তার শহরের মায়া ২ পর্ব-০৩

0
767

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_৩
#Writer_Liza_moni

প্রচন্ড ঝড়ের পর প্রকৃতি যেমন শান্ত নীরব থাকে তনুর কথা শুনে অনু ও ঠিক তেমনি শান্ত হয়ে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক কেমন রিয়েকশন করা উচিত অনু তা বুঝতে পারছে না।তাকে খুবই শান্ত দেখাচ্ছে।

অনু তনুর কাছে গিয়ে বললো,,
বিয়ে কবে?আর আমাকে কিছু জানায়নি কেন?

সারপ্রাইজ ছিল। শুধু তোর জন্য। অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল ,,
অনেক বড় সারপ্রাইজ দিলিরে। যে সারপ্রাইজের জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম না ধন্যবাদ।

সামনের মাসেই বিয়ে। তুই একেবারে বিয়ে শেষ হলে তার পর যাবি।

অনু মুচকি হেসে বললো,,
তোর বিয়েতে আমার কত্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।কত আনন্দ হবে। অনেক মজা করবো তোর বিয়েতে। আমার একটা মাত্র বড় আপুর বিয়ে বলে কথা।

অনুর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তনু। তার পর নিজেই হেসে দেয়।

অনু ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে তনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
তো কত দিনের সম্পর্ক তোদের?

তনু ও অনুর সাথে গিয়ে দাঁড়ালো।পাশ ফিরে এক পলক অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ রাখলো আকাশে। তার পর বললো,,

১ বছর।

বাহ।আর আমি জানতে ও পারলাম না।

তুই তো ঢাকায় ছিলি। কেমনে জানবি?

সেটাই তো। কেমনে জানমু? জানানোর মতো তো কোনো মাধ্যমই নাই।

অনুর কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট।তনু ঠোঁট কামড়ে হাসলো।থাক অভিমান করুক।
.
.
বিছানার ঠিক মাঝখানে কোলে বালিশ রেখে গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে অনু।

উপর থেকে ও সবার উপরে রাগ করেছে। কেন তাকে জানানো হয় নি যে তনুর বিয়ে সামনের মাসের পাঁচ তারিখে।আর এক সপ্তাহ বাকি।

অদ্ভুত হলেও সত্য যে,
অনুর তেমন একটা খারাপ লাগছে না।তনু আর মাহিরের বিয়েতে। কেমন জানি খাপছাড়া মনে হচ্ছে তার কাছে।
কিশোরী বয়সের আবেগ কী তাহলে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে?

অনুইই বনু আমার রাগ করিস না জানু।
আমিই বারন করছি আম্মু আব্বু কে।যেনো তোকে না বলে বিয়ের কথা।

অনু কিছু বললো না। চুপ করে বিছানার চাদরের দিকে চেয়ে রইলো।
খারাপ লাগছে কিছুটা। তবে সেটা কে প্রকাশ করতে চায় না সে।

আগামী কাল মাহির,মাহিমা,তনু আর অনু তোরা শপিং এ যাবি।
আর অনু শোন,,
তনুর বিয়ের গয়না গুলোর সাথে তোর জন্য একটা সিম্পেল ডিজাইনের চারটা চুড়ি বানাতে দিয়েছি। দেখিস তো পছন্দ হয় কিনা তোর।

বাহ বাহ।তলে তলে তো অনেক কিছু করে ফেলছো। অথচ আমি জানি না।

তুই জেনে এমন কি মহান কাজ করে উল্টায় ফেলতি শুনি?
বাড়ির ছোট মেয়ে ছোট মেয়ের মতো থাকবি।এত রাগ জেদ আসে কই থেকে?

উঁচু গলায় বললো অনুর আম্মু।

অনু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে তনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,
আপুইইই মিসেস আফরোজা আমারে বকা দিছে।
এর বিচার কর।
আমি আজ কে আব্বু আসলে বিচার দিবো তো।যে মিসেস আফরোজা তনু সাহেবার আম্মু আমাকে বকা দিছে।আশুক আজকে আব্বু আমি বলবো তো।

অনুর কথা শুনে মা আর তনু হাসতে হাসতে শেষ। মেয়েটার বড় হলো না। বাচ্চাই রয়ে গেল।
.
.
বেলা প্রায় দশটা হবে।শপিং মলের সামনে দাড়িয়ে আছে অনু,তনু,মাহির,মাহিমা।
সময় যত যাচ্ছে সূর্যের তাপ তত বাড়ছে।অনু ঘেমে নেয়ে একাকার খুব।অস্বস্তি লাগছে তার।

আজ শুধু অনু আর মাহিমার জন্য শপিং করবে। চাইলে তুমিও করতে পারো তনু।
সব খরচ আমার।

তনু অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
সুযোগের সদ্ব্যবহার কর অনু।যা যা কিনতে মন চাইবে সব কিনে নিবি।

অনু অবাক হয়ে তাকায় তনুর মুখের দিকে। নিজের হবু বর কে ফকির করার বুদ্ধি দিচ্ছে তার বোন। সিরিয়াসলি আপু?

যা বলছি তা কর।পারলে আমার জন্য ও কিনিস।

তনুর কান্ডে অনু ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে গেছে। প্রথম কোনো বউ বলছে তার বরকে একদম ফকির করে দিতে।

.
.
অনু তেমন কিছুই কিনলো না।যা কিনেছে সব তনুর জন্য।শাড়ি,চুড়ি, জুতা।সব তনুর জন্য পছন্দ করেছে সে।

গয়নার দোকানে গিয়ে মায়ের পছন্দের বানানো চুড়ি দেখে অনুর মন ছুঁয়ে গেছে।হাতে একদম ঠিকঠাক মাপে হয়েছে। মায়ের চয়েস সব সময় সুন্দর।

শপিং করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ২টা বেজে যায়। বাড়িতে এসে আধা ঘন্টা সময় নিয়ে গোসল করে সতেজ হয়ে যায় অনু। দুপুরের খাবার না খেয়ে বিছানায় শুয়ে বালিশে মাথা রাখতে যাবে এমন সময় অনুর আম্মু এসে বলে,,

এই এখন আর ঘুমাতে হবে না। আমি ভাত আনছি খেয়ে তার পর ঘুমা।

অনু বিরক্ত হয়ে বললো,,
উফফ আম্মু তুমি ও না,,

অনুর আম্মু বিছানায় বসে হাত ধুয়ে ভাত মাখিয়ে অনুর মুখের সামনে ধরতেই অনু হেসে দিলো। হোস্টেলে থাকলে এত যত্ন কেউ করে না।

মায়ের হাতে খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো
তোমরা আম্মু রা এত্ত ভালো কেন?

মেয়ের কথা শুনে হাসলেন আফরোজা।
.
.
বাড়ি সাজানোর জন্য ডেকোরেশনের লোকজন চলে এসেছে। আগামী কাল তনুর গাঁয়ে হলুদ।
দূরের আত্মীয়রা সব চলে এসেছেন।অনুর নানুর বাড়ির সবাই আগামীকাল সকালে আসবেন।মাহিরের হলুদের কাজ শেষ হলে। খালামনি দুজন মাহির দের বাড়িতে না গিয়ে অনুদের বাড়িতে চলে আসেন।অনুর ফুফু তিন জন ও সকালে চলে আসে।সব কাজিনরা মিলে তনু কে ঘিরে বসে আছে।

তনুর রুমের আলমারির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের কাছে দুই হাত গুজে তনুর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আরাফাত। তনুর ফুফাতো ভাই।

অনু ছাদে ডেকোরেশন এর লোকদের দেখিয়ে দিচ্ছে ফুল কোন দিকে লাগাবে? রঙিন কাগজ কোন দিকে লাগাবে? মাতব্বরি করছে সে।এক দম স্বাভাবিক ভাবে আছে অনু। হালকা খারাপ লাগা কাজ করলে ও প্রচন্ড খারাপ লাগা তাকে কেন ছুঁতে পারছে না আজ, তা নিয়ে নিজেই অবাক হচ্ছে অনু।

.
.
এই অনুপি,,

মিষ্টি একটা কন্ঠের ডাকে অনু পেছন ফিরে তাকায়।
চার বছরের ছোট্ট পরি কে দেখে মুচকি হেসে পরিকে কোলে নিয়ে মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিল। কাজিন দলের সব থেকে ছোট্ট সদস্য হলো পরি। পিচ্চির নাম যেমন পরি,, পিচ্চি দেখতেও পরির মতো।

ওলে আমাল পরিটা,,কত দিন পর দেখছি পুচকিটাকে।
পরির গালে আবারো চুমু খেলো অনু।

পরি ও অনুর গালে ছোট্ট ঠোঁটের স্পর্শ করে দিয়ে বললো,,
তুমাতে কত্ত মিস কততি।

ওলে আমাল বাবুনিটা। আমি ও তো তোমাকে কত্ত মিস করছি সোনা।

তনুপির কাতে যাবো।

অনু পরি কে নিয়ে তনুর রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। তনুর রুমে এসে দেখে সব গুলো কাজিন তনু কে ঘিরে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

বাবারে বাবা।তোরা সবাই মিলে এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছিস।আর আমাকে এত্ত এত্ত কাজ করতে হচ্ছে।

অনু পরি কে তনুর কোলে দিয়ে,,
নিজের রুমে চলে গেল। বাড়িতে মেহমান আসলে নিজের রুমটা আর দখলে থাকবে না তার। সকালে মায়ের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে একটা তালা জোগাড় করে রেখেছে।

নিজের থাকার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে। না হলে আর রাতে ঘুমানোর চিন্তা বাদ দিতে হবে।

.
.
.
বিয়ের আমেজ বিরাজ করছে অনুদের বাড়িতে। আত্মীয় স্বজনের জন্য ঘর ভরে গেছে।
ছোট ছোট বাচ্চাদের চিল্লাচিল্লিতে মুখরিত বিয়ে বাড়ি।

হলুদের ছোঁয়া নেওয়ার জন্য তৈরি তনু।
ছাদে সব কাজিনরা মিলে তনুর সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত।

সবার জোড়া জুরিতে শাড়ি পরতে বাধ্য হয় অনু। হলুদ রঙের শাড়ির সাথে হলুদ কাঁচের চুড়ি। হলুদ পাথরের ঝুমকা।খোলা চুল। ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তনু কে দেখছে।সবার ছবি তোলা শেষ হলে সে তুলবে। তনুর সাথে ছবি।

চলবে,,, 🍁 💜