ছদ্মবেশ পর্ব-৪+৫+৬

0
451

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– স্যার জানেন, আপনার চুল গুলো না, একধম কাকের বাসার মতো লাগে। একে তো মনে হয় দুমাস ধরেও কা’টেন না, আর মনে হয় জীবনেও চুলে চিড়নি লাগান নি।
বলেই মুখ চেপে হেসে উঠে আরোহি।
রাজ কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পরে আরোহিকে শক্ত গলায় বলে,
– এগুলো কোনো পড়ার টপিক না আরোহি।
আরোহি হাসি চেপে রেখে বলে,
– সরি স্যার, তবে হ্যা আপনি যদি নিজেকে একটু স্মার্ট বানানোর ট্রাই করেন, তাহলে আপনাকে একধম হিরোদের মতো লাগবে।
রাজ কিছু না বললে আরোহি আবার বলে,
– সত্যিই বলছি স্যার। একটুও বাড়িয়ে বলছি না।
রাজ হতাশ হয়ে বলে,
– প্রশংসা করতে করতে তো হাপিয়ে গেছো, এবার একটু পড়ায় মন দাও।
,
,
রাতের বেলায় ছাদে দাড়িয়ে আছে রুশান। কেমন যেন অস্থিরতা ভাব তার মাঝে। রিমা গত দুই-তিন দিন ধরে কোনো ভাবে যোগাযোগ করছে না। না নিজে ফোন দিচ্ছে, না ফোন দিলে রিসিভ করছে। অথন সে নিজেই রাগ করে বসে থাকতো রুশান ফোন না দিলে।
বাধ্য হয়ে আরিশা খালা মনির নাম্বারে ফোন দিলো রুশান। কিছুক্ষন কথা বলে রিমার কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে,
– তিন দিন ধরে রিমা কলেজে যাচ্ছে না। রাস্তায় কোন ছেলে নাকি ডিস্টার্ব করে তাকে।
রুশান শান্ত ভাবে বললো,
– রামিম ভাইয়া কিছু বলেনি তাদের?(রামিম হলো রিমার বড় ভাই)
আরিশা বলল,
– রামিম কিছু বললেও ঝামেলা করলো তারা। রামিমকেও মারধর করে। আর রিমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। তাই তিন দিন ধরে ঘর থেকেও বের হচ্ছে না, আর কলেজেও যাচ্ছে না। রুমের ভেতর চুপচাপ বসে থাকে।

মুহুর্তেই যেন রুশানের মাথায় র’ক্ত চেপে বসলো। চোখ দুটি বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে বলে,
– আচ্ছা আন্টি চিন্তা করবেন না। আমি কালকেই বাড়িতে আসছি।
– কিন্তু ওরা যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে?
– ওটা আমি বুঝে নিবো আন্টি। আপনি শুধু রিমাকে বলবেন মন খারাপ করে বসে না থাকতে। পরশু আমার সাথেই কলেজে যাবে সে।
বলেই ফোন কেটে দেয় রুশান। রাজ তার পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,
– কোনো সমস্যা হয়েছে? তোমাকে কেমন অস্থির দেখাচ্ছে দেখছি।
রুশান দুই হাতে ভর দিয়ে একটু ঝুকে বলে,
– কালকে একটু বাড়ি যেতে হবে। বাড়িতে ছোট্ট একটা প্রব্লম হয়েছে।
রাজ কিছু না বলে চুপচাপ তার পাশে দাড়ালো। তারপর শান্ত ভাবে বলে,
– তোমাকে দেখেতো মনে হচ্ছে না কোনো ছোট্ট প্রব্লেম। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কোন বিষয় নিয়ে তুমি চিন্তিত।
রুশান এবার রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– অনেক বড় বড় প্রব্লেমও আমার সামনে খুবই তুচ্ছ। কিন্তু আমার লাইফে একটাই দুর্বল জায়গা আছে, যেখানে ছোট ফুলের টোকাও আমার কাছে তলোয়ারের ভাড়ি আঘাতের চেয়েও ধারালো মনে হয়। তাই কালকেই ইমার্জেন্সি বাড়ি যেতে হবে আমাকে।
,
,
ভার্সিটির মেয়ে ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে। ওখানে নিবিড় গিয়ে হাত বাড়িয়ে একে একে হেন্ডসেক করে বলে,
– দোস্ত কি অবস্থা তোদের?
মেয়েগুলোও হেসে বলে,
– হুম ভালো তোর?
ফ্রেন্ড মহলে অরিনকে দেখে নিবিড় একটা মেয়ের কানে কানে বললো,
– ও এখানে কেন?
মেয়েটা বলে,
– এখন থেকে অরিনও আমাদের ফ্রেন্ড।
মুহুর্তেই নিবিড় এক গাল হেসে বলে,
– আরে তোদের ফ্রেন্ড মানে তো আমারও ফ্রেন্ড। হায়, আমি নিবিড়। (অরিনের দিকে হাত বাড়িয়ে)
বিনিময়ে অরিন কিছু না বললে একটু অপমানিত বোধ করে নিবিড়। সে হাত সরিয়ে বলে,
– তুমি কোনো বলিউডের নাইকা নও যে এতো ভাব দেখাতে হবে। তোমার মতো অনেক টা সুন্দরি মেয়ে লাইন দিয়ে আছে আমার পিছে। আর এদের ফ্রেন্ড দেখে ভদ্রতার খাতিরে ফ্রেন্ড বানাতে চেয়েছি। নাহলে নিবিড়ের এতো দুর দিন আসেনি যে, যাকে তাকে নিজের ফ্রেন্ড বানাবে। সো তোমার এসব দু’টাকার ভাব অন্য ছেলেদের সাথে দেখাতে এসো, বাট এই নিবিড়ের সাথে না।
বলেই উঠে গেলো নিবিড়। পাশ থেকে সাদিয়া আবার তাকে টেনে বসিয়ে বলে,
– ওফ কি শুরু করেছিস তোরা? আর তুই কোথায় যাচ্ছিস, বস।
নিবিড়ের আচরণে যেন হা হয়ে গেলো অরিন। যেখানে ভার্সিটির কত ছেলে অরিনের পেছনে ঘুরে। আর সেই তাকেই নাকি নিবিড় সবার সামনে এভাবে অপমান করলো?
অরিন কিছু বলতে যাবে তখন দুর থেকে নিবিড়কে ডাক দিলো রাজ।
রাজকে দেখে থেমে গেলো অরিন। সবাই মিলে রাজকে ডাক দিলে তাদের সামনে এসে দাড়ায় রাজ।
নিবির তাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। রাজও হাসি মুখে পরিচিত হলো সবার সাথে।
নিবিড় বলে,
– রাজ খুব ভালো স্টুডেন্ট। পরশু আমার সব এসাইনমেন্ট রাজই করে দিয়েছিলো। বন্ধু হিসেবে খুব হেল্পপুল একজন মানুষ সে।
তারপর অরিনের দিকে চেয়ে নিবিড় আবার বলে,
– এই যে গরিবের ক্যাটরিনা কাইফ, ওই দিন যে একটা কাগজের জন্য ওকে এভাবে মা’র খাওয়ালেন, জিজ্ঞেস করে দেখুন, চিঠি টা সেদিন নাহিদ ই পাঠিয়েছিলো, আর আপনার সামনে হিরো সাজার জন্য আবার এসে নিজেই রাজকে মা’র ধর করে। তাছারা এসব আপনার জেনেই বা কি লাভ? আপনার তো অহংকারে মানুষকে মানুষ বলেও মনে হয় না।

নিবিড়কে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো রাজ। তারপর বলে,
– এভাবে কেন বলছো? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
নিবিড়ও রাজকে ফিস ফিস করে বলে,
– এসব মেয়েদেরকে এভাবে বলেই আগে লক করে দিতে হয়। দেখবে নেক্সট টাইম আর ভাব দেখাতে আসবে না। কিন্তু তুমি যদি তার ভাবকে বেশি গুরুত্ব দাও, তাহলে পরে দেখবে সে আরো বেশি ভাব নিবে। সো, সুজুগ বুঝল এসব ভাবের দোকান আগেই বন্ধ করে দিতে হয়।

ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর অরিন রাজের কাছে এসে বলে,
– সরি ওদিনের ব্যাবহারের জন্য।
রাজ একটু হেসে বলে,
– আরে সমস্যা নেই। ওসব পুরোনো কথা। আর আমি পুরোনো কথা মনে রাখি না।
অরিনও একটু হেসে বলে,
– তোমার নাম্বার টা দাও তো।
– কেন?
– পড়ায় কোনো প্রব্লেম হলে তোমার থেকে হেল্প নিতে পারবো। আর ক্লাসমেট হিসেবো যোগাযোগও থাকলো।
রাজ একটু হেসে নাম্বার টা দিয়ে দিলো। এখান থেকেই শুরু হয়েছিলো তাদের ফ্রেন্ডশিপ টা।
,
,
সন্ধার পর কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের ক্লান্ত শরির ঠেলতে ঠেলতে বাসায় আসে নিবিড়। তুষার তার এই অবস্থা দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ধরে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আর জানতে চায় এমনটা কিভাবে হলো? কে মা’রলো তাকে?
নিবিড় ব্যাথায় আ উ করতে করতে বলে,
– আজ ৪ নাম্বার টার সাথে দেখা করার কথা ছিলো রে দোস্ত। রাস্তায় তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কারা যেন হুট করে এসে আমায় মে’রে দিয়ে চলে গেলো।
পাশ থেকে নিলয় বলে,
– মেয়ে ঘটিত বিষয় নিয়ে মা’র খেয়ে বাসায় এসেছিস? ছি ছি, আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা। সত্যি কি কাহিনি এটা? নাকি কোথাও ধরা খেয়ে মা’র খেয়েছিস?
নিবিড় ব্যাথায় শব্দ করে বলে,
– দেখ নিলয় বাজে বকবি না। আমি প্রেমিক হতে পারি, তবে এতো লু* না।
তুষার হেসে বলে,
– তুমি কি, তা আমরা সবাই জানি।

নিবিড় এবার নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– প্লিজ দোস্ত তোর তো আবার মুখ পাতলা। কথা পেটের ভেতর রাখতে পারিস না। যার তার কাছে বলে ফেলিস। এসব কাউকে আবার বলতে যাবি না প্লিজ। আমার মান সম্মান একটুও থাকবে না, তাহলে।
নিলয় বলে,
– আরে না, কাউকে বলবো না। তুই কি আমাকে এমন ছেলে ভাবিস? আমার বুক ফাটে তবুও মুখ ফাটে না। টেনশন নিস না, কাউকে বলবো না আমি।

পর দিন সকালে নিলয় রাস্তায় বের হলেই নিরার সাথে দেখা। নিবিড়ের আরেক গার্লফ্রেন্ড।
নিলয়কে দেখেই নিরা বলে,
– ভাইয়া শুনুন, আপনি নিবিড়ের ফ্রেন্ড না?
নিলয় তার দিকে চেয়ে বলে,
– হ্যা, কিন্তু আপনি নিবিড়কে কিভাবে চেনেন?
– আমি ওর গার্লফ্রেন্ড।
– কয় নাম্বার টা?
– কয় নাম্বার টা মানে? ওর কয়টা গার্লফ্রেন্ড?
– তা তো জানিনা।
– আচ্ছা ভাইয়া, নিবিড় কোথায় আছে বলতে পারবেন? গত কাল থেকে আমার ফোনও ধরছে না।
নিলয় একটু হেসে বলে,
– সেই লেভেলের একটা ডোস পাইছে?
– মানে?
– সে আমাকে বলছে বিষয় টা কাউকে না বলতে। শুধু আপনাকে বলছি আপনি ওর গার্লফ্রেন্ড দেখে। প্লিজ আপনি কাউকে বলবেন না বিষয় টা।
– হুম বলবো না।
তারপর নিরার কাছে এসে নিলয় আস্তে আস্তে বলতে থাকে,
– নিবিড় কালকে তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গিয়ে ধরা খেয়ে সেই লেভেলের মা’র খাইছে। এখন বাসাতেই পরে আছে। আমি বাসায় গিয়ে বলবো আপনাকে ফোন দিতে। আর হ্যা, আপনি কথাটা কাউকে বলবেন না প্লিজ। কারণ নিবিড় আমাকেও বলেছিলো যেন কাউকে না বলি।

To be continue……

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– ফুচকা খাবি?
রিক্সা করে কলেজে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে হাইস্কুলটার সামনে একটা ফুচকার ছোট দোকান দেখে রিমাকে প্রশ্ন করলো রুশান।
রিমার মন তখন ভিন্ন চিন্তায় ডুবে আছে। কারণ আজ পাঁচ দিন পর কলেজে যাচ্ছে সে। যেই ছেলে গুলোর ভয়ে এতো দিন ঘরে বসেছিলো, তাদের সামনে দিয়েই রুশান নিয়ে যাচ্ছে তাকে। মনে একটাই প্রশ্ন, আচ্ছা তারা যদি কোনো ঝামেলা করে? রামিম ভাইয়ার মতো যদি রুশান ভাইয়াকে ও মারে?
এসব চিন্তার মাঝে রুশানের এমন ফুচকার অফারে একটু চমকে উঠে রিমা। ভয়ার্ত চেহারায় দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক অসম্মতি জানায়।
রুশান একটু হেসে রিক্সা থামাতে বলে নেমে ফুচকার দোকানটায় চলে গেলো। কারণ সে ভালোই যানে, রিমা ফুচকা, আইসক্রিম, চটপটি, ঝালমুড়ি এইসব ছাইপাস বেশি পছন্দ করে। আজ হয়তো ভয়ে আছে একটু।

তার পর আর কিছুটা গেলে মোড়ের সেই ছেলে গুলোকে দেখতে পায় রিমা। ভয়ে কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে রুশানের গা ঘেষে বসে সে। ছেলে গুলো সামনে এসে রুশান রিক্সা থেকে নেমে ছেলেগুলোর সামনে দাড়ায়।
একটা ছেলে প্রথমে একটু হিরো গিরি দেখালেও রুশান পকেট থেকে বের করে একটা কার্ড বের করে তার সামনে ধরলে চুপসে যায় ছেলেটা। হাত দুটি এক করে মাথা নিচু করে রইলো ছেলেটা।
রুশান কার্ড টা পকেটে নিয়ে দুই হাত পেন্টের পকেটে গুজে ছেলেটাকে বলে,
– নিজের হাতে নিজের দুই গালে থাপ্পর দাও।
ছেলেটা চুপচাপ নিজের হাত দিয়ে নিজের দুই গালে থাপরাতে লাগলো। রুশান এবার এক হাতে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– তো রিমাকে আজ থেকে কিসের নজরে দেখবে শুনি?
ছেলেটা মাথা নিচু অবস্থায় বললো,
– বোনের নজরে।
রুশান তৎক্ষনাৎ ছেলেটার গালে কষে একটা থা’প্পর দিয়ে বলে,
– কিসের নজরে?
ছেলেটা সোজা হয়ে বললো,
– জ্বি,, মায়ের নজরে দেখবো।
রুশান আবার দুই হাত পকেটে নিয়ে ছেলেটাকে বলে,
– যাও ওর কাছে গিয়ে বলো, মা আমাকে ক্ষমা করে দেন।
ছেলেগুলো তাই করলো। রুশান রিক্সায় উঠে বলে,
– আর যদি কখনো শুনি যে, ওর দিকে তাকিয়েও কেও কথা বলছো, তাহলে কি হবে তা মুখে বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা। কাজের মাঝেই আমার আসল রুপ টা দেখতে পাবে।

বলেই রিক্সায় উঠে রিমাকে নিয়ে আবার রওনা দিলো রুশান। রিমা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
– ওরা আজ এমন ভিতু হয়ে আছে কেন?
রুশান একটু হেসে বলে,
– বাঘ যতই ভয়ঙ্কর হোক, একবার শিকারীর ফাদে পরলে তার বুঝতে পারে তার দৌড় কতটুকু। যাই হোক, আজ থেকে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারবি। ওরা চোখ তুলেও তাকাবে না।
,
,
ছাদে বসে এক হাতে সিগারেটের টানে ধোয়া উড়াচ্ছে তুষার। অন্য হাতে ফোন নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয় মানুষটার মেসেজের আশায়। ছয় মাস হলো তাদের রিলেশন। সব কিছু ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে সে খুব ইগনোর করছে তুষার কে।
গত কাল তো সরাসরিই বলে দিলো,
– দয়া করে আমাকে আর মেসেজ দিবে না। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমার আশা ছেড়ে দাও। আর নিজের জীবন গুছিয়ে নাও। আমার থেকেও খুব ভালো একটা মেয়ে পাবে তুমি।
এরোকম আরো অনেক শান্তনা মুলক মেসেজ। যা পড়ে বার বার চোখের পানি মুছে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে তুষার। এক বসায় অলরেডি এক পেকেট সিগারেট শেষ তার। তবুও বুকের ভেতর টা আরো বেশি জ্বালা পোড়া করছে।
মেয়েটা কেন করলো এমন? কেন জীবনে এসে আবার এভাবে হাড়িয়ে যাচ্ছে? আমি তো তার সাথে কোনো দিন খারাপ ব্যাবহারও করিনি। তাহলে কিসের শাস্তি দিলো এটা?
ভাবতে ভাবতে আবারও চোখের পানি মুছে নিলো তুষার।
,
,
আজ দুই দিন পর সুস্থ হলো নিবিড়। ওদিকে নিরা বার বার ফোন করে বলছে তার সাথে ইমিডিয়েট লি দেখা করতে। নিবিড়ও তাই চলে গেলো নিরা’র সাথে দেখা করতে।
তাই যথা সময়ে চলে গেলো নির্দিষ্ট স্থানে। যেখানে নিরা আগে থেকেই এসে বসে ছিলো।
নিরা রেগে থাকলেও তা নিবিড়কে বুঝতে দিলো না। নিবিড়ের গালে হাত রেখে বললো,
– বাবু, তোমার ২ নামার গার্লফ্রেন্ডের নাম যেন কি?
নিরা’র চালাকি বুঝে উঠার আগেই নিবিড় আবেগে বলে ফেলে,
– পাখি,,,
চট করে নিরা তার কলার চেপে ধরে বলে,
– তার মানে তোর আরো গার্লফ্রেন্ড আছে? একটা একটার নাম বলবি আজকে।
নিবিড় নিজের বোকামি বুঝতে পেরে জ্বিভে কামড় কাটলো। তার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য বললো,
– আরে আমার পুরো কথাটা তো শুনবে নাকি।
নিরা ওভাবে ঘরা অবস্থাতেই বললো,
– কি বলবি বল,
– আগে ছাড়ো, নাহলে বলবো কিভাবে।
নিরা ছেড়ে তার সামনে দাড়িয়ে রইলো। নিবির আদুরে কন্ঠে বলে,
– আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসাটাই হলে তুমি। আর পাখি বলতে বুঝিয়েছি তোমাকেই। তুমিই আমার পাখি, তুমিই আমার হাতি, জিরাব সব। তাই বলে কি আদর করেও তোমাকে কিছু নিজের পছন্দ মতো নামে ডাকলে তুমি রাগ করছো? ঠিক আছে আর কখনো কোনো আদুরে নামে ডাকবো না।
নিরা এবার অপরাধির নেয় চেয়ে বললো,
– সত্যিই তো তোমার আর কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?
– এক কথা কয়বার বলবো? তুমিই আমার সব।
– পরশু কার সাথে দেখা দেখা করতে গিয়ে মা’র খেয়েছো বলো?
নিবিড় ভ্রু-কুচকে বলে,
– তোমাকে এসব কে বলেছে?
– যেই বলুক, আমি যেটা বলেছি তার উত্তর দাও।
– তোমাকে এসব নিলয় বলেছে তাই না?
– হুম, এখন বলো এটাও মিথ্যা।
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– কি একটা অবস্থা দেখো, বন্ধুদেরকে মজা করে কিছু বললেও বিপদ। পরশু ছিন’তাইকারির হাতে পরছিলাম। ওরা আমাকে মে’রে আমার টাকা পয়সা সব নিয়ে গেছে। আর ওদেরকে এসব বলিনি কারণ লজ্জার বিষয় এটা। তাই বললাম যে তোমার সাথে দেখা করতে গিয়ে তোমার ভাইয়ের হাতে মা’র খেয়েছি। আর সে তোমার কাছেই এসে সব বলে দিলো?
নিবিড়ের এমন ইমোশনে গলে গেলো নিরার মন। নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– বাদ দাও ওসব। যা গেছে মালের উপর দিয়ে গেছে। জানের উপর দিয়ে যায় নি।
নিবিড় একটু মন খারাপ করে বলে,
– এখন এই মাসের ভারা, খাওয়ার খরচ কোথায় থেকে দিবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এমন একটা পরিস্থিতিতে পরে গেছি যে, না পারছি কাওকে বলতে।
নিরা এবার পাস থেকে কিছু টাকা বের করে নিবিড়কে দিয়ে বলে,
– এই নাও, আপাতত এটা দিয়ে চালাও। এর পরও লাগলে বলো, আমি পাঠিয়ে দিবো। তবুও মন খারাপ করো না প্লিজ। তোমাকে বিষণ্ন মনে একধম ভালো লাগে না।
নিবিড় একটু ঢং করে বলে,
– তোমার থেকে এভাবে টাকা নিবো বিষয়টা একটু লজ্জা জনক।
নিরা বলে,
– আরে তোমার আমার কি, হ্যা? বলো যে আমাদের।
– আচ্ছা তুমি যখন এতো করে অনুরুধ করছো, না কিভাবে করি বলো? হাজার হোক তুমিই তো আমার সব। তবে হ্যা, সব টাকা কিন্তু বিয়ের পর শোধ দিয়ে দিবো।
নিরা একটা হাসি টেনে ফোনের দিয়ে চেয়ে বলে,
– বাড়ি থেকে ফোন দিচ্ছে। আমাকে এখন যেতে হবে।
নিবিড় বলে,
– চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
– না লাগবে না। সামনেই একটা রিক্সা ডেকে উঠে যাবো। বায় বায়, ভালো থেকো। আর দয়া করে ফোন দিলে ধরবে।
বলেই চলে গেলো নিরা। নিবিড় কিছুক্ষন চেয়ে থেকে এক গাল হেসে, টাকা গুলো দিয়ে বাতাস করতে থাকে গায়ে। চার দিকে চেয়ে তার পর টাকায় চুমু দিয়ে মানি ব্যাগে নিয়ে হাটা ধরে সেও। এভাবেই চলে দিন কাল।
,
,
– এ মাসে কয়টা মানুষ সাপ্লাই হয়েছে?
পায়ের উপর পা তুলে সিগারেটের ধোয়া ছেরে কথাটা বললো নির্জন।
পাশ থেকে একজন ভদ্র লোক স্মার্ট গ্যাটআপ নিয়ে গলার টাই টা একটু নেড়ে চেরে বলে,
– স্যার বেশি না। ২১ টা মাত্র।
নির্জন আবারও সিগারেটের টান দিয়ে বলে,
– কালেকশন বাড়াতে হবে। প্রতি মাসে কম করে ৪০-৫০ টা মানুষ কালেকশন করতে হবে।
পাশের লোকটা আবার বলে,
– কি করবো স্যার। খুব সাবধানতার সাথে কাজ গুলো করতে হয়। এক বার এই ভেতরের খবর বাইরে চলে গেলে সব শেষ। প্লেন মাফিক করতে হবে সব।
নির্জন এবার উঠে দাড়িয়ে বলে,
– প্রয়োজনে দলের লোক আরো বাড়াও। সবার এমাউন্ট বাড়িয়ে দাও। তবুও কালেকশন বাড়াতে হবে। তবে হ্যা, ওসব মানুষ দের কে টার্গেট করবে যারা খুবই অসহায়। যেন নিখোজ হয়ে গেলেও পরিবারের মানুষরা খুব বেশি তোলপাড় করতে না পারে। তবে প্লেন গুলো এমন ভাবে সাজাতে হবে যাতে কেও বুঝতে না পারে যে, তাকে নিখোজ করা হয়েছে। সবাই জানবে নিখোজ হয়েছে, ব্যাস।
লোকটা মাথা নাড়িয়ে বলে,
– জ্বি স্যার।

গভির রাতে কানে এয়ার ফোন গুজে একটা লেপটপ নিয়ে বসে আছে রাজ। এখানে উঠার সময় নিজের প্রয়োজনিয় সবই নিয়ে এসেছে। লেপটপে কাজ করছে আর প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ক্রাইম গুলো সম্পর্কে যতটুকু পারছে তথ্য কালেক্ট করছে। সারা দেশে কে এবং কিভেবে তার জাল ছড়িয়ে রেখেছে। কিভাবে এতগুলো মানুষ হারিয়ে যাওয়ার পরও কোনো প্রমান থাকে না। সব কিছু যেন তার কাছে শুধুই দুঃস্বপ্ন। যত বারই সে এই রহস্যের কাছে ঘনাতে চেয়েছে তত বারই যেন দুঃস্বপ্নের মতো ঘুম ভেঙে গিয়ে আবার সেই প্রথম ধাপেই ফিরে চলে আসে। তবে এবার প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে সে। সবই বের করবে এবার। গর্ত থেকে টেনে তুলবে সেই বিষধর সাপ টাকে। কারণ রাজ খুব কাছ থেকেই শুনেছে অসহায় মানুষদের কাঁন্না।

To be continue….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সূর্যের সোনালি আলো তখন ফুটতে শুরু করলো। সেই সোনালি আলো জানালা ভেদ করে রুমে প্রবেশ করছে ধিরে ধিরে। নিলয় তখন বেলকনিতে দুই হাত মেলে অলসতা কাটানো তে ব্যাস্ত। আর তুশার রুমে মরার মতো ঘুমাচ্ছে। সারা রাত গার্লফ্রেন্ডের বিরহে কাঁদতে কাঁদতে শেষ রাতে এসে চোখ দুটি লেগে এসেছে তার। আর এখ বে-ঘোরে ঘুম।
ফরিদা আন্টি নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজাচ্ছিলো। তখনই কলিং ব্যাল এর শব্দ আসে। দরজা খুলে দেখে রাজ আর নিবিড় বাইরে দাড়িয়ে আছে। খুব ভোরে জগিং করতে বেড়িয়েছিলো দুজন।
নিবিড় ফরিদা আন্টির কাছে গিয়ে বলে,
– ফ্লেভার তো দারুন ছড়াচ্ছে আন্টি। আজ কি তৈরি করছেন আমাদের জন্য।
ফরিদা আন্টি নাস্তা টেবিলে আনতে আনতে বলে,
– গরুর মাংসের সাথে পরোটা, চা আর নুডলস, সাথে একটা কেক বানিয়েছি।
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– আজ এতো কিছু আর হটাৎ কেক বানিয়েছেন আন্টি, কোনো বিশেষ কিছু নাকি?
ফরিদা আন্টির আজ গোমড়া মুখ। ড্রয়িল রুম টু কিচেন এভাবে হাটতে হাটতে গোমড়া মুখে বলে,
– হুম, খুব বেশিই স্পেশাল আজকের দিন টা। যাও তোমরা নাস্তা করার জন্য তৈরি হয়ে আসো।
– এক্ষুনি আসছি আন্টি, না আসলেও আপনার খাবারের টানে হলেও খুব তারাতারি চলে আসবো।
বলেই উপরে চলে গেলো নিবিড়। একটু পর আবার কলিং ব্যাল বাজলে দরজা খুলে দেখে রুশান। বাড়ি গিয়ে গত কাল সব ঠিকঠাক করে আবার ব্যাক করেছে ব্যাচেলর বাসায় তার বন্ধুদের কাছে। ফরিদা আন্টির সাথে কথা বলে সেও উপরে চলে গেলো।

নিলয় একটু পেটুক টাইপের। সবার আগে সে’ই নিতে শুরু করে দিলো। সবাইকে নিয়ে খাওয়ার সময় ফরিদা আন্টি কেকটা কে’টে সকলকে দিয়ে বলে,
– আজ হটাৎ কেক বানালাম কেন জিজ্ঞেস করেছিলে না তখন?
নিবিড় উৎসাহ নিয়ে বলে,
– হুম আন্টি।
মুহুর্তেই ফরিদা আন্টির চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। তা এক হাতে মুছে বলে,
– আজকের দিনটায় আমার তৌসিফ দুনিয়াতে এসেছিলো। কত ফুটফুটে ছিলো আমার তৌসিফ।
রাজ আর রুশান দুজনই খাওয়া বন্ধ করে ফরিদা আন্টির দিকে তাকায়। কারণ তারা কেউই ফরিদা আন্টির কষ্টের মুল কাহিনি টা জানেনা। কারণ তাদেরকে কখনো বলেও নি সে। তারা শুধু জানতো ফরিদা আন্টির কেউ নেই। তার স্বামি ও এক সন্তান দুজনই গাড়ি এক্সিডেন্টে মা’রা গেছে।
নিবিড় উৎসাহ নিয়ে বললো,
– আপনার কাহিনি টা আমরা শুনতে চাই আন্টি।
পাশ থেকে নিলয়ও তাল মিলালো।
ফরিদা আন্টি একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
– প্রতি বছর তার জন্ম দিনে পার্টি না করলে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতো। কিন্তু পরে তার বাবা ঠিকই সারপ্রাইজ দিতো তাকে। খুব খুশি হতো সে। হাস্যজ্জল মুখে চোখ গুলো খুশিতে ঝিলিক দিয়ে উঠতো। আমি এমন অবস্থায় ছিলাম না। না ছিলাম এমন একা। অটল ধন সম্পদ ছিলো আমাদেরও। বাড়ির ভেতরেই কাজের মানুষ ছিলো ৩-৪ জন। আমার তৌসিফ ছিলো ৮ বছর বয়সের। বিয়ের প্রথম ১০ বছর আমাদের কোনো সন্তান ছিলো না। এর পর তৌসিফ আসলো আমাদের কোলে। আনন্দের সীমা ছিলো না। তবে এই সুখও আমার কপালে সইলো না। কারা যেন তৌসিফের বাবার সব কিছু আস্তে আস্তে কৌশলে লুটে নিয়েছিলো। এর পর সে ওদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিবে সেই রাতেই এক্সিডেন্ট টা হয়। সবাই একটাকে এক্সিডেন্ট হিসেবে নিলেও, আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি এটা এমনি এমনি হয়নি, করানো হয়েছিলো।

বলেই কেঁদে দিলো ফরিদা আন্টি। আবার চোখের পানি মুছে বললো,
– তার পর ওদের সাথে সব হারিয়ে ফেললাম। কিছুই করতে পারিনি আমি। একা হয়ে গেলাম একেবারে। এই বাড়িটির উপর তলা ভাড়া দিয়ে প্রথম এক বছর একাই কাটিয়ে দিলাম। তারপর তারাও বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। এর পর নিবিড় আসলে আমার কাছে। যেন থাকার মতো একটা রুম হলেও ভাড়া দিই তাকে। তার পর রুশান, এর পর একে তোমরা সবাই। এখন তোমরাই আমার পরিবার তোমরাই আমার ছেলে, তোমরাই আমার সেই ছোট্ট তৌসিফ।

তখনই নিবিড় উঠে এসে ফরিদা আন্টির মাথাটা নিজের সাথে ধরে বলে,
– আমরাই তো আপনারর সন্তান আন্টি। আর আমি কখনোই আপনাকে ছেরে যাবো না। তৌসিফ যেমন আপনার সাথে সারা জীবন থাকতো। আমিও থেকে যাবো সারা জীবন। কারণ আমারও যে আপনার মতোই একজন মা খুবই প্রয়োজন ছিলো। পেয়েছিও, ছেড়ে যাবো না কখনো।
এর পর একে একে সবাই এসে ফরিদা আন্টিকে শান্তনা দিতে লাগলো। রুশান বিষয় টার কিছু হলেও বুঝতে পারছে। কারণ তার জানা মতে ২৫ বছর আগে তার ফ্যামিলির সাথেও একই কাজ করা হয়েছিলো।
,
,
আরোহিকে পড়ানো শেষে বাসায় ফিরলো রাজ। বেলকনিতে বসে ফোন টিপছিলো সে। নিবিড় তার পাশে গিয়ে বসে। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
– সব ঠিকঠাক?
রাজ মাথা তুলে বলে,
– কিসের কথা বলছো?
নিবিড় এবার আরো কাছে গিয়ে বলে,
– তুমি যেই মেয়েটাকে পড়াও, কি যেন নাম? ওহ্ হ্যা, আরোহি। মেয়েটাকে আজ দেখলাম তাদের গেটের সামনে। ভাই মেয়েটাতো হেবি সুন্দরি। এমনটা জানলে টিউশনি টা আমিই করাতাম ভাই।
রাজ এবার সোজাসুজি ভাবে চেয়ে বলে,
– সুন্দরি এটা সত্য। তবে তার সাথে টিউশনির কানেকশন কি?
নিবিড় হেসে বলে,
– তুমি দেখতে যেমন বলদ টাইপের। তোমার বুদ্ধিও বলদ টাইপের। আরে ভাই একে তো মেয়েটা মারাত্মক সুন্দরি, আর দুই হলো অনেক বড় লোক ফ্যামিলির মেয়ে। এমন একটা মেয়েকে যদি পটিয়ে এক বার বিয়ে করে নিতে পারি তো, লাইফ স্যাটেল।
রাজ হেসে বলে,
– আমার মেয়েদের প্রতি এতো ইন্টারেস্ট আর এভাবে স্যাটেল হওয়ার লোভ কোনো টাই নেই। সে আমার স্টুডেন্ট মানেই স্টুডেন্ট।
নিবিড় আবারও হেসে বলে,
– ভালো বুদ্ধি দিলাম নিলা না। আচ্ছা তাহলে এক কাজ করো, ওই মেয়েটার সাথে কোনো ভাবে আমার লাইন করিয়ে দাও।
রাজ এবার নিবিড়ের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে,
– ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে জানো তুমি? তোমার না ৬-৭ টা গফ? ওসব যদি ওই মেয়ে জানতে পারে তাহলে গু’লি করে মা’রবে। তাই ওসব ফ্যামিলির মেয়ের থেকে দুরে থাকাই ভালো।

বলেই উঠে হাটা ধরে রাজ। নিবিড় পেছন থেকে বলে,
– ভাই সত্যি বলছি, ওরকম একটা মেয়ে পেলে বাকি সবাইকে ছেড়ে দিবো।
,
,
রাতের বেলায় ঢুলতে ঢুলতে বাসায় আসে তুষার। নিবিড়, রাজ, রুশান এরা তাকে ধরে রুমে এনে বসায়। নিবিড় বলে,
– তুই আবার মাল খেয়েছিস? তোকে না বললাম এইসব ছাইপাশ খেয়ে এই বাসায় আসবি না। ফরিদা আন্টি শুনলে কি করবে বুঝতেছিস?
তুষায় খুব শোকাহত দের মতো করে বলে,
– ভাই, সুমাইয়া আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিছে। কতো ভালোবাসতাম তাকে।
নিবিড় এবার সরে বসে বলে,
– ধুর হালা। একটা মেয়ের জন্য এতো কিছু করতেছিস? মেয়ে লাগলে তুই আমার কাছে আসতি। কিন্তু এই ছাইপাশ খেতে গেলি কেন?
তুষার আবারও কেঁদে বলে,
– সুমাইয়া আমার পিউর লাভ ছিলো ভাই।

রাজ করা করে লেবুর শরবত বানিয়ে এনে তুষারের কাছে দিলো। তুষার ওটা খেয়ে হেলান দিয়ে বসে।
নিবিড় আবার বলে,
– ভাই শুন, ভালোবাসা আর কমার্স অনেকটাই মিল। কমার্সের স্টুডেন্ট দের কে শিখানো হয়, বেশি জায়গায় বিনিয়োগ করলে লস হওয়ার সম্ভাবনা টা কম থাকে। আর তোমরা এক জায়গায় বিনিয়োগ করে ওটা নিয়ে বসে থেকেই তো এই H মা’রা টা খাও। আমাকে দেখ, কতো জায়গায় ভালোবাসা বিনিয়োগ করেছি। তাই আমার লসেরও কোনো হিসেব নেই।

তুষার ফোনের ওয়েল পেপারে সুমাইয়ার ছবি সেট করে রেখেছিলো। ওটা দেখে কেঁদে বলে উঠে,
– আমার সুমাইয়া,,,,,,,
নিবিড় ফোন টা নিয়ে এবার তুষারের দিকে কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার পর বলে,
– এটা তোর সুমাইয়া? আরে বলদের ঘরে বলদ, এটা তো বাংলা নাটনের অভিনেত্রি মেহজাবিনের ছবি।
তুষারের কোনো কান নেই নিবিরের কথায়। সে বুকের বা পাশে হাত রেখে সুমাইয়া সুমাইয়া করছে। নিবিড় আবার বলে,
– ফেসবুক রিলেশন তাই না?
তুষার মাথা নেড়ে হ্যা সূচক সম্মতি জানায়। নিবিড় এবার উঠে দাড়িয়ে বলে,
– বাংলা নাটক দেখিস না বলেই মেহজাবিনকে চিনলি না। আর ফেইক আইডি না রিয়েল আইডি ওটা না দেখেই প্রেম শুরু করলি।
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো নিবিড়। আর এদিকে তুষার বুকে হাত দিয়ে সুমাইয়া সুমাইয়া করতে শেষ,,

আমার সুমাইয়া,
আমারে নেশা খোর বানিয়ে,
কেমনে রইলি ঘুমাইয়া?,,,,,,,

নিবিড় নিজের রুমে এসে বসলে নিলয়ও তার পাশে এসে বসে। আর নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– এই নিবিড় শোন, তুষার তো মনে হয় আজ সুমাইয়ার শোকে শেষ হয়ে যাবে। দেখ কি কাঁদা কাঁদছে।
নিবিড় মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে,
– আরে বাদ দে বাল, হালা পুরাই বলদ।
নিলয় আবার বলে,
– মামা একটা সিক্রেট শুনবি?
– কি?
– তুষারকে বলবি না তো?
নিবিড় বলে,
– আমি কি তোর মতো মুখ পাতলা?
নিলয় নিচের দিকে চেয়ে বলে,
– তুষারের সাথে রিলেশন করা ওই ‘সুমাইয়া ইসলাম’ আইডি টা আসলে আমার ছিলো।

To be continue,,,,,,,,,