জোয়ার ভাটা পর্ব-২৫+২৬

0
314

#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-২৫

“গ্রীষ্ম, আষাঢ় ওঁরা আমার জমজ ছেলে। কিন্তু ৬ বছর আগের একটি এক্সিডেন্ট আষাঢ়কে কেঁড়ে নেয় আমাদের জীবন থেকে। কেঁড়ে নেয় তুলতুলকেও।আমার ছেলেটার এর পর থেকেই ওঁর বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগটি দেখা দেয়।”

অনিতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মার্জান চোখ তুলে তাকালো। ‘তুলতুল ‘নামটা আওরালো বার কয়েক। নামটা সে শুনছে, গ্রীষ্মের মুখেই শুনছে। অনিতা আবার বলল,

” ও..হে, তুলতুল হচ্ছে গ্রীষ্মের ফুপির মেয়ে ছিলো।”

মার্জান থমকে গেলো। ছিলো মানে? এখন নেই নাকি? কিন্তু এবারো সে নিরব রইলো।

” ওই এক্সডেন্টে আমরা ওঁকেও হারাই। কিন্তু কাকতালীয় বিষয় কি জানো? তুলতুল আর তুমি প্রায় একই রকম দেখতে। শুধু তুলতুলের চোখের নিচে বড় আর গাড়ো তিল আছে। তোমার টায় নেই।”

মার্জানের হার্ট বিট কিছুক্ষণ আগে কয়েক গুন ফাষ্ট হয়ে গেছিলো। তুলতুলের নামটি কর্ণপাত হতেই। তবে এবার ও যে নরমাল হলো। কেন হলো এমন? তাহলে কি মার্জান ভয় পাচ্ছে? গ্রীষ্মকে হারিয়ে ফেলার ভয়?? কিন্তু গ্রীষ্ম তো এখন নির্ঝরের সাথে আছে। তাহলে? ওঁর জায়গাটুকু কই, গ্রীষ্মের জীবনে? সত্যি আছে তো??

অনিতা এবার উঠে দাঁড়ালো,

” তুমি গুছিয়ে নাও। আর হ্যাঁ বিয়েটা যত জলদি পারো করে নেও। ওঁর দাদি জানতে পারলে আর রক্ষে নেই তোমার”

মার্জান ভ্রু কুচকে তাকালো। অনিতা হেসে বেড়িয়ে গেলো। মার্জান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নির্ঝোরের কথাটা মনে পড়তেই বিষিয়ে উঠলো মনটা। কেন যে মেয়েটা পাগলামো করছে? ওঁ জানে না… আগুনের সাথে খেলছে। গ্রীষ্মের একরোখা দিকটা শুধুই যে মার্জান দেখেছে। তবুও মার্জান থাকতে চায়… ওঁর জীবনের সবটুকু দিয়েই থাকতে চায়। কিন্তু তা বুঝি আর হবার নয়? ওঁর খুশি টুকুতে গ্রহণ লাগিয়ে হাজির হলেন গ্রীষ্মের দাদি। চিৎকার করে ডাকলেন সবাইকে। কৌতুহলী মার্জান এসে দাঁড়ালো সেখানে। অনিতার ভীতিকর মুখখানা দেখে বোঝার চেষ্টা করলো হচ্ছেটা কি। কিন্তু যখনি দাদিজানের মুখে শুনলো,

” তুলতুল ছাড়া গ্রীষ্মের পাশে আমি কাউকে দাঁড়াতে দেবো না। ”

অনিতা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,
” মা গ্রীষ্মের ছেলে আছে ৬ বছরের।”

পায়ের রক্ত মাথা উঠে যায় যেন। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে ঠান্ডা গলায় বলে উঠে,

” আমার নাতি এখানেই থাকবে। তবে ওঁর মা নয়।”

অনিতা প্রতিবাদ করলো,
” মা আপনি প্রতিবার এমন করতে পারেন না। এবার আমি আমার ছেলের খুশি নষ্ট হতে দেবো না।”

দাদিজান হেসে উঁড়িয়ে দিলেন। রসিকতা হচ্ছে যেন। পিছনে ফিরে মার্জানকে দেখে কিছুটা থমকালেন। পরপরই বলে উঠলো কিড়মিড় করে,

” এ বাড়ির বউ শুধু তুলতুল হবে।”

মার্জানের ভাঙ্গা মন আরো ভেঙে গেলো। অনিতার দিকে বিষন্ন চোখে তাকাতেই দাদিজান গলা ছেড়ে বলে উঠলো,

” এই মেয়ে এ বাড়িতে থাকতে পারবে না। অন্তত ততদিন পর্যন্ত যতদিন না গ্রীষ্ম ওঁকে বিয়ে করে আনে।”

মার্জান আর অনিতার চোখে মুখে জ্বলজ্বল করে উঠলো। দাদিজান তখন মুচকি হেসে বলে উঠলো,

” আমি এতটাও কঠোর নই, যে নিজের নাতির খুশি দেখবো না। তবে আমি চাই বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তুমি এ বাড়িতে না থাকো।”

মার্জানের মনে খুশির ফুলঝুরি ফুটে উঠলো। দাদিজানের কথা মতোই মার্জানকে ওঁর আগের বাড়ি পৌঁছে দেয়া হলো। অনিতা খুশি কন্ঠে বলে উঠলো,

” মা আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। ”

দাদিজান হতাশার শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো,

” যে দিন আমার তুলতুল ফিরে আসবে, সেদিন এ মেয়ের এ বাড়িতে শেষ দিন।”

অনিতার কঁপালে চিন্তার ভাজ দেখা গেলো। গ্রীষ্ম বাড়ি ফিরেই মার্জানকে না পেয়ে চেঁচালো,

” তুমি কেন যেতে দিলে?”

অনিতা গ্রীষ্মের হাতে হাত রেখে বলে উঠলো,
” তোমার দাদিজান চায়।”

” দাদিজান কি চায়, না চায় আমি জানতে চাই না মা। একদম না। আমি মার্জানকে চাই এখানে।”

অনিতা বোঝালো,
” ক’টা দিন যেতে দাও। এরপর নিয়ে এসো। অনেক কষ্টে রাজি হয়েছে তোমাদের বিয়ের জন্য।”

গ্রীষ্ম দাঁতে দাঁত চাপলো। এবং চেয়ারে লাথি মেরে বেড়িয়ে গেলো।
——————————
বাহিরটা আজ কুয়াশার আড়ালে। ভোর ভোর ভাব। অথচ সকাল দশটা। এই কুয়াশার চাদর নিংড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে রাস্তায় মানুষ জন কাজের চাপে। মার্জান নিজেও বেড়িয়ে গেছে। আজ ওঁদের অ্যাভয়েড ফাংশনের জন্য তোড়জোড় চলছে।
মার্জান গ্রীন রুমে বসে আছে। মেকাপ চলছে ওঁর। ঠিক তখনি নির্ঝোর এসে উপস্থিত হলো। ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বলে উঠলো,
” তুই যখন জানিস আমার গ্রীষ্মের সাথে রিলেশন চলছে, তাহলে কেন ওঁর পিছু কেন ছাড়ছিস না?”

মার্জান মেকাপ রুমে লাষ্ট টাচ আপ করছিলো। নির্ঝরের কথাতে তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলো,
” আমি কারো পিছু নেই নি। কোনো জিনিস নিয়ে কাড়াকাড়ি করা স্বভাব আমার একদম নেই। আর অন্যের ভালোবাসার উপর তো আরো না।”
নির্ঝর ওঁকে ঠেস মেরে বলা কথায় ক্ষিপ্ত হলো খুব। গড়গড় করে হাজার গালি দিতে গিয়ে আটকালো জবানে। নিজের পা মাটিতে মারিয়ে কিড়মিড় করে বেড়িয়ে গেলো ওঁ। মার্জান হাসলো। এই কি সেই নির্ঝর? যে ওঁর বেষ্ট ফ্র্যান্ড ছিলো?
মার্জান নিজের রুমে এঁকাই বসে এসব ভাবছিলো। ঠিক তখনি খটখট করে গ্রীণ রুমের দরজা নক করলো কেউ। মার্জান “আসতে পারেন” বলতেই একদন বয়স্ক লোক এসে ডুকলেন। মার্জানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

” আমি রাহুল রয়। ইন্ডিয়ার একজন প্রডিউসর। সায়ানের কাচ থেকে আপনার নামের গুনোগান বহুত শোনা হয়েচে। আমি তাই নিজেই চলে এলাম সখ্যাতা বাড়াতে।”

মার্জান হেসে বসতে বলল। কিন্তু রাহুল রয় বসলো না। মার্জানের দিকে উপর থেকে নিজ পর্যন্ত চেক করে বলে উঠলো,

” আপনি তে বহুত সুন্দরী আচেন যে, কাজের অভাব হবার কথা না…”

মার্জান একটু ইতস্তত বোধ করলো। এবং জড়তা নিয়ে বসে রইলো। মার্জান যে কোনো ছুতোয় উঠে যেতে চাইলেই হুট করে হাত ধরে ফেললো রাহুল। মার্জান হকচকিয়ে উঠলো। তা দেখে রাহুল রয় হেসে আরো একটু কাছে এসে বলে উঠলো,

” সে-কি, আপনি দেখি ভয় পাচ্ছেন যে, এই ফিল্ডে এসব তো আম জিনিস যে। তুমি কিচু দিবে, তবেই না কিছু পাবে?”

মার্জান চটে গেলো। রাহুল রয়কে ধাক্কা দিতেই ওঁ পিছনে পড়লো আয়নার উপর। ঝনঝনিয়ে শব্দ করে আয়না পড়লো ভেঙে। এক টুকরো আয়নার কাচ লেগেও গেলো রাহুল রয়ের মুখে। মার্জান হাঁপাচ্ছে, ওঁর এই মুহুর্তে কোনো আফসোস হচ্ছে না। এই লোকটি গত বছর নাকি মানবতার ফেরিওয়ালা বলে উপহার দিয়েছে। আর আজ এরূপ দেখে গা গুলিয়ে যাচ্ছে। মার্জান আর ওখানে না দাড়িয়ে থেকে দৌঁড়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে কিন্তু দরজা খুলতেই এক গাদা মিডিয়ার লোকেদের খপ্পরে পড়ে গেলো ওঁ। মার্জানকে ঘিরে ধরলো ওঁঁরা হাজার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো এবার। মার্জান কিছুটা ঘাবড়ে গেছে। মিডিয়াদের পিছনে দাঁড়িয়ে হাসছে নির্ঝর। মার্জান আহ্ করে শ্বাস ছাড়লো। কোথায় যেন পড়েছিলো মার্জান,

” তোমার বর্তমান কালের শত্রু পূর্বজনমের একজন ঘনিষ্ঠ মানুষ বা একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ”

মার্জান কোনো রাগ হলো না। কিন্তু আফসোস হলো। বন্ধুর নামধারী এই মানবী তাকে এভাবে হেনস্তা করতে চাইছে? কিন্তু মার্জানের মন শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। অন্তত এবার আর পালাবে না সে, না লাগাতে দিবে নিজের সফেদ বদনে দাগ। কিন্তু তা কি ভুললে চলবে? অপর পক্ষ-ও কম নয়!

একজন মিডিয়া প্রশ্ন করলো,
” মিস মার্জান, রাহুল রয়ের সঙ্গে আপনার কিসের সম্পর্ক?”

আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন,
” আপনিও কি তাহলে সি গ্রেড নাইকাদের মতো বন্ধ ঘরে দে*হ ব্যবসায় নাম লিখাতে চলেছেন?”

অপরজন বললো,
” রাহুল রয়ের সাথে আপনার সম্পর্কে বিছানা পর্যন্ত ঘড়িয়ে গেলো কি?”

মার্জানের কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে ফালতু সব প্রশ্নে। মার্জান মুখে কিছু বলবে এর পূর্বে কঁপাল ভর্তি রক্ত নিয়ে রাহুল রয় বেড়িয়ে এসে বলে উঠলো,

“আমার সাথে ওঁর কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তো শুধু অফার দিতে এসেচিলাম। ওই ঝাপটে পরে আমার উপর। নিজেকে বাঁচাতে এই দেখেন আমার চোট লেগে গেলো।”

হৈ হুল্লোড় বেড়ে গেলো। মুলত রাহুল রয় এমন কিছুর আসা ওঁ মোটেও করেনি। নির্ঝরের সাথে চুক্তি করে এখানে আসা। কিন্তু মেয়েটি ওঁকে এভাবে ফাসাবে? ভাবেইনি ও। একবার এখান থেকে বেরুলে নির্ঝরের ঘাড়ে কঁটা মাথা আছে দেখবে ওঁ।

এদিকে এঁকে এঁকে তীর যখন আসছিলো মার্জানের দিকে। মার্জান কোনো প্রমান দিতে না পেরে শুধু এতটুকু বলল,

” আমাকে যেহেতু উনি অফার করতেই এসেছিলেন, তাহলে কেন আমি উনার কাছে বা আপনাদের ভাষা দে*হ ব্যবসায় করতে যাবো?”

এইটুকুতেই চুপ সকলেই কিন্তু পিছন থেকে আরো কিছু গুঞ্জন উঠতেই রাহুল রয় বলে উঠে,
” আমি নিরীহ মানুষ। আমার কি লাভ নিজের মান সম্মানে দাগ লাগাবার, আমি তো ভালোর জন্য গেছিলাম, কিন্তু এই দুই ফুটিয়া মেয়েই আমার উপর এসেছে।”

মার্জান নিজের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দিতে পারলো না। চুপ করে রইলো। কিন্তু তখনি সোফিয়া দৌঁড়ে এলো কোথা থেকে। এবং মুখ খুললো রাহুল রয়ের। একটি ভিডিও ফুটেজ বের করে দেখালো সবাইকে। যেখানে নির্ঝর আর রাহুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও সহ কতপকথন মার্জানকে নিয়ে। উপস্থিত সকলেই হতভম্ব। এদিকে যা হচ্ছিলো, সব কিছু স্টেজ সহ বাহিরের পর্দায় ছিলো দৃশ্য মান। পরপর এত কিছু দর্শকের সামনে এসে পড়ায় পরনিন্দা জানায়। সবাই বয়কাট করতে বলে নির্ঝর আর রাহুলকে। মার্জান এবার স্বস্তির শ্বাস ফেলে। সোফিয়ার কাছে এসে শুকরিয়া বলতেই, সোফিয়া হাত উঁচু করে বলে উঠে,

” আমার কিছু হাত নেই এতে সব কিছু গ্রীষ্ম করেছে।”

মার্জানের চোখের কোনো জল গড়াগড়ি খেতে লাগলো। সোফিয়া তা দেখে হেসে বলে উঠলো,

” তোমার অপেক্ষায় আছে তোমার উনি।”

মার্জান খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। ফাংশনের অ্যাওয়ার্ড হাতে পেয়ে মার্জান গ্রীষ্মকে মনে করলো। এই একটি ব্যক্তিটি ওঁর দ্বিতীয় জম্মের পর থেকে সহায়তা করে চলেছে নির্দ্বিধায়। এত এত ভালোবাসা??? তখনি স্টেজের একজন হোস্ট বলে উঠলো,

” ম্যাম আপনার দর্শকদের জন্য দু লাইন কিছু বলুন?”

মার্জান মাইক হাতে নিলো। চোখ বুঝতেই গ্রীষ্মের মুখ টা ভেসে উঠলো। ঠোঁটের কোনে ফকফকে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,

” আজ এখানে যার জন্য দাঁড়িয়ে তার জন্য দু লাইন গাইতে চাইবো।”

করতালি পড়ে গেলো চারপাশে।

Kabhi yaadon mein aaun
Kabhi khwabon mein aaun
Teri palkon ke saaye
Mein aakar jhilmilau
Main wo khushbu nahi jo
Hawa mein kho jaun

মার্জানের চোখের কোন গড়িয়ে পানি পড়লো। গ্রীষ্মের সাথে কাঁটানো মুহূর্তে গুলো ভেসে ভেসে উঠলো ওঁর চোখে পাতায়।

Hawa bhi chal rahi hai
Magar tu hi nahi hai
Fiza rangeen bani hai
Kahani keh rahi hai
Mujhe jitna bhulaao
Main utna yaad aau

এদিকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গ্রীষ্ম। বাহিরের পর্দায় ভেসে চলছে মার্জানের গান গাওয়া মুহূর্ত টুকু। গুন গুন করে ও নিজেও আওরাতে লাগলো।

Tu aasmaan mera jahaan lage mujhe
Tu raaston ki manzilein lage mujhe

Tu hi meri chandni wo
Raaton ko jo halki si jale
Tu hi meri sham-o-sehar
Jo mere sang chale

Hawa bhi chal rahi hai
Magar tu hi nahi hai
Fiza rangeen bani hai
Kahani keh rahi hai
Mujhe jitna bhulaao
Main utna yaad aau

Kabhi yaadon mein aaun
Kabhi khwabon mein aaun

আজ গ্রীষ্ম মার্জানকে প্রপোজ করবে। ওঁর মনের কথা বলবে সব বলবে।প্রতিটি কথা, অভিমান সব। মার্জান বেড়িয়ে এলো হল থেকে। উপর থেকে পড়লো এক ঝাঁক পাখির মতো গোলাপ ফুলের পাপড়ির বর্ষণ। মার্জান দু’হাতে লুফে নিতে চাইলো এত সুখ, এত খুশি। গ্রীষ্মের পরিপাটি লুকে মার্জান কাতর হয়ে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। উপস্থিত মানুষ শীটি বাজালো। কেউ হাততালি দিয়ে। গ্রীষ্ম নিজেও নিজের বুকে লুকিয়ে নিলো মার্জানকে। সকলের সামনে হাটু গেঁড়ে বসে প্রপোজ করলো ওঁ,

” উইল ইউ ম্যারি মি জান? ”

মার্জান আবেগে আপ্লুত হ্যাঁ নিজেও বসে পড়লো গ্রীষ্মের মুখোমুখি। জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি রা-জি”

খুশিতে দুজনেই জড়িয়ে ধরেলো এঁকে অপরকে। নির্ঝর সহ সকলেই পিছন থেকে, দেখে জ্বলছে অনেকের মন।কেউ করছে হিংসা, কেউ করছে দোয়া। কিন্তু ওঁদের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মার্জান আর গ্রীষ্মের। নিজেদের নিযে ব্যস্ত যুগল বেড়িয়ে গেলো ওখান থেকে। হাতে হাত ধরে পাড় হতে চায় এবার ওঁরা সাতশত তেরো নদীর পার। গ্রীষ্ম গাড়ি ড্রাইভ করছে। মার্জান গ্রীষ্মের কাঁধে মাথা পেতে আছে। গ্রীষ্মের শরীরের মন মাতানো সুবাসে মুগ্ধ হয়ে চোখ বুজে আছে মার্জান। গ্রীষ্ম এবার মুখ খুললো,

” কখনো ছেঁড়ে যাবে না তো জান?”

” কখনো না।”

” মার্জান আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”

গ্রীষ্মের কন্ঠ সিরিয়াস হতেই মার্জান মাথা তুললো। পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে উঠলো। বাহিরের বর্জপাত করে নেমে এলো বৃষ্টি। মার্জান অধির আগ্রহে চেয়ে আছে গ্রীষ্মের দিকে। গ্রীষ্ম সামনে তাকিয়ে আছে সামনে। গ্রীষ্ম গাড়ি ধীরে করে চালাচ্ছে। মুখ খুললো ওঁ,

” জান… তুলতুল..”

কথাটুকু পুরো করবার পূর্বেই গাড়ির সামনে এসে ধাক্কা খায় একটি মেয়ে। মেয়েটি দেখে মার্জান গ্রীষ্ম দু’জনেই চমকে যায়….।

চলবে,

#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
পর্ব-২৬
রূপালী চাঁদ আজ নেই, ঘন কালো অন্ধকার তিমির। তাল মিলিয়ে ঝুপ করে নেমেছে বর্ষণ। ঠিক যেন মার্জানের চোখের মতো। কিছুক্ষণ আগের হুট করে হয়ে যাওয়া ঘটনাটি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না মার্জান। কতই না খুশি ছিলো ওঁ! বরাবরের মতো এবারো গ্রীষ্ম তাকে ছেড়ে চলে গেলো???
মার্জানের গাওয়া গানটুকু দূরে কোথা থেকে ভেসে আসছে। রাস্তার নিয়ন আলোয় বৃষ্টির ফোঁটা গুলো হলদে দেখাচ্ছে। মার্জান মাঝ রাস্তায় ঝুপ করে বসে পড়লো। চোখের কোন বয়ে নোনা জল ঘোলা করে দিচ্ছে সামনের দৃষ্টি। মার্জান এক পলক হারিয়ে যেতে দেখলো গ্রীষ্মে চকচকে গাড়িটি হারিয়ে গেলো রাস্তার বাঁকে।

তখন হুট করে একটি মেয়ে গাড়ির সামনে চলে আসায় হকচকিয়ে উঠে দু’জন। কিন্তু পরমুহূর্তেই ঝাপসা ভেসে উঠা মুখটি দেখে থমকে যায় দু’জন। কিন্তু গ্রীষ্মের মুখে ‘ তুলতুল’ নাম শুনে থমকায় সে। গাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে নেমে পড়ে। কিন্তু মেয়েটি ততক্ষণে অন্য দিকে ছুটে গেলো। ওঁর পিছনে ছুটছে কিছু রাস্তার ভিখারিরা….। মার্জান গাড়ির ভিতর সেভাবেই বসে রইলো মুর্তির ন্যায়। জীবনের এই মোড়টায় এসে মার্জানের মনে হচ্ছে ওঁর হাতে নেই কিছু… সব কিছু যেন হাড়িয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে…. নিজের অজান্তেই চোখের জল জমে গেলো ওঁর চোখের কোনে।আচ্ছা ওঁর এখন কি করা উচিত? ওঁ কি তাঁদের মাঝে চলে এলো? মার্জানের কি চলে যাওয়া উচিত? ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে, গ্রীষ্মের খবর নেই। তাহলে কি গ্রীষ্ম আর ফিরবে না? কি করবে মার্জান? ওঁর অন্তরাত্মা যেন বলছে,

” বরং শেষটুকু দেখে যা…….”

গ্রীষ্ম দৌঁড়াচ্ছে। ঝুম বৃষ্টির মাঝে অফুরন্ত পথ যেন সামনে। ওঁ পিছন পিছন ‘তুলতুল, তুলতুল ‘ বলে চিল্লাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি দাপট বাড়ায় কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না যেন। এদিকে তুলতুল অতি ক্ষুদায় কাতর হয়ে একটি খাবার ডাস্টবিন থেকে তুলে, যেই মুখে দিতে লাগলো, তখনি কিছুু ভিক্ষারী হামলে পড়লো ওঁর উপর। ওঁ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে রাতে বের হতো। কিন্তু এদের খপ্পরে এভাবে পড়ে যাবে কে জানতো? ওঁ দৌড়াতে দৌড়াতে একদম শেষ মাথায় চলে আসে রাস্তার। গুটিসুটি মেরে বসে যায় ওখানে। হাত জোড় করে বলে উঠে,

” আমাকে জেতে দাও…. প্লিজ যেতে দাও।”

কিন্তু কাজ হয় না। ওঁর সকলেই তুলতুলকে মারার জন্য উদ্ধৃত হতে গ্রীষ্ম একধমক দিলো।তুলতুলকে দেখার পর থেকেই ওঁর শরীর কেমন যেন ভাড় হয়ে উঠলো। কেউ বুঝি ঘাড়ে উঠে বসেছে? সারা শরীর আগুনের মতো গরম হয়ে গেলো। সকলেই পালিয়ে গেলো। গ্রীষ্মকে দেখে তুলতুল নিজেও চমকালো। বিড়বিড় করে নাম আওড়ালো,

” গ্রীষ্ম!”

গ্রীষ্ম তুলতুলের সামনে বসে পড়লো নয়ন জোড়া ভেজা। জিজ্ঞেস করলো,

” কোথায় হারিয়ে গেছিলে তুমি? কত খুঁজেছি তোমায়? ”

তুলতুল গ্রীষ্মের গালে হাত রাখে। অবাক, বিষ্ময়ে বুঁদ হয়ে হাসে। শান্তি শ্বাস ফেলে বলে উঠে,
” তোমাকে আমি পেয়েছি গ্রীষ্ম। পেয়েছি।”
বলেই ফুপিয়ে উঠ। গ্রীষ্ম ওঁকে সামলিয়ে প্রশ্ন করে,
” এত দিন কই ছিলে? ”
তুলতুল হেচকি তুলে বলে উঠে,

, “সব বলবো, আমাকে বাসায় নিয়ে যাও?”
গ্রীষ্ম তুলতুলকে কোলে তুলে নিলো। এই মুহুর্তে যেন গ্রীষ্মের ব্যক্তিত্ব হুট করেই পালটে গেলো। যেন আষাঢ়ের অস্তিত্ব জেগে উঠলো। গ্রীষ্ম ধীরে ধীরে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। গ্রীষ্মের কোলে সেই মেয়েটিকে দেখে মার্জানের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। গ্রীষ্ম মার্জানের সাইডের দরজা খুলে ভ্রু কুচকে ফেললো। তুলতুলকে কোলে নিয়ে কোঠর গলায় বলল,

” তুমি এখনো এখানে কি করছো? বের হও, ওঁটা আমার তুলতুলের জায়গা।”

মার্জান আকাশ থেকে পড়লো,

” গ্রীষ্ম এসব কি বলছো?”

গ্রীষ্ম যেন শুন্তে পেলো না কিছু। এক ঝটকায় মার্জানকে টেনে বের করে দিলো। যেন গ্রীষ্ম মার্জানকে চেনেই না। মার্জান হতভম্ব হয়ে গেলো গ্রীষ্মের কান্ডে। তুলতুলকে বসিয়ে উল্টো সিটে নিজে বসে পড়লো। তুলতুল মার্জানের টলমলে চোখ দেখে গ্রীষ্মের হাত ধরে বলে উঠলো,

” কি করছো গ্রীষ্ম, এত রাতে ওঁকে এখানে ফেলে যেও না। ওঁ একটা মেয়ে মানুষ। আর আমার থেকে বেশি কেউ জানে না, এঁকা রাতে বের হওয়া কত টাফ।”

গ্রীষ্ম তাচ্ছিল্য হাসলো। তুলতুলের গাল স্পর্শ করে বলে উঠলো,

” মেরি জান… তুমি চিন্তা করো না। ওঁর জন্য মানুষের অভাব হবে না। ঠিকি কোনো না কোনো আশিক ওঁর চলে আসবে। তুমি শুধু আমার কথা ভাবো।”

মার্জানের এসব শোনে কান যেন গরম হয়ে গেলো। দু’কদম পিছিয়ে গেলো ওঁ সত্যি? সত্যি কি এই গ্রীষ্ম কিছুক্ষণ আগে গ্রীষ্ম? যে ওঁকে ভালোবাসে বলে দুনিয়া জানিয়েচে? মার্জানের বুকে ভেতরটা ভার মনে হলো। মার্জান কিছু বলবে এঁর আগেই গ্রীষ্ম গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলো। ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো মার্জান।

কিছু মুহূর্ত পর মার্জানের মাথার উপর কেউ ছাতা ধরতেই মার্জান হুশে ফিরলো। সামনে তাকিয়ে রাফানকে দেখে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকালো। রাফান ওঁকে এক্সপ্লেইন করলো,

” আমি সামনেই মিটিং এ এসেছিলাম। তুমি এখানে কি করছো মার্জান?”

মার্জান নিজের ভাগ্যের উপর হাসলো উপহাস করে বলল,
” বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছিলো তাই ভিজতেছি।”

রাফান সন্দিহান চোখে তাকায়। মুলত মার্জানের অনুষ্ঠানেই গেছিলো রাফান। গ্রীষ্মের সাথে বের হওয়া এবং এখানে পর্যন্ত আসা নিয়েও ওঁদের পিছন পিছন ছিলো। গ্রীষ্মের করা কান্ড সব কিছু দেখেছে রাফান। কিন্তু কিছু বলেনি। রাফান বরাবরই চায় মার্জান সুখে থাকুক। তাইতো নিজের ভালোবাসার কথাটুকু এখনো মুখ ফুটে বলতে পারেনি। রাফান নিজের হাত টুকু বাড়িয়ে দিলো। মার্জান ধরলো না। নিজের হাতে ভর দিয়ে উঠে পড়লো। এবং এগিয়ে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু হিলের গোরা কোথাও বেজে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো কাদামাটি উপর। এবং কোনো উঠার চেষ্টা না করেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো মার্জান। হয়তো এটাই বুঝি ওঁর আসল জায়গা? মার্জানতো কখনো চায় নি তৃতীয় ব্যক্তি হতে। তৃতীয় ব্যক্তি হবে না বলেই তো ভাদ্রের কথা জানার পর নাকোচ করেছে। তাহলে বুঝি এই তৃতীয় ব্যক্তির খেতাব টা পেতে চলেছে? ওঁর দাদিজান ঠিক বলেছিলো,
” গ্রীষ্ম তোমাকে কখনো ভালোবাসানে, বাসেনি, বাসবেও না। কারন ওঁর মনে অন্য কারো বসবাস”

গ্রীষ্মের সাথে রিলেশনে যাওয়া নিয়ে মার্জান অনেক কথায় শুনেছে। তবুও কোনো এক অজানা টান অনুভব করে সব সময়। মার্জানকে এভাবে পড়ে কাঁদতে দেখে রাফান সময় অবিলম্ব না করে মার্জানকে টেনে কোলে তুলে নিলো।এবং জোড় করেই গাড়িতে বসালো। এবং গাড়ি স্টার্ট দিলো। ওঁদের গাড়ি চলে যেতেই গ্রীষ্ম তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,

” আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম তুলতুল, ওঁর জন্য কেউ না কেউ ঠিকি চলে আসে….।”

————————

রাতের আকাশে একফালি চাঁদ খিল খিল করে হেসে উঠলো। কিছুক্ষণ আগে বৃৃষ্টির দমকা কোথাও যেন নেই… তুলতুলকে গাড়ি থেকে নামি ভিতরে নিয়ে এলো গ্রীষ্ম। খবর পেয়ে চুটে এলেন দাদিজান। এসেই জড়িয়ে ধরলেন নাতনিকে। অনিতা নিজেও খুশি কিন্তু হঠাৎ আসা কোনো তুফানের গন্ধ পাচ্ছে সে। ওঁ গ্রীষ্মের দিতে তাকালো, জিগ্যেস করলো,

” গ্রীষ্ম মার্জান কোথায়? তুই না আজ ওকে প্রপোজ করতে গেলি?”

গ্রীষ্ম কথাটা তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলে উঠলো,

” তুলতুল এসেছে আম্মিজান ওঁর কথা চিন্তা করো আপাদত।”

অনিতার কেমন একটা লাগলো গ্রীষ্মের কথায়। ওঁ তো আম্মি*জান ডাকে না। আম্মিজান ডাকতো আষাঢ়। আচ্ছা এমনতো নয়? গ্রীষ্মের আবার এ্যাটাক এসেছে?? ভাবতেই অনিতার। ঘাম ঝড়তে লাগলো কঁপাল বেয়ে। কিন্তু মা-পুত্রের কথার মাঝেই দাদিজান চেঁচালেন,

” তোমার মতো অলক্ষি ঘরে… থাকলে যা হয়! আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, তুলতুল হবে গ্রীষ্মের অর্ধাঙ্গীনি।”

অনিতা মনে মনে খুব কষ্ট পেলেও কথা পাল্টে কাছে গেলো তুলতুলের। মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” তুলতুল, ছ’বছর আগে ঠিক কি হয়েছিলো? আর আষাঢ়…. ওঁ কোথায় বেচে আছে না…”

বলেই আবার ফোপাঁতে লাগলো অনিতা। তুলতুল নিজেও কেঁদে দিলো। অনিতাকে সে খুব ভালোবাসে। নিজের মায়ের মতো করে। সবসময় স্বপ্ন দেখতো তুলতুল অনিতার পুত্র বধূ হবার। তাইতো ছোট থেকে মনে প্রাণে চাইতো গ্রীষ্মকে।। তুলতুলে অনিতার হাত দু’টো ধরে বলল,

” আন্টি মা। আমি সব বলবো। আমাকে একটু পানি দাও।”

পানি আনা হলো। তুলতুলকে ঘিরে বসে আছে সবাই। তুলতুল বলতে শুরু করলো,

“সেদিন ছিলো পূর্ণিমার রাত। আমাকে ঘিরে ছিলো সবাই। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের তীরেই চলছিলো আমাদের পার্টি। আষাঢ় ভাইয়া বসেছিলো চেয়ারে। বরাবরই ওঁর ছিল মাথা গরম। গ্রীষ্ম পাশেই বসে গেইম খেলছিলো। গুরুগম্ভীর আষাঢ় তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। ছোট থেকেই আষাঢ় ভাইয়া আমাকে নিয়ে সেনসিটিভ এবং এগ্রেসিভ ছিলো। এটা করবি না ওটা করবি না। শাসনে রাখতো। সব থেকে বেশি যাতে বাঁধা দিতেন, তা ছিলো ছেলেদের থেকে দূরে থাকা। ওই দিন রাতে পার্টিতে আমার ফ্রেন্ড আহিল গেছিলো। সেদিন সবাই একটু-আধটু ড্রিংস করে। ওঁ একটু বেশি করে ফেলে। আমার সবাই ডান্স করছিলাম। ঠিক তখনি আহিল আমাকে প্রপোজ করে বসে। আর তা আষাঢ় ভাইয়া সইতে পাড়লো না। সকলের সামনে মেরে বসলো ওঁকে। মারতে মারতে ছেলেটিকে আধ মরা করে ফেলে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ওদিকে গ্রীষ্মও কোথায় জানি চলে যায়। আমি কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে যাই,

” আষাঢ় ভাইয়া, কি করছো? ছাড়ো…”

ভয়ে ভয়ে বললাম আমি। আমি ছোট থেকেই ভয় পেতাম আষাঢ় ভাইয়ার রাগকে। দেখতে দু’ভাই এক রকম হলেও গ্রীষ্ম ছিলো ঠান্ডা মস্তিষ্কের। কিন্তু তার উল্টো ছিলো আষাঢ় ভাইয়া। কুব জলদি উনার রাগ উঠে যেতে। এবং কন্ট্রোল করতে পারতেন না উনি। আর ওই দিন তার এই রাগ আমার জীবনের ছ’টা বছর নষ্ট করে দেয়। আমি ভাইয়াকে না করায়, ভাইয়া আরো ক্ষেপে যায়,

” কষ্ট হচ্ছে বুঝি নাগড়ের জন্য? বলে ছিলাম না দূরে থাকতে ছেলেদের থেকে? ”

হিসহিসিয়ে বলে উঠলো আষাঢ় ভাইয়া।

” আমি কেন শুনবো আপনার কথা? আপনি শুধু আমার কাজিন ব্রাদার এর বেশি কিছু না। বার বার নিজেকে আমার গার্জিয়ান দেখাতে আসবেন না। আমি নিজের ভারো বুঝি।কার থেকে দূরে থাকবো? কার কাছে বা কার কোলে চড়ে বসবো সবটাই আমার ইচ্ছে। আপনি বলার কে?”

আমি রাগের মাথায় যাতা বলে বসি। কিন্তু পরমুহূর্তেই আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে কাছে এনে আষাঢ়। আমি ভয়ে আধমরা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো, উনার এভাবে আমার হাত টেনে ধরায়। কিন্তু উনার মাথায় রাগ জেনো চেপেই বসেছিলো। সকলের সামনে থেকে টেনে নিয়ে আমাকে হোটেল রুমে নিয়ে আসে। এবং খাটের উপর ফেলে দেয়। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমার উপর চড়ে বসে, এবং গলা টিপে বলে…

এ পর্যায় কেঁদে উঠলো তুলতুল।

বলে, এতো তেজ তোর? আমি কে হই তাই না? অন্য সবার কোলে পর্যন্ত উঠবি? আমি কিছু বলবো না??

বলেই আষাঢ় ভাইয়া আমার সারা শরীরে কামোড় বসাতে লাগলো।আর পাগলের মতো বলতে লাগলো,

” আজকের পর যতবার আয়না দেখবি, ততবার মনে হবে আমি তোর কে!”

আমি নিজেকে ছাড়াবার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। সে রাতে আষাঢ় ভাইয়া আমাকে…..

বলেই আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অনিতার মুখে হাত চলে যায়। কিন্তু দাদিজান বিশ্বাস করতেই পাড়ছেন না যেন। উনি নির্ঘাত ভুল শুনছেন? উনি তোতলানো সুরে বলেন,

” আষাড়… তোমার… সাথে…”

কথাটুকু তুলতুল শেষ করলো,

” হি রেই*পড মি….”

চলবে,