তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-২৮

0
1753

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ২৮

ইয়াদ উঠে বসলো তবে দৃষ্টি ইমার দিকেই। ইমাকে সে এমনই এমনই মাফ করেনি। ইয়াদের জানাটা পুরোপুরি ঠিক না হলেও পুরোপুরি ভুলও ছিলো না। ইয়াদকে বিয়ে করার জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়েছে ইমা এমনটাই সে জেনেছিলো। তবে টাকা নিয়েছে ঠিকই কিন্তু ইমা নয় ইমার মণি ছাহেরা বেগম আর খালুজান আমিনুল মাহমুদ। আর তা শুধু বিয়ের জন্য নয় বরং ডি কের সব কাজে সাহায্য করার পারিশ্রমিক হিসাবে নিয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে ইমা কিছুই জানে না। বিয়ের কয়েকদিন পর অফিসে ডি কে আর আমিনুল মাহমুদের কথোপকথনে সেটা জানতে পারে ইয়াদ। ইমা তো ছিলো কেবল একটা গুটি মাত্র। যে ভুল ইমা করেনি তার শাস্তি তাকে দেওয়াটা অন্যায়। তারপর থেকেই ইয়াদ ইমার সাথে ভালো ব্যবহার করতে না পারলেও খারাপ ব্যবহার না করার চেষ্টা করে গেছে। ইমা ইয়াদের মনে ভালো লাগার একটা জায়গা তৈরি করতে পারলেও বিশ্বাসের জায়গাটা এখনো মজবুত করে উঠতে পারেনি। ইয়াদ ইমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো। জ্বর কমে গেলেও শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছে ইয়াদের। তবু ইমাকে কোলে তোলে বেডে শুইয়ে দিলো তাতে ইমার চুলগুলো মুখের উপর পড়ে মুখটা ঢেকে গেছে। ইয়াদ ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলো। ইয়াদের খুব ইচ্ছে করছে ইমার কপালে একবার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে তবে কোথাও একটা অদৃশ্য বাঁধা অনুভব করছে। বেশি সময় ইমার দিকে তাকিয়ে থাকলে ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখা কষ্ট হবে তাই উঠে সোফায় বসলো। নিজের দূর্বলতা মানুষের থেকে যতো আড়ালে রাখা যায় ততই নিজের জন্য মঙ্গল। ইয়াদ নিজের দূর্বলতা কারো সামনে প্রকাশ করতে চায় না। সেও রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ, কোনো রোবট নয়। তারও প্রাণ খোলে হাসতে ইচ্ছে করে, চিৎকার করে কেঁদে বুকের চাপা কষ্টগুলো কমাতে ইচ্ছে করে, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে কিন্তু ইয়াদ সেটা করে উঠতে পারে না। নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে রাখতে, ইয়াদের এখন নিজের কাছেই নিজেকে রোবট মনে হয়। ইয়াদ কিছুটা সময় নিজেকে নিয়ে ভাবতেই দূর্বলতার জন্য চোখে ঘুম নেমে আসতে লাগলো। সোফায় ঘুমানোর অভ্যাস নেই ইয়াদের আর শরীরটাও সায় দিচ্ছে না তাই ধীরপায়ে বেডের একপাশে গিয়ে ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

——
ছাঁদে তিন সাইডে রেলিং আছে, পূর্ব পাশটা খোলা। নানা রঙের ফুলে ছেয়ে আছে পুরো ছাঁদ। ইমা আলতো হাতে ফুলগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। পূর্ব আকাশে লাল টকটকে সূর্যটা উঁকি দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে ব্যস্ত আর ইমা ভোরের আলোয় ফুলগুলো দেখতে ব্যস্ত। ছাঁদ পুকুরে কয়েকটা পদ্মা ফুল, জল গোলাপ আর শাপলা দেখে খুশিতে আত্মহারা ইমা। দৌড়ে গিয়ে ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখতে লাগলো, ছোট ছোট লাল মাছগুলো মুখ উচু করে কিছু খাচ্ছে। ইমা একটা পদ্মফুল ছিঁড়ে নিজের লম্বা খোলা চুলে একটা ক্লিপ দিয়ে আঁটকে নিলো। ছাঁদের পূর্বদিকে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসলো। ইমা জানে না কেনো তবে তার খুব ভালো লাগছে আজ। গুনগুন করে একটা গান গাইতে শুরু করলো। কিছু সময় পর উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরতেই কেউ সজোরে ধাক্কা দিলো তাকে। কী রিয়াকশন দিবে বুঝতে পারছে না ইমা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ধাক্কা দেওয়া মানুষটার দিকে তবে মুখটা স্পষ্ট নয় ইমার কাছে। হঠাৎ ইয়াদ সেই মানুষটাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে ইমা বলে চিৎকার দিয়ে ইমার হাতটা ধরতে গেলো। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে ইয়াদ ইমার হাত ধরার আগেই ইমা নিচে পড়ে যেতে লাগলো। ইয়াদ তার দিকে হাত বাড়িয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তখনো।

ইমা,,,,,,,

ফট করে চোখ খুলে ফেললো ইমা। উঠতে গিয়েও উঠতে না পেরে আগের জায়গায় শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো সে।

ইয়াদ ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ব্যস্ত গলায় বললো, কী হয়েছে এমন করছো কেনো ?

ইমা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইয়াদকে আর জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

ইয়াদ আবার ইমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, কী হয়েছে এমন করছো কেনো ? খারাপ লাগছে নাকি তোমার ?

ইয়াদের ধাক্কায় ইমার হুঁশ ফিরলো কিছুটা। নিজের দিকে খেয়াল করে সে তব্দা খেয়ে গেলো। ইয়াদের বুকে মাথা রেখে তাকে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে ইমা। ইয়াদের এক হাত ইমার মাথায় আর অন্যহাত পিঠে। নিজের অবস্থান বুঝতে পারতেই ইমার হাত আলগা হয়ে গেলো তবে ইয়াদ আগের মতোই আছে আর প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। বিয়ের এতোদিনে ইমা আর ইয়াদ কখনো এক বিছানায় ঘুমাইনি। ইমা সবসময় সোফাতেই ঘুমায় আর ইয়াদ বেডে। তবে এখন কী করবে কিছুতেই মাথায় আসছে না ইমার। লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে পরতে ইচ্ছে করছে। লজ্জায় স্বপ্নের কথাও ভুলে গেছে এখন। সে কীভাবে ইয়াদর দিকে তাকাবে বুঝতে পারছে না। ইমা ইয়াদের হাতের বাঁধন উপেক্ষা করে উঠে বসলো, হাতের বাঁধন শক্ত না হওয়ায় সমস্যা হলো না খুব একটা। ইমা বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর ইয়াদ কিছু বুঝতে না পেরে ইমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ বুকে চাপ অনুভব করলে ইয়াদের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারে ইমা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আর ক্রমশ তার হাতের বাঁধন শক্ত হচ্ছে আর তাতেই ইয়াদ বুকে চাপ অনুভব করেছে। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে কিছু বলার আগেই খেয়াল করলো ইমা কেমন যেনো অস্থির অস্থির করছে। তাই হালকা ধাক্কা দিয়ে ইমার নাম ধরে ডাকতে থাকে।

ইয়াদ উঠে বসে বললো, কী হয়েছে এমন করছো কেনো, খারাপ স্বপ্ন দেখেছো ?

ইমা কাঁপা গলায় বললো, হুম।

ইয়াদ আর কিছু বলার আগেই ইমা বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। চোখে মুখে পানি পড়তেই আবার স্বপ্নের কথা মনে পরে গেলো আর ভয়ে গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।

ইমা মনে মনে বললো, একটা সময় তো মনে হতো এই জীবনটার থেকে মরে গিয়ে মুক্তি পেলে ভালো হতো। জীবনটা মূল্যহীন মনে হতো সবসময়। তাহলে আজ এমন একটা স্বপ্ন দেখে ভয় কেনো করছে আমার ? কেনো মনে হচ্ছে আমি বাঁচতে চাই আরো অনেকগুলো বছর বাঁচতে চাই। মাথায় পাকা চুল আর গায়ে কুঁচকানো চামড়া নিয়ে উনার কাঁধে মাথা রেখে পড়ন্ত বিকেলের তেজ বিহীন সূর্যটা দেখতে পায়। জানি আমার এই স্বপ্নগুলো হয়তো কখনো পূরণ হওয়ার নয় তবু দেখতে ভালো লাগে আমার।

ইমা খেয়াল করলো চোখ ভিজে যাচ্ছে নোনাজলে। মুচকি হেঁসে কষ্টগুলো সাইডে রেখে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নিলো। ফজরের আযান শুরু হয়ে গেছে বাইরে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ইয়াদ আগের মতোই বেডে বসে আছে।

ইমা ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, এখন তো অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে। দু’দিন এক ওয়াক্তের নামাজও পড়েননি, চাইলেই পড়তে পারতেন। আজ অন্তত নামাজ বাদ দিয়েন না।

ইয়াদ ইমার কথা উপেক্ষা করে বললো, তুমি তখন ওরকম করেছিলে কেনো ?

কাবার্ড থেকে জায়নামাজ বের করতে করতে বললো, বাজে স্বপ্ন দেখেছিলাম আর আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি ঘুমের ঘোরে। তার জন্য কিন্তু সরি বলবো না কারণ আপনার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আর এমনিতেও দোষটা আমার না কারণ আমার যতটুকু মনে আছে আমি ফ্লোরে বসেছিলাম আর ঘুমালে সেখানেই ঘুমিয়েছি। যে বেডে নিয়ে গেছে সব তার দোষ।

ইয়াদ ইমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইমার দিকে আর ইমা তা আড়চোখে দেখে মুচকি হাঁসলো।

তারপর আবার বললো, তবে স্বপ্নটা সত্যি হলে আপনার হয়তো বেশ ভালো হতো। আমাকে সহ্য করতে হতো না দিনরাত ২৪ ঘণ্টা।

ইয়াদ বুঝতে না পেরে বললো, মানে ?

ইমা জায়নামাজে দাঁড়িয়ে বললো, কিছু না আপনি ওযু করে এসে নামাজে দাঁড়ান সময় চলে যাচ্ছে।

ইয়াদ কিছু না বলে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো আর ইমা নামাজ শুরু করে দিলো। নামাজ শেষ করে সালাম ফেরানোর সময় পাশে ইয়াদকে নামাজরত অবস্থায় দেখে মুগ্ধ হলো, একদম পবিত্র লাগছে তাকে। নামাজ শেষ করে কোরআন শরিফ বের করে কিছুটা সময় তিলাওয়াত করলো আর ইয়াদ নামাজ শেষে পাশে বসে তিলাওয়াত শুনতে লাগলো। ইমা কোরআন শরিফ বন্ধ করে পাশে তাকিয়ে দেখলো ইয়াদ তার দিকে তাকিয়ে আছে, তাতে ইমা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো, মুচকি হাসলে ইয়াদ কোনো রিয়াকশন না করে উঠে গেলো। ইমা সব গুছিয়ে উল্টো ফিরে দেখে ইয়াদ বেডে শুয়ে পড়েছে আবার। ইমা গিয়ে ইয়াদের কপালে হাত রাখলো জ্বর আছে কিনা দেখার জন্য। ইয়াদ চোখ মেলে তাকালো ইমার দিকে।

ইমা ইয়াদের চোখে চোখ রেখে বললো, জ্বর নেই তাই এখন আর শুয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। গার্ডেনে গিয়ে একটু হাটাহাটি করুন, সকালের সতেজ বাতাসে ভালো লাগবে।

ইয়াদ উঠে দাঁড়ালো ইমার কথা শুনে, দরজার কাছে থেমে গিয়ে বললো, ছাঁদে যাচ্ছি পারলে এক কাপ কফি দিয়ে যেও।

ইয়াদ আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলো। ইমা বেশ অবাক হলো, ইয়াদ তার এক কথায় সত্যি সত্যি হাঁটতে চলে গেলো। পরক্ষণে ভ্রু কুঁচকে ভাবলো জ্বরের মুখে কফি খাবে পাগল নাকি ? ইমার আর কী করার, চেয়েছে যখন দিতে তো হবেই। ইমা কিচেনে গিয়ে দুকাপ কফি বানিয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো। ছাঁদের গেইটের সামনে আসতেই সকালের স্বপ্নের কথা মনে পরে গেলো। ভয় করতে শুরু করলো ইমার। ভয়ে ভয়ে ছাঁদে পা রাখলো, ইয়াদকে দেখতে না পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই ছাদ পুকুরের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। ধীর পায়ে কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

ক্ষীণ গলায় বললো, আপনার কফি।

ইয়াদ ইমার দিকে তাকিয়ে ইমার হাত থেকে কফির কাপ নিয়ে এক চুমুক দিলো। মুহুর্তে মুখ কুঁচকে গেলো ইয়াদের। কফিটা অতিরিক্ত মাত্রায় তেতো লাগছে তবে কিছু বললো না। কাপটা ছাদ পুকুরের রেলিঙের উপর রেখে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। ইমা ব্যাপারটা খেয়াল করলেও কিছু বললো না।

ইমা ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, আচ্ছা আপনার দম বন্ধ হয়ে আসে না এভাবে সবসময় চুপ করে থাকতে ?

ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবেই তাকালো ইমার দিকে কিন্তু কিছু বললো না। ইমার মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় ইয়াদের এমন চুপ করে থাকা দেখে। যেমনটা এখন হচ্ছে। ইমা ইয়াদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ছাঁদ দেখায় মনোযোগ দিলো। আজ ছাঁদটা দেখতে ঠিক তেমনি লাগছে যেমনটা ইমা স্বপ্নে দেখেছিলো। ইমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। ইয়াদ ইমাকে পাশ কাটিয়ে পূর্ব পাশটার দিকে পা বাড়ালো যেটা খোলা। ইমা ইয়াদের হাত টেনে ধরলো পেছন থেকে। ইয়াদের হাত পকেটে থাকার জন্য ইমা হাতের কনুই ধরে রেখেছে। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে ইমার দিকে ঘুরে তাকালো।

ইমা ভয়ে ভয়ে বললো, ওদিকে কেনো যাচ্ছেন ?

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকেই বললো, কেনো ওদিকে কী হয়েছে ?

ইমা আমতা আমতা করে বললো, ওদিকটায় রেলিং নেই তো, যেতে হবে না।

ইয়াদ বিরক্ত হয়ে বললো, আমি কী বাচ্চা রেলিং নেই বলে পরে যাবো ?

ইয়াদ ইমার কথা উপেক্ষা করে ওদিকটায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ তিন দিন পর সকালের সতেজ বাতাস আর ভোরের স্নিগ্ধতা গায়ে মেখে বেশ ভালো লাগছে ইয়াদের। রুমে বসে থাকার অভ্যাস নেই তাই আরো বিরক্ত লাগছিলো। গতকাল বের হয়েও ভালো লাগেনি, শরীর দূর্বল থাকায় আরো খারাপ লেগেছে অনেক। তবে আজ অনেকটা ভালো লাগছে। ইয়াদ আড়চোখে পিছনে ফিরে দেখলো ইমা কফির কাপ হাতে নিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ, ইয়াদের কপালে চিন্তার ভাজ পরলো ইমার ভীত মুখ দেখে।

ইয়াদ আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ইমা,,,,

ইমা অনেকটা চমকে উঠলো ইয়াদের ডাকে। ইমার বারবার সকালে স্বপ্নের কথা মনে হচ্ছে।

ইমা থতমত গলায় বললো, কিছু বললেন ?

ইয়াদ দৃষ্টি সামনে রেখেই বললো, এদিকে এসো।

ইমা ভয়ে ভয়ে বললো, ওদিকে কেনো ?

ইয়াদ এবার ভ্রু কুঁচকে ইমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি কী ভয় পাচ্ছো এদিকে আসতে ?

সাহস নিয়ে বললো, ভয় কেনো পাবো ? আসছি তো এখনই।

ইমা ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ইয়াদের দিকে। তবে কার্নিশ থেকে একটু দুরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে বললো, আপনাদের কী টাকা কম পড়েছিলো নাকি ?

ইয়াদ বুঝতে না পেরে বললো, মানে ?

ইমা উঁকি দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, বাড়ি তৈরি করার সময় কী টাকা কম পড়ে গিয়েছিলো ? এপাশে রেলিং দেননি কেনো ?

ইয়াদ বিরক্ত হয়ে বললো, বাড়িটা তৈরি করেছে আমার দাদা তাও আমার জন্মের অনেক আগে। এপাশটা খোলা রাখা হয়েছে দাদার প্রাণ প্রিয় কন্যার কথায়। এখানে নাকি সে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতো সকাল সন্ধ্যা।

শেষের কথাটা বলার সময় ইয়াদের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফোটে উঠলো। ইমা অবাক হয়ে তাকালো ইয়াদের দিকে। ইয়াদের একটা ফুপিও আছে সেটা আজ জানতে পারলো ইমা। কিন্তু কোথায় ইয়াদের সেই ফুপি।

ইমা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনার ফুপিও আছে ? কিন্তু তার কথা তো কখনো শুনিনি। কোথায় আছে সে এখন ?

ইমার প্রশ্নে ইয়াদ চমকে উঠলো। তখন আনমনে বলে ফেলেছে কিন্তু এখন বুঝতে পারছে কী বলেছে সে। এখনই যে সবটা জানার সময় হয়নি সবার। ইয়াদ উত্তর না দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। ইমাও ঘুরে পা বাড়াতে গেলে পা পিছলে যায় ইমার। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ইমা, তবে কী স্বপ্নটাই সত্যি হতে চলেছে। ইমার হাতের কফির কাপটা একদম নিচে পরে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো।

চলবে,,,,