তিলকপুরের মিঞা বাড়ি পর্ব-০৬

0
93

#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
#৬ষ্ঠ_পর্ব
– তোমাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি। তুমি যদি শোনো কিভাবে এই বাড়ির মানুষদের হ*ত্যা করা হয়েছে তবে তোমার শরীর শিউরে উঠবে।
– আপনি তো বলেছিলেন শ্বাসরোধ করে এবং মেয়েটাকে…. ( এতটুকু বলেই আমি থেমে গেলাম। কারণ এরপর কোনো শব্দ আমার মুখে আসছিলো না)
আমজাদ স্যার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
– শুধু এতটুকুতেই যদি জা*নোয়ার গুলো শান্ত হতো তবে তো ঠিকই ছিলো।
– এর থেকেও ভয়াভহ ভাবে হ*ত্যা করে!
– মানসিক শারীরিক সব ধরনের অত্যা*চার করেছে। মেয়েটার শরীরের প্রাইভেট পার্ট….
আমি আমজাদ স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু উনি চুপ হয়ে গেলেন। পকেটে থেকে রুমাল বের করে চোখের সানগ্লাস খুলে চোখটা মুছে নিলেন।
– থেমে গেলেন যে!
– প্রাইভেট পার্ট সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোটায় ফোঁটায় এ*সিড ফেলেছে। যদি বলতে হয় তবে এটাও বলা যায় মেয়েটাকে জীবন্ত অবস্থায় জাহান্নামে শাস্তি দিয়েছে জা*নোয়ারের দল। তাদের মৃত্যুর একদিন পর সবাই জানতে পারে এই বাসায় হ*ত্যাযজ্ঞ চলেছে। পুলিশ যখন আসে তখন উ*লঙ্গ অবস্থায় মেয়েটার লা*শ মেঝেতে পাওয়া যায়।

স্যারের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। কিন্তু খেয়াল করি নি আমার চোখের কোণায় জল জমে গেছে। আমজাদ স্যার পকেটে থেকে টিস্যুর প্যাকেট বের করে সেখানে থেকে আমার দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো- চোখের পানিটা মুছে নাও।

– শুধু মাত্র থানায় মামলা করেছিলো জন্য এতো জ*ঘন্য ভাবে কেউ ফুলের মতো কোনো মানুষকে শাস্তি দিতে পারে!
– মানুষ হয়তো পারে না। তবে জঙ্গলের জা*নোয়ার গুলো ঠিকই পারে। তুমি জানো আমার বিন্দু মাত্রা সহানুভূতি জাগে না এই ছেলেগুলোর জন্য যারা এতোদিনে খু*ন হয়েছে। আমি বরং মনে মনে খুশি হই। কারণ এরা এটার প্রাপ্য।
– তাহলে আপনি আমায় এখানে ডেকে নিয়ে আসছেন কেন?
– আমি একজন মানুষ তারপর পাশাপাশি পেশাগত জীবনে একজন পুলিশ। এলাকায় ক্রাইম রেট বেড়ে যাচ্ছে যেটা আমার রেপুটেশনের উপর প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে সারা দেশের টপ নিউজে আছে এই হ*ত্যা কান্ড।

একজন পুলিশ এসে স্যারের হাতে একটা কাগজ আর একটা কয়েন সাইজের লোহা দিয়ে বললো- স্যার মৃ*ত ব্যাক্তির পকেটে এই কাগজ ছিলো এবং উনার জিহ্বার নিচে এই লোহার অংশ বিশেষ পাওয়া যায়। এটা গরম করে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে মুখ বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো।
– তোমার চারদিকে ভালো করে খোঁজো আর কিছু পাওয়া যায় কি না।
– জ্বি স্যার।
পুলিশ চলে গেলো স্যার গভীর ভাবে কাগজের দিকে তাকিয়ে আছেন।
– স্যার একটা কথা বলি!
আমার কথায় আমজাদ স্যার কাগজের উপরের দৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটলো। উনি ভ্রম থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলেন- কি বলতে চাও!
– এতক্ষণ আপনি বলছিলেন না যে উনি কেন! উনি তো ভালো লোক। তবে এখন আমি নিশ্চিত বলতে পারি উনার ও সম্পর্ক আছে মিঞা বাড়ির এই হ*ত্যার সাথে।
– তুমি কিভাবে বুঝলে!
– খুব সাধারণ, এসিড দিয়ে হাসনাহেনার শরীর পুড়িয়েছে। এখানে লোহার অংশ বিশেষ দিয়ে মুখের ভিতরে পুড়িয়েছে। দুই জায়গাতেই খুব কঠিন পথ অবলম্বন করছে।
– হুম। তবে এটা তো সিউর হলাম যে এটা কোনো ভুত বা আত্মার কাজ নয়। এটা কোনো মানুষ বা সংঘবদ্ধ মানুষ করেছে।
– আপনি কিভাবে সিউর হলেন এটা কোন ভুত বা আত্মার কাজ নয়!
– কমন সেন্স। ছোটবেলায় দাদুরা যখন ভুতের গল্প বলতেন তখন বলতেন যে ভুত পেত লোহাকে ভয় পায়। এটা মিথ্যা নয়। আমি ও একটা বইয়ে পড়েছিলাম যে অশরীরীরা লোহা থেকে নিজেকে দূরে রাখে। তবে কিভাবে একটা অশরীরী কোনো মানুষের মুখে লোহা দিতে পারে! ওহ, ওয়েট! ( হঠাৎ স্যারের চোখে মুখে উজ্জ্বল একটা ভাব ফুটে উঠলো) কি সব ভুত পেত অশরীরী নিয়ে পড়ে আছি। অশরীরী বা ভুত পেত তো চিঠি লিখে কাউকে হ*ত্যা করবে না। এর মানে তোমার ব্যাগের চিঠিটাও সবার অজান্তেই কেউ রেখে গেছে।

উনি হাতের চিঠিটা খুলে পড়লেন সেখানে শুধু কয়েকটা শব্দ ছিলো – ভদ্রবেশে শয়তান আজ মুক্তি পেলো।
আমজাদ স্যার একজন পুলিশ কে ডাকলেন।
– হ্যাঁ স্যার।
– আজ থেকে ২৪ ঘন্টা এখানে গার্ডের ব্যাবস্থা করুন।
– কিন্তু স্যার এখানে কেন ডিউটি নিতে রাজি হবে না।
– না হলে ফোর্স করুন। তবুও এখানে ডিউটি করতে হবে। আমি চাই না এখানে আর কোনো হ*ত্যা কান্ড হোক।

আমজাদ স্যারের সাথে আবার থানায় আসলাম। সেখানে আগে থেকেই কেউ একজন স্যারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। স্যার আসতেই একজন পুলিশ এসে উনাকে বলে গেলো যে রাইয়ান এসেছে স্যারের সেই দেখা করতে।
– সুমন তুমি বরং চা খাও দোকানটাতে গিয়ে। আমি গেষ্ট অ্যাটেন্ড করি।
– সিউর স্যার।

দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চটাতে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছি। মামা তখনও চা বানাচ্ছে। আমার পাশে বিপরীত দিকে মুখ করে কেউ বসলো। বোরখা পড়া বুঝতে পেরে আমি কিছুটা সরে বসলাম।
– এদিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই শুধু আমার কথা শুনুন। আপনাকে বলেছিলাম না এখানে থেকে দ্রুত চলে যেতে! আমি চাচ্ছি না আপনার কোনো ক্ষতি হোক।
পাশের মহিলার এমন কথা শুনে আমার হাত আলগা হয়ে সিগারেট পড়তে নেয়।
– আপনি কে!
– আমি যে হই না কেন তবে আপনার শুভাকাঙ্খী। দয়া করে আপনি চলে যান।
– আমি আপনাকে দেখতে চাই। তাছাড়া আপনি আমার কেনই বা ক্ষতি করবেন!
– কারণ আপনি ক্রমশ এই সব কিছুর খুব গভীরে চলে যাচ্ছেন। শুধু এতটুকুই বলবো আপনি প্লিজ চলে যান।

মহিলা উঠে হনহন করে হাটতে শুরু করলো। আমিও উঠে উনার পিছনে দৌড়ালাম।

বেশ কিছুটা সময় পরে আমি যখন ফিরে আসলাম তখন আমজাদ স্যার একজন লোকের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। আমি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের দেখলাম। লোকটা যখন চলে গেলো তখন আমি স্যারের কাছে গেলাম।
– কোথায় গিয়েছিলে তুমি!
– একটু সাইডে। এখানে অনেক শোরগোল ভালো লাগছিলো না। লোকটা কে স্যার!
– রাইয়ান। চেয়ারম্যানের ছেলে। এখানে সমস্যাটা হচ্ছে বাপে চেয়ারম্যান বাপের বড় ভাই আবার এই এলাকার এমপি। নয়তো এই কুত্তা কে কবেই সাইজ করতাম। তবে তোমাকে এখানে থেকে দ্রুত চলে যেতে হবে।
স্যারের কথার দিকে আমার তেমন খেয়াল নেই। অপলক ভাবে লোকটার চলে যাওয়া দেখছি। মনের মাঝে তীব্র ঘৃণা জমা হচ্ছে ইচ্ছে করছে যদি এখানেই শেষ করে দিতে পারতাম।
আমজাদ স্যার আমার শরীরে হাত দিয়ে ডাকলেন – এই সুমন।
– হ্যাঁ স্যার।
– কোথায় হারিয়ে গিয়েছো! আমি কি বলেছি শুনেছো?
– শুনতে পাইনি স্যার।
– এই এলাকা এখন তোমার জন্য নিরাপদ নয়। তোমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে থেকে চলে যেতে হবে।
– কেন স্যার!
– রাইয়ানরা জেনে গেছে তুমি তাদের বাসায় ছিলে, তারা সন্দেহ করছে তুমি তাদের আত্মীয় এবং এইসব হ*ত্যা তুমি করছো।
– কিন্তু স্যার , আমি তো
– জানি আমি। চলো বাসায় যাবো সেখানে গিয়ে বাকী সব কথা হবে । সারাদিন অনেক পরিশ্রম করলে আমার সাথে এবার গিয়ে একটু রেষ্ট নিবে। কাল আমি তোমায় ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবো।

রাস্তার পাশে পুনরায় সেই বোরকা পড়া মহিলাকে ডেকে হঠাৎই স্যারকে ডেকে দেখাতে গিয়ে বাইকের কন্ট্রোল হারিয়ে এ*ক্সিডেন্ট এর শিকার হই।
মহিলাটা এবার মুখের কাপড় সরিয়ে হাসতে লাগলো এটা দেখে স্যার আর আমি দুজনেই একসাথে বলে উঠলাম হাসনাহেনা! কিন্তু মুহুর্তেই পকল ফেলতেই সেখানে কেউ ছিলো না।
– স্যার, এক্সিডেন্ট টা কি ঐ আত্মাই করালো!
আমজাদ স্যার নির্বাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলে গেছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।

To be continue…