ঝরা পাতা পর্ব-০৭

0
2568

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_০৭

একটা ভাঙ্গা কাচের ছবির ফ্রেম এর সামনে দাঁড়িয়ে খুুব জোড়ে চিৎকার করে একটা মেয়ে কান্না করছে।একবছর আগে একটা অনাথ মেয়ের বিয়ের পর তার যে মৃত্যু হয় সে খবর কি কেউ রাখে?
সেদিন কি সত্যি তার জীবনটা বদলে গিয়েছিল?
না কি তার জীবনটা বিষাদের হয়েছিল সে খবর কেউ জানে।সেদিনের পর কেউ কখনো অর্ণার খবর নেই নি।অর্ণা নামের মেয়েটার মৃত্যু হয়।
এর জন্য দায়ী কে?
তার বর না তার পরিবারের সদস্য?
ঝরাপাতার মতো মেয়েটা বিয়ের পর ও ঝরে যায়!
এটাই কি ওর নিয়তি ছিলো।
নাহ সেদিনের পর অর্ণা আর কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।যারা চেয়েছিল অর্ণার ক্ষতি তার সত্যি সফল হয়েছিল। কিন্তু অর্ণার বিয়ের পরের কাহিনী সত্যি কুয়াসা।
অর্ণার সাথে যা হয়েছিল সবটা কি ভাগ্যের দোষ না কি এখানে কোনো ধোঁয়াসৃষ্টিকারী ছিলো।কিন্তু অর্ণার ক্ষতি করে কার কি লাভ ছিলো?
সব উওর তো সেই দিবে।
সব কিছু বাহিরে করার জন্য আমি এসেছি।
অর্ণার সব স্বপ্ন আশা নষ্ট করার হিসাব সবাইকে দিতে হবে।সেদিন অর্ণা ঝরা পাতার মতো ঝরে গেছে।
আমি তো ঝরে যায় নি।



অরিন সকালে রেডি হয়ে নাস্তা করে সোজা তার ভাই আয়াশ খান কে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাইয়া আমি যা চাইবো তুমি তাই দিবে তো আমাকে?”

আয়াশ বলে,”আমার কলিজার টুকরো বোন তুই!তুই যা চাইবি আমি তোকে তাই দিতে বাধ্য।যদি সম্ভব হয় ঐ আকাশের চাঁদটা তোর নামে লিখে দিবো।”

অরিন বলে,”আচ্ছা ভাইয়া সমস্যা নেই!আমার যেদিন ইচ্ছা হবে আমি তোমার কাছে চাইবো।আর হ্যাঁ সেদিন তোমাকে তা দিতেই হবে।”

আয়াশ বলে,”তুই আমার প্রাণ টা যদি নিতে চাস তাও আমি হাসতে হাসতে দিয়ে দিবো।”

অরিন -না থাক আমার কারো প্রাণের দরকার নেই।
তুমি আমাকে এভাবে ভালোবাসা দিলেই হবে।

অরিনের মা মমতা খান এসে বলে,”আয়াশ তুই এভাবে তোর বোন কে মাথায় তুলে রাখিস না।তোর বউ আসলে তখন বিপদে পড়বি।”

অরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,”আমি কি শাঁকচুন্নি?
যে ভাই বিয়ে করলে বিপদে পড়বে।”

মমতা খান বলে,”তুই তার থেকে কম না কোনো দিক দিয়।বাবা আর ভাইয়ের আদরে বাদর হয়ে গেছিস। ”

অরিন আয়াশ কে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাইয়া দেখো মা আমাকে কি বলে।”

আয়াশ বলে,”আমি জীবনে বিয়ে করবো না।তাই আমার বোনকে এসব কথা বলা বাদ দাও মা।”

মমতা খান বলে,”দেখছিস বাদর মেয়ে তোর জন্য আয়াশ না কি জীবনে বিয়ে করবে না।”

অরিন বলে,”এটাই প্রকৃত ভালোবাসা।আমিও সারাজীবন এ বাড়িতে থাকবো।বিয়ে করলেও ঘরজামাই আনবো।”

মমতা খান মেয়ের কান ধরে বলে,”ওরে ফাজিল মেয়ে!তোর জামাইরে রাখছি দাঁড়াও ঘরজামাই। ”

অরিন ওর মায়ের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুখ গোমড়া করে চলে যায়।

আয়াশ বলে,”মা,এভাবে ওর পিছনে না লাগলেই তো পারো।”

অরিনের মা বলে,”তোর বোন এখন অনেক বড় হয়েছে। কিছুদিন পর তার বিয়ে দিতে হবে।তাই ওকে এতো মাথায় করে রাখিস না যাতে পরে শ্বশুরবাড়ির পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারে।”

আয়াশ বলে,ওহ হো মম তুমি সব সময় এতো বিয়ে বিয়ে করো কেনো।অরিন কে লেখাপড়া করে নিজের যোগ্যতা অর্জন করতে দাও তো বলে বাহিরে চলে যায়।”
,
,
,
পরেরদিন সকালে ভার্সিটি তে আসার পর সে কেন্টিনের গিয়ে দেখে রোহান আর তারিফা খুব হেসে হেসে কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে।

অরিন সেখানে দিয়ে যেতে লেগে ইচ্ছা করে করে কফির মগটাকে ধাক্কা দিয়ে তারিফার ড্রেসের উপর ফেলে দেয়।

রোহান উঠে অরিন কে বলে,”এই চোখ কি বাড়িতে রেখে আসছো না কি? আর এটা কি তোমার বাবার বাড়ি মনে হয় যা ইচ্ছা তাই করবে?মেয়েটার পুরো ড্রেস নষ্ট করে দিলে।”

তারিফা বলে,”আরে রোহান এতো রিয়াক্ট করার কিছু নেই।হয়তো বুঝতে পারে নাই এমন কিছু হবে।আচ্ছা আমার সমস্যা নেই। তাহলে তুমি এতো রিয়াক্ট করছো কেনো?”

রোহান বলে,”তুমি এমন নষ্ট ড্রেস নিয়ে কিভাবে বাকি ক্লাস গুলো করবে?”

তারিফা বলে,”আমার সমস্যা নেই!তুমি না হয় কাল আমাকে সবটা বুঝিয়ে দিও।আজ তো এতো ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নেই।আমি বরং বাড়িতে চলে যায়। ”

অরিন এমন সময় তারিফার সামনে কিছু টাকা ধরে বলে,”এই টাকা দিয়ে এর থেকে দামি -দামি ড্রেস কিনতে পারবে।এই সস্তার জামার থেকে ভালো ব্যান্ডের জামা কিনতে পারবে।”

তারিফা খুব সুন্দর করে টাকা গুলো হাতে নিয়ে নেয়।

অরিন তারিফার টাকা নেওয়া থেকে একটা বিদ্রূপ এর হাসি দিয়ে রোহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এমন সময় তারিফার হাতের টাকা গুলো অরিনের ব্যাগের ভেতরে রেখে বলে,”তুমি একটা কথা জানো কি অরিন! সব কিছু টাকা দিয়ে বিচার করতে নেই।কখনো যদি কোনো ভুল হয়ে যায় তাহলে সব স্থানে টাকার গরম দেখাতে নেই।জীবনে সব সময় টাকার দরকার হয় না।মানুষকে মুখের কথা দিয়ে ভালবাসা যায়।যেমন এখন যদি টাকা না দিয়ে তুমি একটা দুঃখীত বলতে তাহলে খুব ভালো লাগতো। ”

অরিন বলে,”এই রাখো তোমার বড় বড় কথা।এই দুনিয়াতে টাকা দিয়ে সব কিছু কেনা যায়।আর তোমাদের মতো গরিবের কাছে টাকায় সব কিছু।”

তারিফা বলে,”যাদের টাকা আছে তাদের হাতের মুঠোয় সব কিছু মনে করে! কিন্তু এটা ভুলে যায় টাকা দিয়ে না সম্মান কেনা যায়!না মনের শান্তি কেনা যায়।
তোমরা বড়লোকেরা টাকা দিয়ে সব কিছুর বিচার করতে আসো যা আমাদের মতো মানুষের কাছে অপমানকর বুঝলে মেয়ে।”

অরিন তারিফা কে কিছু বলবে তার আগে সে চলে যায়।

রোহান বলে,”অরিন জানি না,তুমি কেনো আমার পিছনে এমন আঠার মতে লেগে আছো।না নিজে ভালো থাকো না আমাকে ভালো থাকতে দাও।তোমার কোন বাড়া ভাতে আমি ছাই দিয়েছি জানি না।তোমার মতো অহংকারি মেয়েরা কারো বাড়ির মেয়ে হতে পারো।
কারো ঘরের ভালো বউ কোনোদিন হতে পারবে না।
এটা মনে রেখো।”

অরিন টেবিলের উপর থাকা গ্লাসের পানি রোহানের মুখের উপর ছুড়ে ফেলে বলে,”এতো বড় সাহস আমাকে অপমান! জানিস আমি কি করতে পারি?”

রোহান বলে,”অহংকারি মানুষেরা অন্যের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।”

রোহান ও অরিনের দিকে পানি ছুড়ে দিতে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে,”কুত্তা মানুষ কে কামড় দেয়!মানুষ কখনো তাকে কামড় দেয় না”

অরিন রাগে নিজের মাথায় নিজেই পানি ঢালতে শুরু করে।এদিকে নিজের মাথায় পানি ঢালার পর দেখে ক্যান্টিনের সবাই হ্যাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
রাগে কষ্টে বিরক্ত হয়ে সোজা সেখান থেকে চলে আসে।

.
চলবে….