ে উঠলো তনয়ার। সম্পূর্ণ হুঁশ ফিরলো যেন। ছুট লাগালো ভিড়ের মধ্যে দিয়ে। খুঁজতে লাগল একটু আগে হারিয়ে যাওয়া চেনা মুখটাকে।
সায়েন তা দেখে মুচকি হাসলো। একটু আগে শাফিন আর রুহি এসেছে। বিয়েতে ওদের ইনভাইট করা হয়েছে। শফিকুল ইসলাম আসেননি। সায়েন ওদের সাথেই কথা বলছিল। হঠাৎ ইফতিকে তনয়ার হাত টেনে ধরাতে কিছু আন্দাজ করেছে সে। সায়েন আগে থেকেই সব জানতো। আরশি সব জানিয়েছে ওকে। তাই ওদের পিছু নিয়ে সব কথোপকথন শুনেছে। সায়েন মনে হচ্ছে ইফতি সত্যি ভালো হয়ে গেছে। শেষ বারের মতো একটা সুযোগ ওকে দেওয়াই যায়।

ফোনের শব্দে ধ্যান ভাঙে সায়েনের। তাকিয়ে দেখলো আরাদের ফোন। কালকে রাগ করার দরুন আজকে সারাদিন জ্বালিয়েছে সায়েনকে। কাজের ফাঁকে সময় পেলে এসে এটা ওটা বকবক করেছে আর দূরে গেলে ফোন দিয়ে। সায়েন ফোন রিসিভ করলো না। সে জানে আরাদকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে। তাই সে সেদিকেই গেল।

বিয়ের পড়ানো শেষ হয়ে গেছে। সব নিয়ম কানুন মেনে আরশির বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। বাবা কাকাকে ঝাপটে ধরে কেঁদে চলছে। ইমজাদ ওহায়েদ ও আড়ালে অশ্রু ফেলেন তবে মেয়েকে বুঝতে দেন না। বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে শেষে ভাইদের কাছে গেল সে। তামিম আর আরাদ একসাথেই ছিল। আরাদ আরশিকে সামলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। অপর পাশের দরজা খুলে আকাশ ও বসে পড়লো। হঠাৎ করেই গাড়ির দরজা খুলল তামিম। আরশি তখনও কেঁদে যাচ্ছে। তামিম মাথা নত করে আরশিকে বলল,’তোর জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে, শেষমেষ পুলিশকে বিয়ে করলি!! তোকে তো ঠিকমতো সময়ই দিতে পারবে না। দেখ এখন বাড়িতে গিয়ে আবার চোর ধরতে বেরিয়ে পড়ে কি না?আমি তো ভাইয়াকে বারন করেছিলাম। তোর জন্য একটা সুন্দর রিকশাওয়ালা ঠিক করে রেখেছিলাম। যে তোকে সারাদিন রিকশায় করে ঘোরাবে আর সময় ও দিতে পারবে।’
কাঁদার মধ্যে ও হেসে দিল আরশি। তামিমের পিঠে চাপড় মেরে বলে,’তুই সত্যি অসভ্য!!’

তামিম মুচকি হাসলো তারপর আরশির হাতে চকলেট গুঁজে দিয়ে বলল,’ভালো থাকিস। তোকে জ্বালেতে হুটহাট করে চলে যাব কিন্তু।’

আরশি মাথা নেড়ে বলল,’তনু কোথায় ওকে তো দেখছি না??’

তামিম আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,’দেখছি না তো। দেখ তোর বিয়ে হয়ে গেছে তাই বোধহয় নিজের জন্য এই ভিড়ে পাত্র খুঁজছে।’

আরশি আবারো হেসে দিলো। বধু নিয়ে চলে গেল বরের গাড়ি। সবাই গাড়ি যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। আস্তে আস্তে কয়েকজন আত্মীয় ছাড়া সবাই চলে গেল।

#চলবে,,,,,,,