তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০৪

0
403

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* হঠাৎ করে অয়ন দেখতে পেলো মেয়েটির জ্ঞান ফিরছে। অয়ন মেয়েটিকে কিছু বলাতে যাবে তার আগেই মেয়েটি চিৎকার করে অয়নকে জরিয়ে ধরে। অয়ন অবাক হয়ে যায়। থ মেরে বসে আছে অয়ন। বেশ বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি এখনও ভয় পেয়ে আছে। অয়ন উপলব্ধি করতে পারছে এই মেয়ের স্পর্শে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে তার ভিতরে। এমন কেনো হচ্ছে তার? আগে কখনও তো এমন হয়নি। অয়ন মেয়েটির পরম স্পর্শ অনুভব করছে। আচমকা অয়নের ঘোর কাটে। অয়ন মেয়েটিকে শান্ত করার জন্য তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

— ভয় পাবেন না। আমি আছি তো। আপনার কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।

* মেয়েটি অয়ন কে ছেড়ে দিলো। অয়ন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি মাথা নিচু করে আছে। হয়তো লজ্জা পেয়েছে সে। অয়ন তা বুঝতে পেরে মেয়েটিকে বলল

— এখন কেমন লাগছে?

— জ্বি ভালো

— আপনার নাম কি?

— অনু, আপনার?

— অয়ন চৌধুরী, আচ্ছা আপনাকে দেখে ভিশন ভয় পেয়েছেন মনে হচ্ছে। কি হয়েছে আমায় বলতে পারেন

— জ্বি। আমি আমার বাবা মা এর সাথে থাকতাম। আমাদের তিনজনের পরিবার ছিলো। বাবা বিজনেস করতেন আর মা হাউজ ওয়াইফ। একদিন বাবার সাথে তার বিজনেস পার্টনারদের ঝামেলা হয়। ওনারা বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু বাবা ওসব তোয়াক্কা করেনি। এই সপ্তাহ খানেক আগে আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলে। আমি পুলিশের কাছে গিয়েছি একটু সাহায্যের জন্য। কিন্তু বিজনেস পার্টনাররা পুলিশকে কিনে রেখেছে অনেক আগে থেকেই। তাই লাভ হলো না কোনো। গতকাল ওরা আবার আমার বাসায় আসে। কিছু কাগজ পত্রে সাইন নিতে। আমার মা কাগজে সাইন করতে নাকচ করে দেয়। ওরা মাকেও নির্মমভাবে খুন করে। অতঃপর আমাকে তুলে নিয়ে যেতে চায়। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে পালিয়ে চলে আসি এখানে। আর তারপর কি হয়েছে তা আমার মনে নেই।

* অনুর কথা শুনে অয়ন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। এই সমাজে মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই। যে যেমন পারছে তেমন করে নিজের শক্তিতে সব কিছু আদায় করছে। একজনের প্রান নেয়া এখন কোনো ব্যাপারই না। অনুর কথা গুলো নিজের জায়গা থেকে শুনলে খুব সহজ মনে হয় তবে অনুর মনের মধ্যে দিয়ে কি যাচ্ছে তা শুধু অনু জানে।

অনু কান্না করছে। অয়ন তাকে কি বলে যে শান্তনা দিবে তা জানে না। কিছু সময় অয়ন নিরব থাকার পর বলল

— কাঁন্না করিয়ে না প্লিজ। আমি এই অমানুষদের শাস্তির ব্যবস্থা করবো।

— না…

অনু আবারও চিৎকার করে উঠলো। অয়ন আবার অবাক হলো এই ভেবে যে এখানে চিৎকার করার কি হলো? অয়ন তো তার সাহায্যে করতে বলেছে এই কথাটা। তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের খুনের বিচার কে না পেতে চায়? অয়ন অনুর দিকে বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— না। আপনি কিছু করবেন না। আপনার কোনো ধারনা নেই ওই লোক গুলো কতটা ভয়ংকর। আপনাকে বাঁচতে দিবে না ওরা।

অয়ন বাঁকা হেঁসে অনুর কথার জবাবে বলল

— আমার কিছু হবে না।

— প্লিজ। আমি চাই না আমার জন্য আপনার কোনো বিপদ হোক।

অয়ন আর কোনো কথা বললো না। কারন এখন তর্ক বিতর্ক করার সময় না। আগে অনুর সুস্থ হওয়াটা জরুরি।

✒️ ভিশন মন খারাপ করে বসে আছে ঈশা। অয়নের উপর প্রচুর রাগ উঠছে তার। একে তো এতো বাজে কথা শুনিয়েছে সে। তার উপর নিজেই রাগ দেখাচ্ছে। ঈশা ফোন থেকে অয়নের পিকটা অপেন করে দেখছে আর বলছে

— শুধু তোকে ভালোবাসি বলেরে অয়ন এতো কিছুর পরেও আমি তোর সাথে কথা বলেছি। অন্য কেউ হলে জীবনেও তোর সাথে কথা তো দূর। তোর দিকে ফিরেও তাকাতো না। স্টুপিড একটা। এতো সন্দেহ করিস কেনো আমায়? তুই জানিস না আমি তোর প্রতি আসক্ত। তোর জায়গাটা কখনও অন্যকে দেয়া যাবে না। তুই একটু বিশ্বাস তো আমায় করতে পারিস। খুব কি ক্ষতি হয়ে যায় আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলে। আমার চাওয়া বলতে তো এতোটুকুই। সবার সামনে অপমান করেছিস। তবুও আমি তোকে কিছু বলতে পারিনি। কারন তোকে ছোট করে কি করে বলি বল? ভালোবাসি তোকে। তাই ছোট করতে পারি না।

* ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতঃপর তৈরি হয়ে নিলো ভার্সিটি যাবে বলে। আজ ক্লাস নেই তবুও ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছে করছে ঈশার। সত্যিই বলতে অয়নকে দেখবে বলে যেতে হবে। এই পিংক কালারের ঠোঁট, জোড়া ভ্রু ওয়ালা ছেলেটাকে একটি বারের জন্য দেখার তীব্র তৃষ্ণা ঈশাকে সব সময় মতো পাগল করে। আচ্ছা ভালোবাসার আগে মানুষ পাগল হয়। নাকি ভালোবাসার পরে? হয়তো ভালোবাসার আগে হয়। তা না হলে তো ভালোবাসা হতোই না। পাগলামি ভালোবাসার প্রথম ধাপ। আর পাগলামি ছাড়া ভালোবাসা হয় না।

ঈশা অয়নের কথা মনে করতেই তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি উঁকি দিলো। অয়নের পাগলামি গুলো মনে পরছে ভিশন।

— অয়ন সাহেব আপনার শার্টে রক্ত লেগে আছে

অনুর সুমিষ্টি কন্ঠ শুনে অয়ন শার্টের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। সত্যি তো অনেকটা ব্লাড লেগে আছে শার্টে। অয়ন অনুকে একটু হেসে বলল

— জ্বি কাল লেগেছে আর কি।

— হুম। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।

— আপনি একা থাকতে পারবেন?

— নিয়তি আমায় অনেক আগেই একা করে গেছে। এখন আর ভয় নেই কোনো।

— এসব বলিয়েন না প্লিজ। আমি জানি আপনার মনের মধ্যে প্রিয়জন হারানোর বেদনা রয়েছে। তবে তাই বলে কি নিজের খেয়াল রাখবেন না? মনে রাখবেন সমাপ্তি সূচনার আগমন নিয়ে আসে।

— হুম….

— আচ্ছা আপনি রেস্ট নিন। আমি নার্সদের বলে যাচ্ছি। আর বিকেলের দিকে আমি আসবো কেমন।

— ঠিক আছে।

* অয়ন কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। অনু অপলক দৃষ্টিতে অয়নের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। অয়ন অনুকে হসপিটালে রেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। হসপিটালের সামনেই ছিলো অয়নের গাড়ি। অয়ন গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় বেশ কিছুটা দূর থেকে অয়নের মুখটা অস্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলো ঈশা। এতোটা দূর থেকে অয়নকে নিশ্চিত ভাবে না দেখা গেলেও তার গাড়িটা ঈশা খুব ভালো করেই চিনে ফেলেছে। আসলে ঈশা রিক্সায় করে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো এমন সময় ঈশা অয়নকে দেখলো। ঈশার বুঝতে পারলো না ব্যাপার কি? অয়ন হঠাৎ হসপিটালে কেনো? ঈশার মনের মধ্যে নানারকম দুশ্চিন্তা উঁকি দিতে লাগলো। ঈশা ভাবছে অয়ন ঠিক আছে তো? ওর যা রাগ। রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা কিছু করেনি তো আবার! ঈশা রিক্সা নিয়ে হাসপাতালের সামনে চলে আসে। মামাকে ভাড়া চুকিয়ে ঈশা হসপিটালের ভিতরে চলে যায়। এতো বড় হসপিটালে কি করে জানতে পারবে সে অয়নেক কি হয়েছে বা কি জন্য অয়ন এখানে এসেছে? ঈশা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। অতিরিক্ত চিন্তার কারনে ঈশার চোখ মুখ ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। কিছু সময় যেতেই ঈশা দেখতে পেলো একজন ওয়ার্ড বয়কে। ঈশা একটু নমনীয় কন্ঠে আকুতি করে বলল

— ভাইয়া একটু সাহায্য করবেন আমায়?

ওয়ার্ডবয় বিরক্তি প্রকাশ করে বলল

— কি সাহায্য?

— আসলে আমি একজন কে খুঁজছি। কিন্তু তাকে পাচ্ছি না।

— ওহহহ রিসিপশনে জ্বিগাসা করে দেখতে পারেন‌। সব তথ্য রিসিপশনে আছে।

— ধন্যবাদ

ওয়ার্ডবয় হনহন করে চলে যায়। ঈশাও বিলম্ব না করে রিসিপশনে চলে যায়।

— স্কিউজ মি। একটু হেল্প করুন আমায়!

— ইয়েস ম্যাম বলুন।

— আচ্ছা অয়ন চৌধুরী নামে কি কেউ এখানে এডমিট আছে? বা কোনো পেসেন্ট নিয়ে এসেছে?

— ওয়েট ম্যাম। আমাকে ডিটেইলস চেক করতে হবে। আপনি বসুন প্লিজ।

ঈশা বিষন্ন মন নিয়ে বসে আছে। মনে মনে প্রার্থনা করছে অয়নের যেনো কোনো খারাপ না হয়। কিছু সময় পরে ঈশার বিষন্নতার অবসান ঘটলো। রিসিপশন থেকে ঈশাকে বলা হলো

— অয়ন নামে কোনো পেসেন্ট নেই এখানে। তবে অয়ন চৌধুরী নামে একজন তার স্ত্রী কে নিয়ে এসেছে।

ঈশার কৌতুক হল বসত জ্বিগাসা করে ফেলে

— আমি কি সেই ফাইলটা একটু দেখতে পারি?

— জ্বি অবশ্যই।

ঈশা ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিতে লাগলো অপারেশনের ফাইল গুলো। হঠাৎ করে ঈশার চোখের সামনে ভেসে আসে অয়নের সাইন। ঈশা একশত ভাগ নিশ্চিত যে এই সাইনা অয়নের। তার মানে অয়ন আমাকে ঠকিয়েছে! নিজের অজান্তেই ঈশার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। ঈশা বললো

— আমি কি এই পেসেন্ট কে দেখতে পারি?

— একচুয়েলি না। কারন উনি এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। আপনি বরং বাহির থেকে দেখে আসতে পারেন তবে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নেই।

— চলবে।

* ঈশা এক পা দু’পা করে কেবিনের সামনে চলে গেলো। ঈশা দেখতে পেলো তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দরী এক নারী শুয়ে আছে বেডে। ঈশার সহ্য হচ্ছে না। বার বার নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে। নিজের মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না যে অয়ন অন্য কারোর হয়ে গেছে। ঈশা নিস্তেজ হয়ে ধপাস করে টুলের উপর বসে পরে। দুনিয়াটা এক মিনিটের মধ্যে অন্ধকার নেমে এলো। ঈশা………………….

#চলবে…………….