ঝরা পাতা পর্ব-১০+১১+১২

0
1987

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_১০

অরিন কিছুদিন ধরে কেমন যেনো অন্যমনস্ক থাকে!
এই কিছুদিনের মাঝে অরিনের মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়ছে। সে আগের মতো সবার সাথে রাগারাগি করে না।নিজের যা চাই তা পাবার জন্য যিদ করে না।তবে কি অরিন বদলে গেছে?না কি ওর নিরবতার মধ্যে ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস আছে।এটা তো সময় বলতে পারে।

অরিন কিছুদিন গ্যাপ দেওয়ার পর হঠাৎ করে ভার্সিটিতে গমন করে।সে ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই দেখে রোহান তারিফার সাথে খুব ক্লোজ হয়ে বসে হাসাহাসি করে কথা বলছে।

কেনো জানি অরিন নিজেকে সংযোত রাখতে না পেরে তাদের সামনে এগিয়ে গিয়ে ওদের হচকিত করে দেয়।

রোহান আর তারিফা মোটেই অরিন কে সামনে দেখবে আশা করে নাই।

তারিফা অরিন কে দেখে বলে,”আরে অরিন যে!তা অনেকদিন পর ভার্সিটিতে আসলে! তা এতোদিন শরীর খারাপ ছিলো না কি তোমার?”

অরিন বলে,”কেনো?আমাকে দেখে কোন দিক দিয়ে অসুস্থ মনে হচ্ছে আপনা?”

তারিফা বলে,”আসলে তোমার চেহারাটা কেমন যেনো মলিন দেখাচ্ছে! মনে হচ্ছে কোনো কারণ তোমার মনটা বড়ই অশান্ত! ”

অরিন বলে,”মোটেই না!আমি একদম ঠিক আছি!আমার কোনো সমস্যা নেই।”

অরিন আর তারিফার কথা বার্তা মনোযোগ সহকারে রোহান শুনছে।রোহান অরিনের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি মেয়েটা আগের মতো নেই।
ওর চেহারাটা সত্যি মলিন হয়ে আছে।
মনে হচ্ছে কেউ ওর মনের মাঝে ছুড়ির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে।হঠাৎ কয়েকটা দিনে মেয়েটার কি হলো?প্রশ্ন করবো!
নাহ থাক,ও যে মেয়ে কিছু জিজ্ঞাস করাও বিপদজনক।

তারিফা বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্‌ তুমি ভালো থাকলেই ভালো।”

হঠাৎ করে অরিন তারিফা কে অভিনন্দন বলে ওঠে।

এমন করে শুভকামনা জানানোর জন্য তারিফা অরিন কে বলে,”হঠাৎ করে অভিনন্দন জানাচ্ছ যে!”

অরিন বলে,”ওমা সামনে তোমার বিয়ে তো!তাই অগ্রিম অভিনন্দন জানাচ্ছি।পরে যদি সুযোগ না পাই আর।”

আমার বিয়ে কথাটা বলে রোহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।রোহান হ্যা করে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে!তা দেখে তারিফা বলে,”ঐ ছ্যামড়া দুই দিন পর যার বিয়ে সে কি করে অন্য মাইয়ার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকতে পারে!পরোনারীর দিকে তাকানো উচিৎ না।”

রোহান তারিফার এমন কথা শুনে বলে,”আজব চোখের সামনে সুন্দরি দাঁড়িয়ে আছে।আর তাকে দেখলেই সমস্যা! ”

তারিফা বলে,”আমার অবশ্য সমস্যা নেই।তুমি ইচ্ছা করলেই চান্স মারতে পারো।দুদিন পর তো শিকলে ঠিকি বাধা পড়বে।”

রোহান তারিফার দিকে তাকিয়ে একটা মেকি হাসি দেয়।

ওদের দু জনের চোখাচোখি করা দেখে অরিন সেখানে থেকে চলে যায়।

অরিন আড়ালে গিয়ে টিসু দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছতে থাকে।

এমন সময় সেখানে একটা রুমাল বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”টিসু দিয়ে মুছলে হবে না তো!তোর জন্য রুমালের প্রয়োজন! ”

অরিন সামনে তাকিয়ে দেখে পিংকী দাঁড়িয়ে আছে।

-তা তুই হঠাৎ এতোদিন পর ভার্সিটিতে এসেছিস!
কই আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না?
আমি কি তোর খুব পর রে?

অরিন বলে,”আরে তেমন কোনো কথা নেই!
হঠাৎ করে চলে আসছি তাই জানানোর সময় হয়ে ওঠে নাই।”

-তাই বুঝি!তাহলে আমার কাছে থেকে চোখের পানি কেনো আড়াল করছিস তাই তো বুঝতে পারছি না আমি?

অরিন -আর বলিস না,চোখে নতুন ল্যান্স লাগিয়েছি সেই জন্য চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

-বাহ, এখন দেখছি মিথ্যা কথাও বলতে শিখে গেছিস ভালোই! কোনটা চোখের পানি আর কোনটা ল্যান্সের পানি তা বোঝার মতো বিবেক বুদ্ধি দুইটাই আমার আছে।থাক আর যাকে ইচ্ছা বোকা বানাতে যাবি!আমাকে বোকা বানানোর দরকার নেই।
আমি দুধ ভাত খাই না বুঝতে পারছিস তুই।

অরিন পিংকী কে জড়িয়ে ধরে বলে,”আরে দোস্ত এভাবে রিয়াক্ট করার কি আছে বুঝি না।”

-পিংকী বলে,”তুই ভার্সিটিতে প্রবেশ করে সোজা ঐ রোহাননননের কাছে কেন গেছিস? ”

অরিন -আরে কিছুদিন পর ওদের দু জনের বিয়ে,
তাই অগ্রিম অভিনন্দন জানতে গিয়েছিলাম।
যদি পড়ে আর ওদের একসাথে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ না পায়?

-তোর কথার আগা মাথা বুঝলাম না।রোহাইইইইন এর বিয়ে তা তো কেউ জানে না।তুই এই গুজব শুনছিস কই থেকে?

অরিন -আরে বইন এটা গুজব না,সত্যি কথা।তারিফাপুর সাথে রোহাইইইইনের বিয়ে।ওর বিয়ের দাওয়াতের কার্ড আমার বাড়িতে দিতে এসেছিল।
তাই সেদিন জানতে পেরেছি রোহানের বিয়ে।

-ওরে রোহাইইইইনের বিয়ে আর ভার্সিটির কেউ জানে না।তা কি হতে পারে যাই আমি মাইকিং করে আসি।

অরিন পিংকীর চুল ধরে টান দিয়ে বলে,”একদম মাইকিং করবি না।রোহাইইইইন আগে বিয়ে কুরুক তারপর না হয় মাইকিং করবি।তখন বউ সাথে থাকবে গাধী! ”

পিংকী আর কিছু না বলে চুপচাপ থাকে।
এরপরে দু জনে একসাথে ক্লাসের জন্য চলে যায়।

আড়ালে থেকে কেউ একজন বলে,”বিয়ে মানে অভিসাপ! বর ভালো তো সব ভালো!
বর যদি হয় খারাপ, তাহলে সে বউ জাহান্নাম এপৃথীবতে উপভোগ করতে পারে।আর বিয়ের পর সব মেয়ের জীবনে গল্প সুখের হয় না।সব সময় বিয়ে করে মেয়েদের কষ্টভোগ করতে হয়।বড়লোক হলে সমস্যা নেই টাকার গরমে সুখি না থাকতে পারো কষ্ট লাঘবের ব্যবস্থা করতে পারবে।কিছু মানুষ তো টাকার জোড়ে বিয়ের সম্পর্কটা কে বেচাকেনা করে।
“হায়রে দুনিয়ার আজব দুনিয়া ”
মানুষেরা যতোটা রং বদলাই ততোটা রং কখনো প্রকৃতি নিজেও বদলাতে পারে না।এই বিয়ের সম্পর্কটা যদি সুখের না হয় তাহলে কিছু মেয়েরা অকালে ঝরা_পাতার মতো ঝরে যায় সমাজের বুক থেকে।
এসব বলে সে তার চোখের পানি মুছে ঠোঁটের কোণায় একটা বিশাল প্রাপ্তির হাসি দেয়।

এদিকে অরিন আর পিংকী ক্লাস শেষ করে ভার্সিটির প্রাঙ্গণে অন্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল।
এমন সময় রোহান আর তারিফা এসে অরিন কে ডাক দেয়।

অরিন ওদের সামনে গিয়ে বলে,”আমাকে ডাকছেন কেনো আপনারা?”

রোহান বলে,”আসলে তারিফা এখানে হোস্টেলে থাকে।ওর কোনো রিলেটিভ এখানে নেই।আর ওর পরিবারের কারো এখানে আসা সম্ভব নয়।তুমি যদি ওর সাথে একটু মার্কেটে যেতে তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো।তারিফা এখানে কিছুই ঠিকমতো চেনে তো তাই।”

অরিন কিছু সময় কি যেনো চিন্তা করে তারপর সোজা তারিফার হাত ধরে নিয়ে চলে যায়।মার্কেটে গিয়ে তিনজন অনেক কেনাকাটা করে।

রোহান তো অরিন কে বলে,”ধন্যবাদ অরিন!
আমি তো ভাবতেই পারি নাই তুমি আমাদের সাহায্য করবে।এই সাহায্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।”

অরিন বলে,”আরে সমস্যা নেই!মানুষের বিপদে তাকে সাহায্য করা উচিৎ তাই করেছি।”

যে যার বাড়িতে যাবার সময় রোহান অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”বিয়ের দিন কিন্তু স্ব-পরিবারের আসতে হবে।নয়তো মন খারাপ করবো।তোমাকে বিয়ের দিন বিয়ে বাড়িতে অবশ্যই আসতে হবে।আমরা গরীব বলে হয়তো নাও আসতে পারো আমাদের কুড়ে ঘরে!”

অরিন বলে,”আপনাকে দেখে কেউ বলবে না!
কুড়ে ঘরে থাকেন।তবে যেখানে থাকেন সমস্যা নেই।টাকা কম বেশি সবার আছে।তাই সবাই সমান”

তারিফা বলে,”অরিন তুমি যদি না আসতে পারো সমস্যা নেই!তোমার পরিবারের সবাইকে পাঠিয়ে দিও কিন্তু প্লিজ এই রিকুয়েস্ট টা প্লিজ রেখো।”

অরিন বলে,”আরে আমার কি সমস্যা থাকতে পারে।বিয়ের দিন একটু সেজেগুজে স্টাইল করে রোহান ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবো।”

রোহান অরিনের আশ্চর্যজনক ভাবে দিকে তাকিয়ে আছ। তা দেখে অরিন বলে,”ভাইয়া কোনো ভুল কথা বলেছি বলেন!”

রোহান বলে,”না,মানে ভুল কিছু বলো নাই তবে..কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।

এরপর অরিন ওদের দু জনকে বিদায় জানিয়ে নিজের শপিং এর ব্যাগ গুলো নিয়ে চলে যায়।




চলবে”””””‘”””

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_১১

এদিকে রোহান তারিফা কে বলে,”এই তিন বছর প্রচুর ঝগড়া করেছি!কিন্তু অরিন কখনো ভাইয়া ডাক দেয় নি।আজ প্রথম সে ভাইয়া ডেকেছে আমাকে।”

তারিফা বলে,”অরিনের মুখে ভাইয়া ডাক শুনে তোমার আফসোস হচ্ছে বুঝি?”

রোহান -জানি নাহ,তবে ভালো লাগছে না।

তারিফা বলে,”এই রোহান তুমি ওর প্রেমে পড়ে যাও নাই তো?”

রোহান ধেত বলে সেখান থেকে চলে যায়।

এদিকে রোহানের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠিত আছে।
তাই তাকে বিয়ের নানারকম কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।

দেখতে দেখে বিয়ের দিন চলে আসে।
এদিকে আয়াশ সকালে অরিন কে রেডি হতে বলে।

অরিন মনের সব রং দিয়ে আজ নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত। সে একটা সিঁদুরে লাল জরজেট শাড়ি পড়েছে।
সাথে সিম্পল কিছু জুয়েলারি।দু হাত ভরা কাচের চুড়ি।তার ডাগরআঁখিতে আজ সুন্দর করে কাজল পড়েছে।
সাথে হালকা মেকআপ।লম্বা কোমর সমান চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে।আজ চুল গুলো বড় অবাধ্য হয়ে গেছে।নিজেদের ছাড়া পেয়ে হালকা বাতাসের সাথেও প্রেম করতে চাইছে।

অরিন রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতেই ওর পরিবারের সবার চোখে ছানাবড়া দেখতে শুরু করে।আয়াশ তো বোনকে দেখে বলেই দেয়,”অরিন রে তোকে মনে হচ্ছে না বিয়ে বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে বিয়ের কনে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। এতোটা সাজগোজ না করলেও পারতিস কিন্তু।”

অরিন ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা দেখো আজ অল্প হালকা মেকআপ করেছি তাতেই ভাইয়া আমার মেকআপ নিয়ে খোঁটা দিচ্ছে।”

মমতা খান আয়াশ কে বলে,”এবার তোর বোঝা উচিৎ যে বোন বড় হয়েগেছে আর তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।”

আয়াশ বলে,”হ্যাঁ মা! তা তুমি ঠিক কথা বলেছো।”

অরিন বলে,”দেখো তোমরা এমন করলে আমি কিন্তু যাবো না।”

মমতা খান বলে,”আচ্ছা কেউ কিছু বলছি না,এখন যাওয়া যাক।তবে অরিন তোমার শাড়ির কুচি গুলো ঠিকমতো হয়নি চলো ঠিক করে দেয়।”

অরিন বলে,”আরে মা ছাড়ো না,খুঁলে না গেলেই হলো।এখন চলো তো।আর এই শাড়ির পেছনে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।”

অরিনের মা বলে,”আচ্ছা সমস্যা নেই!
আমরা তো সেখানে গিয়। চুপচাপ বসে থাকবো।”

এরপর ওরা সাবাই গাড়িতে বসে রোহানদের বাড়ির সামনে পৌঁছে যায়।
বাড়ির বাহিরের বিশাল বড় একটা বিয়ের গেট সাজিয়ে রাখা।বাড়ির সামনে বিয়ের প্যান্ডেল করে রাখছে। এখানে বরযাত্রী আসলে হয়তো বসবে।

গাড়ি থেকে নেমে খান পরিবারের সবাই রোহানদের বাড়ির ভেতরে সোজা চলে যায়।

রোহানের বাবা এসে তাদের সাথে করে বাড়ির ভেতরে এনে ড্রয়িংরুমে বসার ব্যবস্থা করে দেয়।

রোহানের বাবা বলে,”স্যার আমি ভাবতে পারি নাই আপনারা এই গরিবের বাড়িতে আসবেন! তাও নিজের পুরোপরিবারের সাথে।”

আরিফুল খান (অরিনের বাবা) বলে,”আরে রফিক সাহবে কি যে বলেন না।আপনি আমাদের কোম্পানির একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী! আর তা ছাড়া আপনি আমাদের পরিবারের একজন সদস্যের মতো আপনার বাড়িতে অনুষ্ঠান আর আমি সেখানে পরিবার নিয়ে আসবো না তা কি কখনো হতে পারে!”

রফিক সাহেব বলে,”স্যার আপনার মন অনেক উদার তাই আপনি গরিবের বাড়িতে এসেছেন।”

আরিফুল খান বলে,”আচ্ছা বাদ দাও,যাও ঐ দিকে তোমাকে সবাই ডাকাডাকি করছে।জানি তো বিয়ের বাড়িতে ব্যস্ততা বেশি থাকে।”

রফিক সাহেব তার ছেলে রোহান কে ডাক দিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।আর রোহান কে বলে,”বাবা এনাদের আদর-যত্নের কোনো এুটি রাখবে না।”

রোহান সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

এদিকে অরিন ভ্রু কুঁচকে রোহানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,”কেউ এই রোহাইইইইনকে দেখে বলবে আজ তার বিয়ে?সিম্পল একটা লাল সাদা কম্বিনেশন একটা পাঞ্জাবি পড়ে হাতা ফোল্ড করে
গুঁজে রেখছে কনুই পর্যন্ত। হাতে একটা হাত ঘড়ি পড়া।
আহা এই সাদা হনুমান কে এই লুকে দেখে যে কোনো মেয়ে হার্ট এর্টাক করতেই পারে।তবে আমি কিন্তু সাদা হনুমান কে দেখে ক্রাশ ও খাই নাই ছোট খাটো এর্টাক করে ফিদা হয়নি।”

এদিকে রোহান অরিন কে আড় চোখে দেখছে।
দেখে মেয়েটা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।
আজ তো মারাত্মক আকর্ষণীয় লাগছে মেয়েটা।
দেখে তো মনে হচ্ছে আজ তার বিয়ে।
লাল শাড়িতে পুরো বউ বউ লাগছে।
মেয়েটা আমার বউ হলে মন্দ হতো না।
তবে এর মতো ডেন্জারাস মেয়েকে বউ করার স্বপ্ন দেখাও ভুল।এতো বড়লোকের মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা পাপ।আর সুন্দরি মেয়েকে বেশি দেখতে নাই।
তাহলে যখন নিজের বউ আসবে তখন তাকে মনে ধরবে না।এই রোহান নিজের চোখ আর মনকে কন্ট্রোল কর।এমন সুন্দর জিনিশ তোর জন্য না।

এদিকে রোহানের ডাক পড়ছে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েগেছে।

অরিনের মাথায় একটা কথা ঢুকছে না এই রোহানের বিয়ে তাহলে সে কি করে এভাবে ঘুরাঘুরি করতে পারে।

হঠাৎ করে বাড়ির বাহিরে খুব শোরগোল শোনা যাচ্ছিল।বাহিরে কি হচ্ছে তা জানতে অরিন হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ে।দাঁড়াতে গিয়ে শাড়ির সাথে পা বেঁধে বেচারির সব কুচি খুলে যায়।তাড়াতাড়ি কুচি গুলো কোনোরকম হাতে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে অরিন।এখানে মা আর ভাইয়াও নেই তারা দুজন যে হুট করে কই গেছে অরিন জানে না।

রোহান হঠাৎ করে ড্রয়িংরুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় দেখে অরিনেরে শাড়ির অবস্থা ভালো না।
অরিনের সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,”আপনার মনে হয় সাহায্যের প্রয়োজন। যদি কিছু মনে না করেন আমার সাথে আসতে পারেন।”

অরিন কোনো কথা না বলে রোহানের পিছনে পিছনে ভদ্র মেয়ের মতো যেতে থাকে।

রোহান অরিন কে নিজের রুমে সাথে করে এনে বলে,”আপনি এখানে নিজের শাড়ি ঠিক করতে পারেন।”

অরিন রোহান দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি শাড়ির কুচি ঠিক করতে পারি না।কাউকে সাহায্য করার জন্য পাঠিয়ে দিন।”

রোহান বলে,”এখানে সবাই ব্যস্ত কাকে ডাকবো।
নিজের আশেপাশে মহিলাদের খুঁজে না পেয়ে শেষে নিজেই অরিনের শাড়ির কুচি ঠিক করে দেয়।”

অরিন কুচি গুলো নিয়ে ঠিক করে গুঁজে রাখে।
অরিন বাহিরে এসে দাঁড়ায় এরপর রোহান বাহিরে আসার সময় উষ্ঠা খেয়ে সোজা অরিনের উপর পড়ে যায়।
আর অরিন নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে পড়ে যায়।পড়ে যাবার সময় দেওয়ালের পেরেকের সাথে বেধে অরিনের ব্লাউজের সাইডে অনেকটা ছিঁড়ে যায়।

রোহান আর অরিনের এমন অবস্থা দেখে যে কেউ ভাবতেই পারে এরা খারাপ কিছু করছে।
হঠাৎ করে সেখানে তারিফা সহ কয়েকজন এসে দেখে এদের এমন অবস্থা।

তারিফা চুপচাপ দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করছে।এখানে যদি বাহিরের মানুষেরা চলে আসে তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে?

আয়াশ এসে রোহান কে ধরে মারতে শুরু করে দেয়।
অরিন নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে নেয়।

অরিন আয়াশ কে থামাতে চেষ্টা করে কিন্তু আয়াশ বোনের কোনো কথা শুনতেই রাজী না।

এদিকে বিয়ের আসরের সব মানুষ বাড়ির ভেতরে এমন কিছু শুনে বলে,”তারা রোহানের বোনের সাথে তাদের ছেলের বিয়ে দেবে না।এমন চরিত্রহীন ছেলের বোন যে ভালো তার কি গ্যারান্টি আছে?”

কেউ রোহানের কথা শুনতে রাজী না।

অরিনের কানে যখন এ কথা পৌঁছাই তখন সে আকাশ থেকে পড়ে।আল্লাহ কানে হেড ফোন দিয়ে গান শোনার জন্য তখন জানতেই পারি নাই রফিক আঙ্কল তার মেয়ের বিয়ের কথা বলেছে ছেলের বিয়ের কথা বলে নাই।অরিন মনে মনে বলে,”আমি এটা কখনো চাইনি আমার জন্য একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাক।
রফিক আঙ্কলের মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাক।”

অরিন সেখান বসে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করে দেয়।
.
.
.
চলবে….

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_১২

অরিনের এমন কান্নাকাটি দেখে আরিফুল খান বলে,”রফিক সাহের আমি কখনো ভাবতেই পারি নাই।তোমার মতো সৎ ব্যক্তির ছেলে এমন চরিএের হবে।নিজের বোনের বিয়ের দিন আমার মেয়েকে অপমান না করলেও পারতো।”

অরিন আয়াশ কে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাইয়া রে আমার কি হবে এবার?লোক জানাজানি হলে আমি মুখ দেখাবো কি করে?আমার তো মরা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না।”

আয়াশ বলে,”না বোন!তুই কেনো মরতে যাবি! এই ছেলেকে আজ পুলিশে দিয়ে দিবো।এর বিচার পুলিশ করবে।”

অরিন তার ভাইকে বলে,”পুলিশের কাছে দিয়ে দিলে তো সব সমস্যার সমাধান হবে না।এসব জানার পর কোনো ছেলে আমাকে সাদরে আর গ্রহণ করবে না।”

তারিফা এবার আয়াশের সামনে এসে বলে,দেখুন আপনার বোন কিন্তু অতিরিক্ত নাটক করছে।এখানে এমন কিছুই হয় নি।এই জন্য বলে,”বাঙ্গালি তিল কে খুব সুন্দর করে তাল বানাতে পারে।”

আয়াশ বলে,”এই মেয়ে আপনি আমার বোনের দিকে আঙ্গুল তুলতে পারেন না।আপনাকে এতো সাহস কে দিয়েছে?”

তারিফা বলে,”আপনি যেমন আপনার বোন কে বিশ্বাস করেন আমিও ঠিক তেমন ভাবে রোহান কে বিশ্বাস করি।এখানে রোহানের কিছুই হবে না।পুলিশ কেস করবেন তো করেন সমস্যা নেই।কিছুদিন পর জেল থেকে বাহিরে এসে রোহান সুখে শান্তিতে সংসার করবে।কিন্তু আপনার বোন করতে পারবে না।”

আয়াশ বলে,”এই মেয়ের সাহস তো কম না।আমার সাথে তর্ক করছে।”

তারিফা আয়াশের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,”আজ রোহানের বোনের বিয়ের পর আমার আর রোহানের বিয়ে হবার কথা ছিলো।ওর বোনের বিয়ে না হলেও আজ আমাদের বিয়ে ঠিকি হবে।এরপর এখান থেকে নিজের বোন কে ঠিক সেই আগের সম্মানের সাথে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তো?”

আয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রফিক সাহেব বলে, “স্যার অপরাধ আমার ছেলে করেছে।
ছেলের করা ভুলের জন্য আমার মেয়ের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিবেন না।আমি আপনার দুটি পা ধরে মিনতি করছি স্যার।”

বাবার এমন করুন অবস্থা দেখে কান্না করতে করতে রোহান বলে,”বাবা আমি এমন কিছু করি নাই যার জন্য তোমার মাথা সবার সামনে নিচু হবে।এরা সাবাই যেমনটা ভাবছে তেমন কিছুই হয়নি। সবটা সবার চোখের ভুল!কোনো কিছু সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ না।”

রফিক সাহেবের এমন করুণ অবস্থা দেখে তারিফা আর সহ্য করতে পারছিল না।তখন হঠাৎ করে সে আয়াশের হাত ধরে পাশের রুমে নিয়ে যায়।সেখানে আয়াশ কে কিছু কথা বলে।তারপর তারা দু জন বাহিরে সবার সামনে চলে আসে।

রোহান অরিনের সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,”তুমি তো জানো আমি তোমার সাথে খারাপ কিছুই করি নাই।তাহলে তুমি কেনো আমার পরিবারের সাথে এমন শত্রুতা প্রকাশ করছো।অরিন please say something! Please!!

আয়াশ অরিন কে বলে,”অরিন তোর কি এখানে কিছু বলার আছে?”

অরিন বলে,”ভাইয়া সবটা তোমাদের সামনে এরপর আমার আর কিছু বলার নেই।তবে আমি চাইনা রোহান ভুলের জন্য ওর বোনের বিয়েটা ভেঙ্গে যাক।ওর বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান ঠিকঠাক ভাবে সম্পূর্ণ হয়ে যেতে দাও।”.

আয়াশ বলে,”দেখছেন মিস আমার বোন কতো ভালো।অরিনের সাথে রোহান অন্যায় করেছে তারপর ও সে রোহানের বোনের কথা চিন্তা করছে।প্রতিটা মেয়ের উচিৎ আমার বোনের মতো হওয়া।একটা মেয়ে হয়ে সে আরেকটা মেয়ের কথা চিন্তা করছে। আপনার মতো স্বার্থপর না আমার বোন।”

তারিফা বলে,”স্বার্থপর পৃথিবীতে একটু স্বার্থপর হলে ক্ষতি নেই।তাতে হয়তো অন্যকারো ভালো হতে পারে।”

আয়াশ বলে,”আপনি জীবনেও সুখি হতে পারবেন না।আমি হতে দিবো না।”

তারিফা একটা Don’t care ভাব নিয়ে রফিক সাহেবের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে।”

এবার আয়াশ গিয়ে রোহানের বোনের বিয়ের বরযাত্রীর সাথে কথা বলে তাদের বিয়ের জন্য রাজী করাই।

এদিকে বাড়ির ভেতর এসে আয়াশ বলে,”রফিক সাহেব আপনার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।তবে আমার একটা শর্ত আছে! ”

রফিক সাহেব বলে,”বলেন কি শর্ত আপনার।
আমি সব শর্ত পালন করতে রাজী আছি।”

আয়াশ বলে,”আজ এবাড়িতে তিনটা বিয়ে হবে।আপনার মেয়ের বিয়ের পর রোহানের সাথে আমার বোনের বিয়ে।এরপর আমার সাথে ঐ মেয়েটার(তারিফা কে উদ্দেশ্য করে) সাথে আমার বিয়ে দিতে হবে।”

অরিন তো রোহানের সাথে নিজের বিয়ের কথা শুনে মনে মনে লুঙ্গী ডান্স দিচ্ছে। যাক যেভাবে হোক রোহান কে তো নিজের করে পাবো।এটা ভালোবাসা হোক আর আমার জিদ হোক তাতে সমস্যা নেই।

তারিফা আয়াশের সামনে এসে বলে,”মগেরমুল্লুক পাইছেন না কি?আমি দাওয়াত খেতে এসে নিজের পায়ো কুড়াল মারবো না কি।আপনাকে অযথা কেন কিয়ে করতে যাবো।হতে পারেন আপনি বড়লোক। তবে আপনার মতো অহংকারী বড়লোক কে বিয়ে করার থেকে কোনো গরীবলোক কে বিয়ে করা অনেক ভালো।”

আয়াশ রফিক সাহেবের সামনে গিয়ে বলে,”আপনার মেয়ের বিয়ে হবে আর ছেলের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে না।সাথে আপনার চাকুরীটাও থাকবে।সব কিছুই ঠিক থাকবে তার জন্য ঐ মেয়েটা কে রাজী করান আমাকে বিয়ের জন্য।”

রফিক সাহেব তারিফার সামনে গিয়ে হাটুগেড়ে বসে বলে, “মা রে তুই যদি আমাকে তোর বাবার মতো মনে করে থাকিস তাহলে আমার আজকে এই উপকার কর মা।আমি তোর কাছে প্রতিদান চাইছি রে মা।”

তারিফা বলে,”আঙ্কল আপনার উপকার তো আমি কোনোদিন ও ভুলবো না।তার প্রতিদান যদি বিয়ে হয় তাহলে আমি ঐ লোকটাকে বিয়ে করতে রাজী।”

রোহান তারিফার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় বন্দী করে বলে,”আজ আমার জন্য তোমার জীবনটা নষ্ট করতে হচ্ছে।”

তারিফা রোহান কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আল্লাহ যা করে সবার ভালোর জন্য করে।সমস্যা নেই এখানে হয়তো এভাবে আমার বিয়ে হবে লেখা ছিলো।তাই আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে সবটা গ্রহণ করছি।”

অরিন মনে মনে রোহান কে চৌদ্দকথা শোনাতে থাকে।বলে,”বেডা খচ্চর,, সাদা ভাল্লুক, উগান্ডার বান্দর,কুমিরের ডিম,শিয়ালল পণ্ডিতের নানা।তোর একটু পর আমার সাথে বিয়ে তার আগে কেন ঐ তারিফার হাত ধরে বসে থাকতে হচ্ছে।মন তো চাইছে এখুনি তোর হাতে কেরোসিন ঢেলে দেয়।নাহ কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিলে আমার জামাই এর হাত পুড়বো। এই অকাজ করা যাবে না অরিন রে!”

এরপর আর কোনো কোনো কিছু বলে না কেউ।আয়াশের বাবা কিছুই বলে না!কি বলবে কোনো ভাই তার বোনের খারাপ কখনো চাইবে না।
সে কথা চিন্তা করে সে মেয়ের বিয়ের জন্য রাজী হয়ে যায়।
একে একে তিনটা বিয়ে পড়ানোর হয় রোহানদের বাড়িতে।

অরিন মনে মনে বলে,”আহা কি মজা!আসছিলাম বিয়ের দাওয়াত খেতে।এসে এই বাড়ির বউ হয়ে গেছি।আর বাবার বাড়িতে তো আর থাকছি না সমস্যা নেই।কিন্তু ভাইয়া এই শাঁকচুন্নি কে কেনো বিয়ে করলো তাই তো বুঝতে পারছি না।এতো বুঝে কাজ নেই এখন আমি নতুন বউ।”

এদিকে রোহানের বোনের বিদায় হয়ে যায়।তারপর আয়াশ নিজের বোনকে রোহানের হাতে তুলে দিয়ে তারিফার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে চলে আসে।

:
:
:
চলবে….