ঝরা পাতা পর্ব-০৪

0
2289

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_০৪

হঠাৎ করে শাহেদ মিয়াঁর বড় মেয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করছে।বেঁচারা শাহেদ মিয়া কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।তিনি মেয়ের রুমের বাহিরে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়ের এমন ছেলেমানুষি তাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিচ্ছে।

শাহেদ মিয়াঁ তার মেয়েকে বলে,”মা আজ বাদে কাল তোর জন্মদিন!তুই হঠাৎ এমন পাগলামি করছিস কেনো?”

রাইসা বলে,”বাবা আমি বিয়ে করতে চাই।জন্মদিনের দিন একজন কে!সেদিন এবাড়িতে আসবে তাকে বিয়ে করবো।যদি তার সাথে বিয়ে দাও তাহলে বলো।
নয়তো এখুনি সুইসাইড করলাম।”

শাহেদ মিয়াঁ বলেন,”মা রে এমন ছেলেমানুষি করিস না প্লিজ!মেয়ের বিয়ে নিয়ে বাবার অনেক বেশি স্বপ্ন থাকে।তোকে তো আরো লেখাপড়া শেখাতে চাই আমি।তুই শিক্ষিত হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজে মাথা উচুঁ করে চলবি।”

রাইসা বলে,”ধুর বাবা! বাদ দাও তোমার নীতিকথা! আমার এতো শিক্ষিত হাওয়ার ইচ্ছা নাই।
এতো কষ্ট করে শিক্ষিত হয়ে,সেই তো পরের বাড়িতে গিয়ে ভাত রান্না করে খেতে হবে।চাকুরী করলেও ঠিকি সংসারের চিন্তায় মগ্ন থাকতে হবে।তাহলে এতো কষ্ট করে পরার কি দরকার। শেষ বেলায় সব মেয়েদের স্বামী আর সন্তানের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।”

শাহেদ মিয়াঁ বলে,”মেয়ের এমন চিন্তা-ভাবনাতে সে স্তব্ধ। তারপর ও মেয়ের কথা চিন্তা করে বলে, মা তুই দুনিয়াদারি কিছুই জানিস না!এমন ঝোঁকের মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে নাই।এর ফল সারাজীবন তোকে বয়ে বেড়াতে হবে!”

এমন সময় আয়না বেগম বলে,”এতো কথার কি আছে।মেয়ে বিয়ে করতে চাইছে রাজী হয়ে যাও।বিয়ের পর তো আমাদের দোষ দিতে পারবে না।যে আমরা পছন্দ করে বিয়ে দিয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি। বরং ও যদি নিজের পছন্দের ছেলের সাথে সুখে থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমাদের আর কি চাই।”

অর্ণা বলে,”মামী মা তাই বলে,তো রাইসা কে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে দিতে পারি না।চেনা নেই জানা নেই।বাড়ির ঠিকানা জানি না। পরিবারের খবর নেই তার সাথে কি ভাবে বিয়ে দিবা।বিয়ে তো বাচ্চাদের হাতের খেলনা না।”

মামী মা অর্ণাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”বিয়েটা যে বাচ্চাদের হাতের মোয়া না!তা তোর মা বিয়ের পর বুঝতে পারছিল। বাড়ির সবার মুখে চুনকালি দিয়ে যে বিয়ে করেছিল। তার থেকে তো আমার মেয়ে অনেক গুণ বেশি ভালো।সে নিজে যেচে এসে বিয়ের কথা বলছে।মেয়ে যখন মুখ ফুটে বিয়ের কথা বলেছে তখন তার বিয়ে দিয়ে দেওয়াই উওম।”

শাহেদ মিয়া তার বউয়ের এমন কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারেন মেয়ে তার মা’র মাথাটা ভালো মতোই চিবিয়ে খেয়েছে। তাই মা মেয়েকে বোঝানো বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।নিজের বড় মেয়েকে নিয়ে তার সব আশা আজ শেষ।

সে বুকের উপর একটা বড় পাথর রেখে বলে,”রাইসার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হবে।আমি বিয়ের সব ব্যবস্থা করছি।”

অর্ণা তার মামু জানের সামনে গিয়ে বলে,”মামু জান তুমি কি করে এসব পাগলামি মেনে নিতে পারো।রাইসার জীবনটা তো একদম শেষ হয়ে যাবে।”

শাহেদ মিয়া অর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”যে মেয়ে বাবার মুখের উপর নিজের বিয়ের কথা বলে সেখানে আর কিছু বলার নেই।”

রাইসা রুমের দরজা খুলে এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরে।তার বাবা মেয়ের সামনে থেকে মাথা নিচু করে চলে যায়।
অর্ণা রাইসা কে বোঝাতে চেষ্টা করে কিন্তু রাইসা অর্ণার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।

অর্ণা তার মামী মা’র কাছে বিয়ের সম্পর্কে কথা বলতে যায়!মামী তা উল্টা অর্ণা কে বলে,”তোর বুঝি এখন হিংসা হচ্ছে? যে তোকে রেখে আমার বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি? দেখ তুই একদম আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে নাক গলাতে আসবি না।এটা আমাদের ব্যক্তিগত বেপার।”

অর্ণা বলে,”মামী আমি রাইসা কে আপন ছোট বোন ছাড়া কিছুই ভাবী না।”

আয়না বেগম বলে,”হ্যাঁ আপন বোন দেখে তো।তার সংসার শুরু হবার আগে ভাঙ্গার ব্যবস্থা করছিস। ”

রাইমা এসে অর্ণার হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গিয়ে বলে,”আপু অযথা এ বিয়ে নিয়ে তুমি নাক গলাতে যেওনা।অযথা অপমানিত হবে।নিজের আত্মসম্মান নিয়ে চুপচাপ থাকো।শুধু কি কাহিনী হয় তা দেখতে থাকো।”

এদিকে শাহেদ মিয়াঁ ছোটখাটো করে মেয়ের জন্মদিনের দিন তার বিয়ের আয়োজন করেছেন।

রাইসা নিজেই মার্কেটে গিয়ে বিয়ের সব কিছু কিনে আনে।রাইসার হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ দেখে
অর্ণা রাইসা কে জিজ্ঞাস করে,”মামু জানের কাছে তো এতো টাকা নেই।তুই এতো টাকা কোথায় পেয়েছিস কেনাকাটা করার জন্য?”

মামী মা এসে বলে,”আমার মেয়ের বিয়ে বলে কথা!
টাকা আমি দিয়েছি তোর সমস্যা?”

অর্ণা বলে,”নাহ,আমার কিছুই বলার নেই।”

কিছু সময়ের মধ্যেই বাড়িটা বিয়ে বাড়ির মতো মুখরিত হয়ে যায়।

অর্ণা চুপচাপ শুধু কাজ করে যাচ্ছে।এ অনাচার সে সহ্য করতে পারছে না।তার মামু জানের চাঁদের মতো মুখটা আমাবস্যার কালো মেঘে ঢাকা।

রাইসার জন্মদিনের দিন সকাল থেকে অর্ণা প্রতিদিনের মতো সব কাজ করতে শুরু করে দেয়।

হঠাৎ মামী মা এসে বলে,”তোর আজ আর বাড়িতে থাকতে হবে না।কোনো বান্ধবীর বাড়িতে থাকবি।আমি চাইনা তুই আমার মেয়ের বিয়ের আসরে উপস্থিত থাক!”

অর্ণা বলে,”মামী মা আমি কার বাড়িতে থাকতে যাবো?”

মামী মা বলে,”জানি না!তোর যেখানে মন চাই তুই থাকবি।দরকার হলে রাস্তায় থাকবি তবুও বাড়িতে আসবি না।”

অর্ণা বলে,”মামী মা আমি ঘরের মধ্যেই থাকবো! বাহিরে ভুল করেও আসবো।তবু মানুষের বাড়িতে যেতে বলো না।আমাকে?”

মামীর একি কথা তোকে যে বলেছি তুই তাই করবি।
আমি এর উপরে কথা শুনতে চাই না।

অর্ণা মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে যায় রেডি হতে।

রাইসা এদিকে খুব সুন্দর করে বউয়ের সাজে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়।দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে আসে।



চলবে…