ছায়া বিহীন পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
2665

গল্পঃ #ছায়া_বিহীন (৫ম পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

___আম্মু ছেলের থেকে লুকোনোর কি দরকার! বলেই দেন না আমি এসেছি! এতো ভয় পাচ্ছেন কেন?

ঊষার কথায় জোহানা এবং ইনাম দুজনেই চমকে উঠে। ইনাম আগাগোড়া কিছু না বুঝলেও ঊষার এমন আচরণে রেগে যায় । আর জোহানাও ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়। এই মেয়েকে তিনি খুব মায়া করেছিলেন যার প্রতিফল এই ধরনের ব্যবহার। ইনামের দিকে তাকিয়ে জোহানা বুঝলেন ইনাম প্রচন্ড রেগে গেছে কারণ সে নিজেই তার মায়ের কথার উপরে কোনো কথা বলেনা সেখানে তার প্রেমিকার এতো সাহস কোথা থেকে এলো!

জোহানা ঊষার দিকে এগিয়ে বললো,
___আমি? আমি লুকাতে চেয়েছি নাকি তুমিই কাল আমাকে বারণ করেছিলে? হ্যাঁ এই মূহুর্তে আমি চাইনি আমার ছেলে কালকের কিছু জানুক, যেটা অতিবাহিত হয়ে গেছে। সেখানে তুমি আমাকে ভয় পাওয়ার কথা বললে কেন? চরম বেয়াদব তুমি!

ঊষা অনেকটা সহজ ভঙ্গিতে বললো,
___হ্যাঁ কাল আমি বারণ করেছিলাম কিন্তু আজ দরকার মনে হচ্ছে, কারণ আজ এই বাড়ি থেকে আমার চলে যেতে হবে। আপনাকে এবং ইনামকে দুজনকে আমার কিছু কথা বলার দরকার। আপনার হঠাৎ বদলে যাওয়ার রহস্য!

ইনাম আর থেমে থাকতে পারলো না। সে জোরে ধমকিয়ে বললো,
___ এতো সাহস তুমি কোথায় পেয়েছো? আমার মায়ের সাথে তুমি উঁচু গলায় কথা বলো। একটু আগে পর্যন্ত তোমার জন্য আমার খারাপ লাগছিল, খুব মনে পড়ছিলো তোমাকে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সত্যিই তোমরা বাবা মেয়ে খুব খারাপ, আমার আম্মু সবসময় যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর বেস্ট সিদ্ধান্ত। বেড়িয়ে যাও তুমি এক্ষুনি। বেড়িয়ে যাও বলছি!

চেঁচামেচিতে রসিদ সাহেব সাহেবও চোখ ডলতে ডলতে উঠে এলেন। এসে দেখেন হুলস্থুল কান্ড বেঁধে গেছে।

ইনামের কথাগুলো ঊষা মনযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর একটু নরম স্বরে বললো,
___ হ্যাঁ চলে যাবো। ইনাম, এবং আম্মু! আমি দুঃখিত আমার এমন আচরণের জন্য। কিন্তু আমার কি করা উচিত আমি বুঝতে পারছিলাম না! কোথাকার পুরনো শাস্তি আমার উপরে! আম্মু এতটাও অধৈর্য্য হলেন আমাকে ভোর বেলায় বাসা থেকে বের হতে বলছেন। আচ্ছা আমি যদি এখন এই কুয়াশাজড়ানো ভোরে ব্যাগ হাতে বাসার দিকে যাই, কোনো গাড়ি তো পাবোনা তাইনা? রাস্তায় হাঁটতে যাওয়া কিংবা মসজিদ থেকে ফেরা মানুষগুলো কি ভাব্বে? রোমান সিদ্দিকের মেয়ে ব্যাগ হাতে এতো সকালে কোথা থেকে আসলো? কিংবা কাল আসার সময় আমাকে যারা দেখে অলরেডি রটনা করে ফেলেছে বিয়ের আগেই আমি প্রেমিকের বাসায় ছিলাম, তাদের কেউ দেখলে কি হবে? বলুন কি হবে? একটা মেয়ের ইজ্জতের চিন্তা তো আপনার অন্তত করা উচিত! আপনিও তো একটা মেয়ে।

ইনাম আর রসিদ সাহেব চুপ করে আছে। কিন্তু জোহানা কিছুটা হাসির ভঙ্গিতে বললো,
___ইজ্জতের চিন্তা? তাও রোমান সিদ্দিকের মেয়ের মুখে! তোমার বাবার মধ্যে সেটা আছে ঊষা?

ঊষা ইনামের দিকে একবার তাকালো। তারপর জোহানার দিকে তাকিয়ে বললো,
___মাফ করবেন ইনামের সামনে কথাগুলো বলছি বলে। আমি আপনাকে শুধুই ইনামের পরিচয়ে চিনতাম না! আরেকটা পরিচয়েও চিনতাম, তবে দুটো মানুষ যে এক ছিল সেটা কাল রাতে এই বাসায় এসে জেনেছি।

জোহানা কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
___ মানে?

ঊষা নিচের দিকে চোখ করে বললো,
___অন্যদের বাবা ছোট বেলায় রূপকথার গল্প শোনায় কিন্তু আমার বাবা ছোট বেলায়ই আমাকে শুনিয়েছিল বাবার জীবনে জড়িয়ে থাকা এক নারীর গল্প, জুহির গল্প! এটা এতবার শুনেছি তারপরও যতোবার শুনি হৃদয় মুচড়ে উঠে। ছোট বেলা যখন কিছু বুঝতাম না, তখনও আমার ভীষণ মন খারাপ হতো। অভিমান করে বাবাকে বলতাম বাবা অন্য গল্প শুনাও এটা কষ্টের ! কিন্তু বড় হয়ে ইচ্ছে করেই শুনতে চাইতাম। তখন বাবার চোখের দিকে তাকালে আমার চোখেও জল আসতো। কারণ বাবা প্রতিবারই কাঁদতেন। আমার মা, আমার পুরো পরিবার, নানু বাড়ির পরিবার, আমার ছোট ভাইটা পর্যন্ত জানে এই জুহির গল্প! কিন্তু জুহি যে আপনিই এই জোহানা রসিদ, সেটা আপনার পরিবারের পরে আমার বাবা জানে। আর কাল আমি জেনেছি, আঙ্কেল দরজা খোলে যখন বলেছিল ‘জুহি কে এসেছে দেখো’ তখন। বিশ্বাস করেন আমি নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি বারবার কানকে প্রশ্ন করেছি আমি সত্যিই ভুল শুনিনি তো! কোনো কথা বলতে পারিনি৷ তারপর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন, আমি বাইরে বসে মিলালাম এতো এতোবার শুনে আসা সেই জুহি চরিত্রটা আর কারো হতে পারে না। এছাড়া আমার আর ইনামের দুজনের পরিবারের মধ্যে কোনো রকম সংঘর্ষ নেই, যার জন্য সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও বিয়ে বাতিল হবে। সেটাও দুজনের বহুদিনের সম্পর্ক থাকার পর!
তারপর বুঝলাম গল্পের মধ্যে বাবা ঠিকি বলেছিল সেদিনের পর জুহির মধ্যে বাবাকে নিয়ে ভুল ধারণা এসেছে হয়তো। কিন্তু বাবা হয়তো দুইদিনে এটা বুঝেছেন সেটা শুধু ভুল ধারণা না, বিশাল বড় এক ঘৃণার পাহাড়। যেটার একূল ওকূল নেই!
আসলে পৃথিবীতে কিছু মানুষ স্বার্থপর হয়। আর কিছু মানুষ স্বার্থপরের উপাধী নিয়ে জীবন কাটায়,যেটা নিতান্তই ওপাশের মানুষটার চোখে পড়া দৃশ্য থেকে। কিন্তু সেই দৃশ্যের পেছনের গল্পটা জানা থাকেনা অন্য প্রান্তের মানুষটার!

ইনাম হাঁ করে শুনে যাচ্ছে, তার মাথায় কিছুই যাচ্ছেনা। কিসের গল্প কিংবা তার আম্মুর সাথে জড়িয়ে কিসের চরিত্র। জোহানাও কিছু বলছেনা, এসব শুনেও যেন এই নামটা তিনি উচ্চারণ করতে ইচ্ছুক নন। কিন্তু রসিদ সাহেব এবার মুখ খুললেন। তিনি বললেন,
___ তোমার বাবার বলা গল্পটা আমাদের শোনাও ঊষা!

ঊষা জোহানার দিকে লক্ষ করে বললো,
___আমি জানিনা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে আপনার সাথে কি ঘটে গেছে! কিন্তু আমার বাবারটা জানি। আমার জানামতে আমার বাবাও সেদিনের পর আপনাকে অপরাধী মনে করে! যদিও আজ পর্যন্ত মুখ ফুটে বলেনি। কিন্তু উনার মধ্যে রাগ নেই কিংবা রাগের কারণ নেই এমনও না। যথেষ্ট কারণ আছে।

জোহানা গলা ঝেড়ে চোখ বড় করে বললো,
___তাই? যথেষ্ট কারণ? আর সেটা আমার বাবার মৃত্যুর থেকেও বেশী? আরে সেদিন আমার ভুলের জন্য আমার বাবা মারা গেছে, আমার পরিবার, আমার সমাজ আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে, ২৫ টা বছর পরিবার থেকে বিতারিত হয়ে ছায়া বিহীন হয়ে বেঁচে আছি আমি, বুঝতে পারবে তুমি আমার কষ্ট? বুঝতে পারবে আমার ভেতরের ক্রন্দন? আর এসবকিছু হয়েছিল শুধুমাত্র একটা প্রতারককে ভরসা করতে গিয়ে বুঝলে?!

এটা শুনে ঊষা আৎকে উঠে। হয়তো সে এতোটা সিরিয়াস কিছু ভাবেনি। জোহানা কাঁদছে, ঊষা রসিদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তিনিও কাঁদছেন,আর ইনামও! ইনাম এর আগে এতকিছু জানতোনা আর জানতে চায়ও নি। আজকে সে ভীষনভাবে অবাক থেকে অবাকতর হচ্ছে!

ঊষা নিজেও চোখের পানি হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বললো,
___আপনার শুধু এতটা রাগ নয় তার চেয়ে বেশি রাগও এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য! হ্যাঁ এটা আপনার জায়গায় থাকলে প্রতিটা মানুষ করতো এবং করবে! তবে আপনার বাবা হয়তো সেদিন মারা গিয়েছিল, কিন্তু আমার বাবাও সেদিন মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখে এসেছে। আপনি ২৫ বছর ধরে পরিবার থেকে বিতারিত, আর বাবা স্বাভাবিক জীবন থেকে! আপনি জানেন? আমার বাবা খোঁড়া, পা টেনে টেনে হাঁটে! আর উনার ডান হাতে ভালো করে বশ পান না! এই হাতে কোনো কাজ করতে পারেননা। কারণ সেই হাতের ভেতরে হাড় বলতে কিছু নেই!

এটা শুনে জোহানা রসিদ সাহেবের দিকে তাকালেন, রসিদ সাহেব মাথা নেড়ে বুঝালেন ঊষার কথা সত্যি।
কারণ এটা তিনি এক দুইবারের দেখায় খেয়াল বিষয়টা করেছেন। জোহানা তারপর আবার ঊষার দিকে তাকালেন।

ঊষা বলতে লাগলো,

___ বাবা সেদিন নিজের জমানো আর বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ধার নিয়ে দাদুর গয়নাসহ আশি হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন। তখনকার সময় আশি হাজার টাকার কদর নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়। রাত ৪ টা তখন, যখন বাবা রওয়ানা দিয়েছিল। এই সময় চলাচলে ততটাও ভয় পেতোনা মানুষ। কিন্তু যারা আমার বাবাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল তারাই লোক লাগায় টাকা হরণ করার, পালানোর পরে কোন বাসায় উঠবে সেটার কথা বলতে অন্ধকারে কয়েকজন লোক বাবার কাছে আসে, ভুলিয়ে লোকালয় থেকে দূরে আনে, নদীর পাড়ে! তারপর যা আছে সবকিছু দিয়ে দিতে বলে, কিন্তু বাবা তখন জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল কিন্তু টাকা দিতে প্রস্তুত ছিল না, তিনি ভেবে রেখেছেন খরচের জন্য ৩০ হাজার রেখে দিবেন, আর ৫০ হাজারে কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন, আর ঋণগুলো আস্তে আস্তে শোধ করবেন। তার মধ্যে দুই পরিবার মেনে নিলে তো কথাই নেই।
কিন্তু বাবার সেই স্বপ্নটা কয়েক মিনিটে বালিতে মিশিয়ে দিয়েছিল তারা, শুধু স্বপ্ন নয় আমার বাবাকেও তারা টাকা না দেওয়ার জন্য এতো মেরেছে শেষ পর্যন্ত তারাও ভেবে নিয়েছিল বাবা মরে গেছে। বালির মধ্যে নিতর দেহটা আধচাপা দিয়ে সবকিছু নিয়ে চলে গিয়েছিল সবাই। এদিকে নাকি লোকজন তখন কম যেতো কিন্তু আমার বাবার ভাগ্য সেদিন নৌকায় করে ভোরে এদিকে বেদেরা আসছিল, তারা জনমানবহীন একটা জায়গার খোঁজ করছিল। সেই জায়গাটাই তাদের পছন্দ হয়েছিল তাই সকাল সকাল তাবু গড়ার কাজ শুরু করে, তাদের মধ্যেই খুঁটি বসাতে গিয়ে একজন বাবার নির্মম দেহ দেখে চিৎকার করে উঠে, কেউ কেউ বলছিল মরে গেছে আবার কেউ কেউ বলছিল বেঁচে আছে। তারা সকলে মিলে সদর হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে আসে। বাবার সারাশরীর খুঁজে ছোট্ট ফোনটা পেয়েছিল তারা। যেটা আঘাত লেগে ভেঙে গেছিলো। অন্য ফোনে সিম লাগিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সেখানকার মানুষ । চিকিৎসার দুইদিন পরে নাকি বাবার জ্ঞান ফিরেছিল, কিন্তু জ্ঞান ফিরার পরে বাবা সর্বপ্রথম বলেছিলেন জুহি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। কে বা কারা এই অবস্থা করেছে সেই প্রশ্ন নিয়ে চারপাশ মুখরিত থাকলেও বাবার মুখে শুধু জুহি জুহি। তারপর বাবাকে সেখান থেকে নিয়ে ভালো হাসপাতালে ইমারজেন্সি অবস্থায় চিকিৎসা করে তিনমাস। এর মধ্যে বাবার জ্ঞান ফিরলেই নাকি বাবা জিজ্ঞাসা করতো জুহি ফোন দিয়েছে কিনা! বাবাও ফোন দিয়েছেন ঘরের কোন নাম্বারে নাকি ছিল কিন্তু সেটার লাইন আর খোলা পায়নি। বাবা ভাবতেন আপনি ঠিক ফোন দিবেন,হয়তো অন্য কোনো নাম্বার থেকে। বাবার কাছে আপনার সাথে যোগাযোগের রাস্তা না থাকলেও আপনি তো বাবার নাম্বার জানতেন তাইনা? কিন্তু বাস্তব তো এটাই আপনার থেকে বাবা আর ফোন পায়নি। আপনি জানতেও চাননি সেদিন বাবা কেন আসলেন না। বাবার গল্পে এই কথাটা বলার সময় তিনি সবসময় কেঁদে ফেলেন। এতেই বুঝি আপনার উপরও বাবার রাগ আছে,কিন্তু বাবা সেটাকে অপরাধীর কাতারে নেন না। সবসময় বলেন সে হয়তো আমাকে ভুল বুঝেছে তাই নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নিয়েছে।
তারপর বাবাকে চিকিৎসাকালীন ডক্টররা বলেছিল বাবার এক পা পুরোপুরি অচল হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে এক বছরে তিনি পা টেনে টেনে লাঠি ছাড়াই হাঁটতে পারেন, কিন্তু দ্রুত হাঁটা কিংবা পা দিয়ে ভর করে ভারী কাজ করা সম্ভব হয়না। আর ডান হাতে তো কোনো কিছু জাস্ট স্পর্শ করতে পারেন, ১০ গ্রামের কিছুও উঠাতে পারেন না।
সম্পদ বিক্রি করে বাবার ধার করা টাকা দাদা শোধ করেছিল!
সুস্থ হওয়ার পর থেকেই দাদু দাদা বাবাকে বিয়ের জন্য জোর করতেন, কিন্তু উনি জুহি জুহি করতেন।
তবে বাবার এই অবস্থায় কেউ মেয়ে দিতেও রাজী ছিল না। কিন্তু দাদাভাই যখন খুব অসুস্থ ছিলেন তিনি শেষ ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন বাবা যেন উনার মৃত্যুর আগে পুত্রবধূর মুখ দেখান। শেষ সময়ে বাবা আমার মাকে বিয়ে করেন, কিন্তু আমার মা ছিল একটা গরীব পরিবারে বেড়ে উঠা কিশোরী অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু যৌতুক না দিতে পারায় ডিভোর্স হয়েছিল মায়ের। পরবর্তীতে বাবার সাথে বিয়ে হয়। নয়তো টাকাপয়সার খাতিরেই ভালো জায়গায় বিয়ে করা বাবার ক্ষেত্রে তখন সম্ভব ছিল না। তবে সেই অবস্থাতেও আস্তে আস্তে অদম্য চেষ্টা আর ইচ্ছে শক্তিতে আজ আমার বাবাও একজন স্বাবলম্বী পরিবারের কর্তা! আর অনেক বছর পরে বাবা জানতে পেরেছিলেন বাবার এই অবস্থার পেছনে বাবার খুব বিশ্বস্ত বন্ধুর হাত ছিল, কিন্তু ততদিনে সে এক্সিডেন্টে মারা যায়। সত্যিই যারা অপরাধ করে তারা শাস্তি পায়, আপনার কাছে আমার বাবাও অপরাধী তাই মেয়েকে দিয়ে সেই শাস্তি ঠিক ঠিক পেয়ে যাচ্ছেন!

চোখভর্তি পানি নিয়েই একটু হাসার চেষ্টা করে ঊষা সবার দিকে একবার করে তাকালো।
সবাই-ই কাঁদছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তু ঊষা বুঝতে পারছেনা, তার চোখ ঝাপসা লাগছে! সে পেছনে পা পিছাতে পিছাতে বললো,

___অনেক কিছুই থাকে অজানায়। যেমনটা আপনার বাবার মৃত্যু! আমার বাবা হয়তো এখনো এটা জানেনা, জানলে তিনিই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। শাস্তি তো আমরা পাবো, তবে প্লিজ আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমার বাবাকে মাফ করে দিয়েন। আর আমাকেও! রাগের বশে খারাপ আচরণ করেছি। ইনাম আমি জোর করে তোমাদের জীবনে আসতে চাইনা। সত্যিই চাইনা!

ঊষা দৌঁড়ে রুমে চলে গেলো। সবাই চুপ করে এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। বাইরে সূর্য উঠে চারপাশ আলোকিত, কিন্তু এই ঘরের মানুষদের সারাময় আঁধার, সাথে শোরগোল থেকে হঠাৎ নিরবতা! বাইরের কিরণটা ঝলমলিয়ে আজকে কারোর ছায়া তৈরি করছেনা, কেমন যেন সেও তাদের থেকে দূরে থাকতে চায়ছে! আর বলতে চায়ছে এখানে সে আজ বড্ড বেমানান!
ঊষা ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে বললো,
___এখন অনেক বেলা হয়েছে, আমার সমস্যা হবেনা যেতে! আর হলেও কি,লোকে বললেই কি। যা হওয়ার ছিল তা আগেও ভাগ্য ফেরাতে পারেনি আর এবারও পারবেনা। অতীত বর্তমানের আশেপাশে না আসুক । বিদায় আম্মু, শেষবার ডাকা হয়তো। বিদায় ইনাম।

দরজা খোলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো ঊষা। অন্যদিকে রসিদ সাহেব আর ইনাম তাকিয়ে আছে জোহানার দিকে!

(সমাপ্ত)