চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব-৮+৯

0
365

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ০৮
_____________

সকালের মিষ্টি রোদের আমেজ ছড়িয়ে আছে এডমন্টনে। রেশমী আন্টিদের বাড়িটাও হাসছে সোনালী প্রভাত কিরণে। কিচেনের উইন্ডো থেকে মিষ্টি কিছু রোদ প্রবেশ করে জায়িনের মুখ ছুঁয়েছে। ফরসাজ্জ্বল মুখে ছোট আকারের দাড়ি, হালকা খয়েরি ঠোঁট, গাঢ় কালো ভ্রু এবং কালো লেন্সের জায়িনকে আজকে সব দিনের থেকে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। জায়িনের পরনে গ্লো পিঙ্ক টি-শার্ট এবং ট্রাউজার। ক্যামিলার পাশে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। ঠোঁট দু পাটির আড়াল থেকে সাদা চিকচিকে দাঁতগুলো ঝিলিক দিচ্ছে। জায়িন হাসলে ওর চোখের পাশে একটু ভাঁজ পড়ে। যেটা দেখতে আরও বেশি ভালো লাগে।
মিতুল এর আগে কখনো এত ভালো করে খেয়াল করে দেখেনি জায়িনকে। কিন্তু আজকে কেন যেন জায়িনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। হয়তো জায়িনের বলা বাংলায় মুগ্ধ হয়ে ওকে এভাবে পরখ করছে। আজকে প্রথম জায়িনের মুখে বাংলা শুনেছে মিতুল। জায়িনের বলা বাংলা ছিল, ‘ঠিক আছে ড্যাড, আমি কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে পড়বো।’
কথাটি সাদাত আঙ্কলের সাথে ফোনে বলেছিল জায়িন।
মিতুল কখনো আশা করেনি জায়িন এত সুন্দর করে শুদ্ধ বাংলা বলবে। যদিও আগে জোহান বলেছিল, বাংলা ভাষা শেখা ওদের ফ্যামিলিতে বাধ্যতা মূলক। তবুও বিদেশে জন্ম, বিদেশে বেড়ে ওঠার পরও এত স্পষ্ট, শুদ্ধ বাংলা বলা সত্যিই অবাক এবং মুগ্ধ করেছে মিতুলকে।

জায়িন কফির মগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কিচেন থেকে। মিতুল তখনও তাকিয়ে আছে ওর দিকে। জায়িন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হঠাৎ মিতুলের দিকে তাকালো।
জায়িনের হঠাৎ করে তাকানোতে মিতুল থতমত খেয়ে গেল। অপ্রস্তুত ভাবে হাসলো একটু। জায়িনেরও উচিত ছিল একটু হাসা। মন থেকে হাসতে না পারলেও, মুখে একটু হাসা উচিত ছিল অন্তত। কিন্তু ও হাসলো না। অহংকারী গোমড়া মুখ নিয়েই ভাব দেখিয়ে চলে গেল। মিতুলের একটু আগেও যে মুগ্ধতা ছিল জায়িনের জন্য, এখন আর সেটা রইল না। এত অহংকারী এই দুই ভাই! অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না এদের। একজনও ভালো নয়। খুব খারাপ এরা!
ব্যাক সাইডের জানালার দিকে মিতুলের চোখ পড়লো আরও একবার। জানালা থেকে দেখা যাচ্ছে গার্ডেনের টিউলিপ ফুলগুলো হাসছে সোনালী রোদের সাথে। মিতুলের ধারণা বাড়ির ভিতরের সব থেকে ভালো পজিশনে রয়েছে এই কিচেনটা। কিচেনটা বেশ বড়ো। কিচেনের একটা জানলা দিয়ে তাকালে দেখা যায় বাড়ির পিছনের সুরভিত ফুলময় গার্ডেন। আরেকটা জানালা দিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনের লন। কিচেনটা বাড়ির সামনেও নজর রাখছে, আবার পিছনেও নজর রাখছে। ব্যাক সাইডে একটা গ্লাস ডোরও আছে। যেটা দিয়ে বের হলেই গার্ডেন।
মিতুলের নাকে খাবারের মিষ্টি সুগন্ধ এসে লাগছে। চুলোতে বিফ বিরিয়ানি এবং পায়েস রান্না হচ্ছে। ক্যামিলাই রান্না করছে। বাঙালি দম্পতির সাথে থাকতে থাকতে এসব রান্নাও শিখে গেছে সে। তবে আজকে এটা স্পেশালি ওর জন্য রান্না হচ্ছে। রেশমী আন্টি রান্না করতে বলেছে ক্যামিলাকে।
রেশমী আন্টির কথা মনে হতেই রেশমী আন্টি কোত্থেকে যেন উদয় হলেন কিচেনে। কিচেনে প্রবেশ করলেন না, দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত অর্ডার করে চলে গেলেন। মিতুল আরও কিছুক্ষণ কিচেনে বসে বসে ক্যামিলাকে দেখলো। তারপর কফি পূর্ন মগ নিয়ে চলে এলো কিচেন থেকে।
লিভিং রুমে এসে জোহান বদমাইশটাকে দেখতে পেল। সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে আসছে।মিতুলের কালকের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। কীভাবে এই জোহান ওকে অপমান করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিল! কথাটা মনে হতে জোহানের জন্য মিতুলের ঘৃণার পাল্লাটা আরও বেশি বাড়তে লাগলো। জোহানের পরনে হোয়াইট কালারের থ্রি কোয়াটার প্যান্ট এবং হোয়াইট কালারের একটা টি শার্ট। পায়ে এক জোড়া স্নিকার্স। মাথার বাদামি চুল গুলো এলোমেলো। নবাবজাদা বোধহয় এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। কী আর করবে, খেয়ে দেয়ে তো আর কোনো কাজ নেই। জায়িনের মুখেই তো শুনেছিল, সারাদিন ধেই ধেই করে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। বদমাইশ কোথাকার!
মিতুল সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে প্রায় সিঁড়ির মাঝামাঝি জোহানের কাছে চলে এসেছে। জোহানের পাশ দিয়ে যেতেও এখন ওর সর্বাঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে। আল্লাহ ওকে এই জোহানের সামনা সামনিই আর না করুক।
মিতুল মাথা নিচু করে জোহানের পাশ থেকে চলে আসছিল। কিন্তু জোহান এর মাঝে একটা কাণ্ড করে বসলো। হাঁটতে হাঁটতে মিতুলের হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে নিলো। আর এমন ভাবে নিলো যেন তার জন্য ট্রেতে করে নিয়ে আসা কফির মগটা তুলে নিয়েছে সে।
মিতুল ভেবে রেখেছিল জোহানের সাথে আর কথা বলবে না। কিন্তু আকস্মিক এমন ঘটনায় পিছন ফিরে বলে উঠলো,
“এটা কী হলো?”

জোহান এতক্ষণে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেছে। মিতুলের দিকে নির্লিপ্ততকার ভাবে তাকিয়ে বললো,
“কী হলো?”

মিতুল অতিক্রম করে আসা সিঁড়ির ধাপগুলো বেয়ে আবার নিচে নেমে জোহানের সামনে এসে দাঁড়ালো। বললো,
“তুমি একটা কাক না কি? মানুষের খাবার চুরি করে খাওয়ার অভ্যাস তোমার?”

“বেশি কথা বলো না। নয়তো এটা তোমার মাথায় ঢেলে দেবো।”

“তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ? আমাকে?”

“ভয় দেখাচ্ছি না, হুঁশিয়ার করছি তোমায়।”

“আন্টির কাছে তোমার বিরুদ্ধে নালিশ দেবো আমি। কী ভেবেছো তুমি? গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে মাঝপথে, এখন আবার কফি চুরি করছো আমার থেকে। আমি কি মুখ বুজে থাকবো?”

“বাহ, বাংলাদেশি মেয়েদের গলা তো দেখছি বজ্রপাতের মতো, তো চিল্লাতে শুরু করো।”

“কথায় কথায় বাংলাদেশ টানবে না একদম। নিষেধ করে দিলাম আজকে।”

“কী করবে টানলে? একশ বার টানবো আমি? দেখি কী করতে পারো তুমি!”

“কী করবো আমি সেটা দেখছে চাইছো? আমি তোমাকে…”

“কী করবে?”

“আমি তোমাকে ঘুষি…”

“কী হচ্ছে এখানে?” মিতুলের কথার মাঝে অন্য একটি শান্ত, গম্ভীর পুরুষ কণ্ঠ কথা বলে মিতুলকে থামিয়ে দিলো।

মিতুল, জোহান দুজনেই তাকালো সিঁড়ির দিকে। সিঁড়িতে জায়িন দাঁড়িয়ে আছে। হাতে অফিস ক্যারি ব্যাগ। পরনে নীল স্যুট। অফিসে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি সে।
জায়িনকে দেখে মিতুল একেবারে চুপ হয়ে গেল। জায়িন আর তিনটে ধাপ পার হয়ে হলরুমে পা রাখলো। দুজনের দিকেই চোখ বুলালো একবার। তারপর জোহানের দিকে এগিয়ে এলো। জোহানের কাঁধে হাত রেখে শান্ত, গম্ভীর কণ্ঠেই বললো,
“নিজের কাজ কর। অন্যের সাথে ঝামেলা করিস না। এমনিতেই যে ঝামেলা পাকাস, তাই ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়।”

জোহান ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল প্রায় কয়েক সেকেন্ড। জায়িনও তাকিয়ে রইল।
দুই ভাইয়ের কারো চাহনিই স্বাভাবিক মনে হলো না মিতুলের কাছে। একটু কেমন যেন।
দুই ভাইয়ের ওই রকম চাহনি দেখে মিতুল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
জোহান জায়িনের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো, তারপর মিতুলের দিকে তাকালো হুট করে। জায়িনও তাকালো।
একই সাথে দুই ভাইয়ের চাহনিতে মিতুল একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। জায়িন নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল। জোহান বললো,
“ঘুষি মারবে তুমি আমাকে, তাই না?”

মিতুল বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। আর জায়িনের শান্ত চোখের পর্যবেক্ষণে বার বার থতমত খাচ্ছিল।

_____________

ব্রেকফাস্টের জন্য ডাইনিং রুমে যাচ্ছে মিতুল। ডাইনিং রুমে জোহান বসা। জোহানকে দেখে মিতুলের ফিরে যেতে মন চাইলো। কিন্তু ক্যামিলা মিতুলকে দেখা মাত্রই খাওয়ার জন্য স্বাগত জানালো। এখন চলে যাওয়াটাও ঠিক ভালো দেখায় না। মিতুল জোহানের বিপরীত দিকের একটা চেয়ারে বসলো। ক্যামিলা খাবার সার্ফ করছে। জোহান এতক্ষণ মোবাইলে মুখ ডুবিয়ে ছিল। মোবাইলটা এবার টেবিলের উপর রাখলো। টেবিলে বিরিয়ানি দেখে নাক ছিটকিয়ে বললো,
“উহম, এসব কী?”

ক্যামিলা বললো,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড জোহান?”

“সিস(সিস্টার) এসব খাবার কেন সার্ফ করেছ তুমি? তুমি তো জানো আমি এই খাবারটি পছন্দ করি না।” জোহানের কণ্ঠে বিরক্তির সুর।

“জানি তো। আর সেই জন্যই তো তোমার জন্য স্যান্ডউইচ তৈরি করেছি আমি।”

ক্যামিলা জোহানের ঠিক সামনে স্যান্ডউইচের প্লেটটি দেখিয়ে দিলো। জোহান মোটেই খেয়াল করেনি এটি। জোহান ক্যামিলাকে ধন্যবাদ জানালো,
“ধন্যবাদ সিস। একমাত্র তুমিই আছো যে আমার খেয়াল রাখে। বাকিরা তো প্রায় ভুলেই যায় যে আমি এই বাড়ির একজন সদস্য! ধন্যবাদ তোমাকে।”

ক্যামিলা জোহানের মাথায় স্নেহের স্পর্শ বুলিয়ে দিলো।

জোহানের কথা শুনে মুখ বাঁকালো মিতুল। ইশ কী ঢং করে কথা বলছে দেখো! যত্তসব!

“কিন্তু আমি এখানে বসে মোটেই খেতে পারব না।” জোহানের কণ্ঠে রাজ্যের বিরক্তি।

“কেন?” অবাক হয়ে জানতে চাইলো ক্যামিলা।

জোহান মিতুলের দিকে চাইলো একবার। তারপর বিরিয়ানির দিকে চোখ রেখে বললো,
“চোখের সামনে এই খাবারটা দেখলে আমার গা রি রি করে ওঠে। আর এই খাবারের স্মেলটা আমার মাথায় পেইন উঠিয়ে দিচ্ছে। একদম সহ্য হয় না এই স্মেল। এত বাজে স্মেল এই খাবারটার!”
জোহান বিরিয়ানি পছন্দ করে না তেমন, সেটা ঠিক। তবে বিরিয়ানির স্মেলটা ওর বেশ ভালোই লাগে। একটু আধটু খায়ও মাঝে মাঝে। আজ শুধু মিতুলকে শোনানোর জন্য বিরিয়ানি নিয়ে এত কিছু বললো।

জোহানের কথা শুনে মিতুলের চোখ কপালে উঠলো। বাজে স্মেল? এত সুন্দর স্মেলকে কেউ বাজে বলে? এই হয়তো প্রথম ব্যক্তি যে বিরিয়ানির সুবাসকে বাজে বলছে। কী আর করবে, বিদেশে থাকে তো তাই ঢঙে বাঁচে না।

ক্যামিলা জোহানের কথা শুনে হাসলো। বললো,
“ঠিক আছে, তোমাকে এই বাজে স্মেলের খাবারের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে হবে না। নিজের রুমে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করো তুমি।”

জোহান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আর সেই সঙ্গে ওর ফোনটাও বেজে উঠলো। মোবাইলের স্কিনে রিকার্ডোর নাম দেখা যাচ্ছে। জোহান ফোন রিসিভ করে বললো,
“হেই, কী খবর?”

“উই আর ব্যাক…” ওপাশ থেকে খুব চেঁচালো উচ্ছ্বসিত পূর্ণ একটি ছেলে কণ্ঠ শোনা গেল।

জোহান বিস্ময় নিয়ে বললো,
“হোয়াট?”

“ইয়াহ। উই আর ব্যাক ইন এডমন্টন টাউন।”

“কিন্তু তোদের না আরও তিন দিন পরে আসার কথা ছিল?”

“চলে আসলাম। তোকে একা ফেলে আর কতদিন থাকবো? মিস করছিলাম তোকে আমরা।”

জোহান আনন্দঘন কণ্ঠে বললো,
“আমি এখনই তোদের সাথে মিট করার জন্য আসছি, এখনই।”

উত্তেজিত পূর্ণ ভাবে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল জোহান। ওর স্যান্ডউইচ অবহেলায় পড়ে রইল প্লেটে। মিতুল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। জোহানের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পেরেছে যে ওর ফ্রেন্ডসরা পিকনিক করে গ্রাম থেকে এসে পড়েছে। কিন্তু ও বুঝতে পারছে না, এতে এত লাফালাফি করার কী আছে? এমন একটা ভাব করছে যেন ওর একারই বন্ধু আছে। আর মানুষের কোনো বন্ধু নেই বা ছিল না কোনো দিন।
_______________

আজকের দিনটি বেশ রৌদ্রজ্জ্বল। ফুরফুরা বাতাস, আর গাছে গাছে রঙিন ফুল জানান দিচ্ছে বসন্ত উৎসব চলছে এখন এখানে। আহ! আশপাশ কী সুন্দর মোহনীয়। দেখলে নয়ন জুড়ায়। মিতুল লক্ষ্য করলো আশেপাশে নজর বুলাতে বুলাতে ও ক্যামিলার থেকে বেশ পিছনে পড়ে গিয়েছে। মিতুল দৌঁড়ে গিয়ে ক্যামিলার সাথে মিলিত হলো আবার। ক্যামিলার সাথে গ্রোসারি শপে যাচ্ছে ও। ক্যামিলা মিতুলের আনন্দিত মুখ লক্ষ্য করে বললো,
“কী কানাডা কেমন লাগছে তোমার?”

“দারুণ।”

“আশা করি জোহান তোমাকে ভালো ভাবে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে এডমন্টনের সব কিছু।”

জোহানের কথা মনে উঠতেই মিতুলের মন খারাপ হয়ে গেল।
“সবকিছু ভালো করে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে না ছাই! ও আবার মানুষকে ঘোরাতেও জানে না কি?”

ক্যামিলা হেসে দিলো।
“ঠিক আছে, ওর সাথে ঘুরে মন না ভরলে আমি তোমাকে সব ঘুরিয়ে দেখাবো।”

“সত্যি?”

“হ্যাঁ।”

একটু নীরবতা গেল। ক্যামিলা নীরবতা ভেঙ্গে বললো,
“ওহ হ্যাঁ, একটা কথা তো বলা হয়নি তোমাকে। আগামী উইকেন্ডে বারবিকিউ পার্টি হবে।”

“বারবিকিউ পার্টি?”

“হ্যাঁ। মাঝে মাঝেই উইকেন্ডে নেইবরহুডেরা মিলে সবাই একইসঙ্গে পার্টি করে থাকে। অনেক মজা হয়ে থাকে ওই পার্টিতে। বাকি দিন গুলোতে সবাই ব্যস্ত থাকে, এক জায়গায় বসা হয় না, সময় কাটানো হয় না। তাই উইকেন্ডে এই বারবিকিউ পার্টির আয়োজন।”

ক্যামিলা মিতুলকে তাদের বারবিকিউ পার্টির ব্যাপারে বলতে লাগলো বিস্তারিত। এই একই বিষয়ে কথা বলতে বলতে শপ পর্যন্ত পৌঁছে গেল ওরা।
শপে ঢুকে বড়ো সড়ো রকমের একটা ঝটকা খেল মিতুল। প্রথমে চোখের ভুল ভেবেছিল, কিন্তু কার্ল ও কে দেখে নিজেই যখন এগিয়ে এলো তখনই ব্যাপারটা স্পষ্ট হলো। মিতুল অবাক হয়ে জানতে চাইলো,
“তুমি এখানে? তোমার ডিউটি নেই?”

“আজকে ছুটি আমার। আজকের দিনে সাধারণত ডিউটি করি না আমি।”

“ওহ…”

“তোমার সাথে সে কোথায়? আজকে সাথে আসে নি?” জোহানের কথা বললো কার্ল।

“না।”

“সেদিন তো তোমার সাথে পরিচিত হওয়া হয়নি ভালো ভাবে। আজকে সময় হবে?”

কার্লকে কী বলবে বুঝতে পারলো না মিতুল। ক্যামিলার সাথে বের হয়েছে, এখন ক্যামিলাকে একা যেতে বলে ও থাকে কী করে?
মিতুল যখন দ্বিধায় ভুগছিল তখন ক্যামিলাকেই বলতে শোনা গেল,
“ঠিক আছে মিতুল, তুমি তোমার বন্ধুর সাথে গল্প করো সময় নিয়ে। তোমাদের আড্ডা শেষ হলে আমাকে ফোন করো, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো তোমায় নেওয়ার জন্য।”

কথা গুলো বলে ক্যামিলা ওদেরকে সুন্দর গল্প আসরের শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেল।
গ্রোসারি শপ থেকে বের হয়ে কাছেই একটা কফি শপে বসলো ওরা।

জোহান বন্ধুদের সাথে একটা তিনতলা রেস্টুরেন্ট থেকে হাসাহাসি করতে করতে বের হলো। অনেক বন্ধু ওর। অনেকেই নিজেদের গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। জোহানের গাড়িতে উঠলো তিন জন। রিকার্ডো, সারা, জেমস। জোহানের গাড়ি রাস্তায় পার্কিং সাইডে পার্ক করে রেখেছিল। জোহান দরজা বন্ধ করতে গিয়ে ওর পার্ক করে রাখা গাড়ি বরাবর, রাস্তার ওপাশে একটা কফিশপের নিচতলায় চোখ পড়তে ওর চোখ আটকে গেল। গ্লাস ওয়াল থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, একটা মেয়ে এবং একটা ছেলে বসে আছে। মেয়েটির মুখে হাসি এবং ছেলেটার মুখেও মৃদু হাসি। দৃশ্যটা একদম সহ্য হলো না জোহানের। ইচ্ছা করলো মেয়েটাকে এখনই টেনে নিয়ে আসে ওখান থেকে।

(চলবে)

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ০৯
_____________

“তো তুমি ব্যাংলাডেশ থেকে এসেছো?”

মিতুল মাথা নাড়িয়ে বললো,
“হুম। তুমি চেনো বাংলাদেশ?”

“না, ওরকম ভাবে চিনি না। তবে একটু আধটু জানি দেশটা সম্পর্কে। শুনেছি খুব সুন্দর একটি কান্ট্রি।” কার্ল কফির মগে চুমুক দিয়ে আবার বললো,
“জানো তো, আমার এখানে একজন বেঙ্গলি ফ্রেন্ড আছে। ওর নাম সিয়ম। খুব ভালো সম্পর্ক ওর সাথে আমার। ও সহজ সরল একটি ছেলে। ব্যাংলাডেশ থেকে পড়তে এসেছে এখানে। মাঝে মাঝে ব্যাংলাডেশ নিয়ে কথা হয় ওর সাথে। টরোন্টো থাকাকালীন অনেক সময় ওর সাথে ছিলাম আমি।”

“টরোন্টোতে থাকতে তুমি?”

“হ্যাঁ। এডমন্টনে এসেছি মাত্র দশ কী পনেরো দিন হলো।”

“তো টরোন্টো থেকে এডমন্টনে কেন আসতে হলো তোমার?”

“আমার হোমল্যান্ড এই এডমন্টন। আমার ফ্যামিলি এখানেই থাকে। আমার পাপা আমাকে টরোন্টো থেকে এডমন্টনে চলে আসার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। আর তাছাড়া আরও একটা বিশেষ কারণ আছে যার জন্য আমি এডমন্টনে এসেছি।” কার্লের কণ্ঠে কিছুটা খুশির রেশ অনুভব করা গেল।

“কী বিশেষ কারণ?” মিতুলের খুব করে জানতে ইচ্ছা করলো।

“সেটা এখন বলবো না। সময় হলে বলবো। তুমি তো বেশ অনেক দিনই আছো কানাডাতে। আশা করি তুমি আমার বিশেষ কারণটা জানবে এবং দেখবে।”

মিতুল মৃদু হেসে বললো,
“ঠিক আছে।”

“আচ্ছা, তোমাদের দেশের কী যেন একটা পোশাক আছে না ট্র্যাডিশনাল? মেয়েরা পরে। কী যেন বলে ওটাকে স…স…”

“শাড়ি?”

“হ্যাঁ, ওটাই। পোশাকটা পছন্দ আমার। এক ওল্ড দম্পতিকে চিনতাম আমি। মিস্টার এন্ড মিসেস খান। ওনারা ব্যাংলাডেশি ছিলেন। মিসেস খানকে প্রায়ই দেখতাম ওই ট্র্যাডিশনাল পোশাকটি পরতে। তার কাছ থেকেই জেনেছিলাম ওটাকে শ…শারি বলে।”

কার্লের কথা শুনতে কেন যেন খুব ভালো লাগছে মিতুলের। কী সুন্দর করে কথা বলে! সারাদিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা এই কণ্ঠ কানের কাছে বসে বকবক করতে থাকলেও বিরক্তি আসবে না। কার্ল বাংলাদেশ সম্পর্কেও কত সুন্দর করে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো। কত সহজে মিশে গেল ওর সাথে। অহংকারের ছিটেফোঁটাও নেই একদম। মিতুলের ইচ্ছা হলো একদিন ও একটা শাড়ি পরে কার্লকে দেখায়!

______________

জোহান ঠিক ঘরের প্রবেশ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। মিতুল এখনও বাড়ির বাইরে। মিতুলের জন্যই ও দাঁড়িয়ে আছে। মিতুল আসলেই মিতুলকে ধরবে।
মিতুল বাড়িতে ফিরলো আরও বেশ কিছুক্ষণ পর। ঘড়িতে তখন ৭ টা পিএম। তখনও চারিদিক আলোকিত, উজ্জ্বল।
মিতুলকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও খুব আনন্দিত। অবশ্য আনন্দিত থাকবেই বা না কেন? নিজের প্রিয় ধূসর চোখার সাথে ছিল, আনন্দ তো হওয়ারই কথা।
তবে ওই আনন্দ জোহানকে করে তুলছে বিষাক্ত। জোহানের চোখ কিছুতেই ওর এত আনন্দিত, চঞ্চলা মুখ সহ্য করতে পারছে না।

“দাঁড়াও।”

মিতুল জোহানকে দরজার কাছে দাঁড়ানো দেখেও, না দেখার ভাণ করে ওর পাশ থেকে চলে যাচ্ছিল। জোহানের রাগান্বিত কণ্ঠ ও কে জোহানের দিকে তাকাতে বাধ্য করলো।

মিতুল ত্যাড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“কী?”

“কোথায় ছিলে সারা বিকেল?”

“আমার যেখানে খুশি, আমি সেখানে ছিলাম। এই প্রশ্ন আমাকে কেন করছো তুমি?”

“কার সাথে ছিলে?”

“আশ্চর্য! তুমি একের পর এক প্রশ্ন করছো কেন আমায়? তুমি কি আমার অভিভাবক?”

“কোথায় ছিলে?”

আবারও জোহানের একই প্রশ্নে মিতুল অতিষ্ঠ হয়ে বললো,
“জাহান্নামের চৌরাস্তায় ছিলাম আমি, তোমার কোনো সমস্যা? আজকে খুব নাচতে নাচতে জিজ্ঞেস করছো কোথায় ছিলাম আমি। আর সেদিন? সেদিন তুমি নিজে কী করলে? মাঝপথে আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলে, মনে নেই সেটা? কই সেদিন তো জিজ্ঞেস করোনি কোথায় ছিলাম আমি, কীভাবে বাড়ি ফিরেছি! তাহলে আজ কেন এত আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইছো? আর জানতে চাইলেই কি আমি বলবো না কি?”

মিতুল ঘরে ঢোকা দিলে জোহান মিতুলের এক হাত টেনে ধরলো।
মিতুলের মাথা তাৎক্ষণিক গরম হয়ে গেল। জ্বলন্ত চোখে তাকালো জোহানের দিকে। মিতুলের জ্বলন্ত চোখ জোড়া দেখার সময় জোহানের নেই। ওর দৃষ্টি এখন মিতুলের মাথায় একটি ক্ষুদ্র আকারের ক্লিপের দিকে। ক্লিপটা ভালো করে দেখার জন্যই মিতুলকে থামিয়েছে। জোহানের ধারণা এটাও ওই কার্ল দিয়েছে মিতুলকে। যেমন করে হেয়ার রাবার দিয়েছিল, তেমন করে আবার হেয়ার ক্লিপও দেয়া শুরু করেছে স্টুপিডটা!

মিতুল জোহানের হাত থেকে নিজের হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো।
“এটা কোন ধরণের বেয়াদবি, হ্যাঁ?”

জোহান ওর কথায় কর্ণপাত করলো না।
“এই হেয়ার ক্লিপটা কোথায় পেয়েছো তুমি?”

মিতুল বিদ্রূপ ভাবে তাকালো জোহানের দিকে।
“পৃথিবীতে হাজার হাজার হেয়ার ক্লিপ আছে। এখন একটা হেয়ার ক্লিপ নিয়ে মাথা ব্যথা তোমার?”

“বলো, কোথায় পেয়েছ এটা?”

“এক্সকিউজ মি! আমি সামর্থ্যহীন নই যে সামান্য একটা হেয়ার ক্লিপ কেনার সামর্থ্য থাকবে না আমার। এটা আমি কিনেছি। যেদিন তুমি আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলে, সেদিন শপে গিয়ে কিনেছি এটা। আর তাছাড়া আমার কাছে হেয়ার ক্লিপের অভাব নেই। চাইলে তা দিয়ে নিজেও একটা হেয়ার ক্লিপের দোকান খুলতে পারি।”

জোহান মিতুলের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। লনের দিকে শূন্য দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,
“গেট লস্ট।”

মিতুলের ভ্রু কুঁচকে এলো। নিজে হাত ধরে থামিয়ে, নিজেই চলে যেতে বলছে? মিতুলের কুঁচকানো ভ্রু জোড়া হঠাৎ প্রসারিত হয়ে উঠে বিস্ময়ের রূপ নিলো। জোহান কি ওকে কোনো রকম ভাবে অপমান করছে না কি? এটা কি ওদের মানুষকে অপমান করার কোনো আধুনিক টেকনিক? মিতুল অপমান বোধ করলো। আধুনিক টেকনিক খাটিয়ে এখন অপমান করছে? খবিশ! মিতুল দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকলো।

হলরুম থেকে যাওয়ার সময় ক্যামিলা এগিয়ে এলো কাছে।
“এ কী, তোমায় যে আমি বললাম, বন্ধুর সাথে আড্ডা শেষ করে আমাকে কল দিতে, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো।”

ক্যামিলার টেইক কেয়ার দেখে মিতুলের অপমান বোধ একটু কমে এলো।
“তার দরকার ছিল না, ক্যামিলা। কার্ল আমাকে উবারে উঠিয়ে দিয়েছিল। অযথা আবার তোমাকে ফোন করে পেইন দেওয়া উচিত মনে হয়নি আমার।”

“এটাকে পেইন বলছো কেন? এখানে পেইনের কী আছে? রাবার্তাকে(বাড়ির দ্বিতীয় মেইড) পাঠিয়ে দিতাম আমি গাড়ি নিয়ে। ওর বিশেষ কোনো কাজ ছিল না।”

মিতুল বিষয়টাকে ধামাচাপা দিতে চাইলো,
“ঠিক আছে থাক ওসব কথা। আমাকে এক গ্লাস সফট ড্রিঙ্কস বানিয়ে দাও। জানোই তো তোমার হাতের ড্রিঙ্কস প্রিয় আমার।”
মিতুল একটু উজ্জ্বল হাসি উপহার দেওয়ার চেষ্টা করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।

রুমের দরজা খুলে রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখলো, বাড়ির ডলের মতো সাদা লোমের বিড়ালটা ঠিক ওর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চুপি চুপি কখন যেন এসেছে পিছু পিছু। মিতুল বিড়ালটাকে কোলে তুলে নিলো। কী কিউট! বিড়ালটা আপোষেই ওর কোলে চলে এসেছে। মিতুল বিড়ালের সাথে ভাব জমাতে চাইলো।
“হোয়াট’স ইওর নেম?”

বিড়াল তো আর মিতুলের কথার উত্তর দিতে পারে না। আর এই বিড়ালটি এতটাই শান্ত যে মিউ মিউ করেও ডাকলো না একবার।

“কোন দেশি কিটি তুমি? জাপানিজ না কি?” মিতুলের কৌতূহল হলো।
বিড়ালটি সুবোধ বালকের মতো মিতুলের কোলে জড়োসড়ো হয়ে নিশ্চুপ বসে রইল।

“স্যারি!” একটা পুরুষ কণ্ঠের ডাকে বিড়ালটি লাফ দিয়ে মিতুলের কোল থেকে নেমে দৌঁড়ে চলে গেল।
জায়িনের পায়ের কাছে গিয়ে থামলো। জায়িন কোলে তুলে নিলো বিড়ালটিকে।

“ও তোমার বিড়াল বুঝি?” বাংলাতেই প্রশ্ন করলো মিতুল। দেখতে চাইছে ঠিক কতটা বাংলা জানে।

“হ্যাঁ।” বাংলাতেই বললো জায়িন।

“ওর নাম ‘স্যারি’?

“হুম।”

“কোন দেশি বিড়াল স্যারি?”

“কানাডিয়ান।”

মিতুল বিস্ময় নিয়ে বললো,
“ও তাই? আমি তো ভেবেছিলাম জাপানিজ! আমার বড়ো ভাইয়ের একটা জাপানিজ বিড়াল ছিল, প্রায় ওর মতো দেখতে।”

“ওহ…” জায়িন একটু বিরতি নিয়ে বললো,
“কানাডা কেমন লাগছে?”

“ভালোই। তবে এখানের দর্শনীয় স্থান গুলো তো এখনও দেখা হয়নি আমার।”

জায়িন কথা বলার মতো আর কিছু পাচ্ছে না। কী বলা উচিত ঠিক বুঝতে পারছে না!
মিতুলও জায়িনের নীরবতা দেখে আর কিছু বলতে পারছে না।
জায়িন বলার মতো কিছু না পেয়ে কয়েক সেকেন্ড নীরব দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল।
যা মিতুলের জন্য অপমানজনক হলো। একটা মানুষ এভাবে কীভাবে চলে যেতে পারে? ওর কথার জবাবে কিছু তো অবশ্যই বলা উচিত ছিল তার। আবারও কি নিজের অহংকার দেখালো না কি? অপমান করার জন্যই কি কিছু বললো না?
মিতুল বুঝতে পারছে না এই অপমান জিনিসটা ও কে ছাড়তে ছাড়তেও ছাড়ে না কেন!

________________

রাতের অন্ধকারে আবারও একবার জোহানকে জঙ্গলের ভিতর ঢুকতে দেখবে ভাবতে পারেনি মিতুল। আজকে স্পষ্ট দেখেছে জোহানকে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকতে। জোহানের পরনে খয়েরি টি শার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট ছিল। বিকেলে ওই পোশাকই পরা দেখেছিল জোহানকে। আজকে জোৎস্না ছিল না, গার্ডেনের লাইট জ্বলছিল। তাতেই স্পষ্ট দেখতে পায় জোহানকে। ঘটনাটা মিতুল দেখে কিচেনে বসে। ফ্রিজ থেকে জুস নিতে এসেছিল কিচেনে। তখন ব্যাক সাইডের জানালা থেকে চোখ পড়ে গার্ডেনে। প্রথমে মানুষটি কে তা বুঝতে পারেনি। ভেবেছিল কেউ হয়তো গার্ডেনে হাঁটাহাঁটি করছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন যেন ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হয়নি ওর। ও ছুটে যায় জানালার কাছে। জোহান তখনও ঢুকে পড়েনি জঙ্গলে। জঙ্গলে ঢোকার রাস্তা থেকে খানিক দূরে ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে জোহানের দেহটি সেদিনের মতো জঙ্গলের অন্ধকারে তলিয়ে যায়। মিতুল ওই মুহূর্তে অনুভব করে ভয়। ভীষণ ভয়। এতটাই ভয় পেয়েছিল যে হাত পা অসাড় লাগছিল ওর। মনে হচ্ছিল আর দাঁড়াতে পারবে না। নিজের সব শক্তি শেষ হওয়ার আগে ছুটে আসে নিজের রুমে।
মিতুলের হৃদয় ভয়ে ধুক ধুক করছে এখনও। ওই জঙ্গলে যাওয়ার রহস্যটা কী? জোহান কেন যায় ওই জঙ্গলে? মিতুলের মনে হচ্ছে আর যাই হোক না কেন ওই জঙ্গলে ভালো কিছু নেই। যা আছে তা কেবল মানুষের ভয়ের কারণ। কিন্তু ভয়ের মতো কী আছে ওই জঙ্গলে? মিতুল ভেবে উঠতে পারে না।
রাতে ওই ঘন কালো জঙ্গলে ঢোকা নিশ্চয়ই মুখের কথা নয়। আর কেনই বা ঢুকবে? তাও এক দিন নয়, দুই দুই দিন দেখলো ঢুকতে।
আচ্ছা…ও কোনো সিরিয়াল কিলারের কাছে এসে পড়েনি তো? জোহান কোনো সিরিয়াল কিলার নয়তো? যে মানুষকে হত্যা করে ওই জঙ্গলে লাশ গুম করে দেয়!
কথাটি মনে হতে মিতুল আঁতকে ওঠে। মুখ তীব্র ভয়ের ভীত ছায়ায় ছেয়ে যায়। আতঙ্ক চেপে ধরে চারিদিক থেকে। হাত পা কাঁপতে শুরু করে। শরীর ঘামতে থাকে অনবরত। দু চোখে ভয়, মনে সংশয়, ক্ষুদ্র জীবনের মায়া মিতুলকে অসহ্য, অসহনীয় যন্ত্রণার গভীর কূপে ঠেলে দেয়।
সত্যিই ওই জঙ্গলে কী আছে?

(চলবে)