জোয়ার ভাটা পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
481

#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
৩০। (শেষ পর্ব)
“গ্রীষ্ম?”
মার্জান বিড়বিড় করে। লোকটি ভ্রু-কুচকায়,
“মিস আর ইউ ওকে?”
বলেই গ্রীষ্মের রূপি ব্যক্তিটি থমকে গেলো চোখ বড় বড় করে মার্জানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আশ্চর্য হয়ে তাঁর-ও ঠোঁট দু’টি নড়ে উঠলো,
“তুলতুল?”
মার্জান কথাই বলতে ভুলে গেছে যেনো।কিন্তু পরক্ষণেই নিজের ভুল শুধরে ফেললো। সামনের যুবকের মুখে, গ্রীষ্মের মতো মসৃণ তিল নেই। মার্জানের হৃদপিণ্ড জোরে জোরে ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো। তায়ানশাহ্ হুঁশ হারিয়েছে। মার্জান এখন ঠিক কি করবে বুঝতে পারছেনা। ওঁর মাথা কাজ করছে না..সামনের ব্যক্তিটি কি সত্যি আষাঢ়? এর মানে কি? আষাঢ় বেঁচে আছে? মার্জানের ভাবনার মাঝেই হুট করে পিছন থেকে আর্তনাদ করে উঠলো,
“বস?”
বলেই লোক গুলো এ-দিক ও-দিক ছুটে পালিয়ে গেলো। আষাঢ় আর মার্জান তখন-ও তাকিয়ে আছে দু’জনের দিকে।মার্জান নিজেকে সামলে বলে উঠলো,
” আপনি আষাঢ় না?হ্যাঁ আপনি আষাঢ় তো।”
আষাঢ় স্তম্ভিত। কিছু খুঁজে চলছে মার্জানের মুখ মন্ডলের মাঝে। মার্জানের বুঝতে বাকি নেই… সবার মতোই তুলতুল মনে করছে আষাঢ়। মার্জান তাই আষাঢ়ের উদ্দেশ্য সবটা ক্লিয়ার করে বলে উঠলো,
” মি: আষাঢ় আমি মার্জান।আপনি কত বড় সেইলফিস! আপনার জন্য আপনার ভাই মাল্টিপল ডিসঅর্ডারে ভুগছে। আপনার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন করে দিচ্ছে, আর আপনি এখানে, লুকিয়ে? ওয়া…ও। ব্রাভো বস ব্রাভো।”
আষাঢ় এতক্ষণে মুখ খুললো। ওঁর চোখ জোড়া এখনো দ্বিধান্বিত। তুলতুলের মত মেয়েটি দেখতে, তবে তুলতুল নয়.. কিন্তু ওঁকে কিভাবে চিনে মেয়েটি? আর অতসব বলছে কোন হক নিয়ে?
” তুমি আমাকে কিভাবে চিনো?”
মার্জান মাথায় দু’ই হাত দিয়ে চেপে ধরলো,
” কথা সেটা না আমি কিভাবে আপনাকে চিনি। কথা হচ্ছে এইটা, আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আপনার জন্য আপনার ভাই বিয়ে করতে চলছে।”
বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো আষাঢ়,
” এই মেয়ে কখন থেকে আজেবাজে কি বকছো? তুলতুল মারা গেছে… আই নো দ্যাট। তোমাকে বলতে হবে না।”
বলেই আষাঢ় পিছনে ফিরে যেতে নিলো। ঠিক তখনি মার্জান তার ফোন বের করে নিউজ ফিডের ট্রেন্ডিং গ্রীষ্ম আর তুলতুলের এনগেজমেন্ট ভিডিওটা দেখালো। আষাঢ় কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। তুলতুল মারা গেছে ভেবেই তো দেশ ছেঁড়েছিলো আষাঢ়। আর এখন সেই তুলতুল ওঁকে ভুলে খুশি খুশি গ্রীষ্মের অর্ধাঙ্গী হতে চলছে? এত সাহস? আষাঢ়ের চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলো। হাত শক্ত করে মুঠ করতেই ওঁর হাতের পেশীগুলোর মাঝে থাকা সুক্ষ সুক্ষ রগ ভেসে উঠলো। মুহুর্তের জন্য মার্জান নিজেও ঘাবড়ে গেলো। গ্রীষ্মের থেকে আষাঢ়ের রাগ যেন বরাবরই বেশি। আষাঢ় মার্জানের দিকে ঠান্ডা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
” তুমি এসব কিভাবে জানো?”
মার্জান প্রশ্নটি এড়িয়ে গেলো,
“নান ওফ ইউর বিজনেস। ”
বলেই আষাঢ়কে পিছনে ফেলে চলে গেলো তায়ানশাহ্-র কাছে। ওঁকে ধরে একটি টেক্সিতে উঠি চলে গেলো আষাঢ়কে পিছনে ফেলে..।
————————
শিপ্রা নিজের মতো গুন গুন করছে… ওঁদের বাড়ির বাহিরে অনেক গোলাপ গাছ। গাড়ো লাল রঙ্গের। মজার বিষয় এদের এখানে ব্লাডি রোজ বলা হয়। তার কারণ জানতে চাইলে অনেকেই বলে, অনেক কাল আগে এই গাছে ফুল তুলতে গেলে বা ডাল ভাঙলে রক্ত বের হতো। যদিও কথিত কথা… এঁর ভিত্তি আজো মিলেনি। তবুও শীপ্রা এদের পরিচর্চা করে। বাংলাদেশে ওঁ এই গাছ সে লাগিয়েছে। অনেক ফুল ও ফুঁটেছে। শীপ্রা এই ফুলদের সাথে সারাদিন কথা বলে,
” জানিস আমার জীবনে তার ছিঁড়া একটি লোক আছে, তোদের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছি.. দ্যা ব্লাডি তায়ানশাহ্”
বলেই খিলখিল করে হাসলো। ঠিক তখনি মার্জানের কন্ঠ ভেসে এলো,
” শিপ্রা, কল দ্যা রাফি। ইটস ইমারজেন্সি ”
শিপ্রা পিছনে ফিরলো,
” কার কি হয়েছে…”
বলতে বলতে থেমে গেলো শীপ্রা। রক্তাক্ত অবস্থায় তায়ানশাহ্কে দেখে শীপ্রার বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো,
” কি হয়েছে ওঁর?”
” সব বলছি, রাফিকে আগে কল কর।”
শিপ্রা সঙ্গে সঙ্গে কল করলো। রাফি ১০ মিনিটের মাথায় উপস্থিত হলো। তায়নশাহ্-কে দেখেই প্রশ্ন ছুঁড়লো, হয়েছে টা কি? মার্জান ছোট শ্বাস ফেলো সব বলল। রাফি বিরক্তি নিয়ে তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলল,
” আমি ভাই হিসেবে তোমাকে বাঁচাতে চাই না। আমি চাই তুমি মরে যাও। কিন্তু একজন ডাক্তার হিসেবে তোমার প্রাণ বাঁচানো আমার জন্য ফরজ।”
বলেই মার্জান আর শিপ্রাকে বাহিরে যেতে বলল। শিপ্রার মনে ভয় হচ্ছে, চোখের কোনে ঝলক দিচ্ছে এক ফোঁটা জল। মার্জান বুঝতে পেরে হাত রাখলো শিপ্রার কাঁধে,
” ভালোবাসিস?”
মার্জানকে জড়িয়ে ধরলো শিপ্রা,
” জানি না… কবে ওঁর প্রতি ঘৃণা ভালোবাসার রূপ নিলো।”
মার্জান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এটাকেই বুঝি বলে, ” পাথরের বুকে ফুল ফোঁটা?” তায়ানের চোখেও শিপ্রাকে হারিয়ে ফেলার ভয় দেখেছে মার্জান। দু’ মেরুর মানুষ গুলো বুঝি এমনি হয়? কোনো মিল নেই, না পছন্দের, না জাত বংশের আবার কখনো বা ধর্মের। ভালোবাসা নাকি কঠোর মন গলিয়ে ফেলতে পারে… আজ তার প্রমাণ পেলো মার্জান। রাফি ঘন্টা খানেক পর শিপ্রার রুম থেকে বের হলো। হল ঘরে বসে থাকা সকলের উদ্দেশ্য হতাশার সাথে বলল,
” আউট ওফ ডেঞ্জার। ”
শীপ্রা স্বস্তি ফিরে ফেলো। ভয়ে রাফিকে পাল্টা উত্তর করতে পারলো না। তবে শিপ্রার অশান্ত মন আনচান করতে লাগলো একটি বার দেখবার জন্য তায়ানশাহ্-কে। রাফি বোনের ভাবসাব দেখে শক্ত গলায় প্রতিটি শব্দে জোর দিয়ে বলে উঠলো,
” খবরদার যদি ওঁর ঘরের আশেপাশে তোকে দেখি তো… ভারো হলেই বিদায় করবি এখান থেকে, নয়তো তোকেও আউট করে দিবো।”
শিপ্রা মাথা নত করে ফেললো। সেদিন কোন রকম কেঁটে গেলেও পর দিন ঠিক রাফি যেতেই উঁকি দিলো তায়ানশাহ্-র রুমে। তায়ান তখন গভীর ঘুমে। ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। প্রশস্ত বুক উঠছে আর নামছে। সফেদ মুখে ব্যথার কারণে মলিন হয়ে গেছে। শিপ্রা তায়ানশাহ্-র পাশে বসলো। খুব ইচ্ছে করলো ওঁর, তায়ানশাহ্-র শুকনো ঠোঁটে ভেজা চুমু খেতে। অসুস্থ হয়েও এত সুন্দর কেন লাগছে তায়ানকে? শিপ্রা তায়ানের গালে হাত রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে তায়ান চোখ খুলতে শিপ্রা ছিটকে দূরে সরে যেতে চাইলো। তায়ান তখনি ওঁর হাত ধরে ফেললো। ভ্রু কুচকে চাইলো তায়ান, ব্যথিত্ব কন্ঠে বলে উঠলো,
” অসুস্থ লোকের ফাঁদা দিনতে চাইছো?এত সহজ? ভুলে যেও না আমি তায়ানশাহ্।”
শিপ্রা নিচের কঁপালে নিজে বাড়ি মারতে চায়। কোন দুঃখ এখানে এসেছিলো ওঁ। শিপ্রার ভাবার মাঝেই তায়ানশাহ্ আবার বলে উঠলো চট করে,
” আমি তোমাকে মাফ করতে পারি এক শর্তে, আমার খুব খিদে পেয়েছে, আই নিড সাম ফুড। তুমি আমাকে রান্না করে খাইয়ে দাও, তাহলেই তোমাকে ক্ষমা দিবো!”
শিপ্রা তায়ানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। এই বদ লোক কখনো পাল্টাবে না। বুঝে গেছে শিপ্রা।
———————
তুলতুল খুব সুন্দর করে বউ সেজেছে। দাদিজানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
” দাদিজান আমায় কেমন লাগছে?”
দাদিজান মুখ ঘুড়িয়ে ফেললেন। তুলতুল কেঁদে ফেললো। দাদিজানেন মনে হলো, এই মুহুর্তে উনার হাতের বাঁধন খোলা থাকলে ওনার শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে থাপ্পড় লাগাতেন। তুলতুলের নেকামো একদম পছন্দ হচ্ছে না উনার। আজ মনে হচ্ছে, আষাঢ় থাকলে মেয়েটিকে দু’মিনিটে সোজা করে ফেলতো।তুলতুল কান্না থামিয়ে এবার দাদিজানের কাছে গেলো। চোখে জল মুছে বলল,
” তুমিই তো চাইতে সবসময় আমি গ্রীষ্মের বউ হই, আজ কেন এমন করছো? তুমি আশীর্বাদ না দিলে, আমি কখনো সুখী হবো বলো?”
দাদিজান তীর্যক দৃষ্টিতে চাইলেন,
“অন্যের খুশি কেঁড়ে কেউ কখনো সুখী হতে পারে না তুলতুল। তুমি ভুল করছো.. বড় ভুল করছো।”
তুলতুলে ডুকরে উঠলো। দাদিজানের মুখে টেপ মেরে বলে উঠলো,
” আমি গ্রীষ্মকে ভালোবাসি, কেন বোঝো না দাদিজান। কেন বোঝো না।”
গ্রীষ্মের বিয়ের লাইভ টেলিকাস্ট চলছে টিভি আর সোশ্যাল মিডিয়ায়। মার্জান থম মেরে বসে দেখছে সব সাজ সজ্জিত বিয়ের আসর। তুলতুল হাসছে, হাতে মেহেদি দেখাচ্ছে সবাইকে। কিন্তু নেই শুধু গ্রীষ্ম। কিছুক্ষণের মাঝেই গ্রীষ্মের আগম ঘটে,একে একে শুরু হয় বিয়ের প্রতিটি ধাপ। কবুল বলার সময় আসতেই টুপ করে ফোন বন্ধ করে দিলো। মৃণালকে মার্জান পাশের বাসার এলেক্সের সাথে খেলতে পাঠিয়েছে। বাচ্চাটি বাবার অন্য কারো সাথে বিয়ে দেখলে নির্ঘাত কাঁদবে? মার্জানের হঠাৎ মনে হলো, ওঁর বড্ড শ্বাস কস্ট হচ্ছে।তাই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পেশের একটি পুলের উপর উঠে পড়লো। ঠান্ডা বাতাস ওঁর শরীর শীতল করে তুলছে। মার্জান চোখ বুজে নিশ্বাস নিতে লাগলো, সতেজ,স্নিগ্ধ বাতাস।

এদিকে তুলতুলকে কবুল বলতে বলা হলো। তুলতুল খুশি মনে চিৎকার করে বলল,
” কবুল, কবুল, কবুল।”
গ্রীষ্মের পালা আসতেই গ্রীষ্ম চুপ। ওঁর মাঝে এই মুহুর্তে কোনো রকম ভাবান্তর নেই। দাদিজানকে পেলেই মেয়েটিকে উচিত শিক্ষা দিতো। কিন্তু ওঁর এখন হাত বাঁধা।মার্জানের কথাও খুব মনে পড়ছে গ্রীষ্মের। কি করছে ওঁর জান? আচ্ছা বিয়ের ভিডিও কি সে দেখছে? ওঁর রিয়েকশন এখন কেমন? আর মৃণাল? নিশ্চয়ই আজকের বড় পাপাকে ঘৃণা করবে? গ্রীষ্ম সপ্তপর্ণ শ্বাস ছাড়লো। গ্রীষ্মকে চুপ থাকতে দেখে তুলতুলের ভয় হচ্ছে, ভয়ংকর রকমের ভয়। গ্রীষ্ম কেন কবুল বলছে না? কেনো? হোয়াই? আজ ওঁদের বিয়ে না হলে, গ্রীষ্মকে পাবার চান্স নেই, একদম নেই। তুলতুল কাঁদো কাঁদো মুখে তাকালো,
” গ্রীষ্ম দাদিজান তিন দিন যাবত ঔষধ খাচ্ছে না, খাবার খাচ্ছাে না। আর কিছুক্ষণ এমনি চললে দাদিজান….”
গ্রীষ্মের মন চাইলো তুলতুলকে ঠাটিয়ে এক চর মারতে। কিন্তু নিজেকে সংযোগ করেছে যেই মুখ খুলবে তখনি একটি যুবকের কন্ঠ ভেসে এলো,
” এ বিয়ে হবে না।”
সামনে আষাঢ়কে দেখেই তুলতুল ভয়ে কেঁপে উঠলো। গ্রীষ্মের চোখ মুখ চক চক করে উঠলো। আষাঢ় এগিয়ে এসে তুলতুলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” বিবাহিত মেয়ে ডিবোর্স ছাড়া কখনোই বিয়ে করতে পারে না। আর তুমি বিয়ের আসরে সেজেগুজে বসে পড়ছে? বাহ্, বাহ্।”
তুলতুল ঘাবড়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো,
” কি যাতা বলছেন আপনি… আজ আমার বিয়ে, গ্রীষ্মের সাথে আমার বিয়ে, আপনি…. আপনিকে? হু আর ইউ?”
আষাঢ় হাসলো, ওঁর হাসিতে তুলতুল কেঁপে উঠলো। গ্রীষ্মের কাছে গিয়ে ওঁর হাত জোর করে বলল,
” গ্রীষ্ম, আজ আমাদের বিয়ে, কবুল.. কবুল বলো। প্লিজ কবুল বলো।”
গ্রীষ্ম এক রকম ঘোরে চলে গেছিলো আষাঢ়কে দেখে। কিন্তু তুলতুল বিবাহিত জানার পর ওঁ যেন বড় রকমের শকড খেয়েছে। এদিকে তুলতুলের নেকামো দেখে আষাঢ় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। সকলের সামনে ঠাটিয়ে মারলো চর। ছিটকে মাটিতে পরে গেলো তুলতুল। উপস্থিত সবার মুখে হাত। বিয়ে খেতে এসে এখানো যেন ফ্রীতে ফিল্ম দেখছে। তাই রহিম চাচা আর অনিতা সবাইকে আসতে বললো। অনিতা অবাকতা কন্ঠে ধরে আষাঢ়ের কাছে এসে বলল,
” তুই এত দিন কোথায় ছিলি বাবা?”
আষাঢ় ওঁর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আম্মি আমি ভেবেছি আমার জন্য তুলতুল মারা গেছে, তাই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু মার্জানের সাথে দেখা না হরে জানতেই পারতাম না এত কিছু।”
তুলতুল এবার চিৎকার করে উঠলো,
” মার্জান, মার্জান, মার্জান। কি আছে ওঁর মাঝে সবাই শুধু মার্জান, মার্জান করছে। গ্রীষ্ম ভুলে যেও না দাদিজান আমার কাছে?”
তখন আষাঢ়ের দৃঢ় কন্ঠ ভেসে আসে,
” কে বলছে, দাদিজান তো এখানে।”
তুলতুলের এবার পায়ের নিচ থেকে মাটি স্বরে যায়। সেখান থেকে পালিয়ে যেতে নিতেই আষাঢ় ওঁর বাহু চেপে ধরে, দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
” বউ কই যাও? তোমার সাথে এখনো আমার হিসাব নিকাশ বাকি।”
অনিতা তখন বলে,
“তুই তুলতুলকে বিয়ে কবে করলি?”
আষাঢ় বলল,
“যেদিন ওঁর ১৮ বছর হয়েছিলো সেদিন আমরা কোট মেরেজ করি।”
সবাই তুলতুলের দিকে তাকালো। তুলতুল নত করে ফেললো মাথা। আষাঢ় আবার বলল,
” আম্মি, দাদিজান তোমাদের মার্জান আর মৃণালকে ফিরিয়ে আনা উচিত। ”
বলেই গ্রীষ্মের দিকে চাইলো। কিন্তু গ্রীষ্ম সেখানে নেই। বুঝতে আর বাকি নেই, গ্রীষ্ম ওঁর গন্তব্য খুঁজে নিতে চলে গেছে। কিন্তু এদিকে আষাঢ়ের তপ্ত রাগ নিয়ে তুলতুলকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ওঁর ফার্ম হাউজে। জামাই থাকতেও পরপুরুষের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন তুলতুল যেন আজ হারে হারে টের পাবে। হুট করেই তুলতুলের সামনে কক্সবাজারের ভয়ানক সেই রাতে কথা মনে পড়ে গেলো যে রাতে রেপ করে ছিলো আষাঢ় তুলতুলকে, এসব ভেবেই ভয় কুঁকড় যাচ্ছে ওঁ। তুলতুল কখনো ভাবেনি এভাবে আষাঢ় সামনে এসে সব প্লেন ভেস্তে দিবে। তুলতুলের ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে থামলো বিশাল এক বাড়ির সামনে। আষাঢ় তুলতুলকে টেনে নিয়ে আছড়ে ফেললো মাটিতে… এর পর বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের মার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে উঠলো,
” আষাঢ়ের ভয় কেঁটে গেছে তাই না..”
তুলতুর কাকুতি মিনতি করতে লাগলো,
” আমাকে যেতে দাও… প্লিজ।”
————————
আজ মৃণালের জম্ম দিন। মৃণাল আল্লাহ কাছে দোয়া চাইলো,
” আল্লাহ আমি এই জন্মদিনে পাপা আর মমিকে এক সাথে চাই। ”
বলেই নিচে নেমে এলো।গুটি গুটি পায়। সবাই ঘুম কিন্তু রান্নাঘরের সামনে এসে থেমে গেলো মৃণাল। কে এই সাত সকালের রান্নাঘরে? মৃণাল উঁকি দিলো। নিজের পাপাকে আটা-ময়দা মাথা গায়ে লেগে। এক প্রকার চিৎকার করে কোলে উঠে গেলো,
” পাপা, পাপা, পাপা।”
গ্রীষ্ম ছেলেকে কোলে চুমু খেলো,
” পাপাকে মিস করে ছো?”
মৃণাল দু হাত চওড়া করে বললো,
” অনেক।”
গ্রীষ্ম খেয়াল করলো মৃণালের দাঁত পড়েছে দু’টো সে অবাক হয়ে বলল,
” আল্লাহ আমার ছেলের দেখি দাঁত পড়ে গেছে, সে-তো বুড়ো হয়েছে।”
বলতেই মৃণাল খিলখিল করে হেসে উঠলো। বাপ পুতের হাসির শব্দ মার্জান চোখ ডলতে ডলতে এলো,
“মৃণাল বাচ্চা তুমি কার সাথে কথা…”
বলেই থেমে গেলো। গ্রীষ্মকে দেখেই চোখের জল আর আটকে রাখতে পারলো না। মার্জা দৌঁড়ে ঘরে চলে গেলো। বুকের মাঝে হঠাৎ করেই যেন অদ্ভুত ভালোলাগার শিহরণ খেলা করছে। মার্জান মুখ চেপে কেঁদে উঠলো, এ কান্না কিসের কান্না? সুখের না দুঃখের? নাকি গ্রীষ্মকে ফিরে পাবার। মার্জান অনুভব করলো এক জোরা হাত ওঁর পেটের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে। মার্জানের ছুটবার কোনো তারা নেই। সে নিস্তেজ। গ্রীষ্ম মার্জানের সরু ঘারে চুমু খেলো,
” জান… আমরা কি সবটা নতুন করে শুরু করতে পারি না? জোয়ার-ভাটার মতো উঁচ নিচ হতেই থাকবে লাইফে। তাই বলে আমরা থেমে থাকতে পারি না.. বলো?”
মার্জান তখনো চুপ। গ্রীষ্ম এবার মার্জানকে নিজের দিকে ঘোরায়, গ্রীষ্মের মুখে লাগা আঁটা মার্জানের মুখে লাগিয়ে দেয়,
” ম্যারি মি।”
মার্জান হা করে চোখ বড় বড় করে ফেলে। ঠিক তখনি টুপ করে চুমু খায় ওঁর খোলা ঠোঁটে। অবিশ্বাস্য চোখে চাইতেই, গ্রীষ্ম সিরিয়াস ভাবে বলে উঠে,
” আমাদের ছেলে ওঁর একটি বোন চায়। যার নাম হবে মৃণালিনী। এঁর জন্য অবশ্যই এখন থেকে ট্রাই করা উচিত কি বলো? চলো শুরু করি?”
বলতেই মার্জান কঁপাট রাগ করে উঠে। পাশেই রাখা বিছানার ঝাড়ু নিয়ে তারা করে গ্রীষ্মকে। তা দেখে হাতে তালি দিয়ে লাফিয়ে হাসে ফোঁকলা দাঁতে মৃণাল। সময়ের ব্যবধানে আজ যেন সুখের স্পর্শ ফেলো মার্জান। সব দুঃখ ভুলে, জোয়ার-ভাটার মাঝেই শেষ হবে ওঁর আরেকটি অধ্যায়। এদিকে শিপ্রা এখনো অপেক্ষারত, তায়ানশাহ্ হুট করেই আবার কোথাও হারিয়ে গেছে। ক্ষনে ক্ষনে সময় গুনে শিপ্রা.. ব্যক্তিটিকে কখনো না কখনো বাঁধনে আটকাবেই সে….ওঁদের জীবনের জোয়ার-ভাটা-ও একদিন দূর হবে।

শেষ পর্ব