ঝরা পাতা পর্ব-০৬

0
2567

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_০৬

ভার্সিটির গেটের সামনে হাটু গেড়ে একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে বসে আছে রোহান রায়হান।
উদ্দেশ্য আজ কোনো যে মেয়ে আসবে তাকে সে আই লাভ ইউ বলবেই।

এমন সময় একটা ভদ্র মার্জিত পোশাক পরিহিত মেয়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে যায়।

মেয়েটা নিজের সামনে এমন ভাবে কাউকে বসে থাকতে দেখে একটু লজ্জা পেয়ে ফুলটা গ্রহণ করতে হাত বারাতেই কেউ একজন এসে রোহানের হাত থেকে ছোঁ দিয়ে ফুলটা নিয়ে নেয়।

কাবাবের মাঝে হাড্ডি কে হলো তা দেখতে তারার দু জন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে আরেকটা মেয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

রোহান উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটার হাত থেকে ফুলটা এক টান দিয়ে কেড়ে নিয়ে বলে,”এই মেয়ে তোমার তো সাহস কম না!তুমি আমার হাত থেকে ফুলটা কেড়ে নিচ্ছ? ”

রাগি মেয়েটা রোহানের সামনে চেঁচিয়ে বলে,”এটা ভার্সিটি! এখানে সবাই লেখাপড়া করতে আসে!
এমন রাস্তার মাঝে প্রেম পিরিতি করার কি দরকার? ”

রোহান বলে,”এটা যে ভার্সিটি তা আমিও জানি।আমার যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে তোমার সমস্যা কোথায় বেদ্দপ মেয়ে।”

এবার রাগি মেয়েটা রোহানের শার্টের কলার ধরে বলে,”how dare you? তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে বেদ্দপ মেয়ে বলার?এই অরিন খান কে কি তোমার রাস্তার মেয়ে মনে হয়?”

রোহান অরিনের হাত থেকে নিজের শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”এই মেয়ে বুঝি না তোমার সমস্যা কী!আজ দুই তিন বছর আমার পেছনে জোঁকের মতো লেগে আছো কেনো?”

অরিন হাতে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”oh,hello mister আমি আপনার পেছনে কবে থেকে জোঁকের মতো লেগে আছি। নিজের ভুল ধারণা গুলো বদলে ফেলুন।”

রোহান বলে,”কিসের ভুল ধারণা হ্যাঁ?সব সময় আমার পথে কাটার মতো ঘাড়ে এসে পড়ো।এই তোমার জন্য আমি মেয়েটাকে ঠিক মতো প্রপোজ করতে পারলাম না।”

অরিন বলে,”বড়দের দেখানো পথে আমরা ছোটরা হাটবো!আপনারা যদি এই সব প্রেম পিরিতি শেখান তাহলে সমাজ তো রসাতলে যাবে।”

রোহান বলে,”এই মেয়ে ভার্সিটি তে পড়তে আসছো পড়ো! আমার বেপারে নাক গলাতে আসবে না।”

অরিন এবার রোহান কে কিছু না বলে সামনে থাকা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ঐ মাইয়া ভার্সিটি তে নতুন আমদানি মনে হচ্ছে। তা আসতে না আসতেই এমন সুন্দর পোলার প্রপোজাল দেখে গলে যাওয়ার কি আছে?”

মেয়েটা বলে,”Excuse me!নিজের ভাষা সংযোত রেখে কথা বলতে শেখো।আমি কি করবো না করবো তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাবো না বুঝলে অসভ্য মেয়ে।বড়দের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় তা বুঝি বাড়ির মানুষেরা শিক্ষা দেয়নি? ”

অরিন বলে,”একদম আমার পরিবারের মানুষ কে টেনে কথা বলবেন না।নয়তো একদম আলুরদোম বানিয়ে ছাড়বো।”

মেয়টা বলে,”আমাকে দেখে কি তোমার অসহায় মেয়ে বলে মনে হচ্ছে?তুমি হতে পারো বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া মেয়ে।আমি বড়লোক বাড়ির মেয়ে না।যথেষ্ট সুশিক্ষা নিয়ে আমি বড় হয়েছি।”

অরিন বলে,”দেখতেই তো পারছি কতোটা সুশিক্ষায় শিক্ষিত।একটা অপরিচিত ছেলের কাছ থেকে গোলাপ নিতে হাত বাড়িয়ে দিতে তো লজ্জা করছিল না।”

তুমি অনেক সময় ধরে অযথা বক বক করছো মেয়ে।আর একটাও যদি বাড়তি কথা বলেছো তোমার ফ্যামিলির কাছে বিচার দিতে বাধ্য হবো।

রোহান মাঝে এসে বলে,”ভাইয়ের আদুরী বোন।বাড়িতে বিচার দিতে গেলে উল্টা আপনার বিচার করতে বসবে ওর ভাই।”

অরিন বলে,”রোহাইইইইন আর একটা কথায় যদি বলছেন আমার ভাইকে নিয়ে তাহলে গোবরের পুকুরে চুবিয়ে আনবো।”

রোহান একটু চিন্তার ভঙ্গীতে বলে,”তুমি ঢাকা শহরে গবরের পুকুর কোথায় পাবে?”

অরিন :-আমার ভাইকে বলে তৈরি করাবো শুধু মাএ আপনাকে চোবাতে।

রোহান অরিনের সামনে একটু ঝুকে বলে,”আমি স্পেশাল কেউ না কি? যে আমার জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা করবে?”

অরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর কলিজার টুকরো বান্ধবী পিংকী এসে বলে,”ওরে আমার মা!তুই এইবার চুপ যা।আর কতো পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবি?”

অরিন রাগী দৃষ্টিতে বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে,”ওই কুত্তী তুই আমার বান্ধবী না ঐ পোলার প্রেমিকা?”

পিংকী বলে,”এমন ভাবে কেউ তার বান্ধবী কে বলতে পারে?ছিঃ ছিঃ!”

অরিন -বান্ধবী না ছাই!শত্রুর থেকেও বেশি খারাপ! ওদের সামনে আমাকে অপমান করছিস কেনো ডায়নি বুড়ি।

মেয়েটা মাঝে বলে ওঠে, “বাহ তোমার মুখের ভাষা তো অনেক সুন্দর! ”

অরিন -এই মেয়ে তোমাকে তো আমি…

মেয়েটা রোহানের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে,”ওহে মিস্টার আমি তারিফা ইসলাম, একাউন্টিং এ মাস্টার্স এর স্টুডেন্ট। ”

রোহান তাড়াতাড়ি হাতে হাত মিলিয়ে বলে,” আমি রোহান রায়হান, আমিও একাউন্টিং এ মাস্টার্স করছি।যাক পরিচিত হয়ে খুশি লাগলো।”

ওদের দু জনের এমন কাহিনী দেখে অরিনের কলিজায় আগুন লেগে গেছে।সে পারলে এখুনি রোহানের হাত ভালো করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়।

এদিকে রোহানের দিকে তাকিয়ে তারিফা একগাল হেসে ধন্যবাদ বলে।

রোহান লাজুক ভাব নিয়ে মাথা নিচু করে বলে,”তা ঐ
গোলাপ ফুলের বেপারটার কিছু ভাবলে?”

আসলে হয়েছে কি তাই বলে তারিফা রোহানের হাত থেকে গোলাপ ফুলটা নিয়ে বলে,”ভার্সিটির প্রথম দিন এমন গোলাপ ফুল পাওয়া ভাগ্যের বেপার।তবে আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে আমি আপনার প্রস্তাবে রাজী না।তবুও আপনাকে সবার সামনে অপমান করবো না তাই গোলাপ ফুলটা নিতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।”

রোহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আজ পাঁচ টা বছর এই ভার্সিটিতে পড়ছি কোনো মেয়ে আমার জিএফ হতে রাজী হয় না।আল্লাহ জানে আমি এতো সুন্দর এতো কিউট,স্মার্ট হওয়ার পর ও কেনো কোনো মেয়ে প্রেম করতে চাই না।

তারিফা বলে,”একদম আফসোস করবেন না।চেষ্টা করে দেখেন কেউ না কেউ ঠিকি পটে যাবে।একদম হাল ছাড়বেন না।”

রোহান তারিফার কথা শুনে বলে,”তার মানে you are me,something something তাই না।”

তারিফা বলে,”মোটেই না!”

তারিফা অরিনের সামনে এসে বলে,”এই মেয়েটা মনে হয় আপনাকে পছন্দ করে।এই গোলাপটা দিয়ে তাকে প্রপোজ করে দেখতে পারেন।”

রোহান বলে,”এই জীবনে একলা থাকলেও তো ভাইয়ের আদুরী ডায়নির সাথে রিলেশনশিপ করতে যাবো না।”

অরিন বলে,”আমাকে পাগলা কুত্তায় কামড়াই নাই যে তোর মতো বান্দরের লগে প্রেম করতে যাবো।উগান্ডার ভাল্লুক কোনেকার হুহ।”

অরিন পিংকীর হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায়।
এদিকে রোহান তারিফা কে সাথে করে পুরো ভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখাতে থাকে।তারিফা আর রোহান একসাথে ক্লাসে যায়।ক্লাসের বেশ কিছু ছেলে মেয়ের সাথে তারিফার ভাব হয়ে যায় মানে বন্ধুত্ব্ব হয় আরকি।

এদিকে পিংকী অরিন কে বলে,”আচ্ছা অরিন সত্যি করে একটা কথা বলতো তুই কি ঐ রোহান কে পছন্দ করিশ!মানে ওরে ভালোবাসিস না কি?”

অরিন বলে,”তোরে তেলাপোকায় কামড়াইছে না কি? এমন গাঁজাখুরি প্রশ্ন করছিস কেনো?”

পিংকী বলে,”তাহলে তোর এতো চুলকাই কেনো রোহানের আগে পিছে কোনো মেয়ে ঘুরঘুর করলে?”

অরিন বলে,”ঐ সাদা বানরের পিছনে কোনো মেয়ে ঘুরঘুর করলেও আমার সমস্যা নাই।কিন্তু ওরে কোনো মাইয়ার সাথে দেখলে মেজাজ বিগড়ে যায়।”

পিংকী বলে,”হুম বুঝতে পারলাম! তুই যে ঐ সাদা ভাল্লুকের কাছে মন হারিয়ে ফেলেছিস তা বুঝতেই পারছি।”

অরিন পিংকী কে পিটাতে উঠে!পিংকী ভৌ-দৌড় দেয় মাঠের দিকে।

অরিন অনেক সময় দৌড়ানি দিয়ে পিংকীকে ধরে আচ্ছা মতো কিল দেয়।তারপর ওর ঘাড় ধরে কেন্টিনের দিকে যাচ্ছিল!

হঠাৎ অরিন দেখে রোহান আর তারিফার সাথে কেন্টিনের বসে হেসে হেসে কথা বলছে।

ওদের এমন হাসাহাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছিল অরিনের। অরিন আর ওখানে না দাঁড়িয়ে সোজা পিংকীর হাত ধরে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।




চলবে…..