জল-ফড়িঙের খোঁজে পর্ব-১৯+২০

0
491

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৯
.

তুর্বী চুপচাপ বসে একটা মডেল ড্র করছে আর আড়চোখে মাঝেমাঝে সৌহার্দ্যকে দেখছে। আজ সৌহার্দ্যর কেবিনে বসে বসেই কাজ করছে এই। এই প্রজেক্টে ও নতুন তাই সৌহার্দ্যর কাছে বসেই সবটা বুঝে নিচ্ছে। বেশ অনেকটা সময় কাজ করার পর লম্বা একটা হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙল তুর্বী। সৌহার্দ্য চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। নিজের বসের সামনে বসে এমন করে কেউ? এমন কেন মেয়েটা? তুর্বীর চোখ সৌহার্দ্যর দিকে পরতেই দ্রুত ঠিকঠাক হয়ে বসল ও। লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে তাই ক্যান্টিন থেকে ও দুজনের জন্যেই খাবার আনালো সৌহার্দ্য। দুজনে একসাথেই খেতে শুরু করল। খাওয়ার মাঝে হঠাৎ করেই তুর্বী বলে উঠল,

” আচ্ছা স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”

সৌহার্দ্য চামচ মুখের কাছে নিয়েও সরিয়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে তাকাল তুর্বীর দিকে। তুর্বী হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

” না মানে আমিতো জাস্ট এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম। এখন তো আর কাজ করছিনা তাই।”

বলতে বলতে গলার আওয়াজ কমে এল ওর। সৌহার্দ্য দুই হাতের ওপর নিজের থুতনি রেখে বলল,

” আমি তোমার বন্ধু? নাকি বেয়াই যে এসব গল্প করতে চাইছ আমার সাথে?”

তুর্বী উৎসাহিত হয়ে বলল,

” হতে সমস্যা কোথায় বলুন। দেখুন যেকোন সম্পর্কের সাথে যদি বন্ধুত্বের সম্পর্ক মিশে থাকেনা তাহলে সম্পর্কটা পারফেক্ট হয়। যেমন আপনার আর আমার মধ্যে বস এম্প্লয়ীর সম্পর্ক। এখন যদি তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কও মিশে যায় তাহলে আমাদের বস এম্প্লয়ীর সম্পর্কটাও পারফেক্ট হবে।”

সৌহার্দ্য চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল,

” তোমার বলা শেষ?”

” বলুননা গার্লফ্রেন্ড আছে?”

” সেটা জেনে তুমি কী করবে?”

” নাহ এমনিই জানার জন্যে।”

সৌহার্দ্য আবার খাওয়া শুরু করে বলল,

” চুপচাপ খাও, লাঞ্চ টাইম শেষ হয়ে যাবে।”

” স্যার বলুন না।”

সৌহার্দ্য এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলল,

” তুর্বী চুপচাপ খাও।”

তুর্বী কোন কথা না বলে মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ খেতে শুরু করল। সৌহার্দ্যর খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। ও গালে হাত দিয়ে দেখছে তুর্বীকে দেখছে। ও জানে তুর্বী কেন এই প্রশ্ন করেছে। এখন তাহলে নিজের রিলেশনশীপের এক্সপিরিমেন্ট করতে বলির বাকরা ওকেই বানাতে চাইছে তুর্বী? ভাবতেই প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে ওর। তবুও অনেক কষ্টে হাসিটা আটকে মুখে গাম্ভীর্য রেখে দিয়েছে।

_____________

ব্যাংক থেকে বেড়িয়ে মার্কেটে ঢুকেছে রিখিয়া। টুকটাক কিছু জিনিস কিনতে হবে ওকে। দোকানে ঘুরে ঘুরে জিনিস কিনছে আর নাকের নিচের ঘামটা মুছে নিচ্ছে ও। হঠাৎ করেই মাথায় কেউ টোকা মারতেই অবাক হয়ে পেছনে ফিরে তাকাল রিখিয়া। তাকিয়ে দেখে বিহান দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি মুচকি হাসছে সে। রিখিয়া হেসে দিয়ে বলল,

” আপনি এখানে?”

” এসছিলাম কাজে। ভাগ্যক্রমে তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল।”

বলে রিখিয়ার হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে রিখিয়া হাটতে শুরু করল, বিহানও হাটছে ওর পাশেপাশে। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভালো আছেন?”

” হুম আছিতো। তোমার কী খবর?”

” এইতো চলে যাচ্ছে।”

” তুর্বী কেমন আছে?”

” হুম ভালো।”

” কী খাবে বল?”

” না না কিছুই খাবো না।”

” সেটা বললে হবেনা । খেতে হবে। কারণ আমার এখন খিদে পেয়েছে। আর আমি আগেও বলেছি আমার একা খেতে ভালো লাগেনা।”

” পাগল আপনি?”

” হ্যাঁ ওই একটুখানি। বেশি না।”

রিখিয়া হেসে দিল, বিহানও হাসল। হাটতে হাটতে ওরা ওখানেরই একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট টাইপ দোকানে বসল। রোল আর চা ওর্ডার করল দুজনেই। রিখিয়া কিছু বলছেই না, বিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” ইউ নো তুমি অনেকটা ডাউন টু আর্থ টাইপ! আজকালকার দিনে এরকম খুব একটা দেখা যায় না। বাট ইউ নো আই লাইক ইট!”

রিখিয়া একটু হাসল। বিহান আবারও বলল,

” আচ্ছা তোমার বিএফ বা এইটাইপ কিছু আছে?”

রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

” কেন বলুন তো?”

” এমনিই জানতে চাইলাম। না বলতে চাইলে সমস্যা নেই আই ওন্ট মাইন্ড।”

রিখিয়া হেসে দিয়ে বলল,

” বলার মত তেমন কিছুই নেই। আমার ওসব নেই।”

বিহান উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,

” আমার আগেই মনে হয়েছিল আমার কাছে তুমি এমন কিছুই বলবে।”

রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

” মানে?”

” মানে তোমাকে দেখে সেরকম মেয়ে মনে হয়না সেটাই বললাম।”

রিখিয়া এবার কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,

” আপনার জন্যে একটা জিনিস আছে।”

বিহান অবাক হয়ে বলল,

” আমার জন্যে?”

” হুম কিছু দেওয়ার ছিলতো? আমি এমনিতেও আপনার সাথে দেখা করতাম কিন্তু আজ দেখা হয়ে গেল। তাই দিয়ে দেওয়াই ভালো।”

বিহান এক্সাইটেড হয়ে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ দেখাও কী এনেছ।”

রিখিয়া ওর ব্যাগের ভেতর থেকে একটা বড় প্যাকেট বাড় করে বিহানের কাছে দিল। বিহান বেশ উৎসাহ নিয়েই প্যাকেটটা খুলল। প্যাকেটটা খুলে বেশ অবাক হলো। কারণ একবক্স রঙের টিউব আর তুলি আছে। বিহানের সত্যিই খুব পছন্দের জিনিস এগুলো। ও হাসি মুখে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই রিখিয়া বলল,

” আপনার তো পেন্টিং করতে খুব ভালোলাগে তাইনা? তাই এটা আপনার জন্যে।”

বিহান প্যাকেটটা নিজের কাছে রেখে বলল,

” থ্যাংক ইউ।”

রিখিয়া একটু আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল,

” আচ্ছা আপনি কখনও কোন মেয়ের ছবি এঁকেছেন?”

বিহান বেশ অনেকটা সময় চিন্তা করার ভান করে বলল,

” এখনও তো না। কিন্তু যদি কোনদিন আঁকি তাহলে তোমার টাই আঁকব। প্রমিস।”

রিখিয়া একটু লাজুক হাসল। বিহান বলল,

” তবে একটা সমস্যা আছে।”

” কী সমস্যা?”

” লোকে বলবে অবশেষে আমি একটা পেত্নীর ছবি এঁকেছি।”

রিখিয়া অবাক হয়ে তাকাল বিহানের দিকে। তারপর বিহান গায়ে তিন চারটা কিল মারল। বিহান হাসছে শব্দ করে। রিখিয়াও একপর্যায়ে হেসে দিল।

______________

দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে। একয়েদিনে অনেককিছু বদলেছে। রিখিয়া আর বিহানের সম্পর্ক অনেক নরমাল হয়েছে। বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ওদের। বলতে গেলে তার চেয়েও বেশি কিছু। আর ওপরদিকে তুর্বী আর সৌহার্দ্যর বস এম্প্লয়ীর সম্পর্ক না বদলালেও তুর্বী নিজের অদ্ভুত বিহেভিয়ার দিয়ে বেশ জালিয়েছে ওকে। তবে ওপর দিয়ে রেগে যাওয়ার ভান করলেও মনে মনে বেশ এঞ্জয় করে তুর্বীর এসব বিহেভিয়ার। আজ ওদের প্রজেক্টের ফার্স্ট মিটিং হচ্ছে। প্লান প্রেজেন্ট করা হয়ে গেছে সবাই মিলে সেই নিয়েই সৌহার্দ্যর সাথে ডিসকাস করছে। এরমধ্যে হঠাৎ করেই তুর্বী বলে উঠল,

” স্যার? আমার মনে হয় আমাদের প্লানে একটু চেঞ্জ অানা দরকার।”

সবাই সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল তুর্বীর দিকে। এত দক্ষ আর্কিটেক্টদের প্লানে চেঞ্জ আনতে চাইছে এই মেয়েটা? তাও এত কমদিন জয়েন করে। সৌহার্দ্যও অবাক হচ্ছে। কিন্তু বলার সুযোগ তো দিতে হবে তাই বলল,

” কীরকম চেঞ্জ?”

তুর্বী বলল,

” স্যার আমাদের অফিসের স্টাফ রুমটার যেই ডিজাইন করেছি সেটা আরেকটু কমফরটেবল করা উচিত যাতে এম্প্লয়ীরা অফিসে একটু রিল্যাক্সে কাজ করতে পারে।”

সৌহার্দ্য চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল,

” কীরকম?”

তুর্বী এবার ওনাদের বিভিন্ন কিছুর সাথে কম্পেয়ার করে, এক্সামপল দিয়ে সবটা বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু কেউ বুঝতে পারল না। এমনকি সৌহার্দ্যও না। ওর পয়েন্ট কারো কাছেই ক্লিয়ার না। কারণ তুর্বী সব উট্কো এক্সামপশ দিচ্ছে যেমন, ওয়াসরুম, নাইট ক্লাব ইত্যাদি টাইপ। সৌহার্দ্য ভাবল এবারও হয়ত তুর্বী ফালতু টাইম ওয়েস্ট করছে এস ইউসয়াল। তাই হুট করেই ধমক দিয়ে বলল,

” স্টপ ইট!”

তুর্বী কেঁপে উঠল হালকা। সৌহার্দ্য রাগী গলায় বলল,

” এটা অফিস! তোমার মজা করার জায়গা না। কাজ করতে ইচ্ছে হলে কর নয়ত ছেড়ে দাও চাকরি। সবকিছু সবার জন্যে না। আর সবকিছু নিয়ে মজা করাও ঠিক না। এত মজা করার শখ থাকলে সার্কাস জয়েন কর। ইটস বেটার ফর ইউ।”

তুর্বী আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে ওর ওপর। তুর্বী কিছু না ফলে ওর ব্যাগ হাতে নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।

#চলবে…

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২০
.

তুর্বী চলে যাওয়ার পর সৌহার্দ্য নিচের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। এরপর চারদিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখল সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। সৌহার্দ্য বুঝতে পারছে যে একটুবেশিই রুড হয়ে গেছে ও মেয়েটার সাথে। কিন্তু এখনতো আফসোস করে লাভ নেই। যা করার তা তো করেই ফেলেছে। মেয়েটা একটু দুষ্টুমি করে ঠিক আছে তাই বলে এভাবে সবার সামনে ইনসাল্ট করাটা ঠিক হয়নি। ওর সাথে কথা বলতে হবে। সৌহার্দ্য সবার দিকে তাকিয়ে একটা গম্ভীর স্বরে বলল,

” স্টপ লাফিং।”

সবাই সাথেসাথেই চুপ করে গেল। সৌহার্দ্য পুনরায় একই স্বরে বলল,

” মিটিং আজকের মত ক্যান্সেল।”

এটুকু বলে সৌহার্দ্য উঠে বেড়িয়ে গেল কনফারেন্স রুম থেকে। বেড়িয়ে প্রথমে নিজের কেবিনে গিয়ে ল্যাপটপ রেখে এরপর সোজা স্টাফ রুমে চলে গেল তুর্বীর সাথে কথা বলতে। কিন্তু তুর্বীর ডেস্কে গিয়ে দেখে তুর্বী নেই। তুর্বীকে দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হল সৌহার্দ্য। তাহলে কী অফিস থেকে বেড়িয়ে গেছে নাকি মেয়েটা। সৌহার্দ্য দ্রুত নিজের ফোন বেড় করে তুর্বীর নম্বরে ডায়াল করল। কিন্তু তুর্বীর ফোন রিসিভ করছে না। বারবার ডায়াল করার পরেও কোন লাভ হলোনা। ফোন বাজছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। সৌহার্দ্য নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে লম্বা একটা শ্বাস ফেলল। মিস ভয়ংকরী ভীষণ ক্ষেপেছে। রাগ ভাঙনো এবার মুশকিল হবে। কী কী করতে হবে কে জানে? ‘ অল দা বেস্ট সৌহার্দ্য বেটা’ নিজেই নিজেকে এই কথাটা বলে সান্ত্বনা দিল সৌহার্দ্য।

তুর্বী সিএনজির পেছনে বসে বসে একটু পরপর নাক টানছে। ওর নাক লাল হয়ে আছে। কিন্তু ওর চোখে জল নেই। তুর্বী যখন কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করে তখন ওর চোখ আর নাক এমন লাল হয়ে যায়। ফোন বেজে চলেছে অনেক্ষণ যাবত কিন্তু তুর্বী ধরছে না দেখছেও না কে ফোন করেছে। প্রচন্ড রেগে আছে ও। ও এমনিতে কেমন ও জানেনা। কিন্তু নিজের কাজ নিয়ে ও যথেষ্ট সিরিয়াস। ও ওর ক্যারিয়ার নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। আর তাছাড়াও এটা ওর স্বপ্ন। আর ওর স্বপ্নটা যে ওর কাছে কী সেটা একমাত্র ওই জানে। সেখানে ঐ লোকটা ওকে সবার সামনে এভাবে কীকরে বলল? এভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে ওর কোন যোগ্যতাই নেই। আচ্ছা? সত্যিই কী সব ভুলভাল বকছিল? ওর কোন যোগ্যতাই নেই? সিএনজির ড্রাইভার বলল,

” ম্যাম স্টানে চলে এসছি এবার কোনদিকে যাবো?”

তুর্বী রেগে বিরক্তি নিয়ে বললেন,

” জাহান্নামে চলুন।”

” অ‍্যা?”

” হ্যাঁ। জাহান্নামের রাস্তা চেনেন? চিনলে সেদিকেই চলুন।”

সিএনজি ড্রাইভার বোকার মত তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। কিছুক্ষণ পরও যখন সিএনজি চলছেনা তখন তুর্বী প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে চলুন? হা করে দেখছে।”

ড্রাইভারও এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

” কোনদিকে যাবো?”

তুর্বী আগের চেয়ে দ্বিগুন রেগে বলল,

” ডানে চলুন না ভাই।”

ড্রাইভার চোখ ঝাপটে একটা লম্বামত শ্বাস ফেলল। তারপর ডানে টার্ন করল। কিন্তু মনে মনে ভাবছে য‍ে কোন পাগলকে এনে গাড়িতে তুলেছে ওপরওয়ালা জানেন। তুর্বীর সেদিকে কোন পাত্তা নেই ও ওর মত বসে রাগে ফুসছে আর কান্না আটকে রাখার জন্যে জোরে জোরে নাক টানছে।

______________

রিখিয়া আর বিহান একটা পার্কে পাশাপাশি বসে বসে বাদাম খেতে খেতে মাঝেমাঝে হালকাপাতলা গল্প করছে। বিহান নিজেই বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে রিখিয়াকে। রিখিয়া বিকেলবেলা অফিস থেকে বেড়োনোর পরই দেখেছে বিহান দাঁড়িয়ে ওর জন্যে অপেক্ষা করছে। এটা এখন মাঝেমাঝেই হয়। ওরা মাঝমাঝেই একেওপরের সাথে ঘোরে, দেখা করে, সময় কাটায়। আজও এখানে এসছে সময় কাটাতে। কিছুক্ষণের নিরবতার পর বিহান বলল,

” আচ্ছা তোমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছে নেই আপাতত?”

রিখিয়া একটু অবাক হয়ে বলল,

” বিয়ে?”

” হ্যাঁ বিয়ে। এখনতো তুমি জব করছো। মোটামুটি সেটেল হয়ে গেছ লাইফে। এবার একটা পার্টনার খুঁজে নিতে হবে তাইনা?”

রিখিয়া মুচকি একটুখানি হেসে বলল,

” সবসময় চাইলেই কী বিয়ে করে ফেলা যায়?”

” কেন যাবেনা কেন?”

রিখিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমারটা ছাড়ুন। আপনিও তো এখনও বিয়ে করেন নি। আপনিও তো করতে পারেন।”

” কালসাপ ঘরে তুলতে বলছ?”

রিখিয়া চমকে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কীহ?”

বিহান রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটু হেসে বলল,

” হুম, আর তাদের সেই বিষ কালসাপের বিষের চেয়েও ভয়ংকর। এতটাই ভয়ংকর যে না মেরেও সারাজীবনের মত মেরে দেয়। শ্বাস তো চলে কিন্তু দেহে প্রাণ থাকে না।”

রিখিয়া ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। কী বলতে চাইছে? কালসাপ কাদের বলছে? মেয়েদের? রিখিয়ার মুখ দেখে সাথেসাথেই শব্দ করে হেসে দিল বিহান। কোনমতে নিজের হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল,

” আরে ইয়ার আই ওয়ার জাস্ট কিডিং। আমার কথা এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন?”

রিখিয়া লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বিহানের কাধে একটা চাপড় মেরে বলল,

” এরকম করে কেউ? কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

বিহান এখনও হাসছে। বিহানের হাসি দেখে রিখিয়াও হেসে দিল। হাসার সময় কত সুন্দর লাগে ছেলেটাকে তাকিয়েই থাকতে মনে চায়। কিছুক্ষণ হাসার পর হাসি থামিয়ে বিহান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” চল ওঠো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ফিরবে না?”

রিখিয়াও হ্যাঁ বলে উঠে দাঁড়াল। দুজনে কিছুক্ষণ হাটার পর হঠাৎ করেই একটা মেয়ে এপ্রকার দৌড়ে এল বিহানের কাছে। আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

” বিহান! এখানে কী করছ তুমি? তুমি সেই বলেছিলে ফোন করবে কিন্তু এখনও করনি।”

রিখিয়া চোখ ছোট ছোট করে দেখছে দুজনকে। বিহান মেকি হেসে মেয়েটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে রিখিয়ার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে নিয়ে বলল,

” না আসলে ইদানিং একটু বেশিই ব্যস্ত থাকি তো তাই। সরি হ্যাঁ?”

” আরে ছাড়োতো। আজ ফ্রি আছোতো? আসব তোমার ফ্লাটে?”

বিহান কী বলবে বুঝতে পারছেনা বারবার শুধু রিখিয়াকে দেখছে। রিখিয়ার এবার প্রচন্ড পরিমাণ রাগ হচ্ছে। কিন্তু কেন রাগ হচ্ছে সেটা জানেনা তবে মেয়েটার বারবার বিহানের গায়ে পরতে দেখে মাথা গরম হয়ে উঠছে ওর। ও তো ভেবেছিল বিহান বদলে গেছে। কিন্তু এখনও কী এরকমই আছে। মেয়েটা রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আর ও কে? তোমার সাথে এখানে কী করছে?”

রিখিয়া দাঁত করমর করে বিহানের দিকে একটু তাকিয়ে কোন কথা না বলে লম্বা লম্বা পা ওখান থেকে চলে গেল। বিহান ঐ মেয়েটাকে বলল,

” আমি আসছি। বাই।”

মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিখিয়ার পেছনে ছুটলো। বিহান পেছন থেকে রিখিয়াকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু রিখিয়া শুনছে না নিজের মত করে হেটে যাচ্ছে। বিহান দৌড়ে দৌড়ে রিখিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাফানো কন্ঠে বলল,

” আরে দাঁড়াও। এত জোরে হাটো কীকরে? আ’ম টায়ার্ড।”

রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,

” পথ ছাড়ুন।”

বলে যেতে নিলেই বিহান আবার পথ আটকে বলল,

” আরে আমার কথাটাতো শুনবে ইয়ার!”

” কী শুনবো হ্যাঁ? আপনি আমাকে বলেছিলেন যে আপনি এখন এসব আর করেন না। কিন্তু আপনিতো একটুও বদলান নি। একচুয়ালি আপনার মত ছেলেরা বদলায়ও না। ভুলটা আমার ছিল যে আমি ভেবেছিলাম আপনি সুধরে গেছেন।”

বলে রিখিয়া যেতে নিলেই বিহান ওর হাত চেপে ধরে কাছে এনে বলল,

” কী ভাব নিজেকে? একাই দেখবে? একাই শুনবে? একাই বুঝবে? একাই বলবে? আরে আমাকেও তো এক্সপ্লেইন করতে দেবে? মেয়েটা কী বলেছে কানে শোননি? অনেকদিন হল যোগাযোগ করিনা ওর সাথে। মানেটা বুঝতে পারছ না? এগুলো সব পাস্ট। আরে আমার তো ওর নামটাও মনে নেই ইয়ার।”

রিখিয়ার এবার হাসি পাচ্ছে। মেয়েটা যদি শোনে বিহানের ওর নামটাও মনে নেই নিশ্চয়ই হার্ট এটাক করবে। বিহান বলল,

” কী হল এখন দাঁড়িয়ে আছ কেন যাও?”

রিখিয়া খানিকটা ইতস্তত করে বলল,

” আসলে..”

” কোন আসলে নকলে নয়। এক মিনিট।”

বলে রাস্তা থেকে একটা সিএনজি থামিয়ে একপ্রকার জোর করেই রিখিয়াকে তুলে দিল। রিখিয়া এত করে কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু বিহান শুনলোই না। বরং ড্রাইভারকে বলে সিএনজি চালাতে বলে দিল। ড্রাইভার গাড়ি চালিয়েও দিলেন। রিখিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আসলেই ও একটা গাধা। কিছু না বুঝে শুনেই রিঅ‍্যাক্ট করে ফেলে। বিহান তো রেগে গেছে এখন রাগ কীকরে ভাঙাবে কে জানে?

#চলবে…