ছদ্মবেশ পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
348

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ভার্সিটির মাঠে সজোড়ে থা’প্পর পরে রাজের গালে। সামনে দাড়িয়ে থাকা অরিন ফুসতে ফুসতে বলে, ছোট লোকের বাচ্চা, অরিন চৌধুরির মতো মেয়েকে প্রপোজ করার সাহস তুই কোথায় পাস? বন্ধু ভেবে নিজের সাথে মিশতে দিয়েছি দেখে একেবারে মাথায় চড়ে বসলি? ব্রামন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্নটা নিজের মাঝেই রেখে দে বুঝলি? নিজের দিকে একবার তাকা আর আমার দিকে একবার তাকা। আমার সাথে কোনো ভাবে তোর যায়? মানে কি বলবো? আমি সত্যিই খুব অবাক। এই কারণেই তোদের মতো ছোট লোকদের সাথে চলতে নেই। আর কখনো আমার চোখের সামনে আসবি না। ইডিয়েট।

অপমানে ও লজ্জায় গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে চেয়ে আছে রাজ। প্রপোজ করার কারণে অরিণ তার সাথে এমন রিয়েক্ট করবে তা নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না রাজ।

অরিন কিছুক্ষন ফোঁস ফোঁস করে করে গোলাপ গুলো রাজের মুখে ছুড়ে মেরে চলে গেলো সেখান থেকে। রাজ এখনো ওভাবেই দাড়িয়ে। বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে নিচের দিকে চেয়ে রাগ কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে সে। চোখ দুটু রক্তিম হয়ে উঠেছে তার।
জীবনে প্রথম বার এমন অপমানের মুখুমুখি হয়েছে সে। তাও আবার ভার্সিটির এতো স্টুডেন্টে সামনে। সবাই তাকিয়ে আছে রাজের দিকে। কেউ হাসাহাসি করছে প্রচুর।
এই ভালোবাসা নামক শব্দটা আজ তাকে এতোটা নিচে নামিয়ে দিবে তা ভাবনারও বাইরে ছিলো তার। সব তো ঠিকঠাকই ছিলো। শুধু অবস্থানের কারণে আজ অরিণ তাকে এতোটা অপমান করে চলে গেলো?

ওদিকে নিবিড় ও তুষার যেন শক্ড হয়ে দাড়িয়ে আছে আজ। রাজের সাথে অরিণের এমন আচরণ যেন তাদের মাথায়ও বাজ পরার মতো অবস্থা হলো। কি ভেবেছিলো আর কি হলো? মানুষ এতোটা নিখুত অভিনয় কিভাবে করতে পারে।

এক রাশ বিরক্ত নিয়ে বান্ধবিদের মাঝে গিয়ে বসে অরিণ। ওদের মাঝে কেউ কেউ বলে উঠে,
– রাজকে এভাবে অপমান করলি কেন? অন্তত বুঝিয়ে বলতে পারতি তাই না? আর তোরা এমনিতেও তো অনেক ভালো বন্ধু ছিলি।
অরিণ বিরক্ত নিয়ে বলে,
– কিসের বন্ধু? ওর মতো ছোট লোকের সাথে কিসের বন্ধুত্ব? পড়াশোনায় ভালো ছিলো ও হেল্প করতো দেখে একটু মিশতাম। তা নাহলে ওই ক্ষেত ছেলেকে আমি কোন দুঃখে নিজের বন্ধু বানাতে জাবো? আর ঐ ছোট লোক এটাকে প্রেমের সম্পর্ক পর্যন্ত নিয়ে গেলো।
পাশ থেকে একজন বলে,
– এভাবে বলছিস কেন? মানুষ দরিদ্র হতেই পারে। এটা তো আর সে ইচ্ছে করে হয়নি। সৃষ্টি কর্তা যাকে যেভাবে পাঠিয়েছে। আর এমনও তো না যে, সে সারা জীবন এমন থাকবে। তুই ওর সাথে এমন ব্যাবহার না করলেও পারতি।

অরিণ একটু তাচ্ছিল্য ভাবে বলে,
– গরিবের ছেলে বড় লোকের মেয়ে। এসব ড্রামা শুধু গল্প আর সিনেমাতেই মানায়। বাস্তব জীবনে না। আর আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না। সো ওসব জ্ঞান আমাকে দিতে আসিস না।

নিবিড় ও তুষার রাজের কাছে এগিয়ে যায়। তুষার মনে মনে বেশ কয়েকটা গালি দিলো ঐ অরিণকে। এতোই যখন দেমাগ দেখাবি? তাহলে মিশতে গেলি কেন?

ওখানে আর না দাড়িয়ে সোজা গেটের দিকে হাটা ধরে সে। পেছন পেছন নিবিড় ও তুষার দুজনই ব্যাগ কাধে নিয়ে ছুটে চলে।
,
,
রুশানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দাদি বলে,
– তোকে ইমার্জেন্সি খবর দিয়ে কেন বাড়িতে আনা হয়েছা জানিস?
রুশান দাদির দিকে তাকিয়ে বলে,
– না তো, কেন ডার্লিং?
দাদি একটু মিটি মিটি হেসে বলে,
– সেটা সময় হলে বুঝবে ডার্লিং।
রুশানের মাথায় এবার চিন্তা ধরে গেলো। কি এমন কাজের জন্য এমন জরুরি বাসায় আসতে বলেছে?

কিছুক্ষন পর মায়ের কাছে গেলেও কিছু বলেনি সে। শুধু বলে,
– বিকেলে তোর আরিশা আন্টিদের বাড়ি যাবো। ওরা আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে তাই।
রুশান একটু অবাক হয়ে বলে,
– আমি তো প্রায়ই ঐ বাড়িতে যাই। এভাবে জরুরি ভাবে নিয়ে আসার কি প্রয়োজন ছিলো?
আরশি এবার ছেলের দিকে চেয়ে বলে,
– তার মানে কি আসতে বলে খুব অপরাধ করে ফেলেছি?
রুশান এবার একটু হেসে বলে,
– আমি কি ওটা বলেছি নাকি? তোমরা আসতে বলবে না তো কে বলবে?
আরশি এবার একটু মুচকি হেসে বলে,
– তাহলে বিকেলে যাচ্ছি আমরা। রেডি থাকিস।

এর মাঝে দেখে রিদও বাসায় চলে এসেছে। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না রুশানের। যাই হোক এই ক্ষেত্রে সে একজন নিরব দর্শক।

বিকেলে আরিশা আন্টিদের বাড়িতে যায় তারা। রুশান সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে পা বাড়ালে দাদি তাকে ডেকে বলে,
– এতো তাড়াহুরার প্রয়োজন নেইরে দাদু ভাই। সময় হলে রাজ কন্যা ঠিকই নিচে আসবে।
দাদির কথায় ক্ষনিক টা লজ্জা পায় রুশান। পুনরায় এসে আবার দাদির পাশে বসে পরে সে। বাবা মা ও আঙ্কেল আন্টি কথা বলছে নিজেদের মতো। রামিম ভাইয়াও এসে বসলো সবার মাঝে।
দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না রুশান।
কিছুক্ষন পর রিমাকে হালকা সাজিয়ে নিচে নিয়ে আসা হলো। রুশানের পাশ থেকে রামিম উঠে গিয়ে রিমাকে রুশানের পাশে বসালো।
এবার রুশানের মাথায় কিছুটা ঢুকলো যে তাদের দুজনকে ঘিরেই এতো কিছু। এর পরে কি হবে তা দেখার পালা।

পাশ থেকে আরশি হাসি মুখে রুশানের হাতে একটা আংটি দিয়ে বলে রিমার হাতে পরিয়ে দিতে। অবাক হলো রুশান। রিমাও দেখছে একটু একটু করে মিটি মিটি হাসছে।
তার মানে দুজনের এনগেজমেন্ট এর আয়োজন ছিলো সব।

সব শেষে মাকে রুশান জিজ্ঞেস করে,
– এই জন্যই আমাকে কেও কিছু বলোনি তোমরা? আর এসব এতো তারাতারি হওয়ার প্রয়োজন কি ছিলো?
ছেলের কথায় আরশি একটু হেসে বলে,
– আগে বললে কি তুই এখানে আসতি? তাছারা রিমা চাইছিলো আপাততঃ তোদের এনগেজমেন্ট টা হয়ে থাকুক।
রুশান এবার ভ্রু-কুচকে বলে,
– তার মানে এসব প্লেন তার ছিলো?
আরশি হেসে বলে,
– না, প্লেন ছিলো আমাদের সবার। রিমা বাসায় নাকি কাঁন্না কাটি করছিলো তুই তাকে ইগনোর করিস। কথা বলিস না। হ্যান তেন। তাই বললো আপাততঃ এনগেজমেন্ট টা করে রাখতে। যাতে অন্য কোনো মেয়ের দিকে না তাকাস।
রুশান অবার হয়ে বলে,
– তার মানে এসব তোমাদেরকেও বলে দিয়েছে? যে, কথা বলিনা এই সেই।
আরশি হাসতে হাসতে আরিশার কাছে চলে গেলো। রুশান কপালে হাত দিয়ে বলে,
– ইয়া মাবুদ। এই মেয়ের জ্ঞান বুদ্ধি কবে দিবে তুমি?
,
,
পর দিনই সব শেষে ফ্রেন্ডস মহলে ফিরলো রুশান। আর এদিকে এই দুই দিনে যে রাজ ও অরিণের মাঝে এতো কিছু ঘটে গেছে তা বুঝতেও পারেনি।
ঘটেছে গত কাল। এই সময় টা আর ব্যাস্ততার কারণে কারো সাথে কথা হয় নি।
কিন্তু রাজকে দেখে মনে হচ্ছে না কিছু হয়েছে। অন্য সবার মতো স্বাভাবিকই আছে সে। রুশান বিষয় টা জিজ্ঞেস করলেও রাজ একটু মুচকি হেসে বলে,
– বাদ দাও ওসব কথা। ওটা একটা ছোট এক্সিডেন্ট হিসেবেই ধরে নাও। লাইফে তো এমন কতো ছোট খাটো এক্সিডেন্ট ঘটে। এত সব নিয়ে ভেবে লাভ আছে?

সন্ধার পর পাঁচ জন বন্ধু মিলে এক সাথে বসে নাস্তা করছে। ফরিদা আন্টি নুডলস রান্না করে দিয়ে গেছে।
তুষার নুডলস খেতে খেতে নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আচ্ছা নিবিড় আমাকে একটা কথা বল তো। রাজেরও ফ্যামিলি আছে। আমিও বাড়িতে যাই। রুশানও বাড়িতে যায়। নিলয়ও যায়। বাট তুই কোথাও যাস না কেন? মানে কখনো তোকে তোর বাবা মায়ের সাথে কথা বলতেও দেখিনা৷ ইনফেক্ট ফরিদা আন্টির কাছে শুনলাম তুই ঈদও এখানেই একা একা করিস।
নিবিড় নুডলস খেতে খেতে বলে,
– ওদের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।
তুষার একটু অবাক হয়ে বলে,
– কেমন বাবা মা? যে একবার ফোন করেও খবর নেয় না?
মুহুর্তেই নিবিড়ের চোখ দুটু ছল ছল করে উঠে। আর খুব শান্ত বাবে বলে,
– আমার কোনো বাবা মা নেই।

এবার রাজ, রুশান, নিলয় ও খাওয়া বাদ দিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকায়। নিবিড় এক হাতে চোখের পানি মুছে নিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
– তোদেরকে বলেছিলাম না, আমার জীবনের একটা গল্প আছে। আজ শুনবি?
সবাই এক সাথে আগ্রহ নিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকায়।

নিবিড় এবার খাওয়া বাদ দিয়ে বলতে থাকে,
– আমার বাবা মাকে কখনো দেখিনি আমি। আমি যখন খুব ছোট তখন এক শীতের রাত্রিতে রাস্তায় পরে ছিলাম আমি। একজন মহিলা আমাকে রাস্তায় কু্ড়িয়ে পেয়েছিলো। এর পর সে আমাকে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে বড় করতে থাকে। আমার মা বাবার সম্পর্কে কিছু মনে নেই আমার। তাকেই মা বলে ডাকতাম। আমাকে স্কুলে ভর্তি করলো। আমার যখন ১২ বছর বয়স তখন ক্লাস সেভেনে পরতাম আমি। আর তখন আমার সেই মা মারা গিয়েছিলো। মারা যাওয়ার আগে আমাকে সব বলে গিয়েছিলো যে, আমাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে সে।
সে মারা যাওয়ার পর আমি আবার একা হয়ে গিয়েছিলাম। খুদার জ্বালায় কত মানুষের কাছে গিয়েছি। কেউ খাবার দিতো আবার কেও লাথি উষ্টা মেরা কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিতো। এর পর কাজ করা শুরু করলাম। যখন যা কাজ পেতাম তাই করতাম। আমার কুড়িয়ে পাওয়া মা আমাকে সব সময় স্বপ্ন দেখাতো বড় কিছু হওয়ার। তাই কাজ করে টাকা জমিয়ে পড়াশুনাও চালাতাম আমি। সাপ্তাহে ৩ দিন স্কুলে যেতাম আর বাকি ৪ দিন কাজ করতাম। কখনো কখনো স্কুল থেকে ফিরেও কাজ করতাম। দিনে কাজ করতাম, রাতে শরিরের ব্যাথা নিয়ে পরতে বসতাম। আমায় কুড়িয়ে পাওয়া মায়ের বাড়িটা ছিলো খুব ছোট। একধম নদীর পাশে। ওখানেই থাকতাম। তারপর সেই থাকার জায়গাটাও নদীতে হারিয়ে যায়। তখন আমি ১০ শ্রেনি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম। ওখানে এক চাচার হাত ধরে এখানে ছোট খাটো একটা চাকরির ব্যাবস্থা হলো। নিজে চলার মতো। পড়াশুনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করতাম। একটা মেসে থাকতাম। এভাবেই চলছিলো। ছোট বেলা থেকেই নানার প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি আমি। অনেক কিছুই দেখেছি জীবনে। অনেক কিছু শিখেছি। অনেক মানুষ চিনেছি।
এর পর অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর ফরিদা আন্টির কাছে এসে উঠি। সে আমার সব শুনে নিজের ছেলের মতো দেখে। এখানেই থাকতে শুরু করি। এর পর একে একে তোরা সবাই আসলি। সত্যি বলতে তোরা ছারা এই পৃথিবীতে আমার আর আপন বলতে কেউই নেই। যাওয়ারও কোনো জায়গা নেই। আমার বাবা-মা কে তাও আমি জানিনা। আমার কোজ কে নিবে বল?

কখন যে তুষারের চোখে অশ্রু জমা হলো তা নিজেও বুঝতে পারেনি সে। নিবিড় তা দেখে হেসে বলে,
– এসব শুনেই তোদের চোখে পানি জমলো? কতো দিন যে মানুষের ধাক্কা লাথি এসব খেয়েছি তা নিজেরও হিসেব নেই। আমি বাধ ভাঙা এক জোয়ারের মতো। যখন যেদিকে যাই, সেদিকেই আমার ঠিকানা।

তুষার চোখের পানি মুছে বলে,
– সরি রে, আমি আসলে জানতাম না তুই খুব একা। তোর বাবা-মায়ের কথা মনে করিয়ে তোকে এভাবে কষ্ট দেওয়াটা আমার একধম উচিৎ হয়নি।
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– তুই সরি বলছিস কেন? সরি তো বলা উচিৎ তাদের। তাই না? যারা আমাকে একা রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলো। জানিস, তোরা যখন বাবা-মায়ের কথা বলিস তখন আমার খুব মনে হয় আমার বাবা মায়ের কথা৷ মনে হয় ইশ, আমারও যদি এমন বাবা মা থাকতো। তাহলে এভাবে বেচে থাকতে হতো না আমার। আমারও খুব ইচ্ছে করে যাস্ট এক বারের জন্য হলেও আমার বাবা মায়ের মুখটা দেখতে।

To be continue………

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– আমি বাধ ভাঙা এক জোয়ারের মতো। যেদিকে যাই ওদিকেই আমার ঠিকানা। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, ইশ এক বারের জন্য হলেও যদি আমি আমার মা বাবাকে দেখতে পেতাম।
মুখে হাসি রেখে কথা গুলো বললেও কখন যে দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তা বুঝতে পারেনি নিবিড়।
এক হাতে অশ্রু মুছে নিয়ে সবার দিকে তাকায় নিবিড়। দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।

সব সময় হাসিখুশি থাকা ছেলেটার ভিতরেও যে এতো করুণ একটা গল্প লুকিয়ে আছে তা সবার ধারনারও বাইরে ছিলো। মানুষ কতো সুন্দর করেই হাসির আড়ালে কষ্ট গুলো লুকিয়ে রাখে।

ফরিদা আন্টি তখন নুডলস দিয়ে গিয়ে পুনরায় চা নিয়ে আসার সময় দরজার সামনে দাড়িয়ে শুনলো সব। এতো কিছু জানতো না সে। সে জানতো শুধু নিবিড়ের বাবা মা নেই, এতটুকুই।

চায়ের ট্রে টা সবার মাঝখানে রেখে নিবিড়ের মাথাটা নিজের সাথে জড়িয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে,
– কে বলেছে তোর মা নেই? আমি কি তোর মা না?
বিনিময়ে শুধু একটু মুচকি হাসলো নিবিড়। কাউকে মা ডেকে কি আসল মায়ের স্বাদ পুরণ হয়?
,
,
আজ দুই দিন পর আরোহিকে পড়াতে গেলো রাজ। সবার কাছে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলার চেষ্টা করলেও ভালোবাসার মানুষটার থেকে প্রত্যাক্ষান পাওয়ায় একটু কষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে মন মেজাজ ভালো না থাকায় দুই দিন আরোহিকে পড়াতে যায়নি সে।

যাওয়ার পর থেকেই মুখ গোমড়া করে বসে আছে আরোহি। রাজের কথা যেন তার কানকে স্পর্শ করছে না।
কিছুক্ষন পর আরোহির গোমড়া মুখ রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– কি হয়েছিলো আপনার?
রাজ একটু অবাক হয়ে বলে,
– কি হবে আমার?
তবুও আরোহি নাছোরবান্দার মতো বলে,
– মিথ্যা বলবেন না। কিছু না হলে এই দুই দিন আসেন নি কেন?
আরোহি মনে হয় উত্তর না জেনে ছারবে না এমন ভাব। রাজ এবার আরোহিকে বুঝাতে বলে,
– একটু অসুস্থ ছিলাম তাই আসতে পারিনি। বাদ দাও ওসব। বই বের করো।
আরোহি কিছুতে কান না দিয়ে বলে,
– এখন কেমন লাগছে শরির? ডাক্তার দেখিয়েছেন?
রাজ এবার একটু কড়া ভাবে বলে,
– তোমার এতো কিছু জেনে প্রয়োজন কি? পড়াতে এসেছি চুপচাপ পড়বে আর পর দিন পড়া কমপ্লিট করে দেবে ব্যাস। এর বাইরে কি হয়েছে না হয়েছে তা জেনে তোমার কাজ কি?

আরোহি এবার কিছুক্ষন নিরব থেকে একটা ছোট প্যাকেট এগিয়ে দেয় রাজের দিকে। রাজ ভ্রু-জুগল কুচকে বলে,
– এটা কি?
আরোহি স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস আছে এর ভেতর। বাসায় গিয়ে খুলে দেখবেন।

কি এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তা মাথায় আসেনা রাজের। ওর মা পাঠায় নি তো? আর কিছু না বলে ছোট প্যাকেট টা হাতে নেয় রাজ।
প্যাকেট টা এক পাশে রেখে আরোহিকে বই বের করতে বললে আরোহি বলে,
– ওটা পকেটে ঢুকিয়ে নিন। কাজের মেয়েটা দেখলে প্রব্লেম হবে। এই বাসায় আমাকে আর আম্মুকে খুব সাবধানে চলতে হয়। বাইরের মানুষ বলতে শুধু এক মাত্র আপনার সাথেই কথা বলতে পারি আমি। কলেজেও আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই। কেউ একদিন কথা বললে পরদিন থেকে আর আমার পাশেও আসে না সে। দুরে দুরে থাকে। হয়তো আমার পাশে থাকা গার্ড গুলোই সবাইকে আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখে। আর কতো দিন এভাবে বন্ধি পাখির মতো থাকবো জানিনা।

রাজ কিছু বা বলে প্যাকেট টা পকেটে ঢুকিয়ে আরোহির দিকে চেয়ে বলে,
– কারো সাথে না মেশাই ভালো। পড়াশুনায় ফোকাস দাও শুধু।
আরোহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজ তাকে আঙুলের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলে,
– দয়া করে এখন আবার পড়া আর বিয়ের মাঝে তোমার ফালতু লজিক গুলো টানবে না একধম।
রাজের কথায় এবার খিক খিক করে হেসে দেয় আরোহি। যেন সে এমন কিছুই বলতে চেয়েছিলো৷
,
,
ওদিকে আজকেও একটা অজুহাত নিয়ে সন্ধার পর বেড়িয়ে গেলো নিলয়। হয়তো আজ রাতে আর বাসায় ফিরবে না সে।
সোজা চলে গেলো তাদের গোপন আস্তানায়। যেখানে এখনো প্রায় শতাধিক লোক বন্ধি রয়েছে।
আর আজ রাতের মাঝেই সব গুলো থেকে শরিরের সব পার্স আলাদা করে নেওয়া হবে। এর পর ওগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়ে বাইরের দেশে।

নিলয় আস্তানায় ঢুকে প্রথমেই গেলো সেই বন্ধি করে রাখা মানুষ গুলোর কাছে। দেখে অনেক গুলো মানুষকে হাত পা বেধে ফেলে রাখা হয়েছে ফ্লোরে। আর বাচার জন্য ছটপট করছে মানুষ গুলো। আর কিছুক্ষন পর পর কয়েক জন এসে একটা একটা মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওখান থেকে।

ওখানে কাজ করা প্রায় অর্ধেকই ভার্সিটির ছেলে। স্টুডেন্ট বেশে থেকে ভার্সিটি থেকে সাহসি ছেলে গুলোকে বেছে বেছে কৌশলে এসব কাজে জড়াচ্ছে নিলয়।
তার কিছুটা সামনে বড় একটা কা’টা ঘর। যেখানে মানুষ গুলোকে কা’টা হয়। আর সেখানে রয়েছে সব আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ডাক্তার রা।
তার পাশে রয়েছে আরেকটা বড় ঘর। যেখানে এসব জিনিস সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তবে একটা ঘর থেকে আরেকটা ঘরের দুরুত্ব রয়েছে অনেক। সব মিলিয়ে পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে শহরের থেকে দুরে মাটির নিচে শুরঙ্গ খনন করে।

নিলয় কা’টা ঘরটার দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে ডাক্তার রা মানুষ গুলো কে ইনজেকশন দিয়ে অ’জ্ঞান করে শরির কে’টে পার্স গুলো সরিয়ে নিচ্ছে। এর পর ঐ কা’টা ছেরা লোক গুলোকে অন্যান্য রা এসে সরিয়ে নিচ্ছে অন্য দিকে।
আর কয়েকজন মিয়ে ওখানের রক্ত গুলো পরিষ্কার করছে।

নিলয় দুই হাত পেন্টের পকেটে গুজে জিজ্ঞেস করে, কয়টা হয়েছে? আর আজ রাতের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে কি না?
ওখানে থাকা প্রধান ডাক্তার টা বলে,
– সন্ধার পর থেকে ২৬ টা করা হয়েছে। এখনো অনেক গুলো বাকি। আজ রাতে শেষ হবে কিনা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছি না। তবে আশা করি শেষ করতে না পারলেও কাছাকাছি চলে যাবো।
নিলয় শান্ত ভাবে বলে,
– এতো কিছু শোনার সময় নেই আমার। আজ রাতের মাঝেই সব শেষ করবেন। সময় খুব সীমিত।

অনেক মেয়েও আছে ওখানে। তবে ওদেরকে রাখা হয়েছে আলাদা কক্ষে। যাদেরকে একের পর এক জন করে ধ’র্ষণ করা হচ্ছে। ওদেরকে এভাবেই পা’চার করে দেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে জড় হয়ে কাঁদছে মেয়েগুলো। আর কোনো কোনো মেয়ে পাগলের মতো আচরণ করছে।

সব মিলিয়ে দেখা শেষ হলে নিলয় ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টেনে আলাদা একটা রুমে গিয়ে বসলো। ওখানে এসব দেখাশোনা করা ছেলেগুলোর মাঝে একজনকে ডেকে বলে,
– নির্জন ভাই এসেছে?
ছেলেটা সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে,
– স্যার মাঝ রাতের দিকে আসবে।
নিলয় এবার হাতের ইশারায় তাকে চলে যেতে বলে রিলেক্সে বসে সেখানে।
,
,
ওদিকে রাতের খাওয়া শেষে রাজ রুমে গিয়ে আরোহির দেওয়া প্যাকেট টা বের করে নিলো কি এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে তা দেখার আগ্রহ জাগছে বার বার।
কিন্তু তা খোলার পর কিছুটা অবাক হলো রাজ। দেখে প্যাকেটে কিছু টাকা ও একটা কাগজ রাখা। রাজ কৌতহল নিয়ে কাগজটা খুলে দেখে সেখানে লিখা,

“আমি আগেই জানি আপনি অসুস্থ হয়ে আছেন দেখে দুই দিন ধরে আসছেন না। ডাক্তার দেখিয়েছেন তো? নাকি টাকা বাচানোর কারণ খুজে ওটাও সাইডে রেখেছেন। সমস্যা নেই, এখানে কিছু টাকা আছে। ওগুলো দিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে নিবেন। আর কিছু ফলমুল কিনে নিবেন। সুস্থ না থাকলে আমাকে পড়াতে আসবেন কিভাবে, হুম?”

রাজ কাগজটা ভাজ করে সংরক্ষণ করে রেখে দিলো আলাদা একটা জায়গায়। আরোহির দেওয়া টাকা গুলোর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে একটু মুচকি হাসলো সে। হুটহাট মেয়েটার অদ্ভুত সব কান্ড মাথায় ঢুকে না তার।
মুচকি হেসে টাকা গুলোও রেখে দিলো কাগজটার সাথে।

কিছুক্ষণ পর রুমে আসলো তুষার। রাজ তাকে ডেকে পাশে বসাতে বলে। তুষার কান থেকে এয়ারফোন টা খুলে বলে,
– কিছু বলবে?
রাজ তার দিকে চেয়ে বলে,
– কিছু বলার আছে তোমাকে।
তুষার এবার রাজের সামনে বসে বলে,
– বলো কি বলবে?
রাজ খুব শান্ত ভাবে বলে,
– নিলয়ের সম্পর্কে জানতে চাইছি আমি। ওর সম্পর্কে তুমি কি কি জানো। আর সেদিন তোমাদের মাঝে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো? আর নিলয়ের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখছো কি না? এক কথায় ওর সম্পর্কে তোমার নলেজে যতটুকু ধারণা তৈরি হয়েছে, সব টা শুনতে চাই আমি।

To be continue………..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– নিলয়ের সম্পর্কে জানতে চাইছি আমি। ওর সম্পর্কে তুমি কি কি জানো। আর সেদিন তোমাদের মাঝে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো? আর নিলয়ের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখছো কি না? এক কথায় ওর সম্পর্কে তোমার নলেজে যতটুকু ধারণা তৈরি হয়েছে, সব টা শুনতে চাই আমি।

খুব শান্ত ভাবে কথাটা বললো রাজ। হটাৎ রাজের এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলো তুষার। কিছুটা হাসির ভঙ্গিমা নিয়ে তুষার বলে,
– তা জেনে তোমার কাজ কি?
রাজ কিছুক্ষন নিলয়ের দিকে স্থির হয়ে চেয়ে রইলো। কোনো প্রতিউত্তর করলো না।
রাজের এমন স্থির চাহুনিতে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পরে তুষার। হাসির ভঙ্গিমা বাদ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
– কই না, নিলয়ের সম্পর্কে আমি আর কি জানবো? তোমরা যেমন আমার ফ্রেন্ড, তেমন নিলয়ও। এক সাথেই তো আছি আমরা খুব ভালোই আছি।
রাজ আবার বলে,
– ঐ দিন তোমাদের মাঝে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো?
তুষার বিষয়টাকে উড়িয়ে দেওয়ার মতো করে বলে,
– আরে ধুরু, এসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে তুমি এখনো পরে আছো? বন্ধুদের মাঝে এমন টুকটাক ঝামেলা হয়ই। এমনি ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে। পার্সনাল।

পার্সনাল কথা শুনে তেমন একটা কথা বাড়ালো না রাজ। তুষার এয়ার ফোন টা হাতে নিয়ে বলে,
– আর কিছু বলবে?
রাজ একটু হাসির রেখা টানার মতো করে বলে,
– না, এইটুকুই জানার ছিলো। এখন আসতে পারো।
কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে নিলয়ের রুমের দিকে চলে গেলো তুষার। নিয়লের সম্পর্কে যাই ধারণা তৈরি হোক। আর সেদিন কোন বিষয় নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে তা কাউকে বলবে না বলে কথা দিয়েছে নিলয়কে। যাই হোক কথা দিয়ে তার বরখেলাপ করা তো ঠিক না।

তুষার চলে যাওয়া মাত্রই রাজের মুখটা গম্ভির হয়ে এলো। হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে একটা বই নিয়ে পাতা উল্টাতে শুরু করে সে।

তুষার গান শুনতে শুনতে নিলয়ের রুমে গেলে দেখে নিলয় বেলকনিতে দাড়িয়ে কথা বলছিলো কার সাথে। তুষারকে দেখা মাত্রই ফোন রেখে মুখে হাসির রেখা টানলো।
তুষার এয়ারফোন টা খুলে গলায় ঝুলিয়ে নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আচ্ছা দোস্ত একটা প্রশ্ন করলে মাইন্ড করবি না তো?
নিলয় একটা ভেটকি দিয়ে বলে,
– আরে ধুরো, বল কি বলবি? মাইন্ড করার কি আছে?
তুষার একটু ভাবুক হয়ে বলে,
– আমাকে একটা কথা বল তো। রুশানকে নাহয় ওর ফ্যামিলি তার খরচ দেয়। রাজও টিউশনি করে চলে। কিন্তু তুই যে এভাবে চলছিস, টাকা কই পাস? মানে তোর বাবাও তো বেচে নেই।
নিলয় হেসে বলে,
– আরে ফোনে গেম খেলে। শুধু একটু মাথা খাটিয়ে মাসে আয় করা যায় হাজার হাজার টাকা।
তুষার অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
– সত্যি? তাহলে আমার ফোনেও সেট করে দে।
নিলয় একটু হেসে বলে,
– এসব তোকে দিয়ে হবে না। একটু এদিক সেদিক হলেই প্রতি কো’পে তোকে ফকির বানিয়ে ছারবে। শেষে কাঁন্না মোছার জন্য টিসু কেনারও টাকা থাকবে না।
তবুও তুষার এসব কানে না নিয়ে ফোনটা নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– আরে আমি জানি যে, হারলে টাকা যাবে আর জিতলে টাকা আসবে। আমিও মাথা খাটিয়েই খেলবো। তুই আমার ফোনেও ওটা খুলে দে।

এবার একটু হতাশ হয়ে তুষারের ফোনটা হাতে নেয় নিলয়। যদিও সে কোনো গেম খেলে না। তবুও বাজিতে খেলা যায় এমন একটা এপ্স খুজে তুষারকে ওটা ওপেন করে দিলো।
তুষার একটু ভাব নিয়ে বলে,
– এবার শুধু টাকা আর টাকা আসবে।
বলেই আর সময় অপচয় না করে সেখান থেকে চলে গেলো তুষার। নিলয় পেছন থেকে বলে,
– দেখিস আবার, বেশি টাকা টাকা করলে শেষে ভান্ড কেনারও পয়শা থাকবে না৷
,
,
নিবিড় এতোক্ষণ ওয়াশ রুমে ছিলো। ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে রাজকে এমন গম্ভির মুখে দেখে বলে,
– আবার অরিণের কথা মনে পড়ছে তাইনা? আরে ওই মেয়ে চলে গেছে আরো কত মেয়ে আছে লাইফে। এসব নিয়ে ভাবার টাইম আছে?
রাজ একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– কি সব যা তা বকছো? তোমাকে কে বললো অরিনের বিরহে আমি আত্মহারা? ওকে আমার মনের কথা বললাম আর সে রিজেক্ট করলো। কারণ আমি ওর মতো বড় লোক না। তাই বলে এটা নিয়ে এতো ভেবে নিজেকে কেন ডিপ্রেশনে নিয়ে যাবো?
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– যাক তোমাকে বুঝানোর আগেই ভুঝে ফেললে। উই আর ব্রিলিয়ান্ট।
,
,
বিকেলে বাস স্ট্যানে দাড়িয়ে ছিলো নিবিড়। জরুরি প্রয়োজনে একটু দুরে গিয়েছিলো সে। এখন ফিরে যাচ্ছে বাসায়।
তার পাশে ছোট একটা ফ্যামিলি। তাদের সাথে বসে আছে আরেকটা মেয়ে। তার থেকে কিছুটা ছোট হবে। চেহারা টা কিছুটা নিবিড়ের সাথে মিল আছে। তাই অবাক হয়ে কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে হাকিয়ে ছিলো নিবিড়।
মেয়েটা হয়তো এই ভদ্র লোক আর ভদ্র মহিলার মেয়ে হবে। টিকেট হাতে দাড়িয়ে আছে সবাই।
ভদ্র লোকটা একটু দুড়ে হেটে গিয়ে আবার ফিরে এসে ঐ মহিলার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে,
– ফারহা তুমি ফারিহা কে নিয়ে এখানে দু’মিনিট দাড়াও আমি একটু আসছি।
বলেই চলে গেলো সেই লোকটা।
নিবিড় পাশ থেকে বিষয়টা খেয়াল করলো। তার মানে এই মহিলার নাম ফারহা, আর পাশে বসে থাকা মেয়েটা তার মেয়ে ফারিহা।
বিষয়টা নিয়ে আর বেশি ভাবলোনা সে। এতো দুরে এসে অপরিচিত মানুষদের নিয়ে ভেবেই বা কি লাভ?

কাধে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিবিড়। এর মাঝে ফারহা তার কাছে এগিয়ে এসে বলে,
– বাবা আর কতক্ষন বাকি আছে দেখো তে?
নিবিড় তার দিকে চেয়ে বলে,
– আপনার টিকিট কয়টার?
ফারহা তৎক্ষনাৎ বেগের দিকে চেয়ে বলে,
– ওহ্ সেটা তো খেয়াল করিনি।
বলেই ব্যাগ থেকে টিকিট বের করে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে দিলো সে। কারণ এতো ছোট লেখা চশমা ছারা পরিষ্কার দেখতে পায়না সে। বিশ বছর আগে ছেলে হারানোর শোকে আজও কাঁদতে কাঁদতে চোখ ও ব্রেন দুটুতেই প্রভাব পরেছে খুব।

নিবিড় টিকিট দেখে বলে,
– আবরার আহমেদ কে?
মহিলা টা বলে,
– আমার স্বামী। একটু আগে দেখলে যে, সে।
– ওহ্ আচ্ছা। আপনাদের বাস তো এখনো বিশ মিনিট বাকি। মানে এখন আমি যেটাতে যাবো ওটার পরের বাসটাই আপনাদের।
বলেই টিকিট টা ফারহার দিকে এগিয়ে দিলে ফারহা তা হাতে নিয়ে বলে,
– ধন্যবাদ বাবা।

দেখতে দেখতে দুই মিনিট পর নিবিড়ের বাসে’র সময় হলে সেটাতে উঠার প্রস্তুতি নেয় সে। এতোক্ষন কথা বলা ভদ্র মহিলাকে বিদায় দিয়ে বাসে উঠে নিজের সিটে গিয়ে বসলো।
,
,
আজ আরোহিকে পড়াতে এসে তাদের বাড়ির গেট পেড়িয়ে ভেতরে গেলে দেখে বাইরে অনেক গুলো গাড়ি দাড় করানো। আর ভেতরেও আগের তুলনায় আজ অনেক মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। হয়তো বাড়িতে আজ মেহমান এসেছে।
এমন অবস্থায় পড়াতে যাওয়া কি ঠিক হবে? প্রশ্নটা মাথায় ঢুকলো তার। এতো মানুষের ভিড়ে বিষয়টা লজ্জা জনক মনে হলো তার কাছে। চলে যাবে ভাবছে এমন সময় উপর তলায় বেলকনিতে আরোহিকে দেখতে পায় সে।

আরোহি রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। চলে যেতে হবে না।

রাজ একটু অবাক হলো। আজব তো, আমি চলে যাবো ভাবছি এটা আরোহি জানলো কিভাবে? নাকি এতোক্ষন এখানে দাড়িয়ে আছি দেখে এমনটা ভেবে নিয়েছে?
আর বেশি কিছু না ভেবে ভেতরে চলে যায় রাজ।

অনেক দিন পর সোনার ডিম পারা রাজ হাসের দেখা মিললো। প্রায় দু’মাস পর নির্জন তার ফ্যামিলির কাছে এসেছে আজ। নির্জনের ব্যাপারে পুরোপুরি না জানলেও কিছুটা জানতে পেরেছে সে। তাই সন্দেহজনক ভাবে আরোহিকে পড়ানোর নামে রাজের এই বাসায় প্রবেশ করা।

ভেতরে ঢুকে রাজ তাকে সালাম দিয়ে আরোহিকে পড়ানোর রুমের দিকে হাটা ধরলে নির্জন পেছন থেকে ডাক দেয় তাকে। রাজ ওভাবেই দাড়িয়ে যায় সোজা হয়ে। মনে একটাই প্রশ্ন জেগে উঠলো তার৷
‘চিনে ফেলেনি তো?’

সঙ্কোচ নিয়ে পেছন ফিরে সে। নির্জনের চার পাশে কয়েকটা গার্ড দাড়ানো। বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গিয়ে নির্জনের সামনে দাড়ায় রাজ। একধম ভদ্র ছেলেদের মতো করে।
নির্জন বসে থাকা অবস্থায় প্রশ্ন করলো,
– তোমার নাম কি রাজ?

To be continue…………