তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-২৭

0
1782

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ২৭

ইমা ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খোলে দিলো। দরজার বাইরে রুবিনা বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ইমাকে দরজা খুলতে দেখে বললো, কোথায় ছিলে এতো সময় লাগলো কেনো দরজা খুলতে ?

ইমা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো, ওয়াশরুমে ছিলাম শুনতে পায়নি।

রুবিনা আগের ভঙ্গিতে বললো, ইয়াদ কোথায় ইয়াদের সাথে দেখা করতে এসেছি আমি।

রুবিনা ইমাকে সাইড কাটিয়ে রুমে ঢুকে দেখলো কেউ নেই। ইমার দিকে তাকিয়ে বললো, ইয়াদ কোথায় ?

ইমা আমতা আমতা করে বললো, উনি বাইরে গেছেন ?

রুবিনা চমকে উঠে বললো, হোয়াট,,, এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে গেছে আর তুমি যেতে দিয়েছো ?

ইমা মাথা নিচু করে বললো, আমি উনাকে না করলেই, আমার কথা শুনবেন নাকি ?

রুবিনা রেগে বললো, কেমন স্ত্রী তুমি ? তোমার কথা তোমার স্বামী শুনবে না ?

দরজার কাছে থেকে হঠাৎ কেউ বলে উঠলো, বাহ্ মিসেস রুবিনা কবির শিখাচ্ছেন আদর্শ স্ত্রীর দ্বায়িত্ব, ব্যাপারটা বেশ হাস্যকর।

ইমা আর রুবিনা দু’জনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে পকেটে দু’হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে ইয়াদ। দৃষ্টি ফ্লোরে সীমাবদ্ধ। ইমা আর রুবিনা তাকাতেই ইয়াদ চোখ তুলে তাদের দিকে তাকালো। ইমা আঁতকে উঠলো ইয়াদের চোখ দেখে। অসম্ভব পরিমাণ লাল হয়ে গেছে ইয়াদের চোখ আর দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত।

রুবিনা আমতা আমতা করে বললো, ইয়াদ তুমি ভুল বুঝছো আমাকে ?

ইয়াদ রুমে ঢুকে গায়ের ব্লেজার খুলতে খুলতে বললো, আমি খুব ক্লান্ত এখন আমার রুম থেকে গেলে আমি খুশি হবো।

রুবিনা একবার ইমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ইমা দ্রুত ইয়াদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, কোথায় গিয়েছিলেন আপনি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ? সারাদিনের মেডিসিনও নেননি।

ইয়াদ কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ইমা সেদিকে তাকিয়ে কিচেনে চলে গেলো ইয়াদের জন্য খাবার নিয়ে আসতে। সুপ রান্না করে নিয়ে রুমে এসে দেখে ইয়াদ ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। ইমা ব্লাংকেটের ভেতর হাত দিয়ে ইয়াদের কপাল স্পর্শ করতেই চমকে গেলো। ধুম জ্বর উঠেছে আবার ইয়াদের। ইমার প্রচন্ড রাগ লাগছে এখন ইয়াদের উপর। লোকটার নিজের প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই। এতো অবহেলা কেউ নিজের প্রতি কীভাবে করতে পারে ইমা বুঝে পায় না।

ইমা রাগ করে ইয়াদরে ব্লাংকেট টেনে সরিয়ে মুখ বের করলে ইয়াদ দুর্বল গলায় বিরক্ত হয়ে বললো, কী হয়েছে ?

ইমা কিছু না বলে টেনে ইয়াদকে আধশোয়া করে বসানোর চেষ্টা করলে ইয়াদ নিজেই সেভাবে বসে ইমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো।

ইমা সুপের বাটি থেকে চামচ দিয়ে এক চামচ সুপ তুলে হালকা হালকা ফু দিয়ে একটু ঠান্ডা করে ইয়াদের মুখের সামনে ধরলো। ইয়াদ মুখ ফিরিয়ে নিলো, মানে সে খাবে না।

ইমা রেগে শাসনের সুরে বললো, এখন যদি এটা না খান আমি কিন্তু আপনার মাথায় ঢেলে দেবো। আর আমি মিথ্যা কথা একদম বলি না।

ইয়াদ চমকে ইমার দিকে তাকালো। রাগে ইমার নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। তবে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে ইমাকে। ইয়াদ ইমার দিকে তাকিয়ে আনমনে সুপ টুকু মুখে নিয়ে নিলো। মুখে দিতেই ইয়াদ মুখ কুঁচকে ফেললো। মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে তেতো লাগছে খেতে। ইয়াদ মুখ থেকে ফেলে দিতে গেলে ইমা ইয়াদের মুখের উপর হাত দিয়ে চেপে ধরলো।

ইয়াদের চোখে চোখ রেখে বললো, জানি খেতে ভালো লাগছে না তবু একটু কষ্ট করে খেয়ে নিন প্লিজ। সারাদিনের মেডিসিন বাদ পড়ে গেছে, ধুম জ্বর উঠে গেছে আপনার। এখন যদি এটা খেয়ে মেডিসিন না খান তাহলে আবার হসপিটালে যেতে হবে। প্লিজ লক্ষিটি খেয়ে নিন।

ইমা অসহায় মুখ করে ইয়াদকে কথাগুলো বলছে। যেনো ইয়াদ খাবারটা না খেলে ইয়াদের না বরং ইমার ক্ষতি হয়ে যাবে। ইয়াদ ইমার মায়ায় পড়ে গেলো, ইমার চোখে চোখ রেখে সুপ টুকু গিলে নিলো। ইমা মুচকি হেঁসে আবার এক চামচ সুপ তুলে ফু দিয়ে ঠান্ডা করতে লাগলো। ইয়াদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইমার দিকে আর ভাবছে সবসময় শুনে এসেছে শ্যামলা মেয়েদের মুখে অদ্ভুত এক মায়া থাকে তাহলে ইমার মুখে এতো মায়া কেনো ? ইমা তো শ্যামবর্ণ নয় ধবধবে ফর্সা তাহলে ? ইমা ফু দিচ্ছে আর ইয়াদ তাকিয়ে আছে ইমার ঠোঁট জোড়ার দিকে। খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও ইয়াদ হা করে আছে দেখে ইমা ভ্রু কুঁচকালো।

আপনি না খেতে চাইছিলেন না, এখন যখন শেষ হয়ে গেছে আরো খেতে চাইছেন ?

ইমার কথায় ইয়াদের হুশ ফেরে। বেশ লজ্জাও পায় নিজের কাজের জন্য। তবে সেটা ইমাকে বুঝতে দেয় না একদমই।

মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে, এবার আমি শুতে পারি ?

ইমা কিছু না বলে উঠে গিয়ে মেডিসিন নিয়ে এসে ইয়াদকে একটা একটা খাইয়ে দিলো তারপর বললো, এবার শুয়ে পড়ুন আমি আর বিরক্ত করবো না।

ইমা উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইয়াদ পেছন থেকে হাত টেনে ধরলো। ইমা কেঁপে উঠলো ইয়াদের হাতের স্পর্শে।

ঘুরে তাকিয়ে বললো, আপনার আর কিছু লাগবে ?

ইয়াদ আনমনে বলে উঠলো, তোমাকে লাগবে।

ইমা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে, মানে ?

ইয়াদ চোখ বন্ধ করে বলে, মাথাটা ব্যাথা করছে একটু হাত বুলিয়ে দেবে ?

ইমা ইয়াদের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি এগুলো নিচে রেখে এখনই আসছি।

ইয়াদ কিছু বললো না, ইমা খাবারের ট্রে নিচে নিয়ে গেলো। রুমে এসে দেখে ইয়াদ আগের মতোই শুয়ে আছে। ইমা আস্তে করে কপালে হাত রেখে বুঝতে পারলো জ্বরটা বাড়ছে। ইমা কিছু না ভেবে জলপট্টি দেওয়ার সব নিয়ে এসে ইয়াদের কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো। ইয়াদ হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে একটু পর পর। ইমার ভয় লাগছে ইয়াদের এভাবে জ্বর বাড়তে দেখে। ইয়াদকে দেখে মনে হচ্ছে না তার কোনোদিকে হুশ আছে। ইমার মনে পড়লো ডক্টর বলেছিলো জ্বর আবার বাড়লে জলপট্টি দেওয়ার সাথে শরীরও মুছিয়ে দিতে। ইমা ইয়াদের গা থেকে ব্লাংকেট সরাতেই ইয়াদ শীতে কেঁপে উঠে ইমার হাত আঁকড়ে ধরলো। শরীর মুছাতে হলে ইয়াদের গায়ের টিশার্ট খুলে নিতে হবে কিন্তু ইমা বেশ ইতস্তত বোধ করছে। ইমা ইয়াদের ধরা হাতের দিকে তাকালো। কী করবে বুঝতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে সাহস বাড়িয়ে নিলো আর মনে মনে ভাবলো ইয়াদ কোনো পরপুরুষ নয় তার স্বামী তাই তাকে এটা করতেই হবে। ইয়াদ চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে ইমার দিকে, এতে ইমার অস্বস্তি আরো বেড়ে যাচ্ছে। তবু কাঁপা হাতে ইয়াদের গা থেকে টিশার্ট খুলে স্পঞ্জ ভিজিয়ে গা মুছে দিতে লাগলো। ইমার হাত খুব কাঁপছে তবু ইমা নিজের কাজ করে যাচ্ছে। গা মুছিয়ে দেওয়া হলে ইমা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। টিশার্ট পড়িয়ে দিয়ে আবার বেডে শুইয়ে দিলো ভালো করে আর জলপট্টি দিতে লাগলো। এভাবে অনেকটা সময় পর ইয়াদ ঘামতে শুরু করলো। ইমা কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসছে। ইয়াদও ঘুমিয়ে পড়লো জ্বর কমতে শুরু করলে। তবে ইমা জলপট্টি দেওয়া বন্ধ করলো না।

২৯.
বেডে শুইয়ে এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে কথা, কিছুতেই ইশানের বলা কথাগুলো ভুলতে পারছে না সে। যারা ভালোবাসার কাঙাল তাদের পক্ষে ভালোবাসা পেয়ে ফিরিয়ে দেওয়া কতটা যন্ত্রণার সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে কথা। ইশান তখন তাদের বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তায় গেলে কথার মনে সন্দেহ জাগে।

আপনি এদিকে কোথায় যাচ্ছেন ? এটা তো আপনাদের বাড়ির রাস্তা নয়।

ইশান মুচকি হেঁসে বললো, কেনো ভয় করছে ?

কথা থতমত খেয়ে বললো, ভয় করবে কিসের জন্য ? আজগুবি কথা বার্তা।

ইশান দুষ্টুমি করে বললো, কেনো ভয় করছে না ? তোমার তো ভয় পাওয়া উচিত ।

কথা আমতা আমতা করে বললো, কেনো ভয় পাওয়া উচিত ?

ইশান কথাকে ভয় দেখানোর জন্য বললো, এখন যদি আমি তোমাকে কোনো নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে খুন করে গুম করে দেই।

কথা ভয় পেলেও প্রকাশ করলো না বরং আগের মতো আমতা আমতা করেই বললো, আমাকে খুন করে আপনার কোনো লাভ হলে এই ভয় পাওয়া উচিত হতো। কিন্তু আমাকে খুন করে আপনার দশ পয়সার লাভও হবে না বরং বিপদ হবে। তাই এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

ইশান দুষ্টু হেঁসে বললো, কে বললো লাভ নেই।

কথা বুঝতে না পেরে বললো, মানে,,,, আমাকে মেরে আপনার কী লাভ হবে ?

ইশান সিরিয়াস মুড নিয়ে বললো, একটা মেয়ের থেকে একটা ছেলের কী লাভ হতে পারে জানো না নাকি তুমি ?

কথা এবার ভয়ে কেঁপে উঠলো। মুখ দেখে মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে দিবে। ইশান বেশ মজা পাচ্ছে কথার এমন রিয়াকশন দেখে। ইশান কথার ভয়টা বাড়ানোর জন্য কথার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করছে। কথা ভয়ে নিজের গায়ের জামা খামচে ধরে আছে শক্ত করে।

এরপর ধীর গলায় বললো, আমি বাড়ি যাবো প্লিজ আমাকে যেতে দিন।

ইশান মুচকি হেঁসে বললো, আরে আমি কী গুন্ডা নাকি আমাকে এভাবে বলছো কেনো ? তোমাকে অবশ্যই বাড়ি পৌঁছে দেবো। তার আগে আমি যেটা করতে চাই,,,

ইশানের কথা শেষ হওয়ার আগেই কথা বললো, করতে চান মানে,,,?

ইশান কথার দিকে তাকিয়ে বললো, করতে চাই না, মানে যা বলতে চাই সেটা বলে নেই, তারপর বাড়ি পৌছে দিবো।

কথা বললো, আমি কিছু শুনতে চাই না আমি বাড়ি যাবো এখনই।

কথা চলন্ত গাড়ির দরজা খোলে নামতে চাইলে ইশান একহাতে কথাকে আটকায় আর অন্যহাতে গাড়ি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।

ইশান রেগে বলে, তুমি পাগল হয়ে গেলো নাকি, চলন্ত গাড়ি থেকে নামবে তুমি ?

কথা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আপনি আমাকে এখন না নামালে চলন্ত গাড়ি থেকে লাভ দিবো।

কথা ইশানের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলে ইশান বাধ্য হয়ে গাড়ি সাইড করে থামায় আর সাথে সাথে কথা গাড়ি থেকে নেমে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে। ইশান তাড়াতাড়ি নেমে পেছন থেকে হাত টেনে ধরে।

কথা পেছনে ঘুরে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে, আপনি আমার হাত না ছাড়লে আমি কিন্তু চিৎকার করবো ?

ইশান এবার সত্যি সত্যি রেগে গেলো আর কথাকে কোলে তুলে গাড়ি ব্যাক সিটে শুইয়ে দিলো। নিজে কথার দিকে ঝুঁকে একদম কাছাকাছি চলে এলো, কথা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।

ইশান রেগে বললো, তোমার কী মনে হয় এখানে চিৎকার করলেই কেউ আসবে ?

ইশানের কথা শুনে এবার কেঁদেই দেয় কথা। ইশানের এখন ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে। তার আগেই ভাবা উচিত ছিলো সে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে মজা করছে। ইশান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নিলো। এখন রাগ করলে সব উল্টো হয়ে যাবে ভেবে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টার করে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায় কথার দিকে। মেয়েটা ঠোঁট ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। চোখের পাপড়িগুলো ভিজে চিকচিক করছে পানির কণা। ইশানের ঘোর লেগে গেছে কথার দিকে তাকিয়ে। অনেক সময় পর ইশানের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে তাকালো কথা। তাকাতেই দেখলো ইশান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

কথাকে তাকাতে দেখে ইশান হুট করে বলে উঠলো, I love you Kotha,,,, i love a lot of you..

কথা ইশানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায় আর বলে, কী বলছেন এসব আপনার মাথা ঠিক আছে তো নাকি ?

ইশান কথার দু’হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে কিস করে বলে, আমি একদম ঠিক আছি আর যা বলছি তাও একদম সত্যি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তোতাপাখি খুব। প্রথম আমার মনে হয়েছিলো তোমাকে বিরক্ত করতে আমার ভালো লাগে তাই সবসময় সুযোগ খুঁজতাম তোমাকে বিরক্ত করার। কিন্তু তোমাকে না দেখে দুদিন থাকতে আমার দম বন্ধ হয় এসেছে। তোমার কী মনে হয় ? আমার সাথে মাঝে মাঝে তোমার দেখা হয়ে যেতো। নাহ, আমি প্রত্যেকটা দিন তোমার আশেপাশেই থাকতাম, যেদিন খুব বেশি ইচ্ছা করতো তোমার সাথে কথা বলার তখন তোমার সামনে আসতাম। আমি নিজেও বুঝতে পারিনি কেনো প্রতিদিন তোমাকে দেখতে ছুটে আসতাম। দুদিন তোমাকে না দেখে বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না কথা।

কথা শান্ত গলায় বললো, আমার বাড়ি যেতে লেট হচ্ছে, মা চিন্তা করবে।

ইশান সরে এলো কথার থেকে তারপর বললো, ঠিক আছে এখনই উত্তর দিতে হবে না। তোমার যতটা সময় লাগে নাও, তারপর উত্তর দিয়ো।

কথা কিছুই বললো না। ইশান ব্যাক সিট থেকে নেমে ড্রাইভিং সীটে এসে বসলো। কথা নিজের বিস্ময় কাটিয়ে সামনের সীটে এসে বসলো। এখনো কথার বিশ্বাস হচ্ছে না ইশানের একটু আগের বলা কথাগুলো। দুজনই চুপচাপ বাকিটা রাস্তা পারি দিলো।

কথার বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামতেই কথা সামনের দিকে তাকিয়েই বললো, আপনি আমাকে যে কথাগুলো বলেছেন সব ভুলে যান আমিও ভুলে যাবো। এটা আপনার কোনো ভালোবাসা নয় ক্ষনিকের মোহ, যা একটা সময় কেটে যাবে। আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে একসেপ্ট করে নিতো। কিন্তু আমি বরাবরই বাস্তববাদী মানুষ। ছোটবেলা থেকে বাস্তবতা মেনে নিয়ে বড় হতে শিখেছি তাই আপনাকে একসেপ্ট করা, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একটা সময় যখন আপনার সমাজের মানুষ বলবে আমি আপনার যোগ্য নই, আপনার বন্ধুমহলে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি হবে তখন আপনারও মনে হবে, ভুল করেছেন। আমি বামুন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন দেখি না মিস্টার ইশান হামিদ। ভালোবাসার কাঙাল হলেও আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে আমি রাজি নই। আমার জীবনে আমি এমন কাউকে চাই যে আমাকে কখনো তার অযোগ্য মনে করবে না। আশা করি আজকের কথাগুলো এই পর্যন্তই থাকবে। আপনাকে রিজেক্ট করার মতো যোগ্যতা আমার নেই তাই রিজেক্ট করার অপরাধে প্রতিশোধ নিতে আসবেন না আবার। আমি আপনার যোগ্য নই বলেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি, তাই আশা করবো আপনার ইগো হার্ট হয়নি। ভালো থাকবেন আর নিজের যোগ্য কাউকে ভালোবাসবেন, অযোগ্যকে নয়।

কথাগুলো বলে এক মুহুর্ত দেরি না করে বাসার ভিতরে চলে গেলো কথা। ইশান পাথরের মুর্তির মতো বসে আছে। কথা এতোক্ষণ কী বলে গেলো সব যেনো ইশানের মাথার উপর দিয়ে গেলো৷ এতো কম বয়সে এতোটা ম্যাচিউরড কথা বার্তা কীভাবে বলতে পারে বিশ্বাস করতে পারছে না ইশান এখনো।

কথা বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। ইশানের দুষ্টুমিগুলো কথার চোখে ভাসছে। কথা ইশানকে পছন্দ করে না এমনটা নয়। প্রথম থেকেই ইশানকে ভালো লাগে তার, তবে সেটাকে কখনো নিজের মনকে প্রাধান্য দিতে দেয়নি কথা। ইশানের পাশে দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতার কথার নেই। তাই এসব ভালো লাগা ভালোবাসা তাকে মানায় না। একটা বিষয় ভেবে পাচ্ছে না ইশান কীভাবে তাকে পছন্দ করতে পারে। কথা ধীর পায়ে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো অন্ধকারে ভয় পায় না কারণ অন্ধকারের সাথে তার খুব মিল। দু’জনেই কালো আর দু’টোই মানুষের অপছন্দ।

৩০.
রাত গভীর হয়ে গেছে, ব্যস্ত শহরটা নিরবতায় ছেয়ে গেছে। ইমা ফ্লোরে বসে বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আর তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইয়াদ। যতো দিন যাচ্ছে ততই মেয়েটার প্রতি মায়া বেড়ে চলেছে, শুধুই কী মায়া ? ইয়াদের ইচ্ছে করছে নিজের মনের অনুভূতিগুলোকে অন্য একটা নাম দিতে। কিন্তু ইয়াদ বড্ড ভয় পায় বিশ্বাস করতে, ভালোবাসতে। সবাই যে ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না। তবে ইয়াদ নিজের আর ইমার মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পায় না। দুজনেই ভালোবাসার কাঙাল। দুজনকেই ঘিরে আছে কিছু তিক্ততার সম্পর্ক, যেটা কারোই কাম্য নয়।

ইয়াদ বিড়বিড় করে বললো, আচ্ছা যখন তোমার সামনে কিছু তিক্ত সত্য বেড়িয়ে আসবে তখনও কী তোমার মনে আমার জায়গাটা এমনই থাকবে ? যখন জানতে পারবে তোমার জীবন এতোটা এলোমেলো হওয়ার পিছনে আমার পরিবার দায়ী তখনও কী তোমার আমার সম্পর্কটা এমনই থাকবে, নাকি আরো তিক্ততায় তলিয়ে যাবে ?

চলবে,,,,