তার শহরের মায়া ২ পর্ব-০২

0
970

#তার_শহরের_মায়া ২ 💜
#পার্ট_২
#Writer_Liza_moni

বিকেল গড়িয়ে আসছে।অনুর এখনো বাড়িতে আসার নাম নেই। বাড়ির সদর দরজার সামনে বসে অপেক্ষা করছেন অনুর মা।কলেজ ছুটি হয় বেলা ২ টায়।আর এখন প্রায় ৩:৫৬ বাজে।এত সময় কখনও লাগে না অনুর।২০ মিনিটেই বাড়ি এসে পৌঁছায় মেয়েটা। কিন্তু আজ এত দেরী হচ্ছে কেন তা বুঝতে পারছেন না অনুর মা।
.
.
মাহিরের সাথে হাঁটছে তো হাঁটছেই। দুই জনই চুপ করে আছে।
নিরবতা ভেঙ্গে অনু বললো,,
অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।মা চিন্তা করছেন হয়তো। আপনি যা বলবেন তা না হয় রাতে কলে বইলেন।

মাহির পাশ ফিরে অনুর দিকে তাকালো। হাঁটা থামিয়ে বললো,,,

“অনু আমি তোকে ভালবাসি না।এটা একটা ডেয়ার ছিল।যা পূরন করার জন্য তোর সাথে এমনটা করতে হলো।”

মাহিরের কথায় অনুর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। কেমন যেন লাগছে তার। অসহ্য মনে হচ্ছে সব কিছু।
চোখে মুখে অন্ধকারের আভা।

আপনি মজা করছেন তাই না?

না আমি মজা করছি না। আমি সিরিয়াস।

অনু কী বলবে আর? তার মুখের কথা হারিয়ে গেছে। অদ্ভুত তো।

আমি বাড়িতে যাবো।

তুই কি সিরিয়াস ছিলি এই সম্পর্কে?

আমার ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি যাবো।

মাহির আর কিছু বললো না। বাইকের দিকে হাঁটতে লাগলো।

অনুর পা চলছে না। প্রথম প্রেম তাকে এই ভাবে ধোঁকা দিলো? তার অনুভূতি এত ঠুনকো?
.
.
অনুর বাড়ির গেটের সামনে এসে বাইক থামায় মাহির।অনু একটা ঘোরের মাঝে আছে।
বাইক থেকে নেমে গেটের ভেতরে ঢুকার সময় পেছন ফিরে মাহিরের দিকে তাকিয়ে অনু বললো,,

দিত্বীয় বার ডেয়ার খেলবেন না।

মাহির মাথা নিচু করে বাইক স্টার্ট দিল।

অনু কাতর কন্ঠে মাহিরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,,
থেকে যান না আমার হয়ে। আমি যে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।
অনুর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। অদ্ভুত এই পৃথিবীর অদ্ভুত সব মানুষ।

সেদিনের পর থেকে মাহিরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল অনু।কার্টেসি রক্ষা করার জন্য আজ আবার কথা বললো।

,,,বর্তমান,,,
অতীতের ভাবনা থেকে বের হয়ে বেলকনি থেকে রুমে আসলো অনু।রাত এখন প্রায় ২টা বাজে। চোখ জুড়ে ঘুমেদের ভীড়। একটু ঘুমানো উচিত এখন।

বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বেশি সময় লাগলো না ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে।
.
.
অনু,এই অনু দিনের কয়টা বাজে দেখেছিস?

ঘুমন্ত অনু নড়ে চড়ে উঠলো। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,,
কয়টা বাজে?

তনু জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই রোদ এসে অনুর মুখের উপর পড়ে।অনু বিরক্তিকর শব্দ করে চোখের উপর হাত রাখলো।

উঠে পর।১০ টা বাজে।

অনু শোয়া থেকে উঠে চোখ ডলে তনুর দিকে তাকালো।হাই তুলে বললো তুই আজ স্কুলে যাস নাই?

তনু বিছানায় বসে বললো না।আজ ছুটি নিয়েছি। ঘুরতে যাবো।

ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে অনুর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দিয়ে উঠলো। সত্যি? অনেক দিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না।

যা ফ্রেশ হয়ে আয়। নাস্তা করে নে। একটু পরেই বের হয়ে যাবো।
.
.
অনু ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।রাত জেগে থাকাটা যেনো তার বাজে অভ্যাস হয়ে গেছে। গভীর রাতকে ও তার সন্ধ্যা মনে হয়। অদ্ভুত মেয়ে।

অনু ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে এসে মুখ মুছে মায়ের কাছে রান্না ঘরে চলে গেল।

অনু কে দেখে অনুর মা বলে উঠলো,,
তুই এত দেরী করে ঘুম থেকে উঠিস কেন? রাতে নিশ্চয় দেরি করে ঘুমাস?

অনু মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,, ঘুম আসতে দেরি হয় এই জন্যই।

নিজের শরীরের দিকে দেখেছিস?দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। ঠিক মতো ঘুমায় না। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে না। নামাজ কালাম তো মনে হয় বাদ পড়েছে। এমন হলে কে বিয়ে করবে তোকে?এত শুকিয়ে গেছিস যে ফুঁ দিলে উড়ে যাবি।

মায়ের কথা শুনে অনু হাসলো।
মা অনুর হাত ধরে বললো,,
আমাকে একটা কথা বলতো সোনা।

কী কথা আম্মু?

তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?ভালোবাসিস কাউকে?

অনুর মুখটা মলিন হয়ে গেল।
হুম বাসি তো মা। অনেক ভালোবাসি। সেই অনেক দিন আগে থেকেই ভালোবাসি। বছর তিন পেরিয়ে চারে পড়বে। খুব ভালোবাসি তারে। কিন্তু সে আমার অনূভুতির মূল্য দেয়নি মা। আমার অনূভুতি নিয়ে খেলেছে।
মনে মনে কথা গুলো বললেও মুখে কিছু বললো না অনু।

ঠোঁটের কোণে মেকি হাসি ফুটিয়ে বললো,,
আরে আম্মু কী যে বলো না। আমি আবার কাউকে ভালোবাসবো।এটা বিশ্বাস যোগ্য মনে হয় তোমার?এই সব প্রেমে আমার এলার্জি আছে।

অনুর মা সন্দিহান দৃষ্টিতে অনুর মুখের দিকে তাকালো।
শুন,,
প্রেম করিস আর যাই করিস,, ভেবে চিনতে করবি।একটি প্রবাদ আছে জানিস তো?
ভাবিয়া করিও কাজ,,,করিয়া ভাবি ও না।
আর এই যুগের ছেলে মেয়েদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে আমি কম দেখেছি।চার দিকে শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বিচ্ছেদ,বিরহ, বেদনা,যন্ত্রনা, আর ও কত কি। আমি তোর মা হয়ে না, তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে বলছি,জিদ করে ঢাকায় গিয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছিস। ভুল কিছুতে জড়িয়ে যাইস না। তাহলে সারা জীবন আফসোস করে মরবি।
আমার মতো।

বলেই অনুর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

মায়ের কথা শুনে অনুর ভ্রু কুঁচকে গেলো।
তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে আম্মু?

অনুর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,অন্য দিন বলবো। এখন কাজ করছি।যা এখান থেকে।
.
.
অনু আর কিছু বললো না।চলে আসলো সেখান থেকে। রুমে আসার সময় অনুর চোখ পড়ে তনুর রুমের দিকে।তনু ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।অন্যরকম কথা।যাকে বলে প্রেমকথন।অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।প্রেম প্রেম খেলায় মত্ত সবাই।না জানি এর শেষ পরিণতি কী হয়?
অনু গিয়ে তনুর রুমে ঢুকলো।

তনুকে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই অনু বলে উঠলো,, আমার ঘুরতে যেতে মন চাইছে না। তোর ইচ্ছে হলে যা। আমি যাবো না।

তনু কে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই অনু রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
.
.
তনু মোবাইলে কথা শেষ করে অনুর রুমে গেল। অনুর সামনে যেয়ে বলল সমস্যা নেই বনু,আমিও যাচ্ছি না। আজকে আমাকে স্কুলে যাইতে হবে। একটা মিটিং বসবে বলল টিচার্স মিটিং।

অনু মৃদু হাসল। তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
চল আমিও তোর সাথে স্কুলে যাই।ছোট ছোট বাচ্চাদের কে দেখতে খুব ভাল্লাগে।

তনু বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,

ঠিক আছে।তুই তৈরি হয়েনে।
.
.
তনু,আর অনু স্কুলে যেতে যেতে প্রায় অনেক দেরি হয়ে যায়। মিটিং রুমে সবাই তনুর জন্য অপেক্ষা করছিলো।তনু যেতেই মিটিং শুরু হয়।

অনু স্কুলের বারান্দায় বসে বসে বোর হচ্ছে। কোথায় ভাবলো এখানে এসে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে মজা করবে।
কিন্তু সব শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং বসায় তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।অনু একা একা হাঁটতে লাগলো।

স্কুলের মাঠের বা দিকে একটা কাঠ বাদাম গাছ আছে। নিরিবিলি জায়গাটা দেখে অনু সেই দিকে এগিয়ে গেল।এই স্কুলটা তার নিজের ও।তার শিক্ষাজীবনের শুরু হয় এই স্কুল থেকে।

প্রায় আধঘন্টা পর তনু অনু কে কল
করে জানায় স্কুলের দিকে আসতে। টিচার্স রুমে। প্রিন্সিপাল স্যার তার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।অনু সে দিকে চললো।

পরিচিত অনেক টিচার আছেন এখনো স্কুলে।যদি ও এখনকার প্রিন্সিপাল স্যার তার শিক্ষক না। কয়েকজন সহকারি শিক্ষকই আছেন।যারা অনু কে ছোট থেকে চিনেন।

টিচার্স রুমে গিয়ে সবার সাথে দেখা করল অনু।
.
.
স্কুল থেকে ফিরে তনু দুপুরের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্লান্ত ছিল সে।

বিকেল চারটা।সূর্যের তাপ নেই এখন তেমন একটা।
অনু ছাদের দোলনায় বসে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে সাতকাহন পড়ছে। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। হালকা বাঁকানো চুল গুলো মৃদু বাতাসে উড়ছে। গোসলের পর চুল ছেড়ে দিয়েছে শুকানোর জন্য।আর বাঁধে নি। সাতকাহন পড়ায় মগ্ন সে।

হঠাৎ কেউ তার হাত থেকে বইটা ছো মেরে নিয়ে নিলো।অনু বেশ রেগে গেলো এই কাজে।তনু অনুর সামনে দাঁড়িয়ে বইটা উল্টে পাল্টে দেখছে।

সব সময় মজা একদম ভালো লাগে না আপু।বইটা দে। তুই না ঘুমাচ্ছিলি?এখানে আসলি কেন?

তনু অনুর পাশে গিয়ে দোলনায় বসে বললো,,
তোকে একটা সিক্রেট কথা বলি শোন,,

আমি এখন কিচ্ছু শুনবো না। তুই বইটা দে।

আরে দিচ্ছি তো।আগে আমার কথা শোন।

বিরক্ত হয়ে গেলো অনু। বিরক্ত মাখা কন্ঠে বললো,,
তাড়াতাড়ি বলে বইটা দিয়ে এখান থেকে যা।

তনু উঠে দাঁড়ালো। রেলিং এর কাছে যেতে যেতে বললো,,

আমার আর মাহিরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

চলবে,,,, 🍁

(আসসালামু আলাইকুম💕
ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)