তবু কেন এত অনুভব পর্ব-১২

0
386

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#১২তম_পর্ব

রিয়ানের নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে তাই একমাত্র বন্ধু তানাফকে জানানোটা রিয়ানের দরকার।

চারদিকে বিয়ের তোড়জোড়। রিধী পিওয়ের শাড়িতে পিন-আপ করছে। দোয়া রুমে চুপচাপ বসে আছে। চোখ দুটো বেশ ফুলে আছে দোয়ার, বোধহয় কান্না করেছে অনেক। নিচে ডেকোরেট করা হয়েছে।মেহমান আসছে এক এক করে চারদিকে মেহমানের সমাগম।
নাদিম শেখ নিচে সবাইকে মেহমানদারি করছে। আজীম শেখ হাসোজ্জল মুখে সবার সাথে কথা বলছে।

পিও’র মা মনে মনে মেয়ের বিয়ে নিয়ে খুশি হলেও দোয়াকে নিয়ে বেজায় চিন্তিত। আজ পিও দোয়ার বিয়ে। কখন কী ঘটবে তা ভাবতেই পিওর মায়ের বুক মুচড়ে উঠছে।

এদিকে তানাফ দোয়ার ফ্রেন্ড দলবলকে প্লান বলে দিয়েছে,ইনান বেশ তৈরি তাদের সাথে।

রিয়ান তানাফকে ফোন করে বলছে “তানাফ আন্টি আংকেল আমাদের সাথে বরযাত্রা চলে যাবে বুঝলি? তুই তোর মত করে আয় গুছিয়ে। এদিকটা আমি সামলে নিবো”

তানাফ স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলে “থ্যাংক দোস্ত, নিশ্চিত হলাম।”

তানাফ পিও’র মাকে ফোন দিয়ে বলে “দোয়াকে সামনে আনবেন না আন্টি। আমি পৌছে যাবো।”

পিও’র মা খুশি মনে দোয়ার আম্মুর সাথে হাত মিলিয়ে প্লান মাফিক কাজ করছে।

পার্লার থেকে দুটো মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে,নাদিম শেখ রিস্ক নিতে চায় না তাই মেয়ে দুটোকে হায়ার করেছে পিও ও দোয়ার জন্য।

দোয়াকে তৈরি করানো হচ্ছে। দোয়া অনবরত কেঁদেই চলেছে আজীম শেখ’কে আকুতি মিনতি করেও কোনো লাভ হয় নি দোয়ার। দোয়ার নিয়তির উপর সবটা ছেড়ে দিয়ে কাঁদছে।

বরপক্ষ চলে এসেছে,রিয়ানকে দেখার জন্য রিধী জিজু এসেছে বলে দৌড়ে গেলো। পিও মনে মনে খুব খুশি আজ তার প্রিয় মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাবে।

তানাফের বাবা-মাকে স্পেশালি দোয়ার আম্মু খাতিরদারি করছে। নাদিম শেখের খটকা লাগলেও এতটা গুরুত্ব দেয় না।

এদিকে পিও ও দোয়া তৈরি। মেইন গেইটে দোয়ার ফ্রেন্ড দলবল সবাই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। নাদিক শেখ ভাড়া করা গুন্ডা লাগিয়েছে পাহারাদার হিসেবে। গুন্ডাগুলো পায়চারি করছে এদিক ওদিক। রাফি বোরকা নিকাব পরে গেইটে প্রবেশ করে। নাদিম শেখের গুন্ডা রাফির পথ আটকে দাড়ালে রাফি বলে ওঠে মেয়েলি স্বরে “এমা এ কেমন বিয়ে বাড়ি! মেহমানদেরকে ঢুকতেও দেয় না। দেখি সরে যাও আমার বান্ধবীকে দেখতে যাবো।”

ভাড়া করা গুন্ডাগুলো নাদিম শেখকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে আর বলে ” স্যার এই মহিলারে ভালো লাগে নি। ঢুকতে দেবো?”

নাদিম শেখ রাফিকে বোরকা পরিহিতা অবস্তায় উপর থেকে নিচ অব্দি পর্যবেক্ষণ করে, রাফি তা দেখে ফোড়ন কেটে বলে “ছি ছি,আমার বান্ধবীর চাচার এত নজর খারাপ ছি। মেয়ের বয়সী মেয়েকে কীভাবে চোখে গিলে খাচ্ছে।”

নাদিম শেখ ধমক দিয়ে বলে “এই মেয়ে বেশি কথা বলো না।তুমি কে? এখানে তোমার কি কাজ?”

বারেহ আমার বান্ধবীর বিয়ে শুভকামনা জানাবো না? দাওয়াত দিয়ে এত অপমান এই বলে রাফি কান্নার ভং করে। নাদিম শেখ থামিয়ে দিয়ে বলে “তা বলে বোরকা পরে কে বিয়ে বাড়িতে আসে?”

আমি হুজুরের বউ। তাই আমি এভাবেই চলাফেরা করি।দেখি সরে যান। উফফফ এই বলে রাফি নাদিম শেখকে এড়িয়ে ঢুকে পরে গেইটের ভেতর। নাদিম শেখের কেমন যেনো লাগলো। নাদিম শেখ এত গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়।

রাফি সোজা দোয়ার রুমে ঢুকে দোয়াকে বলে “কিরে বান্ধবী তুই আমাকে ভুলে গেছিস?”

দোয়া চিনতে না পেরে রাফির নিকাব খুলতে গেলেই পার্লারের সেই মেয়ে দুটো বলে “দেখি বের হোন। এখানে অনেক কাজ বাকি। পরে বান্ধবীর সাথে আলাপ করবেন”

নাদিম শেখ মেয়ে দুটোকে ফোন করে আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তাই মেয়েদুটো নাদিম শেখের কথামতো রাফিকে রুম থেকে বের করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

দোয়াকে রাফি চিমটি কেটে দিয়ে কানে কানে বলে আস্তে করে “এই দোয়া আমি রাফি। আমাকে বাঁচা। তোকে নিতে এসেছি মামা”

দোয়া এবার বুঝতে পেরে মেয়েদুটোকে বলে “আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলে আপনাকে ডাকবো।আপনারা এখন একটু বাহিরে যান”

মেয়ে দুটো বেশি বাড়াবাড়ি করলো না ধরা খাওয়ার ভয়ে,মেয়ে দুটো দোয়ার কথায় বাহিরে গিয়ে নজর রাখলো। এদিকে দোয়া দরজা বন্ধ করে রাফির নিকাব খুলে দেয়। দোয়া রাফিকে দেখে কান্নারত মুখে ফিক করে হেসে দেয়। রাফি দোয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে “তোকে নিতে আসছি,বাহ বউ বেশে দারুন লাগছে পুরাই খাদক বউ”

দোয়া রাফির পেটে ঘুষি দিয়ে হেসে দেয়,রাফি দোয়াকে বলে “এই বেলকনি দিয়ে তোকে নামতে হবে। মেইন গেইটে তোর কাকা দাড়িয়ে আছে। ইভা, মায়া সবাই এসেছে তোকে নিতে। গাড়ি পেছনের গেইটে আছে। চল প্রথমে তুই নাম।”

দোয়া ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে কোনোভাবে মই দিয়ে নেমে যায়, অমনি মেয়ে দুটো দরজা খুলে ঢুকে পরে,দোয়া নেমে গেলেও রাফি আটকে আছে। রাফি এক চড় দিয়ে একটা মেয়েকে বেহুশ করে দেয়। অন্য মেয়েকে মুখে টেপ লাগিয়ে হাত পা বেধে রাখে।

দু’জনকেই হাত পা দড়ি দিয়ে বেঁধে এসেছে, মুখে টেপ লাগানো। মেয়েগুলোর কাছ থেকে টাকা পয়সা ফোন সব হাতিয়ে রাফি বেলকনি দিয়ে পালিয়েছে।

মেয়েগুলোর ফোনে রিং পরছে বারবার, নাদিম শেখ ফোন দিয়েই চলেছে। নাদিম শেখের এবার বড়সড় ধাক্কা লাগে মনে। নাদিম শেখ দৌড়ে উপরে উঠে, দোয়ার রুম ভেতর থেকে বন্ধ। নাদিম শেখ খানিকটা স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে “ওহ দোয়া তাহলে ভেতরেই আছে। সাজাচ্ছে হয়তো তাই ফোন ধরে নি।”

এদিকে রাফি, দোয়া, মায়া ও ইভা সবাই গাড়িতে, গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যে। দোয়ারা সবাই গাড়িতে গান ছেড়ে দিয়ে চিল করছে।

তানাফ ইনান গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে মেইন রাস্তার মোড়ে,
অন্যদিকে সব জানাজানি হয়ে গিয়েছে দোয়া পালিয়েছে। রিয়ান তানাফকে ফোন করে আপডেট দিচ্ছে একের পর এক।

রাফি তানাফের কাছে দোয়াকে নিয়ে আসে, রাফি তানাফকে বলে “চলে আসছি ভাই। নেন আপনার খাদক বউ”

নাদিম শেখ ভাড়া করা গুন্ডাকে পাঠিয়েছে খোজ নেওয়ার জন্য। এদিকে রিয়ান নাদিম শেখ’কে থ্রেড দিয়ে বলছে “এই বিয়ে যদি এখন না হয় তাহলে আমি পরে আর বিয়ে করবো না”

আজীম শেখ নাদিম শেখ বিপদে পড়ে পিও’র বিয়েতে সামিল হয়।
দোয়ার আম্মু ও পিওর মা নাদিম শেখের কার্টুন ফেস দেখে হেসে কুটিকুটি।

পিওর আম্মু মনে মনে বলে “এবার বুঝ ঠ্যালা। এতক্ষণে ওরা পৌছে গেছে। আর খুঁজে লাভ নেই নাদিম”

দোয়া রাফির দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে পারছে না রাফির গলা টিপে দিতে। দোয়া রাফিকে একপাশে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে গিয়ে বলে “এই মক্কেলের কাছে নিয়ে না এসে আমায় একেবারে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে আসতি তাহলে ভালো ছিলো”

ইনান রাফির আর দোয়ার কথোপকথন শুনে ফিক করে হেসে বলে “ম্যাম বুড়িগঙ্গা নদী অনেক দুর নাহলে এই আইডিয়া মন্দ না। নদীতে ডুবে গেলে আপনাকে কেউ খুঁজে পেতো না। সমস্যা নেই ম্যাম আশেপাশে কোনো নদী পেলে গাড়ি দাড় করিয়ে আপনাকে ধাক্কা দেবো।”

দোয়া ইনানের কথায় ভয়ে ঢোক গিলে চুপ করে আছে,তানাফ সবাইকে বলে “গাইস গাড়িতে বসে পরো,মনে হচ্ছে ওরা আমাদের পিছু নিয়ে এখান অব্দি পৌঁছে যাবে”

যেই বলা সেই কথা। গুন্ডারা ঘিরে ধরেছে সবাইকে, ইনান গাড়ি থেকে বালু হাতে নিয়ে গুন্ডাদের সামনে গিয়ে বলে “ফকির দরবার থেকে এনেছি,যাদের মাথায় চুল নেই তাদের চুল গজাবে।”

এই বলে ঠাক মাথা ওয়ালা গুন্ডার কাছে গিয়ে এক মুষ্টিবদ্ধ বালু চোখে আর মাথায় ছুড়ে মারে, অমনি ইনানকে বাকিগুন্ডারা ঘিরে ফেলে।

এদিকে তানাফ ও রাফি সবাই গুন্ডাদেরকে মারছে। ইভা, দোয়া,মায়া বাকি মেয়েরা গাড়িতে বসে আছে ভয়ে। তানাফের ফাইট দেখে দোয়া ভয়ে কাঁচুমাচু করছে।

ইনানকে গুন্ডা যেই না মারতে যাবে ইনান গুন্ডাকে বলে উঠে “ওয়েট ওয়েট হ্যাড-টস করি আমরা চল। যে আগে আসবে সে মারবে”

গুন্ডারা বিরক্তি নিয়ে বলে “আচ্ছা”

ইনান টস নেওয়ার পর ইনান ফাইট করার জন্য তৈরি হচ্ছে, ইনান প্রথমে তাদের সামনে এক বোতল পানি ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো। এরপর বসে বসে গাড়ির ভেতর থাকা ফ্রুট নিয়ে খেতে লাগলো। মার্সাল বের করে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে আর হাটছে। হাফ গুন্ডার ইনানের খাওয়া দেখে মুখ দিয়ে লোল ঝড়ছে। আরেকটা গুন্ডা ইনানকে বলে “তোর খাওয়া শেষ হয়েছে? এবার চল মারবি আই”

ইনান ক্যাবলার মতো হাসি দিয়ে বলে “আরে দাড়া আরেকটু”
এই বলে ইনান চিপস নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষে ইনান ঢেকুর তুলে বলে “এবার খেয়ে শক্তি করেছি,এমন মার মারবো না,বাপের নাম ভুলে যাবি।”

গুন্ডাগুলো ইনানের দিকে তেড়ে আসে অমনি ইনান গাড়ির পেছন থেকে গাড়ির টায়ার তাদের গলায় পরিয়ে দিয়ে দু’জনে ঘুরছে। ইনান ও গুন্ডা একে অপরকে ধরে ঘুরছে। গুন্ডার গলায় টায়ার পরানো।
ইনান গুন্ডার মাথায় টায়ার ধরে ঘুরে ঘুরে বলছে “মেলা গো মেলা, আমরা সবাই খেলায়। একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে যার কোনো সাথী নেই”

ইনান ও গুন্ডা দু’জনেই ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে ধপ করে পড়ে যায়, বাকি অর্ধেক গুন্ডা কাঁদছে বসে বসে, ইনান ঢুলতে ঢুলতে তাদের কাছে গিয়ে বলে “কিরে কাঁদছিস কেন?”

গুন্ডা গুলো ইনানকে কেঁদে কেঁদে বলে “ছুডু বেলায় আমরাও এই কবিতা কইয়া খেলতাম আইজ ছুডু বেলার কথা মনে পইরা গেলো”

ইনান গুন্ডার ঠাক মাথায় দুটো চড় মেরে বলে “কাঁদিস না আজ আমরা একসাথে খেলমু”

অমনি পেছন থেকে ইনানকে এট্যাক করতে আসে আরেক গুন্ডা। ইনান সরে যাওয়াতে ঠাক মাথাওয়ালা গুন্ডার মাথায় গিয়ে পড়ে এট্যাক।

টায়ার পরা অবস্তা গুন্ডা উঠে দাড়িয়ে বলে “তোকে তো আমি শেষ করবো। তুই আমার সময় নস্ট করলি”

ইনান ক্যাবলার মতো দাড়িয়ে টায়ার পরা গুন্ডাটা’কে বলে “উঠো গো উঠো চোখের পানি মুছো,হাতে কী? কমলা? কই তোর হাতে কমলা নাই। টায়ার আছে”

গুন্ডা ইনানের কথায় টায়ারের দিকে তাকিয়ে ইনানের দিকে যেইনা টায়ার ছুড়ে মারবে তার আগেই ইনান সরে গিয়ে আরেকটা গুন্ডাকে এনে দাড় করিয়ে দেয়।

ইনান বাকিগুন্ডাদের বলছে “দেখলি? তোদের সাথে ছোটবেলার খেলা খেলতে দিলো না। মার ওদের। তোদের লোক তোদেরকে কীভাবে মারলো দেখলি?”

গুন্ডারা বোকার মতো ইনানের কথায় তাদের দলে লোকের সাথে মারপিট লাগিয়ে দিলো।
এদিকে ইনান আস্তে আস্তে কেটে পরলো। তানাফ রাফি মারপিট করে হয়রান।ইনান বুক ফুলিয়ে ভাব নিয়ে এসে বলে তানাফ আর রাফিকে

“এভাবে বাচ্চাদের সাথে গ্যাঞ্জাম করে লাভ আছে? আমার মতো কৌশলে শিক্ষা দেওয়া দরকার। ঐ যে দেখুন তারা নিজেদের মধ্যেই মারপিট করছে। স্যার চলুন আমরা কেটে পরি”

চলবে,,,,