তিলকপুরের মিঞা বাড়ি পর্ব-০২

0
101

#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
২য় পর্ব

বেশ কিছুদিন সেই মায়াবী মেয়ের কলের আশায় দিন কাটিয়ে দিলাম। অপরিচিত কোনো নাম্বার মোবাইলের স্কিনে ভেসে উঠলেই মনে হতো এই বুঝি হাসনাহেনা কল করছে। কিন্তু যতটা আগ্রহ নিয়ে কলটা রিসিভ করি রিসিভ করার পর আগ্রহ শূন্যে মিলিয়ে যায়। খুব বেশি একটা সময় কাটানো হয়নি মেয়েটার সাথে কিন্তু এই ক্ষণিকের সময়টাতেই অসম্ভব এক মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি নিজেকে।

এরমাঝেই ঈদ চলে গেলো। আবার নিজের ব্যাস্ত জীবনে ফিরে আসা। রোজ ক্লাস ক্যাম্পাস বন্ধু এসবের মাঝে একধরনের ভুলতেই বসেছিলাম সেই তিলকপুরের মায়াবী মেয়েটাকে।

একদিন ক্লাস শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে গেছি। হঠাৎ আমার স্বপ্নে সেই মায়াবী মেয়ে। অদ্ভুত ভাবে আমায় তার কাছে ডাকছে। আমি ও ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কিছুটা যেতেই হঠাৎ মনে হলো পড়ে গেলাম। ঠিক তখনই চমকে উঠে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুললাম চারদিকে আলো কমে এসেছে তারমানে সন্ধ্যা নেমে গেছে। শরীরটা পুরো ঘেমে গেছে। এতক্ষণ খেয়াল করিনি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার মোবাইল ক্রমশ ভাইব্রেট করেই যাচ্ছে। চোখ মুছে মোবাইল হাতে নিলাম। অপরিচিত নাম্বার, রিসিভ করে সালাম দিলাম।

– আমি তিলকপুর থেকে বলছি। আপনি কি সুমন বলছেন!
তিলকপুর নামটা শুনে শরীরে শিহরণ দিয়ে উঠলো।
– হ্যাঁ, আমি সুমন। আপনার নাম!
– আমি আজাদ, আপনার বাসা কোথায়!
– রংপুরে। কেন!
– আপনাকে কালই একবার তিলকপুরে আসতে হবে।
– কেন!
– আসুন তারপর বলা হবে। আপনি কাল তিলকপুর পুলিশ স্টেশনে এসে দেখে করবেন ।
আমিও আচ্ছা বলে কলটা কেটে দিলাম। কিন্তু যে জায়গার আমায় একটা পরিবার ছাড়া অন্য কেউ আমাশ চিনেই না সে জায়গার পুলিশ আমায় কেন কল দিবে! তাছাড়া সেটাও তো মধ্য রাতের ব্যাপার। কেউ তো আমায় দেখেও নি। বিষয় টা প্রচন্ড ভাবাচ্ছে আমায়।

পরের দিন সকালের ট্রেনে রওনা দিলাম। কিন্তু বিপাকে পড়লাম তিলকপুরে ট্রেন থামে না। তাই জন্য তার আগের স্টেশনে নেমে বাকিটা পথ গাড়িতে গেলাম। মনে মনে খুশিও লাগছে হয়তো আবার সেই মায়াবী পরীকে দেখার লগ্ন এসে আমার দরজায় কড়া নাড়ছে।

সময় প্রায় ৩ টা। আমি পুলিশ স্টেশনে বসে আছি। একটু পরেই একজন পুলিশ এসে বললো আমায় ডাকছে ভিতরে।
– আসবো স্যার!
– হ্যাঁ আসুন। আপনি সুমন!
– হ্যাঁ স্যার।
– আচ্ছা চলুন একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

আমার সাথে তেমন কোনো কথা না বলেই উনি আমায় পুলিশ জিপে করে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে আসলো। আমি চারদিকটা ভালো করে দেখে নিচ্ছি।
– দেখুন তো আপনি এই জায়গাটা চিনেন কি না!
পুলিশের কথায় আমি আবার ওনার দিকে মনোযোগ দিলাম।
– কিছু বললেন আপনি!
– বললাম যে এই জায়গা টা কি চিনতে পারছেন!
– ঠিক চিনতে পারছি না স্যার। আর তাছাড়া আমার এই এলাকা চেনার কথাও না। কারণ আমি শুধু কিছু সময়ের জন্য তিলকপুর স্টেশনে নামছিলাম ট্রেন থেকে সেটাও মধ্য রাতে।
– তারমানে আপনি এই এলাকায় এসেছিলেন!
– হ্যাঁ।
– আপনি কি এই বাসায়টায় এসেছিলেন!
– অন্ধকার ছিলো তো তাই দিনের বেলা চিনতে সমস্যা হচ্ছে। বাসার ভিতরে গেলে হয়তো চিনতে পারবো।

তখনও আমার মনের মাঝে সেই মায়াবতীকে দেখার এক সমুদ্র পিপাসা। আমি শুধু সেই অপেক্ষায় আছি কখন সেই বাসায় ঢুকতে পারবো। কিন্তু তখনও আমার মনের মাঝে এই প্রশ্ন টা একবারের জন্য ও আসেনি আমায় কেন এই জায়গায় ঠিক এই বাড়িটার সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
– তাহলে চলুন ভিতরে গিয়ে দেখি আপনি চিনতে পারেন কি না!

ওনার কথা বলা শেষ হতে না হতেই আমি দরজায় নক করলাম।
– নক করতে হবে না বাসায় কেউ নেই। আর দরজা খোলাই আছে ।
উনি আমায় পাশ করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। আমিও ওনার পিছনে পিছনে বাড়ির ভিতরে আসলাম।
– ভালো করে দেখে বলুন তো আপনি কি এই বাড়িতে আসছিলেন!
আমি চারপাশটা ভালো করে দেখলাম – এটা তো হাসনাহেনাদের বাসা না!
– আপনি নাম ও জানেন!
– হ্যাঁ ।
– আপনি এই বাসায় কবে এসেছিলেন?
– আমার ঠিক মনে নেই তবে ২০/২১ রমজানে হবে হয়তো।
– আপনি ২০/২১ রমজানে এখানে এসেছিলেন!
– হ্যাঁ। আমি এ বাড়িতেই সেহেরি করেছিলাম ঐদিন।

এবার আমার কথা শুনে উনি রীতিমতো হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
– আপনি এই বাসায় ভোর রাতে খাবার খেয়েছেন!
– হ্যাঁ।
এবার ওনার মাঝে আগ্রহ বেশি দেখতে পাচ্ছি – বাসায় কে কে ছিলো ঐ দিন!
– একজন বৃদ্ধ তার বউ আর তার একটা নাতনি যার নাম ছিলো হাসনাহেনা।
– আচ্ছা কি কি হয়েছিলো ঐদিন কষ্ট করে আমায় একবার বলতে পারবেন!

আমি ওনার দুচোখে এক সমুদ্র পিপাসা দেখতে পাচ্ছি।
হঠাৎ কি উদ্ভট একটা গন্ধ নাকে আসলো।
– স্যার কেমন একটা গন্ধ আসছে এখানে!
– আচ্ছা চলেন বাইরে যাই। আপনি কি আজকেই চলে যাবেন?
– হ্যাঁ। আমায় ডাকার কারণটাই তো জানতে পারলাম না।
– আপনার কথা শুনে আমি কি বলবো সেটাই তো বুঝছি না। আপনি বরং আমার বাসায় থাকেন আজ। আমার আরও কিছু কাজ আছে সেটা শেষ করে আপনার সাথে কথা বলবো।
– আজ আমায় থাকতে হবে!
– চাইলে না থাকতেই পারেন। তবে না থাকলে পরে আবার আসতে হবে!
– তাহলে আজকে বরং থেকেই যাই। কিন্তু এই বাসায় কেউ নেই কেন!
– এটা নিয়ে আমরা রাতে কথা বলবো। এখন চলুন গন্ধটা তীব্র হচ্ছে ধীরে ধীরে।

পুনরায় ওনার জিপে করে থানায় ফিরে আসলাম ।

To be continue….