তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০৭

0
335

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন দেখতে পেলো‌ ঈশা আর ওর কিছু বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছে ক্যাম্পাসের মাঠে। অয়ন দিব্বি রক্ষা করতে বাইক নিয়ে সরাসরি প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলো না। অয়ন পিছনের গেইটের দিকে চলে আসে। সচরাচর ঈশা কখনও ছেলেদের সাথে তেমন কোনো কথা বলে‌ না। তবে আজ অয়ন দেখলো বেশ আনন্দের সাথেই ঈশা আড্ডা দিচ্ছে। আসলে কেউ কারো জন্য মন খারাপ করে বসে থাকে না। নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই সুখী আছে। কিন্তু অবাক করার কথা হলো কিছু মানুষ। কখনও খুশি থাকতে পারেনা। একটা কষ্ট সব সময়ের জন্য বহন করতে হয় বুকের বাম পাশে। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অনু বাইক থেকে নেমে অয়নকে বলল

— আচ্ছা এখান দিয়ে কেনো এলাম আমরা? মূল ফটক দিয়ে আসলে কি কোনো সমস্যা হতো?

— না আসলে তেমন না। আমি বাইক পার্ক সব সময় এখানেই করি। তাই সরাসরি এখানে চলে এলাম। তাছাড়া আপনি তো নতুন এখানে। যদি হারিয়ে যান। তাই এক সাথে এখানে আসলাম। এইটুকুই

— ওহহহ।

— হুম।

অয়ন বাইকের থেকে নেমে চাবিটা হাতে নিয়ে নিলো। অতঃপর অনুকে কিছু বলার আগেই ৩য় ব্যক্তির বাহ বাহ শব্দ অয়নের কান স্পর্শ করে। অয়ন পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো ঈশাকে। অয়ন ঈশাকে দেখতে পেয়ে অবাক হলো। কারন অয়ন যে এখানে আছে সেটা ঈশার জানার কথা নয়। ঈশা বাঁকা হেঁসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— লজ্জা তখন লাগে, যখন প্রিয়জনের পরিচয় সবার সামনে দিতে ইতোস্থত বোধ করতে হয়। চোরের মতো পিছন দিয়ে আসলেন কেনো মিস্টার? সামনে দিয়ে আসার সৎ সাহস নেই আপনার?

অয়ন কোনো কথার উত্তর দিলো না। অয়নকে নিরব দেখে ঈশার এক ক্লাসমেট বলল

— প্লে বয় হলে যা হয় আরকি। আজ এ আছে তো কাল অন্য কেউ। এরা চায় না তাদের সত্যি ফাঁস হয়ে যাক। সত্যিই ফাঁস হয়ে গেলে তো খেলা শেষ। বুঝেছিস ঈশা!

— হুম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা আপু ভাইয়াকে সাবধানে রেখো। বলা যায় না আবার তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে না আপন করে নেয়। আসলে অয়ন সাহেবের মন আবার বিশাল বড়। যে কাউকে জায়গা দিতে পারে মনে।

* ঈশা চলে যায়। সাথে সবাই। অয়ন চুপ করে আছে এখনও। অনু অয়নের চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করলো।

— এই মেয়েটা কে? আপনার জিএফ?

— না।

— তা হলে কি বন্ধু?

— উহু তাও নারী

— তবে কি?

— ভালোবাসি তারে আমি।

— ওহহহহ

— হুম

— মনে হচ্ছে আপনাকে আমার সাথে দেখে রাগ করেছেন উনি।

— ভূল। ঈশা রাগ করে না। ও এটাই চায় আমি অন্য কারো সাথে থাকি।

— ওহহহ

— হুম, আচ্ছা চলুন বেরোতে হবে আমাদের।

— কিহহহহ? এই মাত্র এলাম আর এখনি চলে যাবো?

— হুম আজ তো ঘুরতে এসেছি আমরা। সো এক জায়গাতে বেশিক্ষন নয়।

— তাই!

— হুম

* অয়ন বাইক স্টার্ট করলো। অনু বাইকের পিছনে বসেছে। তাদের দুজনের মাঝে অবশ্য দূরত্ব ঠিকই বিদ্যমান। অয়ন বাইক নিয়ে একদম ভার্সিটির মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যায়। যাবার সময় ঈশাকে কোথাও দেখা গেলো না। অয়ন নিজের মতো করে বাইক চালাচ্ছে। রাস্তার সামনে স্পির্ড ব্রেকার। কয়ন বাইকটা শ্লো করতেই অনু অয়নের কাঁধের উপর হাত রাখলো। অয়ন একটু অপ্রস্তুত। অনু ততক্ষনাৎ অয়নের কাঁধের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। অনু মাথাটা নিচু করে ফেলল। হয়তো লজ্জায়। অয়ন অনুকে অবাক করে দিলো। অয়ন অনুর হাত সামনে থেকে ধরে নিজের কোমড় উপরে রাখলো। অনু তো অবাক হয়ে গেলো। অনু প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। অয়ন নরম কন্ঠে অনুকে বললো

— সমস্যা নেই। আপনি পরে যেতে পারেন। তাই

— ধন্যবাদ।

— ইটস ওকে।

অয়ন বাইক নিয়ে ছুটে চলল। অনু পরম আবেশে অয়নকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন ভাবছে হয়তো পরে যাবার ভয় পাচ্ছে সে। কিন্তু অনু তাকে অন্য কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে।

✒️ অয়ন অফিসের সামনে এসে অনুকে নামিয়ে দিলো। অনুকে অয়ন বললো

— আচ্ছা আপনি এখানে এক মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি বাইকটা পার্ক করে আসছি।

— আমিও আপনার সাথে যাবো।

— কিছু হবে না। এখানে একটু অপেক্ষা করুন।

— আচ্ছা

অয়নের কথা মতো অনু অফিসের পাশে অপেক্ষা করতে লাগলো। অয়ন বাইক‌ নিয়ে পার্কিং এড়িয়ায় চলে আসে। বাইকটা পার্ক করতে করতে অয়ন ভাবছে ঈশার কথা। আচ্ছা ঈশাকি সত্যি আমার ভালোবাসে? নাকি একটা অযুহাত দিয়ে সমস্ত সম্পর্ক শেষ করতে চায়? আচ্ছা যদি তাই হয় তবে আজ কেনো অনুকে আমার সাথে দেখে ও রিয়াক্ট করলো? আচ্ছা আমায় নিয়ে বাজে কথা কেনো বলল? আমি প্লে বয়?

* একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অয়ন। বাইকটা পার্ক করে অফিসের চলে আসে সে। অফিসে এসে অয়ন দেখতে পেলো অনু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। অয়নকে দেখতে পেয়ে অনু তার দিকে এগিয়ে এলো। অয়ন একটু কর্কশ গলায় বলে উঠল

— এই সময়ে এসব কি না খেলে হতো না?

— ইচ্ছে করছিলো তাই….

— শাট আপ ওকে। আপনাকে এসব যেনো আর কখনও না খেতে দেখি।

— আচ্ছা।

— অয়নের ধমকে অনু ভয় পেলো না। বরং হাসছে সে। আসলে অয়ন তাকে ঝাড়ি দিলে এখন ভিশন ভালো লাগে তার। অয়ন অনুর দিকে বিরক্তি নিয়ে বলল

— হয়েছে এখন চলুন।

— হুম

✒️ অফিসে এসে অয়ন কিছু কাজ করলো অতঃপর বাবার চেম্বারে অনুকে নিয়ে গেলো। অনুকে অফিসে দেখে অয়নের বাবা বেশ চমকে যায়। তার সাথে বেশ খুশিও হয়। অনু একটা স্বাভাবিক পর্যায় চলে এসেছে। অয়ন অনুকে পুরো অফিস ঘুরিয়ে দেখায়।

— আচ্ছা অয়ন সাহেব আপনি কি রোজ আসেন অফিসে?

— উহু, ইচ্ছে হলে আসি আর ইচ্ছে না হলে আসি না।

— ওহহহ। তা আজ কেনো এলেন?

— ঐ যে ইচ্ছে হয়েছে তাই।

— একটা প্রশ্ন করতে পারি?

— কি প্রশ্ন?

— আচ্ছা আপনি সব সময় এমন মন খারাপ করে থাকেন কেনো? আপনাকে দেখে মনে হয় বুকের ভিতর অনেক কষ্ট চাপা দিয়ে রেখেছেন। সত্যি করে বলুন তো ব্যাপার কি?

— আছে কোনো কারন।

— আমাকে কি বলা যায়?

— ফ্রোর্স করিয়েন না প্লিজ। আমার ইচ্ছে নেই এই টপিক্স নিয়ে কথা বলতে!

— আচ্ছা।

— হুম

* সারাদিন অফিস করে অনু আর অয়ন রাতের দিকে বাসায় ফিরতে প্রস্তুতি নিলো। অয়ন গাড়িতে উঠে বসলো। অনু দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ। অয়ন অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— বাসায় যাবেন না নাকি?

— হুম

— তা হলে উঠে বসছেন না কেনো?

— কোথায় বসবো?

— মানে? এতো বড় একটা গাড়ি আর আপনি বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না?

— আমি ওখা মেন করিনি তো।

— তবে?

— আমি আপনার পাশের সিটে বসতে চাই।

— ওহহহহ গড। আপনিও না। আচ্ছা আমি কি বলেছি বসতে পারবেন না? বসুন সমস্যা কোথায়?

অয়নের কথা শুনে অনুর মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। তবে কি অনু তা আসঙ্কা করেছে তা সত্যি? আমি যা মনে মনে কল্পনা করছি তা কি সত্যি হতে চলেছে? অয়ন কি সত্যি আমার হতে চাইছে? আমার মনের মধ্যে চলা মুখে না বলা কথা গুলো কি অয়নের বোধগম্য হয়েছে? আনমনে কথা গুলো ভাবছে অনু। অনুর ভাবনার অবকাশ ঘটলো অয়নের চিৎকারের শব্দে।

— এই যে মিস অনু কি ভাবছেন আপনি? আমি চলে গেলাম আপনি থাকুন এখানে।

— এইইইই না না আমিও যাবো।

— হুম ফাস্ট।

অনু অয়নের পাশের সিটে বসলো। অয়ন গাড়ি স্টার্ট করলো। অয়নের মুখে কোনো কথা নেই। কি করে থাকবে কথা? ঈশা তাকে একের পর এক অপমান করে যাচ্ছে। অয়নের যে তার প্রতিটা মুখে বলা কথা বুকে এসে বিঁধছে তাকি ঈশা বুঝে না। অয়ন তো নিজেই জানে না কোন অপরাধের শাস্তি দিচ্ছে ঈশা? এমন করে চলতে থাকলে একটা পর্যায় অয়নের পক্ষে ঈশাকে ভালোবাসা সম্ভব হবে না। কারন দূরত্বে নয়। বরং অবহেলায় ভালোবাসার মৃত্যু ঘটে। আনমনে কথা গুলো ভাবছে অয়ন। হঠাৎ করে অয়নের ভাবনার আকাশে কালো মেঘের ন্যায় উদয় হলো অনু। অনু অয়নের উদ্দেশ্য বলল

— গাড়িটা একটু ধিরে চালান তো। আমার কোনো তারা নেই।

— সরি আমি ধিরে চালাতে পারি না।

— হুম তা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে!

— সরি, বুঝতে পারলাম না।

— কিছু না। আচ্ছা আপনি এতো ফাস্ট যে ড্রাইভ করেন এক্সাডেন্টের ভয় হয় না আপনার?

— উহু অভ্যাস হয়ে গেছে।

— আমায় হয়নি। মনে হচ্ছে আমার এক্সাডেন্ট ঠিক হবে।

— সরি। কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি?

— গাড়ির কথা বললাম।

— ওহহহ আচ্ছা

অয়ন আর অনু দুজনেই হেসে দিলো।

— ঈশা বাসায় এসে নিজের রুমে চুপ চাপ বসে আছিস কেনো? কি হয়েছে তোর? আমাদের বলবি তো নাকি?

ঈশাকে মন মরা হয়ে থাকতে দেখে ঈশার মা কথাটা ঈশার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল

— কিছু হয়নি মা। আমি ঠিক আছি।

— আমাকে মিথ্যে বলছিস তুই? সত্যিই করে বল কি হয়েছে তোর?

ঈশা আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। চোখ বেয়ে আপনা আপনি পানি পরছে। ঈশা তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল

— মা অয়ন আমাকে ঠকিয়েছে। ও অন্য একটা মেয়ের সাথে….

* আর কিছু বলতে পারলো না সে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার। এই পৃথিবীতে সবাই সার্থপর। প্রয়োজন শেষে আর কোনো মূল্য থাকে না এই সমাজে। ঈশার চোখের জল তাতে স্পষ্ট।

* অয়ন নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হচ্ছে। অয়ন ফ্রেশ হয়ে………….

#চলবে…………