তবু কেন এত অনুভব পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
685

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#১৩তম_পর্ব

“এভাবে বাচ্চাদের সাথে গ্যাঞ্জাম করে লাভ আছে? আমার মতো কৌশলে শিক্ষা দেওয়া দরকার। ঐ যে দেখুন তারা নিজেদের মধ্যেই মারপিট করছে। স্যার চলুন আমরা কেটে পরি”

সবাই গাড়ি নিয়ে পালালো তাদের দৃষ্টির অগোচরে। তানাফ সোজা নিজের বাড়িতে নিয়ে উঠলো তাদের, পুরো বাড়ি ডেকোরেট করা। রাফি তানাফের দিকে তাকিয়ে বলে ” এখানে কী কারো বিয়ে হচ্ছে? এত ডেকোরেশন কেন?”

ইনান রাফির কথায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে হেসে দেয় আর বলে ” তানাফ স্যারের আজ বিয়ে, ফ্রী তে খাওয়া দাওয়া আছে। ”

রাফি ও তার দলবল সবাই হা করে আছে ইনানের কথা শুনে, তানাফ দোয়াকে কোলে নিয়ে সিড়িতে উঠতে লাগলো,দোয়া নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। তানাফ দোয়াকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে রুমে বিছানার মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেয়। দোয়া কোমর ধরে ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে “মাগো আমার কোমর গেলো রে গেলো।”

তানাফ দোয়াকে রুমে আটকে নিচে চলে আসে, সবাই নিচে পায়চারি করছে৷ তানাফ সবাইকে দেখে বলে “দোয়াকে আটকে রেখেছি, কেউ দোয়াকে বেরোতে দেবেনা। দোয়ার কাকা এতক্ষণে পুলিশকে ইনফর্ম করে দিয়েছে বোধহয়।সবাই প্রস্তুত তো!”

সবাই তৈরি হয়ে আছে, এদিকে পিও’র বিয়ে হয়ে গিয়েছে,সারা বাড়ি কান্নার রোল দোয়ার জন্য। দোয়ার আম্মুকে তানাফের মা আড়ালে সব বলে দেয় পুরো ঘটনা। দোয়ার মা সবটা জেনে চুপ হয়ে আছে। পিও’র মা নাদিমের উদ্দেশ্যে আজীম শেখ’কে বলে
“এত খোঁজ করে লাভ কী তার চেয়ে বরং পুলিশকে জানানো উচিৎ। পুলিশ এসে এর কোনো একটা সুরাহা করবে।”

আজীম শেখ পিও’র মায়ের কথায় পুলিশকে ফোন করতে গেলেই নাদিম শেখ বাঁধা দিয়ে বলে ” কী দরকার এত ঝামেলার? এই বাড়িতে কখনো পুলিশ আসে নি আসবেনা। পুলিশ দেখলে লোকে দোয়ার নামে নানান কথা বলবে। নানান কথা রটাবে। বাড়ির মেয়ের নাম খারাপ হবে, এর চেয়ে নিজেরাই খোঁজ নিয়ে ব্যাপারটা সলভ করি ”

আজীম শেখ দোটানায় পরে গিয়ে শেষমেশ পিও’র মায়ের কথায় পুলিশকে ইনফর্ম করলো।
নাদিম শেখ বুঝতে পেরেছে আজ হয়তো তার কপালে শনি ঘুরছে। নাদিম শেখ আস্তে আস্তে পেছনের গেইট দিয়ে বেরোতে গেলেই, নাদিম শেখ’কে কে যেনো পেছন থেকে ডেকে বলে
” কাকু কই যান? হে হে। চলুন আমরা কানামাছি খেলবো ”

নাদিম শেখ পেছন থেকে এমন আওয়াজ পেয়ে ভয়ে আৎকে ওঠে,পেছনে ফিরে ইনানকে দেখে জিজ্ঞেস করে “কে তুমি? কি চায় তোমার?”

ইনান মুচকি হেসে বলে “আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী,পালানোর চেষ্টা করছেন তাই না? হা হা”

নাদিম ঢোক গিলে ইনানের দিকে তাকিয়ে বলে “আ আমি কেন পালাবো? আমি কী চোর নাকি ডাকাত? কী যা তা বলছো। সরো যেতে দাও”

ইনানকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলেই সামনে দেখে পুলিশের ভীড়। নাদিম শেখ কপালের ঘাম মুছে পেছনে পা বাড়াতে গেলে পিও’র মায়ের সাথে ধাক্কা লাগে। পিও’র মা নাদিম শেখের দিকে তাকিয়ে বলে “পালাচ্ছিলে নাকি? পেরেছো পালাতে? যাও পালাও। দেখো বাঁচতে পারো না-কি”

পুলিশ এসে নাদিম শেখ’কে সকল প্রমানের ভিত্তিতে জেলে নিয়ে যায়,সাথে তানাফকেও ধরে নিয়ে যায়।

দোয়ার মা-বাবা ও তানাফের মা-বাবা ঘরে গিয়ে দোয়াকে রুম থেকে বের করে।দোয়া ভয়ে কেঁদে দেয় মাকে জড়িয়ে ধরে।

পিও’র বিয়ে ঠিক ঠাক হয়ে যাওয়াতে পিও’র মা নিশ্চিত। এদিকে দোয়া ভয়ে চুপসে আছে। দোয়ার বাকি বন্ধুরা রাফি ইভা মায়া এক এক করে আজীম শেখ’কে সকল ঘটনা খুলে বলে।

তানাফের বিরুদ্ধে নাদিম শেখ আগ থেকেই চালাকি করে অপহরণের কেস করেছে,তানাফকে কোনোভাবেই জামিন দিচ্ছে না।

তানাফের মা-বাবা চিন্তিত তানাফের ক্যারিয়ার নিয়ে। পিও’র মা আশ্বাস দিয়ে বলে তাদের “চিন্তা করবেন না আমি আসল প্রমাণ। আমি নিজে স্বাক্ষী দেবো”

এরপরের দিন শুনানীতে তানাফের হয়ে পিও’র মা সকল স্বাক্ষী দেয়, নাদিম শেখের সাথে ডিল করা সেই পাচারকারীদের ইনান ধরে এনে জোর করে সাক্ষী দেওয়ায়। উপযুক্ত প্রমাণ ও সিসি টিভি ফুটেজের সত্যতা যাচাই করে তানাফকে জামীন দেওয়া হয়।

নাদিম শেখ’কে খু*ন করার চেষ্টার দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শুনানী শেষে আজীম শেখ এসে নাদিম শেখের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে থাকে “তুই আমার এত বড় ক্ষতিটা না করলেও পারতিস অমানুষ”

পিও ও রিধীর ঘৃণা লাগছে নাদিম শেখকে বাবা বলতে,নাদিম শেখ আকুতি মিনতি করছে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তানাফের বাড়ি চলে আসে।

তানাফকে ইনান হেসে বলে “স্যার কংগ্রেস,খাদক বউ আপনার জীবনে পার্মানেন্টলি জুটলো।”

তানাফ ইনানের কান মজার ছলে টেনে দেয়,আজীম শেখ তানাফের কাজে মুগ্ধ। আজীম শেখ মনে মনে বলছে “দোয়ার সেফটির জন্য তানাফ বেস্ট৷তানাফ এই বাড়ির যোগ্য পাত্র”

রাতে তানাফের বাড়িতে ধুমধাম করে দোয়ার বিয়ে হয়। দোয়ার মনে তানাফের জন্য ফিলিংস জন্মালেও তা প্রকাশ করে না। সবাই বেশ খুশি দোয়া ও তানাফের জন্য।

আজ দোয়া ও তানাফের বাসর রাত,দোয়া রুমে বসে আছে খাটের উপর। তানাফ বাহিরে ছাদে রাফিদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ইনান হাতে একটা বিড়াল নিয়ে এসে তানাফকে দিয়ে বলে “স্যার এই বিড়ালটাকে ধরুন।”

তানাফ ইনানের কথায় বিড়াল কোলে নেয়। ছোট্ট বিড়াল কোলে গুটিসুটি মেরে বসে আছে আরামে। রাফি ইনানকে বলে “কিরে বিড়াল আনলি কেন? কোত্থেকে তুলে আনলি?”

ইনান তানাফ ও রাফির কাছ থেকে খানিকটা দুরে গিয়ে বলে “আজ স্যারের বাসর রাত।শুনেছি আজ রাতে মানুষ নাকি বিড়াল মারে।তাই বিড়াল ধরে এনেছি। একটা রিকুয়েষ্ট স্যার,এই বিড়ালটা খুব শান্ত একে মারিয়েন না। এ খেতে না পেয়ে শুকিয়ে গেছে। দোয়া ম্যাডাম যা খায় তার থেকে অর্ধেক এই বিড়ালকে খাওয়ালে, বিড়ালটি বেঁচে যাবে।”

তানাফ ইনানকে দৌড়ানি দেয়, ইনান হাসতে হাসতে নিচে চলে যায়।

দোয়া খাটে বউ সেজে বসে আছে, চারদিকে মেহমানের আনাগোনা। রিধী এসে দোয়ার পাশে বসে বলতে শুরু করে “সারাদিন কিছু খাস নি। কিছু খেয়ে নে আপু। এভাবে না খেয়ে কেমনে আছিস তুই?”

ইনান সবটা শুনে প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসে দোয়ার জন্য, দরজায় টোকা দিয়ে ইনান বলছে “আসবো ভাবি?”

দোয়া ইনানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে “আসুন”

ইনান দোয়ার দিকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে “না খেয়ে এতক্ষণ কেমনে ছিলেন? খুদা লাগে নি? এটা তো সংবাদপত্রে ছাপানো দরকার। হেডলাইন হওয়া দরকার। দৈনিক গড়ে চার – পাঁচ প্লেট ভাত খাওয়া মেয়েটি দুইদিন না খেয়ে আছে। তাহলে দেখতেন ভাবি গিনেসরেকর্ড হতো”

ইনানের কথায় দোয়া রেগে কটমট করছে, ইনান ক্যাবলা হাসি দিয়ে দোয়াকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলে “খেয়ে নিন ভাবি”

দোয়া না খেয়ে খাবার দুরে ঠেলে দিয়ে বলে “আমার ভালো লাগছে না ইনান। নিয়ে যাও এসব”

ইনান খাবার টেবিলে রেখে চলে আসে, রাতে সবাই যে যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়। তানাফ রুমে এসে দরজা আটকে খাটে বসে ঘড়ি খুলছে। দোয়া একপাশে ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে।

তানাফ ফ্রেস হয়ে এসে দোয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, দোয়া সাড়া না দিলে তানাফ ইশারায় দোয়াকে হাত ধরতে বলে। দোয়া ভয়ে ভয়ে তানাফের হাত ধরে। অমনি তানাফ দোয়াকে কোলে করে বেলকনিতে নিয়ে যায়।

চাঁদের আলো পুরো রুম জুড়ে। তানাফ লাইট অফ করে দেয়। বেলকনিতে চাঁদের আলো পরছে। তানাফ দোয়াকে কোলে নিয়ে বেলকনির দোলনায় বসে। দোয়া ভয়ে এবং লজ্জায় মুখ গুজে আছে তানাফের বুকে। তানাফ দোয়ার চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে দোয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয় আর বলতে থাকে,

“আমার গল্পের মলাটে প্রথম পৃষ্ঠা উৎসর্গঃ আমি বাবা মায়ের জন্যই করবো।

শেষ পৃষ্ঠাই থাকবেন আপনি, যে পৃষ্ঠার পর আর পড়ার ইচ্ছা জাগবেনা

জাগলেও তা পড়া হবেনা❤”

দোয়া মাথা উঁচু করে তানাফের দিকে তাকালো, এই মানুষটাকে কাছ থেকে কখনো দেখা হয়নি দোয়ার। আজ তানাফকে কাছ থেকে দেখতে পেয়ে অন্যরকম অনুভব হচ্ছে সব। জোড়া ভ্রু কিঞ্চিৎ রাঙ্গিয়ে তানাফ দোয়ার মুখে হালকা ফু দেয়। দোয়া শক্ত করে তানাফকে জড়িয়ে আছে। তানাফ দোয়াকে বেলকনিতে বসিয়ে রুমে চলে গেলো খাবার আনতে। টেবিলে থাকা খাবার এনে স্পুন (চামচ) দিয়ে মাখিয়ে দোয়ার মুখের সামনে তুলে ধরে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকোচুরি খেলছে।

এই তো অনুভূতি প্রথম ভালোবাসার,প্রথম প্রেমে পড়ার। দোয়ার কাছে এই অনুভূতি সকল অনুভূতির চাইতে আলাদা। দুজন যেনো প্রেমে পরছে নতুন করে।
তানাফ দোয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে,দোয়া মনে মনে বলছে “কিছু কিংবদন্তির কথা মনে পরে গেলো, প্রেমে পড়ার মত এত আনন্দ দায়ক কিছু কি আছে পৃথিবীতে। আসলেই প্রথম প্রেম,প্রথম স্পর্শ কতটা অনুভুতি মিশ্রিত তা একবার প্রেমে পরলেই বোঝা যায়”

তানাফ মুচকি হেসে দোয়ার মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে বলে ” উদ্দেশ্য সৎ হলে আল্লাহ ঠিক মিলিয়ে দিবেন। যেমনটা আমি পেয়েছি আপনাকে। ”

দুজন মিলে চন্দ্রবিলাশ করছে চাঁদের আলোতে। তানাফ দোয়াকে বুকে নিয়ে দোলনায় পা দুলিয়ে বলতে থাকে “চালতে চালতে ইয়্যা পুছ লেনা
হামছে কিতনি মোহোব্বত হ্যা হা
যানা চাহে পার জান লেনা
হামকো তেরি জারুরাত হ্যা হা…”

দোয়া গভীর ঘুমে তানাফের বুকে ঢলে পরে, তানাফ দোয়াকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে “এই বাচ্চামো স্বভাবটা কখনো হারাতে দেবো না দোয়া। তুমি আমার সেই দোয়া হয়েই থাকবে,যে দোয়ার মধ্যে রয়েছে বাচ্চামো,নিষ্পাপ মন,পবিত্র আত্মা। রাফির কথা রাখতেই অনেক কথা লুকিয়েছি, সব কথা বলা যায় না।তাই আজ চাইলেও বলতে পারছিনা।থাকুক না কিছু কথা অপ্রকাশিত, মন তো জানে আমি পবিত্র”

চন্দ্রবিলাশ বাসর ঘটে তানাফ ও দোয়ার। দোলনায় দুজনে একে অপরকে পরম যত্নে আঁকড়ে ধরেছে। প্রথম অনুভূতি, প্রথম প্রেমের ছোয়া দোয়া পেয়েছে। দোয়া চেয়েছে এই অনুভূতিটুকু পেতে,সেও বাকিদের মত প্রেমে পরতে চেয়েছে। হ্যাঁ পরেছে তানাফের প্রেমে। তানাফের মধ্যে ছিলো না অহংকার, ছিলো না রুপের মাখামাখি। দোয়ার চোখে তানাফ একমাত্র প্রেমিক পুরুষ। দোয়া আর তানাফ একই প্রেমে আবদ্ধ। কে বলেছে বিয়ের পর প্রেম হয় না? কিছু কিছু প্রেম তানাফ ও দোয়ার মতো কাপলদের ও হয়।

পরেরদিন তানাফ ও দোয়ার নতুন জীবনের পথচলা শুরু হয়। দোয়া প্রেমে পরেছে তানাফের। তানাফ প্রেমে পরেছে দোয়ার বাচ্চামো সরল স্বভাবে।
ইনানের নামে ক্লিনিক লিখে দেওয়া হয়। ইনান দায়িত্ব পালন করছে, এদিকে সবাই বেশ হাসিখুশিতে জীবনযাপন করছে।

সমাপ্ত।

(সব গল্পে মাখো মাখো প্রেম ভালোবাসা মানায় না,কিছু গল্প সাধাসিধা রোমান্টিক ও হয়৷ চুমুতেই গভীর প্রেম বোঝানো যায় না। প্রেম বলতে অনুভূতি ভালো লাগা। শেষ ফিনিশিংটা অগোছালোয় থাকুক,গোছানো জিনিসে আফসোস থাকে না। আমি গল্পে নায়ক এত ফিট নায়িকা সুন্দরী চোখ নীল কোনো বর্ণনা দেই নি। এসব আমি দেবো না। আগেও বলেছি নিজ দায়িত্বে নায়ক/নায়িকাকে কল্পনায় সাজিয়ে নিবেন।মনের কল্পনা অন্যদের থেকে বেশ সুন্দর। নিজের কল্পনা দিয়ে সাজিয়ে নিবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে এতদিন যারা সাপোর্ট করে এসেছেন সকলকে। আসসালামু আলাইকুম। ভালো থাকবেন সবাই। আমার উপর রাগ থাকলে মনে মনে বকতে পারেন🤧😑 আমি জানি সবার অবস্তা কেমন বর্তমানে,তার জন্য সরি এত্তগুলা🥺🥺 রাগ করিয়েন না কেউ💔🥺)