চৈত্রিকা পর্ব-৪+৫

0
340

#চৈত্রিকা (৪)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
____________

(চৈতালীর নামের সাথে অনেকেই চৈত্রিকার নামটা গুলিয়ে ফেলছিলেন তাই চৈতালীর নাম বদলে অর্থি দেওয়া হয়েছে)

৮.
জমিদার বাড়ি থেকে খবর পাঠিয়েছে বিয়ে এই মাসেরই ২৫ তারিখ হবে। বার টাও শুক্রবার। হাতে শুধু আছে কেবল ৭ দিন। এই ৭ দিনের মধ্যেই বিয়ের জন্য বেনারসি, গহণা সকল কিছু পাঠিয়ে দেবে জমিদার বাড়ি থেকে৷ বিয়েটা তেমন আয়োজনে হবে না। শুধু জমিদার বাাড়ি থেকে বর আর কয়েকজন এসে বিয়ে পড়িয়ে বউ নিয়ে চলে যাবে৷ বিয়ের খবর শুনেই সনিয়া বেগম আর সাথীর মন খারাপ হয়ে গেছে। আজম আলী বেশ ক্ষেপে আছেন। চৈত্রিকার বিয়েটা সে মানতে পারছে না তবে প্রহরও তাকে মানতে বাধ্য করছে৷ চৈত্রিকার কোনো হেলদোল নেই। সে জানতো এমনটাই হবে। আর সে মনে মনে এটাই তো চেয়ে এসেছে। তবে তার এই সংবাদ পেয়ে খুব বেশি খুশি হওয়া উচিত নাকি দুঃখ করা উচিত তা জানা নেই। তাই কোনো রকম অনুভূতিই তার মধ্য থেকে আসছে না। চুপচাপ বসে আছে ঘরের কোণায়। সাথী গুটি গুটি পায়ে চৈত্রিকার কাছে আসে। কাছ ঘেষে বসে বেশ নরম স্বরে শুধায়,

‘তুই কি আরো একবার ভাববি চৈত্র? বিয়েটা তোর জন্য ভ’য়ং’কর বি’পদের আশঙ্কা। আর একটা বার ভেবে দেখ!’

‘যে রাস্তায় একবার পা ফেলেছি সেখান থেকে বের হওয়ার তো আর কোনো উপায় নেই সাথী।’

‘তবুও প্রতিশোধের নেশায় বুদ না হয়ে শুধুমাত্র একটিবার নিজের কথা ভাব!’

‘আমি আর নিজের কথা কি ভাববো? ম’রা মানুষকে কি আর ওই জমিদাররা নতুন করে মা’রতে পারবে?’

সাথী সামান্য কেঁপে ওঠে। অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে চৈত্রিকার মুখপানে। সে নিজেও জানে না চৈত্রিকা আসলে কিসের প্র’তিশোধের আশায় ওমন বিপদের মুখে যাচ্ছে শুধু জানে মেয়েটার সাথে ভ’য়ং’কর কিছু হয়েছে। যে ঘটনার পর মেয়েটা ভেতর থেকে কেমন অনুভূতিহীন হয়ে গেছে। আচ্ছা মানুষ এভাবেও বাঁচতে পারে? সাথী চৈত্রিকার মাথাটা এনে নিজের কাঁধে রাখে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

‘এতোটা পা’ষাণ, সাহসী তুই কিভাবে হলি চৈত্র? তুই তো এতো কঠোর ছিলি না! এমন অনুভূতিহীন তো ছিলি না! তোর সেই চঞ্চলতা, দুরন্তপনা আমি ভীষণ করে মিস করি। আগের তুইটা তো সবাইকে ভালোবেসে আগলে রাখতি এখন কেনো তবে দুরে থাকিস সবার থেকে?’

চৈত্রিকা অদ্ভুত ভাবে হাসে। সাথীর কাঁধে মাথা রেখেই বলে, ‘আপন মানুষের প্র’তা’র’ণা চোখের সামনে থেকে দেখে কিভাবে যেনো ভেতরটা পা’থরে পরিণত হয়ে গেছে। এখন আর এই ছোট্ট হৃদয়ে ভালোবাসার মতো কিছু নেই। যা আছে তা এক আকাশ সমান ঘৃ’ণা।’

শেষের কথায় কন্ঠ কঠিন হয়ে যায় চৈত্রিকার। চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু আবছা স্মৃতি। মুহুর্তেই মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। রাগে, ঘৃ’ণায় মাথার মধ্যে যেনো দপদপ করে আগুন জ্ব’লছে। সাথীর কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে নিজে উঠে দাঁড়ায়। শাড়ি ঠিকঠাক করে বলে,

‘বিয়েটা আমি করবোই। নিজেকে নিয়ে ভাবার কিছু নেই। বেশি হলে হয়তো আমার শেষ পরিণতি হবে মৃ’ত্যু। তবে যে আমি গত ১ বছর আগেই ভেতর থেকে ম’রে গেছি তাকে আর কেউ নতুন করে কিভাবে মৃ’ত্যু দিবে! তাই শেষ পর্যন্ত আমার মৃ’ত্যু হলেও জিতটা আমারই হবে। তবে এতো সহজে আমি কখনোই ছাড়বো না জমিদার বাড়ির সদস্যদের। সবাইকে ধীরে ধীরে য’ন্ত্রণা দিয়ে মা’রবো। একটাও অন্যায় থেকে পা’র পাবে না। একটাও না।’

চৈত্রিকা বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। পেছন থেকে সাথী তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিজেও উঠে যেমন গুটি গুটি পায়ে এসেছিলো ঠিক তেমন করেই চলে যায়।

৯.
নিজের রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সমানে সিগারেট ফুঁকছে প্রহর। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। চোখে মুখে কি ভীষণ হিং’স্রতা ফুটে উঠেছে। নিজের রাগ দমাতে না পেরে ব্যালকনিতে থাকা ফুলের টব মাটিতে ফেলে দেয় সজোড়ে৷ টব ভেঙে গুড়িয়ে যায় মুহুর্তেই৷ প্রহরের রাগ কোনোমতেই কমে না। নিজের হাতে নিজের চুল আঁকড়ে ধরতেই রুমের ভেতর থেকে কেউ ডেকে ওঠে। নিজেকে যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। প্রহর নিজেকে সামলে রুমের ভেতর ঢোকে৷ সেখানে তার গোপন খবর দেওয়া লোককে দেখে চোখের ঈশারায় বসতে বলে। বেশ শান্ত কন্ঠে বলে,

‘কোনো খোঁজ খবর আছে?’

লোকটি মাথা নিচু করে ছোট করে বলে, ‘নাহ সাহেব। এ গ্রামের যারা মেয়েটাকে চেনে তারা সবাই তেমন কিছুই জানে না। গত ১ বছর আগে মেয়েটির বাবা-মা আগুনে পু’ড়ে মা’রা যায় এবং তারপর থেকে এই মেয়ে এখানে থাকছে তার মামার বাড়িতে। তবে তার ব্যাপারে সেরকম কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর নেই।’

প্রহর মুখটা গম্ভীর করে লোকটি কে বিদায় দেয়। বসে বসে ভাবতে থাকে বেশ অনেক কিছু। সে তো কম কিছু জানে না চৈত্রিকার ব্যাপারে তবুও কোন আশায় সে আবারও খোঁজ নেওয়াচ্ছে! হতাশায় চোখ বন্ধ করে নেয়। সাথে সাথেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চৈত্রিকার তেজী রুপ। সেই উত্তপ্ত চোখ। ফট করে চোখ মেলে তাকায় প্রহর। বিড়বিড় করে বলে, ‘এ নারী ভ’য়ং’কর। ভ’য়ং’কর তার তেজ। আদৌও কি এই তেজের কাছে জমিদার পুত্র প্রহর রেনওয়াজ টিকতে পারবে?’

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে নিজেই অবাক হয়। সাথে সাথে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে পরপর কয়েক বার ফাঁকা ঢোক গিলে। হুট করেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চমকে তাকায়। দরজার ওপাশ থেকে অর্থি বেশ চঞ্চল স্বরে ডাকছে,

‘বড় ভাইজান! আছো? আসবো আমি?’

প্রহর নিজেকে পুরোপুরি শান্ত করে। ছোট্ট বোনের সামনে সে কোনোভাাবেই নিজেকে এলোমেলো রাখবে না। নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে নিলো প্রহর। নরম স্বরে বললো,

‘ভেতরে আয়।’

মুহুর্তেই অর্থি রুমে ঢোকে হুড়মুড় করে। যেনো সে এই কথাটির অপেক্ষাতেই ছিলো। অর্থি গাল ফুলিয়ে এসে সরাসরি বসে পড়ে প্রহরের পালঙ্কের ওপর। হাত দুটো বগলদাবা করে বেশ অভিমান নিয়েই বলে,

‘তোমরা আমাকে কেউ ভালোবাসো না বড় ভাইজান!’

প্রহর ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসে। অর্থি দেখার আগেই নিজের হাসি চেপে বেশ গম্ভীর স্বরে বলে, ‘কে বলেছে তোকে কেউ ভালোবাসে না?’

‘ভালোবাসলে তো এমনটা করতে পারতে না। তুমি না এর আগে একবার বিয়ে করেছো! তবে এখন আমাকে বিয়ে না দিয়ে তুমি আবার বিয়ে করছো কেনো বড় ভাইজান?’

অবাক চোখে তাকায় প্রহর। অবাকতার রেশ ধরেই বলে, ‘তোকে বিয়ের কথা কে বলেছে? আর কি উল্টো পাল্টা বলছিস? তোর বয়স কত! এখন কিসের বিয়ে অর্থি? পড়ালেখা নেই তোর?’

শেষের বাক্যগুলোতপ প্রহরের কন্ঠ শক্ত হয়ে যায়। অর্থি খানিকটা কেঁপে ওঠে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায় প্রহরের দিকে। বলে, ‘বড় ভাইজান তুমিও রেগে যাচ্ছো আমার সাথে! আসলেই আমাকে কেউ ভালোবাসো না। আমি আব্বাজানকে বলে দিবো তোমরা সবাই পঁচা।’

প্রহর ভ্রু কুঁচকে অর্থির মাথায় গাট্টা মা’রে। কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলে, ‘পিচ্চি একটা মেয়ে আসছিস বিয়ে করতে! পি’টিয়ে বিয়ের শখ মিটিয়ে দিবো।’

‘বড় ভাইজান তুমি যে বিয়ে করছো এটা আমাকে আগে বলো নাই কেন? আচ্ছা বড় ভাইজান নতুন ভাবী কি বড় ভাবীর মতোই ভালো হবে? নাকি অনেক বা’জে হবে? ঠিক কাকিমার মতো!’

কাকিমা, মহুয়া, চৈত্রিকার কথা শুনতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় প্রহরের। অর্থির দিকে বেশ ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘নিবিড় এসেছিলো আজ?’

‘নাহ মাষ্টারমশাই আসেনি আজকে। ভালোই হয়েছে আসেনি। শুধু শুধু বকে আমাকে পঁচা লোক।’

এরমধ্যেই অর্থির ডাক পড়ে তার আম্মাজানের ঘরে। অর্থি দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বিড়বিড় করে বলে, ‘আম্মাজান তো আমারে তার কাছে সব বই নিয়ে যেতে বলছিলো! হায় হায় আজ নিশ্চিত আম্মা আমার এই ছোট্ট মাথা কে’টে ফেলবে। ওহ ভাইজান আমি গেলাম!’

বলেই একছুটে বেড়িয়ে গেলো। পেছন থেকে প্রহর জোড় কন্ঠে বলে উঠলো, ‘অর্থি সাবধানে যা। পড়ে যাবি!’

কে শোনে কার কথা! অর্থি যত দ্রুত পারে দৌড়ে চলে যায়। প্রহর দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা আটকে দেয়। আলমারির কাছে এসে ধীরে সুস্থে তা খুলে চোখ বুলায়। ৩ মাস আগেও এ ঘরের এই আলমারিতে মহুয়ার শাড়ি জায়গা পেলেও এখন পুরো আলমারি ফাঁকা। কাপড়ের ভাজ তুলে তুলে প্রহর বের করে আনে একটি ছবির ফ্রেম। সেখানে বউ সাজে এক মেয়ের হাস্যজ্জ্বল মুখ জ্বলজ্বল করছে। প্রহর বেশ কিছুটা সময় নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত রকমের এক হাসি ফুটে উঠলেও চোখে ফুটে উঠে ক্ষো’ভ, হিং’স্রতা। আলতো করে মেয়েটার ছবির ওপর হাত বুলিয়ে রাগে ক্ষোভে ছবির ফ্রেম ছুড়ে মা’রে দেয়ালে। মুহুর্তেই শব্দ করে তা ভেঙে চু’ড়মা’র হয়ে যায়। টুকরো টুকরো পড়ে থাকা ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে প্রহর চোয়াল শক্ত করে আওড়ায়,

‘কোনো প্র’তা’রক, বিশ্বাস’ঘা’তকের স্থান প্রহর রেনওয়াজের জীবনে নেই। সেখানে তার স্মৃতি থাকাটাও অসম্ভব।’

১০.
অর্থি ভর দুপুরে বের হয়েছে। বেশ লুকিয়েই বের হয়েছে। তার আম্মাজান তাকে এই সময়ে বের হতে দেখলে নিশ্চিত বকাঝকা করেই বাড়ি মাথায় তুলতো। তাই লুকিয়েই বের হতে হয়েছে। পরে না হয় বাড়ি ফিরে বাবা বা ভাইয়ের আড়ালে লুকিয়ে বকা খাওয়া থেকে বাঁচা যাবে। চৈত্র মাসের এই দুপুরের রোদেও বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে অর্থি নেচে নেচে গ্রামের মেঠোপথ ধরে যাচ্ছে। চুলগুলো এলোমেলো করে খুলে রাখা। আজ আর বিনুনি করেনি। খোলা চুলে টান খাওয়ায় চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। ব্যাথায় মৃদু শব্দ করে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে দেখে নিবিড় তার চুল টেনে ধরেছে। ব্যাথায়, ভয়ে মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলে,

‘আপনি সবসময় আমাকে ব্যাথা দেন কেনো মাষ্টারমশাই? আপনি জানেন না আপনি চুল টেনে ধরলে আমি ব্যাথা পাবো!’

‘তুমি এই দুপুর বেলায় চুল খুলে এমন করে লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় যাচ্ছো? জানো চুল খোলা রাখলে ভুতে ধরে!’

নিবিড়ের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলা কথাতে অর্থি ধরেই নেয় সত্যিই বোধহয় ভুতে ধরে। তাই ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘ভু-ভুতে ধরে? সত্যি!’

‘হ্যাঁ।’

নিবিড়ের সহজ স্বীকারোক্তি দেখে অর্থি দ্রুত এসে নিবিড়ের কাছ ঘেষে দাঁড়ায়। নিবিড় অস্বস্তিতে খানিকটা স্বরে গেলে অর্থি হাত চেপে ধরে নিবিড়ের। ফিসফিস করে বলে, ‘এই মাষ্টারমশাই! সরে যাচ্ছেন কেনো? পরে আবার যদি আমাকে ভুতে ধরে?’

নিবিড়ের জবাব দেওয়ার আগেই অর্থি চট করে ছেড়ে দেয় তাকে। ভয়ে ভয়ে তোতলিয়ে বলে, ‘ম-মাষ্টারমশাই এই সময় কো-কোথা থেকে আসবে? আপনি আবার আমার মাষ্টারমশাই এর বেশে ভুত আসেননি তো!’

নিবিড় কপালে ভাজ ফেলে তাকায়। বেশ খানিক্ষন বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে, ‘তোমার মতো বোকা মেয়ে জীবনে একটাও দেখিনি৷ তোমার সামনে ভুত কেনো আসবে? তুমি নিজেই তো একটা পেত্নী। তাছাড়া ভুত যদি ভুল করেও আসে তাহলে তোমার বোকা বোকা কথা শুনে হয়রান হয়ে নিজেই দৌড় দিয়ে পালাবে।’

অর্থি বুঝলো না কিছুই। মাথা চুলকে চুলগুলো আগে বেঁধে নিলো। তারপর দ্রুত পায়ে নিবিড়ের কাছে এসে তার সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে,

‘মাষ্টারমশাই ভুতকে কি ছুঁয়ে দেখা যায়?’

এ প্রশ্নের উত্তর দেয় না নিবিড়। চুপচাপ নিজের মতো সামনে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে৷ ভুল করেও এই পঞ্চদশী কন্যার দিকে সে তাকাবে না। চৈত্র মাসের উত্তপ্ত রোদের আলোয় মুখ লাল হয়ে আছে অর্থির। এ লালচে মুখের দিকে তাকিয়ে যদি সে ভুল করে বসে তবে আজীবন পস্তাতে হবে৷ ওদিকে বোকা অর্থি জবাবের আশায় তখনো তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে। নিবিড়ের জবাব না পেয়ে ফের হাত টেনে ধরে। নিবিড় ভ্রু কুঁচকে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আর একবার আমাকে ছুঁলে তোমাকে আমি মা’র লাগিয়ে দেবো অর্থি। চুপচাপ হাঁটো! কোনো শব্দ করবে না।’

অর্থি হাত ছেড়ে দিলো। অভিমানে চোখ চিকচিক করে উঠলো। নিজের মতো চুপচাপ হেঁটে গেলো নিবিড়ের পাশে। নিবিড় আড়চোখে একবার অর্থির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

‘এই বোকা মেয়ে অভিমানও করতে জানে! কিন্তু অভিমান করলো ঠিক কোন কারণে?’

নিবিড় ভাবলোও না গভীরভাবে। অর্থি আর নিবিড় সাথীদের বাড়ির সামনের দীঘির কাছে আসতেই দেখে এই ভর দুপুরের রোদের মধ্যেই কে যেনো বসে আছে! চোখ পিটপিট করে সেদিকে তাকায় অর্থি। নিবিড়কে বলে,

‘ওটা কে মাষ্টারমশাই? ওমন রোদের মধ্যে বসে আছে কেনো? এখন তো শীতকাল না।’

নিবিড় দীঘির পাড়ে বসে থাকা চৈত্রিকার দিকে তাকিয়েই বললো, ‘ওটা তোমার হবু বড় ভাবীজান। চৈত্রিকা!’

অর্থি বেশ অবাক হলো। তার ভাবীজান বুঝি তার মতোই বোকা! নয়তো এই দুপুর বেলা চুল এলোমেলো করে রোদের মধ্যে বসে আছে কেনো? ধীর পায়ে এগিয়ে এসে চৈত্রিকার কাঁধে হাত রাখে। চৈত্রিকা চমকে তাকায় পেছনে। অর্থি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়। রোদের উত্তাপে দুধে আলতা গায়ের রঙ লালচে ধারণ করেছে। ঠিক তার মতোই। তবে চোখে মুখে চৈত্র মাসের এই রোদের উত্তাপের মতোই তেজ যা অর্থি নামক বোকা মেয়েটার চোখে মুখে ছিটেফোঁটাও নেই।

চলবে..

#চৈত্রিকা (৫)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________

চৈত্রিকা অর্থিকে দেখে চিনলো না। কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। অর্থি তখনো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই আছে৷ সে আম্মাজানের মুখে চৈত্রিকা রূপবতী শুনলেও বুঝতে পারেনি চৈত্রিকা আসলেই এতোটা রূপবতী! চৈত্রিকা অর্থির হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হাসার চেষ্টা করে বলে,

‘কিছু বলবে?’

অর্থি তখনো চোখে গোল গোল দেখছে। বেশ টেনে টেনে বলে, ‘আপনি আমার বড় ভাইজানের বউ হবেন? আপনি এতো সুন্দর কেন ভাবীজান?’

চৈত্রিকা থতমত খায়। বুঝতে পারে এই মেয়ে জমিদারের একমাত্র আদেরর কন্যা। মেয়েটার বোকা বোকা মুখ দেখে বেশ কিছুক্ষণ চৈত্রিকা তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো। অর্থি চৈত্রিকার জবাব না পেয়ে ফের বলে,

‘আপনি না মহুয়া ভাবীর চেয়ে অনেক অনেক সুন্দর। আপনি এতো সুন্দর কেন ভাবীজান?’

পরপর দুবার একই প্রশ্নে খানিকটা ইতস্তত বোধ করলো। তবে তা কাটিয়ে হাসার চেষ্টা করে অর্থির গাল টেনে বললো, ‘আল্লাহর সৃষ্টি তো তাই সুন্দর। তুমিও কম কি? ভীষণ সুন্দর তুমি৷ নাম কি তোমার?’

অর্থি চোখ বড় বড় করে বলে, ‘হায় আল্লাহ! আপনি আমার ভাইজানকে বিয়ে করবেন আর আমার নাম-ই জানেন না!’

‘নাহ। আসলে..ওভাবে তো জমিদার বাড়ির তেমন কাউকে চিনি না।’

চৈত্রিকার আমতা আমতা করায় অর্থি হাত টেনে ধরে। রোদ থেকে সরিয়ে গাছের ছায়ায় এনে দাঁড় করায়। নিবিড় তখনো সেখানে দাঁড়িয়েই আছে। সে দেখছে অর্থি কি করে! নিবিড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ উৎফুল্ল স্বরে বলে,

‘মাষ্টারমশাই দেখেন আমার বড় ভাবীজান কি সুন্দর!’

চৈত্রিকা খানিকটা লজ্জা পায়। নিবিড় নিঃশব্দে হাসে। চৈত্রিকার দিকে দৃষ্টি দিয়ে অর্থিকে বলে, ‘তোমার ভাবীজান লজ্জা পাচ্ছে। আর বলো না!’

‘ওমা! ভাবীজান লজ্জা কেনো পাবে? সুন্দর বলেছি বলে!’

নিবিড় কপাল চাপড়ায়। এই বোকা মেয়ের আর জীবনেও জ্ঞান বুদ্ধি কিছু হবে না। আচ্ছা মেয়েটা এতো বোকা কেন? নিবিড় অর্থিকে ধমক লাগিয়ে উল্টো ঘুরে চলে যায়। যাওয়ার পথে পেছনে তাকিয়ে আরো একবার চোখ বুলায়। চোখে মুখে তার স্পষ্ট মুগ্ধতা। তবে এই মুগ্ধতা ঠিক কোন রমণীর জন্য তা বুঝে আসলো না।

১১.
সময় কেটেছে। আর মাত্র দুদিন বাদেই বিয়ে। এই ক’দিনে মাঝে মাঝেই অর্থি ছুটে আসতো চৈত্রিকার কাছে। এসে অবশ্য তেমন কোনো কথা বলতো না। শুধু চুপচাপ চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে থাকতো আর বলতো, ‘আপনি অনেক সুন্দর ভাবীজান। আপনাকে দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। কেমন যেনো চেনা চেনা মনে হয় খুব!’

চৈত্রিকা সেই কথার পিঠে কোনো কথা বলেনা। মাঝে মাঝে মেয়েটার বোকামো আর কিছু কথাতে সে সত্যিই লজ্জা পেয়ে যায়। মেয়েটা যে একদম সহজ সরল তা আর বুঝতে বাকি নেই৷ একই গল্পের দুটি নারী দু রকম। একজন বোকা সোকা অন্যজন তেজী, সাহসী। যেনো এটাই আগুনের ফুল্কি। আজ চৈত্রিকা সাথীকে নিয়ে বের হয়েছে হাঁটতে। আর কিছুক্ষণ বাদেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। অর্থি আজ সারাদিন আসেনি। চৈত্রিকারও মনটা ভীষণ বিষণ্ন। তাই তো মনটা ফুরফুরে করতে বের হয়েছে। মাথায় শাড়ির আঁচল টা ভালো মতো টেনে নিয়ে দুজনেই চুপচাপ হাটছে। পেছন থেকে গম্ভীর, পুরুষালী কন্ঠে কেউ ডেকে ওঠে,

‘এই মেয়ে! কোথায় যাচ্ছো তোমরা? আর তোমরা কারা?’

চৈত্রিকা আর সাথী পিছু ফিরে তাকায়। সামনে অপরিচিত গম্ভীর এক পুরুষকে দেখে চৈত্রিকা চোখ মুখ কুঁচকে তাকালেও ভীতু সাথী তার হাত আঁকড়ে ধরে। ভয়ে রীতিমতো কাঁপতে থাকে। চৈত্রিকা শক্ত করে হাত ধরে সাথীর। সাথী ফিসফিস করে বলে,

‘চৈত্র উনি জমিদারের মেজো পুত্র পিয়াস রেনওয়াজ। আব্বার মতোই এক লোকটারও চরিত্রের সমস্যা। খুব খারাপ একটা লোক এটা।’

চৈত্রিকা সামনে ফিরে তাকায়। পিয়াস তখনো তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। চৈত্রিকা ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। মনে মনে আওড়ায়, ‘জমিদার বাড়ির ৪ নম্বর জা’নো’য়া’র।’

পিয়াস চৈত্রিকাকে দেখেই ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। মেয়েটার মতো সুন্দরী হয়তো সে এ অব্দি কাউকেই দেখেনি। সম্মোহিত দৃষ্টিতেই সে এগোয় চৈত্রিকার কাছে। মাঝে ব্যবধান এক হাতের মতো রেখে দাঁড়ায়। কেমন কন্ঠে যেনো বলে,

‘এতো সুন্দর রমণী! কোথায় থেকে আসলে তুমি?’

চৈত্রিকা মনে মনে হাসে। সেই হাসি ঠোঁটের কোণেও ফুটিয়ে তোলে। বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলে, ‘আমি আপনার হবু ভাবীজান হই দেবর সাহেব। ক’দিন পর আপনাদের বাড়িতেই তো থাকবো৷ সেখান থেকেই যাবো আসবো।’

পিয়াস চমকালো। অবাক চোখে চেয়ে রইলো চৈত্রিকার মুখপানে। কতক্ষণেই চোখে মুখে ক্রোধ জেগে উঠলো। চৈত্রিকা বা সাথীকে কিছু না বলেই সে গটগট করে জায়গা ত্যাগ করে। সাথী বেশ অবাক হয়ে চৈত্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘কি হলো এটা?’

‘তেমন কিছু হয় নাই এখনো। তবে সামান্য পরিমাণ ঝামেলা হবে।’

চৈত্রিকার ঠোঁটের কোণের কু’টিল হাসির দিকে সাথী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর চৈত্রিকার পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে, ‘তোর ঠোঁটের কোণে কু’টিল বা বাঁকা হাসি মানায় না চৈত্র। তোকে খিলখিল বা মুচকি হাসিতেই ভীষণ মানায়।’

চৈত্রিকা শুধু শুনলো তবে কোনো জবাব দিলো না। চুপচাপ হাঁটতে থাকলো সামনে। সে সময় রাস্তায় দেখা হয়ে যায় নিবিড়ের সাথে। চৈত্রিকা খানিকটা ইতস্তত করলেও পিছু ডাকে নিবিড়কে। নিবিড় এক পলক চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। কাছে এসে বলে,

‘কিছু বলবেন?’

‘হ্যাঁ। আসলে আপনি তো অর্থির মাষ্টারমশাই! আপনি জানেন আজ কোথায় মেয়েটা? আসলো না তো!’

‘আমি ওকেই পড়াতে যাচ্ছি। কেনো আসেনি তা তো জানি না তবে ওকে বলবো আপনার কথা।’

চৈত্রিকা সম্মতি জানায়। নিবিড় চলে যায় নিজের রাস্তায়। চৈত্রিকা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গুণগুণ করে দু লাইন গান গেয়ে উল্টো পথ ধরে।

১২.
গত আধাঘন্টা থেকে জমিদার বাড়ির হল রুমে চিৎকার চেঁচামেচি করছে পিয়াস। অহেতুক তার এই চেঁচানো কেউই তেমন গ্রাহ্য করছে না। নিবিড় এসেছে পড়াতে আর তখন থেকে সে রুমের মধ্যে বসে অর্থিকে পড়াচ্ছেই। অর্থি ভয়ে গুটিশুটি মে’রে বসে আছে। অর্থির এই ভীতু রুপ আর পিয়াসের চেঁচামেচিতে সে চৈত্রিকার কথাটা বলার সুযোগ পায়নি। বা ইচ্ছে হয়নি হয়তো। তবে অর্থির ভীত ভাব দেখে ভীষণ মায়া হলো নিবিড়ের। কন্ঠ স্বর নরম করে বললো,

‘পানি খাবে অর্থি? বেশি খারাপ লাগছে?’

অর্থি দুপাশে মাথা নাড়ায়। ফাঁকা ঢোক গিলে বলে, ‘মেজো ভাইজান আমাকে মা’রবে না তো মাষ্টারমশাই?’

‘নাহ। তোমাকে কেনো মা’রবে? তুমি তো কিছু করোনি। তুমি তো গুড গার্ল।’

নিবিড়ের নরম, আদুরে কন্ঠের কথা শুনে খানিকটা স্বস্তি পেলেও ভীষণ ভয়ও হচ্ছে। কোনোরকম ফাঁকি না দিয়ে সে পড়াতে মন দিলো। নিবিড় অঙ্ক কষতে দিয়ে দরজা ঠেলে বাহিরে আসে। উপর তলা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখে পিয়াস চেঁচামেচি করছে। চয়ন, প্রহর, পল্লবী, পিয়াসের বউ নীরা সবাই হল রুমে। পিয়াসের চেঁচামেচির একমাত্র কারণ ‘প্রহরের বিয়ে’। তাকে না জানিয়েই বড় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলা হয়েছে বিষয়টা যে সে মানতে পারছে না এটা নিয়েই চেঁচামেচি। প্রহর বোধহয় জানতো এমন কিছুই হবে। তাই তার মধ্যে অদ্ভুত কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। বরং সে পিয়াসের দম দেখছে। ঠিক কতক্ষণ সে বড় ভাইয়ের সামনে চেঁচাতে পারে সেইটাই বসে বসে দেখছে। পিয়াস হাঁপিয়ে গিয়ে বড় বড় শ্বাস নেয়। পল্লবী একবার সেদিকে তাকিয়ে মেজো বউ নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘নীরা বউ যাও পানি আনো।’

নীরা নিঃশব্দে মাথা নাড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। প্রহর হাই তুলতে তুলতে বলে, ‘তুই আর কিছু বলবি?’

তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে পিয়াস। তবে মুখে তা প্রকাশ করে না। চুপ করে বসে থাকে। প্রহর পিয়াসের কোনো উত্তর না পেয়ে নিজের মতো সিড়ির কাছে যেতেই পেছন থেকে পিয়াস বলে,

‘বড় ভাই বিয়েটা ভেঙে দেন। আমি চৈত্রিকাকে বিয়ে করতে চাই।’

কথাটা যেনো পুরো হল রুমেই বি’স্ফো’র’ণ ঘটালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রহর পিয়াসের দিকে তাকিয়ে রইলো। দুতলা থেকে নিবিড়ও তাকিয়ে রইলো অবাক দৃষ্টিতে। সে সময়ই কিছু ভেঙে যাওয়ার শব্দে সেদিকে সবাই তাকায়। নীরা টলমল চোখে তাকিয়ে আছে পিয়াসের দিকে। তার হাতে থাকা পানির গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না পিয়াস। প্রহর যেমন শান্ত ভাবে সিড়ির কাছে গেছিলো ঠিক সেভাবেই শান্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে আসে পিয়াসের কাছে। তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই সে আদৌও রেগে গেছে নাকি সত্যিই শান্ত আছে! তবে পকেটে গুজে রাখা হাতটা ততক্ষণে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে। পিয়াস একবার তাকায় প্রহরের দিকে। প্রহরের এতো শান্ত রুপ তার হজম হয় না। বেশ খানিকটা চমকালেও তা বাহিরে প্রকাশ করে না। চয়ন চুপচাপ উঠে আসে পিয়াসের কাছে। পুরো পরিবেশ এতোটাই শান্ত যেনো ঝড় আসার পূর্বক্ষণ। চয়ন এগিয়ে আসলেও কিছু বলেনি তবে প্রহর বেশ ঠান্ডা গলায় বললো,

‘যা বলেছিস তা ভুলে যা। ২য় বার কখনো এধরণের কথা তোর মুখে শুনলে তা তোর জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’

এবারে পিয়াস কিছু বলতে নিলে চয়ন চোখ গরম করে বলে, ‘নিজের সীমার মধ্যে থাকো পিয়াস! ভুলে যেও না প্রহর তোমার বড় ভাই। জমিদারী বংশের পুত্র তুমি। ২য় বিয়ে করতে চাইতেই পারো তা অস্বাভাবিক কিছু না কিন্তু নিজের বড় ভাইয়ের হবু স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাওয়াটা অন্যায় এবং অপরাধ। তা তুমি নিজ দায়িত্বে শুধরে নাও নয়তো জমিদারী বংশের নিয়ম তোমার অজানা নয়।’

পিয়াস মুখে কিছু বললো না। ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠলো। প্রহর চুপচাপ নিজ জায়গা ত্যাগ করে। চয়ন নিজেও বাড়ির বাহিরে চলে যায়। পল্লবী রেগে মেগে ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘একটু তো লজ্জা কর! চরিত্রের তো ঠিক ঠিকানা নেই অন্তত নিজের ভাবীর দিকে নজর দিস না। নীরা বউ ঘরে যাও।’

নীরা নিঃশব্দে নিজের ঘরের দিকে যায়। আড়চোখে একবার তাকায় পিয়াসের দিকে। মানুষটাকে সে ভালোবেসেছিলো অথচ বিনিময়ে কষ্ট ছাড়া কিচ্ছুটি পায়নি। বিয়ের ৬ মাসের মাথাতেই বুঝে গেছিলো তার বোধহয় স্বামী নিজের হবে না। যার চরিত্রের ঠিক নেই, হাজার জায়গায় মুখ দিয়ে বেড়ানোর স্বভাব সে স্বামী তার কিভাবে হবে? তবে ২য় বিয়ের কথা শুনে সে সত্যিই ভেতর থেকে অস্থির হয়ে পড়েছে। কোনো নারীই পারে না স্বামীর ভাগ দিতে তবে এখানে সে কিছু বলতেও পারবে না। আচ্ছা কে এই চৈত্রিকা? যাকে নিয়ে দুভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়ে গেলো? চৈত্রিকা কি সত্যিই এতোটা রূপবতী! না চাইতেও মনে মনে চৈত্রিকার প্রতি নীরার ক্ষোভ জন্মালো। নিজের মনে ভাবতে ভাবতেই সে চলে গেলো নিজের কক্ষে। পুরো ফাঁকা হল রুমে বসে রইলো পিয়াস। হাতের তালুতে হাত ঘষতে ঘষতে মনে মনে হাজারটা গালি দিলো প্রহরকে। চোখে মুখে রাগ, ক্ষো’ভ স্পষ্ট। সে জানতোই না প্রহর আবার বিয়ে করছে। কিছুদিনের জন্য শহরে গেছিলো কিছু কাজের উদ্দেশ্যে সেখান থেকে ফিরেই তার প্রথম দেখা চৈত্রিকার সাথে। সেখান থেকেই এতোকিছু। চৈত্রিকাকে যতটা না মনে ধরেছে তার থেকেও বেশি হিং’সার, ক্ষো’ভের আগুন জ্ব’লছে ভেতরে। চোখে মুখে সেই ক্ষো’ভ ধরে রেখেই হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

‘আপনাকে আমি সুখে থাকতে দিবো না প্রহর রেনওয়াজ। আপনি জমিদারের বড় পুত্র হলে আমিও তারই বংশের, তারই রক্তের মেজো পুত্র। তার মতো শ’য়’তানী বুদ্ধিতেই মাথা ভরা। আপনাকে কিভাবে ধ্বং’স করতে হয় তা আমি দেখে নিবো। চৈত্রিকাই হবে আমার প্রথম গুটি। এবার ধ্বং’সের খেলা শুরু।’

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)