তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০৬

0
365

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঈশা…

— ঠাসসসসস, কত বার বারন করেছি আমাকে স্পর্শ করবেন না। আমার কথা কি আপনার কানে যায়‌ না। ওহহ আপনার তো দূর্বলতা নারী। একে সন্তুষ্ট নন আপনি।

ঈশার হাতের ছাপ স্পষ্ট প্রতিয়মান তার গালে । অয়ন মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখের ভাষা আজ হারিয়ে গেছে তার। ঈশা আবারও বলতে লাগলো

— এখান থেকে চলে যান অয়ন চৌধুরী। আর কখনও আমার সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন না।

* অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ঈশার দিকে। যোগাযোগ না রাখার কথাটা অয়নের বুকে এসে আঘাত করে। ঈশা অয়নের রাগকে ভয় পায় অনেক আগ থেকেই। ঈশা অয়নের থেকে দু’পা পিছিয়ে যেতে লাগলো। অয়ন তাকে কোনো সুযোগ দিলো না। সজোরে চেপে ধরে ঈশার বাহু। প্রচন্ড রাগের কারনে অয়নের সুদর্শন চেহারাটা লাল হয়ে আছে। অয়ন ঈশাকে বলতে লাগলো

— আমি নারী বলতেই দূর্বল! এটার মানে কি?

ঈশা চুপ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। এক মুহুর্তের জন্য ঈশা স্তব্দ হয়ে গেলো। অয়নের দিকে তাকিয়ে এক অজানা ভয় গ্রাস করে নিলো তাকে। অয়ন ঈশাকে আবারও বলতে লাগলো

— কি হলো উত্তর কোথায়?

ঈশা একটু নড়ে উঠলো। ঈশা আমতো আমতো করে বলল

— কিছু না। ছাড়ো আমায় প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না।

— আমার জবাব চাই।

— আমি জবাব দিতে বাধ্য নই।

— বাধ্য তুমি।

— আমার হাত ছাড়ো অয়ন। এর থেকে খারাপ কিছুর আশা যদি না করো তো।

অয়ন ঈশার হাত ছেড়ে দিলো। ঈশা অয়নের থেকে একটু দূরে গিয়ে কর্কশ গলায় বলল

— আমার দিব্বি আর কখনও আমার সামনে আসবেন না আপনি। আমি চাই না আর কোনো সম্পর্ক আমাদের মাঝে থাকুক।

অয়ন বাঁকা হেঁসে বলল

— কোন ভূলের শাস্তি দিচ্ছো আমায়? সেটা বলে দাও আর আসবো না আমি।

— ইচ্ছে হচ্ছে না কোনো জবাব দিতে।

— হুম

* অয়ন মাথা নিচু করে চুপ চাপ বেরিয়ে যায় ঈশার বাসা থেকে। যখন সে চায় না কোনো যোগাযোগ রাখতে। তার মানে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অয়ন ঈশার বাসা থেকে সোজা চলে যায় হাসপাতালে। হাসপাতালে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো অনু তার বেডে নেই। একি অবস্থা? কোথায় গেলো মেয়েটা? অয়ন এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো অনুকে। কিন্তু অনুর কোনো পাত্তা নেই। অয়ন দৌড়ে রিসিপশনে চলে আসে। রিসিপশনে গিয়ে অয়ন জ্বিগাসা করলো

— আচ্ছা অনু নামে একজন পেসেন্ট ছিলো। ওনার কেবিনটা ফাঁকা। আচ্ছা বলতে পারেন উনি কোথায় গিয়েছে?

— আসলে স্যার ম্যাম একটু বাহিরে গিয়েছে।

— ওয়াট?? আপনারা ওকে বাহিরে যাওয়ার পারমিশন দিলেন কি করে? কোনো কমনসেন্স নেই আপনাদের? ওহহহহ গড। একজন অসুস্থ মানুষ কে আপনারা একা যেতে দিলেন কি করে? ড্যাম ইট। কতটা কেয়ার লেস হতে পারেন আপনারা।

— সরি স্যার।

* অয়নের চোখ বড় হয়ে যায় কথা শুনে। এই মেয়ে এতো বিপদ থাকার পরেও বাহিরে কি করে যেতে পারলো? কোনো কমনসেন্স নেই নাকি? আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না। এতোটা ইরিসপ্সেবল কি করে হতে পারে মানুষ? সহ্য লাগছে সব।

✒️ অয়ন রিসিপশন থেকে বেরিয়ে যাবে এমন সময় কোথা থেকে যেনো হুট করে তার সামনে চলে আসে অনু। অনু অয়নকে দেখে যে খুব খুশি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে অয়নের রাগ কিন্তু অনুকে দেখে ৩গুন বেড়ে গেছে। অনু অয়নের কাছে এসে মুচকি হেসে বলল

— আপনি এসেছেন? আমি আপনার অপেক্ষা করছিলাম।

— যাস্ট শাট আপ ওকে। আর ইউ ম্যাড? কোথায় গিয়ে ছিলেন আপনি? আপনার কি কোনো কান্ড জ্ঞান নেই? এতো বিপদের মাঝেও আপনাকে বাহিরে যেতে হলো কেনো? আশ্চর্য। মানে আপনার ঝামেলা না বাড়ালে শান্তি হয় না তাই তো। স্টুপিট গার্ল।

অয়নের কথা শুনে অনুর মন খারাপ হয়ে গেলো। চুপ চাপ একজন আসামি ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে সে। অয়ন অনুর নিরবতা দেখে আর কিছু বলল না। অয়ন হসপিটালের বিল দিয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— চলুন।

অয়নের জবাবে অনু চুপ চাপ হয়ে আছে। অয়নের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অনু অয়নের পিছন পিছন আসছে। গাড়ির ভিতর বসলো দুজন। অয়ন গাড়ি স্টার্ট করলো। অনু নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। গাড়ি আপন গতিতে ছুটে চলছে। অনু আনমনে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে। অয়ন ক্ষানেক পর পর অনুর দিকে দৃষ্টিপাত করলেও অনুর কোনো সারা নেই। অয়ন এবার প্রায় বাধ্য হয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— সরি। কথা গুলো ওভাবে বলা উচিত হয়নি আমার।

— ঠিক আছে।

— আচ্ছা সরি বললাম তো। রাগ উঠে গিয়েছিলো আমার। তাই এমন করে বলেছি।

— হুম।

— এখনও অভিমান করে আছেন?

— উহু। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কেনো এমন করেছিলেন।

— হুম

* অনু হাস্যজ্বল মুখে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন নিজের মতো গাড়ি ড্রাইভ করছে। তবে অনু যে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা কিন্তু অয়নের অগোচরে না। তবে অয়ন ঐ দিকে তেমন কোনো পাত্তা দিলো না। অয়নের ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু ঈশাকে নিয়ে। আসলে কেউ থাকার জন্য হাজারটা কারন খোঁজে আর কেউ কেউ চলে যাবার জন্য একটা অজুহাত খোঁজে। সত্যি ঈশার ক্ষেত্রে এই কথাটা মানায়। আমাকে আঘাত করার তো আরও উপায় ছিলো তবে সে কেনো কসম দিলো? আচ্ছা সে কি জানেনা তার খারাপ হোক আমি তা কখনোই চাই না।
আনমনে বলল অয়ন। ভেবে পাচ্ছে না ঈশার থেকে দূরে কি করে থাকবে সে?

✒️ নির্দিষ্ট দূরত্ব শেষে অয়নের গাড়ি তার বাড়ির সামনে চলে আসে। গাড়ি পার্ক করে অয়ন আর অনু বাসায় প্রবেশ করে। অয়নের সাথে অনুকে দেখে অয়নের পরিবারের সবাই অবাক হয়ে যায়। সকলের মনে এক প্রশ্ন এই মেয়েটা কে? আর কেনোই বা অয়নের সাথে এসেছে? অয়ন বসায় আসতেই তার বাবা তাকে প্রশ্ন করে বসলো

— অয়ন এসব কি? কে এই মেয়ে? আর কেনোই বা এখানে এসেছে?

অয়ন সবাইকে সবটা খুলে বলে। অয়নের কথা শুনে সবাই চমকে গেলো সাথে কষ্ট ও পেলো অনুর জন্য। অয়নের বাবা অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আচ্ছা মা আমরা সব শুনলাম। তোমার যতদিন ইচ্ছে ততদিন এখানে থাকবে। সমস্যা নাই কোনো। তাছাড়া আমরা তো তোমার বাবা মা এর মতোই তাই না। কষ্ট পেয়ো না তুমি।

— জ্বি আংকেল। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না আপনাদের। সত্যি আমার কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। আপনাদের কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আমি।

অনু কথা গুলো আটকে আটকে বলছে। আসলে মেয়েটা প্রচুর কান্না করেছে। তাই এখন আর চোখ দিয়ে ঠিক মতো জল আসে না। গলা শুকিয়ে যায়। অয়ন বুঝতে পেরেছে সব। অয়ন অনুকে বলল

— আচ্ছা চলুন তা হলে। আপনার রুমে নিয়ে যাই।

— জ্বি চলুন।

* অয়ন অনুকে নিয়ে চলে আসে রুমে। অনুর রুমের থেকে অয়নের রুমের দূরত্ব বেশি ছিলো না। বলতে গেলে সামান্য একটু দূরত্ব। অনুর রুম আগে থেকেই তৈরি করা আছে। অয়ন অনুকে জ্বিগাসা করে

— রুমটা পছন্দ হয়েছে?

— খুব পছন্দ হয়েছে।

— আচ্ছা তা হলে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন। আমি আসছি।

— ঠিক আছে।

✒️ অয়নকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়ার পর এক অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে ঈশার। মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বার বার হচ্ছে। আমি যা দেখেছি তা কি ঠিক? নাকি ভূল? অয়ন আমার সাথে প্রতারনা করতে পারে না! না না এসব কি ভাবছি আমি? চোখ কখনও ধোঁকা দিতে পারে না। আমি সত্যিই হেরে গেছি অয়নের কাছে। ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে রাখতে চেয়েও পারিনি আমি।

* হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতিতে ছিলো অয়ন। না চাইতেও অয়নকে পাগলের মতো ভালোবাসার শাস্তি পেতে হচ্ছে আমায়। আচ্ছা ঐ মানুষ গুলো এমন কেনো হয়? সত্যিই কারের ভালোবাসা গুলোর শেষটা কি এমনি হয়? ওরা যদি একটু বুঝতো আমরাও মানুষ। হৃদয় আমারও আছে। তবে কখনোই এমন করতো না।
ঈশা কাঁদছে বসে বসে। হয়তো অয়নের সাথে বাজে ব্যবহারের জন্য। নয়তো অয়নের থেকে মুক্তির জন্য। তবে কারন মেটাই হোক না কেনো ঈশা জানে অয়নকে ভূলে থাকা এতোটা সহজ নয়।

* ব্যল্কনিতে বসে সিগারেট হাতে অয়ন। একের পর এক সিগারেট টেনে চলেছে সে। আজ ঈশা তাকে দিব্বি দিলো যাতে তার সাথে আর দেখা না করি। হায় রে ভালোবাসা। কাউকে করে পূর্ণ আবার কাউকে করে অপূর্ণ। অয়নের চাঁদের দিকে তাকিয়ে সিগারেট ফুকছে। হঠাৎ করে মনে পরলো ঈশার কথা।

— ঈশা ঐ চাঁদটাকে দেখছো?

— হুম। কেনো? ওখানে যাবে নাকি?

— কেনো না? আমি চাঁদে জায়গা কিনেছি জানো। ওখানে একটা বাড়ি করবো। আর আমি আর তুমি ওখানে সিফ্ট হয়ে যাবো। কেউ আসবে না আমাদের মাঝে। শুধু তুমি আর আমি।

— ইশশশশরে। শখ কতো?

— অনেক…..

* অতিতের কথা মনে পরতেই অয়নের ঠোঁটের কোণে হাসি উঁকি দিলো। হঠাৎ অয়ন শুনতে পেলো পিছন থেকে কেউ একজন বলল

— আকাশ ভালোবাসেন?

অয়ন পিছন ফিরে দেখতে পেলো অনু। অয়ন হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়লো। অনু আবারও বলল

— আমারও আকাশ ভালো লাগে।

— ওহহ।

— আচ্ছা সিগারেট কি প্রতিনিয়ত খান। নাকি মন খারাপের দিন গুলোতে?

— প্রতিনিয়ত বললে ভূল হবে। কারন আমি সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি না। তভে এখন দিব্বি ভালো লাগে।

— ওহহহ। আচ্ছা এটা না খেলে কি নয়?

— কেনো বলুন তো?

— না আসলে আমার এটা পছন্দ নয়। তাছাড়া এই নিকোটিনের বিসাক্ত ধোঁয়ায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।

— ঠিক আছে

অয়ন সিগারেটটা ফেলে দিলো। অনু অয়নের কাজে আবারও মুগ্ধ হলো। অনু বলল

— ফেললেন কেনো?

— আপনি না বললেন আপনার সমস্যা হয়?

— আমি বললাম বলে ফেলে দিবেন?

— দেখুন এই সব কথা বাদ দিন। আপনি রাতের খাবার খেয়েছেন?

— না

— চলুন তা হলে। ডিনার সেরে আসি।

* অয়ন অনুকে একা রেখেই ব্যল্কনি থেকে বেরিয়ে যায়। অনু ব্যল্কনিতে হেল দিয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে অয়নের চলে যাবার পানে। অনু ভাবছে অয়ন হয়তো লজ্জা পেয়েছে।

✒️ সকালে বেশ লেট করেই ঘুম ভাঙ্গে অয়নের। চোখ কচলাতে কচলাতে ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে যায়। এতো লেট হলো কি করে? আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল। উফফফফ। অয়ন তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে অয়ন তৈরি হচ্ছে। এমন সময় দরজা নক করা হলো। অয়ন বলল

— ইয়েস কামইন।

অনু কফি নিয়ে এসেছে। অয়ন অনুর হাতে কফি দেখে কিছু বলল না। অনু অয়নকে তৈরি হতে দেখে বলল

— কোথাও কি যাবেন আপনি?

— হ্যাঁ। ভার্সিটিতে যাবো।

— ওহহহ।

— কেনো?

— এমনি।

— আপনি যাবেন?

— মানে? সত্যিই আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন?

— হুম নিয়ে যেতে পারি। তাছাড়া বাসায় বসে থেকে কি করবেন?

— হুম আমিও তাই বলি। এক মিনিট আমি শুধু চেঞ্জ করবো।

— ওকে। তারাতাড়ি করুন।এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।

* কিছু সময় পরে অয়ন আর অনু তৈরি হয়ে নিচে আসলো। অয়ন বাইকে বসে বাইক স্টার্ট
করলো। অনু দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— যাবেন নাকি থাকবেন?

— জ্বি যাবো কিন্তু…

— কিন্তু কি? ওহহ আচ্ছা। সমস্যা নেই বসতে পারেন।

— হুম

* অনু বাইকে বসতেই অয়ন বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ভার্সিটিতে আসতেই অয়ন অবাক হয়ে যায়। অয়ন……………………

#চলবে……………….