#চিলেকোঠার_প্রেম
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
#পর্ব_৩১
নয়ন জুড়ে বিষ্ময় খেলা করছে সায়েনের। এতটাই বিষ্মিত যে চোখের পলক ফেলতে সে ভুলে গেছে। দরজার কপাটে হাত রেখে সায়েনের দিকে হালকা ঝুকলো আরাদ সায়েন সাথে সাথে পিছনে ঝুঁকে গেল। একটা বোটকা গন্ধে নাক কুঁচকে সে ওড়না মুখে ধরলো। গন্ধটা সহ্য হচ্ছে না সায়েনের। ও বুঝতে পারলো যে আরাদ ড্রিংক করেছে। মদের গন্ধের সাথে পরিচিত নয় সায়েন। তবে আরাদের চাহনি আর চালচলন দেখে সায়েন তা বুঝেছে। দরজায় কড়াঘাতের শব্দে সায়েন উঠে দরজা খুলতেই ঢুলুঢুলু অবস্থায় আরাদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে। অবস্থা তার নাজেহাল। টলমল পায়ে ভেতরে ঢুকলো আরাদ। সায়েন আরাদের দিকে ফিরেই উল্টোপায়ে ভেতরে ঢুকলো। গন্ধটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সায়েন প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ড্রিংক করেছেন কেন আপনি??’
ঘাড় কাত করে মুচকি হাসলো আরাদ। হাসিটা অত্যন্ত স্নিগ্ধ কিন্তু সায়েনের কেন জানি হাসিটা সুবিধার ঠেকলো না!!আরাদ নেশাক্ত কন্ঠে বলল,’তোমার জন্য ড্রিংক করেছি। তোমার জন্য আমি দেবদাস হয়েছি তা কি দেখো না তুমি??’
‘কি আজেবাজে কথা বলছেন আপনি??মদ খেয়ে রাত দুপুরে কি শুরু করেছেন বলুন তো??আর দেবদাস হলেন কবে থেকে??’
আরাদ আরেকটু কাছে এগিয়ে আসলো সায়েনের স্ফুটস্বরে বলল,’যবে থেকে তুমি আমার পারু।’ পরক্ষণে কিছু চিন্তা করে আরাদ বলল,’নাহ আমি কেন দেবদাস হবো? আমাদের তো বিয়ে হয়েছে তাই না। তাহলে আমরা কি হতে পারি??’
‘আপনি নিজের রুমে যান। ওখানে গিয়ে সব মাতলামি করুন।’
আরাদ দুহাতে সায়েনের বাহু চেপে ধরে কাছে টেনে আনলো। আরাদের দিকে বড়বড় চোখে
তাকালো সায়েন। সায়েনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,’আমার ভালোবাসার পরিপূর্ণ নাম কি দেওয়া যায় বলতে পারো??’
সায়েন চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলেছে।আরাদের থেকে গন্ধটা আরো তীব্র হয়েছে। আর নিতে পারছে না সায়েন। আরাদ সপ্তপর্ণে সায়েনের কানের পেছন দিকটায় শব্দ করে চুম্বন করতেই কেঁপে উঠলো সায়েন। এই মুহূর্তে ওর রোমান্সের মুড নেই। বমি উগ্রে আসছে ওর। হালকা ধাক্কা দিতেই আরাদ সরে যায়। আরাদ সায়েনের দিকে এগোতে এগোতে বলল,’আমাকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দেবে। তোমার কথা ভেবে ঘুম আসছে না।’
আরাদকে এগিয়ে আসতে দেখে সায়েন এক লাফে খাটের উপর উঠে দাঁড়ালো। বালিশটা আঁকড়ে ধরে বলল,’চলে যান আপনি। আপনার থেকে মদের গন্ধ আসছে। আমার সহ্য হচ্ছে না।’
‘স্বামীর সবকিছু বউয়ের সহ্য করতে হয়। জানো না তুমি??’
আরাদ খাটের উপর উঠতেই অপরদিক দিয়ে সায়েন নেমে পড়লো। কি ঝামেলায় পড়লো? হঠাৎ এতটা ড্রিংক কেন করলো আরাদ??সায়েন বুঝতে পারছে না ও কি করবে??আর একা ওর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। সায়েন কোনরকমে বাইরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। আরাদকে ভেতরে রেখেই সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নিচে নামলো সায়েন। দিক দিশা না পেয়ে তনয়ার রুমে গিয়ে দরজায় নক করলো। কিছুক্ষণ পর চোখ কচলাতে কচলাতে বের হলো তনয়া। সায়েনকে দেখে অবাক চোখে তাকালো তনয়া বলল,’ভাবি এতো রাতে তুমি!!কোন সমস্যা??’
সায়েন সবকিছু বলে দিলো। তনয়াও বেশ অবাক হয়েছে। সায়েন বলল,’আমি বুঝতে পারছি না যে কি করব??একটু সাহায্য করো।’
‘আমরা দুজন মেয়ে কি করবো??আরশি তো ঘুম কাতুরে। এখন ওর কানের কাছে বোম ফাটালেও উঠবে না। এক কাজ করি ভাইয়াকে ডেকে আনি।’
দু’জন গিয়ে তামিমকে ডেকে তুলল। বেশ বিরক্তি নিয়ে বের হলো তামিম। কিন্তু যখন আরাদের অবস্থার কথা শুনলো তামিম ও অবাক হলো। দ্রুত ওরা তিনজনে চিলেকোঠার ঘরে গেল। আরাদ বিছানায় টান হয়ে শুয়ে আছে। দরজা খোলার শব্দে সেদিকে ফিরে তাকালো আরাদ। তিনজন আরাদের কাছে আসতেই সে ভ্রু কুচকালো। তামিম বলল,’ভাইয়া তুমি ড্রিংক করেছো বুঝলাম। কিন্তু এতটা মাতাল হলে কেন??আগে তো কখনো এরকম হতো না তাহলে???’
আরাদ হাত উঁচিয়ে তর্জনী আঙ্গুল সায়েনের দিকে তাক করে মৃদু হেসে বলল,’ওর জন্য মাতাল হয়ে গেছি। কি জানি কি খাওয়ালো আমাকে?? তারপর থেকেই এই অবস্থা আমার।’
কথাগুলো আরাদ এলোমেলো ভাবে বলল। সায়েনের কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। উদ্ভট কথা বলছে আরাদ। এরকম লজ্জায় ফেলার মানে কি?? তামিম আর তনয়া ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। সায়েন গমগমে কন্ঠে বলল,’বাজে কথা বলছেন কেন?আমি আপনাকে কি খাওয়ালাম??নিজেই তো মদ খেয়ে এসেছেন??’
আরাদ হাতে ভর দিয়ে উঠে বসে বলল,’তুমি আমাকে নেশাক্ত পানিয় খাইয়েছো। যার কারণে আমার হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে।’
বলেই দুহাত বুকে গুজলো। সায়েনের এবার লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। এক ছুটে রুম থেকে বের হতে পারলে ভালো হতো। মাথা নুইয়ে ফেলে সায়েন। তনয়া আর তামিম এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল। সায়েনের এবার আরো লজ্জা লাগছে। আর রাগও হচ্ছে আরাদের উপর। সারাদিন কোন খবর না নিয়ে রাতে এসেছে মাতাল হয়ে। তামিম তনয়াকে বলল,’লেবুর শরবত নিয়ে আয়। খাইয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। মনে হয় আজকে ডাবল ডোজ নিয়েছে।’
তনয়া মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সে ফিরলো শরবতের গ্লাস নিয়ে। ওরা তিনজন জোর করে আরাদকে লেবুর শরবত খাইয়ে দিল। তামিম বলল,’এখন কি করবো??ভাইয়া কি এখানে থাকবে নাকি??’
সায়েন চটজলদি বলে উঠলো,’নাহ ওনাকে নিজের রুমে দিয়ে আসুন।’
হাসলো তামিম আবারও। তারপর আরাদকে ধরে উঠিয়ে নিয়ে গেল। সায়েন বুকে হাত দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। আরাদকে এভাবে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সায়েন। দিলো সবার সামনে মাথা নত করিয়ে। এরপর তামিম আর তনয়াকে কিভাবে মুখ দেখাবে??ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কোনভাবে বিনা নিদ্রায় সেই রাত্রি যাপন করলো সায়েন।
পরেরদিন আরাদ এলোমেলো ভাবে নিজেকে খাটের উপর আবিস্কার করলো। মাথা ধরে উঠে বসলো সে। মেঝেতে বোতলগুলো পড়ে থাকতে দেখে হুস ফিরল ওর। কাল রাতে এতো ড্রিংক করে ফেলেছে!! ভাবতেই আরাদ বিষ্মিত। কিন্তু তারপর কি হয়েছিল তা মনে করার চেষ্টা করছে। আধো আধো মনে পড়লেও পুরোটা মনে পড়ছে না। শুধু এটুকু মনে আছে যে ও সায়েনের কাছে গিয়েছিল। ফ্রেশ হয়ে আর সায়েনের কাছে যাওয়া হলো না আরাদের। ড্রিংক করার কারণে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। তাই তাড়াহুড়ো করেই অফিসে চলে গেল আরাদ।
তারপর থেকে আরাদ নামক মানুষটির দেখা মিলল না সায়েনের। সেদিন রাতভর সায়েন মাত্র একটা কথাই চিন্তা করেছিল যে ও কিভাবে আরাদকে মুখ দেখাবে। লজ্জায় তো শেষ হয়েই যাবে। কিন্তু ওর কথা যে সত্যি হবে তা ভাবতেই পারেনি সায়েন। অনেক বার চেষ্টা করেও আরাদের সাক্ষাত পায়নি সায়েন। ওর চিলেকোঠার ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কে বারণ করছে তা জানতে পারেনি সায়েন। কবিতা শুধু বলেছে ওর এই ঘর থেকে বের হওয়া বারণ। শুধু আরাদ নয়, আরশি তনয়া তামিম কারো দেখাই নেই। ভেতরে ছটফট করে দিন কাটাচ্ছে সায়েন।আরাদের সান্নিধ্য পেতে আঁকুপাঁকু করছে সায়েন। তাহলে কি ও ভালোবাসি না বলে ভুল কাজ করলো??যদি আরাদ ওর থেকে দূরে সরে যায়??এই জন্য কি আরাদ ওর কাছে আসছে না??
এসব উদ্ভট চিন্তা সায়েন যত করছে ততই ছটফট করছে। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর। বাইরে যেতে চেয়েও পারছে না। চিলেকোঠার ঘরের দরজা খোলা থাকলেও ছাদের দরজা ওপাশ থেকে বন্ধ।
নিজের রুমে দাড়িয়ে পায়চারি করছে সায়েন। হঠাৎ কাচের দেয়াল দিয়ে বাইরে চোখ গেল ওর। দুটো পিকআপ ভ্যান ঢুকছে গেইট দিয়ে। উৎফুল্ল সায়েন এগিয়ে গিয়ে কাচের দেয়ালের উপর হাত রাখলো। গাড়ি থেকে কতগুলো লোক নামলো। তার পর গাড়ি থেকে মালপত্র নামাতে লাগলো। কাগজের ফুলের তোড়া গুলো দেখে কপালে ভাঁজ পড়লো সায়েনের। তাছাড়া লাইটিং এর সব জিনিস পত্র দেখে অবাক হলো। তাহলে কি বাড়ি সাজাবে এরা? বাড়িতে কি কোন অনুষ্ঠান আছে??কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছে না সায়েন। কৌতূহল হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল সায়েন। এরপর কতগুলো মাইক্রো গাড়ি ঢুকলো। কতগুলো ছেলে মেয়ে ও বয়স্করা এসেছে। এতো মানুষ দেখে সায়েন নিশ্চিত হলো যে আজকে কোন অনুষ্ঠান আছে।
দুপুরে কবিতা এসে খাবার দিয়ে গেল। সায়েন কিছু জিজ্ঞেস করলে কবিতা কিছুই বলল না।
পুরো বাড়ি চমৎকার করে সাজানো হয়েছে। রং বেরঙের বাতিতে পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেদের পরিপাটি করে সাজালো তনয়া আর আরশি। ড্রয়িংরুম সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ওদের ড্রয়িংরুমটা বিশাল বড়ো তাই বাড়ির প্রাঙ্গণ দরকার পড়েনি। আরাদ এখনও আসেনি। নিজেকে সাজাতে সে ব্যস্ত। এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আরশি তনয়া। সামিউক্তার পুরো পরিবার এসেছে। সামিউক্তার একটা ভাই আছে। আসার পর থেকেই কেমন চোখে তাকাচ্ছে তনয়া আর আরশির দিকে। দুজনে এবিষয়ে কথা বলতেছে।
‘হ্যালো লেডিস!!!!!’
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তনয়া। ইফতিকে দেখে সে অবাক। ইফতি যে সত্যি সত্যি এসে পড়বে তা ওর ধারনার বাইরে ছিল। ইফতি নিজেকে ব্লু রঙে সাজিয়েছে। বেশ মানিয়েছে এই রং টা। চোখে ঝটকা লাগলো তনয়ার। ইফতি এগিয়ে এসে বলল,’বলেছিলাম না যে আসবো। ঠিকই চলে এসেছি।’
চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ইফতি বলে উঠলো, ‘তা লাভ বার্ডস কই??এখন ও আসেনি?’
তনয়া অবাক চাহনিতে তাকিয়ে বলল, ‘আপনার লজ্জা কম মনে হয়!! এরপরও চলে এলেন??”
‘অবশ্যই এই সিনটা মিস করা যায় না। বম ফাটাব বলেই তো এসেছি শোন আমার একটা প্ল্যান আছে!!’
‘কি প্ল্যান???’
‘এংগেজমেন্ট যখন শুরু হবে মানে যখন রিং পরানো হবে ঠিক তখনই তোমার ভাবি এসে দেখে ফেলবে। কি রিয়্যাকসন হবে তখন?? একদম সিনেমাটিক। আর এই কাজটা আমি করব!! ভাবতেও অবাক লাগছে।’
তনয়া বিরক্ত হলো সাথে রেগেও গেল। বলল, ‘ফালতু কথা বাদ দিন চলে যান এখান থেকে।’
ইফতি আঙ্গুল নাড়িয়ে বলল,’ওয় হ্যালো বিনা দাওয়াতে এই ইফতি কোথাও যায় না বুঝেছো??ইফতিকে সবাই টেনে নেয়। পরিবারের সাথে এসেছি বুঝেছো। প্লিজ এখন আবার এটা জিজ্ঞাসা করো না যে আমার পরিবারকে কেন ইনভাইট করা হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজের কথা বলো।’
‘আপনি বড্ড বাঁচাল। অনেক বেশি কথা বলেন। অসহ্য লাগে আমার।’
ওদের কথার মাঝেই আরাদ নেমে এলো সিঁড়ি বেয়ে। সবার চোখ গেল সেদিকে। সাদা শার্টের উপর ব্ল্যাক কোটি। হাতে ব্ল্যাক ঘড়ি,চুলগুলো ব্রাশ করা। সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে। তারা এখন সামিউক্তাকে হিংসা করছে। আরাদ আসতেই সামিউক্তা গিয়ে আরাদের হাত ধরলো। মুচকি হেসে আরাদ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বাবার সাথে কথা বলতে চলে গেল। ইগোতে লাগলেও সামিউক্তা চুপ করেই থাকলো। সামিউক্তাও নজর কাড়া সাজ দিয়েছে। পার্টি ড্রেসে তাকেও কম লাগছে না। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে সে। কাউকে তাই পাত্তাও দিচ্ছে না। নিলিমা বেগম আর হাসি বেগম দু’জনেই সামিউক্তার পাশে দাঁড়িয়েছে। সামিউক্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ওনারা। আত্মীয়দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন ওনারা।
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। নিলিমা বেগম তাড়া দিচ্ছেন রিং পরানোর জন্য। কিন্তু আরাদ আরেকটু সময় নিয়েছে। সে কাউকে কল করছে বারবার। নিলিমা বেগম আর চুপ থাকলেন না। আরাদকে টেনে সামিউক্তার পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। সবার সামনে কিছু বলতে পারলো না আরাদ। রিং এনে ধরিয়ে দিলেন আরাদের হাতে।
এই মুহূর্ত দেখে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে আরশি আর তনয়া। ওদের খুব কান্না পাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে ওরা।
‘এক্সকিউজ মি লেডিস। আমি কি একটা কথা বলতে পারি??’
এই মুহূর্তে ইফতির সাথে কথা বলার মুডে ওরা নেই। তাই দু’জনেই ঝারি মারলো। ইফতি ফিসফিস করে বলল,’জারা উপার দেখো??’
দু’জনেই অবাক হয়ে উপরে তাকালো। সায়েনকে দেখে দু’জনেই আতকে উঠলো। তার পর চোখ ঘুরিয়ে ইফতির দিকে তাকালো। দুষ্টু হাসছে সে।
‘কেমন দিলাম??তবে চিলেকোঠার ঘরটা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে আমার।’
দুম করে কিল পড়লো ইফতির পিঠে। তনয়া কটমট করে বলল,’ভাইয়া বারণ করেছিল এটা করতে আর আপনি তাই করে দিলেন?? এবার কি হবে??’
‘মারছো কেন??কি আর হবে তোমার ভাবি নিচে নেমে সবার সামনে সব সত্যি বলে দেবে। তার পর তো মজা হবে।’
‘ভাবি কিছু বলবে না। উফফ কেন যে আপনাকে সব বলতে গেলাম??’
ইফতি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’জাস্ট রিল্যাক্স। এখন তোমাকে একটা কাজ করলেই হবে। সেটা হলো তোমার ভাইয়াকে গিয়ে বলবে যে তোমার ভাবি সব জেনে গেছে। তোমার ভাইয়া যে এটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাতে মনে হয় না যে তোমার ভাইয়া উপরে চোখ তুলে দেখবে। তাহলে তো সব প্ল্যান মাটি। তাড়াতাড়ি যাও,,,’
ইফতি ধাক্কা দিয়ে তনয়াকে পাঠালো। তনয়া ইতস্তত করতে করতে আরাদের কাছে গেল। আরাদ রিং টা হাতে নিয়ে বিরক্তবোধ করছে। তনয়া আরাদের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,’ভাইয়া ভাবি!!!’
চকিতে তাকালো আরাদ। কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তনয়ার দিকে। আরাদের দৃষ্টির মানে বুঝে গেল তনয়া। মাথা নাড়িয়ে বোঝালো যে সে কিছু বলেনি। তনয়া উপরের দিকে ইশারা করতেই আরাদ সেদিকে তাকালো। সিঁড়ি রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে সায়েন। চোখে মুখে বিষ্ময়ের ছাপ সায়েনের সাথে চোখ ভর্তি পানি। আরাদের সাথে চোখাচোখি হতেই সায়েন চলে গেল। নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেলল আরাদ। সায়েনের থেকে সে সবকিছু লুকাতে পারলো না। তবে এখন সে যেতেও পারবে না। এখানকার কাজ শেষ না করে যাওয়ার উপায় নেই। রাগ হচ্ছে আরাদের খুব। সব রাগ ঝারছে হাতের রিং টার উপর। মুহূর্তেই সেটা বাঁকা হয়ে গেল।
#চলবে,,,,,,,,,,,
#চিলেকোঠার_প্রেম
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
#পর্ব_৩২
পরিবেশটা পুরো শান্ত হয়ে গেছে। শ’খানেক মানুষের উপস্থিতিতেও কেমন গুমোট ভাব। শুধু মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সামনেই আকাশ দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ ফোর্স নিয়ে। অনুষ্ঠানে পুলিশ দেখে সবাই নিশ্চুপ। এরকম একটা অনুষ্ঠানে কেউ এটা আশা করনেনি। আকাশ এগিয়ে আসলো সামিউক্তার বাবার দিকে। তিনি কোন প্রশ্ন করার আগেই আকাশ বলে উঠলো,’আপনার মেয়ে এবং ছেলেকে ড্রাগস সাপ্লাই আর নেশাদ্রব্য গ্রহণ করার জন্য এরেস্ট করা হলো। আপনার মেয়ে আর ছেলেকে ভালোয় ভালোয় আমাদের সাথে যেতে বলবেন নাকি জোর করে নিয়ে যেতে হবে।’
আকাশের কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে সামিউক্তার বাবা। উপস্থিত জনগন ও অবাক। ইতিমধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। সামিউক্তা কে ভয় পেতে দেখা গেল। ভাইয়ের পিছনে গিয়ে লুকালো সামিউক্তা। কিন্তু ওর ভাইয়ের অবস্থাও নাজেহাল। সামিউক্তার বাবা বললেন,’এসব মিথ্যা কথা!! আমার সন্তানরা এসব করে না। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।’
স্মিত হাসলো আকাশ বলল,’পুলিশ কখনো প্রমাণ ছাড়া আসেনা আঙ্কেল। এ্যারেস্ট ওয়ারেন্টি নিয়েই এসেছিল আমরা। বাকিটা আদালতে জানবেন। আর হ্যাঁ জামিনের চিন্তা ভুলে যান। কেসটা জটিল ভাবেই হয়েছে। যা হবে সরাসরি আদালতে।’
আকাশ ইশারা করতেই সামিউক্তা আর ওর ভাইকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু সামিউক্তা নাছোড়বান্দা। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল,’আব্বু আমি কিছু করিনি। আমাকে বাঁচাও প্লিজ!!আমি যাবো না।’
সামিউক্তা এবার গেল আরাদের কাছে। আরাদের হাত ধরে বলল,’প্লিজ আরাদ তুমি কিছু করো??আমি এসব কিছুই জানি না। আমার উপর মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছে।’
সামিউক্তার হাত ছাড়িয়ে হাসলো আরাদ।তারপর বলে,’ওহ আচ্ছা সেদিন রাতে কি তাহলে আমি ভুল দেখেছিলাম??আর ওই ছবিগুলো কি ভুল ছিল??’
কান্না থেমে গেল সামিউক্তার। বিষ্মিত কন্ঠে বলল,’কোন ছবি??’
‘ওসব আদালতে গিয়েই দেখতে পাবে তুমি। তবে একটা কথা শুনে রাখো তোমাকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না। এটা তো ড্রামা ছিল তোমাকে সবার সামনে আনার।’
সামিউক্তা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আরাদের দিকে। সে বুঝে গেল যে আরাদকে বুঝিয়ে লাভ নেই। আর চেষ্টা করেও সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। আকাশ ওর ক্রিমিনাল নিয়ে চলে গেল। স্তব্দ করে দিলো অনুষ্ঠানে আসা প্রতিটা মানুষকে। একে একে অর্ধেক আত্মীয়রা চলে গেল। সামিউক্তার বাবা মা সহ তাদের আত্মীয়রা মাথা নিচু করে চলে গেল। নিলিমা বেগমের মাথা ঘোরাচ্ছে। সামিউক্তাকে তিনি ভালো ভেবেছিলেন। কিন্তু এটা কি করলো ও। তিনি ধপ করে বসে পড়লেন। হাসি বেগম এগিয়ে গেলেন আরাদের দিকে কিন্তু আরাদ দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেল। এখন ওকে সায়েনের কাছে যেতে হবে। সবটা বলতে হবে নাহলে দেরি হয়ে যাবে। আগের মতো ভুল সে করবেই না। হাসি বেগম চেয়েছিলেন আরাদকে এসব ব্যাপারে প্রশ্ন করতে কিন্তু আরাদ সেই সুযোগ দিলো না। মায়ের কৌতূহল দেখে তামিম এগিয়ে এসে বলল,’ভাইয়া এখন কোন প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না মা!!যা জিজ্ঞেস করার আমাকে করো সব উওর পেয়ে যাবে।’
এবার কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলো না হাসি বেগম বললেন,’তুই ও সব জানতি?? তাহলে আগেই বলতি এতো কিছু করার দরকার কি ছিল??আমরা তো কেউ ভাবতেও পারিনি যে মেয়েটার ভেতরে ভেতরে এত কিছু রয়েছে।’
‘কিন্তু আমরা জানতাম। তুমি কাকিমনি আরশি আর তনয়া কিছু জানতে না। ভাইয়া জানাতে বারণ করেছে। আব্বু কাকা ওনারা সব জানতো।’
হাসি বেগম এক পলক স্বামীর দিকে তাকালেন। তার পর আবার জিজ্ঞেস করে, ‘আমাদের জানালি না কেন??’
তামিমের এখন বিশ্রামের দরকার। এই কয়দিন আরাদের সাথে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছে সে। কিন্তু এখন ওর বিশ্রামের বারোটা বাজবে। মা তো সব না জেনে কিছুতেই ওকে ছাড়বে না। অগত্যা সে বলতে শুরু করল, ‘তোমরা কি ভেবেছো সব বড়লোকের মেয়েরা ভালো হয়??হয় না। কেউ না কেউ ঠিকই বিগড়ে যায়। ঠিক তেমনটাই সামিউক্তা মেয়েটা। সাথে ওর ভাইও আছে। দু’জনে ড্রাগস নেয়। এছাড়া নেশাদ্রব্য সাপ্লাইও করে। ওদের দু’জনের একটা ফাউন্ডেশন আছে। একটা টিম,সামিউক্তা আর ওর ভাই টিমের লিডার। ওই টিম ধরার জন্য আকাশ ভাইয়া অনেক চেষ্টায় ছিল। কিন্তু প্রমাণের জন্য ধরতে পারছিল না। আকাশ ভাইয়া যেদিন সামিউক্তাকে প্রথম দেখে সেদিনই ভাইয়াকে সব বলে দেয়। তাইতো ভাইয়া এংগেজমেন্ট সাতদিন পিছিয়ে দেয়। সব প্রমাণ হাতে পাওয়ার জন্য ভাইয়া আর আমি আকাশ ভাইয়াকে সব রকমের সাহায্য করি। সামিউক্তাকে ধরা ওতো সহজ ছিল না কিন্তু ভাইয়া সব হ্যান্ডেল করে ফেলে। ওদের ড্রাগস নেওয়া এবং সাপ্লাই দেওয়া রেকর্ড করা হয়েছে। সময়মতো আদালতে পেশ করা হবে।
তোমারা এবিষয়ে কোন সাহায্য করতে পারতে না শুধু শুধু চিন্তা করতে তাই তোমাদের কিছু জানানো হয়নি। আর আজকে না জানিয়ে ভাইয়া অন্যভাবেও জানাতে পারতো কিন্তু ভাইয়া চেয়েছে সামিউক্তার আসল রূপ সবাইকে দেখাতে তাই এতো বড় ড্রামা সে নিজে সাজিয়েছে।’
তামিম থামলো,বড়সড় দম ফেলে বলে, ‘আমার আর ভালো লাগছে না। এই কয়দিন ধকল গেছে খুব। কালকে বিকালের আগে কেউ আমাকে ঘুম থেকে জাগাবে না। গেলাম আমি।’
তামিম সিঁড়ি ভেঙে নিজের রুমে চলে গেল। আরশি তনয়ার খুশি দেখে কে??মনের মধ্যে দু’জনেই নাচছে। এতক্ষন পর সবটা সবার কাছে ক্লিয়ার হলো। সবার আড়ালে লুকিয়ে দু’জনে হাইফাইভ দিলো। তনয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে ইফতিকে খুঁজল কিন্তু পেল না কারণ সবাই চলে গেছে। তখনই তনয়ার মনে পড়ল যে সে নিজেই ঠেলে বের করে দিয়েছে ইফতিকে। ওর এখন ইফতির জন্য খারাপ লাগলো। শুধু শুধু কতগুলো কথা শোনালো ইফতিকে। পরে দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নেবে ভেবেছে।
নিলিমা বেগমের মাথায় আইস ব্যাগ চেপে ধরে আছে কাজের মেয়েটি। মাথা ঘোরাচ্ছে ওনার। হাসি বেগম গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সব কিছুই গুলিয়ে গেছে ওনাদের। তাই এখন মাথা ঠান্ডা করতে ব্যস্ত ওনারা।
কাচের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সায়েন। ঘন্টাখানেক ধরে সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। একটুও নড়চড় করছে না সে। চোখের পানি পড়তে পড়তে শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে চোখদুটো। ইচ্ছে করেও চোখের পানি বের করতে পারছে না সায়েন। তবে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার দাগ রয়ে গেছে ওর গালে। নিজের চোখে দেখে এসেছে আরাদকে। সে তখন অন্য মেয়ের হাতে আংটি পরাবে। সায়েন কেন কোন মেয়েরই এটা সহ্য করার ক্ষমতা নেই। তবে ইফতিকে কিছু বলতেই হয়নি সায়েনকে। সায়েন আগে থেকেই সবটা জানতো। সন্ধ্যার পর সামিউক্তা নিজে এসেছিল সায়েনের কাছে। কিছুক্ষণ সে সায়েনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলেছিল,’তোমাকে কি দেখে যে আরাদ ভালোবেসেছিল কে জানে??তেমন কিছুই নেই তোমার মধ্যে যা আমার মধ্যে আছে। হয়তো আরাদের মোহ ছিল সেটা। এখন তা কেটে গেছে বলেই আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
সামিউক্তার কথার মানে বুঝলো না। আর ও তো চেনেও না সামিউক্তাকে। তাই নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই সায়েনের। সামিউক্তা হেসেই বললো, ‘আমি সামিউক্তা আরাদের উডবি। আজকে আমাদের এংগেজমেন্ট। তুমি হয়তো জানো না। আরাদের জানানো উচিত ছিল। আফটার অল এক্স বলে কথা। কিন্তু আরাদ তোমাকে এখানে নিয়ে এলোই বা কেন তা আমি এখনো বুঝলাম না?? আমাদের সংসার করা দেখানোর জন্য কি??’
সায়েনের চোখ থেকে সাথে সাথে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। হাসলো সামিউক্তা,এটাই চেয়েছিল সে। তাই তো সবার চোখের আড়ালে এসেছে সায়েনের সাথে দেখা করতে। সামিউক্তা যাওয়ার আগে ফিরে তাকিয়ে বলল,’তিনবছর জেলে থেকে কেমন লাগলো তোমার??এখন এটা শুনব না আমি। প্রশ্নটা আজকে করে রাখলাম অন্যদিন উওর শুনব না হয়।’
দরজা ঠেলে বের হয়ে গেল সামিউক্তা।সায়েনের মনে হচ্ছে সামিউক্তা কতগুলো তীর মেরে গেল ওর বুকে। যা ওর বুক ভেদ করে অপরপাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। ক্ষত থেকে তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এখন ও বুঝতে পারছে কেন বাড়ি সাজানো হয়েছে!!এজন্যই বুঝি সায়েনের বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আরাদ!!যাতে সায়েন কিছু জানতে না পারে। খাটের উপর বসে চাদর খামচে ধরে সায়েন বলল,’আবার সেই ড্রামা। আমি আপনাকে দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করে আবার ঠকেছি আরাদ। আমাকে কেন এভাবে ঠকান তার কৈফিয়ত আজকে আপনাকে দিতেই হবে।’
দরজা খোলার শব্দে অতীত থেকে ফিরে এলো সায়েন। ওর দৃষ্টি সম্পূর্ণ শান্ত কিন্তু ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। নিচু দৃষ্টিতে ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলো আরাদ। সায়েন তাকালো না আরাদের দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে হাতের ডানদিকে থাকা ফুলদানিটার দিকে চোখ দিলো সে। চোখদুটো এতক্ষণ মরুভূমি ছিল, কিন্তু মুহূর্তেই তা সাগরে পরিণত হলো। জোয়ার এসে সাগর উতলে পানি পড়তে লাগলো। চোখের জলে বক্ষ ভেসে যাচ্ছে সায়েনের। তবুও মুখ দিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করলো না। আরাদ গিয়ে সায়েনের সামনে দাঁড়াল। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে সায়েন। আরাদ সায়েনের হাত ধরে টেনে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলল, ‘আমার চোখের দিকে তাকাও সায়েন।’
সায়েন তাকালো না কথাও বলল না। আরাদ দ্বিতীয় বারও একই কথা বলতেই সায়েন বলল,’বিষাদময় চোখের দিকে তাকানোর সাধ্যি আমার নেই মিস্টার আরাদ। যে চোখে ভালোবাসা নেই সেই চোখে তাকানোর কোন দরকার ও নেই।’
‘তুমি কি কোনদিনও আমার চোখে ভালোবাসা দেখোনি সায়েন??’
অশ্রুসিক্ত নয়নে আরাদের চোখে চোখ রাখলো সায়েন। বলল,’আমি বুঝতে পারি না। আপনার চোখে আদৌ ভালোবাসা আছে নাকি অন্যকিছু আমি বুঝতে পারি না। কেন বারবার আমার সাথেই এরকম হয় বলতে পারেন??সব হারিয়ে নিশ্ব হয়ে গেছি আমি। আপনি বলেছিলেন এবারের বিশ্বাসে আমি ঠকবো না। কিন্তু আমি তো ঠকে গেছি। তাহলে ভালোবাসার প্রতিদান কি আমার জন্য এটাই প্রাপ্য ছিল??ভেবেছিলাম বিয়ের পর আপনাকে মন থেকে মুছে দেব। অন্যপুরুষকে সেখানে স্থান দেব। কিন্তু সে তো আমাকেই নিজের জীবন থেকে বের করে দিয়েছে। তাকে বসানোর আগেই সে চলে গেল। তারপর আবার আপনি চলে এলেন। পারলামনা আপনার জায়গা থেকে আপনাকে দূরে সরাতে। ভালোবেসে আবারও আপনাকে সেখানেই স্থান দিলাম। কিন্তু আমার ভাগ্য দেখুন আবারও আমাকে আমার আসল স্থান দেখিয়ে দিয়েছে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে আমার??’
সায়েনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাদ। সায়েনকে কথার মাঝে আটকায়নি। আজকে ও বলবে, নিজের মনটা হাল্কা করার জন্য হলেও বলবে। সেজন্য আরাদ বাধা দিলো না। সায়েনের কথা শেষ হতেই আরাদ আরেকটু এগিয়ে গেল সায়েনের দিকে। সায়েনের একদম কাছে চলে গেল। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সায়েন। আরাদ সোজাসুজি প্রশ্ন ছুড়লো,’ভালোবাসো আমাকে??’
ক্রোধভরা চোখে তাকিয়ে সায়েন বলল,’কেন শুনবেন??এই কথাটা শোনার কোন প্রয়োজন নেই আপনার এখন। যে কাজ করছিলেন তাই করুন গিয়ে!!’
‘আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি সায়েন??প্রশ্নের উত্তর এর বদলে প্রশ্ন করা আমি পছন্দ করি না। তাই আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে??’
আরাদ সায়েনের চোখের ভাষায় ওর ভালোবাসা পরিমাপ করে ফেলেছে তবুও সে সায়েনের মুখ থেকে শুনতে চায়। কিন্তু সায়েন বলল না উল্টে সে বলল,’এই কথাটা ওতো সস্তা নয় যে,,,,,’
আকস্মিক সায়েনকে চুপ করিয়ে দিলো আরাদ। একহাতে সায়েনের কোমড় শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে সে। আরেকহাত সায়েনের পিঠের উপর। হতভম্ব হয়ে সায়েন নড়চড় করা ভুলে গেছে। ওষ্ঠচুমু গভীর থেকে গভীরতর করছে আরাদ। সে তার প্রেয়সীর অধরে ডুবে গেছে দিক দিশা ভুলেই। সায়েন পারছে না নিজেকে আরাদের বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত করতে। কাঁদতে কাঁদতে এমনিতেই সে সর্বশক্তি হারিয়ে বসে আছে। মনের শক্তি ফুরিয়ে গেলে শরীরের শক্তি কোন কাজ করে না। মন চাইলে তবেই শরীরের শক্তি কাজে লাগানো যায়। হাতের ভর টুকুও ছেড়ে দিয়েছে সায়েন। আরাদ সায়েনের কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সায়েনের হাত ধরে নিজের ঘাড় গলিয়ে গলার উপর রাখলো। তারপর হাতটা আগের স্থানে সরিয়ে নিলো সে। কিছুক্ষণ পর সায়েনকে ছেড়ে দিলো আরাদ। তবে পুরোপুরি ছাড়লো না। হাত দুটো এখনো কোমড় আর পিঠে বিদ্যমান। চোখ বন্ধ করেই হাপাচ্ছে সায়েন। দম বন্ধ হয়ে আসছিল এতক্ষণ ওর। তাই ছাড়া পেতেই বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলছে সায়েন। বন্ধ চোখের পাতার ফাঁক দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আরাদ নিজের ওষ্ঠজোড়া সায়েনের ভেজা আখিপল্লবে ছোঁয়ায় কপালে গভীর চুমু এঁকে দিয়ে সায়েনের দিকে তাকালো সে। মাত্রই চোখ খুলে তাকিয়েছে সায়েন। আরাদের চক্ষু জোড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে। খুব কি রেগে আছে সে??
আরাদ সায়েনের কোমড়ে হাল্কা চাপ দিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করে,’ভালোবাসো??সত্যি জানতে চাই আমি!!’
সায়েনের সাথে সাথে আরাদের নিঃশ্বাসের পাল্লা ও ভারি হয়ে উঠেছে। সেও ঘনঘন শ্বাস ফেলছে। আরাদ প্রশ্নের জবাব শোনার জন্য চেয়ে রইল সায়েনের দিকে। এই চাহনি আর উপেক্ষা করতে পারলো না সায়েন। পারলো না অভিমানের পাল্লা ভারী করে আরাদকে আবার দূরে সরিয়ে দিতে। কারণ অভিমানের পাল্লার থেকে ভালোবাসার পাল্লাটা যে আজ বেশি ভারি। আরাদের গলা জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কেঁদে উঠলো। আরাদের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠলো,’খুব ভালোবাসি আপনাকে। অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। আপনি কেন আমার সাথে এরকম করছেন?? আমার কি দোষ বলতে পারেন??যার জন্য এত শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে??আমি পারবোনা অন্য কারো সাথে আপনাকে দেখতে। তবুও কেন আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে??’
আরাদের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল প্রশান্তির সেই হাসি। এতদিনে সায়েন নিজের মুখে সবটা স্বীকার করলো!!আরাদ দুহাতের বন্ধন আরো শক্ত করলো। হেসে বলল,’তোমার একটাই দোষ সায়েন। সেটা হলো আমাকে ভালোবাসি না বলা। এরজন্যই শাস্তি পাচ্ছো তুমি। তাহলে শেষমেষ আমার ড্রামা সফল হলো!! আমার সায়েন আমাকে ভালোবাসি বলল।’
সায়েন ছেড়ে দিলো আরাদকে। ভ্রু যুগল হালকা কুঁচকে বলল,’হুমম, আপনি তো সবসময়ই ড্রামা’ই করেন আমার সাথে। আপনাকে দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করে আবারো ঠকেছি আমি। বারবার আমার ভালোবাসা তুচ্ছ করে চলে যান। আজও তাই করেছেন। এখানে এখন কেন এসেছেন। ওই মেয়েটার কাছেই যান। আংটি তো পরিয়ে দিয়েছেন তাই না??’
সায়েন চেয়েও আরাদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। আরাদ তার গায়ের জোরে ধরে রেখেছে। সে বলল,’যাকে আংটি পরাবো সে’ই তো আমার সামনে তাহলে আমি যাব কোথায়??’
সায়েন চুপ করে গেল। আরাদের কথার মানে সে বুঝতেই পারলো না। শুধু তাকিয়ে রইল।আরাদ পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে হাঁটু মুড়ে বসলো সায়েনের সামনে। বক্স খুলে আংটিটা সযত্নে পরিয়ে দিলো সায়েনের হাতে। হাতের পিঠে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,’বলেছিলাম না এইবারের বিশ্বাসে তুমি ঠকবে না সায়েন। আমি আমার কথা রেখেছি। একটু আগে কি হয়েছিল,তুমি কি দেখেছো সবটাই তোমার চোখের ভ্রম। ভুলে যাও সবকিছু। আমার সাথে নতুন জগতে ডুব দেওয়ার প্রস্তুতি নাও সায়েন। যেখানে ভালোবাসা ছাড়া তুমি কিছুই পাবে না।’
আবার কেঁদে ফেলল সায়েন। আরাদের কথা ওর বিশ্বাস হচ্ছে কিন্তু একটু আগের ঘটনা সে ভুলতে পারছে না। সত্যি কি আরাদ ওই মেয়েটাকে আংটি পরিয়েছে?? সবকিছু কেন এতো বিষাদময় লাগছে??অসহ্য কেন লাগছে এতো???
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,