তিলকপুরের মিঞা বাড়ি পর্ব-০৩

0
108

#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
৩য় পর্ব

থানায় বসে বসে ঝিমাচ্ছি। জার্নি করে আসার পর থেকে এখনো একটু শান্তি করে কোথাও বসে জিরিয়ে নিতে পারিনি। কিছুক্ষণের মাঝেই তন্দ্রার অতল গভীরে হারিয়ে গেলাম।
– আপনি কি ঘুমাচ্ছেন!
কারো কথার শব্দে তন্দ্রা কেটে গেলো।
– ঐ একটু তন্দ্রা চলে আসছে। আসলে এতটা পথ জার্নি করে আসছি তো তাতেই এখনো রেষ্ট করা হয়নি।
– থানার সামনের দোকানটায় গিয়ে চা খান আমি একটু কাজ শেষ করে আসছি।

থানার ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম।
– মামা মালাই চা হবে!
– না মামা এখন মালাই চা হইবো না।
– ওহ। তাহলে আর কি করবেন! একটা নরমাল দুধ চা দেন আর একটা গোল্ডিফ দেন। মাথাটা প্রচন্ড ধরছে ।
– মামা এখানে থানায় কি কোনো কাজ আছে! থাকলে আমারে কন আমার চেনাজানা লোক আছে। কিছুক্ষণের মাঝেই আপনার কাজ হয়ে যাবে।
আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দোকানদার মামার দিকে তাকিয়ে রইলাম এরপর জিজ্ঞেস করলাম – আপনি কতদূর পড়ালেখা করছেন মামা!
– আমি ছোট বেলায় খুব শয়তান আছিলাম। তিন ক্লাস পড়ার পর আর স্কুলের বারান্দায় পা দেওয়া হয় নি।

ক্লাস থ্রি পড়া একজন লোক যে কি না বলছে থানায় কোনো কাজ থাকলে তাকে বলতে সে কিছু সময়ের মাঝেই কাজ করে দিবে।

আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে পাশে থেকে একটা মেয়েলী কন্ঠে ভেসে আসলো- মামা চিপস দেন একটা।
কন্ঠটা অনেকটা চেনা চেনা লাগছে জন্য মেয়েটির দিকে ফিরে তাকালাম। বোরখা দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর কভার করা একজন। আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি। কারণ ঠিক এমনই একজনকে আমি অনেকটা সময় ধরে আমায় ফলো করতে দেখেছি। যখন পুলিশ স্টেশনে আসলাম তখন তাকে এই দোকানের সামনে দেখেছিলাম একটা বাচ্চার সাথে দুষ্টুমি করতে। নেহাতই বাচ্চার দিকে তাকাতে গিয়ে ওনার দিকে চোখ পড়ে যায়। এরপর ঐ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরও ওনাকে দেখেছিলাম।

ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মুখ থেকে বেড়িয়ে গেলো- আপনি কি আমায় ফলো করছেন!
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি চিপসের টাকা দিয়ে হনহন করে চলে গেলো। পিছনে থেকে কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু একবার ও পিছনে ফিরে তাকালো না।

– মামা আপনার চা আর সিগারেট।
– মামা আপনি ওনাকে চেনেন!
– না মামা। আজকের আগে কখনো আমার দোকানে আসছে বলে মনে পড়ে না।

হঠাৎ আমার কাঁদে কারো হাত। পিছনে তাকালাম।
– স্যার আপনি!
– কাকে চেনার কথা বলছেন!
– আমার মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমায় ফলো করছেন। কিন্তু যখনই তাকে জিজ্ঞেস করলাম আমায় কিছু না বলেই হনহন করে চলে গেলো।
– কোন দিকে গেলো!
– চলে গেছে। বাদ দিন।

উনিও এককাপ চা নিয়ে দুজনেই বসলাম টং এ।
– এই কেসটা নিয়ে প্রচুর প্যারায় আছি আর এর মাঝে সেখানে আপনার নাম্বার টা পেলাম।
– আমার নাম্বার কোথায় পেলেন!
– মিঞা বাড়িতে। স্মোকিং এর অভ্যাস ও আছে আপনার!
– যখন প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকি তখন একটু আধটু ফুঁকি।
– হারাধন আমাকেও একটা সিগারেট দাও। তো সিগারেট ধরালে কি মানসিক চাপ কমে যায়!
– কিছুটা প্রশান্তি মেলে। মনে হয় সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে সাথে মানসিক চাপটা উড়ে যাচ্ছে।
– তুমি আমার বয়সে অনেকটা ছোট আপনি বলতে কেমন অস্বস্তি লাগছে।
– তাহলে আপনি তুমি বলুন কোনো সমস্যা নেই।

তখন রাত আটটা হবে। যখন আমি আমজাদ হোসেন স্যারের বাইকে করে থানা থেকে বের হচ্ছি তখন ও সেই বোরখা পরিহিত মহিলা কে থানার সামনে দেখলাম আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। তার চোখ যেন আমায় কিছু বলতে চাচ্ছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতেই সে হঠাৎই অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।

আমজাদ স্যারের বাসায় এসে ওনার বউ আর তিন বছরের রাসফির সাথে পরিচিত হলাম। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া করে রুমে এসে শুয়েছি মাত্র তখনই রুমে রাসফির আগমন।
– পিচ্চি তুমি ঘুমাবে না!
– ঘুমাবো কিন্তু তোমার সাথে গল্প করতে আসলাম।
– ওহ আচ্ছা। তো কি গল্প করবে তুমি শুনি!
– তোমার ফোনে গেম আছে!
– ওহ আচ্ছা তাহলে এই গল্প করার জন্য তুমি আমার রুমে এলে বুঝি!
আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে । ঠিক তখনই রাসফির আম্মু রাসফিকে ডাকলো সাথে সাথেই চলে গেলো।

আমি বিছানা ছেড়ে উঠে জানায় দাঁড়ালাম বাইরের পরিবেশ দেখার জন্য। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি কে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তখনই দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি আমার দিকে হাত নাড়াতে লাগলো। আমি আরও স্পষ্ট ভাবে দেখার চেষ্টা করলাম। তখন সে একটা কাগজে বড় বড় লেখা আমার দিকে উঁচিয়ে ধরলো। লেখাটা বড় থাকায় স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছি সেখানে লেখা ” আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন এখানে থেকে চলে যান, নয়তো আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ”

তাহলে ইনিই সেই যে আমায় ফলো করছে আসার পর থেকেই। আমি যেন সেই লেখা কাগজটায় হারিয়ে গেছি। কে হতে পারে! এখানে আমার আসার কথা তো কেউ জানার কথা নয়!

হঠাৎই কাঁধে স্পর্শ পেয়ে ভয়ে চমকে উঠলাম।
– এই আমি! আমি !
আমায় ভয় পেতে দেখে আমজাদ স্যার বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকি বললো- এভাবে কি দেখছো! আর এভাবেই বা ভয় পেয়ে গেলে কেন!
– স্যার ঐ মহিলা আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু পরের বার যখন আমি আবার পিছনে ফিরে তাকালাম স্যার কে দেখানোর জন্য তখন সেখানে কেউ ছিলো না আর জায়গাটাও অন্ধকারে ছেয়ে ছিলো।
– স্যার ঐ ল্যাম্পপোষ্টের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো উনি।
– কি বলো এসব! এইটা একটা লোকাল রোড এই রাস্তায় এখানে কেন আশেপাশে কোথাও ল্যাম্পপোস্ট নাই।

আমি যেন অদ্ভুত এক ঘোরের মাঝে চলে গেলাম। তাহলে কি আমি ভুল কিছু দেখলাম! সব কি তবে আমার মনের ভুল! ভ্রম! তাহলে লেখাটা যেটা আমি দেখলাম সেটা তো মিথ্যা হবার কথা না। কিন্তু তখন তো আলো ছিলো এখন তো সেই জায়গা পুরোটা অন্ধকার।

– সারাটা দিন রেষ্ট করতে পারোনি জন্য এমন হচ্ছে হয়তো। তুমি বরং ঘুমিয়ে পড় কাল সকালে নাহয় কথা বলবো আমরা।
– ঠিক আছে।

আমজাদ স্যার চলে গেলো। কিন্তু আমি কি আসলেই ভুল কিছু দেখলাম! আসলেই কি সেখানে কেউ ছিলো না!

To be continue….