তিলকপুরের মিঞা বাড়ি পর্ব-০৮

0
89

#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
#৮ম_পর্ব
কিছুক্ষণের মাঝেই সবাই নিজেদের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। রুহী আমজাদ স্যারের সাথে তাদের রুমে গিয়ে ঘুমালো। আমি ও ধীরে ধীরে হেঁটে রুমে আসলাম। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো। হঠাৎই দরজার পাশে কারো ছায়ার উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে চমকে উঠলাম।
– কে! কে ওখানে!
এইটুকু সময়েই গলা শুকিয়ে কাঠখড়ি হয়ে গিয়েছে। ছায়াটা ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি জোরে চিল্লাতে যাবো ঠিক তখনই আমজাদ স্যার বললো- এই আমি। চিল্লাবা না। নয়তো ওরা জেগে যাবে।
– আপনি এভাবে চুপিচুপি আসছেন কেন!
– যাতে করে ওরা জেগে না যায়।
– কিন্তু আপনি এই অসুস্থ শরীরে এতো হাঁটা চলা করছেন কেন!
– আমার তো শুধু হাতে ব্যাথা পেয়েছি। পায়ে তো তেমন কিছু হয়নি।
– ওহ আচ্ছা।
– একটা বিষয় কিছুতেই আমায় ঘুমাতে দিচ্ছে না।
– কোন বিষয়!
– আজ দিনের বেলা যা দেখলাম এবং রাতে একটু আগে রুহীর সাথে যা ঘটলো। আমি তো জানি অশরীরী কখনো কারো খু*ন করতে পারে না। যদি ঐ লোকটা কাল রাতে হাসনাহেনা কে দেখে থাকে তবে রুহী এবং ঐ লোকের বক্তব্য একই। তাহলে ঐ লোক সত্যি কথাই বলেছে। যদিও আমি প্রথমে ওর কথা বিশ্বাস করিনি।
– এখন আপনি কি করবেন বলে ভাবছেন!
– তুমি ওঝাতে বিশ্বাস করো!
– তেমন একটা করি না।
– কাল রুহীকে নিয়ে ওঝার কাছে যাবো। তুমি কি বলো!
– উনি এমনিতেই ভয়ে আছেন। ওঝা কে দেখে যদি আরও ভয় পেয়ে যায়!
– আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না। এই একটা মামলা আমার ঘুম হারাম করে দিচ্ছে।
– এতো চিন্তা না করে আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন স্যার।
– তুমি ও ঘুমাও।

অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি। সকালে রাসফি এসে ডাকছে।
– আংকেল এই আংকেল!
চোখ খুলে দেখি রাসফি আমার পাশে বসে আছে আর রাসফির পিছনে রুহী দাঁড়িয়ে।
বা হাতে চোখ মুছে উঠে বসার চেষ্টা করছি কিন্তু শরীরের ব্যাথার পরিমান এতো বেশি যে উঠতেই পারছি না। আমায় চেষ্টা করতে দেখে রুহী এসে আমায় সাহায্য করলো।
– আংকেল আমাদের বাসায় না ওঝা এসেছে।
রাসফির কথা শুনে আমি রুহীর দিকে তাকালাম।
– গতকাল রাতের জন্য ভাবীও ভয় পেয়ে যায় তাই ভাইয়া বাসায় ওঝা কে ডেকেছে।
– আপনার মুখটা অনেক শুকনা শুকনা দেখাচ্ছে। শরীর খারাপ!
– ভোর রাত থেকেই জ্বর।
– ঔষধ খেয়েছেন!
– হ্যাঁ। দশটা বাজতে চললো আপনি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন। কোনো সাহায্য লাগবে কি!
– আপনি নিজেই তো অসুস্থ। আপনি রেষ্ট করুন আমি পারবো।

রুহী রাসফিকে নিয়ে চলে গেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম। ডাইনিং স্পেসে ফ্লোরে বসে কি যেন সব করছে একটা লোক। মনে হয় উনিই ওঝা।
রুহী আড় চোখে আমার দিকে তাকালো। ইশারায় বললো এটাই ওঝা। তবে ওঝার কাজ তার পছন্দ হচ্ছে না এটা তার ইশারায় বুঝতে পারলাম।

এখন দুপুর এবং বিকেলের মাঝের সময়টা। রুমে বসে আমার পছন্দের হাইওয়ে ব্যান্ডের ঘোরগাড়ি গান টা শুনছি। সেই সময় ভাবী রুমে আসলো। ভাবীকে দেখেই গানটা বন্ধ করলাম।
– কি অবস্থা এখন!
– মোটামুটি ভালোই। স্যার কোথায়!
– থানা থেকে কয়েকজন এসেছে উনাদের সাথে গল্প করছেন।
– ওহ আচ্ছা।
– তোমার বাসায় জানিয়ে দিয়েছ তোমার এই অবস্থার কথা!
– শুধু শুধু কেন টেনশন দিতে যাবো বলুন।
স্যার ও রুমে আসলো – কি অবস্থা সুমন!
স্যার কে দেখে ভাবী জিজ্ঞেস করলো- উনারা চলে গেলেন!
– হ্যাঁ। তারপর কি অবস্থা এখন!
– ভালোই। আমার টিকেট কি কাটা হয়ে গেছে স্যার!
– কিসের টিকেট!
– আমার বাসায় ফেরার।
ভাবি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো- এই ছেলে বলে কি! এই অবস্থায় তুমি বাসায় যাবা! কোনো বাসায় যাওয়া হবে না। সুস্থ হয়ে তারপর বাসায় যাবে।
– এতোদিন আপনাদের জ্বালাবো?
– হ্যাঁ।
রুহী একটা ট্রে করে চার কাপ চা নিয়ে আসলো।
– তুমি চা বানাতে গেলে কেন!
– সবাইকে এখানে দেখলাম তাই ভাবলাম চা বানিয়ে নিয়ে আসি। একটা আড্ডা হয়ে যাবে।
চা হাতে নিয়ে স্যার কে বললাম – আপনি কি ওঝার কথা বিশ্বাস করছেন!
স্যার চা’য়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো- কোন কথা!
– উনি যে বললো এটা অনেক শক্তিশালী আত্মা। এর অনেক ক্ষমতা আছে। যে কোনো কিছুই করতে পারে। প্রতিশোধ না নিয়ে এখানে থেকে যাবে না। এগুলো আপনার বিশ্বাস হয়!
ভাবী বললো- বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে! হরর মুভিতে তো এমনটাই হয়।
– ভাবী ওটা মুভি। আমি ও তো মার্ভেল মুভি দেখি। তাই জন্য কি আমি চাইলে সেখানের যে কোনো সুপার হিরোর মতো হতে পারবো!
– তাছাড়া তুমি এবং তোমার স্যার দুজনেই তো দেখেছিলে।
– আমরা জলজ্যান্ত মানুষ দেখেছি কিন্তু রুহী পু… ( স্যার হাতের ইশারায় আমায় চুপ করতে বললো। নয়তো রুহী ভয় পাবে)
রুহী খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো- আপনি মার্ভেল ফ্যান!
– হ্যাঁ।
– পছন্দের ক্যারেক্টর!
– থর।
– আজ অনেক আড্ডা হয়েছে সুমন সারাদিন রুমে ছিলে চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

স্যার এবং আমি দু’জনেই রাস্তায় রিকশা করে কোথায় যাচ্ছি আমি ঠিক জানি না। স্যার ও কিছু বলছে না।
কিছুটা সময় নিরবতা এরপর স্যার বললো- ওঝা কে ডাকা শুধু মাত্র তোমার ভাবীর কথায়। ওঝা’র একটা কথাও আমার বিশ্বাস হয়নি। তুমি তখন বললে না আমরা জলজ্যান্ত মানুষ দেখেছি কিন্তু রুহী ঝ*লসে যাওয়া কোনো আত্মা কে দেখেছে! আমিও এটাই ভাবছি। তবে কি রাতে যা ছিলো সে আত্মা ছিলো এবং দিনের জন কি কোনো মানুষ ছিলো! যে হুবহু দেখতে হাসনাহেনার মতো!
– এটা কি করে হতে পারে! রাতে ও তো কেউ ইচ্ছে করে রুহীকে ভয় দেখাতে পারে।
– বাসায় তুমি আমি আর তোমার ভাবী। আমরা তো কেউ রুহীকে ভয় দেখাবো না। তাছাড়া বাইরে থেকেও তো কেউ আসতে পারবে না বাসার ভিতরে। এই জন্য রাতে ওটা আত্মাই ছিলো।
– আপনার যুক্তি অনুযায়ী সব কিছুই তো ঠিক। কিন্তু আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি!
– সেই রাতে যারা ছিলো তাদের মাঝে চেয়ারম্যানের ছেলে এবং আর একজন বেঁচে আছে। এতোদিন বাইরে ছিলো আজ এসেছে। ওর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি।
– তাহলে আমায় সঙ্গে নিলেন কেন!
– তোমার সাথে কিছু কথা আছে। আমার মনে হয় আমি হ*ত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। আর এইসব হ*ত্যা কোন ভুত করছে সেটাও খুঁজে বের করতে পেরেছি।

To be continue….