তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০৫

0
378

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
ঈশার চোখে অন্ধকার নেমে এলো। যে মানুষটাকে পাগলের মতো ভালোবাসলাম। সেকিনা আমায় ঠকালো! এ কথাটা ভাবতেই বুকের ভিতর দুমরে উঠলো আমার। নিরবে চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। কি করবো মাথা কাজ করছে না। দমবন্ধ কর লাগছে এই পরিবেশটা।

* ঈশা টুল থেকে উঠে পরে। এখানে আর এক মূহুর্ত ও না। চোখের জল মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঈশা। অতঃপর হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়। বাসায় ফিরে ঈশা কারো সাথে কোনো কথা বলল না। নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁন্না করছে সে। সত্যিই কথা বলতে এ সমাজে মুখ আর মুখোশ চেনা দায়। ততক্ষন আপনি প্রিয়জন যতক্ষন আপনি প্রয়োজন। আজ আর ঈশার কোনো প্রয়োজন অয়নের নেই। অন্যের কথাতে এখন অয়ন হাসতে শিখে গেছে। এখন আর ঈশার কথা মনে পরে না তার। পরার কথাও না।
ঈশা আনমনে হাজারটা অভিযোগ করছে অয়নের বিরুদ্ধে। তার হৃদয়ের দহন অয়নের দৃষ্টির আড়ালে।

— মা কোথায় তুমি? তারাতাড়ি খাবার দাও। আমাকে বেরোতে হবে।

— সেকি অয়ন। এই মাত্র বাসায় আসলি আর এখনি চলে যাবি?সারা রাত কোথায় ছিলি?

— ওহহহ মা তোমাকে তো বলাই হয় নাই কাল একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো…

অয়নকে থামিয়ে দিয়ে

— বলিস কি! তোর কিছু হয় নাই তো বাবা?

— আরে না মা। তোমার ছেলের কিছু হবে না। তবে আমার জন্য আরেকজনের অনেক কিছু হয়েছে। মেয়েটা বেঁচে আছে এটাই অনেক।

— ওহহহ এই ব্যাপার। তুই একটা মেয়ের জন্য সারা রাত হাসপাতালে ছিলি তাই তো?

— হুম মা। সত্যিই বলছি আমি।

— অয়ন মিথ্যে বলতে বারন করেছি আমি। তোর বাবা কতটা চিন্তা করেছিলো জানিস। নিজের ফোনটাও অফ ছিলো তোর। সত্যিই করে বল কোন পার্টিতে ছিলি তুই? আল্লাহ মানুষকে ছেলে দেয় যাতে দুশ্চিন্তা কম হয়। আমাকে আল্লাহ দিয়েছে দুশ্চিন্তার কারখানা‌। প্রচুর বিরক্ত লাগছে কথা গুলো? যেদিন আমি থাকবো না ঐ দিন বুঝবি।

বরাবর মা এর এমন এক কথা শুনতে হয়। আসলে মা তো তাই এতো চিন্তা করে। আমি একটু করুন গলায় বললাম

— মা আমি আর এমন করবো না। সত্যিই

— হয়েছে নতুন কিছু বল। এই সব শুনতে শুনতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি

— আমিও মা।

— মানে?

— কিছু না। খিদে পেয়েছে তো। দাও না কিছু।

— হুম

✒️ তারাতাড়ি খাবার শেষ করে অয়ন তৈরি হয়ে নিলো। এখনি ঈশার সাথে দেখা করতে হবে। আজ ওর ফাজলামো করা শেষ করতে হবে। ফাজিল মেয়ে একটা খবর নিলো না আমার। আজ ওর খবর আমি নিবো।

কথা গুলো বলতেই অয়ন গাড়ি স্টার্ট করলো। উদ্দেশ্য ঈশার বাড়ি। বলে রাখা ভালো ঈশার বাসার সবাই অয়নকে চিনে। ঈশা নিজেই অয়নকে তার পরিবারের সাথে পরিচয় করি দেয়। আসলে সেই সম্পর্ক গুলো সত্যিই অসাধারণ হয়। যেখানে একে অন্যের পরিচয় দিতে লজ্জা না পায়। অয়নের এই বিষয়টা ভিশন ভালো লাগে। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় ভালোবাসার।

অয়নের গাড়ি ঈশার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন এক তোরা ফুল নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। ফুলের প্রতি যে ঈশা প্রবল দূর্বল তা অয়নের না জানা নয়। প্রথম যেদিন অয়ন তার বাড়িতে এসেছিলো ঐ দিন ছাদে একটা ছোট্ট নার্সারি দেখতে পেলো। কৌতুহল বসত অয়ন ঈশাকে প্রশ্ন করে বসলো

— আচ্ছা ঈশা এই ফুলের নার্সারিটা কার?

— কার মানে? আমার।

— এটা কি তোমার শখ?

— উহু, নেশা। এই ফুল ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা তুমি আমার জীবনে গুরুত্ব রাখো।

ঐ দিন একটু হেসেছিলাম আমি। কারন ওকে বিদ্রুপ করার উদ্দেশ্যে আমি হাসিনি। বরং এই জন্য হেসেছি কারন ফুলের মতোই নরম ঈশার মন।

ঈশার কথা ভাবতেই অয়নের ঠোঁটে কোনে হাসি উঁকি দিলো। কনিং বেল প্রেস করার কিছু মুহূর্ত পর দরজা খোলা হলো। দরজা খুলে অয়নকে দেখে ভিশন অবাক হয়ে যায় ঈশার মা। অয়ন হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে তাকে সালাম জানায়। ঈশার আম্মু অয়নকে প্রশ্ন করলো

— অয়ন তুমি এখানে?

— জ্বি আন্টি একটু ঈশার সাথে দেখা করতে এসেছি।

— কেনো? আবার ঝগড়া হয়েছে দু’জনের?

— না। ঐ এমনিই আর কি। ঈশা আছে?

— হুম নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। ওকে দেখে ভিশন আপসেট মনে হলো। আমাদের সাথেও কোনো কথা বলেনি।

— আচ্ছা আন্টি আমি দেখছি

✒️ উক্ত কথা শেষ হতেই অয়ন ফুল হাতে ঈশার রুমের সামনে গেলো। দরজা বন্ধ। তার মানে নক করে লাভ নেই। অয়ন বিকল্প উপায় ঈশার রুমে প্রবেশ করার চিন্তা করলো্ ঈশার ছোট বোনের রুম থেকে ব্যল্কনি হয়ে ঈশার রুমে যাওয়া যায়। অয়ন ছুটলো নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। তবে সফলতা নির্ভর করছে ভাগ্যের উপর। অয়ন ব্যল্কনি পেরোতেই দেখতে পেলো ঈশা ওর রুমে বসে আছে। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ। অয়ন পিছন থেকে ঈশাকে জরিয়ে ধরে। ঈশা অনেকটা অবাক হয়ে যায়। ঈশা ভয়ের চিৎকার করে বলে উঠলো

— কে?…

— ওই চিৎকার করছো কেনো? হুমমম। আমি ছাড়া তোমাকে জরিয়ে ধরার সাহস আর কি কারো আছে?

— ডোন্ট টাচ মি অয়ন চৌধুরী।

* এক ঝটকায় ঈশা নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে ছাড়িয়ে নিলো অয়নের থেকে। অয়ন বিছানার উপর বসে আছে। ঈশা দাঁড়িয়ে আছে রাগি লুক নিয়ে। ঈশার আচরণ দেখে অয়ন মুচকি হেসে বলল

— ওগো প্রিয়তমা এতো রাগ কেনো? সারা জীবন রেগে থাকলে অভিমান করে থাকলে সোহাগ করবে কখন? আচ্ছা গাল ফুলিয়ে বসে থাকলে হবে না। তুমিও আমায় শাস্তি দাও। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে নিজেই তোমায় আঘাত করে ফেলি।

অয়ন কথা শেষ করে ঈশার দিকে এগিয়ে আসে। ফুল গুচ্ছ হাতে নিয়ে ঈশার দিকে একটু ঝুঁকে অয়ন আবারও বলতে লাগলো

— জনাবা ভালোবাসি তোমায়। ভিশন ভালোবাসি। দেখো তোমার জন্য এই ফুল গুলো নিয়ে এসেছি। একটু তো মনটা নরম করো।

অয়ন ফুল গুলো ঈশার হাতে তুলে দিলো। ঈশা অয়নকে অবাক করে দিয়ে ফুল গুলো মাটিতে ফেলে দিলো। অয়ন বিষ্ময় সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। ঈশা একটু বাঁকা হেঁসে বলল

— কত নাটক করে পারেন আপনি? অয়ন চৌধুরী আপনাকে তো ফ্লিমের এক্টর হওয়া উচিত। কি নিখুঁত অভিনয়। বাহ বাহ অসাধারণ।

— মানে বুঝতে পারলাম না আমি।

— শাট আপ। কোন সাহসে এখানে এসেছেন? কি চাই এখানে? ঈশা মরে গেছে। বুঝেছেন? আর কখনও আমার সামনে আসবেন না। চলে যান।

অয়ন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন ভাবছে ঈশা অভিমান করে বলছে এসব। ঈশা আবারও বলতে শুরু করলো

— দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ভাবছেন খুব সহজ তো ঈশাকে বোঝানো। উহু অতটা সহজ না। ঈশা আপনাকে ভালোবাসে বলে বুঝতো। নির্লজ্জের মতো খুঁজতো আপনাকে। আর না। আর ভালোবাসি না আপনাকে।

— যদি তাই হয় তবে কাঁদছো কেনো?

— কাঁদছি এই জন্য যে একটা ভূল মানুষকে ভালোবেসে ছিলাম। লজ্জা লাগছে আপনার সাথে কথা বলতে। চলে যান প্লিজ।

অয়ন ঈশার কথা শেষ হতেই ঈশাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। ঈশার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলছে অয়ন

— ক্ষমা করে দাও আমায়। প্লিজ। আর কখনও ৩য় ব্যক্তির কথা বিশ্বাস করবো না আমি। একটা সুযোগ দাও প্লিজ। খুব ভালোবাসি তোমায়। প্লিজ থাকতে দাও।

ঈশা অয়নের কোনো কথাই শুনলো না। সজোরে ধাক্কা মেয়ে নিজেকে অয়নের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। অয়ন ঈশার দিকে ফিরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই….……………

#চলবে………………