জল-ফড়িঙের খোঁজে পর্ব-৯+১০

0
531

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৯
.
হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা একটা আবছা অন্ধকার রুমে বিছানায় ফেলে রাখা হয়েছে তুর্বীকে। অনেকক্ষণ যাবত ছটফট করে যাচ্ছে আর চেঁচাচ্ছে কিন্তু কেউ আসছে না।কোথায় আছে সেটাও জানেনা কারণ চোখও বাঁধা। তবুও নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে ও আর বার বার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ওকে ছেড়ে দিতে বলছে সাথে কিডন্যাপার এর চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ভার করে দিচ্ছ। তার সাথে এটাও ভাবছে যে ওকে কে কিডন্যাপ করল? আর কেনই বা করল? ও তো কোন বড় মন্ত্রী বা ব্যবসায়ীর মেয়ে নয়। খুবই সাধারণ একটা মেয়ে। ওকে ধরে এনে কার কী লাভ? পাচার-টাচার করে দেবেনা তো ওকে? তাহলে তো আশেপাশে আরো মেয়ে থাকতো। অফিস থেকে বেড়িয়ে স্টান্ডের দিকেই যাচ্ছিল ও। কিন্তু তার আগেই একটা গাড়ি এসে ওর পথ আটকায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ি থেকে কিছু লোক বেড়িয়ে এসে লোকগুলো ওকে গাড়িতে তুলে মুখ, হাত বেঁধে ফেলে। বেশিক্ষণ চেচানোর সুযোগ হয়নি ওর। এরপর ওকে এই রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে পা টাও বেঁধে দিয়েছে। মুখটা খুলে দিল যাতে কোন কিছু হলে বলতে পারে। বাঁধার সময় ও বারবার চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছিল, ওরা কারা? কেন তুলে এনেছে? কী মতলব? কিন্তু তারা কোন উত্তর না দিয়েই বাইরে চলে গিয়ে দরজাটা লক করে দিল। বেশ কিছুক্ষণ অযথাই ছটফট আর চেঁচামেচি করে নিজেই থেমে গেল ও। এখন শুধু অপেক্ষা করছে ওর কিডন্যাপার আসার। কারণ ও শুনেছে লোকগুলোর কাছে কেউ বলেছে ওকে কিডন্যাপ করতে। ওও জানতে চায় যে ওর মত অনাথ একটা মেয়েকে তুলে এনে কার কী লাভ হল? ও মরে গেলেও তো কারো কিছু যায় আসবে না রিখিয়া ছাড়া। এতো পরিশ্রম করে ওর মত ইউসলেস একটা মেয়েকে তুলে আনার মত বোকামি কে করল? সেটা জানার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে ওর। আর তুলে এনেছে ভালো কথা, এভাবে বেঁধে রাখারই বা কী ছিল? কিছু খাবার জিনিস দিয়ে গেলেও তো হতো। বসে বসে খেতে খেতে টাইমপাস করতে পারত। কিন্তু এখন ওকে মূর্তির মত বসে থাকতে হচ্ছে। যেই ওকে কিডন্যাপ করেছে লোকটা মহা কিপটে, সাথে বোকাও। নাহলে এমন গাধার মত কাজ করে? কিডন্যাপার কখন আসবে সেটাও জানে না ও। কতক্ষণ থাকা যায় এভাবে? আসছে না কেন? রিখিয়াও নিশ্চয়ই প্রচন্তরকম টেনশন করছে। এসব ভেবে ভেবেই মেজাজ প্রচন্ডরকম খারাপ হচ্ছে ওর। এদিকে প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে ওর। খুবই বিরক্ত লাগছে ওর এখন। কিছু না ভেবেই ও ওভাবেই বিছানায় শুয়ে পরল। অফিসের কাজ করে টায়ার্ড ছিল তারওপর এমন ধকলে ক্লান্তও ছিল। তাই কিডন্যাপারের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরল ও।

সৌহার্দ্য বাড়ি থেকে সবে বেড়োলো ফার্মহাউজের উদ্দেশ্যে। মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসছে সেই কখন, কিন্তু ওই এখনও পৌছতে পারল না। কাজের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পরেছিল ও। তাই দেরী হল। তুর্বীকে কিছুটা হলেও চিনেছে ও। মেয়েটা ওখানে কী কান্ড ঘটাচ্ছে কে জানে? সকালের পর বিহানের সাথেও দেখা হয়নি ওর। ঐ ছেলে আবার কোথায় কী করছে সেটা বিহানই জানে। এসব ভাবতে ভাবতে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।

_______________

রিখিয়া রাস্তা দিয়ে পাগলের মত এদিক ওদিক হাটছে আর বারবার ফোন করে যাচ্ছে তুর্বীর নাম্বারে। কিন্তু তুর্বীর ফোন বন্ধ বলছে। টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে রিখিয়ার। রাত পোনে একটা বাজে এখন। তুর্বীর খুব বেশী দেরী হলে এগারোটা বাজে। তাও সেরকম হলে ফোন করে জানায় রিখিয়াকে। কিন্তু আজ ফোন না করায় টেনশন হলেও মনে করেছে ফোন বন্ধ হয়ত। কিন্তু এগারোটার বেশি বাজাতে রিখিয়ার টেনশন বেড়ে যায়। ও তুর্বীর অফিসে ফোন করে জানতে পারে তুর্বী অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে। এবার রিখিয়ার রিতীমত ভয় হচ্ছিল। বারোটা বাজার পর ও আর ফ্লাটে থাকতে পারেনি। ঐ রাতেই বেড়িয়ে গেছে বাইরে। তুর্বীর অফিসের রাস্তা দিয়ে পায়ে হাটতে হাটতে দেখছে ওও। গাড়িতে গেলে খুঁজতে সমস্যা আছে। মাথা খাজ করা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ওর। ওর মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হল তুর্বীকে খুঁজে পেতে হবে, সেটা যেকোন মূল্যে। মেয়েটা যে বড্ড চঞ্চল, যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়? তুর্বীর চিন্তায় ওর মাথাতেই নেই যে ওর সাথেও খারাপ কিছু হতে পারে। এগোতে এগোতে হঠাৎ করেই তিনজন ছেলে ওর পথ আটকে ধরল। রিখিয়া চমকে উঠল। ও এমনিতে একটু ভীতু টাইপের মেয়ে। তাই ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলল। ওদের মধ্যে একটা ছেলে মুখে বাঁকা টাইপ হাসি ফুটিয়ে বলল,

” কী গো সুন্দরী। এত রাতে একা একা কোথায় যাচ্ছ?”

” দ-দেখুন যেতে দিন আমাকে।”

বলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই ছেলেটা হিট দিয়ে পথ আটকে ধরল। পাশের ছেলেটা দাঁত বেড় করে একটা হাসি দিয়ে বলল,

” এত তাড়া কীসের খুকুমণি? এত রাত করে মেয়েরা একাএকা তো আমাদের জন্যেই বেড়োয়। আর তুমি যেতে চাইছ? এটা কী ঠিক?”

অন্য পাশের ছেলেটা মাথা নেড়ে বলল,

” উহু একদম না।”

রিখিয়ার এবার কেঁদেই দিয়েছে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে ওর। আশেপাশে তাকিয়ে কারো কাছে সাহায্য চাইবে তেমন কাউকেই দেখছে না। সব চলমান গাড়ি। ও চেঁচালৈও কেউ গাড়ি থামাবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রিখিয়া দৌড় দিতে নিলেই একজন ওর হাত ধরে ফেলে বলল,

” আরে মামুণি কোথায় যাচ্ছো? সবে তো এলে এখনই যেতে দেই কীকরে হ্যাঁ?”

রিখিয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,

” প্লিজ, হাত ছাড়ুন আমার।”

ছেলেগুলো জোরে হেসে উঠল। হঠাৎ করেই কোথা থেকে ওখানে বিহান এসে হাজির হল। হাফাতে হাফাতে বলল,

” আরে তুমি এখানে? কখন থেকে খুঁজছি তোমাকে। কোথায় চলে গেছিলে।”

বিহান কি বলছে সেটা রিখিয়া বুঝতে না পারল না। কিন্তু এমন মুহূর্তে অল্প হলেও পরিচিত কাউকে পেয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না ও। বিহানকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিল। ছেলেগুলো একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। বিহানের হঠাৎ করেই কেমন যেন অনুভব হল। এক অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছে রিখিয়া ওর বুকে মাথা রাখাতে। প্রতিনিয়ত বুকে জ্বলতে থাকা যন্ত্রণার আগুনে যেন কেউ শীতল স্পর্শ দিয়ে দিয়েছে। নিজের অজান্তেই এক হাতে জড়িয়ে ধরল রিখিয়াকে। রিখিয়া তাতে আরও জোরে কেঁদে দিল। বিহান ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,

” কিছু বলবেন ভাই? আসলে আমার ওয়াইফ। শহরে নতুন তো রাস্তা চেনেনা। হুট করেই হারিয়ে গেছে। কিছু মনে করবেন না হ্যাঁ?”

তারপর রিখিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল,

” আরে কেঁদোনা। এসে গেছিতো আমি।”

বিহানের মুখে বউ শুনে ছেলেগুলো চলে গেল। হঠাৎ করে রিখিয়ার মনে পরল ও কী করছে। মনে পরতেই এক ঝটকায় দূরে সরে গেল। বিহান হাত ভাজ করে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল ওর দিকে। রিখিয়া চোখ মুছে নাক টেনে টেনে বলল,

” আপনি কেন বললেন যে আমি আপনার ওয়াইফ?”

” তো কী করতাম? বাংলা সিনেমার হিরোদের মত ‘ডিসকাও’ ‘ডিসকাও’ করে ফাইট করে আপনাকে বাঁচাতাম? তাতে কী লাভ হত? তুমি তো আর হিরোয়িনদের মত আমার প্রেমে পরতে না। পরলে না হয় ফাইট করা যেত।”

এরপর রিখিয়ার দিকে ঝুকে বলল,

” কী বল? পরতে? প্রেমে? তাহলে বল? ওদের খুঁজে এনে তারপর মেরে দিচ্ছি।”

রিখিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। বিহান একটা হতাশার শ্বাস ফেলে বলল,

” এই মেয়েটাও না। না ঠিক করে সরি বলতে জানে আর না থ্যাংকস বলতে জানে। এনিওয়ে এত রাতে একা একা বেড়িয়েছ কেন?”

রিখিয়ার মাথায় আবার তুর্বীর চিন্তা নাড়া দিলো। ও আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠল,

” তু-তুর.. সেদিন পুলিশ স্টেশনে যেই মেয়েটা ছিল আমার সাথে। ওকে খুঁজে পাচ্ছিনা। ফোন লাগছেনা। বাড়িও আসেনি।”

বিহান চমকে উঠল। তুর্বী মিসিং? তাহলে কী সৌহার্দ্য নিজের কাজ করে ফেলেছে? বিহান এসব ভাবতে ভাবতেই রিখিয়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেল। বিহান এখন শিওর যে ওর ভাই ই কিছু করেছে। কিছু একটা ভেবে নিয়ে ও রিখিয়ার কাধে হাত রেখে হাত রেখে বলল,

” আচ্ছা ডোন্ট ক্রাই। চল আমি হেল্প করছি তোমাকে। আমরা গাড়ি স্লো চালিয়ে চারপাশটা দেখছি। দেখি পাই কী না?”

রিখিয়া বলল,

” পুলিশের কাছে যাই চলুন।”

বিহান বিড়বিড়িয়ে বলল, ” তাহলে তো গন্ডগল হয়ে যাবে”। তারপর নিজেকে সামলে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আগে ভালো করে সবটা খুঁজে তো দেখি। হতে পারে রাস্তাতেই কোথাও আটকে গেছে? আগে নিজেরা একটু খুঁজি?”

রিখিয়া সম্মতি দিল। বিহান রিখিয়াকে নিয়ে গাড়িতে তুলল। বিহান গাড়ি চালাচ্ছে আর রিখিয়া চারপাশে খুঁজছে। বিহানও মাঝেমাঝে খোঁজার ভান করছে। কারণ ও তো ভালোভাবে জানে যে তুর্বী কোথায় থাকতে পারে।

_______________

এদিকে দরজার বাইরে পাহারায় থাকা দুজনের মধ্যে একজন বলল,

” বাপড়ে! কী ডেঞ্জারাস মেয়ে। আমরা চারজন মিলে এইটুকু পথ আনতেই ঘাম বেড়িয়ে গেছে।”

অপরজন বলল,

” হ্যাঁ সেই! স্যারকে ফোন করেছিলি?”

” হ্যাঁ স্যার এলে আমরা বাকি টাকাটা নিয়ে আমরা চলে যাবো। জীবনে প্রথম এমন কাজ করলাম ভাই।”

” শুধুমাত্র সৌহার্দ্য স্যার বলেছেন বলে। অনেক বছর তো হল ওনাকে চিনি, মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করবেনা। এটা শিওর।”

এরমধ্যেই ওখানে চলে এলো সৌহার্দ্য। সৌহার্দ্য আসতেই দুজন সোজা হয়ে দাঁড়াল। সৌহার্দ্য ওদের সামনে এসে দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,

” মেয়েটা কোথায়?”

” ভেতরে আছে স্যার।”

সৌহার্দ্য পকেট থেকে টাকা বেড় করে এগিয়ে দিল ওদের দিকে। টাকাটা নিয়ে ওদের মধ্যে একজন হেসে বলল,

” থ্যাংক ইউ স্যার!”

সৌহার্দ্যও হেসে বলল,

” সরি হ্যাঁ! আমার জন্যে কিডন্যাপিং ও করতে হল।”

” কী যে বলেন স্যার। অাপনার জন্যে এটুকু করতেই পারি।”

ওরা চলে যেতেই সৌহার্দ্য দরজা খুলে ভেতরে এল। ভেতরে ঢুকে চরম অবাক হল ও। কারণ তুর্বী নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। চোখ বাধা তাই ঘুমোচ্ছে কি না শিওর হতে হালকা নাড়া দিল সৌহার্দ্য কিন্তু দেখল হ্যাঁ আসলেই ঘুমোচ্ছে। ও শকড হয়ে হাত পা চোখ বাঁধা ঘুমন্ত তুর্বীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এটা মেয়ে নাকি এলিয়েন? এমন মুহূর্তে কেউ এভাবে ঘুমোতে পারে? আনবিলিভএবল! কিন্তু না এই মেয়েকে শান্তির ঘুম ঘুমাতে দিতে তো তুলে আনেনি সৌহার্দ্য। একটা পাকাপোক্ত শিক্ষা দিতেই তুলে এনেছে। তাই পাশের রাখা জগ থেকে হাতে পানি নিয়ে তুর্বীর মুখে ছুড়ে মারল। প্রথমবারে নড়ে উঠলেই ‘উমম’ শব্দ করে ঘুমের ঘোরেই মুখ মুছে নিল ও। সৌহার্দ্য আবারও একই কাজ করল। মুখে পানির ছেটায় চমকে উঠল তুর্বী। চোখ বাঁধা আছে তাই দেখতে পারছেনা কে। ওর সবটা মনে পরতে কয়েক সেকেন্ড লাগল। আর বুঝতে পারল ওর সেই কিডন্যাপার এসে গেছে। মিনিট দুই চুপচাপই ছিল দুজন। ততক্ষণে তুর্বী ঘুম ভাব কাটিয়ে উঠেছে। সৌহার্দ্য একটু এগিয়ে আসতেই তুর্বী বলল,

” এই যে মিস্টার মিস নাকি মিসেস হোয়াটএভার। আমায় এভাবে তুলে এনেছেন কেন হ্যাঁ? দেখুন আমি কোন বড়লোকের বেটি নই যে কিডন্যাপ করে ব্লাকমেইল করে পরিবার থেকে টাকা নিতে পারবেন। তাই সেই আশায় আমাকে কিডন্যাপ করে থাকলে আপনার জন্যে এক বালতি নো নো এক ড্রাম সমবেদনা।”

সৌহার্দ্য মুচকি হাসল। ও তো মেয়েটার ওপর যত রাগ করতে চায় কিন্তু মেয়েটার কথা শুনলেই সব রাগ এমনিই চলে যায়। কী আছে মেয়েটার কথায়? শুধুই চঞ্চলতা? নাকি চঞ্চলতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক সরল নির্মল মন? কী জানি? হয়ত আছে কিছু একটা।সৌহার্দ্য মুখে একটা কাপড় বেঁধে নিল যাতে ভয়েজ কিছুটা অন্যরকম শোনায় আর তার ওপর দিয়ে পুরো মুখ কাভার করে এমন একটা কালো রঙ এর মাস্ক পরে নিল। যদিও তুর্বীর চোখ এখন বাঁধা, তবুও। সৌহার্দ্য চুপচাপ বিছানায় বসল। সামনে থেকে কোন উত্তর না পেয়ে তুর্বী বলল,

” কী হল? কোথায় গেলেন?”

” আছি, আপনার সামনেই আছি।”

” হ্যাঁ, তো মৌনব্রত পালন না করে তাড়াতাড়ি কাজের কথা বলুন। আর আমার চোখ কেন বেধেছেন? দেখতে এতটাই খারাপ যে মুখ দেখাতে চাইছেন না? কে আপনি?”

” আপনার মোস্ট হেটেড পার্সন। S.R.”

তুর্বী অবাক হয়ে গেল। S.R. ওকে তুলে নিয়ে এসছে? এটা কীকরে হয়? ও কাঁপাকাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,

” এটা কেমন অসভ্যতা হ্যাঁ? আপনি না সবাইকে এত এত জ্ঞানের বাণী শোনান? আমায় কেন তুলে এনেছেন?”

সৌহার্দ্য তুর্বীর ঘাবড়ে যাওয়াতে বেশ মজা পেল। তাই ওকে আরো ভয় দেখাতে বলল,

” তুমি আমারই শো তে কল করে আমাকেই উইদআউট ডিটার্জেন দিয়ে ধুয়ে দেবে। আমার পেজে আমারই নামে গুনকীর্তন করে কম্পিজশন আকারে পোস্ট করবে। আমার পোস্টে আমাকে বাঁশ দিয়ে প্রাগ্রাফ আকারে কমেন্ট করবে, আর আমি? আমি চুপচাপ সবটা সহ্য করব? এটাই ভাবছিলে তুমি? সিরিয়াসলি?”

” ক্ কী করবেন?”

” একটা ছেলে একটা মেয়েকে এরকম নির্জন একটা ফার্মহাউজে কেন নিয়ে আসতে পারে?”

তুর্বী শীতেও একটু ঘামছে এবার। শুকনো ঢোক গিলে বলল,

” কেন?”

” প্রাকটিক্যালি করে দেখাই?”

তুর্বী এবার একটু জোরে বলর,

” আমি কিন্তু জোরে চেঁচাবো এবার!”

সৌহার্দ্য তুর্বীকে আরও ভয় পাওয়ানোর জন্যে ওর একদম কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

” এখানে তুমি গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও কেউ শুনবে না। ফার্মহাউজে যারা আছে সব আমার লোক। ওরা এখানে আমায় আই মিন আমাদের ডিসটার্ব করতে আসবেনা। তোমার এক্সপিরেয়েন্স চাই না রিলেশনশীপের?”

সৌহার্দ্য এত কাছে আসাতে কেমন যেন একটা লাগছে তুর্বীর। সৌহার্দ্যর কথায় তুর্বী যথেষ্ট ভয় পেয়েছে। ও একা একটা মেয়ে কী বা করতে পারবে এখন? যদি সৌহার্দ্য ওর সাথে সত্যিই উল্টোপাল্টা কিছু করে তাহলে এরকম কিছু হবে সেটাও ভাবেই নি। এতদিন যেভাবে জ্বালিয়েছে S.R. কে এর শোধ যে সে গুনে গুনে নেবে সেটাতো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু তাই বলে এভাবে বদলা নেবে?

#চলবে…

( রি-চেইক হয়নি। একটু কষ্ট করে বুঝে নেবেন।)

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১০
.
সৌহার্দ্যর এতো কাছে আসাতে তুর্বী নিশ্বাস আটকে আসছে। তুর্বীর ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়ে সৌহার্দ্য চার আঙ্গুল দিয়ে তুর্বীর কানের নিচ দিয়ে গলায় স্লাইড করে চুলগুলো সরিয়ে দিল। মৃদু কেঁপে উঠল ও। কখনও কোন ছেলের এত কাছে আসা হয়নি তো! তাই এই সামান্য ছোঁয়াও সহ্য হচ্ছে না। তুর্বী যথেষ্ট শক্ত একটা মেয়ে। কিন্তু এখন ওর ঠিক কী হয়েছে ও নিজেই বুঝে উঠতে পারছেনা। সৌহার্দ্য আবারও একই ভঙ্গিতে বলল,

” ভয় করছে?”

তুর্বী এবার কম্পিত কন্ঠে বলল,

” আমি কিন্তু পুলিশ কেস করব, যদি আপনি আমার সাথে এমন কিছু করার সাহস দেখান।”

সৌহার্দ্য ঠোঁট চেপে হাসল, এরপর বলল,

” তাই? তা ঠিক কী বলবে পুলিশকে?”

” বলব যে আর.জে. SR আমায় কিডন্যাপ করে এনে আমার সাথে বাজে ব্যাবহার করেছে।”

” আচ্ছা! তা তুমি কী S.R. কে দেখেছ?”

তুর্বী না বোধক মাথা নাড়ল। সৌহার্দ্য আবার বলল,

” তাহলে কীকরে পুলিশকে বিশ্বাস করাবে যে তোমাকে S.R ই তোমাকে কিডন্যাপ করেছেন?”

তুর্বী এবার সত্যিই ভাবনায় পরল। এখন যদি S.R.ওর সাথে খারাপ কিছু করেও। ও তো কাউকেই বিশ্বাস করাতে পারবেনা যে S.R. ই এসব করেছে। কী করবে ও? ও কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

” আপনি খুব শেয়ানা একটা মাল আছেন।”

সৌহার্দ্য চোখ ছোট ছোট করে ফেলল তুর্বীর মুখে দ্বিতীয়বার ‘মাল’ শব্দটা শুনে। কিন্তু কিছু না বলে প্রথমে তুর্বীর পা আর পরে ওর চোখ খুলে দিলো। তুর্বী আবছা অন্ধকারে কালো মাস্ক পরা একটা লোককে দেখে চমকে একটু দূরে সরে গেল। জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে বলল,

” বাপড়ে বাপ! আমাকে হার্ট অ‍্যাটাক করিয়ে মারবেন না কী? কী ভয়ঙ্কর। এটা কী আপনার রিয়াল ফেস? এই জন্যেই কারো সামনে আসেন না বুঝে গেছি।”

” চুপ স্টুপিড! এরকম কোন মানুষ চেহারা হয়?”

তুর্বী বিড়বিড় করে বলল,

” আপনি যে মানুষ সেটা নিয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”

সৌহার্দ্য শুনতে পেল তুর্বীর কথা, কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এল। হাত খুলতে খুলতে বলল,

” সবসময় এমন ক্যাঙ্গারু স্টাইলে না লাফালে হয় না?”

” আমার বডি, আমার উইশ। আপনার কী তাতে?”

সৌহার্দ্য হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করল। এমন কেন মেয়েটা? একটু বেশিই চঞ্চল। ওর কী একবারও মনে হচ্ছেনা এখান থেকে পালানো উচিত? তুর্বী মুখ ফুলিয়ে বলল,

” এইযে মিস্টার? আপনি জানেন আপনি একটা কিপটে, হাড় কিপটে ? একটা মেয়েকে তুলে এনেছেন অথচ কিছু খেতে অবধি দিলেন না এখনও। সেই দুপুরে ক্যানটিনে একটু খেয়েছি। জানেন খিদেতে আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে।”

সৌহার্দ্য তুর্বীর কথায় এবার আর অবাক হলনা। কারণ ইতিমধ্যে বুঝে গেছে মেয়েটা কেমন। কিন্তু ভাবল যে সত্যিই তো। সেই দুপুরে খেয়েছে এতক্ষণ না খাইয়ে রাখাটা ঠিক হয়নি মোটেই। সৌহার্দ্য ফোন বের করে কাউকে একটা ফোন করে বলল রুমে খাবার দিয়ে যেতে। তুর্বী মনে মনে কিছু একটা ভেবে সৌহার্দ্যর মুখে পরা মাস্কটা টান মেরে খুলতে গেল কিন্তু তার আগেই সৌহার্দ্য তুর্বীর হাত ধরে ফেলল। তুর্বী একটু হকচকিয়ে গেল। স‍ৌহার্দ্য মুচকি হেসে বরর,

” তুমি নিজেকে যতটা চালাক ভাবো। এক্চুয়ালি তুমি এতটাও চালাক নও ইউ নো।”

তুর্বী একটানে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হাত ভাড মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। সৌহার্দ্য কিছু বলল না। পকেট থেকে ফোন বেড় করে স্ক্রোল করতে লাগল। তুর্বী মনে আড়চোখে এই মুখশধারী ব্যাক্তিকে দেখছে আর ভাবছে যে এখন আপাতত ভীষণ খিদে পাচ্ছে। আগে খেয়ে নিক তারপর ভাববে কীকরে পালানো যায়। এসব ভাবতে ভাবতে দরজায় নক পরল। সৌহার্দ্য উঠে গিয়ে দরজাটা অর্ধেক খুলে খাবারের ট্রে টা নিয়ে দরজা আবার লাগিয়ে দিয়ে তুর্বীর সামনে রেখে বলল,

” নিন আগে খেয়ে নিন ম্যাম। আপনার সাথে অনেক হিসেব এখনও বাকী আছে।”

তুর্বী খেতে নিয়েও থেমে গেল? রিখিয়া টা খেয়েছে তো? ও নেই রিখিয়ার কী অবস্থা হয়েছে এখন? কান্নাকাটি করছে না-কি? তুর্বীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সৌহার্দ্য বলল,

” খাচ্ছোনা কেন?”

তুর্বী আনমনেই বলল,

” রিখুটা কী করছে কে জানে? খেয়েছে কী-না সেটাও জানিনা। সব আপনার জন্যে।”

সৌহার্দ্য মনে মনে বেশ অবাক হল। ও এতদিন ভাবত যে ওর আর বিহানের মত বন্ডিং কারো কখনও হতেই পারেনা। কিন্তু তুর্বী আর রিখিয়ার বন্ডিং দেখে সেই ধারণা ভেঙ্গে গেছে সৌহার্দ্যর। ও একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” তুমি এখানে না খেয়ে থাকলে কী ওর খাওয়া হয়ে যাবে? বরং তুমি এখন না খেলে আমার হাত থেকে পালানোর উপায় বা শক্তি কোনটাই পাবে না।”

তুর্বী একটা মুখ ভেংচি দিয়ে খেতে শুরু করল। সৌহার্দ্য মুচকি হেসে বেডে হেলান দিয়ে ফোন দেখতে লাগল। কিন্তু মূলত ও ফোন দেখার বদলে তুর্বীকেই দেখছে। তুর্বীর সেদিকে খেয়াল নেই। ওর ভীষণ খিদে পেয়েছে তাই ওর পুরো মনোযোগ খাওয়াতেই। সৌহার্দ্যর কী হয়েছে ও নিজেই জানেনা। কখনও কোন মেয়ের দিকে এভাবে তাকায়নি। কিন্তু আজ নিজের অজান্তেই দেখছে। তাও এমন একটা মেয়েকে যে ওর চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিপরীত জগতে বসবাস করে।

_______________

বিহান রিলাক্স মুডে গাড়ি চালাচ্ছে। রিখিয়া এদিক ওদিক তুর্বীকে খুঁজছে। বিহানও মাঝেমাঝে রিখিয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে খোঁজার ভান করছে। রিখিয়া কয়েকবার পুলিশে যাওয়ার কথা বলেছে কিন্তু বিহান ওকে এটা ওটা বুঝিয়ে কনভেন্স করে নিয়েছে। এমনভাবে বুঝিয়েছে যে রিখিয়াও মানতে বাধ্য হয়েছে।হঠাৎ রিখিয়া শব্দ করে কেঁদে দিল। বিহান পুরো হকচকিয়ে গেল। তাড়াতাড়ি গাড়ি ব্রেক করে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” হেই, কাঁদছো কেন তুমি? লিসেন, কিচ্ছু হবেনা তুর্বীর খুঁজে পেয়ে যাবো ওকে আমরা।”

রিখিয়া ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,

” আপনি বুঝতে পারছেন না। তুর খুব চঞ্চল। জানিনা কী করে বসে আছে মেয়েটা।”

বিহান রিখিয়ায় কাঁধে হাত রাখল। এতে রিখিয়া আরও জোরে কেঁদে উঠল। বিহান মনে মনে বলল, ‘ব্রো, এটা কাকে তুলে নিয়ে গেলি তুই? তার বান্ধবী তো এখন আমার মাথা খাচ্ছে।’ লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আচ্ছা, কেঁদোনা। আমি বলছি তো খুঁজে পেয়ে যাবো।”

রিখিয়া অধৈর্য হয়ে বিহানের দুই হাত ধরে বলল,

” প্লিজ, খুঁজে দিন ওকে। প্লিজ! ”

বিহান হাতের দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বলল,

” তুর্বীর কোন ক্ষতি হবেনা, আমি কথা দিচ্ছি।”

কিছুক্ষণ পর রিখিয়ার খেয়াল হল যে ও বিহানের হাত ধরে আছে। তাড়াতাড়ি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল ও। খোলা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে একটু সরে বসল। কখনও কোন ছেলের এভাবে কাছে যায়নি ও। তাই এমন অনুভূতি। বিহান রিখিয়ার অস্বস্তি বুঝতে পেরে ওকে নরমাল করতে বলল,

” রাতে খেয়েছ কিছু?”

রিখিয়া মাথা নেড়ে না বলল। বিহান একটু ভেবে বলল,

” চলো আগে কিছু খেয়ে নি হ্যাঁ?”

রিখিয়া ভাঙা গলায় বলল,

” আমি এখন খাবো না।”

” দেখ আমার এখন ভীষণ খিদে পেয়েছে। তুমি খাবেনা তারমানে এটা নয় যে আমিও খাবোনা।”

” আপনি গিয়ে খেয়ে নিন না। আমি খাবোনা।”

” আজব। আমার সাথে একটা মেয়ে আছে। সে খাবেনা অথচ আমি খাবো? আমাকে দেখে কী এতোটা ম্যানারলেস মনে হয়?”

রিখিয়া ভ্রু কুচকে তাকাল। বিহান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” কী আর করার। একজনের উপকার করতে এসে এখন সারারাত না খেয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। একেই বলে কপাল!”

রিখিয়া এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

” আজব লোকতো আপনি? এরকম সময়েও মজা করছেন?”

বিহান ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,

” আরেহ! আমিতো তোমাকে হেল্প করছি। আর তুমি আমাকেই কথা শোনাচ্ছ? ভালাই কা জামানাই নেহি রাহা। ঠিকাছে, কী আর করার? না খেয়েই থাকতে হবে।”

রিখিয়া এবার ভাবল ঠিকই তো। না খেয়ে কতক্ষণ খুঁজবে ছেলেটা? অনেক্ষণ তো হলো। রিখিয়া ইতস্তত করে বলল,

” আচ্ছা চলুন। কিন্তু এখন তো বেশ রাত হয়েছে। এতো রাতে কোন রেস্টুরেন্ট খোলা আছে?”

“সামনে রেলওয়ে স্টেশন আছে। ওখানে কিছু খাবারের দোকান সারারত খোলা থাকে চল ওখানে যাওয়া যাক?”

রিখিয়া মাথা নাড়ল। বিহান গাড়ি স্টার্ট করে স্টেশন অবধি গেল। ওখানে গিয়ে দুজনেই গাড়ি থেকে নামল। বাইরে এখন বেশ ঠান্ডা। চারপাশে ছোটখাটো অনেক দোকান।ওখানে একটা দোকানে বিহান দুজনের জন্যে পরোটা আর ডিম ভাজা দিতে বলল। এরপর দুজনে বেঞ্চে বসল। বিহান কিছু একটা ভেবে বলল,

” তুমি একটু বসো আমি একটা কল করে আসছি।”

রিখিয়া মাথা নাড়ল। বিহান একটু দূরে গিয়ে সৌহার্দ্যর নাম্বারে কল দিল। ওপাশ থেকে সৌহার্দ্য ফোন তুলে বলল,

” হ্যাঁ বল।”

” তোর ভয়েজের কী হল? এনিওয়ে ব্রো, তুর্বী তোর কাছে নাকি?”

সৌহার্দ্য একপলক তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” হ্যাঁ কেন বলত?”

বিহান একটা শ্বাস ফেলে রিখিয়ার কথা খুলে বলল। সব শুনে সৌহার্দ্য বলল,

” এক কাজ কর। আজ রাতটা ওকে তোর কাছেই রাখ। দেখিস যাতে প্রবলেম না হয়।”

” তা কতক্ষণ রাখবি ওকে তোর কাছে? আর কী করছিস বলত ওর সাথে?”

” যতক্ষণ না আমাকে জ্বালানোর ভুত নামছে মাথা থেকে। আর বিশেষ কিছু করছি না। সবে প্রাইমারি ডোস দিয়েছি। অারেকটু খানি টাইট দেওয়া বাকি আছে।”

বিহান হেসে বলল,

” ওকে। দেখ টাইট দিতে গিয়ে নিজেই টায় টায় ফিস হয়ে যেওনা।”

” চুপ কর আর ওই মেয়েটার খেয়াল রাখ।”

বিহান ফোন রেখে রিখিয়ার কাছে গিয়ে দেখে রিখিয়া ঠান্ডায় কাঁপছে। দুইহাতের বাহু জড়িয়ে বসে আছে। তাড়াহুড়োয় গরম পোশাকও নিয়ে আসেনি মেয়েটা। বিহানের কী হল নিজেই জানেনা। ও ওর জ্যাকেট খুলে রিখিয়ার গায়ে জড়িয়ে দিল। রিখিয়া চমকে উঠল। কাঁপা গলায় কিছু বলার আগেই বলল,

” পরে নেও নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আমার গায়ে ফুল হাতা গেঞ্জি আছেই। প্রবলেম হবেনা।”

এরমধ্যেই খাবার চলে এল। বিহান তাড়াতাড়ি হাত ঘসে খেতে শুরু করে দিল। রিখিয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল বিহানের দিকে। রিখিয়ার খুব অস্বস্তি লাগছে বিহানের আশেপাশে থেকে। কিন্তু আপাতত ওর আর কিছু করারও নেই। তবে বিহান সম্পর্কে নতুন একটা ধারণা জন্ম নিল ওর। সেটা হল, ” ছেলেটা ভালোবাসার যোগ্য হোক, চাই না হোক ঘৃণার যোগ্য না।”

#চলবে..