চৈত্রিকা পর্ব-২+৩

0
433

#চৈত্রিকা (২)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________

২.
পড়ার রুমে চেয়ারে বসে বসে কলম চিবুচ্ছে চৈতালী। বার কয়েক আড়চোখে তাকিয়েছে তার মাষ্টারমশাই নিবিড়ের দিকে। নিজের খাতার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো সে। কলম রেখে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো,

‘মাষ্টারমশাই একটা কথা বলি?’

নিবিড় গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘আগে যা করতে দিয়েছি তা করো!’

‘আগে কথাটা বলি!’

‘নাহ।’

চৈতালী ঠোঁট উল্টায়। গাল ফুলিয়ে দুগালে হাত রেখে নিজের অঙ্ক খাতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফের চকচকে চোখ নিয়ে বললো, ‘মাষ্টারমশাই জানেন আমার সই হিমানীর ক’দিন পর বিয়ে। ওর বাবা ওর জন্য কতো কতো জিনিস কিনে এনেছে৷ ইসস কি সুন্দর বেনারসি, গহণা। আচ্ছা মাষ্টারমশাই ওর বিয়ে উপলক্ষে আমাকে ছুটি দিবেন না?’

নিবিড় এবার চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় চৈতালীর দিকে। এ মেয়েটা পড়ালেখায় এতো ফাঁকিবাজ কেনো সে ভেবে পায় না! আচ্ছা জমিদার বাড়ির মেয়ের মাথায় এতোই গোবর পড়া কেনো? হবে না! পড়ে কম সারাদিন লাফানো, ঝাঁপানো আর বকবক নিয়েই ব্যস্ত থাকে। নিবিড় না পারে দু ঘা লাগাতে আর না পারে এসব সইতে। নেহাৎ ই জমিদারের মেয়ে বলে সে বাধ্য হয়েই পড়াচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে একবার চৈতালীর খাতার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘তুমি অঙ্কটা শেষ করবে নাকি আমি তোমার মেজো ভাইকে ডাকবো?’

চৈতালী ফট করে খাতায় মন দেয়। মেজো ভাইকে সে প্রচন্ড ভয় পায়। এর আগে দুবার চৈতালীকে থা’প্প’ড় মে’রেছিলো। মাঝে মাঝে চৈতালী এর ওর বিয়ে দেখে আর আফসোসের সুরে বলে, ‘ইশশ এরা সবাই বিয়ে করে পড়ালেখা থেকে কি সুন্দর ছুটি পেয়ে গেছে। কবে যে আব্বাজান আমার বিয়েটা দিবে!’

নিবিড় চুপচাপ চৈতালীর অঙ্ক খাতার দিকে তাকিয়ে থাকে। সামনে মেয়েটার এসএসসি পরীক্ষা অথচ পড়াশোনায় পুরোটাই ডাব্বা। চয়ন রেনওয়াজের ৩ পুত্রের পর এই একটি মাত্রই কন্যা। সবচেয়ে আদরের। মেয়েটা ভীষণ বোকাসোকা। সারাদিন বাচ্চাদের মতো লাফানো আর অতিরিক্ত কথা বলা ছাড়া কিছু পারে না। চয়ন রেনওয়াজ মাঝে মাঝে ভীষন চিন্তায় পড়ে যায়। এই তো কিছুদিন আগে টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। অনেকে ১/২ সাবজেক্টে ফেল করলেও চৈতালী ফেল করেছে পুরো ৫ টা সাবজেক্টে। অদ্ভুত ভাবে তার মধ্যে বাংলাও আছে৷ অঙ্কে পুরো ১০০ এর মধ্যে ইয়া বড় গোল্লা নিয়ে বসে আছে৷ যেখানে চয়নের বড় ছেলে প্রহর আর ছোট ছেলে চিত্র পড়ালেখায় সবসময় প্রথম সেখানে চৈতালীর এহেন রেজাল্ট দেখে পুরো বাড়ি হতাশ। মেজো ছেলে পিয়াস এইচএসসি পরীক্ষার পর পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিলো তবুও তো তার রেজাল্ট এতো খারাপ না। এসব ভাবলেই চয়ন শুধু হতাশার শ্বাস ফেলে৷ আদরের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় সে কিছু বলেও না। চৈতালীর গোবর পড়া মাথার জন্য তার কোনো শিক্ষকও টিকে না। সবাই জমিদারের কাছে ভয়ে ভয়ে হলেও বলে দেয় এই মেয়েকে তারা পড়াবে না। শেষমেশ সে এই গ্রামে ছেলেমেয়েদের পড়ায় নিবিড়কে ধরে এনেছে মেয়েটার মাথার গোবর থেকে সার উৎপাদনের জন্য৷ তবে মনে হয় না এ কাজ নিবিড়ের দ্বারা হবে বলে! নিবিড় যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত তখন চৈতালী কলমের গুতো দেয় তাকে। অন্যমনষ্ক হওয়ায় খানিকটা চমকায় নিবিড়। পরক্ষণেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

‘কি হয়েছে তোমার? আমি কিন্তু সত্যি সত্যি তোমার মেজো ভাইকে ডেকে আনবো।’

চৈতালী চোখের পাতা বার কয়েক ঝাপটিয়ে ভীত স্বরে বলে, ‘আপনি সবসময় এমন করেন কেনো মাষ্টারমশাই? একটাই তো কথা বলবো। এতে মেজো ভাইকে কেনো ডাকবেন?’

‘যা বলবে তাড়াতাড়ি বলে অঙ্কে মন দাও নয়তো এবার পিঠে লাঠির বা’রি পড়বে।’

‘কিছুদিন পর হয়তো বড় ভাইজানের বিয়ে। তখনও কি আমাকে ছুটি দিবেন না মাষ্টারমশাই?’

নিবিড় অবাক হয়ে বলে, ‘তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে?’

চৈতালীর চোখ চকচক করে ওঠে। মাথা কিছুটা নিবিড়ের দিকে এগিয়ে ফিসফিস করে বলে, ‘হ্যাঁ। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছি আম্মাজানের কথা। হয়তো এমাসেই ভাইজানের বিয়ে।’

‘কার সাথে বিয়ে?’

চৈতালী মন খারাপ করে বলে, ‘সে তো জানি না। তবে ভাবীজান নাকি অনেক রুপবতী। একদম চন্দ্রের মতো। কিন্তু আমার মহুয়া ভাবীই বেষ্ট ছিলো৷ কেনো যে সে চলে গেলো!’

৩.
চৈত্রিকা আর সাথী ফাঁকা ঢোক গিলে ধীরে সুস্থে পিছনে ফিরে তাকায়। একটা ছোট ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচে। ছেলেটা তখনো তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চৈত্রিকা আর সাথীর কোনো উত্তর না পেয়ে সে এগিয়ে আসে। মাথা উঁচিয়ে দুজনকে দেখে বেশ ভাবুক স্বরে বলে,

‘মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা কেনো? এখানে কি করছিলে তোমরা?’

চৈত্রিকা খানিকটা হাসে। বাচ্চা ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘এমনিতেই এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম গো।’

‘তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? জানো না এখানে জমিদাররা থাকে।’

‘হ্যাঁ আসলে আমার বোনের ভীষণ পানি পিপাসা পেয়েছিলো তাই দাঁড়িয়ে গেছি। আমরা এক্ষুণি চলে যাবো। তুমি যাবে?’

পিচ্চিটা কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসে। চৈত্রিকা আর সাথীর সাথে পা মিলিয়ে সেও হাঁটতে হাঁটতে বলে, ‘তোমরা পানি খেয়েছো নাকি এনে দেবো?’

‘নাহ নাহ খেয়েছি। তুমি এখানেই থাকো?’

‘হ্যাঁ আমার মা জমিদারের বাড়িতে কাজ করে।’

চৈত্রিকা ‘ওহ’ বলে। পিচ্চি ছেলেটার সাথে কতক্ষণ এটা ওটা নিয়ে কথা বলে। জানতে পারে ছেলেটার নাম আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহ খুব সহজেই মিশে গেলো চৈত্রিকার সাথে। চৈত্রিকার মুখের কাপড় দেখে ওদিকে আঙুল তুলে বলে,

‘তোমরা এমন মুখে কাপড় বেধেছো কেনো?’

‘আব..আসলে হয়েছে কি! আমাদের বাড়ির নিয়ম এটা।’

আব্দুল্লাহ ঠোঁটের কোণে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলে, ‘ওহ আচ্ছা।’

সাথী, চৈত্রিকা, আব্দুল্লাহ এগোতে এগোতে গল্প করে। একপর্যায়ে চৈত্রিকা হাসতে হাসতে বেশ কৌশলে জিজ্ঞেস করে প্রহরের কথা। আব্দুল্লাহ ফাঁকা ঢোক গিলে মুখটা শুকনো করে ফেলে। বেশ মিনমিনে স্বরে বলে,

‘ওই জমিদারপুত্রের কথা আমাকে বলিও না। আমি কিছু জানি না।’

বলেই চৈত্রিকার হাত ছেড়ে ছুটে পালায়। চৈত্রিকা কপালে ভাজ ফেলে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। সাথী ভীত দৃষ্টিতে তাকায়। আতঙ্কিত স্বরে বলে, ‘আব্দুল্লাহ ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না!’

চৈত্রিকা মাথা নাড়ায়। ভীতু বোনটির হাত শক্ত করে চেপে ধরে। তারপর নিজেদের বাড়ির দিকে হাঁটা লাগায়। চৈত্রিকাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দুর থেকে হাসে কেউ। চৈত্রিকারা চোখের আড়াল হতেই তার অবয়বও মিলিয়ে যায় ক্ষণ মুহুর্তেই।

৪.
চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। ঝিঝিপোকার শব্দ আর থেকে থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে দুর থেকে। সবকিছু উপেক্ষা করে এই রাতের অন্ধকারেই চৈত্রিকা বসে আছে দীঘির পাড়। আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চাঁদের আলো সরাসরি তার মুখে আছড়ে পড়ছে। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে পানির দিকে। আশে পাশে কি হচ্ছে তার বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই। স্বচ্ছ জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব দেখে হাসে। বিড়বিড় করে বলে,

‘চন্দ্র!’

সে সময় ধীর পায়ে এগিয়ে আসে সাথী। মেয়েটা তুলনার চেয়ে একটু বেশিই ভীতু। বার কয়েক ঢোক গিলে বলে, ‘এই চৈত্র তুই রাতের বেলা এখানে কি করিস? আব্বা জানলে কি হবে!’

চৈত্রিকা জবাব না দিয়ে হাসে। শান্ত চোখে তাকায় সাথীর দিকে৷ সাথী চমকে ওঠে। ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিজের শাড়ি আঁকড়ে ধরে। চৈত্রিকা স্বাভাবিক ভাবেই বলে,

‘এখানে বোস! গল্প করি।’

সাথী কোনোরকমে ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে, ‘ন-নাহ। তুই বাড়ির মধ্যে আয়।’

চৈত্রিকা মুখ ফিরিয়ে নেয়। চোখে মুখে ভেসে ওঠে ভ’য়ং’কর রাগ। নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দু পা এগিয়ে রাতের বেলাতেই চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে নেয়। তারপর পানির দিকে নিজের কাঁপা কাঁপা প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,

‘বি’শ্বাসঘাতকার শাস্তি কি সাথী?’

সাথী চমকায়। দ্রুত পায়ে চৈত্রিকার কাছে এসে তার হাত চেপে ধরে। হাত ধরে টেনে তুলতে তুলতে বলে, ‘রাতের বেলাতে একা একা চলে আসিস তোর ভয় করে না?’

‘সে রাতের পর আমার ভেতরে আর ভয় বলে কোনো বস্তু নেই।’

সাথী আর জবাব দেয় না। টেনে নিয়ে কোনো রকমে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। সবাই ঘুমে ব্যস্ত। রাতের বেলাতে চৈত্রিকাকে দেখতে মাঝে মাঝে খুব ভয় লাগে সাথীর। অন্যদিন সাথীর মা যায় চৈত্রিকার কাছে তবে আজ তার মা নেই। সাথী চৈত্রিকাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে দরজা আটকে দেয়। চৈত্রিকা কোনো শব্দ না করে শুয়ে পড়ে৷ সাথী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে নেয় চৈত্রিকা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে রক্তমাখা বাবার মুখ। বার বার বলছে, ‘পালিয়ে যা চৈত্র।’

ধপ করে চোখ মেলে। সাথীকে বলে, ‘তুই ঘুমিয়ে পড়। আমি একাই ঘুমিয়ে যাবো।’

সাথী দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশে শুয়ে পড়ে৷ দুজনের মাঝে অনেকক্ষণ নীরবতার পর সাথী মিনমিন করে বলে, ‘তুই কি সত্যিই বিয়েটা করবি চৈত্র? ভেবে দেখেছিস এসবের পর কি হতে পারে!’

‘ভেবেছি। আর এসবের পর ধীরে ধীরে পাপমুক্ত হবে। জমিদারের পাপের বোঝা একটু বেশিই হয়ে গেছে।’

চৈত্রিকার নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেওয়া দেখে বেশ অবাক হয় সাথী। কিছু বলতে নিবে তার আগেই দরজায় খট খট শব্দ হয়। সাথী ভয়ে আঁকড়ে ধরে চৈত্রিকার হাত। চৈত্রিকা একবার সাথীর দিকে তাকিয়ে আরেকবার তাকায় দরজার দিকে। পর পর দুবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হওয়ার পর একাই থেমে যায়। সাথী ভয়ে ভয়ে বলে,

‘আব্বা আসলো নাকি চৈত্র?’

‘তোর আব্বা এখনো এতো কু’লা’ঙ্গা’র হয়নি যে মেয়ের ঘরে আসবে কু’ক’র্ম করতে।’

সাথীর মুখটা শুকিয়ে যায়। তবে আঁকড়ে ধরে থাকা হাতটা নরম হয় না। চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাথীর হাত ছাড়াতে নিলে সেই হাত আরো শক্ত করে ধরে সাথী। মাথা নাড়িয়ে বোঝায় ‘নাহ’। তবে সে বারণ শোনে না চৈত্রিকা। ধীর স্বরে আশ্বস্ত করে বলে,

“ভয় পাস না। আমি আছি তো!’

তবুও সাথী ছাড়তে চায় না। চৈত্রিকা জোড় করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঘরের কোণা থেকে রাম দা তুলে নেয়। ধীর পায়ে এগিয়ে আস্তে ধীরে দরজা খুলে দেখে ওপাশে কেউ নেই। ভ্রু কুঁচকে আশে পাশে তাকিয়ে জায়গাটা পরখ করে নিয়ে নিচে তাকাতেই চোখে পড়ে একটুকরো সাদা কাগজ। চৈত্রিকা দা হাতে নিয়ে সাবধানে কাগজ তুলে নিয়ে দরজা আটকায়। বিছানায় এসে আলগোছে কাগজটা খুলতেই চোখে পড়ে বড় বড় অক্ষরে লিখা,

‘সাবধান। কাল প্রহর রেনওয়াজ তোমার সাথে দেখা করতে আসবে।’

চৈত্রিকা ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। সাথী উঁকি দিয়ে লিখাটা পড়ে বেশ চমকায়। উত্তেজনা, ভয়ে হালকা জোড়ে বলে ফেলে, ‘প্রহর রেনওয়াজ আসবে মানে কি? উনি কেনো আসবে?’

চৈত্রিকা সাথে সাথে সাথীর মুখ আটকে ধরে। চোখ রাঙিয়ে বলে, ‘তোর বাপ রে জানাচ্ছিস চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া?’

সাথী শান্ত হয়। বেশ শান্ত স্বভাব নিয়েই বলে, ‘তোকে এই কাগজ দিয়ে গেলো কে? আর সে জানলো কেমনে কাল প্রহর রেনওয়াজ আসবে?’

‘ঘুমা। অনেক রাত হয়ে গেছে।’

সাথী বুঝলো চৈত্রিকা বিষয়টা এড়িয়ে গেলো। কে ওকে খবর দিলো! কে পেছন থেকে সাহায্য করছে ওকে! মাথায় হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। চৈত্রিকা কাগজ টা হাতে নিয়ে অদ্ভুত স্বরে বলে,

‘তবে প্রথমবারের মতো কোনো এক প’শু’র মুখোমুখি হবো।’

চলবে..

#চৈত্রিকা (৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
___________

৫.
সকাল সকাল আজম আলী জমিদার বাড়িতে হাজির হয়েছে। জমিদার গিন্নি পল্লবী তাকে ভদ্র ভাবে বসতে দিলেও মনে মনে সে ভীষণ চোটে আছে। এই গ্রামের সব থেকে চরিত্রহীন লোক হচ্ছে আজম আলী। যেকোনো মেয়ে থেকে মহিলা সবাই তার থেকে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রাখে। সেই লোককে নিজের বাড়িতে দেখে মাথায় আগুন জ্বলছে পল্লবীর৷ চয়ন রেনওয়াজের ওপর সে ভীষণ রকম ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কোনো রকমে একজন দাসীকে দিয়ে টুকটাক নাস্তা পাঠিয়েছে সে। অথচ আজম আলী সেই দাসীর সাথেও অস’ভ্যতা করার চেষ্টা করে। দাসী এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,

‘গিন্নি মা দয়া করে আমাকে আর লোকটার ফরমায়েশ খাটতে কইবেন না৷’

পল্লবী ফোঁস করে ওঠে। দাসীকে যেতে বলে সে অন্দরমহলে যায়। নিজের রুমে বেশ আয়েশ করে তখনও শুয়ে ছিলো চয়ন রেনওয়াজ। পল্লবী কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

‘আপনার কি খেয়ে কাজ নেই? ওই আজম আলীকে বাড়িতে ঢোকার অনুমতি কেনো দিয়েছেন?’

চয়ন খানিকটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বলে, ‘সে আবার কি করলো গিন্নি?’

‘আপনি জানেন না সে কি করেছে বা করতে পারে? যান তো! গিয়ে দেখুন ল’ম্প’টটা কি কাজে এসেছে! যা কাজ আছে সেড়ে দ্রুত বিদেয় করুন।’

পল্লবীর রাগ বুঝলো চয়ন। এমনিতে সহজে তার মুখের ওপর কোনো কথা বলে না তার গিন্নি কিন্তু আজম আলীকে দেখলেই রেগে যায়। চয়ন চুপচাপ দরজা দিয়ে বেড়োতে নিলে পল্লবী বেশ শান্ত কন্ঠে বলে,

‘আপনি কি সত্যি ওই চ’রিত্র’হীনটার ভাগ্নীকে আমার প্রহরের বউ করে আনবেন? ওর মতো ওর ভাগ্নীটার আবাার চরিত্রে দোষ নেই তো?’

চয়ন এবার বেশ গম্ভীর হলেন। কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ গটগট শব্দ তুলে বের হয়ে গেলেন। পল্লবী ঘরে থাকা বিশাল আয়নাটার সামনে বসে। নিজেই নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে কিয়ৎক্ষণ হাসে।

চয়ন হলরুমে এসে আজম আলী কে বসে থাকতে দেখে তার পাশেই বসে। আজম আলী বেশ উশখুশ করছে। চয়ন তা খেয়াল করেও চুপচাপ বসে রইলেন। কতক্ষণে আজম আলী মুখ খোলে তার আশায় রইলেন তিনি। আজম আলী বেশ অনেকটা সময় নিয়ে বললো,

‘জমিদার সাহেব আমি জানি কাল আপনার সাথে এ নিয়ে আমার কথা হয়েছে তবুও আজ আরো একবার বলছি! দয়া করে বেয়াদবি মাফ করবেন। আপনারা কি সত্যিই চৈত্রিকাকে বাড়ির বউ করতে চান? মানে আরো একবার ভালো করে ভেবে দেখলে হতো না?’

চয়ন কোনো জবাব দেওয়ার আগেই ভেসে আসে কর্কশ, গম্ভীর এক পুরুষালী কন্ঠ, ‘ভেবে দেখার তো কিছু নেই আজম আলী। আর চৈত্রিকাকে বিয়ে করতে চাওয়ায় তোমার কেনো এতো সমস্যা হচ্ছে? তোমার কি এবার নিজের ভাগ্নীর দিকেও নজর পড়লো নাকি!’

এ কথায় বেশ ঘাবড়ে গেলেন আজম আলী। চয়নকে সে যতটা না ভয় পায় তার চেয়েও দ্বিগুণ বা কয়েকগুণ বেশি ভয় পান প্রহরকে। বার কয়েক ফাঁকা ঢোক গিলে আস্তে করে তাকায় প্রহরের দিকে। গায়ে একটা শুভ্র রঙের পাতলা শার্ট জড়িয়ে তার ওপরের বোতাম খোলা রেখেছে প্রহর। হাত দুটো গুজে রেখেছে প্যান্টের পকেটে। চুলগুলো এলোমেলো। ভ্রু জোড়া কুঁচকানো। ঠোঁটে লেগে আছে অদ্ভুত এক হাসি। চেহারায় জমিদার জমিদার ভাবটা বেশ এটে সেটে রয়েছে। নিঃসন্দেহে জমিদারের বড় পুত্র সুদর্শন। এই সুদর্শন পুরুষের জন্য নারীরা যেমন মরিয়া হয়ে যায় ঠিক তেমনই এই সুদর্শন চেহারার পিছনের ভ’য়ং’কর রুপের কথা জানলে এই পুরুষের চেয়ে অন্তত ৫০ হাত দুরে থাকে। আজম আলীর কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম আর ভীতু মুখ দেখে বেশ মজা পায় প্রহর। নিজের মতো করে সোফায় গা এলিয়ে বসে পড়ে৷ তারপর বেশ ঠান্ডা স্বরে প্রশ্ন করে আজম আলীর উদ্দেশ্যে,

‘চৈত্রিকার সাথে আমার বিয়েতে ঠিক কি সমস্যা আজম আলী?’

আজম আলী আশ পাশ হাতড়েও কিছু বলার মতো পেলো না। মাথা নিচু করে বসে রইলো। রীতিমতো ঘাম ছুটে যাচ্ছে তার। প্রহর শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো কিছু সময়। তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো,

‘তোমাকে আমি কু’র’বা’নী দেওয়ার আগে ভালো হয়ে যাও আজম আলী। আমি যদি একবার তোমার মু’ন্ডু ধরি তবে তা মাথা থেকে আলাদাা করতে সময় নিবো না। চৈত্রিকার সাথে বিয়েটা আমার হবেই। আর তা আমি যখন বলবো তখনই। তাছাড়া আমার জানামতে চৈত্রিকার কোনো আপত্তি নেই এই বিয়েতে। অবশ্য থাকলেও তা আমি শুনতাম না। যায় হোক আজ বিকেলে চৈত্রিকার সাথে দেখা করবো আমি। কোনো রকম চালাকি করলে খুব একটা ভালো হবে না।’

আজম আলী প্রত্যেকটা বাক্যে কেঁপে উঠলেন। প্রহরের কন্ঠে কিছু একটা তো ছিলো যার কারণে আজম আলী ভয়ে রীতিমতো ঘেমে গোসল করে ফেলেছেন। চয়ন শুধু পুরোটা সময় ছেলের কথার দাপট দেখে গেলো। একদম যোগ্য জমিদারপুত্র। চয়ন মুচকি হাসে। মনে মনে নিজের শ’য়’তা’নী বুদ্ধির যোজন বিয়োজন করতে থাকে।

৬.
দুপাশে দুই বেনুনি ঝুলিয়ে নাচতে নাচতে বের হয়েছে চৈতালী। পড়ালেখা করতে তার ভাল্লাগে না তাই ঠিক করেছে এখন হিমানীর বাড়ি গিয়ে আড্ডা দিবে। ক’দিন পর তো বিয়েই হয়ে যাবে তখন তো আর তার সাথে কথাও হবে না। ভেবেই একটু পর পর ঠোঁট ফুলাচ্ছিলো চৈতালী। চৈতালী মুখ ফুলিয়ে যখন সামনে এগোতে ব্যস্ত তখনই দুর্ভাগ্যবশত সামনে পড়ে যায় নিবিড়। নিবিড়কে দেখে ফাঁকা ঢোক গিলে চৈতালী। চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। নিবিড় চোখ মুখ কুঁচকে গম্ভীর স্বরে বলে,

‘এই মেয়ে নেচে নেচে কোথায় যাচ্ছো? পড়ালেখা নেই? ওদিকে কি?’

‘আসলে মাষ্টারমশাই আমি তো একটু হিমানীর বাড়ি যাচ্ছি। ‘ও’ না ডেকেছে আমাকে!’

চৈতালী কথা বলার সময় বার বার চোখের পলক ফেলছিলো খেয়াল করে নিবিড় গাঢ় দৃষ্টিতে তাকায়। কন্ঠের গাম্ভীর্যতা ধরে রেখে বলে, ‘সারাদিন এসব করে বেড়ানো ছাড়া কোনো কাজ নেই? হিমানী তোমাকে ডেকেছে? মিথ্যা বলা শিখেছো খুব!’

চৈতালী চোখ পিটপিট করে তাকায়। এই মাষ্টারমশাই কেমনে বুঝে যায় যে সে মিথ্যা কথা বলছে! মাষ্টারমশাই কি ম্যাজিক জানে নাকি! চোখ চকচক করে ওঠে চৈতালীর। বেশ উৎফুল্ল স্বরে বললো,

‘মাষ্টারমশাই আপনি কি ম্যাজিক পারেন?’

নিবিড় কপালে ভাজ ফেলে তাকায়। তারপর চৈতালীর বিনুনি টেনে দিয়ে বলে, ‘বাড়ি যাও। সোজা পড়তে বসবে!’

‘সারাদিন কি কেউ পড়ে মাষ্টারমশাই?’

‘তুমি কি পড়তে বসেছিলে সারাদিনে একবারও? মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করলে তোমার আব্বাজান তোমাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।’

চৈতালী লাফিয়ে ওঠে। বিনুনি নাচাতে নাচাতে বেশ আনন্দের স্বরে বলে, ‘মাধ্যমিকে ফেল করলে আব্বাজান সত্যি আমার বিয়ে দিয়ে দিবে? তাহলে তো আর পড়তে হবে না তাই না!’

নিবিড়ের ইচ্ছে করলো নিজের কপাল নিজে চাপড়াতে। মনে মনে সে নিজের কপাল চাপড়েও নিলো তবে চৈতালীর সামনে চোখ রাঙিয়ে তাকালো৷ চৈতালী সে চোখে তাকিয়ে খানিকটা ঘাবড়ে পিছিয়ে যায়। ভীতু ভীতু চোখে তাকিয়ে বলে,

‘ওমন রা’ক্ষ’সের মতো তাকান কেনো? আমার বুঝি ভয় করে না! আমার তো ছোট্ট একটা হৃদয় ওমন করে তাকালে হৃদয়টা যদি ভয়ে ভেঙেই যায়!’

নিবিড়ের ভীষণ হাসি পেলো। তবে সে হাসলো না৷ নিজের শার্ট ঠিক করে নিয়ে বললো, ‘হিমানীদের বাড়ি যাচ্ছো তো! চলো আমিও বাড়ির দিকে যাচ্ছি।’

চৈতালী মাথা নাড়ালো। আগের মতোই বেনুনি নাচাতে নাচাতে নিজেও লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটা শুরু করেছে। পেছন থেকে নিবিড় বেশ গম্ভীর স্বরে বলে,

‘এই মেয়ে ভালো মতো হাঁটো। নেচে নেচে যাচ্ছো কেনো? স্বাভাবিক ভাবে হাঁটো!’

চৈতালী ভয়েই স্বাভাবিক হয়ে যায়। ঘাড় ফিরিয়ে নিবিড়ের দিকে চেয়ে দেখে নিবিড়ের দৃষ্টি তার দিকেই। চৈতালী ঠোঁট কামড়ে ফিসফিস করে বলে, ‘আপনি এতো সুন্দর কেনো মাষ্টারমশাই?’

৭.
বিকেলের দিকে মামীর হাতে হাতে কাজ করছিলো চৈত্রিকা। সাথীও আছে। মায়ের বাড়ি থেকে এসেই মুখটা ভার সনিয়া বেগমের। চৈত্রিকা বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছে সনিয়া বেগমের অন্যমনষ্কতা। হঠাৎ মামীর মুখের এমন অবস্থা দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে সে। গলাার স্বর নরম করে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘কিছু হয়েছে মামী?’

সনিয়া বেগম চৈত্রিকার মুখের দিকে তাকায়। বেশ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চৈত্রিকার মুখ। হাত বাড়িয়ে মুখে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,

‘জীবনটা ন’র’ক কেনো করতে চাচ্ছিস মা?’

চৈত্রিকা বুঝলো, হাসলো তবে জবাব দিলো না। চুপচাপ নিজের কাজে মন দিলো। আজ প্রথমবারের মতো সে প্রহরের সামনে যাবে৷ সে এই সাক্ষাৎ টার জন্যই তো কতগুলো দিন ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছে। এবার তার অপেক্ষার শেষ। এই সাক্ষাৎ এর পর যে বিয়েটা খুব বেশি দেড়িতে হবে না এটা বেশ ভালো ভাবেই জানে চৈত্রিকা। চৈত্রিকার ভাবনার মাঝেই আজম আলী আসে। এসে রগচটা স্বরে বলে,

‘জমিদারের ব্যাটা আয়ছে। যান দেখা কইরা আসেন মহারানী!’

আজম আলীর কন্ঠ স্বরের এই রাগ, ক্ষোভ ঠিকই বুঝলো সবাই। তবে তাাতে কেউই বিশেষ পাত্তা দিলো না। চৈত্রিকা নিঃশব্দে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। হাতটা পানিতে ধুয়ে উঠতেই সনিয়া বেগম বলে,

‘উল্টা পাল্টা কিছু বলিস না মা।’

চৈত্রিকা মাথা নাড়ায়। সাথী আসতে চাইলে সে আনেও না আর সনিয়া বেগমও আসতে দেয় না। চৈত্রিকা নিজের শাড়ির আঁচল ভালো মতো টেনে হেলেদুলে এসে দাঁড়ায় দিঘির সামনে। সেখানে প্রহর আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো৷ ভীষণ সাধারণ একটা শার্ট পড়ে আছে। হাত দুটো প্যান্টের পকেটে গুজে রাখা। চৈত্রিকার উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় প্রহর। কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। চোখ নামিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে শক্ত করতে থাকে। চৈত্রিকা আরো এক দফা হাসে। হাত বগলদাবা করে বলে,

‘কিছু বলবেন জমিদার সাহেব?’

প্রহর জবাব দেয় না। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে কাঠকাঠ চেয়ে রয় চৈত্রিকার মুখ পানে। চৈত্রিকার দৃষ্টি শান্ত। মুখে গম্ভীরতা এঁটে প্রহর বেশ রয়ে সয়ে বলে, ‘তোমার কোনো আপত্তি আছে বিয়েতে?’

চৈত্রিকা এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নিজেই প্রশ্ন করে, ‘আমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ কি প্রহর সাহেব?’

প্রহর এবারে বাঁকা হাসে। দু কদম এগিয়ে চৈত্রিকার মুখোমুখি দাঁড়ায়। প্রহর এগোনোর পরও চৈত্রিকার কোনো হেলদোল নেই। সে কাঠকাঠ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে নিজের জায়গায়। চৈত্রিকার কাজে মনে মনে শ’য়’তা’নী হাসি হাসে প্রহর। ফের নিজের জায়গায় সরে এসে বলে,
‘বাহ! তেজ আছে!’

চৈত্রিকা এবার হাসে। কন্ঠ আগের ন্যায় কঠিন রেখেই বলে, ‘আমার প্রশ্নের কিন্তু উত্তর দেননি!’

‘এক সাধারণ ঘরের মেয়ের কাছে জমিদার পুত্র প্রহর রেনওয়াজ কৈফিয়ত দিবে!’

‘যখন সাধারণ ঘরের মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন তখন তার কাছে তো আপনার কৈফিয়ত দিতেই হবে। তাছাড়া যেখানে স্বার্থ ছাড়া জমিদারের বাড়ির কোনো পুরুষ এক পাও আগায় না সেখানে বিনাস্বার্থে এক চালচুলোহীন মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে! এটা আবার মানতেও হবে?’

শেষের কথাটুকুতে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য ফুটে উঠলো। প্রহর বিনিময়ে হাসে। কোনো প্রকার জবাব না দিয়ে উল্টো ঘুরে যেতে যেতে বলে, ‘যাক নামের মতো, তেজের মতো তবে বুদ্ধির প্রখরতাও আছে!’

চৈত্রিকা হাসে। প্রহরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ঠোটের কোণে কুটিল হাসি ঝুলায়। বিড়বিড় করে বলে, ‘আ’গুন নিয়ে খেলতে নেমেছেন জমিদার সাহেব এবার সে আ’গুনে যে আপনাকেই পু’ড়তে হবে। তিলে তিলে, একটু একটু করে কষ্ট দিয়ে আপনার সত্বা পু’ড়াবো। আপনার প্রতিটা শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়ে আপনাকে নিঃস্ব করে দিবো। জমিদারের পা’পের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে। এবার শুধু শা’স্তির পালা। কথা দিলাম জমিদার সাহেব ভীষণ যত্ন করে একেকটা আ’ঘাত দিবো। কথা দিলাম!’

চলবে..