তিলকপুরের মিঞাবাড়ি পর্ব-০৫

0
84

#তিলকপুরের_মিঞাবাড়ি
Sumon Al-Farabi
#৫ম_পর্ব
এখন আমি কারাগারে বন্দী। কিন্তু আমজাদ স্যার একবারের জন্যও এদিকে আসলো না। নিজের অপরাধ কি সেটাও এখনো আমার অজানা।
সেলের ভিতরে থেকেই শুনতে পাচ্ছি এই ছেলেই তাহলে এতোদিন মানুষ গুলো মারলো? দেখে তো ভদ্রলোক মনে হয়। কিন্তু ভদ্রলোকের আড়ালে এতো ভয়ংকর রুপ এটা কখনো ভাবীনি।
কথাগুলো কে বা কারা বলছে সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছি কথাগুলো আমাকে নিয়েই বলা হচ্ছে।

সেলের মেঝেতে বসে নির্বাক চোখে শিকগুলো গুনছি। সবাই বলে চৌদ্দ শিক। আজ সেই চৌদ্দ শিকের মাঝেই আমার অবস্থান।
সেই সময় আমজাদ স্যারের বউ এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। উনাকে দেখে আমি উঠে উনার সামনে গেলাম।
– ভাবী এসব কি হচ্ছে! স্যার হঠাৎ আমায় এভাবে নিয়ে আসলো কেন? আমি জানি এইসব হত্যার জন্য উনি আমায় সন্দেহ করে এখানে ডেকে এনেছে। কিন্তু তাই বলে আমার অপরাধ না জানিয়ে এভাবে নিয়ে আসবে?
– তোমার ভাইয়া থানায় নেই। কোথায় যেনো গিয়েছে। এখনই চলে আসবে। আসলেই আমি উনার সাথে কথা বলবো। তুমি চিন্তা করবে না কেমন!

ভাবী আমার সাথে কথা বলছে। আজকে রাতেই আবার একজনকে হত্যা করা হয়। সেই মৃত ব্যাক্তির লাশ ও সেই মিঞা বাড়িতেই পাওয়া যায়। এই কথাগুলোই ভাবী আমাকে বলছিলো। ঠিক তখনই আমজাদ স্যার এসে উপস্থিত হলো।
উনি এসে সেলের দরজা খুলে দিয়ে উনার বউকে বললো- সুমনকে নিয়ে আমার কেবিনে আসো।
আমি বের হয়ে ভাবীর সাথে আমজাদ স্যারের কেবিনে আসলাম। উনার কেবিনে এসেই সর্ব প্রথম আমার নজর পড়লো আমার গুছিয়ে রাখা ব্যাগের উপরে। যেটা আমি আমজাদ স্যারের বাসায় রেখে এসেছিলাম।

– আমার ব্যাগ এখানে কেন!
আমজাদ স্যার বললো- আমি তোমার ভাবীকে নিয়ে আসতে বলেছিলাম।
– কিন্তু কেন!
উনি উনার মোবাইলে একটা ছবি আমার দিকে তুলে ধরলো যেখানে একটা রক্ত মাখা টি-শার্ট ছিলো।
– এটা কি তোমার চেনা চেনা লাগছে!
– হ্যাঁ। এটা তো অবিকল আমার টি-শার্টের মতোই। কিন্তু স্যার এটাতে রক্ত কেন!
– আজ একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
– ভাবী সেটাই বলছিলো একটু আগে। যার লাশ মিঞা বাড়িতেই পাওয়া যায়।
– হ্যাঁ। ঐ লোকটার শ্বাসরোধ করা হয় এই টি-শার্ট দিয়ে। এরপর উনার শরীরের সিরিজ দিয়ে খুব বাজে ভাবে জখম করা হয়।
এতক্ষণ ভাবী চুপ থাকলেও এবার উনি কথা বললো- আর তুমি সেটা দেখেই ভেবে নিলে এটা সুমন!
– গতকাল ওর শরীরে ঠিক এই টি-শার্ট টাই দেখেছিলাম আমি। তাই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।
– সুমন তো গতকাল আমাদের বাসাতেই ছিলো। তাছাড়া তুমি ভালো করেই জানো আমাদের বাসা থেকে বের হতে হলে কত কিছুর প্রয়োজন হয়। দুইটা গেইটেই তো লক করা ছিলো।
– আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে। আমার আগে ইনসিউর হতে হতো। পরের বার থেকে এমন ভুল হবে না কথা দিচ্ছি। তুমি এখন বাসায় যাও। সুমন আমার সাথে থাক।

ভাবী চলে যেতে না যেতেই স্যার আমায় বললো- তোমার সব কাপড় এলোমেলো করে দিয়েছি। কিছু মনে করবে না কেমন। তুমি একটু কষ্ট করে গুছিয়ে নাও। আমি চা আর সিগারেট আনতে বলছি।

আমি ব্যাগের কাপড় গুছাইতে লাগলাম। হঠাৎই ব্যাগের মাঝে একটা চিরকুট পেলাম। স্যারের অগোচরেই চিরকুট খুললাম। সেখানে লেখা ছিলো ” ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো কারো শরীরে হাত দিলে কেমন অনুভূতি হয় সেটাই আজ কোনো একজন কে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে আপনি চলে যান এখানে থেকে নয়তো খুবই বিপদে পড়ে যাবেন। ”

-স্যার, একবার এদিকে দেখবেন প্লিজ!
আমজাদ স্যার আমার কাছে আসতেই আমি উনাকে চিরকুট এগিয়ে দিলাম।
– আপনি যখন ব্যাগ খুলেছিলেন তখন এটা পেয়েছিলেন!
– না তো। এটা তুমি কই পেলে!
– ব্যাগের মাঝেই ছিলো। তাহলে যে এটা দিয়েছে সে আপনার উপর লক্ষ রেখেছিলো এবং আপনি বের হতেই এটা রেখে গেছে।
– হতে পারে। কিন্তু কে এসেছিল!

কয়েকজন দায়িত্বরত পুলিশ কে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু কেউ কাউকে যেতে বা আসতে দেখে নি।

চা শেষ করে আমজাদ স্যারের সাথে আমি আবার সেই মিঞা বাড়িতে আসলাম।
– খুনটা গতকাল রাতে হয়।
রাস্তায় আসার সময় স্যারের মোবাইলে মৃত ব্যাক্তির লাশের ছবিগুলো আমায় দেখিয়েছে। খুবই নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
– এতো জঘন্য ভাবে কেন মারলো! উনিও কি সেই চেয়ারম্যানের ছেলের বন্ধু ছিলো!
– সব থেকে অবাক করা বিষয় তো সেটাই। এই ভদ্রলোক এখানে একটা ঔষধের ফার্মেসী চালায়। এলাকায় উনার অনেক সুনাম। চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে উনার কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও কেন এখানে তার মৃত দেহ পাওয়া গেলো!
– আশেপাশের কেউ কিছু দেখেনি! বা শুনতে পায় নি?
– একজন চিৎকার শুনে এদিকে আসার জন্য বের হয়েছিল। কিন্তু তখনই নাকি সে হাসনাহেনাকে দেখতে পায়। সাদা একটা কাপড় পড়া উষ্কখুষ্ক চুল ভয়ংকর একটা রুপ নিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো আর তাকে নাকি বললো ওদিকে না যেতে। কেউ তার পাপের সাজা পাচ্ছে।
– কি বলছেন এসব! ঐ লোক কোথায়!
-গতকাল রাতে থেকেই তার ভীষণ জ্বর। দুই তিনবার অজ্ঞান হয়ে গেছে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে।
– স্যার গতকাল রাতেও আমার সাথে এই একই ভুতুড়ে কান্ড হয়েছে। তবে কি আসলেই এখানে মিঞা বাড়ির আত্মা আছে!
– কি ভুতুড়ে কান্ড হলো!
– ল্যাম্পপোস্ট দেখতে পাওয়া, ব্যাগের মাঝে কাগজ দেওয়া যখন কেউ কাউকে দেখেই নি। এসব কে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন!
– সব কিছুই কেমন গড়মেলে মনে হচ্ছে।

To be continue…..