তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-০৪

0
1917

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৪

বাসা থেকে বের হতেই মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো ইমার। হাতের ব্যাথায় রাতে জ্বর হয়েছিলো আবার সকালে তরকারি ফেলায় জ্বালা আর ব্যাথা দুটোই বেড়েছে। হয়তো আবার জ্বর আসবে। আরমান সকালে না খেয়ে যাওয়ায় সারাদিনে খাবার দেওয়া হয়নি ইমাকে। এখন আর শরীরটা চলছে না। কপাল খারাপ হলে যা হয় তাই হলো বাসার পাশের ফার্মেসিটা বন্ধ।

ইমা বিড়বিড় করে বলে উঠলো, এটাকেও আজই বন্ধ রাখতে হলো ? এখন কতদূর যেতে হবে আমাকে আবার আর বোরখা না পড়ায় কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। বাসায় গিয়ে আবার বোরখা পরে আসার শক্তি নেই শরীরে। এভাবেই যেতে হবে।

নিজের মনে বকবক করে অন্য ফার্মেসির দিকে পা বাড়ালো। পরের ফার্মেসিটা মেইন রোড দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ওদিকে মানুষের আনাগোনা কম গাড়ির যাতায়াত বেশী। বাধ্য হয়ে সেখানেই যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো ইমা। এদিকে সন্ধ্যাও নেমে আসছে।

গাড়ির চাকায় একটা লাথি মেরে ইয়াদ বললো, এটাকে এখনই খারাপ হতে হলো ?

অফিসে যাওয়ার সময় তার মনে পরে নতুন প্রজেক্ট শুরু করার আগে জায়গাটা আর একবার দেখে নেওয়া বেটার হবে। তাই জমিটা দেখতে এসেছিলো। হঠাৎ গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেলো মাঝ রাস্তায় এসে। ইয়াদ গাড়ি সবই ঠিক করতে পারে কিন্তু এই মুহূর্তে একদমই ইচ্ছে করছে না চাকা চেঞ্জ করতে। লান্স করা হয়নি এখন বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। ফোন দিয়ে অন্যগাড়ি পাঠাতে বলে গাড়িতে হেলান দিয়ে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্যটা দেখছে। ইয়াদের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক খুবই ভালো। তার মনের কথা শোনার একমাত্র সঙ্গী এই প্রকৃতি। এই প্রকৃতি তাকে ভয়ংকর হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। প্রকৃতি যেমন সুন্দর আর শান্ত মাঝে মাঝে আবার তেমনই ভয়ংকর আর বিধ্বংসী। ইয়াদ প্রকৃতির ভালো দিকটা নেয়নি খারাপ দিকটা নিজের মাঝে ধারণ করেছে আর সেটা তাকে করতে বাধ্য করেছে জীবনের সবচেয়ে আপন মানুষটা। ইয়াদ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার থেকে একটু দূরে বেশ কয়েকটা দোকানপাট দেখা যাচ্ছে হয়তো মেকানিক পেয়ে যাবে কিন্তু ইয়াদের সেটাও করতে ইচ্ছে করছে না। গাড়ি আসার অপেক্ষা করলে সেই সময়টুকু পড়ন্ত বিকেলের সাথে কাটানো যাবে। সেটা ভেবেই দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ।

কীরে ইমা তুই এখানে তাও আবার এভাবে ?

ইমা চমকে উঠে পাশে তাকালেই এলাকার বখাটে ছেলে শামীমকে দেখতে পেলো। সবসময় ইমার দিকে কেমন যেনো নজরে তাকিয়ে থাকে তার সাথে দেখা হলেই কিন্তু আরমানের ভয়ে কিছু বলতে পারে না। তবে আজ ইমা মনে হয় ভালোই ফেঁসে গেছে। ইমা কিছু না বলে তাড়াতাড়ি মেডিসিনগুলো নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ফার্মেসি থেকে বের হয়ে রাস্তায় একটু দূরে আসতেই ইমার পথ আটকে দাঁড়ালো শামীম। এদিকে খুব একটা মানুষজন নেই।

ইমা ভয়ে ভয়ে বললো, শামীম পথ ছাড় আমার, ভালো হবে না বলে দিলাম।

শামীম বিশ্রি হেঁসে বললো, আজকে তো আর তোর ঐ আরমান ভাই নেই আশেপাশে তাহলে কীভাবে বাঁচবি তুই ?

ইমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিলো শামীম। কলাপাতা রঙের একটা সুতি কাপড়ের থ্রিপিস ইমার গায়ে। অনেকটা পুরনো হয়ে গেছে তবু পড়ন্ত বিকেলের আলোতে বেশ লাগছে ইমাকে।

ইমা একটু সাহস নিয়ে বললো, আমার পথ ছাড় শামীম নাহলে চিৎকার করবো আমি।

শামীম খপ করে ইমার হাত ধরে বললো, তুই বুঝিস না কেনো ইমা আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে খারাপ নজরে দেখি না বরং বিয়ে করে ঘরের বউ করতে চাই। তুই শুধু বিয়ে করে নে আমি সব খারাপ কাজ ছেড়ে দিবো।

ইমা রেগে বললো, শামীম আমার হাত ছাড় বলছি নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

শামীম বললো, দেখ ইমা আমি তোকে অনেক সুখে রাখবো তোর মণির অত্যাচার তোকে আর সয্য করতে হবে না।

ইমা জোর করে হাত ছাড়িয়ে রেগে শামীমের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। এতে শামীম রেগে গেলো।

খপ করে ইমার ওড়নার ওপর দিয়ে চুলের মুঠি ধরে বললো, আজই তোকে বিয়ে করবো আমি তারপর তোর এই তেজ ভেঙে গুড়িয়ে দিবো।

ইমার কলিজা কেঁপে উঠলো ভয়ে এমনিতেই তো #তিক্ততার_সম্পর্ক ইমার জীবন বিষিয়ে রেখেছে। এখন আরো একটা #তিক্ততার_সম্পর্ক তার চাই না। বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সাজিয়ে রেখেছে সে। একদিন এক রাজপুত্র এসে তার জীবনের সব কষ্ট মুছে বুকে আগলে নেবে। সেটা এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে না। সূর্য ডুবতে শুরু করেছে আর অন্ধকার গ্রাস করতে শুরু করেছে চারপাশ। আশেপাশে তাকিয়ে কিছুটা দূরে একটা ফাঁকা গাড়ি ছাড়া কাউকে দেখতে পেলো না ইমা। কী করবে বুঝতে পারছে না তবে শামীম যে তাকে আজ সহজে ছাড়বে না সেটা ভালোই বুঝতে পারছে। শামীম ইমার চুল ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করলে ইমা চিৎকার করতে থাকে। এমনই হালকা পাতলা শরীর ইমার তারওপর অসুস্থ আর এই শক্তি নিয়ে সে শক্তপোক্ত দেহের শামীমের সাথে পেরে উঠবে কী করে।

ইমা চিৎকার করে বললো, কেউ আছো,,,? বাঁচাও আমাকে,,, শামীম ছেড়ে দে বলছি আমাকে।

গাড়ির দরজার সাথে হেলান দিয়ে পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো ইয়াদ। হঠাৎ কোনো মেয়ের আওয়াজে ঘোর কাটে তার। ইয়াদ গাড়ির উল্টো দিকে ছিলো তাই ইমা বা শমীম দূর থেকে বুঝতে পারেনি। ইয়াদ ইমার চিৎকার শুনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা ছেলে একটা মেয়ের চুল ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এটা দেখে ইয়াদের ভ্রু কুঁচকে গেলো। এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবার থেমে গেলো। সে কিছুতেই একটা মেয়েকে হেল্প করতে পারে না। পিছিয়ে আসার আগেই ইমা দেখতে পেলো ইয়াদকে। চেহারা বুঝা যাচ্ছে না এতোটা দূরে আছে তারা।

ইমা চিৎকার করে বললো, প্লিজ হেল্প মি।

শামীম রেগে বললো, তোর কোনো নাগর এখানে তোকে বাঁচাতে আসবে না।

ইয়াদ বিড়বিড় করে বললো, এই রাস্কেলগুলো সব আজই আমার সামনে পড়তে হলো। সকালে এতো গুলোকে শিক্ষা দিলাম আবার আরেকটা। তবে ইয়ানা ছাড়া সারা পৃথিবীর সব মেয়েদের যা ইচ্ছে তাই হয়ে যাক তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

ইয়াদ আবার নিজের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালে ইমার চিৎকার বাড়তে লাগলো। ইমার চিৎকার একসময় বিরক্ত লাগতে লাগলো ইয়াদের কাছে তাই আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না এগিয়ে গেলো সেদিকে। শমীম এতোক্ষণে ইমাকে টেনে হিঁচড়ে অনেকটা এগিয়ে এসেছে। ইয়াদ দ্রুত হেঁটে শামীমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

গম্ভীর বিরক্ত গলায় বললো, This girl does not want to go with you, but why are you insisting ?

এমনই শামীম রেগে ছিলো তারপর ইয়াদের কথায় আরো রেগে আর বিরক্ত হয়ে গেলো কারণ সে ইয়াদের কথা বুঝতেই পারেনি আর তাই রেগে একহাতে ইয়াদের কলার চেপে ধরে বললো, এই ইংরেজিতে কী পটপট করেছিস, কে রে তুই ?

কলারে হাত রাখতেই ইয়াদের মাথায় আগুন ধরে গেলো৷ কতবড় সাহস এই রাস্তার ছেলের ইয়াদের কলারে হাত দেয়। যার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে মানুষ ভয় পায় তার কলারে হাত দেয়। ইয়াদ নিজের কলারের দিকে একবার রক্তলাল চোখে তাকিয়ে শামীমের নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দেয়। শামীম ছিটকে দূরে চলে যায় আর নিচে বসে পড়ে আর ধাক্কা খেয়ে ইমা মাটিতে পরে যায়। ইমা হা করে তাকায় একবার ইয়াদের দিকে আবার শামীমের দিকে। এক ঘুষিতে শামীম নাক চেপে ধরে চিৎকার করছে। ইমা এবার ইয়াদের দিকে ভালো করে খেয়াল করলো। এই প্রথম এতো সুন্দর ছেলে দেখছে ইমা। আরমানও বেশ সুন্দর তবে ইয়াদের মতো নয়। রাগে নাকটা টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে তাতে আরো সুন্দর লাগছে ইয়াদকে।

ইয়াদ নিজের কলার ঝাড়া দিয়ে একহাঁটু ভাজ করে শামীমের কলার ধরে উঁচু করে বললো, আবরার হামিদ ইয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে সবার হাঁটু কাপে আর তুই তার কলার ধরিস এতো সাহস ? এক পাঞ্চ খেয়ে উঠতে পারছিস না আর দিলে তোকে আর খোঁজে পাওয়া যাবে না।

ইমা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইয়াদের দিকে। ইয়াদের নামটাই ইমার কানে গেছে বাকি কিছু শুনেনি সে। ইয়াদ ইমার দিকে বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে তাকালো। ইয়াদ না চাইতেও ইমার চোখে চোখ আটকে গেলো তার আর কপালের কুঁচকানো ভাবটা একাই মিলিয়ে গেলো। ইমার গভীর কালো চোখের ঘন আর বড় বড় পাপড়িগুলো ভিজে গেছে কান্নার জন্য তবে এখন তার চোখে মুগ্ধতা আর বিস্ময় দেখতে পাচ্ছে ইয়াদ। ইমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইয়াদের দিকে খুব করে চাইছে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে কিন্তু পেরে উঠছে না। গাড়ির হর্ণ শুনে ইয়াদের হুঁশ ফিরে। মুহুর্তে কপালটা আবার কুঁচকে যায়। রনিত গাড়ি থেকে নেমে ইয়াদকে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রসগোল্লার মতো চোখ বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু বলার মতোও খুঁজে পাচ্ছে না।

রনিত ইয়াদের সামনে গিয়ে তেতলাতে তেতলাতে বললো, স,,,স্যার গ,,গাড়ি নিয়ে এসেছি।

ইয়াদ নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে চমকে উঠলো সে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো ? এটা সে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

নিজেকে সামলে গাড়ির দিকে যেতে যেতে বললো, দেখো মেয়েটার হেল্প লাগবে কিনা আর সামনেই মেকানিক পেয়ে যাবে হয়তো, গাড়ি ঠিক করে অফিসে চলে এসো।

ইয়াদ কথা শেষ করে গাড়িতে উঠে শাঁ করে সামনে গিয়ে চলে যায়। ইয়াদ চোখের আড়াল হতেই ইমার হুঁশ ফিরে। তাকিয়ে দেখে শামীম এখনো নাক চেঁপে ধরে বসে আছে আর তার হাত বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রনিতের এতক্ষণে চোখ পরে শামীমের দিকে আর সবটা বুঝতে পারলো।

রনিত বিড়বিড় করে বলে, আজ তোর কপাল খারাপ রে ভাই স্যারের সামনে পড়ছিলি। তাও ভালো এটুকুতেই ছেড়ে দিছে।

ইমা একটু কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে নিচে পড়ে যাওয়া মেডিসিন কুড়াতে শুরু করলো আর ভাবছে, আবরার হামিদ ইয়াদ নামটা কেমন চেনাচেনা লাগছে। তবে যেই হোক লোকটা আজ ঠিক সময়ে না আসলে কী হতো ভাবতেই আত্মা কেঁপে উঠে ইমার।

রনিত ইমার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, আপনার কোনো হেল্প লাগবে ম্যাম ?

ইমা সামনে তাকিয়ে রনিতকে দেখে বললো, বলার জন্য ধন্যবাদ কিন্তু আমার আর হেল্প লাগবে না।

ইমা নিজের পথে পা বাড়ালো আর রনিত শামীমের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার তো মনে হয় হেল্প লাগবে তাই না ?

শামীম মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালে রনিত আবার বললো, মেয়েদের সাথে নোংরামি করার সময় মনে থাকে না ? তুই শালা এখানেই মর।

রনিত সামনে এগিয়ে গেলো গাড়ি ঠিক করার লোক খুঁজতে আর ইমা অনেকটা চলে গেছে বাসার দিকে পরে রইলো শামীম।

৮.
ইয়াদ নিজের ওপর চরম বিরক্ত এখন। সে কী করে একটা মেয়েকে হেল্প করতে গেলো ? এটা সে মানতে পারছে না আর বারবার মেয়েটার ভেজা চোখ ইয়াদের সামনে ভেসে উঠছে। অফিসে এসে কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না। অফিস ছুটি হয়ে গেছে পাঁচটায় এখন সাতটা বাজে। ইয়াদ নতুন প্রজেক্টের কিছু কাজ করতে এসেছিলো যেটা বিকেলে মিটিংয়ে ড্রিলটা কনফার্ম হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। রনিতকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে গাড়ি নিয়ে ফোরার পর। ইয়াদ একসময় বিরক্ত হয়ে কাজ রেখে অফিস থেকে বের হয়ে গেলো। ক্ষুধা পেয়েছে তাই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নিলো তারপর গাড়ি নিয়ে বের হলো। আজ বাসায় যাবে না ফার্মহাউসে থাকবে সেটা জানিয়ে দিলো ইয়ানাকে।

ফার্মহাউসে গেলে কেয়ারটেকার এসে বললো, স্যার আপনি কিছু খাবেন ?

ইয়াদ বললো, নাহ্ আমার জিনিসপত্র ছাঁদে রেখে এসো। আমাকে যেনো কেউ বিরক্ত না করে। আমার আর কিছু দরকার হলে ডেকে নিবো।

কেয়ারটেকার ঠিক আছে বলে চলে গেলো আর ইয়াদ রুমে এসে সব রেখে শুধু একটা টাউজার পরে ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। আজ ইয়াদ নিজের সাথে একটু সময় কাটাতে চায়। শাওয়ার শেষে ড্রেস চেঞ্জ করে একটা টিশার্ট আর থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পরে ছাদে চলে গেলো। গিয়ে দেখে তার কথা অনুয়ায়ী সব জিনিসপত্র ছাঁদে রেখে যাওয়া হয়েছে। ইয়াদ তুলিটা হাতে নিয়ে ক্যানভাসে রঙ তুলে দিলো। আজ পূর্ণিমা রাত গাছের আড়াল থেকে পূর্ণ চন্দ্র উঁকি দিচ্ছে। ইয়াদ সেটা রং তুলির সাহায্যে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। যখন ইয়াদ নিজের ওপর খুব বিরক্ত থাকে এখন প্রকৃতির কিছু ছবি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলে রঙ তুলির সাহায্যে আজও তাই করার চেষ্টা করছে কিন্তু ইয়াদ চাঁদের দিকে তাকিয়েও যেনো সেই মায়াবী ভেজা চোখ জোড়া দেখতে পাচ্ছে। অনেক সময় পর ইয়াদ খেয়াল করলো সে চাঁদের নয় বরং সেই ভেজা চোখজোড়া ফুটিয়ে তুলেছে তার ক্যানভাসে। এটা দেখে রাগে ইয়াদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো আর হাতের তুলিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।

রেগে বললো, একটা মেয়ে কীভাবে আমাকে এতটা বিরক্ত করতে পারে, কীভাবে,,,,, ? How is this possible ? How,,,,,,,,?

ইয়াদ রেগেমেগে সব ফেলে ঐ অবস্থায় গাড়ি নিয়ে বের হলো আর ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালাতে লাগলো সে কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না। সে শুধু জানে আবরার হামিদ ইয়াদের ভাবনায় কোনো মেয়ে আসতে পারে না কখনো না।

এদিকে ইমা বাসায় এসে কাউকে কিছু বলেনি নরমাল ভাবে কাজ করছে। তবে মনে মনে সে ইয়াদ নামের লোকটার কাছে কৃতজ্ঞ কিন্তু সে তো ইমাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া সুযোগও না দিয়ে চলে গেলো। ইমা না চাইতেও তার মনে একটা পজিটিভ জায়গা দখল করলো ইয়াদ যেটা হয়তো একদমই ঠিক হলো না। যখন ইয়াদের ভয়ংকর রুপ দেখবে তখন হয়তো নিজে নিজে ভেঙে গুড়িয়ে যাবে ইমা।

ইমা আমার কফি দিয়ে যা, আমার খাওয়া শেষ হয়ে গেছে রুমে যাচ্ছি। তুই কফিটা নিয়ে রুমে আয়।

চলবে,,,,,