তার শহরের মায়া ২ পর্ব-০৪

0
721

#তার_শহরের_মায়া ২ 💜
#পার্ট_৪
#Writer_Liza_moni

তনুর সাথে সবার ছবি তোলা শেষ হলে তনু কে হলুদ ছোঁয়াতে যায় বড়রা। চার দিকে বাতাস বইতে শুরু করে। অকাশে ও ঘন কালো মেঘ জমতে শুরু করে। বৃষ্টি পড়বে মনে হয়।
আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে বিরক্ত হয় সবাই।

আজকেই বৃষ্টি পড়তে হবে?

কথাটা বলতে না বলতেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। তনুর কোনো ভাব ভঙ্গিমা বুঝতে পারছে না অনু। বৃষ্টি পড়ে তার সুন্দর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টা ভেস্তে দিলো।তাতে যেনো মেয়েটার কিচ্ছু আসে যায় না।

মুষলধারে বৃষ্টি পড়া শুরু করলে সবাই ছাদ থেকে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।

তনুর রুমের বিছানায় মন খারাপ করে বসে আছে সব কাজিনরা। তনুর গাঁয়ে হলুদ নিয়ে তাদের সবার কত্ত প্লান ছিল।এই বৃষ্টি সব নষ্ট করে দিল।

তনু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চিল মুডে বৃষ্টি বিলাস করছে। বৃষ্টি আসায় তনু যেনো আরো বেশি খুশি হয়েছে।

অনু ভ্রু কুঁচকে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

তুই মন খারাপ না করে এমন চিল মুডে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস করছিস?
তোর হলুদের এত সুন্দর আয়োজন নষ্ট হয়ে গেছে আপু। তোর মন খারাপ হচ্ছে না?

অনুর কথা শুনে তনু হাসে। বেলকনির গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে অনুর মুখে ছুড়ে মেরে মুচকি হেসে বললো,,
প্যারা নাই চিল।
হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। আগামীকাল বিয়েটা ঠিকমতো হলেই হলো।

অনু কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল। রুমে এসে তনুর জন্য রাখা মেহেদী নিয়ে আবারো চললো তনুর রুমে।হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিবে তনু কে।

তানিশা অনুর ফুফাতো বোন আর অনু মিলে তনুর হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে।

এমন সময় আধ ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে তনুর রুমে প্রবেশ করলো আরাফাত।
আরাফাত কে এমন ভিজা দেখে তনু অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,
এই আরাফাত ভাই,,
এমন ভিজলে কী করে? বৃষ্টির পানি তোমাকে সয় না।জ্বর আসবে তো।

তনুর কথা শুনে অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তনুর মুখের দিকে। আরাফাত ভাইয়ের বৃষ্টি সয় না?এই কথা শুনে অনু কন্ঠে বিষ্ময় নিয়ে বললো,,

ভাইয়ার সম্পর্কে আমরাই তো এত কিছু জানি না। তুই এত কিছু জানিস আপু?

না জানার মতো কী আছে?বড় ফুফুর কাছে তো অনেক বার শুনেছি।

অনু আর কিছু না বলে মেহেদী লাগানোর দিকে মন দিল।

তনু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
.
.
বৃষ্টি থেমেছে দশ মিনিট হবে।অনু বাড়ির উঠানে নেমে গেছে ভেজা মাটির ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য।
বৃষ্টির পর এই ভেজা মাটির ঘ্রাণ তার এত ভালো লাগে কেন? সেটা অনুর নিজেরি অজানা।

অনু কে বাহিরে দেখে তনু তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বললো,,

এই অনু,,
আমার ফুলের বাগানে হলুদ গোলাপ গাছে একটা গোলাপ ফুল ফুটেছে।ওটা নিয়ে আয় তো।

অনু মাথা নাড়িয়ে বললো,,
আনছি। অপেক্ষা কর।

বাড়ির ডান পাশে ছোট্ট একটা ফুলের বাগান আছে। ছাদে ও আছে তবে সেটা অনুর।অনুর অনুপস্থিতিতে মা আর তনুই গাছ গুলোর যত্ন করেন।

গাছ থেকে ফুলটা নিয়ে অনু তনুর কাছে চলে গেল।ফুলটা তনুর ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে মায়ের কাছে চলে গেল।

আরেএএএ,,
অনু তো চলেই গেল। আমার হাতে তো মেহেদী।ফুলটা খোঁপায় গুঁজে দিবে কে? তানিশা, মনিষা কাউকেই তো দেখছি না।

রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এ দিক ও দিক তাকিয়ে দেখছে তনু।যদি কাউকে পাওয়া যায়। এমন সময় আরাফাত কে দেখলো ড্রইং রুমের দিকে যাচ্ছে।

এই আরাফাত রহমান
শুনেন বড় ভাই,,,

আরাফাত তনুর কাছে এসে মুখ মলিন করে বললো
কী হয়েছে ?

তনু ড্রেসিং টেবিলের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে বললো,,
ফুলটা খোঁপায় গুঁজে দেন না প্লিজ।

আরাফাত গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
তোমাদের এই সব মেয়েলি কাজ আমার দ্বারা হবে না।অনু, তানিশা, মনিষা,
এদের কাউকে ডেকে বলো।

আপনি বড্ড খারাপ আরাফাত ভাই। অসভ্য লোক।লাগবে না আপনার সাহায্য।

আরাফাত মুখটাকে মলিন করে চলে গেল।
আরাফাতের চলে যাওয়ার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে রইলো তনু।
খুব খারাপ লোক।
.
.
.
সেই কখন থেকে মাহির তনু কে ভিডিও করে যাচ্ছে।তনু কল রিসিভ করছে না বরং বার বার কল কেটে দিচ্ছে। মেহেদী শুকিয়ে গেছে। হাত ধুয়ে ও নিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।

তনু এখন মাহিরের সাথে কথা বলতে চাইছে না একদম। কল কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই আবারও কল করছে মাহির।তনু বিরক্ত হয়ে এক পর্যায় মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে শান্তির একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
.
.
সকাল থেকেই অনু কে এটা ওটা করতেই হচ্ছে।সবাই তৈরি হয়ে গেছে পার্লারে যাওয়ার জন্য।তনুর সাথে পার্লার থেকে সেজে কমিউনিটি সেন্টারে যাবে অনু, তানিশা, মনিষা,পরি,আরো কয়েক জন।

অনু রুমে এসে গোসল করে তৈরি হয়ে চললো গাড়ির দিকে।সবাই অপেক্ষা করছে তার জন্য।

মাহিররা কমিউনিটি সেন্টারে এসে বসে আছে। মাহির খুব খুশি।এত দিনে তনু কে নিজের করে পাবে বলে।
তবে তনুর প্রতি তার একটু অভিমান জমেছে। গতকাল এত বার কল করার পরো কল রিসিভ না করে মোবাইল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য।যদি ও সে ঠিক জানে না।আসলে এই কাজটা কে করেছে?

পার্লার থেকে বের হওয়ার সময় তনু কে কোথাও খুঁজে পেলো না অনু। হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে গেছে সে।অনু তনুর মোবাইলে কল করে দেখে,,
মোবাইল তার সামনেই রিং হচ্ছে।এই দিকে আব্বু, আম্মু,ফুফুরা সবাই কল করে যাচ্ছে অনু কে।

তনু কে সব জায়গায় খুঁজে ও পায়নি তারা।
অনুর ভয় হতে লাগলো।মাকে ফোন করে বললো,,
তনু কে খুঁজে পাচ্ছে না তারা। তাদের সাথেই ছিল। হঠাৎ করেই লাপাত্তা হয়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে আগে পড়েনি অনুর মা।তনু হঠাৎ করে কোথায় চলে গেল বুঝতে পারছেন না তিনি।

তুই সবাইকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে চলে আয়।

অনু মায়ের কথা মতো সেটাই করলো।তনু কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কথা টা মাহিরের কানে পৌঁছাতে বেশি দেরি হলো না।

কপালে হাত দিয়ে বসে আছে সবাই।তনু হঠাৎ করে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো? এমন তো নয় যে তনুর কোনো গোপন প্রেমিক আছে। তার আব্বু আম্মু যত টুকু জানেন,,
মাহির আর তনুর আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক আছে।

কিন্তু তনু কোথায় চলে গেল? মেয়েটার কোনো বিপদ হলো না তো?

অস্থির হয়ে পায়চারি করছে অনু। চিন্তা হচ্ছে খুব। আব্বু,বড় ফুফা, ছোট ফুফা, ছোট চাচা,বড় মামা সবাই বের হতে যাবেন তনু কে খুঁজতে এমন সময় তনু আরাফাতের হাত ধরে কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে আছে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তনু আর আরাফাতের দিকে।

অনু তনুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,
কোথায় ছিলি আপু?
আজ তোর বিয়ে।আর তুই আরাফাত ভাইয়ের হাত ধরে আছিস কেন?

তনু স্পষ্ট কন্ঠে বললো,,
বিয়ে কার? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।

মাহির তনুর কাছে এসে বললো,,
মানে?বিয়ে হয়ে গেছে মানে কি তনু?

মানে খুব সহজ মিস্টার মাহির রেদওয়ান।
আপনি যেমন ডেয়ার নিয়ে আমার বোনের আবেগ নিয়ে গেমস খেলেছেন।ঠিক তেমনি আমি ও ডেয়ার নিয়ে আপনার সাথে গেমস খেলেছি।

তনুর কথা শুনে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।অনু বিষ্ময়ে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে গেছে।

আপু জানে এই সব? কখনো বুঝতে দেয় নি তো।

মাহির ভাই শুনেন,,
একটু চিটিং বাজি না করলে আপনাকে শিক্ষা দেওয়া হতো না। জানি আপনি আমার মামাতো ভাই। আমার শ্রদ্ধেয় বড় মামার ছেলে। তবুও আপনাকে আপনার কাজের ফল ভোগ করতেই হতো।

তনু অনুর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এসে মাহির চোখে চোখ রেখে বললো,,
আমার এই ছোট্ট বোনের মন নিয়ে খেলার জন্যই আপনাকে এমন শাস্তি দিয়েছি আমি।
জানি আপনি ও ভালোবাসেন আমাকে।তাই বুঝবেন কারো মন ভাঙ্গলে কেমন লাগে।

আমি আর আরাফাত আজ সাড়ে চার বছর ধরে একে অপরকে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো?এটা ভুলে ও ভাবিনি আমি।

তনু মাহিরের চোখের দিকে চোখ রেখে বললো,,
আমি আপনাকে কোনো দিন ও ভালোবাসিনি। মাহির ভাই। কোনো দিন ও না।

চলবে,,,, 🍁

(আসসালামুয়ালাইকুম 💜
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)