তুই যে আমারই পর্ব-৩৮+৩৯

0
3870

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 38
সেদিনের পর থেকে আঁখি একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলেনা। শুধু জানালার ধারে চুপটি করে বসে থাকে। আর আয়াজ সে যেনো ভিতরে ভিতরে গুমড়ে মরছে। যা কাউকে না পারছে দেখাতে না পারছে বলতে। ভেতরটায় কেনো জানি অনুশোচনা ফিল হয়। বারবার মনে হচ্ছে কোথাও একটা তার ভুল হচ্ছে। কিন্তু কি?

আগে আঁখি রোজ ফোন করে আয়াজের খবরাখবর নিতো। কিন্তু এই একমাস কোনো খোঁজই নেইনি। কেন নিবো? যে কিনা নিজের সন্তানকে ইলিগ্যাল বলে তার? একটিবার কি জিজ্ঞেস করা যেতো না আমাকে? কেন আয়াজ কেন এমন করলেন আমার সাথে? আসলে ভুলটা আমারই। আমি যদি সেদিন বাইরে ঘুরতে যেতে বলার জন্য না বলতাম তাহলে আজকে আমাকে এই দিনটা দেখতে হতোনা। আচ্ছা আয়াজ আপনারকি আমার কথা একটিবারও মনে পরছেনা। কিভাবে পারছেন এভাবে আমার থেকে দূরে থাকতে? পারবেনই বা না কেন? এখন আর আমার প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই। কিন্তু আয়াজ আমি আপনাকে ক্ষমা করবো না। অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে। এখনো দিচ্ছেন। মনে মনে এসব বলছে আর কাঁদছে।

এদিকে আঁখির ডেলিভারির ডেটও আস্তে আস্তে ঘনিয়ে আসছে। আঁখির এখন ডেলিবারির সাড়ে আটমাস চলছে। কিন্তু শরীরের কোনোকিছু ঠিক নেই। যা নিয়ে সবার অনেক ভয়। আর ঠিক থাকবেই বা কি করে? যেসময় সবথেকে বেশি কেয়ার খাওয়া দাওয়া হাসিখুশি থাকা উচিত? সেসময় টা কাটছেই অনিয়মেই। নেয় কোনো যত্নতা না আছে কোনো ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া। তার উপর এতো অল্প সময়ে প্রেগন্যান্ট। কম্পলিকেট তো থাকবেই। একটা মানুষ কতক্ষণ বুঝিয়ে শুনিয়ে যত্ন নিবে? যদিনা নিজে নিজের প্রতি যত্নশীল হয়? আর তাছাড়া এই সময় সবার থেকে বেশি প্রয়োজন নিজের স্বামীর ভালোবাসার। কিন্তু সেতো তা পাচ্ছেই না উল্টো লাঞ্ছনায় ভরিয়ে দিচ্ছে। যে সময়টায় সবথেকে বেশি তাকে প্রয়োজন অথচ সেই নেই।

রাতে আয়াজ বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুমের লাইটটা অফ করে শুয়ে আছে। চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। কজ মাথাটা ভিষণ ব্যথা করছে। ইদানিং ঘনঘন মাথাটা ছারা দিয়ে ওঠে। কিছু যেনো একটা মনে করতে চাইছে। বাট পারছেনা। এর মধ্যে রোজিনা চৌধুরী ছেলেকে ডাকতে আসে খাওয়ার জন্য। কিন্তু সেই একিই জবাব। খাবেনা সে। খিদে নেই। ব্যর্থ হয়ে মুখটা ছোট করে চলে গেলেন।

রাতে আঁখি কিছুতেই ঘুমুতে পারছেনা। কজ ভিষণ খারাপ লাগছে। উঠে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করছি। তাও ভালো লাগছে না। এবার যেনো মনে হচ্ছে ভিতর থেকে নাড়ী ভুড়ি সব বেরিয়ে আসবে। দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ে গেলাম এবং বেসিংয়ে গড়গড়িয়ে বমি করে দিলাম। কেউ নেই যে ডাকবো। বমি করে ওখানেই নেতিয়ে বসে পরলাম। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। শরীরটা ভিষণ টায়ার্ড লাগছে। প্রায় আধা ঘণ্টা মতো ওখানেই বসে ছিলাম ওভাবে।

এদিকে আয়াজের চোখেও কোনো ঘুম নেই। উঠেই রুমের মধ্যে ছটপট করছি আর এদিক ওদিক হাটছি। মনে হচ্ছে তার খুব কাছের কেউ কষ্টে আছে। ভিতরটায় ভিষণ অস্থির অস্থির করছে। এটায় হয়তো ভালোবাসার টান।
-আচ্ছা আঁখি কেমন আছে? ও ঠিক আছোতো? পরক্ষণেই ভাবলো হটাৎ করে ওর আঁখির কথা কেন মনে পরলো? উফফ কি ভাবছি কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। দুহাতে মুখটা ডেকে ডিভানের উপর বসে রইলাম। আচ্ছা একটা কল করে জিজ্ঞেস করি কেমন আছে? এতো রাতে কি সে না ঘুমিয়ে জেগে আছে? বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিলাম। রিং হতেই বুকের ভিতর কেমন যেনো ঢিপঢিপ করছে।

ফোনের রিংটোনের শব্দ হতেই আঁখি কোনোরকম দেওয়াল ঘেষে উঠে দাড়ালাম। আস্তে আস্তে হেঁটে ফোনের কাছে গিয়ে ফোনটা হাতেই স্কিনে সেই চির চেনা নামটি দেখতেই বুকের ভিতর কেমন উতাল পাতাল ঢেউ শুরু হয়ে গেলো। কিন্তু সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে না সে রিসিভ করবেনা। আর তাই হলো কুট করে লাইনটা কেটে দিলো।

এদিকে আয়াজ ও কম যায়না। সেও বারবার কল দেওয়ায় ব্যস্থ। কিন্তু ওপর পাশ থেকে একটাই রেসপন্স পাচ্ছে। দা নাম্বার ইজ বিজি নাও। শেষে আঁখি বিরক্তি হয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিয়ে শুয়ে পরে।

আয়াজের মাথার ব্যথাটা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অসম্ভব যন্ত্রণা করছে আর যেনো নিতেই পারছেনা। দ্রুত ডেস্ক থেকে ঔষধ টা নিয়ে পানি দিয়ে মুখে পুরে নেয়। মাথাটা দুহাতে চেপে ধরে সহ্য করে আছে কোনোরকম।

রোজিনা চৌধুরী আগে থেকেই হসপিটালে কেবিন বুকিং দিয়ে রেখেছে। যাতে আঁখির ডেলিভারিতে কোনো প্রবলেম না হয় তা নিয়ে। এরমাঝে সপ্তাহ খানিক কেটে যায়।

আজকে সকালে আয়াজ নাস্তা না করেই অফিসে বেরিয়েছে। কজ একটা জরুরি মিটিং আছে তাই। মিটিং করানোর সময় সেই মাথা ব্যথাটা আবার ছারা দিয়ে ওঠে। তবুও ওদিকে ওতো পাত্তা না দিয়ে মিটিংটা শেষ করলো। দেন কেবিনে গিয়ে মাথাটা চেপে ধরে বসে আছে। কিন্তু এবার যেনো আর সহ্যই করতে পারছেনা। হটাৎ করেই আয়াজ ওখানেই সেন্সলেস হয়ে পরে যায়। ম্যানেজার সাহেব কেবিনে আসছিলেন ডিলটার ফাইলটা নিয়ে। কজ ওখানে আয়াজের কিছু সিগনেচার বাকি ছিলো। আয়াজ বলেছে কেবিনে গেলে সাইন করে দিবে। তাই এসে আয়াজের কেবিনের সামনে নক করতে থাকে। কিন্তু কোনো রেসপন্সই পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আস্তে করে দরজাটা ওপেন করতেই দেখলো আয়াজ সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। দ্রুত সবাই এসে আয়াজের চোখে মুখে পানি ছিটাতে থাকে। কিন্তু কোনো রেসপন্স পাচ্ছে না দেখে হসপিটালে নিয়ে যায়। এবং বাসায় ফোন দিয়ে আয়াজের সিচুয়েশন জানায়।

বাসার সবাই দ্রুত হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। নুরী রহমান ও হাসান চৌধুরী ও হসপিটালে যায়। কিন্তু আয়াজের ব্যপারটা আঁখির কাছ থেকে হাইড করে। শুনলে কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে পরবে। যা এই সময়ে মোটেও ঠিক হবেনা। কোনোরকম বুঝিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছে। রোজিনা চৌধুরী ভিষণ কান্না করছে। নুরী গিয়ে রোজিনা চৌধুরী কে সামলায়।
-বোনরে আমার ছেলেটার সাথে এমন কেন হচ্ছে বলতে পারবি। কেমন লাগছে কি হয়েছে? কিছুই বলেনা ছেলেটা। আমি যে আর নিতে পারছিনা।
-কেঁদো না আপা সব ঠিক হয়ে যাবে।

ডক্টর এসে বলল চব্বিশ ঘণ্টার অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এখন কিছুই বলতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত রোগীর সেন্স ফিরছে। রাতে ইফাজ আর আলতাফ চৌধুরী ছিলেন। বাকিদেরকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
পরেরদিন আয়াজের সেন্স ফিরতেই ডক্টর জিজ্ঞেস করে উঠলো
-মিঃ আয়াজ কেমন লাগছে?
-জি ভালো।
-মাথায় ব্যথা করছে কি?
-হালকা। বাসার সবাই কোথায়?
-জি ওয়েটিং রুমে। আপনি ওয়েট করুন আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-হুমম।
দেন আয়াজ গম্ভীর হয়ে বসে আছে। সবার সাথে দেখা করেই জিজ্ঞেস করে উঠলো আঁখি কোথায়?
এতে সবাই এতে একটু অবাক হলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিলো
–হুম আছে বাসায়। একটু মন খারাপের সাথেই বলল কথাটা। কিছুক্ষণ আয়াজ চুপ থেকে হটাৎ করেই নুরী রহমানকে জড়িয়ে ধরলো। এবং হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। আর বলতে লাগলো
-ছোট আন্টি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি বুঝতে পারেনি ওইদিন। আঁখিকে ওভাবে না বুঝে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। মনে অনেক আঘাত করেছি। আমার সন্তানকে অস্বীকার করেছি। বিশ্বাস করো ছোট আন্টি আমার মনেই ছিলো না। কিন্তু আমার এখন সব মনে পরেছে। আমিযে আমার ভালোবাসাটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। না জানি বউ বাচ্চাটার কি হাল এখন। আমি কি করে আঁখির কাছে মুখ দেখাবো? কি করে আমি ওর সামনে যাবো? আমি যে ওর এই ছোট্ট মনে অনেক বড়ো আঘাত দিয়ে ফেলছি। আমি পারিনি আমার স্ত্রী সন্তানকে দেখে রাখতে। যে সময়টাতে আমাকে ওদের বেশি প্রয়োজন ছিলো সেসময়ই আমি ওদের আমার কাছে রাখতে পারেনি। আমি পারিনি খালামনি আমি পারিনি। বলছে আর অজোরে কাঁদছে।

-নুরী রহমানও কাঁদছে। কাঁদিসনা বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর ভালোবাসা দিয়ে মেয়েটার সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিস। দেখবি সব আগের মতো হয়ে যাবে।
-হুম খালামনি আমি এখনি যাবো।
-নাহ বাবা এখননা। তুই এখনো সুস্থ নস। আগে তুই ফিট হ। দেন কালকেই যাস। প্লিজ আব্বুটা আমার কোনো পাগলামো করিসনা।
-হুমম

পরেরদিন
আঁখি বসে বসে চুলে তেল লাগাচ্ছিলো। তেল লাগানো শেষ হতেই চিরুনি দিয়ে মাথাটা আঁচরাতে লাগে এরমধ্যেই দরজায় নুরী রহমান নক করে। ফ্রুটস কেটে নিয়ে এসেছে মেয়ের জন্য। আঁখি চিরুনিটা হাত থেকে রেখে হেঁটে যেতেই স্কার্টের সাথে লেগে তেলের বোতলটি পরে যায়। এবং দূর্ভাগ্যবশত ওখানেই পা পিচলে নিচে পরে যায়। সাথে সাথেই আঁতকে চিল্লিয়ে উঠে

-ওহহহ মাগোগোগোগোগো।
নুরী রহমান মেয়ের চিৎকার শুনেই দরজা ধাক্কিয়ে বারবার বলে উঠে
-ককি হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়েছে? দরজাটা খোল?
-আহহহ আমমমমমম্মু
-নুরী রহমান ফলের প্লেটটা নিচে ফেলে দিয়ে দ্রুত এক্সট্রা চাবি এনে ডোর ওপেন করেই নিচে মেয়েকে পরে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে। পুরো ফ্লোর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বাসায়ও কেউ নেই। তিনিও মেয়ে মানুষ একা কিছুতেই পারছেনা। আদিফকে আসতে দেখে
-আদিফ বাবা আমার ওবাড়িতে কল দে তাড়াতাড়ি। গো ফাস্ট!

আদিফ দ্রুত আয়াজদের বাড়ির ল্যান্ডফোনে কল দিয়েছে। ওই সময় আয়াজ বের হয়েছে তাও আঁখিদের বাড়ি উদ্দেশ্যে বেরোনোর । ল্যান্ডফোনে কল আসতেই রিসিভ করে..
-হ্যালো!
-হ্যালো আয়াজ ভাইয়া!
-হ্যাঁ আদিফ বল!
-ভাইয়া আপু ফ্লোরে আচার খেয়ে পরে গেছে। রক্তে ভরে গেছে পুরো ফ্লোর। অনেক চিৎকার করছে। বাসায় কেউ নেই তোমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলছে। ফোনেই আয়াজ তার প্রিয়তমার ও মাগো ও মাগো চিৎকার শুনছে। পৃথিবীটা যেনো থমকে গেছে। আয়াজ দ্রুত ফোন রেখেই দৌড়ে বের হয়ে যায়। অত্যন্ত স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। গাড়ি নেমেই বাসাতে ডুকেই একমিনিট দেরি না করে আঁখিকে কোলে তুলে নেয়। কোলে তুলতেই মনে হয় এ যেনো একটা তুলোর বস্তা নিয়েছে। এতো ওজন কম। চেহেরাটা যেনো ফ্যাকাসে হয়ে আছে। নেই কোনো লাবণ্য। প্রিয়তমা যে কতটা কষ্টে ছিলো তা চেহারাটায় বলে দিচ্ছে।

যার চোখের এক ফোঁটা পানি সহ্য করতে পারতামনা। আজ তার কষ্টের কারণ আমি। প্রিয়তমার কিছু হলে যে আমি যে নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবোনা।
গাড়িতে আঁখি আয়াজের তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে
-আআআপনি এসেছেন
-হুম বাবুনিটা আমি এসেছি বলছে আর চোখের পানি ঝরছে।
-আমার যদি কিছু হয়ে যায় প্লিজ আমার বাবুটাকে দেখে রাখবেন। আমার যা কিছু হয়ে যাকনা কেন আমার বাবুটাকে বাঁচাবেন। আমি যে আমার বাবুর যত্ন নিতে পারিনি। আপনি আমাকে প্রমিস করেন আহহহ আআমার বাবুর কিছু হতে দিবেন না। সবকিছু দিয়ে আগলে রাখবেন।
-চুপ কর পাগলি। কিচ্ছু হবেনা তোর। আমি কিছু হতে দেবনা তোর। সব আমার দোষ। আমার জন্য আজ তোদের এই অবস্থা। তোর কিচ্ছু হবেনা। তোকে ফিরে আসতে হবে। আমার বাচ্চাকে সহ সাথে নিয়ে তোকে ফিরে আসতে হবে। তোদের আমি কিছু হতে দিবোনা। ড্রাইভার ফাস্ট ড্রাইভ করেন।
-পপপ্লিজ আআয়াজ আহ আমাকে কথা দিন
-সাট আপ। আর কোনো কথানা। হসপিটালের সামনে আসতেই নেমে ডক্টর ডক্টর বলে চেঁচাতে থাকে।

-আঁখিকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিতেই আয়াজ ডক্টরের হাত ধরে ফেললো। আর বলল
-প্লিজ ডক্টর আমার স্ত্রী বাচ্চা দুজনকেই বাঁচান। আমি ওদের সুস্থ দেখতে চাই।
-দেখুন আয়াজ আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষের জীবন বাঁচানো। আমারা আমাদের যথাসাধ্য দিয়ে চেষ্টা করবো আপনার স্ত্রী কে বাঁচানোর জন্য। আর কিছু না বলে ডক্টর ভিতরে চলে গেলেন। লাল লাইটটা জ্বলে উঠতেই আয়াজের মনের ভিতর ধুকপুকানি যেনো বেড়েই চলেছে। মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে।
চলবে

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 39
কিছুক্ষণ পর অপারেশন রুম থেকে ডক্টর বের হয়ে এসে তড়িঘড়ি করে বলতে লাগলো
-পেশেন্টের অনেক রক্তের প্রয়োজন। বি পজেটিব। আরলি জোগাড় করে আনুন। আয়াজ চট করে বলে উঠলো আমার ব্লাড গ্রুপ সেম। যত রক্তের প্রয়োজন আমার কাছ থেকে নিন। তবুও প্লিজ আমার বউকে বাঁচান।
-জ্বি তাড়াতাড়ি আসুন।
-আয়াজ আর কোনো কথা না বলে কেবিনে চলে গেলো। আসলে আঁখির বেবির পজিশন ঠিক ছিলো না তারউপর বেবির না কোনো নেওয়া হয়েছে যত্ন। তাই বেবি সিজার করতে হচ্ছে। যার জন্য রক্ত জোগাড় করে রাখতে বলা হয়েছে। কারণ আঁখির শরীরে রক্তের শূন্যতা অনেক কম।

আঁখিকে আয়াজ ব্লাড দিচ্ছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে।
-আজ আমার জন্য তোর এই ছোট্ট শরীরে কাটাছেঁড়া হচ্ছে। আমি যে তোর টেককেয়ার করতে পারিনি। আজ আমার ফলে তোকে ভুগতে হচ্ছে। আমিতো এটা চাইনি। মনে মনে এসব আওড়াচ্ছে ।

ঘন্টা কয়েকপর বাচ্চার কান্নার শব্দে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলেও তৎক্ষনাৎ আবার চিন্তার ভাঁজ পড়লো সবার মুখে। আঁখি সুস্থ আছেতো।
ডক্টর একটা টাওয়েলে করে পেঁচিয়ে ফুটফুটে বাচ্চা এনে আয়াজের সামনে ধরলো। আর বলল
-মিঃ আয়াজ অভিনন্দন আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়ে হয়েছেন।
-আয়াজ কাঁপাকাঁপা হাতে বাচ্চাকে কোলে নেয়। আর জিজ্ঞেস করে উঠলো
-আমার ওয়াইফ।
-আসলে আপনার ওয়াইফ ঠিক আছেন। বাট অনেক দূর্বল। সেন্স নেই। ডক্টর হিসেবে আমার একটাই রিকুয়েষ্ট প্লিজ ওনার অনেক যত্নের আর পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। ওনার শরীরে পুষ্টির অভাব। সো খেয়াল রাখবেন।
-জ্বি ডক্টর। মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো। বাচ্চার মুখের দিকে চেয়ে আছে। কি সুন্দর হয়েছে তার মেয়েটা। একেবারেই পুতুলের মতো। কিন্তু অনেক ওজন কম। স্বাভাবিক বাচ্চার জন্মের ওজনের চেয়ে অনেক কম। একে একে সবাই এসে কোলে নিচ্ছে। আর সবাই আনন্দ করছে।

ওই মূহুর্তে ইফাজের ছেলে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো। যার অর্থ সবাই আয়াজের বাচ্চাকে কোলে নিচ্ছে। ওকে কেন নিচ্ছে না। এটা তার অনেক অপমান ফিল হয়েছে। সাথে সাথেই আজিফা আয়াজের মেয়েকে মায়ের কোলে দিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।
-ওলে আমার বাবাটা। কেউ বুঝি আমার বাবাকে কোলে নেয়নি। বলেই গলায় মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।

আয়াজ গিয়ে আঁখির কেবিনের সামনে গিয়ে আঁখিকে এক নজরে জীর্ণ শীর্ণ চেহেরাটার দিকে চেয়ে আছে। আর মনে মনে হাজারবার একটাই শব্দ বলছে
-‘সরি’ আম রেলি সরি।

রাতেই আঁখির জ্ঞান ফিরে আসে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো। ডক্টর এসে দেখে গেলো। একে একে সবাই মিট করে আসে। নুরী রহমান নাতনি কে আঁখির সামনে দেয়।
-আঁখি চেয়ে আছে মেয়ের দিকে। পুরাই আয়াজ কার্বনকপি। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় যে তার বাচ্চাটা সুস্থ আছে। আঁখিতো ভেবেই বসে ছিলো সে আর হয়তো বেঁচে ফিরতে পারবেনা। কিন্তু আল্লাহ তাকে আরো একটা নতুন জীবনের সুযোগ দিলো। সবাই একে একে দেখা শেষ করে আসার পর আয়াজ চুপিচুপি পায়ে আঁখির সামনে গেলো।
আঁখি দেখেও না দেখার ভান করে বাচ্চার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আয়াজ যেনো কি দিয়ে শুরু করবে তা নিয়ে দ্বিধায় পরে গেলো। তবুও বড় করে একটা নিশ্বাস টেনে তারপর বলল
-এখন কেমন লাগছে।
আঁখি কোনো রেসপন্স করছেনা দেখে আবার আস্ক করে উঠলো
-আঁখি খুব শান্তভাবে আনসার দিলো যেমন থাকার কথা ছিলো।
আয়াজ আঁখির উত্তর শুনে অবাক হয়ে গেলো। কারণ কেমন যেনো বড়দের মতো কথা বলছে। আর তাছাড়া বলবে নাইবা কেন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বোবার মুখেও কথা ফুটে। প্রিয়তমার যে কতটা অভিমান হয়েছে তা ভালোই বুঝতে পারছে।

আয়াজ আঁখির হাতটা দুহাতের মুটোই নিয়ে বলে উঠে
-জানি যা করেছি তা কখনো ক্ষমার যোগ্য না। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এসবকিছু মোটেও ইচ্ছে করে করিনি। আমার যে কিচুই মনে ছিলোনা। ট্রাস্ট মি আমি একটা দিনও ভালো ছিলাম না। ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরেছি প্রত্যেকটা মূহুর্তে। তুই যাই শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে নিবো। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। পৃথিবীর সব সুখ তোর পায়ের নিচে এনে দেবো। এবারের মতো ক্ষমা দে। আর কোনো দুঃখ আসতে দেবো না।

আঁখি ও আর নিজের আবেগটা ধরে রাখতে পারেনি। আয়াজের হাতটা চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আআপনি অনেক খারাপ। আমাকে অনেক কষ্ট দেন। আমাকে একটুও বুঝেননা। শুধু আমার মনটা কে বারবার ভেঙ্গে দেন।
-প্লিজ ফরগিভ মি। আর কখনো তোকে কষ্ট দেবো। প্রমিস করছি। একটিবার সুযোগ দে আমাকে। লাস্ট বারের মতো।
-আঁখি কোনো কথায় বলছেনা শুধু কাঁদছে। আয়াজ আঁখিকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে।
চলবে