তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-০৮

0
1731

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৮

ইমা ভার্সিটি গিয়ে দেখতে পেলো আরমানের ক্লাস প্রায় শেষ। ক্লাসে যাবে কী যাবে না ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ? না গেলেও যদি আরমান বাইরে বসে থাকতে দেখে তাহলে কপালে দুঃখ আছে ইমার। অনেক চিন্তাভাবনা করে ইমা ঠিক করলো ক্লাসে যাবে।

অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে ইমা বললো, স্যার আসবো ?

আরমান ক্লাস করালেও তার মাথায় ঘুরছিলো ইমা কেনো ভার্সিটি এলো না আজ। এসব চিন্তার মাঝে ইমার গলা শুনে দরজার দিকে তাকালো আরমান। তার কথা মতো বোরখা পরেই এসেছে ইমা। শুধু চোখদুটো দেখা যাচ্ছে তার। ইমাকে দেখে কপালের ভাজে রাগ ফোটে উঠলো আরমানের। এখন ঠান্ডা মাথায় অপমান করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।

আরমান শুধু বললো, এটা আপনার বাসা নয় যখন খুশি আসবেন আর যখন খুশি যাবেন। ভার্সিটির একটা নিয়ম আছে সেটা আপনার জানা না থাকলে ভালো করে জেনে নিন গিয়ে। আপনাদের কেউ জোর করে না ভার্সিটি আসতে তবে নিজের ইচ্ছে মতো আসবেন যাবেন সেটা হবে না। ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে হলে ভার্সিটির নিয়মে চলতে হবে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকুন নেক্সট ক্লাসের স্যার আলাও করলে করবে আমার ক্লাসে আমি আলাও করবো না।

ক্লাসের সবাই ইমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইমা আর আরমানের কাহিনি সবাই জানে। ইমাকে দেখেই কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গেছে আর ইমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। ইমা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো প্রায় দশ মিনিট পর আরমানের ক্লাস শেষ হলে সে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে ইমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বের হয়ে গেলো ক্লাসরুম থেকে। আরমান বের হয়ে গেলে ইমা ভেতরে এলো। অনেকে তাকে দেখে হাসি তামাশা করছে।

এর মতো একটা গ্যাইয়া ভূত মেয়েকে আরমান স্যারের মতো ড্যাসিং, হ্যান্ডস্যাম ছেলে ডেয়ার নিয়েও প্রপোজ করেছিলো কী করে ?

সত্যি ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর। এই মেয়ে আবার তাকে রিজেক্টও করেছিলো। ভাবা যায় বল ?

একটা ন্যাকা টাইপ মেয়ে বলে উঠলো, ইশ যদি আমাকে প্রপোজ করতো আমি তো খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যেতাম।

আরেক জন বললো, আরে রাখ তোর প্রপোজ আমার সাথে একটা মুচকি হাসি দিয়ে কথা বললেই আমি হার্ট অ্যাটাক করবো।

স্যারের হাসি আমি একবার দেখেছি। হাসলে গালে টোল পরে ইশ যা লাগে না তখন পুরো আগুন।

এমন অনেক কথা ভেসে আসলো ইমার কানে সেসব না ভেবে ইমার ফ্রেন্ড রিকুর কাছে গিয়ে বসলো ইমা।

রিকু ইমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, কেমন আছিস ইমু ?

রিকুর পুরো না রোকেয়া ইসলাম কিন্তু সেটা তার কাছে ওল্ড মনে হয় তাই নিজের নাম শর্ট করে রিকু রেখেছে রোকেয়া।

ইমা মুচকি হেঁসে বললো, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রেখেছেন। তুই কেমন আছিস ?

রিকু বললো, আমি ভালো আছি কিন্তু তুই কতটা ভালো আছিস সেটা আমার থেকে ভালো কে জানে ?

ইমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ রিকু নিজের দুঃখগুলো ভাগ করে নেওয়ার মানুষ। ইমা রিকুর সাথে কথা বলছিলো তখনই পিয়ন এসে বললো, ইমা আপু আছে ? উনাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছেন।

ইমা পিয়নের কথা শুনে খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো। প্রিন্সিপাল স্যার তাকে কেনো ডাকবে, রেগুলার ভার্সিটি আসে না বলে ? হতেই পারে এভাবে ক্লাস মিস করার জন্যই ডেকেছে হয়তো সামনে আবার ফাইনাল এক্সাম।

ইমা উঠে পিয়নের পিছনে পিছনে গেলে সে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে না গিয়ে আরমানের রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে ইমাকে।

ইমা বুঝতে পেরে বলে, এটা তো প্রিন্সিপাল স্যারের না আরমান স্যারের রুম।

পিয়ন বলে উঠলো, আপনাকে আরমান স্যারই ডেকেছেন প্রিন্সিপাল স্যার নয়।

এ কথা শুনে ইমার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। আরমান তাকে এমনই এমনই ছাড়বে না সেটা সে জানে তবে এতো তাড়াতাড়ি ডাক পরবে বুঝতে পারেনি। পিয়ন ইমাকে আরমানের রুমের সামনে দাড় করিয়ে চলে গেলো। ইমার ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এখানে কোনো সিনক্রিয়েট হলে পুরো ভার্সিটির সামনে অপমানিত হতে হবে তাকে।

ইমা দাঁড়িয়ে এসব চিন্তা করছিলো আরমান ভেতর থেকে রাগী তবে গম্ভীর গলায় বললো, রুমের বাইরে মর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে আয়।

আরমানের গম্ভীর গলায় ইমা চমকে উঠলো তবে অনেকটা সাহস নিয়ে দরজা ঢেলে ভেতরে গেলো। আরমান টেবিলের সাথে দাঁড়িয়ে হাতে পেন্সিল ঘুরাচ্ছিলো।

ইমা ভেতরে গিয়ে বেশি না এগিয়ে দরজার সামনেই দাঁড়ালো আর বললো, আমাকে কেনো ডেকেছেন স্যার ?

আরমানের কড়া নির্দেশ আছে কেউ যেনো জানতে না পারে ইমা তার খালাতো বোন। ভার্সিটি এসে যাতে ভাইয়া শব্দটা মুখ থেকে বের না করে আর ইমাও বাধ্য মেয়ের মতো আরমানের নির্দেশ পালন করে বিনা বাক্য। আরমান ইমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝড়ের বেগে এসে ইমার গাল চেপে ধরে নিকাবের ওপর দিয়েই।

আরমান দাঁত কিটিমিটি করে বলে, বাইরে বের হয়ে তোর ডানা গজিয়ে গেছে ? ভার্সিটি রেখে কোথায় গিয়েছিলিস আর কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি বল ?

আরমান এতো জোরে গাল চেপে ধরেছে ইমার মনে হচ্ছে চোয়াল ভেঙে ভিতরে ঢুকে যাবে।

ইমা অনেক কষ্টে বলে, আমি কোথাও যাইনি আসার সময় এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। কথা বেশি ব্যাথা পেয়েছে তাই বাসায় চলে গেছে আর আমার বেশি ব্যাথা লাগেনি তাই ভার্সিটি এসেছি।

আরমান আরো শক্ত করে গাল চেপে ধরে বললো, আমাকে তোর বোকা মনে হয় যা বলবি তাই বিশ্বাস করে নিবো।

ইমা আরমানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো, আমার কথা বিশ্বাস না হলে কথাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করুন কথা কোথায় ?

আরমান কিছু একটা চিন্তা করে ইমাকে ছেড়ে দিলো আর সাথে সাথে কথাকে কল দিয়ে জানতে পারলো ইমা যা বলেছে সব সত্যি তাই কল কেটে ইমাকে বললো ক্লাসে চলে যেতে।

ইমা আগের ন্যায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আরমান বলে উঠলো, তোর পায়ে কী হয়েছে ?

ইমা বললো, এক্সিডেন্টের সময় সামান্য চোট লেগেছে পায়ে।

আরমান ব্যস্ত হয়ে বললো, মেডিসিন লাগিয়েছিস, ক্লাস করতে হবে না আমি গাড়ির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি বাসায় চলে যা।

ইমা শান্ত গলায় বললো, তার দরকার হবে না আমি ক্লাস করবো আর শেষ হলে একাই চলে যেতে পারবো।

আরমানের উত্তরের অপেক্ষা না করে ইমা বের হয়ে গেলো আর আরমান সেদিকে তাকিয়ে রইলো আর ভাবলো, চোখের আড়াল হলে মনে হয় তোকে মাফ করে দেই কিন্তু যখনই তোর মুখটা দেখি সারা ভার্সিটির সামনে লজ্জিত হওয়ার সেই মুহূর্ত মনে পরে যায়। সেদিনের জন্য আজ আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই। তুই রিজেক্ট করায় বন্ধুমহলে ক্রাশবয় খ্যাত আমি হাসির পাত্র হয়ে উঠেছিলাম। একে একে সবার থেকে দূরে সরে আসি সেই হাসি তামাশা থেকে নিজেকে বাঁচাতে। সেদিন তুই মুখের ওপর রিজেক্ট না করলে একটু পর আমার বন্ধুরাই তোকে সব বলে দিলো। কিন্তু তুই কী করলি হাসির পাত্র বানালি সবার সামনে ? সেটা আমি চাইলেও ভুলতে পারবো না।

ইমা আরমানের কেবিন থেকে বের হয়ে বললো, জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছে আমাকে। আমার সাথে এই অন্যায় করার জন্য একদিন আফসোস করবেন আরমান ভাইয়া দেখে নিয়েন।

কথা নিজের রুমে বসে চিন্তা করছে, লোকটাকে খারাপ মনে করলেও এতটা খারাপ না।

কথা মনে করেছিলো ইশান বকবক করে তার মাথা খেয়ে ফেলবে কিন্তু সারা রাস্তা ইশান চুপ করেই ছিলো শুরু বাড়ির এড্রেস জানতে চেয়েছিলো একবার।

কথা ইশানের চিন্তা করছে ভেবে পরক্ষণে চমকে উঠলো আর বললো, না না আমি কেনো ভাবছি লোকটার কথা ? আমার কাউকে নিয়ে চিন্তা করাও অন্যায়। নিজের অস্তিত্ব ভুলে যাস না কথা। তুই ঐ ছেলেটার নখের যোগ্যও হবি না। মানবতার খাতিরে সাহায্য করেছে এই পর্যন্তই থাকতে দে। এসব ভেবে বিনিময়ে কষ্ট ছাড়া কিছু পাবি না।

কথা নিজের মনে এসব চিন্তা করে ইশানের চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিলো।

১২.
শহরের সকাল গ্রামের সকালের মতো মিষ্টি হয় না। গ্রামের সকাল হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর শহরের সকাল হয় গাড়ি হর্ণ আর কাকের কা কা বেসুরো ডাকে। তবে ইয়াদদের বাড়ির পেছনে বিশাল এক বাগান আছে বড় বড় বিভিন্ন ফল গাছের আর সেখানে পাখিও আছে অনেক। পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না কেটে গেছে আরো কয়েকদিন প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজ পরে এক্সারসাইজ করছে ইয়াদ। আজ হ্যাকার মেয়েটার আসার কথা। মেয়েদের সাথে ইয়াদ কথা বলে না তাই ঠিক করেছে জাম্বীকে বুঝিয়ে দিবে কী কী করতে হবে।

ভাইয়া তোমার কফি।

ইয়াদ পিছনে ঘুরে বললো, আজও তো আগে চলে এসেছিস আমি এখনো শাওয়ার নেইনি।

ইয়ানা চেয়ারে বসতে বসতে বললো, আজ আমি ইচ্ছে করেই আগে এসেছি।

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো, কেনো ?

ইয়ানা বললো, তোমার সাথে শান্তিতে একটু কথা বলার জন্য এর থেকে আদর্শ টাইম আর খোঁজে পেলাম না।

ইয়াদ ওয়ান হ্যান্ড পুশআপ দিতে দিতে বললো, কী কথা বলতে এসেছিস বল ?

ইয়ানা মুচকি হেঁসে বললো, মা-বাবা তোমার জন্য মেয়ে দেখেছে আর আমিও দেখেছি আমার অনেক পছন্দ হয়েছে ভাবি হিসাবে।

ইয়ানার কথা শুনে ইয়াদ হাত ফসকে পরে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো আর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো, কী সব বলছিস আবোলতাবোল ?

ইয়ানা মুড নিয়ে বললো, যেটা শুনেছো একদম ঠিক শুনেছো আর আমি আমার ভাবি চাই আর তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

ইয়াদ রেগে বললো, আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করছি না সেটা জেনে রাখ তুই।

ইয়ানাও রেগে বললো, তুমি বিয়ে না করলে আমিও এই বাড়িতে পানি মুখে তুলবো না শুনে রাখো তুমি।

ইয়ানা রেগে বের হয়ে গেলো ইয়াদের রুম থেকে। এতোক্ষণ ইয়ানা যা করেছে সব তার মা শিখিয়ে দিয়েছে কারণ ইয়ানার দ্বারাই এটা সম্ভব। ইয়ানা রেগে চলে গেলে ইয়াদও রেগে পাঞ্চ করতে থাকে পাঞ্চিং ব্যাগে। রাগ ঢালার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা এটা ইয়াদের।

আরো দুদিন কেটে গেলো ইয়ানা ইয়াদের সাথে কথা বলে না। ঠিক মতো খায়ও না তার এক কথা তাকে ভাবি এনে দিতে হবে। তাও সে যাকে পছন্দ করেছে তাকেই। এসবই মিসেস রুবিনার প্ল্যান, ইয়ানা একটা মাধ্যম মাত্র। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে সে আঙুল বাঁকাতে জানে। যে মেয়ে পছন্দ করেছে তাকে রুবিনা নিজের ইচ্ছায় পুতুলের মতো নাচাতে পারবে। তাই ইয়াদের দূর্বলতা কাজে লাগিয়ে যে করেই হোক বিয়েটা করাতে চায়। ইয়াদ ভালো করেই বুঝে গেছে রুবিনার চাল তবু কিছু প্রকাশ করছে না শুধু চুপচাপ দেখে যাচ্ছে। অনেক কিছু ভেবে চিন্তে ইয়াদ ইয়ানার কাছে গেলো।

রাতে ইয়াদ ইয়ানার রুমের দরজায় নক করে বলে, ইয়ানা আসবো ?

ইয়ানা কিছু না বলে চুপ করে আছে।

ইয়াদ দরজা ঢেলে ভেতরে গিয়ে দেখে বেডে বসে বই পড়ছে ইয়ানা৷ ইয়াদ যে তার রুমে এসেছে সেদিকে একবার তাকালোও না।

ইয়াদ বললো, কথা বলবি না আমার সাথে ?

ইয়ানা কিছুই বলছে না এখনো বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে, তা দেখে ইয়াদ বললো, তোকে বলতে এসেছিলাম মাকে বলে দিস আমি বিয়েতে রাজি যা করার করতে পারে।

ইয়ানা বই রেগে খুশি হয়ে বললো, সত্যি বলছো ভাইয়া ?

ইয়াদ মুচকি হেঁসে বললো, হুম আমার বোন একটা জিনিস চেয়েছে আমি সেটা দিবো না তা কী করে হয় বল ?

ইয়ানা দৌড়ে এসে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরে বললো, ইউ আর দা গ্রেট ভাইয়া। ভাবি আর আমি সবসময় অনেক মজা করবো একসাথে ইয়াহু,,,,।

ইয়াদ বোনের খুশি দেখে নিজেও খুশি হলো তবে পরক্ষণে রহস্যময় হেঁসে মনে মনে বললো, এবার তোমাদের জালে তোমাদের আটকাবো মুখোশধারী মিস্টার এন্ড মিসেস হামিদ তৈরী থেকো।

ইমা নিজের মণিকে দেখে একের পর এক অবাক হচ্ছে। ইমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাচ্ছে না বরং টিয়াকে দিয়ে ইমার সেবা করাচ্ছে। ইমা এসবের মানে বুঝতে পারছে না। আরমান বাড়িতে নেই গতকাল সকালে এক সপ্তাহের জন্য ভার্সিটি থেকে ট্যুরে গেছে। এক সপ্তাহের আগে ফিরবে না আর অন্যদিকে ইমার বিয়ের কথা চলছে৷ গতকাল বিকেলে একটা মহিলা আর ইমার থেকে একটু বড় হবে বয়সে এমন একটা মেয়ে এসেছিলো তাকে দেখতে। তারা এখনো কিছু জানায়নি তবে ইমা ব্যাপারটা নর্মালি নিয়েছে। দেখতে আসতেই পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু তো নয়। কিন্তু একটা বিষয়ে বুঝতে পারছে না এতবড় হয়ে গেছে ইমা, কখনো বিয়ের কথা তুলেনি ইমার মণি তাহলে হঠাৎ কী হলো সেটাই ভাবাচ্ছে ইমাকে।

এসব চিন্তায় মগ্ন ছিলো ইমা হঠাৎ মণির গলায় হুশ ফিরে, মা ইমা এদিকে একটু আয় দেখি।

ইমা নিজের রুমে বসে ছিলো ডাক শুনে বললো, আসছি মণি।

ইমা উঠে মণির কাছে গেলে মণি তাকে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো, গতকাল তোকে যারা দেখতে এসেছিলো তারা ফোনে জানিয়েছে তোকে তাদের ভিষণ পছন্দ হয়েছে আর তাই বেশি দেরি করতে চায় না। তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়। আগামী শুক্রবার তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে।

ইমার হা করে তাকিয়ে আছে মণির দিকে। মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি উনার সেটা বুঝার চেষ্টা করছে। ছেলে সম্পর্কে ইমাকে কিছুই বলায় হয়নি আর যারা এসেছিলো তাদের সম্পর্কেও কিছুই জানে না ইমা। তাহলে এটা কেমন বিয়ে হচ্ছে আর এতো তাড়া কীসের ?

ইমার মণি মনে মনে বললো, এটাই সুযোগ আরমান ফিরে আসার আগেই তোকে বিদায় করতে হবে। আর তার বিনিময়ে আমরা পাবো মোটা অংকের টাকা আরো কতো কী ? তুই সেখানে কেমন থাকবি সেটা আমাদের দেখে কী লাভ ইমা ? তোকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারবো তত তাড়াতাড়ি আমার ছেলের জন্য লাল টুকটুকে একটা বউ আনতে পারবো। শুধু আরমান ফেরার আগে ভালোই ভালোই সব মিটে গেলেই হয়।

ইমা সাহস নিয়ে বললো, মণি আমি ছেলের নাম পর্যন্ত জানি না আর তুমি বলছো দুদিন পর বিয়ে।

মণি এবার নিজের রুপে ফিরে এসে ইমার গাল চেপে ধরে বললো, এতো জানতে হবে কেনো ? তোর মায়ের তো তোর খোঁজ নেওয়ার সময়ও নেই এতদিন খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছি মুখে মুখে তর্ক করার জন্য। যার সাথে বিয়ে দিবো মুখ বুজে বিয়ে করে নিবি। একটা টু শব্দ করলে জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলবো বলে দিলাম।

ইমাকে ছেড়ে দিলে সে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সে আর কিছু বলবে না বিয়েটা করে নিলে এই বাড়ির অত্যাচার থেকে তো রেহাই পাবে সেটাই অনেক। ছেলে যেই হোক শুধু দুবেলা ডাল ভাত আর বুক ভরা ভালোবাসা দিলে ইমার আর কিছু চাই না এ জীবনে।

ইমা হয়তো ভাবতেও পারছে না এই বিয়ে তার জীবনে আরো একটা #তিক্ততার_সম্পর্ক বয়ে আনবে ভালোবাসা নয়। আর আরমান সে কী করবে এসব জানতে পারলে ? যার অনুমতি ছাড়া ইমার বাড়ির বাইরে পা রাখা নিষেধ আর তার অনুপস্থিতিতে ইমার বিয়ে !

চলবে