তুই আমার কাব্য পর্ব-৪০

0
1636

তুই_আমার_কাব্য 🍂

#Writer: Anha Ahmed
#Part: 40
.
🍁
.

মানুষ খামোখা ছুড়ি কাঁচি দিয়ে খুন করে। এরজন্য আবার ধরা পড়ে বছরের পর বছর জেলও খাটে। কি দরকার? কাউকে মারার যদি প্ল্যাণ থাকেই তাহলে সবথেকে সহজ উপায় অতিরিক্ত ভালোবাসা। শতভাগ নিশ্চিত মারা যাবেই আর তা না গেলেও কোমায় নিশ্চয় যাবে। এর জন্য কোনো শাস্তিও পেতে হবে না। অবশ্য ভালোবাসার জন্য শাস্তি পাওয়া ব্যাপারটা দুনিয়ায় এক্সজিস্ট করে কিনা তা জানা নেই। অনেক ব্যর্থ প্রমিক প্রেমিকা হয়তো শাস্তি পাওয়া ব্যাপারটায় সমর্থন জানাবেন। কিন্তু আপাতত মেঘলার কাছে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। এই এইটুকুতেই সে শ্বাসকষ্টের রোগী। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আইসিইউতে ভর্তি হতে হবে। নির্ঘাত কাব্যর মার্ডারের কোনো প্ল্যান আছে। কোনোকিছুর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। ভাবতে ভাবতে মেঘলা ক্লাসে প্রবেশ করছে।

ক্লাস শেষে তনু ও মেঘলা একসাথে কথা বলে বের হয়ে আসছে। হঠাৎ করে হাতের টান খেয়ে গাছের সাথে হাতের কিছু অংশ ছুলে গেলো। ব্যাথায় হাত বুলিয়ে তনুকে এক ধমক দেওয়ার আগেই তনু মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করলো। তনুর এমন আচরনে বিব্রত হয়ে ধমকের সুরে বলে,

– হঠাৎ করে লুকোচুরি খেলছিস কেনো? মাথা খারাপ হয়েছে নাকি জ্বীনে ধরেছে।

– পেত্নী ধরেছে বাট আমাকে না তোর জামাইকে।

– মানে?

– ওই দ্যাখ সামনে তাকা। রাহি দা লিডার অফ পেত্নী কাব্য দুলাভাইয়ের পেছনে ছুটছে।

– ঠাটিয়ে এক চড় আর এক ল্যং মারতে ইচ্ছে করছে তোকে। এর জন্য লুকানো লাগে তোর?

– আরে রাহির মুখের রিয়েকশনটা দেখ। বিষয়টা সিরিয়াস কিছু। নিশ্চয় তখনকার বিষয়ে কাব্যর সাথে কথা বলতে যাচ্ছে।

– সবজান্তা শমশেরের বউ। দুনিয়ায় আর কিছু নাই যে ওই বিষয়েই কথা বলবে।

– নাহ্! আপাতত রাহির মাথায় নাই। রাহিকে দেখে এতদিনে যা বুঝেছি ও কাব্যকে লাইক করে। সো ও যদি সত্যিই লাইক ফাইক কিছু করে তাহলে এই বিষয় ছাড়া ওর মাথায় কিছু ঘুরছে না। কিন্তু দেখার বিষয় সেইটা না। দেখার বিষয় হলো কাব্য দুলাভাই তোর অনুপস্থিতিতে কি বলে বা করে। আচ্ছা তুই ভেবে দেখ তো! কেনো তোদের বিয়ের কথা জানালো না।

সত্যিই তো! ব্যপারটা ভাবাচ্ছে মেঘলাকে। ওরা তো পালিয়ে বিয়ে করে নি অথবা বাল্য বিবাহও না। তাহলে কেনো জানালো না? তনুর মাথা যে একদম গোবরে ভরপুর তা একটু ভুল প্রমানিত হলো। মেয়েটা মাঝে মাঝে কাজের কথাও বলে।

কাব্য গাড়ির চাবি নিয়ে রনির সাথে কথা বলতে বলতে হেটে যাচ্ছে। পেছন থেকে রাহির গলার আওয়াজ পেয়ে দুজনেই পিছন ঘুরে তাকালো। রাহি বেশ দ্রুত হাঁটছিলো। তিন ইঞ্চি লম্বা হিল পড়ে দ্রুত হাঁটতে গিয়ে বেশ হাঁপিয়ে গেছে। রনির রাহির হাঁপাতে দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করলে রাহি ওকে এভোয়েড করে কাব্যর উদ্দেশ্য বলে,

– কাব্য! তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার একান্তে।

কাব্য রনির দিকে তাকালে দেখে রনির চেহারাটা বেশ ছোট হয়ে গেছে। কাব্যর ব্যপারটা বেশ খারাপ লাগলো আর রাহির উপর রাগও হলো। রাগটা স্বাভাবিক রেখে রনিকে গাড়ির চাবি দিয়ে বললো,

– গাড়িটা পার্কে রাখা আছে। বের করে নিয়ে বস একটু আমি আসছি। আর মেঘলাকে দেখলে গাড়িতে ওঠে অপেক্ষা করতে বলিস।

– ওকে

রনি চলর যাওয়ার পর কাব্য পকেটে হাত দিয়ে রাহির দিকে এক বিব্রত দৃষ্টি দিয়ে বললো,

– কি বলবি বল তাড়াতাড়ি!

– তোর গাড়িতে মেঘলা যাবে কেনো?

– এইটা কি তোর গুরুত্বপূর্ণ কথা?

– না তবে কথাগুলো ওই মেঘলাকে নিয়েই।

– দুঃখিত তবে! ওকে নিয়ে কোনো কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই।

– তুই বলতে না ইচ্ছুক হলেও আমি জানতে ইচ্ছুক এবং জানতে আমি চাই। সেই প্রথমদিন থেকে দেখে আসছি। মেঘলার প্রতি তোর এতো কিসের দুর্বলতা? নিজেই ব্যাথা দিয়েছিলি সবার সামনে কিন্তু ঔষধ দিলি লুকিয়ে। সবার সামনে ঝাল খাইয়ে অত্যাচার করেছিস ঠিকই কিন্তু আমাদের অগোচরে রনির সাহায্যে আইসক্রিম কিনে দিলি। আবিরের বাইক লিক করিয়েছিলি জুনিয়রদের দিয়ে। সব অগোচরে করলেও আমার থেকে লুকাতে পারিস নি। কেনো করেছিস এগুলো? ওগুলো তো তাও লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু আজকে তো সম্মুখে। ভালোবাসিস জিজ্ঞাসা করলে বলেছিস না। তাহলে এগুলো কি? ও তোর গাড়িতে কেনো যাবে কেনো? এতো কিসের ঘনিষ্ঠতা? তুই কি ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিস?

কাব্য প্রথমে একটু অবাক হলে তারপর একটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে শুধু কথা শুনছিলো। রাহি যে ওর প্রতি একটু দুর্বল সেইটা কাব্যর অজানা নয়। কিন্তু শুধুমাত্র বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চায় না বলে গায়ে মাখছে না। রাহির কথা শেষে কাব্য একটা স্মাইল দিয়ে বললো,

– হ্যা রে। ওকে আমি ডেট করছি। আজকে রুম ডেট করবো তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। হয়েছে?

– দ্যাখ একদম ফাইজলামি করে কথা কাটানোর চেষ্টা করবি না। তোর সাথে ওর কিসের সম্পর্ক?

– আরে বাবা বললোই তো। চাচাতো চাচাতো ভাই।

– আমাকে বোকা পেয়েছিস? গাঁজাখুরি গল্প শুনায়ে চলে গেলো আর তাতে বিশ্বাস করবো?

– আচ্ছা চিল! আমি সত্যি বলছি বাট এরপর আর জিজ্ঞাসা করবি না ওকে!

– একদম সত্যি বলবি।

– হান্ডেট পার্সেন্ট। ও আমার ভাবির আপন ছোট বোন। আব্বুর বিজনেস পার্টনারের মেয়ে। সো পারিবারিক ও ব্যবসায়িক দুই দিক থেকেই মেঘলার সাথে আমি সম্পর্কে জড়িত। এরকম আরো কয়েকটা সম্পর্ক আছে। বুঝেছিস?

– মানে? তোর ভাবির বোন? আগে তো বলিস নি।

– জানতাম না তো। ভাইয়া ভাবি পালিয়ে বিয়ে করেছিলো। তারপর ভাবির পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিলো না। কয়েক মাস আগে সেইটা সেটেল হলো।

– সত্যি বলছিস তো! আর কোনো সম্পর্ক নেই তো?

– আছে তো! বউ লাগে আমার। কয়েকদিন আগেই বিয়ে করেছি।

রাহি কাব্যর হাতে হালকা চড় মেরে হেঁটে যাচ্ছে। কাব্যর ঠোঁটের এক কোণে এক চিলতে হাসি ফুঁটে ওঠলো হেঁটে যেতে যেতে।

আর এদিকে মেঘলা আর তনু একটা গাছের পেছনে পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনে হতবাক। দুজনেই জায়গা পরিবর্তন করে একটা বেঞ্চে বসে পা দুলিয়ে স্ট্যচু হয়ে বসে চুইংগাম চাবাচ্ছে। দুইজনের দৃষ্টি সামনে। লক্ষ কোনো কিছুই না। শুধু তাকিয়েই আছে। কেউ কারো দিকে না তাকিয়েই এক ধ্যানে বসে কথা বলে যাচ্ছে। মূলত তনু কথা শোনাচ্ছে। বিষয়টা কাব্য স্প্রে দেওয়া নিয়ে। তনু বলেছিলো কিন্তু মেঘলা সেদিন বিশ্বাস করে নি বলে আজ তনুর কথা শুনে যাচ্ছে সে। তনু এবার পাশ ফিরে মেঘলাকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– আচ্ছা! ওইগুলো না হয় বুজলাম কিন্তু মলম লাগানোর ব্যপারটা কি রে? বলিস নি তো! কত কিছু লুকায়ে গেছিস তুই? তুই আমাকে আর বান্ধবী মনে করিস না।

– হয়ছে ন্যাকাশষ্টি। এতো নেকামি করা লাগবে না। বলছি।

মেঘলার সবকিছু খুলে বলার সাথে সাথে তনুর মনে উঁকি দিলো আরেক প্রশ্ন। প্রশ্নটা হলো,

– চিরকুট? কিসের চিরকুট? দুলাভাই লিখতো?

– হুম

– অঅঅঅঅঅ হাও কিউট। প্রেম তো ভালোই করেছিস।

– কিসের প্রেম? ফালতু কথা বলবি না। কোনো প্রেম ট্রেম করি নি। হারাম সম্পর্কে জড়ায় নি আমরা। সম্পূর্ণ হালাল সম্পর্কে আছি বুঝেছিস?

– চিরকুট আদান প্রদান হয়েছে। সাধু সাজতে এসো না। হুহ! তুমি তলে তলে টেম্পু চালাও আমি বললে হরতাল?

– ইস! কি কথা! আর কিছু পেলি না? শেষে এই গান? আরে আমি তো জানতামই না চিরকুট ওনি পাঠাতেন। আর জানবোই কিভাবে? আমি তো কল্পনাও করি নি। ব্যবহারটা কি করতো দেখিস নি। যেখানেই দেখেছে দু চারটা কথা না শুনালে ভালো লাগে নি ওনার। এখনো করে। কথায় কথায় ‘ একটা চড় লাগাবো ‘। ব্যাটা খাটাইস।

– তো বুঝলি কিভাবে?

– গোয়েন্দাগিরি করে হা হা

– আন্দাজ করলি কি করে?

– মনে আছে একদিন আমাদের স্যার বাহিরে বের করে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো?

– হুম হুম আছে আছে। তো?

– সেদিন ওনি এসেছিলো না স্যারকে ডাক দিতে? তখন যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলো ওনার জিনিস অন্য কেউ কেড়ে নেওয়ার দুঃসাহস যেনো কেউ না করে। খুব ভুল না হলে কথাটা ওনি বলেছেন সেদিন সকালে আবির ভাইয়ার সাথে নাস্তা করেছিলাম ভার্সিটিতে এসে তাই। আর বাহির থেকেও যে কাগজ টা এসেছিলো সেটাও আমি নিশ্চিত ওনি করিয়েছিলেন শাস্তি দেওয়ার জন্য।

মেঘলা তনুর দিকে তাকিয়ে মুখটা ছোট্ট করে কথাটা বলে। তনু চোখ ছোট ছোট করে মেঘলাকে দু তিনটে চড় হাতে দিয়ে রাগি গলায় বললো,

– চুন্নিইইই! তাহলে সেদিন দোষ আমার ছিলো না। তোর জন্য রোদে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো। আর তুই আমাকে দোষরোপ করেছিলি। তুকে আমি মেরে ফেলবো।

– আশ্চর্য আমি জানতাম নাকি তখন।

– তো? কখন জেনেছিস?

– জেনেছি তার কিছুদিন পর। আরেকদিন একটা চিরকুট পাঠায় খুব বৃষ্টিতে। যদিও ওনি চিঠিটা প্রটেক্টর সহ পাঠচিয়েছিলেন কিন্তু আমার গাফিলতির কারণে ভিজে যায়। শুধু প্রথম দুই লাইন পড়তে পারি যার দ্বিতীয় লাইনটা ছিলো ওইদিনের দাঁড়িয়ে থাকা ওই কথাটাই। এমনিতেই কাব্যর ভাইয়ার কথাটা ভাবাচ্ছিলো। কেনো বললেন? কিসের পরিপ্রেক্ষিতে বললেন? তা মধ্যে চিঠিটায়ও ও কথাটা লেখা। দুই লাইন পড়া যাচ্ছিলো বলেই বারবার পড়ছিলাম। তখন থেকেই কাব্য ভাইয়াকে…

– এখনো তোর ভাইয়া লাগে?

– আরে ধুর! কথার মাঝখানে কথা বলিস।

– জামাইকে সবার সামনে ভাইয়া বলিস ঠিক আছিস তাই বলে সবসময়?

– হুহ! আমি সারাজীবন ভাইয়াই বলবো।

– খুবই ভালো। এরপর বল। কি হয়েছে?

– কোথায় ছিলাম?

– কাব্য ভাইয়াতে..

– হুম! তো ওনাকে সন্দেহ করার বল ওনাদের বাড়ি গেলাম। তারমধ্যে আপু গিয়েছিলো বাসায়। কিছু কেনা কাটার জন্য একটা লিষ্ট এনেছিলেন। ওইটা লিখেছিলেন কাব্য ভাইয়া। ওফ্! সেদিন ওই লেখা দেখে আমার মধ্যে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গিয়েছিলো। যেনো তেনো করে নিজেকে কন্ট্রোল করেছিলাম। তবুও যেনো বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তারপর আপু ওর বাড়ি নিয়ে গেলো। কাব্যর রুমে ডুকে এক সুযোগে ওর হাতে লেখা ভালো করে চেক করলাম। কিন্তু কোথাও না ঘুড়ি আর রঙ্গিন কাগজের ছিটেফোঁটাও পাচ্ছিলাম না ওনার ঘরে। তারপর ছাদের চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে লুকানো অবস্থায় পাই আরো দুটো বানানো ঘুড়ি। জানিস অজান্তেই খুব আনন্দ হয়েছিলো। কেনো যেনো খুব ভালোলাগছিলো জানতে পেরে অচেনা মানুষটা কাব্য ভাইয়া।

– হায় হায়! কেয়া কারো হায়! কুছকুছ হোতাহে?

– ভালো গান পারো তো? নেক্সট প্রোগ্রামে তোমাকে ওঠিয়ে দেবো স্টেজে।

পেছন থেকে এ কথা শুনেই দুজনেই পেছন ঘুরে তাকিয়ে আবার সামনে ঘুরে একজন আরেকজনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখেই একি প্রশ্ন। ‘ সব কি শুনে ফেলেছে? ‘

চলবে…… ❤