ঝরা পাতা পর্ব-০৯

0
1838

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_০৯

রোহান আর তারিফা একটা রেস্টুরেন্ট বসে গল্প করছিল আর নাস্তা করছিলে।

হঠাৎ রোহান বলে,”জানো আমি আজ যে বাড়িতে দাওয়া দিতে গিয়েছিলাম সেই বাড়িটা কার ছিলো। ”

তারিফা বলে,”তুমি না বললে আমি জানবো কি করে?”

রোহান বলে,”ঐ যে শাঁকচুন্নি আছে না।সারাদিন আমার আশেপাশে মাছির মতো ঘুরতে থাকে।”

-এসব আবার কার বায়োডেটা রোহান?

রোহান বলে,”আবার কার ঐ অরিন খানের! ”

-তাই,তা সে ম্যাডামের সাথে দেখা করে কি ঝগড়াঝাঁটি করেছো?

রোহান বলে,”আরে নাহ!তার বাড়ির কেউ ছিলো না।তাই জন্য তো কার্ড টা অরিনের হাতে দিয়ে এসেছি।

-তা সে জানতে চাইলো না কিসের কার্ড ছিলো এটা?

রোহান বলে,”হুম,তাকে বলেছি তো,আমার বিয়ের কার্ড তোমাদের স্ব-পরিবারে দাওয়াত রইলো।”

-ভালোই বলেছো তুমি।বেচারি মেয়েটা।

রোহান বলে,”oh, hello madam! অরিনের কোন দিক দিয়ে বেচারি মনে হয়?ওর থেকে ফাজিল কেউ নাই এজগতে।”

-দেখো মেয়েটা বাহিরের দেখে অনেক জেদি রাগী। আর সব থেকে বড় কথা কি জানো?আমার মনে হয় মেয়েটা তোমাকে পছন্দ করে।কিন্তু সে নিজেই হয়তো জানে না।

রোহান বলে,”তোমার মাথা খারাপ?ঐ পাগল মেয়ে পছন্দ করবে আমাকে?জানো যেদিন থেকে অরিন ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে তারপর থেকে আমার সব বান্ধবী সহ আশেপাশের সব মেয়েরা আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে।আমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে ম্যাডাম সেখানে এসে হাজির হবে বুঝলে।ঐ মেয়েটা অভিসাপ আমার জন্য।ও আশার পর থেকে তিন বছর একটাও গার্লফ্রেন্ড জোটে নাই আমার।”

-এরপর ও কি তোমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলতে হবে।যে মেয়েটা তোমাকে অন্য মেয়েদের থেকে প্রোটেকশন দিয়ে রাখে।তোমাকে অন্য মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারে না।একটা মেয়ে যাকে পছন্দ করে!তার আশেপাশে অন্য মেয়েদের সহ্য করতে পারেনা। হয়তো মেয়েটা নিজের মনের কথা মুখে প্রকাশ করতে পারে না।

রোহান বলে,”বাদ দাও ওর কথা।ওর পাগলী সহ্য করার মতো সময় একদম নেই আমার।বাবার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো যায় না আজকাল। মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা ভালো জব খুঁজে বাবাকে আরামের ব্যবস্থা করে দিবো।

-হ্যাঁ তোমার এখন বাবাকে আরামের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিৎ। এতোদিন সে কাজ করেছে!এখন আমাদের দায়িত্ব তাদের দেখাশোনা করার।

রোহান বলে,”হ্যাঁ গো সেই ডিসিশন নিয়েছি এবার।”

-জানো এই দুনিয়ার নিয়ম বড়ই অদ্ভুত! কারো সব কিছু থেকেও প্রাপ্তি নেই।কারো কোনো কিছু না থেকেও কোনো প্রাপ্তি নেই।তবুও যার নেই সে অল্পের মাঝেই তৃপ্ত। আর যার সব আছে সে তবুও সন্তুষ্ট নয়!

রোহা-এমন কথা বলার মানে কি তারিফা!
তোমার কি কোনো সমস্যা আছে আমাকে বললে পারো।

-আরে নাহ আমার কোনো সমস্যা নেই।আর যদিও থাকে তার সমাধান আল্লাহ ঠিক একদিন করে দিবে।তবে একটা কথা কি জানো মানুষ পরিবর্তনশীল।
সময় অসময় নিজের রুপ রং কালচার সব বদলে নেয়।সময়ের সামনে বাধ্য থাকে কিছু মানুষেরা।এই এখন আছি একটু পর নাও থাকতে পারি।সব কিছু ধোঁয়াশা। জীবনটাকে যতোই সুন্দর কে সাজাতে যাও না কেনো কিছু সময় অনেক কিছু ঝরা পাতার মতো ঝড়ে যায় জীবন থেকে।কেউ বুঝতেও পারি না।

রোহান -ওরে আল্লাহ গো!এ মেয়ে কতো কথা বলে গো।আর কী সব জ্ঞানের কথা বলে,দেখো এখুনি বুড়ো হয়নি।এসব বড় বড় কথা ভবিষ্যৎ এর জন্য তুলে রাখো।



এদিকে অরিনের বাড়ির সবাই এসে দেখে ড্রয়িংরুমে কাগজ টুকরো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা।

মমতা খান কাজের মেয়েকে ডেকে বলে,”সব কিছু পরিষ্কার কেনো করো নাই?এভাবে রুমের ভেতরে নোংরা করে রাখার মানে কি?”

-ভয়ে ভয়ে কাজের মেয়েটা বলে,”বড় ম্যাডাম আপনারা বাড়িতে ছিলেন না! তখন বড় স্যারের অফিসের কেউ এসেছিল।একটা কাগজ ছোট ম্যাডামের হাতে দিয়ে চলে যায়।ম্যাডাম কাগজটা ছিঁড়ে ছড়িয়ে দেয়।পরিষ্কার করতে চাইলে বারণ করে আমাকে।”

অরিনের বাবা বলে,”আমার অফিসের কোনো দরকার হলে কারো তো বাড়িতে আসার কথা না।কারণ অফিসে নিষেধ করে দেওয়া আছে কেউ যেনো অফিসিয়াল প্রয়োজনে আমার বাড়িতে না আসে।তারপর কে এসেছিল? ”

আয়াশ বলে,”আচ্ছা বাবা সমস্যা নেই আমি অফিসে ফোন করে এখুনি খোঁজ নিচ্ছি। ”

এমস সময় অরিন সেখানে এসে বলে,”বাবা তোমার অফিসের ম্যানেজার সাহবের ছেলে এসেছিল বাড়িতে।”

আয়াশ বলে,”উনার ছেলে কি দরকার এসেছিল বাড়িতে? তোকে খারাপ কিছু বলেছে বোন?”

অরিন বলে,”না খারাপ কিছুই বলে নাই!সে তো তার বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছিল আমাদের স্ব-পরিবারে।সে খুব করে বলে গেছে আমারা সবাই যেনো তার বিয়েতে তাদের বাড়িতে যায়।”

অরিনের বাবা বলে,”ছেলের লেখাপড়া কমপ্লিট হলো না!এখুনি বিয়ে দিচ্ছে কেনো হঠাৎ করে?

মমতা খান বলে,”আরে বোঝো না!এখন কার যুগের ছেলেমেয়ে গুলো এমনি হয়।নিজে সেটেল্ট হওয়ার আগেই প্রেম-পিড়িতি করে বিয়ে করতে চাই তখন তার বাবা মা আর কোনো উপায় না পেয়ে।ছেলে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজী হয়।”

অরিনের বাবা বলেন,”হ্যাঁ মমতা তুমি ঠিক বলেছো! সবার ছেলে মেয়ে কি আমাদের বাচ্চাদের মতো না কি?আমাদের ছেলে মেয়ে কতো ভালো দেখো এতো সুন্দর দেখতে তারপর ও এদের এসবে কোনো মাথা ব্যাথা নেই।নয়তো অন্য বড়লোক বাড়ির ছেলে মেয়ে গুলো তো প্রেম করে হাজারটা,বিয়ে করে বাড়ির মান-সম্মান শেষ করে দেয়।আল্লাহর রহমত থাকলে আমরা দেখে শুনে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিবো।”

অরিন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।

আয়াশ বলে,”সব কিছু বুঝলাম! তবে হঠাৎ করে বিয়ের দাওয়াতের নিমন্ত্রণ পএ ছিঁড়ে ফেলার কারণ খুঁজে পেলাম না!”

অরিন বলে,”আজব কাহিনী, ওটা আমার ভালো লাগে নাই!আমি নষ্ট করেছি।তাতে তোমাদের সমস্যা?দাওয়াতের খবর তো পেয়েছ তাতেই হবে।”

আয়াশ বলে,”তা ঐ ছেলের বিয়ে কবে! তা সম্পর্কে কিছু জানিস?”

অরিন এবার নিজের জ্বিব্বাতে কামড় খেয়ে বলে,”তা শুনেতে ভুলে গেছি।”

অরিনের বাবা বলে,”আচ্ছা সমস্যা নেই।অফিসে গিয়ে জানতে পারবো।এখন আর মেয়েটা কে তোমরা ডিস্টার্ব করো না তো।”

হঠাৎ করে অরিন নিজেই কাগজের টুকরো গুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে দেয়।অরিনের এমন কান্ড দেখে সবাই তো একদম হ্যা হয়ে যায়।

কাজের মানুষ এসে বলে,”ছোট ম্যাডাম আপনি রাখেন আমি পরিষ্কার করে দিবো।”

অরিন বলে,”ইচ্ছা করে যখন আমি নোংরা করেছি তখন তা পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমার।”

আয়াশ মনে মনে ভাবে,”অবশেষে আমার বোনের মতিগতি বদলেছে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্‌। ”

মেয়ের এমন বদলে যাওয়া রুপ দেখে বাবা মা খুব খুশি।যাক মেয়েটা নিজের ভুল বুঝতে শিখেছে এবং সেই ভুল সংশোধন করতেও চেষ্টা করছে।

এরপর অরিন আয়াশ নিজেদের রুমে চলে যায়।
ওদের চলে যাবার পর মমতা খান অরিনের বাবাকে বলে,”আমাদের মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে!এখন একটা ভালো ছেলে আর পরিবার খুঁজে মেয়েটার বিয়ে দেওয়া উচিৎ। এদিকে ছেলেটার ও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।আর কতোদিন এভাবে রাখবো ওদের।আমাদের দায়িত্ব ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করা।”

অরিনের বাবা বলে,”আমিও খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি কি করা যায়।তুমি চিন্তা করো না।সব কিছু ঠিকঠাক হবে।”

মমতা খান বলে,”ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ ভরসা!


চলবে…..