তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-১৯

0
1770

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৯

হসপিটালের বারান্দায় বসে আছে ইয়াদ তার পাশেই ইমা থম মেরে বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছে মেয়েটা। ইয়াদ তাকিয়ে আছে ইমার দিকে, আজ বড্ড অসহায় লাগছে ইমাকে। তাহেরার চেকআপ করে ডাক্তার বের হলে ইমা দৌড়ে যায় তার কাছে।

আ,,আমার মা কেমন আছে ডক্টর ?

ডক্টর হতাশ গলায় বলে, উনার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। আমি উনাকে আরো অনেক আগে জানিয়েছিলাম উনার কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে তখন অপারেশন করে কিডনি চেঞ্জ করলে হয়তো বেচে যেতেন। কিন্তু উনি তারপর আর আমার সাথে কোনো যোগাযোগই করেননি। এখন কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার কারণে আরো অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে উনার শরীরে। অপারেশন করলেও বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০% এর মধ্যে ১% এরও কম। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের ব্যবস্থা করছি।

ডক্টর চলে যেতেই ইমা থপ করে মাটিতে বসে পরে ইয়াদ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ইমাকে ধরতেই ইমা উল্টো ঘুরে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।

সব আমার জন্য হয়েছে, আমি যদি মাকে অবহেলা না করতাম তাহলে মা কখনো এমন করতো না। আমার জন্য নিজের যত্ন নেয়নি মা।

ইয়াদ ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, হুসস কান্না করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি অভিজ্ঞ ডক্টরদের আনার ব্যবস্থা করেছি। তারা এসে অপারেশন করলেই তোমার মা একদম ঠিক হয়ে যাবে আর কিডনির ব্যবস্থাও হয়ে গেছে তাই চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে।

ইমা ফ্লোরে বসে ইয়াদের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো তারপর ভাঙা গলায় বললো, আমি একবার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই প্লিজ একবার মায়ের সাথে দেখার করার সুযোগ করে দিন প্লিজ প্লিজ।

ইয়াদ বললো, কিন্তু উনার তো এখন জ্ঞান নেই।

ইমা আগের মতো বললো, আমি শুরু মাকে দেখবো একবার জড়িয়ে ধরবো।

ইয়াদ ইমাকে ধরে উঠিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো তারপর বললো, তুমি এখানে বসো আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করছি।

তাহের এতোক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছিলো। তাহের তার মাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে বাবা বাসায় ছিলো না। হঠাৎ মাকে ডাকতে ডাকতে রুমে গিয়ে দেখে মা সেন্সলেস হয়ে পরে আছে তাই হসপিটালে নিয়ে এসেছে। ইমা তাহেরকে ছোটবেলা থেকে দেখতে পারে না তাই তাহের ইমার থেকে দূরেই থাকে। ইমার থেকে চার বছরের ছোট তাহের।

ইমার পাশে গিয়ে বসে বলে, আপু,,,,,

কারো ডাকে ইমা পাশে তাকিয়ে তাহেরকে দেখতে পায়। আজ কেনো যেনো তাহেরকে বড্ড আপন মনে হচ্ছে ইমার কাছে। না চাইতেও ইমা ভাই বলে তাহেরকে জড়িয়ে ধরলো।

ধরা গলায় বললো, তুই থাকতে মা এমন কীভাবে করলো তাহের ?

তাহের কাঁদতে কাঁদতে বললো, মা আমাদের কিছুই বুঝতে দেয়নি আপু। মা তোমাকে খুব ভালোবাসে আপু, খুব ভালোবাসে। তোমার ছোটবেলার জামাকাপড় আঁকড়ে প্রায় কাঁদতে দেখতাম মাকে। বিড়বিড় করে বলতো আমাকে মাফ করে দে ইমা, আমাকে মাফ করে দে।

ইমা এসব শুনে আরো ডুকরে কেঁদে উঠলো। তার মা তাকে কতো ভালোবাসে আর সে সবসময় মাকে অপমান করে গেছে। নিজের মা বলে স্বীকার করেনি কখনো।

তাহের ইমার থেকে সরে ইমার হাত ধরে বললো, আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি আপু কিন্তু তুমি রাগ করবে ভেবে তোমার সামনে আসি না। তোমার বিয়ের দিন আমি গিয়েছিলাম তোমাকে দেখতে লাল পরীর মতো লাগছিলো তোমাকে। কিন্তু তোমার সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি। মা ও জানে না আমি গিয়েছিলাম তোমার বিয়েতে। আমি নানু বাড়িতে আর মণিদের বাড়িতে যেতাম শুধু তোমার জন্য। আপু আমরা এক বাবার সন্তান না হলেও এক মায়ের সন্তান তো। তাহলে তুমি কেনো আমাকে নিজের ভাই মনে করো না। বিশ্বাস করো আপু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আপু খুব।

কথাগুলো শেষ করে তাহের কাঁদতে লাগলো। তাহেরের কথার কী উত্তর দেবে ইমা তার জানা নেই। ইমা তখন ছোট ছিলো বুঝতে পারতো না তার মা’য়ের আবার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাহেরের জন্ম হয়। ইমার বয়স তখন কেবল চার বছর। ছোট ইমা মনে করতো তাহেরের জন্যই তার মা তাকে ভালোবাসে না। সুযোগ পেলেই মারতো তাহেরকে। তাই বাধ্য হয়ে ইমাকে ইমার নানা বাড়ি রাখে তাহেরা। কিন্তু বড় হয়ে যখন ইমা বুঝতে শেখে তাহেরের বাবা তার বাবা নয় সে আর ও-বাড়িতে পা রাখেনি কখনো।
ইমার আর তাহেরের কান্নার মাঝেই ইয়াদ এসে উপস্থিত হয়। ইমা আর তাহেরের মাঝে ইয়াদ নিজেকে আর ইশানকে দেখতে পাচ্ছে। ওদের সম্পর্কটা এক ধরণের হলেও মাঝে পার্থক্য আছে অনেক। ইয়াদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ইমার পাশে এসে দাঁড়ালো তাতে ইমা চোখ তুলে তাকালো ইয়াদের দিকে।

ইয়াদ শান্ত গলায় বললো, ডক্টর একজনকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে তবে কান্নাকাটি করা যাবে না।

ইমা ইয়াদের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাহেরের দিকে তাকায়। তাহের ইশারায় যেতে বলে মায়ের কাছে। ইমা উঠে পা বাড়ায় কেবিনের দিকে। ভেতরে গিয়ে ইমা দেখতে পেলো নিজের মাকে। অদ্ভুত ব্যাপার তাহেরাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে না অসুস্থ বরং শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে আছে। হয়তো এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে ইমা তার মাকে মা বলে ডাকে না। বুকের মাঝে অভিমানের পাহাড় জমিয়ে রেখেছিলো যা আজ একাই ভেঙে গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে মায়ের এই অবস্থা দেখে। ইমা মায়ের পাশে একটা চেয়ার টেনে এনে বসে পড়ে। কাঁপা হাতে মায়ের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

ধীর গলায় বলে, কেনো এমন করলে মা ? কেনো তোমার অসুখের কথা কাউকে জানতে দিলে না মা কেনো ? একবার আমার কথা মনে পড়লো না ? বাবা তো বুঝ হওয়ার আগেই ছেড়ে চলে গেছে আজ তুমিও আমার সাথে এমন করলে। আমি তো অভিমান করেছিলাম শুধু তার এতবড় শাস্তি তুমি কীভাবে দিতে পারো মা ?

ইমা থেমে থেমে বলছে আর কাঁদছে। ইমার চোখের পানি তাহেরার হাতে পড়তেই পিটপিট করে তাকায় তাহেরা। পাশে মেয়েকে দেখে খুশিতে চোখ চকচক করে উঠে তার।

ভাঙা গলায় বললো, ইমা।

ইমা মায়ের গলা শুনে চমকে তাকায় মায়ের দিকে, তাহেরাকে তাকাতে দেখে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে দেয়। এতদিন খা খা করতে থাকা বুকটা শান্তি পায় তাহেরার। ইমাও আজ এক যুগ পর নিজের মায়ের মা মা গন্ধ পেলো আবার।

তাহেরা আগের মতো ভাঙা গলায় বলে, কী হয়েছে কাঁদছিস কেনো ?

ইমা অভিযোগের স্বরে বলে, তোমার অসুখের কথা কেনো কাউকে বলোনি মা ?

তাহেরা জোর করে হেঁসে বলে, তোর বাবাকে এখনো আগের মতোই ভালোবাসি রে মা। তার কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে হারাতে চাইনি। তৌহিদুর (তাহেরার বর্তমান স্বামী) অনেক ভালো মানুষ তবে আমি তাকে কখনো মন থেকে মেনে নিতে পারিনি। ভুলতে পারিনি তোর বাবাকে তাই তার থেকে দূরে দূরে থেকেছি। তিনি তোকেও অনেক ভালোবাসে বারবার তোকে নিতে পাঠিয়েছে কিন্তু তুই তো আমাকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিতি তাই কখনো বলার সাহস হতো না আমার সাথে ও-বাড়িটায় যেতে। যেবার তৌহিদুর নিজেই তোকে আনতে গেলো তুই অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলি সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলো। পারলে একবার মাফ চেয়ে নিস তার কাছে।

ইমা শব্দ করে কেঁদে উঠে বললো, আমাকে মাফ করে দাও মা মাফ করে দাও। এভাবে আমাকে এতিম করে যেও না তুমি।

ইমা শুব্দ করে কেঁদে উঠায় নার্স এগিয়ে এসে জোর করে ইমাকে বাইরে বের করে দিলো। ইমা বাইরে এসে দেখে তৌহিদুর রহমান দেয়াল ঘেঁষে ফ্লোরে বসে আছে। আরমান, কথা আর মণিও এসেছে। মণিকে দেখতেই ইমার চোখে রক্ত উঠে গেলো। এই মহিলার জন্য ইমা তার মায়ের থেকে দূরে সরে গেছে। বুঝতে শেখার পর থেকে মায়ের নামে বিষ ঢেলে গেছে ইমার কানে। সেসব শুনে পাহাড় সামান অভিমান জমেছিলো ইমার মনে। তাই আজ তার মায়ের এমন দশা।

ইমা ছাহেরা বেগমের দিকে তেড়ে গিয়ে বললো, আপনি কেনো এসেছেন এখানে ? শান্তি হয়েছে আমার মাকে এই অবস্থায় দেখে। আজ শুধু আপনার জন্য আমার মায়ের এমন অবস্থা। আপনি আমার মাকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিয়েছেন।

আরমান রেগে বললো, ইমা এটা কী ধরনের অসভ্যতামি ? তুই মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলছিস ?

ইমা রেগে দিগুণ তেজে বললো, একদম চুপ মিস্টার আরমান মাহমুদ। ভাববেন না আপনার রাগ দেখে আমি ভয়ে গুটিয়ে যাবো। এখন আমি আপনার বা আপনার বাবার টাকায় খাইও না পড়িও না তাই আমার সাথে গলা নামিয়ে কথা বলুন মিস্টার আরমান।

ইমা এক হাতে চোখের পানি মুছছে আর এসব বলছে। তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই আর সবচেয়ে অবাক হয়েছে আরমান। যে মেয়ে তার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেতো না সে মেয়ে আজ তার সাথে এভাবে কথা বলছে ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না আরমানের।

ইয়াদ ইমার কাছে গিয়ে বললো, ইমা শান্ত হও সব ঠিক হয়ে যাবে।

ইমা ইয়াদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিলো আর বললো, কিছু ঠিক হবে না। আপনি জানেন না এই মহিলার জন্য আমি প্রতিনিয়ত আমার মাকে দূরে ঢেলে দিয়েছি আর তাতে আমার মা ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে দিনের পর দিন।

ইমা কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে পরে যেতে নিলে আরমান ধরার জন্য আগাতেই ইয়াদ খপ করে ধরে নেয়। ইয়াদের বুকে মাথা এলিয়ে দেয় ইমা আর তাতে ইয়াদ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দৃশ্যটা দেখে আরমানের মনে তীরের মতো আঘাত করলো। নিজেকে ধীক্কার দিতে লাগলো এতোদিন পর ইমার সাথে কথা বললো তাও সে রেগে কথা বললো তার সাথে। ইয়াদ একটা কেবিন বুক করে ইমাকে শুইয়ে দিলো। অতিরিক্ত কান্নাকাটির ফলে সেন্সলেস হয়ে গেছে তাই এখন ঘুমের মেডিসিন আর স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ইয়াদ ইমাকে রেখে ইমার মায়ের অপারেশনের জন্য নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগলো। রনিতও চলে এসেছে ইয়াদের ফোন পেয়ে সব বড় বড় ডক্টরদের সাথে যোগাযোগ করছে ইয়াদ নিজেই। চার ঘণ্টা পর তাহেরাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় তার একটু পরই ইমার ঘুম ভেঙে যায় নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে। মায়ের কথা মনে পরতেই ইমা হাতের ক্যানেলা টেনে ছিঁড়ে বাইরে বের হয়ে যায়। ইয়াদ অপারেশন থিয়েটারের বাইরে চেয়ারে আসে আছে মাথা নিচু করে।

ইমা ইয়াদের কাছে গিয়ে ফ্লোরে হাটু মুড়ে বসে বলে, আ,,,আমার মা কোথায়,,, আমার মা ?

ইয়াদ ইয়ার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে হাত থেকে কলকলিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ইয়াদ ইমার হাত চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলে, পাগল হয়ে গেছো তুমি ? ক্যানেলা খুলছো কীভাবে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

ইয়াদের কথা ইমার কানে যাচ্ছে না সে বারবার জিজ্ঞেস করছে আমার মা কোথায়। ইয়াদ জোরে ধমক দিয়ে চুপ করায় ইমাকে। নার্স ডেকে এনে হাতে ওয়ান টাইম টেপ লাগিয়ে দেয়। তারপর ইমাকে উঠিয়ে পাশে বসিয়ে দেয়। দূরে দাড়িয়ে সবটা নিরব চোখে দেখছে আরমান বুকটা পুড়ছে তার খুব খারাপের ভাবে।

ইয়াদ অপারেশন থিয়েটারের দিকে দেখিয়ে বলে, অপারেশন চলছে তারপর তোমার মা একদম ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না।

ইমার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো, আমার মা সত্যি ঠিক হয়ে যাবে ?

ইয়াদ ইশারায় হ্যাঁ বুঝালে ইমা আবার বলে, মা একবার ঠিক হয়ে গেলে আর কখনো রাগ করবো না, কখনো না। সবসময় মায়ের খেয়াল রাখবো বাবাকে মিস করতেই দিবো না। তাই মা আমাকে রেখে বাবার কাছে যেতে চাইবে না।

ইমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইয়াদ। ইমাকে এখন একটা পাঁচ বছরের বাচ্চার মতো লাগছে। দূর থেকে তৌহিদুরও তাকিয়ে আছে ইমার দিকে। ইমা আর তাহেরকে কখনো আলাদা চোখে দেখেনি তৌহিদুর রহমান। বলতে গেলে সবসময় ইমাকে বেশি ভালোবেসেছে। তাহেরাকে বিয়ের আগে দেখেছিলো তৌহিদুর, ভালো লেগে যায় তাকে। তাই বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহেরার বাড়িতে। তৌহিদুর সরকারি চাকরি করে তাই তাহেরার বাবা মানা করার সুযোগ পায়নি কিন্তু বিয়ের আগেই তাহেরা পালিয়ে গেলো ইমরুলের সাথে। অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলো তৌহিদুর তাই আর বিয়েও করেনি। তার কয় বছর পর তাহেরার সাথে আবার দেখা হয় তবে তাহেরার কোলে ছিলো ছোট পরী ইমা। ইমরুলের মৃত্যুর কথা শুনে অনেক খারাপ লেগেছিলো তৌহিদুরের। সবচেয়ে খারাপ লাগে ইমার দিকে তাকালে। বাবা কী জিনিস বুঝার আগেই মেয়েটা বাবা হারালো। মূলত ইমার কথা চিন্তা করেই তাহেরাকে বিয়ে করতে চায় তৌহিদুর আর তাছাড়া তাহেরাকেও সে আগে থেকেই ভালোবাসতো। সবাই রাজি হলেও তাহেরা রাজি হয় না বিয়েতে। এভাবে কেটে যায় এক বছর তারপর কী হয়েছিলো তৌহিদুর জানে না হঠাৎ করেই তাহেরা রাজি হয়ে যায় বিয়েতে। বিয়েটাও হয়ে যায় কিন্তু তাহেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না তৌহিদুর কে। তৌহিদুর ভেবেছিলো একটা বাচ্চা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাহেরের জন্মের পর তাহেরকে মেনে নিলেও তৌহিদুরকে মানতে পারে না তাহেরা। মাঝে ইমাকে দূরে পাঠাতে হয়। অনেক চেষ্টা করেও তৌহিদুর তাহেরার মনে জায়গা করতে পারেনি। তাই একসময় হাল ছেড়ে দেয় তৌহিদুর কারণ সম্পর্কটা ভালোবাসা না হলেও সে কখনো #তিক্ততার_সম্পর্ক বানাতে চাইনি। তাহেরাকে নিজের মতো থাকতে দিয়েছে কিন্তু তার প্রাপ্য হিসাবে তাহেরা তাকে চিরদিনের মতো ছেড়ে যেতে চাইবে ভাবতে পারেনি তৌহিদুর। আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে কেনো তাহেরাকে নিজের মতো চলতে দিয়েছিলো। আজ সে না হতে পেরেছে তাহেরার স্বামী আর না হতে পেরেছে ইমার বাবা। তাহেরার সাথে সম্পর্কটা তিক্ততার হতে না দিলেও ইমার সাথে তার সম্পর্কটা যে তিক্ততায় ডুবে গেছে সেটা বুঝতে বড্ড দেরি করে ফেলেছিলো তৌহিদুর।

তাহেরের বয়স পাঁচ বছর হতেই তৌহিদুর তাহেরাকে বলেছিলো, মেয়েটা আর কতদিন অন্যের বাড়িতে থাকবে আমার এতবড় বাড়ি থাকতে ? তুমি ইমাকে বাড়ি নিয়ে এসো মেয়েটাও এখন বড় হচ্ছে অন্যের বাড়িতে থাকা ভালো দেখায় না।

তাহেরা কী বলবে ভেবে পায় না। কারণ সে অনেকবার গিয়েছে ইমাকে আনতে কিন্তু ছোট ইমা তাকে এভাবে বলতে পারে কল্পনাও করেনি তাহেরা। তাই রাগ করে বললো, আমি যেতে পারবো না আপনার মেয়েকে আনার দরকার হলে নিজে জান।

সত্যি গিয়েছিলো সে ইমাকে আনতে কিন্তু ইমা তাকে যা বলেছিলো তাতে সে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেনি। আর কখনো যায়নি ইমার সামনে সে। তৌহিদুর অতীতে বিচরণ করছিলো পাশেই বসে আছে তাহের।

তাহের চমকে উঠে বললো, আব্বু ডক্টর বের হয়েছে।

তাহেরের কথায় সবাই তাকালো অপারেশন থিয়েটারের দিকে। মুখ কালো করে বের হয়ে এসেছে ডক্টর। ডক্টরের মলিন মুখ দেখে কলিজা কেঁপে উঠলো ইমা তাহের আর তৌহিদুরের।

চলবে,,,,,