তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-২৫

0
1754

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ২৫

ইশান ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ইয়াদের দিকে, অজানা কারণে ইশানের চোখের কোণ থেকে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে গেলো। ইশান নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো ইয়াদকে। ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো বাচ্চাদের মতো। ইয়াদ ডান হাতটা আস্তে করে ইশানের মাথায় রাখলো। ইয়ানা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখেও পানি চলে এসেছে আজ কত বছর পর দুই ভাইকে এভাবে দেখলো।

ইয়াদ মুচকি হেঁসে বললো, ইয়ানা দেখ ঐ খবিশটা ছোটবেলার মতো চোখের পানি, নাকের পানিতে আমার শার্ট নোংরা করে ফেলছে।

ইশান কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ভাইয়া। তোমার এই দূরে ঠেলে দেওয়া আমাকে খুব বেশি কষ্ট দেয়। প্লিজ আমাকে আর কখনো দূরে সরিয়ে দিয়ো না। যদি কোনো অন্যায় করি তাহলে মারো বকো যা ইচ্ছা করো শুধু দূরে সরিয়ে দিয়ো না কখনো।

ইয়াদ চোখের কোণে পানি নিয়ে বললো, আর কখনো দূরে সরিয়ে দিবো না।

ইয়াদ ইশানকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চোখ মুছে দিলো আলতো করে। ইশান ইয়াদের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেলো।

ইয়াদ মনে মনে বললো, মিস্টার দিসার কবির আর মিসেস রুবিনা কবিরের ছেলে হয়ে যদি তুই দোষী হয়ে থাকিস। তাহলে মিসেস রুবিনা কবিরের গর্ভে তো আমার আর ইয়ানারও জন্ম, তাহলে আমরাও দোষী। বাবা-মায়ের অন্যায়ের শাস্তি কখনো ছেলে মেয়েকে দেওয়া গর্বের কাজ নয়। এতদিন যে ভুলটা করে এসেছি সেটা আর করবো না। আজ থেকে যার যার অন্যায়ের শাস্তি সে সে পাবে অন্যকেউ নয়।

দুই ভাইয়ের মিলে যাওয়া দেখে ইয়ানা বললো, যা বাবা, আমে দুধে মিশে গেলো। এখন কী আমি আঁটি হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাবো নাকি ?

ইয়াদ ইয়ানাকেও নিজের কাছে ডেকে নিলো আর ইশান বললো, আপু তুই তো আমাদের তুই ভাইয়ের কলিজার টুকরা।

ইয়ানা দুষ্টুমি করে বললো, আমি টুকরো হলে আর বাকি কলিজাটা কে ? ||লেখনীতে তাহমিনা তমা ||

ইয়াদ বললো, তুই টুকরো না আমাদের পুরো কলিজটাই তুই।

তিনজনেই হেঁসে উঠলো, ইয়াদের দিকে ইশান আর ইয়ানা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। হাঁসলে তাদের ভাইয়াকে কতো সুন্দর লাগে অথচ আজ কত বছর হয়ে গেছে এই হাসি দেখে না তারা।

ওদের তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়াদ বললো, কী দেখছিস ওভাবে ?

ইশান বললো, তুমি সবসময় এভাবে হাসবে ভাইয়া তাহলে মেয়েদের তোমাকে দেখার পর যেটুকু হুঁশ থাকে তাও গায়েব হয়ে যাবে।

ইয়াদ কিছু বলবে তার আগেই ইয়ানা বললো, আচ্ছা ভাইয়া, তুমি তো কখনো বৃষ্টিতে ভিজো না তাহলে কাল কেনো ভিজেছিলে ?

ইয়াদের চোখের সামনে ভেসে উঠলো ইমার বৃষ্টি ভেজা সেই মুখ, কাঁপা ঠোঁট, ভীত চাহনি যা ইয়াদের হুঁশ উড়িয়ে দিয়েছিলো। ইয়াদ উত্তরে কিছু বলার আগেই ইমা ডক্টরের সাথে কেবিনে ঢুকলো। তিনজনই সেদিকে তাকালো, ইমা ডক্টরের সাথে কথা বলছে এদিকে তার খেয়াল নেই। ডক্টর কাছে আসলে ইয়ানা আর ইশান সরে দাঁড়ালো।

ডক্টর ইয়াদের চেক-আপ করে বললো, জ্বর এখন নেই তেমন, তবে শরীর অনেক দূর্বল। জ্বর আবার আসতে পারে তাই আজ হসপিটালে থেকে আগামীকাল বাসায় চলে যেতে পারবেন। তবে হ্যাঁ জ্বর সেরে গেলেও পুরো এক সপ্তাহ রেস্ট নিতে হবে।

ডক্টরের কথা শুনে ইয়াদের মাথা ঘুরার অবস্থা, এতদিন সে রেস্ট নিবে সেটা ইম্পসিবল।

ডক্টর ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, মিস্টার ইয়াদ এতবড় বিজনেস সামলান আর একটু নিজের খেয়াল রাখতে পারেন না ? আপনার জ্বর শুরু হয়েছিলো অনেক আগে থেকে, আপনি কোনো গুরুত্ব দেননি। এভাবে নিজের অবহেলা করলে বড় কোনো সমস্যা হতে সময় লাগবে না।

ইয়াদ কিছু বললো না, কারণ সে সত্যি নিজের শরীরের প্রতি বড্ড বেশি উদাসীন। কাজের ফাঁকে কখন খাওয়ার সময় পার হয়ে যায় টেরই পায় না। ইমার জন্য এখন তাও সকালের ব্রেকফাস্ট আর রাতের ডিনারটা সঠিক সময়ে করা হয়। মেয়েটা ইয়াদের না আসা পর্যন্ত খাবার নিয়ে বসে থাকে৷ ইয়াদের খাওয়া শেষ হলে নিজে খায় আর সকালেও ব্রেকফাস্ট না করে বের হতে দেয় না।

ইমা ডক্টরের কথা শুনে বললো, আপনি চিন্তা করবেন না এখন থেকে উনার শরীরের খেয়াল উনি না রাখলেও আমি রাখবো।

স্যালাইন শেষ হলে কিছু তরল খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিতে বলে চলে গেলো ডক্টর। সে চলে গেলে ইশান আর ইয়ানাকে বাসায় চলে যেতে বললো ইমা। যেতে না চাইলে জোর করে পাঠিয়ে দিলো।

——
এদিকে ব্রেকফাস্ট টেবিলে কাউকে দেখতে না পেয়ে রুবিনা সার্ভেন্টকে ডেকে এনে বললো, বাকি সবাই কোথায় ?

খাবার সব গুছিয়ে দিয়ে সার্ভেন্ট চলে যায়। তার খাওয়ার সময় পাশে সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করে না রুবিনা তাই খাবার দিয়ে সার্ভেন্ট চলে যায়। দরকার হলে তখন আবার ডেকে নেয়।

সার্ভেন্ট দৌড়ে এসে মাথা নিচু করে উত্তর দিলো, ইয়াদ স্যার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাকে নিয়ে সবাই হসপিটালে গেছেন।

রুবিনা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, হোয়াট,,,? ইয়াদ হসপিটালে আর আমি এখন জানচ্ছি। আমাকে কেউ জানায়নি কেনো ?

ইয়াসির শান্ত ভাবে বসে খেয়েই যাচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে রুবিনা বললো, ইয়াদ হসপিটালে সেটা শুনেও তুমি নিশ্চিন্তে খেয়ে যাচ্ছো ?

ইয়াসির হাতের চামচ প্লেটে রেখে সার্ভেন্টকে চলে যাওয়ার ইশারা করে রুবিনার দিকে তাকিয়ে বললো, অসুস্থ হয়েছে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যা করার ডক্টর করবে, এখানে আমি বা তুমি হাইপার হয়ে কী লাভ হবে ?

রুবিনা টলমল চোখে বললো, ইয়াদের জায়গায় ইশান থাকলে এভাবে বসে থাকতে পারতে ?

ইয়াসির চমকে আশেপাশে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, কোথায় কী বলছো রুবিনা, তোমার মাথা ঠিক আছে তো ? সেদিন রাতেও আমি তোমাকে বারবার চুপ করতে বলছিলাম, বলেছিলাম দেয়ালেরও কান আছে কিন্তু তুমি বলেই যাচ্ছিলে। তোমার বলা শেষে আমি জানলার দিকে তাকিয়ে দেখি সেখান থেকে একটা ছায়া সরে গেলো। এখনো বুঝতে পারলাম না সেটা কে ছিলো ?

রুবিনা বললো, যেই থাকুক তাতে কী সমস্যা ? তুমি ভুলে যাচ্ছো রুম সাউন্ড প্রুব বাইরে থেকে আমাদের কথা শোনা সম্ভব নয়।

ইয়াসির রেগে বললো, একদিন তোমার জন্যই আমরা ডুববো দেখে নিও। রুম সাউন্ড প্রুব হলে কী হবে পর্দা টানা থাকলেও জানলা খোলা ছিলো সেটা কী তোমার চোখে পড়েছে ? যেই থাকুক একবার জানতে পারলে, আমি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবো সেটাকেও।

রুবিনা নিজের চেয়ারে বসে বললো, আর কতজনকে এই পৃথিবী থেকে সরাবে তুমি এই প্রোপার্টির জন্য ? আজকাল নিজেকে আয়নায় দেখতে ঘৃণা হয় কতো মানুষের খুনের রক্ত লেগে আছে এই শরীরটাতে।

ইয়াসির তাচ্ছিল্যের হাসি হেঁসে বললো, গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, একশো একটা ইদুর মেরে বিড়াল এখন হজ্জ করতে চায়। তোমার অবস্থা এখন তেমন মনে হচ্ছে আমার কাছে।

রুবিনা রেগে বললো, তুমি থাকো তোমার মনে হওয়া নিয়ে আমি হসপিটালে যাচ্ছি ইয়াদের কাছে।

রুবিনা হসপিটালে যাওয়ার জন্য চেয়ার থেকে উঠতেই ইয়ানা আর ইশান ঢুকলো মেইন ডোর দিয়ে।

তাদের দেখে রুবিনা বললো, ইয়াদ অসুস্থ তোমরা আমাদের জানাওনি কেনো ?

ইয়ানা একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো আর ইশান মায়ের দিকে এগিয়ে এসে বললো, তোমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলে আর ভাইয়ার অবস্থা খারাপ ছিলো তোমাদের জানানোর কথা মাথায় আসেনি ||লেখনীতে তাহমিনা তমা||

রুবিনা বললো, কোন হসপিটালে আছে ?

ইশান সিড়ির দিকে যেতে যেতে বললো, তোমার যেতে হবে না ভাইয়া এখন ঠিক আছে। ভাবি আছে ভাইয়ার সাথে, আমি আর আপু ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে ভাবির জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে আবার যাবো একটু পর।

ইশান কথা শেষ করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো রুবিনা ইয়াসিরের দিকে একবার রেগে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

ইয়াসির রুবিনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ইয়াদের জায়গায় ইশান কেনো তুমি থাকলেও আমার কিছুই যায় আসে না। প্রয়োজন শেষ হলে তোমাদের দু’জনকেও ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমার নিজের ঠিকানায় চলে যাবো।

২৭.
বাড়িটা কেমন নিরবতায় ঘিরে থাকে আজকাল। মানুষ আছে কিনা সেটা বুঝাই দায় হয়ে দাড়িয়েছে। কথা প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয় না আগে থেকেই। আরমান সকালে ভার্সিটি চলে যায় আর আসে রাতে, সারাদিন কোথায় থাকে সেই ভালো জানে। আরমানের বাবা আমিনুলের দেখা মিলে রাত দশটার পর। ইমা চলে যাওয়ার পর তাও মা ছিলো কিন্তু সেও এভাবে চলে গেলো। একটা কাজের মেয়ে আছে টিয়া, সে বাড়ির কাজ শেষ করে মোবাইল নাহলে টিভি নিয়ে পড়ে থাকে সারাদিন। একেবারে একা হয়ে গেছে ছাহেরা বেগম। দুটো কথা বলার জন্যও কেউ নেই তার পাশে। একা থাকার জন্য নিজের কৃতকর্মের কথা বেশি মনে পড়ে তার। তাহেরা আর ইমার সাথে করা অন্যায়গুলো প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায় ছাহেরাকে। বোনের মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি যে সে দায়ী সেটাও তার অজানা নয়। যদিও আল্লাহ তাআ’লা মানুষের আয়ু যতদিন দিয়েছে ততদিনই সে এই পৃথিবীতে নিশ্বাস নিতে পারবে সেটা সবাই জানে। তবু মানুষের মনে হয় এটা না করলে হয়তো এমনটা হতো না। তাহেরার মৃত্যুর জন্য হয়তো কেউ দায়ী নয়, আল্লাহ তাআ’লা তার আয়ু যতদিন দিয়েছিলো ততদিন সে বেঁচে ছিলো। কিন্তু ইমা আর তাহেরার জীবনের কষ্টের জন্য ছাহেরা দায়ী, সেটা ছাহেরা কোনোদিন অস্বীকার করতে পারবে না নিজেও। আজকাল কথাকে খুব আদর করে ছাহেরা, সবসময় চায় মেয়েটা তার কাছে আসুক কিন্তু যাকে ছোটবেলা থেকে দূরে রেখেছে সে কী আর এখন কাছে আসবে। ছাহেরা বুঝতে পারছে তার আদরের ছেলেটাও দিনদিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। সারাজীবন তাহেরা আর ইমাকে কষ্টে ডুবিয়ে রেখেছিলো সেই কষ্টগুলো যেনো নিজের পথ নিজেই খুঁজে ছাহেরার কাছে ফিরে আসছে। নিজের ভরা সংসার থাকতেও সে আজ একা।

মা আমার কলেজে কিছু টাকা লাগবে ?

কথার গলা শুনে ছাহেরার ভাবনার সুতো ছিঁড়লো। ব্রেকফাস্ট টেবিলে খাবার সামনে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে তখন কথার আওয়াজ কানে এলো।

কথার দিকে তাকিয়ে বললো, কতো টাকা লাগবে আমার রুমে আলমারি থেকে নিয়ে যা।

কথা একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে ঘুরে রুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। কথা বেশ বুঝতে পারছে মণিমা আর নানুর মৃত্যুর পর তার মা অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। তার চেঁচামেচিতে আর কানে বালিশ চেপে শুতে হয় না এখন। কথা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। সময়ের সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হয়।

——
পরদিন সকাল সকাল হসপিটাল থেকে চলে আসে ইয়াদ। জ্বর পুরোপুরি যায়নি, থেকে থেকে আবার জ্বর উঠে, তবু তাকে হসপিটালে রাখা যায়নি। ইমা এক মুহুর্তের জন্যও ইয়াদকে একা ছাড়ছে না। একদিন আগেও মায়ের কথা ভেবে চিৎকার করে কান্না করা মেয়েটা আজ স্বামীর সেবা করতে অস্থির হয়ে উঠেছে। ইয়াদ শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ইমার দিকে। সবসময় অবহেলা করা মেয়েটাই এখন তার ২৪ ঘণ্টা দেখাশোনা করছে। হসপিটালে নার্সকে কিছু করতে দেয়নি ইমা সব নিজেই করেছে। একটু আগেই হসপিটাল থেকে বাসায় এসেছে ইয়াদ আর ইমা। ইয়াদ বেডে বসে আছে আর ইমা রুমটা গুছিয়ে নিচ্ছে, সব এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। ইয়াদের সামনে প্রায় সবসময়ই মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা টেনে চলাফেরা করে ইমা, তবে আজ চুলগুলো হাত খোঁপা করে, শাড়ীর আচল কোমরে গুঁজে কাজ করছে। ইমাকে দেখতে একদম পাক্কা গিন্নি মনে হচ্ছে ইয়াদের কাছে।

সব গুছিয়ে ইয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, চলুন আপনাকে গোসল করিয়ে দেই তারপর আমি গোসল করবো।

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো, আমি কী বাচ্চা নাকি তুমি আমাকে গোসল করাবে ?

ইমা রাগী ভাব নিয়ে বললো, জ্বরে তো ঠিক মতো দাঁড়ানোর শক্তিও হারিয়েছেন আবার বলছেন বাচ্চা নাকি। জ্বরের জন্য কারো এতো খারাপ অবস্থা হতে আমি জীবনে দেখিনি, এই আপনাকে ছাড়া। আমাকে দেখুন সারাদিন বৃষ্টির মধ্যে বসে থাকলেও কিছু হবে না।

ইয়াদ দৃষ্টি সরিয়ে বললো, যারা রোবট তাদের কিছু হয় না।

ইমা ইয়াদের কথা শুনে শব্দ করে হেঁসে উঠলো, তাতে ইয়াদ মুগ্ধ হয়ে তাকালো ইমার দিকে। হাসলে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।

হাসি বজায় রেখে ইমা বললো, আমি রোবট লাইক সিরিয়াসলি ? আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে জানি। রোবট শব্দটা আপানার জন্য পার্ফেক্ট৷ না হাসতে জানেন আর না কাঁদতে জানেন। শুধু কথায় কথায় রাগে ফুসফুস করতে পারেন। আচ্ছা আপনি এমন কেনো বলুন তো ||লেখনীতে তাহমিনা তমা||

ইয়াদ সিরিয়াস গলায় বললো, যেদিন সব জানতে পারবে সেদিন নিজেই বুঝে যাবে আমি এমন কেনো।

ইমা ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো, কে জানে কবে জানতে পারবো সব । এখন চলুন আমি হেল্প করছি আপনি শাওয়ার নিয়ে নিন। তবে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না পানিতে, দ্রুত করবেন।

ইয়াদ ইমার সাহায্যে শাওয়ার শেষ করে বেডে এসে বসলো। মাথাটা ভারী হয়ে ছিলো এখন ভালো লাগছে। ইয়াদ আশেপাশে নিজের ফোন খুঁজতে লাগলো, না পেয়ে সাইড টেবিলের ড্রয়ার খুলতেই ইমার সেই এলবাম দেখতে পেলো। কৌতূহল নিয়ে এলবামটা হাতে নিলো। খুলতেই খুব সুন্দর আর হাসিখুশী দুজন মানুষের ছবি দেখতে পেলো। ইমার মাকে ইয়াদ চেনে তাই বুঝতে পারলো এটা ইমার বাবা-মায়ের ছবি। একটু পরই ইমার ছোটবেলার ছবি দেখে ইয়াদ হেঁসে ফেললো। হঠাৎ করেই অসাবধানতায় হাত থেকে এলবামটা নিচে পড়ে গেলো। ভেতর থেকে ইমার মায়ের চিঠিটা বের হয়ে আসলো। ইমা সেদিন তাড়াহুড়ায় চিঠি এলবামের ভেতর রেখে এলবামটা ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলো। চিঠির সাথে কিছু ছবিও বের হয়ে গেছে। ইয়াদ আগে চিঠিটা হাতে নিলো। ওয়াশরুমের দরজার দিকে একবার তাকিয়ে নিলো। ইমার হয়তো বের হতে সময় লাগবে, কেবলই তো গেছে। হসপিটালে ছিলো তাই অনেকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নিবে এটাই মনে হলো ইয়াদের। চিঠিটা খোলে পড়তে শুরু করলো। অনেকটা সময় নিয়ে ইয়াদ চিঠিটা পড়লো। ইয়াদ নিজের চোখে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো জলধারা বয়ে চলেছে দু’চোখে।

ইয়াদ আনমনে বললো, একেই হয়তো বলে মা। শুধু ইমার কথা ভেবে তার মা এতো এতো কষ্ট সহ্য করেছে। সত্যি আমার বুঝতে ভুল হয়েছে, আমার মায়ের মতো নিকৃষ্ট মা যেমন পৃথিবীতে আছে ইমার মায়ের মতো মাও আছে। তাই হয়তো পৃথিবীতে এখনো মানুষ বেঁচে আছে। সবাই আমার মায়ের মতো হলে মানুষ হয়তো কষ্টে নিশ্বাস নিতে ভুলে যেতো।

চিঠিটা পড়া শেষ করে তারপর নিচে পরা ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে সেগুলো তুলতে লাগলো ইয়াদ। কিছু ইমার ছোটবেলার ছবি আর কিছু ইমার মায়ের। ইমার মায়ের ছবি দেখে নিজের মনে তার জন্য অনেকটা শ্রদ্ধা অনুভব করলো ইয়াদ। একটা ছবি উল্টো হয়ে পড়েছে। সেটা তুলে নিজের দিকে করতেই ইয়াদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। ছবিটা দেখে ইয়াদের হাত অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে লাগলো। চোখ দুটো মুহূর্তে রক্তের মতো টকটকে লাল হয়ে গেলো। ইমা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ইয়াদকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো।

দৌড়ে ইয়াদের কাছে গিয়ে বললো, আপনার খারাপ লাগছে ? আপনি এমন করছেন কেনো ?

ইয়াদ কোনো উত্তর দিলো না, সে এক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। ইমা ইয়াদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই ভয়ে পিছিয়ে গেলো।

চলবে,,,,,