তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-২+৩

0
2233

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ২ + ৩

আরমান আর না দাড়িয়ে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে কারণ ইমার ওপর দিয়ে এখন যেটা যাবে সেটা হয়তো ওর সয্য হবে না। ইমা দাঁড়িয়ে ছিলো পাথরের মতো। কিছু বুঝে উঠার আগেই ইমার ঘন চুলের এলোমেলো হাত খোঁপাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো ইমার মণি। ব্যাথায় ইমা আহ্ করে চিৎকার করে উঠলো। চুলের টান একদমই সয্য করতে পারে না ইমা। কিন্তু বারবার এই আঘাতটাই করা হয় তাকে।

ব্যাথা কাতর গলায় ইমা বললো, মণি ব্যাথা পাচ্ছি ছেড়ে দাও প্লিজ।

মণি হুংকার ছেড়ে বললো, আমার ছেলের খাওয়া নষ্ট করে এখন এইটুকুই সয্য হচ্ছে না তোর ?

ইমার খালাতো বোন কথা এতোক্ষণ চুপচাপ বসে খেয়ে যাচ্ছিলো। এতোকিছু দেখে আর চুপ থাকতে পারলো না। ইমার প্রতি তার মায়ের অত্যাচার দিনদিন বেড়েই চলেছে। চোখ বুজে সয্য করা ছাড়া তারও কিছু করার নেই। কারণ এই বাড়িতে সে নিজেও মূল্যহীন মানুষ। যেখানে তার মা নিজের মেয়েকে ভালোবাসতে পারে না সেখানে ইমাকে কী ভালোবাসবে ? সে তো বোনের মেয়েই।

কথা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, মা আপুকে মারছো কেনো ? আজকের পরোটা আপু নয় আমি বানিয়েছি।

কথার মা চমকে মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না তাদের কারো সাথে। তাতে অবশ্য খুব একটা যায় আসে না তাদের কারো।

মেয়ের কথা শুনে অবাক হলেও পরে কর্কশ গলায় বললেন, তুই কিচেনে কেনো গিয়েছিলি ?

কথা বললো, আপুকে এক কাপ চা দিতে বলতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আটা মাখতে পারছে না হাতের জন্য। গতকাল তো তুমি আর তোমার ছেলে মিলে হাতটা পুড়িয়ে দিয়েছো। তাই আমি বানিয়েছি পরোটা আর আপু বাকি কাজ করেছে।

এটা শুনে মণি যেনো আরো ক্ষেপে গেলো আর বললো, একেবারে রাজকার্য করে দিয়েছো আমার, একদিন পরোটা বানিয়ে। কিচেনে কে যেতে বলেছে তোকে ? আগুনে পোঁড়ে গায়ের রং আরো কালো হলে বিয়ে দিবো কীভাবে ? এমনিতেই কয়লার ড্রাম হয়ে জন্মেছিস আমার ছেলের কতো টাকা নষ্ট করতে হবে তোকে ঘাড় থেকে নামাতে কে জানে ?

কথা ধরা গলায় বললো, আমার বিয়ে নিয়ে তোমাদের না ভাবলেও চলবে।

কথা আর দাঁড়ালো না নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। হ্যাঁ এই গায়ের রঙের জন্য কথার নিজের পরিবারের সাথে আজ #তিক্ততার_সম্পর্ক।
কথার গায়ের রং শ্যামবর্ণের। টানাটানা চোখ, মাথা ভর্তি লম্বা চুলগুলো দেখে মনে হয় কার্লি করা, গালে টোল পরা হাসি যেটা খুব একটা দেখা যায় না। এই বাড়িতে ইমা আর নানুর সাথেই একটু কথা বলে সে। বাবা-মা ভাই সবার কাছেই যে একটা বোঝা কথা। ইমা এ বাড়িতে আসার আগে সম্পূর্ণ একা ছিলো সে।

কথা চলে যেতেই মণি ইমার চুল আরো শক্ত করে ধরে বললো, ও বললো রান্না করবে আর তুইও করতে দিলি ? যদি ওর হাত পোড়ে যেতো। এমনই কালো আবার হাত পোড়ে গেলে বিয়ে দিতাম কীভাবে হ্যাঁ ? কী চাইছিস যাতে আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিতে না পারি ?

ইমা কাঁদতে কাঁদতে বললো, না মণি, আমি ওকে না করেছিলাম কিন্তু আমার কথা শুনেনি।

মণি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, পোড়া হাতের জন্য রান্না করতে পারিসনি তাই না ? দাড়া এখনই সারিয়ে দিচ্ছি তোর হাত||লেখনীতে তাহমিনা তমা||

এটা বলে ইমার হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো। ইমা বাঁধা দিয়ে বললো, কী করছো মণি ছেড়ে দাও।

মণি ওর কোনো কথা না শুনে ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো আর বেড়িয়ে এলো লাল টকটকে ঘা। টেবিলের ওপর থেকে তরকারির বাটিটা নিয়ে ইমার হাতের ওপর ঢেলে দিলো। ইমার চিৎকারে পুরো বাড়িটা যেনো কেঁপে উঠলো। মণি ইমাকে ছেড়ে দিতেই ইমা দৌড়ে কিচেনে গিয়ে বেসিন ছেড়ে পানির নিচে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগলো। বেশ কিছু সময় হাতটা পানিতে ভিজিয়ে রেখে দেয়াল ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো ইমা। কাঁদতে লাগলো নিশব্দে যে কান্না কেউ দেখতে পাবে না। হঠাৎ কাঁধে কেউ হাত রাখলে তার দিকে তাকালো।

নানু বলে জড়িয়ে ধরলো ইমা তাকে। বয়সের ভাড়ে গায়ের চামড়া কুঁচকে গেছে। দুধে আলতা গায়ের রং, ঝুলে পড়েছে গালের চমড়া। তবু অদ্ভুত এক সুভ্রতা ছড়াচ্ছে যেনো। দেখেই বুঝা যায় অল্প বয়সে ভয়ংকর সুন্দরী ছিলেন।

নানু ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, বোনরে তুই চলে যা এখান থেকে।

ইমা কাঁদতে কাঁদতে বললো, কোথায় যাবো নানু ? আমার যে এই পৃথিবীতে যাওয়ার জায়গার বড্ড অভাব নানু বড্ড অভাব।

নানু ধরা গলায় বললো, এখানে থাকলে ছাহেরা (ইমার মণি)তোকে তিলেতিলে মেরে নিজের রাগ মিটাবে।

ইমা হেঁচকি তুলে বললো, মণির কিসের এতো রাগ আমার ওপর নানু ? আমি তো মণির সব কথা শুনি।

নানু বললো, ছাহেরার রাগ তোর ওপর না রে বোন তার রাগ তোর বাবা-মায়ের ওপর। যেটা তোকে কষ্ট দিয়ে মিটানোর চেষ্টা করছে।

ইমা অবাক হয়ে বললো, আমার বাবা-মায়ের ওপর কিসের রাগ মণির ?

নানু মলিন মুখে বললো, সেটা আমি তোকে বলতে পারবো না রে ইমা। তাই বলছি তুই এখান থেকে চলে যা।

ইমা আবার কেঁদে উঠে বললো, কোথায় যাবো বলো আর আমি চলে গেলে তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে। আরমান ভাইয়া বলে দিয়েছে শুনোনি ? আমি এই বাড়ির বাইরে পা রাখলে তোমাকেও বের করে দিবে বাড়ি থেকে। আর আমি নাহয় কোনো রকমে নিজের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে নিবো তোমার প্রতিদিন যে মেডিসিন লাগে সেই খরচ আমি জোগাড় করতে পারবো না।

নানু বললো, আমাকে বের করে দিলে আমি নাহয় পথে পথে ঘুরবো তবু তুই চলে যা ইমা।

ইমা কেঁদে বললো, আমি পারবো না তোমাকে একা রেখে যেতে। আর এই পৃথিবী একটা একা মেয়ের জন্য কতটা কঠিন তুমি হয়তো জানো না নানু।

নানু রেগে বললেন, তাহলে কী এখানে এভাবে পঁচে মরবি তুই ?||লেখনীতে তাহমিনা তমা||

ইমা চোখের পানি মুছে বললো আমার ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে। কিন্তু আমি তোমাকে একা ফেলে যেতে পারবো না নানু।

কথাটা শেষ করে উঠে আসতে গেলে নানু বলে উঠলো, ইমা তুই আরমানের কথায় রাজি হয়ে যা।

এ কথায় ইমা চমকে তার নানুর দিকে তাকালো তারপর শান্ত গলায় বললো, নানু আরমান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না তার ইগো হার্ট হয়েছে আমি রিজেক্ট করায়। তাই আমার সাথে এসব করছে। আমিও দেখি উনি আর কত নিচে নামতে পারে।

ইমা উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। আরমানকে যেদিন ভার্সিটির সবার সামনে রিজেক্ট করেছিলো সেদিন থেকেই ইমার অভিশপ্ত দিনের শুরু। ভার্সিটিও তার এখন যাওয়া হয় না খুব একটা। কোনো সপ্তাহে দু-দিন আবার কোনো সপ্তাহে একদিনও না। শুধু পরিক্ষাটা দিতে পারে। ক্লাস ছাড়া, টিউশন পড়া ছাড়া টেনেটুনে পাশ করা ছাড়া ভালো রেজাল্ট করার ভাগ্য হয় না তার। পোড়া হাত নিয়ে এ সপ্তাহে ইচ্ছে করেই ভার্সিটি যাবে না ঠিক করেছে ইমা। কেউ দেখলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে।

৪.
এদিকে কথা রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হয়ে গেলো। কথা এবার ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ছে, পড়াশোনা ছাড়া বাকি কোনো দিকে তার নজর যায় না। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের সাথে #তিক্ততার_সম্পর্ক থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে চায় সে। বাবা-মা ভাই সবার থেকে অনেক দূরে চলে যেতে চায়। এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা পাড় হচ্ছিলো তখনই একটা গাড়ি সজোরে ব্রেক করলো তার সামনে। কথা ভ্রু কুঁচকে তাকালো গাড়ির দিকে। কানে হেডফোন লাগিয়ে ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছিলো ইশান। ড্রাইভ করতে তার খুব ভালো লাগে কার রেস করে মাঝে মাঝে। কার রেসে সবসময় চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। সকালে ইয়াদ ওকে না নিয়ে যাওয়ায় মন খারাপ ছিলো তাই একটু বেশি স্প্রিডে চালাচ্ছিলো। হঠাৎ একটা মেয়ে সামনে চলে এলে সজোরে ব্রেক করায় মাথাটা স্টিয়ারিং এ ধাক্কা খেলো। মাথা না কাটলেও বেশ ব্যাথা পেয়েছে তাই রাগী ফেস নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ নেই বরং ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

ইশান গাড়ি থেকে নেমে রেগে বললো, দেখে রাস্তা পার হতে পারেন না ? এখনই এক্সিডেন্ট করলে তো রাস্তার লোকজন আমাকে গণধোলাই দিতো।

কথা ইশানকে দেখতে লাগলো। সিল্কি চুল বাতাসে উড়ছে, গায়ের রং সদ্য জন্মানো ইঁদুরের বাচ্চার মতো। একবার স্টোররুমে পুরোনো একটা বই খুঁজতে গিয়ে কথা দেখেছিলো সদ্য জন্মানো ইঁদুর ছানা। এর গায়ের রং তেমনই লাগছে কথার কাছে , এটা ভেবে আনমনে হাঁসলো কথা। ছেলেটা জোড়া ভ্রু কঁচকে তাকিয়ে আছে কথায় দিকে, ঠোঁটগুলি লাল রঙের, গায়ে ব্ল্যাক টিশার্ট আর ব্লু জিন্স প্যান্ট, টিশার্টের গলায় সানগ্লাস ঝুলিয়ে রেখেছে। কথা বড়সড় একটা ক্রাশ খেলো। কিন্তু পরক্ষণে নিজের অবস্থান মনে পরতেই নিজেকে সামলে নিলো। তার জন্য এসব চিন্তা করাও অন্যায়। ইশান উত্তর না পেয়ে কথাকে একবার দেখে নিলো পা থেকে মাথা পর্যন্ত। সাদা আর ব্লু কম্বিনেশনের কলেজ ড্রেস পরা, মাথায় সাদা হিজাব, কাঁধে ব্যাগ আর হাতে একটা মোটা গাইড দেখে স্কুলের মেয়ে মনে হচ্ছে। গায়ের রং কালো বলা চলে না তবে শ্যামবর্ণ। কিন্তু সাদা হিজাব পড়ায় কালোই লাগছে।

কথা নিজেকে সামলে খুব আস্তে বললো, সরি।

ইশান একটু অবাক হলো কারণ মেয়েটা এতো সহজে সরি বলে দিবে ভাবেনি। কারণ দোষ তার নিজেরও ছিলো এই রোডে যতটুকু গতিতে গাড়ি চালানোর নিয়ম তার প্রায় তিনগুণ বেশি গতিতে ইশান চালাচ্ছিলো। ইশান মনে মনে ভালো হয়তো তাকে দেখে ভয় পেয়ে সরি বলে দিয়েছে।

এটা ভেবে একটু ভাব নিয়ে বললো, এই পিচ্চি এরপর থেকে রোড ক্রস করার আগে ভালো করে দেখে নিবে কেমন ?

পিচ্চি শব্দটা শুনে কথার রাগ উঠে গেলো। সে এখন কলেজে পড়ে তাকে কেনো এখন কেউ পিচ্চি বলবে। রাগে কথার চিকন নাকটা ফুলে গেলো।||লেখনীতে তাহমিনা তমা ||

কথা রেগে বললো, আপনি পিচ্চি কাকে বলছেন হ্যাঁ ? Now I am a college student.

কথার রাগ দেখে ইশান অবাক হলো। পিচ্চি মেয়ের আবার এতো রাগ। ইশান অবাক হয়ে বললো, আমি তো মনে করেছি তুমি স্কুলে পড়ো।

কথা কটমট করে তাকিয়ে আছে ইশানের দিকে। তা দেখে ইশান দুষ্টুমি করে বললো, আর কলেজে পড়লেই বড় হয়ে গেলা নাকি তুমি তো পিচ্চিই।

কথা বাড়তি কথা বলা পছন্দ করে না তাই ইশানের দিকে একটা কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহনিয়ে চলে গেলো সামনে থেকে। ইশানও মুচকি হেঁসে টিশার্টের গলা থেকে সানগ্লাস নিয়ে চোখে দিলো আর শিষ বাজাতে বাজাতে গাড়িতে উঠে ভার্সিটির দিকে যেতে লাগলো।

৫.
ইয়ানা গাড়িতে বসেই ছেলেটাকে দেখিয়ে দিলো ইয়াদকে। গেইটের সামনে বাইকে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডা দিচ্ছে বললে ভুল হবে সেখান দিয়ে যাওয়া মেয়ের টিস করছে। এসব দেখে ইয়াদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো রাগে।

ইয়াদ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো, তুই যা।

ইয়ানা অবাক হয়ে বললো, মানে ? তুমি কিছু বলবে না ওদের ?

ইয়াদ রেগে বললো, তোকে যেটা করতে বলছি সেটা কর না।

ইয়ানা একটু ভয় পেলো ইয়াদের রাগ দেখে। ইয়াদ ইয়ানার সামনে নিজের রাগ প্রকাশ হতে দেয় না। আজ একটু প্রকাশ পেলে ইয়ানা ভয় পেয়ে যায়। ইয়াদ বোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাই চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো ইয়াদ।

নরম গলায় বললো, তুই ভার্সিটির ভেতরে যা আমি দেখছি ওরা কী করে ?

ইয়ানা আর কথা না বাড়িয়ে ওকে বলে চলে গেলো গাড়ি থেকে নেমে। গেইটের সামনে যেতেই সবগুলো ছেলে শিষ বাজিয়ে উঠলো। ছেলেটার নাম জাহিদ দেখেই বুঝা যায় একটা বখাটে।

সে সবাইকে থামিয়ে বললো, হেই বেবি তুমি না গতকাল বললে আমি তোমাকে আর বিরক্ত করলে তোমার ভাইয়াকে বলে দিবে ? জানো আমি না একদম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

এটা বলেই উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো সাথে থাকা সবগুলো যোগ দিলো। ইয়ানা হাতের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে সামনের দিকে আগাতে চাইলে জাহিদ পথ আঁটকে দাঁড়ালো।

ইয়ানার দিকে ঝুঁকে বললো, হেই বেবি এতো তাড়া কিসের সবসময় ঐ আরমান মাহমুদের ক্লাস করার জন্য একদম উতলা হয়ে থাকো দেখি। চলো আজ আমি তোমাকে ক্লাস করাবো।

জাহিদের মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ আসছে আর তাতে ইয়ানার পেটের সব বেড়িয়ে আসার উপক্রম।

ইয়ানা কাঁপা গলায় বললো, আমার সামনে থেকে সরে যান বলছি নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমার ক্লাসের লেট হচ্ছে।

ইয়ানা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলে জাহিদ খপ করে ইয়ানার হাত ধরে ফেলে। এতোক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে ইয়াদ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়ানার হাত ধরায় ইয়াদের মাথায় যেনো থপ করে আগুন জ্বলে উঠলো আর কন্ট্রোল করা সম্ভব না তার পক্ষে। ইয়াদ গিয়ে জাহিদের হাতটা এতো শক্ত করে ধরলো যে জাহিদ ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো আর ইয়ানার হাত ছেড়ে দিলো।

জাহিদ রেগে বললো, কোন শালার রে এতোবড় সাহস জাহিদের হাত ধরে।

জাহিদ ঘুরে তাকিয়ে দেখে একহাত পকেটে রেখে অন্যহাত দিয়ে জাহিদের হাত ধরে রেখেছে ইয়াদ। ইয়ানা পাশে তাকিয়ে নিজের ভাইয়াকে দেখে মুখে হাঁসি ফোটে উঠলো। কিন্তু ইয়াদের লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে ভয় পেয়ে গেলো।

ইয়ানা কিছু বলবে তার আগেই ইয়াদ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো, সোজা ক্লাসে যাবি একবারও পিছনে ফিরে তাকাবি না যা।

ইয়াদের মুখ দেখে ইয়ানার আর কিছু বলার সাহস হলো না সোজা হাটা শুরু করলো ক্লাসের দিকে। ইয়ানা যত আগাচ্ছে জিহাদের হাতে চাপের পরিমাণ ততো বাড়ছে। ইয়াদ তাকিয়ে আছে ইয়ানার যাওয়ার দিকে। সে চায় না তার বোন তার এই ভয়ংকর রুপ দেখুক। এদিকে জাহিদ একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর ব্যাথায় হাত মোচড়ামুচড়ি করছে। ইয়াদ তাকিয়ে দেখলো ইয়ানা তার চোখের আড়াল হয়ে গেছে। জাহিদ রেগে খোলা হাতটা দিয়ে ইয়াদকে মারতে গেলে ইয়াদ পকেটে থেকে হাত বের করে ধরে ফেললো।

জাহিদ বললো, এই কে রে তুই, জানিস আমার সাথে এসব করার ফল কী হবে ?

ইয়াদ রেগে জাহিদের দু’হাত একসাথে মোচড় দিলো আর জাহিদ জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলে ইয়াদ জাহিদের গায়ের শার্টটা টান দিয়ে খুলে ওর মুখে পেঁচিয়ে দিলো যাতে চিৎকার করতে না পারে। ইয়াদের মার দেখে জাহিদের বন্ধুদের ভয়ে অবস্থা খারাপ।

ইয়াদ রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, আমি কে সেটা জানতে চাস ? একটু আগে যে মেয়েটার হাত ধরার সাহস করেছিলি সেই মেয়ের ভাই। নাম জানিস ঐ মেয়ের ? ইয়ানা হামিদ এই আবরার হামিদ ইয়াদের একমাত্র দুর্বলতা। এই ইয়াদের কলিজার টুকরা ইয়ানা হামিদ। যাকে ছাড়া আর পৃথিবীর কারো জীবনের এক বিন্দু মূল্য নেই আবরার হামিদ ইয়াদের কাছে।

ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে জাহিদের আত্মা কেঁপে উঠলো ভয়ে। ভয়ংকর দেখতে লাগছে ইয়াদকে।

ইয়াদ জাহিদের কানের কাছে গিয়ে ধীর গলায় বললো, আমি তোর কলিজাটা বের করে দেখতে চাই। কতবড় কলিজা নিয়ে তুই আবরার হামিদ ইয়াদের বোনের হাত ধরেছিস।

জাহিদ ভয়ে ছুটোছুটি করতে লাগলো কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। মুখও বেঁধে দিয়েছে ইয়াদ তাই কিছু বলতেও পারছে না। জাহিদের বন্ধুরা ভয়ে অনেক আগেই পালিয়ে গেছে। মুহুর্তের মধ্যে কয়েকটা কালো গাড়ি এসে থামলো ইয়াদের সামনে আর জাহিদকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেলো। ইয়াদ বাকা হাসি দিয়ে নিজের ড্রেসটা একটু ঝেড়ে গাড়িতে উঠে গেলো।

চলবে,,,,,

(গল্পটা বড় করার ইচ্ছে আছে তাই আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারবেন আর গল্পের নায়ক নাইকা সম্পর্কেও ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন)

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৩

ইয়াদ সোজা নিজের অফিসে চলে গেলো। ইয়ানা ক্লাসের সামনে এসে দেখে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ভয়ে একটা ঢোঁক গিলে নিলো ইয়ানা। আজকের প্রথম ক্লাসটাই আরমান স্যারের। আরমান মাহমুদ এই ভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষ করে এখানেই টিচার হিসাবে জয়েন করেছে। আগে অনার্স পর্যন্ত ক্লাস নিতো কিন্তু নিজের যোগ্যতার জন্য এখন মাস্টার্সের ক্লাসও নেয়। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রং, বড়বড় ভাসা চোখ, মাথার চুলগুলো হালকা কোঁকড়ানো, পিংক কালার ঠোঁট, আর সবচেয়ে নজরকাড়া তার গালের টোল পড়া হাঁসি আর সে সুঠাম দেহের অধিকারী। ভার্সিটির সব মেয়ে তার জন্য পাগল কিন্তু সবাই জানে তার কাছে পাত্তা পাওয়া যাবে না, চার বছর আগে আনার্স ফাস্ট ইয়ারের ইমা নামের একটা মেয়েকে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে সবার সামনে প্রপোজ করেছিলো আরমান স্যার। তখন স্যার হিসাবে কেবল জয়েন করেছিলেন তিনি। মেয়েটা স্যারকে রিজেক্ট করে কিন্তু পরে জানা যায় স্যারের বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিলো স্যার। স্টুডেন্টকে প্রপোজ করতে পারবে না বলে তার বন্ধুরা বাজি ধরেছিলো। তবে এই ব্যাপারটা পুরো বছর সমালোচনায় ছিলো। এরপর আর এমন কোনো কিছু ঘটেনি যাতে বুঝা যাবে স্যার সত্যি মেয়েটাকে ভালোবাসে। ইয়ানা অবশ্য মেয়েটাকে দেখেনি। একদম শান্ত স্বভাবের মানুষ স্যার কিন্তু ঠান্ডা মাথায় থেকে নরমাল কথায় কীভাবে মানুষকে অপমান করা যায় সেটা হয়তো তার থেকে শেখা উচিত। ইয়ানা ভাবছে তাকে হয়তো আজ এতো স্টুডেন্টর সামনে অপমানিত হতে হবে।

ইয়ানা কাঁপা গলায় বললো, May i come in, sir ?

আরমান দরজার দিকে না তাকিয়ে বললো, Come and stand in front.

ইয়ানা অবাক হয়ে তাকালো। সে সামনে এসে কেনো দাঁড়াবে বুঝতে পারলো না। বেশি কথা না বলায় ভালো মনে করে ইয়ানা চুপচাপ ক্লাসে ঢুকে সামনে দাঁড়ালো। ||লেখনীতে তাহমিনা তমা ||

আরমান বইয়ের দিকে দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রেখে বললো, ডিয়ার স্টুডেন্টস মিস ইয়ানাকে ভালো করে দেখে নিন। ইনি আমাদের দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ইয়াসির হামিদের মেয়ে এন্ড আবরার হামিদ ইয়াদের বোন। তাই ভার্সিটির নিয়মে উনি চলেন না বরং উনার নিয়মে ভার্সিটি চলে। যখন ইচ্ছে করবে তখন আসবে আর যখন ইচ্ছে চলে যাবে।

সবাই চুপচাপ বসে আরমানের কথা শুনছে। অন্য কোনো স্যার একথা বললে হয়তো এতোক্ষণ হাসির রোল পড়ে যেতো কিন্তু আরমানের ক্লাস বলে সবাই চুপ। কারণ সবাই জানে হাঁসলে আবার তাদের কোন অপমানের স্বীকার হতে হবে কে জানে। আর এদিকে অপমানে ইয়ানার চোখ টলমল করছে পানিতে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে।

আরমান আবার বললো, মিস ইয়ানা আপনার এই নিয়মটা অন্য টিচারদের ক্লাসে প্রয়োগ করবেন। আমার ক্লাস করতে হলে ভার্সিটির নিয়মেই ক্লাসে আসতে হবে। আমার কথা বুঝতে পেরেছেন মিস ইয়ানা হামিদ ?

ইয়ানা শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো। তা দেখে আরমান বললো, এবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন তবে টেক্সট টাইম এমন হলে আমার ক্লাসে আসতে পারবেন না। এবার নিঃশব্দে নিজের জায়গায় গিয়ে বসুন।

ইয়ানা আরমানের কথামতো নিঃশব্দে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। ইয়ানা সিটে বসলে তার বেস্টফ্রেন্ড নিধি তাকে সান্ত্বনা দেয় পিঠে হাত রেখে। ইয়ানা কখনো বাবা কিংবা ভাইয়ের পাওয়ার ভার্সিটিতে দেখায় না। ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার জন্য সব টিচার অতন্ত্য স্নেহ করে তাকে। কিন্তু আরমানের কাছে ভালো কিংবা খারাপ কোনো স্টুডেন্টের আলাদা জায়গা নেই। তার কাছে সবাই একই ব্যবহার পায়। যে একদিনও আরমানের কোনো কোশ্চেনের আনসার দিতে না পারে, সে যেমন অপমানের স্বীকার হয় আর যে প্রতিদিন তার সব কোশ্চেনের আনসার দিতে পারে কিন্তু একদিন কোনো কারণে দিতে না পারলে সেই একই অপমানের স্বীকার হয়। ইয়ানা চেনে আরমানকে তাই তার কথায় মন খারাপ না করে চোখ মুছে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো।

৬.
ইয়াদ অফিসে গিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো আর পিছুপিছু গিয়ে উপস্থিত হলো তার পি.এ রনিত সরকার ছিপছিপে গড়নের একটা ছেলে। ছেলেটা হিন্দু তবে খুবই শান্ত স্বভাবের। সেটা না হলে হয়তো ইয়াদের কাছে এতোদিন টিকতে পারতো না। ইয়াদ যদি বিনা কারণে রেগে রনিতের মাথায় একটা বারিও দেয় সে নিজের আঘাতের কথা চিন্তা না করে বলবে স্যার আপনার লাগেনি তো। ইয়াদ তাই খুবই স্নেহ করে রনিতকে হয়তো ততটা ইশানকেও করে না |লেখনীতে তাহমিনা তমা|

ইয়াদকে রেগে থাকতে দেখে রনিত ভয়ে ভয়ে বললো, স্যার কফি আনবো আপনার জন্য ?

ইয়াদের মাথা থেকে কিছুতেই ইয়ানার ভীত ফেসটা যাচ্ছে না। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেটা আর সাথে ছেলেগুলোর বাজে কথা কানে বাজছে। ইয়ানাকে খুব ভালোবাসে ইয়াদ বলা যায় ইয়ানা ইয়াদের প্রাণভোমরা। বোনটা ছাড়া আপন আছেই বা কে তার ? যারা আছে সবাই মুখোশধারী তাদের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে আছে ঘৃণিত চেহারা। তাই একমাত্র বোনের কষ্টে তার হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হয় যায়।

ইয়াদ থমথমে গলায় বললো, রনিত অাজকের রুটিন কী ?

রনিত নিজের হাতের ডায়েরিটা খুলে দেখে বললো, স্যার আজকে সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পরপর তিনটা মিটিং আছে। প্রথমেই আছে খান গ্রুপ অব কোম্পানির সাথে আর তারপর মির্জা গ্রুব অব কোম্পানি আর শেষে একটা কোরিয়ান কোম্পানির সাথে মিটিং।

ইয়াদ বললো, এর মধ্যে কোনো মিটিং ক্যানন্সেল করা যাবে ?

রনিত বললো, নো স্যার প্রত্যেকটা মিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কোম্পানির জন্য। তবে মাঝে আধঘন্টার লান্স ব্রেক আছে।

এটা শুনে ইয়াদ বাকা হাঁসলো তারপর রনিতকে বললো মিটিংয়ের অ্যারেঞ্জমেন্ট কমপ্লিট হয়েছে কিনা দেখে নিতে। রনিত ইয়াদের কথামতো চলে গেলো মিটিং রুমের দিকে। কিছুক্ষণ পর থেকেই শুরু হলো মিটিং। পরপর দুইটা মিটিং শেষ করে বের হয়ে ইয়াদ।

ইয়াদের পেছন পেছন রনিত বের হয়ে বললো, স্যার পরের মিটিংটা একটা ফাইভ স্টার হোটেলে।

ইয়াদ অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে পা বাড়িয়ে বললো, ফাইলগুলো সাথে নিয়ে অফিসের গাড়ি দিয়ে চলে যেও আর লোকেশন আমাকে টেক্সট করে দিও ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো।

রনিত বললো, স্যার এখন কোথায় যাচ্ছেন ? এখন তো আপনার লান্সের সময়।

রনিতের কথা শুনে রাগি চোখে তার দিকে তাকালে রনিত মাথা নিচু করে ফেলে আর বলে, সরি স্যার।

ইয়াদ রাগি গলায় বললো, আমার কাজে কারো ইন্টারফেয়ার আমি পছন্দ করি না সেটা বারবার ভুলে যাও কেনো রনিত ? আমার কাজের কইফত চাওয়ার অধিকার আমি কাউকে দেয়নি আর কখনো দিবোও না। আর কখনো এই ভুলটা করো না ফল ভালো হবে না। যেটুকু করতে বলেছি শুধু সেটুকুই করবে।

রনিত মাথা নাড়িয়ে বললো, ওকে স্যার।

ইয়াদ গোটাগোটা পা ফেলে বের হয়ে গেলো অফিস থেকে। রনিত যেনো এতোক্ষণে ভালো করে শ্বাস নিতে পারছে। যতক্ষণ ইয়াদ সামনে থাকে শ্বাস নিতেও যেনো কষ্ট হয়। এই অফিসে চার ভাগের এক ভাগ মেয়ে আর বাকি সব ছেলে। মেয়ে যারা আছে ইয়াদের সামনে যাওয়ার অনুমতি নেই। মেয়েগুলো ইয়াদকে দূর থেকে দেখে শুধু আফসোস করে এমন একটা ছেলেকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয় না তাদের। ইয়াদ ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে ফার্মহাউসের একটা গোডাউনে হাজির হলো। সেখানে হাতপা বাঁধা অবস্থায় পরে আছে জাহিদ আর তার সাথেই তার সেই বন্ধুরা। ইয়াদ তা দেখে বাঁকা হেঁসে একটা চেয়ার টেনে তাদের সামনে বসলো। আশেপাশে গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদের গার্ডগুলো। প্রত্যেকটা গার্ড বডি- বিল্ডার আর ক্যারাটে জানা সাথে শার্প শুটার প্রত্যেকে। ইয়াদ নিজেই তাদের তৈরি করেছে একজন ক্যারাটে মাস্টারের সাহায্যে। ইয়াদ নিজে ক্যারাটেতে অভিজ্ঞত এন্ড শার্প শুটার। ইয়াদের কথায় কেউ ওদের গায়ে হাত তুলেনি শুধু তুলে এনে বেঁধে রেখেছে। ইয়াদ ওদের দিকে তাকাতেই তখনকার সব আবার চোখে ভাসতে লাগলো আর রাগে কাঁপালের রগ ফোটে উঠলো। যতক্ষণ না ওদের উচিত শাস্তি দিচ্ছে ইয়াদের শান্তি হবে না।

ইয়াদ তার মেইন গার্ড জাম্বীর দিকে তাকিয়ে বললো, গরম লোহা নিয়ে এসো জাম্বী।

জাম্বী আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছিলো ইয়াদ বলতেই ইয়াদের সামনে এনে রাখলো। ইয়াদ হাতে গ্লাভস পড়ে লোহাটা হাতে নিয়ে জাহিদের হাতে চেঁপে ধরলো। জাহিদ চিৎকার করতে পারছে না শুধু যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

ইয়াদ পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে জাহিদের ছটফট দেখে। দাঁত কিটমিট করে ইয়াদ বললো, আমার বোনের নরম হাতের স্পর্শের পর এমন গরম স্পর্শ কেমন লাগছে মিস্টার জাহিদ তালুকদার ?

জাহিদ শুধু ছটফট করছে। লোহাটা একসময় জাহিদের হাতটা ভেদ করে অন্যপাশ দিয়ে বের হয়ে গেলো।

ইয়াদ জাম্বীকে বললো, মুখটা খুলে দাও জাম্বী।

ইয়াদের কথামতো জাম্বী মুখটা খুলে দিতেই জাহিদ গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো।

ইয়াদ চিৎকার শুনে এক কানে হাত দিয়ে একচোখ বন্ধ করে বললো, কানের বারোটা বাজাবি নাকি ?

ইয়াদ জাম্বীর দিকে তাকিয়ে বললো, এই জাম্বী দেখতো এর জিহ্বা বড্ড আওয়াজ করে। খুব রোমান্টিক কথাও বের হয়। আজ থেকে যেনো একটা শব্দও বের না হয়।

ইয়াদের কথার মানে বুঝতে পেরে জাম্বী জাহিদের দিকে এগিয়ে গেলে জাহিদ বলে, অনেক বড় ভুল করছো আবরার হামিদ ইয়াদ এর ফল খুব ভয়ংকর হবে।||লেখনীতে তাহমিনা তমা ||

ইয়াদ রেগে বললো, আমার বোনের দিকে সামান্য বাজে নজর দেওয়ার জন্য তোদের এই অবস্থা করেছি এবার বুঝে নে আমি কতটা ভয়ংকর। আবরার হামিদ ইয়াদের থেকে ভয়ংকর একমাত্র আল্লাহর সৃষ্টি ছাড়া মানুষের সৃষ্টি আর কিছু হতে পারে না। জাম্বী তোমাকে কী বললাম দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও ? আজকের পর এই রাস্কেল আর ওর বন্ধুরা যাতে কোনো মেয়ের দিকে তাকানো, ওহ্ সরি সরি যে মেয়ের দিকে ইচ্ছে তাকাক। শুধু আমার বোনের দিকে যেনো তাকানো অবস্থায় না থাকে।

ইয়াদের কথায় জাম্বী জাহিদের হাতদুটো ভেঙে হুড়িয়ে দিলো। এমনভাবে ভেঙেছে পৃথিবীর কোনো ডাক্তারের পক্ষে ভালো করা সম্ভব নয়। জাহিদের বাকি বন্ধুদেরও একই অবস্থা করছে বাকি গার্ডগুলো। প্রথমে হাত ভেঙে, জিহ্বা কেটে নিয়ে শেষে চোখের মধ্যে এসিড ঢেলে দেওয়া হয় তাতে চোখদুটো ঝলছে যায়। ইয়াদ পায়ের ওপর পা তোলে চেয়ারে বসে দেখছে আর বাঁকা হাসছে। ওদের চিৎকার ইয়াদের মনের আগুন নেভাতে পানির মতো কাজ করছে। সবশেষে জাহিদ আর তার বন্ধুদের একটা ভয়ংকর ড্রাগস দিয়ে দেয় যেটা নিলে মানুষের মেন্টাল কন্ডিশন এতো খারাপ হয় তাতে আশেপাশের মানুষের ক্ষতি করে তারা। এটা দিয়ে ইয়াদ সবাইকে মনে করাবে ড্রাগস নিয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে একে অপরের এমন দশা করেছে। কাউকে কিছু বলার মতো অবস্থা ওদের নেই তাই ইয়াদের বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারবে না। ইয়াদ এখানকার কাজ শেষ করে হোটেলে চলে গেলো মিটিংয়ের জন্য। একদম ঠিক টাইমে পৌঁছালো এক মিনিট এদিক ওদিক হয়নি তার।

৭.
ইমারে আমার ঔষধ শেষ হয়ে গেছে একটু এনে দিবি রে ?

সন্ধ্যার নাশতা রেডি করছিলো ইমা নানুর কথা শুনে পেছনে ফিরে তাকালো। হাতে টাকা আর খালি মেডিসিনের পাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।

ইমা আবার কাজ করতে করতে বললো, নানু আমি কাজ করছি কীভাবে যাবো এখন ? আজকে তো আরমান ভাইয়া আগেই এসেছেন তাকে বলো।

নানু কিচেনে ঢুকতে ঢুকতে বললো, বলেছিলাম সে টাকা দিয়ে বললো তার কাজ আছে কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিতে। সে নাকি একটু পর বের হবে আর রাতে আসবে আর আমার ঔষধ খেতে হবে সন্ধ্যায়।

ইমা বললো, বাড়ির দারোয়ানকে বলো।

ইমার মণি ড্রয়িংরুম থেকে শুনতে পেয়ে বললো, দারোয়ান চলে গেলে তুই গিয়ে বাড়ি পাহারা দিবি নাকি। বাড়িতে আর কেউ নেই কাজ শেষ করে তুই গিয়ে নিয়ে আয়।

ইমা আর কথা বাড়ালো না তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে টাকা আর খালি মেডিসিনের পাতা নিয়ে বের হয়ে গেলো। পাশেই দোকান তাই আর বোরখা পড়লো না বাসায় পড়া থ্রিপিস পরেই ওড়নাটা ভালো করে বেঁধে বের হয়ে গেলো।

মিটিং চারটায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে গেলো। রনিত অফিসের গাড়ি দিয়েই চলে গেলো আর ইয়াদ নিজের গাড়ি নিয়ে আবার অফিসের দিকে রওনা হলো। মুখে চরম বিরক্তির ছাপ নিয়ে ড্রাইভ করছে।

চলবে,,,,