ঝড়া পাতা পর্ব-০৩

0
2704

#ঝড়া_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_০৩

এদিকে সুমাইয়া বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নামার সময় বলে,”আপনাকে আমার পছন্দ না হলেও, আমার বান্ধবীর ছোট বোন কিন্তু খুব পছন্দ করেছে।
ইচ্ছা হলে ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন!”

ড্রাইভার লোকটা রাগী দৃষ্টি তে সুমুর দিকে তাকিয়ে থাকে।তার চোখে সুমাইয়ার চোখ পড়তেই তাড়াতাড়ি সে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।

সুমু তো ঘরে এসে ভাবতে থাকে!রাইসা সত্যি কতো বোকা মেয়ে,মানুষের বাহিরের সৌন্দর্য দেখেই পাগল হয়ে যায়।আরে রাইসা কী জানে,”মাখাল ফলের বাহিরে দেখতে সুন্দর! বাহিরে যতো বেশি সুন্দর তার থেকে বেশি কুচ্ছিত ভেতরটা।!

রাইসা যথেষ্ট সুন্দর কিন্তু অর্ণা সুন্দরির সামনে অন্য কারো চান্স হয় না।অর্ণা যদি না থাকে তখন না হয় আমরা এ শহরের ছেলেদের চোখে পড়বো।

মেয়েটা অনাথ! অনেক কষ্ট সহ্য করে বড় হয়েছে!
তবে অনাথ দের ভাগ্যে না কি কষ্ট বেশি থাকে।সবাই তাদের অনাদর করে বেশি।তবে তারা এই অসহায়তার জন্য সব মানুষের করুণা আর ভালোবাসা বেশি পায়।

বাদ দে সুমু অর্ণার কথা ভাবা!কিছুদিন পর অনার্স ফাইনাল পরিক্ষা সেই চিন্তা কর!প্রতিবারের মতো নয়তো দেখবি এবারো অর্ণা ফাস্ট হবে।সেই ছোট থেকে অর্ণার সাথে বন্ধুত্ব। কোনোদিন ও মেয়েটা কে লেখাপড়া থেকে শুরু করে কিছুতে হারাতে পারি নাই।তবে ইচ্ছা আছে হারানোর কিন্তু সব কিন্তুর কারণ হয় না।

এদিকে রাইসা তার মা’কে ঘরে গিয়ে কি যে বোঝায় বলে তা রাইসা ভালো জানে।

মামী মা নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা অর্ণার রুমে চলে যায়।

অর্ণা পরছিল!হঠাৎ মামী কে দেখে সে চমকে ওঠে,কারণ মামী মা কখনো ভুল করেও তার রুমে আসে না।তা আজ সূর্যি মামা কোন দিকে উদিত হয়েছে? যে মামী মা আমার রুমে।মনে মনে ভাবে অর্ণা!

অর্ণা বলে,”মামী মা আমাকে কি কোনো কাজ করতে হবে?তুমি ও ঘর থেকে ডাক দিলেই আমি চলে আসতাম। তুমি কষ্ট করে আসতে গেলে কেনো?”

মামী মা কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠেন, “আমার বাড়ি!আমার ঘর! আমার যখন যেখানে ইচ্ছা আমি যাবো তাতে তোর কি?”

অর্ণা নরম শুরে বলে,”জ্বি মামী!”

মামী মা বলে,”তা আজ সুমাইয়া গাড়ির ড্রাইভার কে দেখেছিস? ”

অর্ণা মাথা দু দিকে দুলিয়ে কি বোঝালো তা সেই ভালো জানে।

মামী মা বলে,”শুনলাম ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না।টাকাও ইনকাম করে ভালোই। রাইসার খুব পছন্দ হয়েছে। ”

অর্ণা বলে,”মামী মা!চেনা নেই,জানা নেই!এমন একটা লোক কে কি পছন্দ করা উচিৎ? তা ছাড়া রাইসা এখনো অনেক ছোট ওর পড়াশোনা করা উচিৎ। নিজে স্টাবলিশ হলে চাকুরীজীবী অথাবা বড় কোনো বাড়ির বউ হতে পারবে।”

মামী মা বলে,”তোকে এতো লেখাপড়া করিয়ে কি লাভ হলো।দু দিন পর তো বিয়ে করে পরের বাড়িতে চলে যাবি।আর তাছাড়া রাইসাকে এতো পড়ানোর খরচ কি তোর বাপ এসে দিবে?”

মামীর মুখে নিজের বাবার কথা শুনে অর্ণা তার নিচু মাথা উচুঁ করে মামীর চেহারা দেখতে থাকে।

মামী মা বলে,”তোর চোখ এতো বড় বড় করে আমাকে দেখার কিছু নাই।যা সত্যি তাই বলেছি! তোর বাপ আজ পর্যন্ত তোর কোনো খবর নিলো না।তুই বেঁচে আছিস কি মরে গেছিস। আরে কেমন বাপ ঐ লোকটা যে তার নিজের মেয়ের খবর নেই না।এপৃথীবতে পুরুষ মানুষের রুপ বদলাতে সময় লাগে না।গাছের পাতা যেমন ঝরে পড়ে গেলে পাতার কদর থাকে না।ঠিক তেমন তুই ঝরে যাওয়া পাতা #ঝরা_পাতা তুই।তোর মা মরার পর থেকে ঝর পাতার মতো আমার ঘরে বোঝা হয়ে আছিস। ”

রাইমা এসে দেখে অর্ণা নিরবে শুধু চোখেরজল ফেলে যাচ্ছে। রাইমা বলে,”মা তোমার ঐ ফোকলা দাঁতের ফাঁকা দিয়ে আর কতো কথার বিষাক্ত ছুড়ির আঘাত করবে আপুকে? ”

মামী মা বলে,”চলে আসলো আমার ছোট কন্যা অনাথ বোনের তরফদারি করতে।ধুর তোদের সাথে কথা বলাই উচিৎ না!বলে সে রুমের বাহিরে চলে যায়।”

রাইমা অর্ণা কে বলে,”অর্ণাপু তুমি এবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারো না?মা’র কাছ থেকে দূরে গিয়ে শান্তিতে থাকতে পারো।”

অর্ণা বলে,”মামী কড়া কথা শোনাই!মামু জান এসে মাথায় পিতার স্নেহময় ভালোবাসার পরশ দেয়।এসব কি দূরে গেলো পাবো বলতো?”

রাইমা বলে,”অর্ণাপু তুমি খুব ভালো!দেখো তোমার সাথে আর কখনো খারাপ কিছু হবে না।”

অর্ণা রাইসা কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।মামু-জান
অর্ণার রুমে এসে দেখে বেচারির চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আসে।সে খুব ভালো করে বুঝে গেছে আজও তার বউ মেয়েটাকে বাপ মায়ের খোঁটা দিয়েছে হয়তো।এই বউ নিয়ে আর পারেন না শাহেদ মিয়াঁ।অনেক শখের বউ তার অনেক সুন্দর নাম আয়না বেগম। কিন্তু মাঝে মধ্যে শাহেদ মিয়াঁর মনে হয় বউ তার আয়না না হায়না বেগম।সে তার ব্যবহার দিয়ে এটাই বোঝায় সে আয়নার থেকে হায়নার চরিএের বেশি অধিকারী।তার নিজের যে দুইটা মেয়ে আছে। সে কথা সে ভুলেই গেছে।নিজের মেয়ের কষ্ট চোখে পড়ে কিন্তু চোখের সামনের এই অভাগী মেয়েটার কষ্ট চোখে পড়ে না।

আজও শাহেদ মিয়াঁ অর্ণা কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”মা রে ঐ হায়নার কথায় তুই কষ্ট পাবি না।তাহলে তোর মামু জানের ও যে কষ্ট হয়।বলে সে চোখ মুছতে মুছতে চলে যায়।”

আদরের বোনটা মরার পর এই মেয়েটা কে নিয়ে আসে ভালোবেসে বড় করার জন্য! কিন্তু বউয়ের হায়নার মতো ব্যবহারের সামনে তার কিছুই করার নেই।তার সংসারের হাল এই হায়না বেগম ধরে আছে।হয়তো মেয়েটা কে দিয়ে প্রচুর কাজ করিয়ে নেয়।কথা বলে কর্কশ ভাবে তবে ভালোবাসা অন্তরের কোণায় ঠিকি আছে।

____এদিকে রাইসা সুমাইয়াকে কিছুই না বলে হঠাৎ করে ওদের বাড়িতে চলে আসে।সুমু সে সময় বাগানে বসে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছিল।এমন সময় সামনে তাকিয়ে দেখে রাইসার তাদের বাড়ির ড্রাইভার কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।সুমু চট করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয় তার ক্যামেরা তে।

সুমু কে দেখতেই রাইসা ড্রাইভার কে ছেড়ে দেয়।সুমু এসে বলে,”বাহ একদিনের দেখাতে এতো মাখো মাখো সম্পর্ক। ”

ড্রাইভার বলে,”আপনি যা ভাবছেন তেমন কোনো কিছুই হয়নি।আরে উনি তো।”

তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রাইসা বলে,”আরে আপু বোঝো না!এটা প্রথম দেখায় ভালোবাসার কাহিনী। ”

ড্রাইভার রাইসা দিকে অগ্নি দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলে,”বেয়াদব মেয়ে!সব কিছুর একটা লিমিট থাকে।তুমি তো দেখছি সব লিমিট ছাড়িয়ো যাওয়া বেয়াদব।
মেয়েদের এতোটা বেশি বেয়াদব হওয়া উচিৎ না।নাক টিপলে দুধ বাহির হবে তার মুখে কি সব কথা ছিহহহ।”

রাইসা বলে,”আরে আপনার মতো ড্রাইভার কে যে আমার মতো সুন্দরি মেয়ে পছন্দ করেছে এটাই আপনার ভাগ্য।আমার মতো সুন্দরি আপনাকে নিজের বর করতে চাইছে এটাই কী কম বড় পাওয়া আপনার? আপনার তো নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করা উচিৎ।”

ড্রাইভার বলে,”এই মেয়ে এগুলো কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো।জানো তুমি..”

সুমু ড্রাইভার কে থামিয়ে দিয়ে বলে,”এই রাইসা তুমি হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে কি মনে করে আসছো?”

রাইসা বলে,”দু দিন পর আমার জন্মদিন।আর আমার জন্মদিনের বাড়িতে বাবা একটু অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তা তো তুমি জানোই কেনো করে। তাই তোমাকে দাওয়া দিতে আসছি তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে।আর সাথে ওনাকে নিয়ে আসবে।বলে লজ্জায় লাল হয়ে সেখানে থেকে চলে যায়।

রাইসা যাবার পর ড্রাইভার বলে,”আমি আপনার সাথে ঐ বেয়াদব মেয়ের বাড়িতে কখনো যাবো না বুঝতে পারছেন।”

সুমু বলে,”আপনি আমার সাথে যেতে বাধ্য বুঝলেন!”

লোকটা বলে,”সময়ের হাতে আমি বাধা! নয়তো এমন অপমান সবাই করতে পারতো না। আর কোনো কথা না বলে নিজের চুল ছিঁড়তে লাগে।”

সুমু একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যায়।

এদিকে রাইসা বাড়িতে ফিরে এসে এমন কান্ড বাধিয়ে দেয় তাতে বাড়ির সবাই চোখে ছানাবড়া দেখতে থাকে।

(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)



চলবে…..