তুই হবি আমার পর্ব-২০

0
1764

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__২০

মেঘ বসে সাদিয়ার ডকুমেন্টে চোখ বুলাচ্ছে। রওশনও সন্দেহের চোখে সাদিয়ার দিকে তাকাচ্ছে আর সাদিয়া সে কানে ব্লুটুথ গুজে গার্ডসদের সাথে কথা বলছে।

রওশন : আপনি এখানে কতদিন থাকবেন.?
সাদিয়া আড়চোখে তাকিয়ে উত্তর দিলো।

সাদিয়া : বিয়ে অবধি। কেন আমি থাকলে কোনো সমস্যা হচ্ছে.? ডিস্টার্ব হচ্ছেন.?

রওশন : আপনাকে দেখলে বারবার আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ে যায়। তাই আর কি।

সাদিয়া : ওহ আচ্ছা তো। আপনারা গাইবেন না? শুধু আমার গান শুনবেন.?

রওশন : আমার গানের গলা ভালো না। মেঘ তুমি গাও। তোমার গান কখনো শোনা হয়নি আজ নাহয় শুনবো।

মেঘ : নাহহ।
নুরিন : মেঘ গাও না প্লিজ। সাদিয়া গিটারটা নিলাম।

সাদিয়া : ( সবই তো নিসো ওটা আর বাদ রাখবা কেন। যত্তসব। ) নাও।

আয়াশঃ
???করেছি ভুল আমি প্রথম দেখায়,,, ভালোবেসে।
জীবনে ভালোবেসে করেছি ভুল। বুঝিনি পাথরে ফুটবেনা ফুল।
সেই ভুলেরই কারনে আমি x2 দিয়েছি হাজারও মাশুল। বুঝিনি পাথরে ফুটবেনা ফুল।
জীবনে ভালোবেসে করেছি ভুল। বুঝিনি পাথরে ফুটবেনা ফুল। ???

???কতো ভালো ছিলো একাকি সেই মন কেন জাগালে প্রেম হৃদয়ে তখন।
দেখি আজই এই সুন্দর আয়োজন বুকটা ভেঙেচুরে হয় রক্তক্ষরণ।
না চিনে ওই রূপ দিয়েছি প্রেমে ডুব x2 এখন হারিয়েছি দুকূল। বুঝিনি পাথরে ফুটবেনা ফুল।
জীবনে ভালোবেসে করেছি ভুল বুঝিনি পাথরে ফুটবেনা ফুল ???

???আকাশের কান্না বৃষ্টি হয়ে পড়ে। হৃদয়ের কান্না নীরবে ঝড়ে।
কারো কাছে প্রেম পুতুল খেলনা,, আমি বলি প্রেম স্বর্গেরই ঠিকানা
ভাবিনি কখনো আমার এ প্রেম সে x2 বানাবে খেলারই পুতুল। বুঝিনি পাথরে ফুটবেনা ফুল। ???

আয়াশ গান শেষে সোফায় এসে বসলো। সবাই তালি দিয়ে ওকে বাহবা জানাচ্ছে। সাদিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে বললো।

সাদিয়া : ছ্যাকা খাওয়া গান কেন.? কতবার দাগা খেয়েছেন.?

সাদিয়ার প্রশ্নে সবাই আয়াশের দিকে তাকালো রাগে ফুলে গেছে বেচারা। কোনো উত্তর না পেয়ে সাদিয়াও আয়াশের দিকে তাকালো।

সাদিয়া : ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন.? মনে হচ্ছে কাঁচা খেয়ে ফেলবেন আমাকে। সিম্পল কুয়েশ্চন করছি। খেলে বলবেন হ্যা খেয়েছি। না খেলে বলবেন খাইনি। ব্যাস।

আয়াশ : আমার পেছনে লাগা ছাড়া আর কোনো কাজ নাই তোমার.? কোনো কথা বলবা না তুমি চুপ করে থাকবা।

সাদিয়া : সবাই কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছিলো আমিও দিয়েছি। তাছাড়া আমার মুখ আমার ইচ্ছামতো কথা বলবে। শুনতে না চাইলে কানে আঙ্গুল গুজে বসে থাকুন।

মেঘঃ
???ওওও রাং ভি ক্যা রাং হ্যায়। মিলতা না যো তেরে হোটকে রাং সে হুবাহু।
ওওও খুশবু ক্যা খুশবু ঠেহরে না যো তেরি সাভরি যুল্ফকে রুবরু।???

???তেরে আগে ইয়ে দুনিয়া হ্যায় ফিকি সি। মেরে বিন তু না হোগি কিসি কি ভি। আব ইয়ে জাহির সারিয়াম হ্যায় এলান হ্যায়। ???

???যাব তাক জাহামে সুবহা শাম হ্যায় তাব তাক মেরা নাম তু। যাব তাক জাহামে মেরা নাম হ্যায় তাব তাক মেরা নাম তু। X2???

???উলঝান ভি হু তেরি উলঝান কা, হাল ভি হু ম্যায়। থোরা সা জিদ্দি হু থোরা পাগাল ভি হু ম্যায়। ???

???বারখা বিজলি বাদাল ঝুঠে ঝুঠি ফুলোকি সৌগাতে। সাচ্চি তু হ্যায় সাচ্চি ম্যায় হু সাচ্চি আপনে দিলকে বাতেয়???

???দাক্ষাত হাতোসে হাতোপে কারদে তু না কার আখোপে পালকোকে পার্দে তু ক্যায় ইয়ে ইতনা বড়া কাম হ্যায় এলান হ্যায়।???

???যাব তাক জাহামে সুবহা শাম হ্যায় তাব তাক মেরা নাম তু। যাব তাক জাহামে মেরা নাম হ্যায় তাব তাক মেরা নাম তু। X2 ???
[ ZER0 -> 2018 এলবামের সং। আরিজিৎ সিং এর ভার্সনে। আর বাকি এক কলি সবাই নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন। বিসাইড এটা আমারও ফেবারিট সং।]

মেঘের গলায় গান শুনে সবাই অবাক। এতো সফট ভয়েজ আর গিটার বাজানোর স্টাইল। ওয়াও। কিন্তু সাদিয়ার রাগ এখন আরো বেড়েছে।

সাদিয়া : ( আমি কতোবার বলেছি গাইতে গাওনি। অথচ আপুটার একবার বলায় গেয়ে দিলে। গিটার বাজালে। বাহ। ব্রাভো মেঘালয় আহমেদ রৌদ্র ব্রাভো।)

সাদিয়া ওখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসলো। তারপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে বলতে লাগলো,,
সাদিয়া : আজ ভুল প্রমানিত হলাম আমি। আগে ভাবতাম ওর আমার ওপর তোমার একটু হলেও ভালোবাসা আছে। কিন্তু নেই,,, কিচ্ছু নেই। আম যাস্ট নাথিং ফর হিম,,

রাগে আয়নায় ঘুসি দিলো সাদিয়া। সাথে সাথে আয়না ভেঙে কাঁচ ছড়িয়ে পড়লো নিচে। ভাঙা আয়নায় সাদিয়ার প্রতিবিম্ব প্রকট হয়েছে। সাদিয়া নিচের কাঁচের ওপর পা তুলে দিলো। কাঁচের অর্ধেক ঢুকে গেলো ওর পায়ে। ঠিক তখনই আরীব ঢুকলো আর সাদিয়াকে এভাবে দেখে ছুটে ওর কাছে গেলো। সাদিয়ার চোখের কোনে পানি।

সাদিয়া : কেন এমন করলো ও.? কেন এভাবে কষ্ট দিলো আমাকে.? কেন.? আমি থাকবো না এখানে।

আরীব : ওখান থেকে সরে আসো। দেখি পা,, হাতটাও কেটে ফেলেছো। কেন নিজেকে কষ্ট দাও। তুমি জানো না তুমি কষ্ট পেলে আমারও কষ্ট হয়। তোমার থেকে বেশি কষ্ট আমি পাই। বোঝো না কেন সেটা.?

সাদিয়া : রাগ হচ্ছে প্রচুর। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। কি করা উচিত।

আরীব : মেঘ এখনো তোমাকেই ভালোবাসে সাদিয়া। নুরিনের সাথে ও মিথ্যা নাটক করছে। তোমাদের দুজনের ভালোবাসার শক্তি এমন যে কেউ তোমাদের মাঝে আসতে পারবে না। মেঘকে ভুল বুঝে নিজেকে কষ্ট দিও না। প্লিজ। পারলে তোমার ভাগের কিছুটা কষ্ট আমাকে দিয়ে দাও। কি পারবে না দিতে.?

আরীব সাদিয়াকে নিজের দিকে ঘোরাতেই সাদিয়া আরীবের গলা জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আরীবও ওকে শান্ত করার জন্য নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। আর তখনই মেঘ এসে ওদের দেখলো। মেঘ এসেছিলো সাদিয়ার রিয়াক্শন দেখার জন্য কিন্তু তার থেকেও বড়কিছু দেখে নিলো।

সাদিয়া : পারছি না এভাবে থাকতে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আর কতোদিন সহ্য করবো এই একাকিত্ব.? কেন খারাপ সময়টা চলে যাচ্ছে না। কেন আরীব.?

আরীব : আর কাঁদবে না এভাবে কাঁদলে কিন্তু এবার আমি রাগ করবো। হাতের কি অবস্থা। দেখি বসো, আমি ব্যান্ডেজ করে দেই।

সাদিয়াকে বেডের ওপর বসিয়ে ড্রেসিং করিয়ে দিচ্ছে আরীব। আর মেঘ দূর থেকে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।

মেঘ : তুমি সত্যিই আমার রোজ নও। আরীব ভাইয়ের সাদিয়া। ভাইয়ের ভালোবাসা.? আমার ভালোবাসা তাহলে আমার ভুলের জন্য আমার থেকে দূরে সরে গেলো.? আমার জন্য রোজ এই পৃথিবিতে নেই। রোজের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ি.? তাহলে আমার বেঁচে থাকার মানে কি.? রোজ না থাকলে এই পৃথিবিতে মেঘের থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।

আরীবের চোখ তখন দরজার দিকে। মেঘ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
আরীব : মেঘও কষ্ট পাচ্ছে সাদিয়া। ওকে রেখে যাচ্ছি সবটা মিটিয়ে নাও। আর হ্যা আমার কথাটা তুলো না। আমি চাইনা তোমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হতে।

সাদিয়া : কিন্তু।
আরীব : কোনো কিন্তু না।।।। ওই মেঘ ওখানে দাড়িয়ে না থেকে এখানে এসে ওর হাতে একটু ব্যান্ডেজ করে দাও তো। আমার একটা ইম্পর্টেন্ট কল এসেছে। একটু হেল্প করে দাও ভাই।

মেঘ ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ ভেতরে আসলো। সাদিয়ার পাশে বসতেই সাদিয়া আরীবের দিকে তাকালো। আরীব ফোন কানে দিয়ে ওকে ইশারায় শান্ত হতে বললো। তারপর ওখান থেকে চলে গেলো। মেঘ নরমাল ভাবেই সাদিয়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে পায়ের দিকে নামলো। আর দেখলো আজকের কাটা অংশের ঠিক পাশেই একটা সেলাই এর দাগ। তবুও মেঘ কিছু বললো।

সাদিয়া : ( কি দিয়ে শুরু করবো.? উফ) রোজকে ভালোবাসতেন অথচ নুরিন আপুর সাথে থাকছেন। রোজকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন.?

মেঘ : আমি আপনার সাথে এই নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা। নিন ব্যান্ডেজ করা শেষ। আসছি আমি।

সাদিয়া : আপনার মেঘরোদ্দুর নামটা কিন্তু কিউট। আমি ওই নামে ডাকি.?

মেঘ : ও নামে ডাকার অধিকার নেই আপনার। আর আমি কারোর কাছ থেকে ওই নামটা শুনতেও চাইনা। নুরিন আমার বন্ধু। আর ও বিবাহিত। একটা ভুলের জন্য রোজ আমার থেকে দূরে সরে গেছে। ভেবেছিলাম আপনি আমার রোজ তাই এসব করেছি কিন্তু না সেটা ভুল। আমার রোজ আর নেই। চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।

সাদিয়া : ( তাহলে তুমিও সবার মতো হাল ছেড়ে দিলে মেঘরোদ্দুর.? তুমিও বিশ্বাস করতে শুরু করলে যে আমি মরে গেছি।) আচ্ছা। একটা কথা.? আপনি কি করেন.?

মেঘ : কিছু না।
সাদিয়া : আপনাকে দেখলে কেমন জানি গুন্ডা গুন্ডা লাগে। বখাটেও হতে পারেন। তবে দেখে রাগি মনে হয়। গ্যাংস্টার নন তো.? সবসময় দলবল নিয়ে থাকেন।

মেঘ : আসছি আমি।

মেঘ চলে যেতেই সম্রাট আসে। সম্রাট বাইরে ওয়েট করছিলো। মেঘ বেরিয়ে যেতেই সম্রাট বলতে শুরু করে।

সম্রাট :বোন?
সাদিয়া : হ্যা দাভাই। কিছু বলবে.?

সম্রাট : তুই কি সত্যিটা বলে দিবি.? থেকে যাবি এখানে.?
সাদিয়া : ঊফ দাভাই তুমিও না। আমি কেন থাকবো এখানে.? ( থাকার তো আর কোনো কারন নেই দাভাই। মেঘরোদ্দুরও মেনে নিয়েছে আমি মরে গেছি। নতুন করে এই অপয়া মেয়েটা আর কারোর জীবনে ঢুকতে চায় না। মেঘ যখন মানতে পেরেছে সবটা তখন নিজেকে সামলাতেও পারবে। তাই তোমাকে কষ্ট দিতে পারবো না। আমার জীবন তো তোমাদের দান। সাদিয়া তোমার তোমার স্বপ্ন পূরন করতে পারেনি,, কিন্তু তোমার প্রতিটা ইচ্ছা আমি পূরণ করবো। তোমার বোন ওয়াল্ডের বেস্ট সিঙ্গার হবে দাভাই। হবেই।) আমি তোমাদের সাথে ফিরে যাবো।

সম্রাট : নিজের ভালোবাসার থেকে দূরে যাবি.? দেখ বোন আমি জানি আমি তোর নিজের ভাই না। কিন্তু আমি তোকে সাদিয়ার মতোই ভালোবাসি। আমি চাইনা তুই ফিরে যাস। এখানে থাক সুমি এখানে এসেছিলো তোকে চোখে চোখে রাখতে,, কে তোকে ভালোবাসে সেটা জানতে। আর এখন বুঝেছি আমি মেঘের চাইতে আর কেউ তোকে

সাদিয়া : মেঘরোদ্দুর মেনে নিয়েছে যে রোজ মারা গেছে। তাই যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক সবটা।

সম্রাট : সোহরাব এসেছে এদেশে। তোকে খুজতে। মানে সাদিয়াকে খুজতে।

সাদিয়া : সোহরাব ? যার সাথে সাদিয়ার এফেয়ার ছিলো.? মানে ওদের মাঝে একটা সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু আমি তো রোজ। ওকে তো ঠিকঠাক চিনিও না। হ্যান্ডেল করবো কিভাবে.?

সম্রাট : সেটাই তো সমস্যা। ছেলেটা নম্র ভদ্র যেমন ঠিক তেমনই কাঁদুনি টাইপের। তোর এই নাটক যতদিন চলবে ও ততদিন এমন করবে। তাই বলছিলাম পরিচয়টা দিয়ে দে। আর আমিও বলে দেই সাদিয়ার কথা।

সাদিয়া : তোমার কথামতো সোহরাব বুদ্ধিমান বিচক্ষন এবং কেয়ারিং একটা ছেলে.? পাশিপাশি IPS অফিসারও। তাইনা.?

সম্রাট : হুম। কিন্তু সাদিয়া ছেলেটাকে বোঝেনি।
সাদিয়া : আমি যদি সোহরাবকে বিয়ে করি.? তাহলে ইন্ডিয়াতে যেতে পারবো. তোমাদের সাথে থাকতে পারবো। আর আরীবও আমার বন্ধুত্ব স্বীকার করেছে সো প্রবলেম হবে না।

সম্রাট : আমিও চাইতাম সাদিয়া সোহরাবের সাথে থাকুক।
সাদিয়া : চাইতে মানে এখন চাওনা.? সেদিন থাকেনি তো কি হয়েছে এখন থাকবে। ( সরি দাভাই এটাও একটা প্লানিং। জানি পরে রাগ করবে আমাকে। কিন্তু এটা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।) সোহরাবকে আমাদের খবর জানিয়ে দাও।

বিকালে
ছাদে বসে বিয়ের প্লানিং করছে সবাই। সাদিয়াও আছে। তবে মেঘ আর সাদিয়ার মধ্যে কেউ কোনো কথা বলছে না। সাদিয়া পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য বললো,,

সাদিয়া : বিয়ের আর ছয়দিন বাকি। সো আমার কিছু প্লানিং ছিলো। যদি চাও বলতে পারি।

কুহু : কি প্লানিং বলো আমরা সবাই শুনছি।

আরীব : সবার আগে আমি একটা কথা বলতে চাই। এক্চুয়ালি আমি আর সাদিয়া এখন নিজেদের কাছে ক্লিয়ার যে আমরা একে ওপরকে ভালোবাসি না। সাদিয়াকে সোহরাব ২বছর ধরে ভালোবাসে তাই সাদিয়া ঠিক করেছে কুহুর এই বিয়ের অনুষ্ঠানের মাঝেই ও এন্গেইজমেন্ট করে নিবে।

সবাবাই হা করে আরীবের দিকে তাকিয়ে আছে। এদের জীবনের গল্পে প্রতিটা পেইজে নতুন নতুন রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে সাদিয়ার চরিত্রে।

সাদিয়া : হ্যা। তাই আমি চাই পরশু কুহু আপু আর রাজের এন্গেইজমেন্ট হবে সাথে আমাদেরও। ৩য় দিন সঙ্গীত,, ৪র্থ দিন গায়ে হলুদ,,৫ম দিন বিয়ে আর ৬ষ্ঠ দিন রেজিস্ট্রি।

কুহু : এসব.? সত্যি.?
সাদিয়া :হ্যা তো। আর কাল সোহরাবও আসবে।

সম্রাট : মেঘ, কুহু, আরাভ,রওশন,আর সাদিয়া তোমরা আমার সাথে নিচে আসো কিছু ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।

সাদিয়া : কেন দাভাই।
সম্রাট : আমার অনুরোধ এটা। প্লিজ নিচে আসো।

সম্রাটের রুমে সোফায় বসে আছে সবাই। দরজার কাছে রেগে দাড়িয়ে আছে সাদিয়া। আর সম্রাট একটা ফটোফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আছে।

সম্রাট : আজ তোমাদের একটা সত্যি বলতে চাই আমি। জানিনা সবটা শুনে কেমন রিয়াক্ট করবে। কিন্তু কি করবো.? নিজেকে অপরাধি লাগছে অনেক। আরীবকে ডাকিনি কারন ও সবটা জানে। আর আমি এটা জেনেছি যে তোমরা রোজের ভালো চাও। তোমরা কখনো এমন কোনো কাজ করবে না যাতে রোজের ক্ষতি হবে।

কুহু : বুঝতে পারছি না কিছু। ক্লিয়ার করে বলুন প্লিজ। রোজের কথা কেন বলছেন

সম্রাট ফটোফ্রেমটা পাশে রেখে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,,

সম্রাট : আমার একমাত্র বোন সাদিয়া খাঁন। ছোট বেলায় কার এক্সিডেন্টে আমার বাবা মা মারা যান।আমার তখন ৭বছর আর সাদিয়ার ৩বছর বয়স। বোনকে নিজের সবটা দিয়ে মানুষ করতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু বুঝিনি ও নিজেকে আমার থেকে কতটা আড়াল করেছে। ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো ও তার পাশাপাশি অনেক জেদি। একসময় খেয়াল করি মাবাবার অভাব ওকে ডুকরে ডুকরে কাঁদায়। কষ্ট ভোলার জন্য ও নেশা করতে শুরু করে। মদ থেকে শুরু করে ড্রাগও নিতো। একটা কেস নিয়ে সোহরাবের সাথে ওর পরিচয় হয়। সোহরাব নিজের ভালেবাসা দিয়ে সাদিয়াকে নিজের করতে চেয়েছিলো। কিন্তু সাদিয়া ওকে দূরে ঠেলে দেয়।

আট মাস আগে একটা ক্রিটিক্যাল পেসেন্টের জন্য আমরা এদেশে আসি। আর সাদিয়ার ব্যাগ চেক করতে গিয়ে একটা রিপোর্ট পাই। জীবনে সবচেয়ে খারাপ আর কষ্ট সেদিন পেয়েছিলাম কারন আমার বোনের ব্রেইন টিউমারের রিপোর্ট ছিলো ওটা। একদম লাস্ট স্টেইজ। আর দুইমাস বাঁচতে পারবে।

রওশন : কি বলছেন এসব.?
সম্রাট ইতোমধ্যে কেঁদে ফেলেছে। সাদিয়ার ছবিটা বুকে জরিয়ে কাঁপা গলায় আবার বলতে লাগলো,,

সম্রাট : পৃথিবির সবকিছুর চেয়ে আমি আমার বোনকে বেশি ভালোবাসতাম। মাবাবার কবর ছুঁয়ে কথা দিয়েছিলাম বোনের সব কষ্ট আমি নিবো আর আমার সব সুখ বোনকে দিবো। বোনকে নিয়ে দেশে ফিরে ওর সমস্ত ট্রিটমেন্ট শুরু করি কিন্তু সবজায়গায় একই ফল। সাদিয়ার শেষ ইচ্ছা ছিলো সোহরাবের থেকে দূরে যাওয়া আর বাংলাদেশে আমাদের দাদাবাড়ি দেখা। সেজন্যই সাতমাস আগে আবার আমরা এদেশে আসি। আর সেদিনই রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট হয়। রোজের এক্সিডেন্ট।
♠♠
রাস্তায় প্রচন্ড ভীর দেখে থামাতে বাধ্য হই। গাড়ি থেকে নেমে ভীরের কারন খুজতে আসি আমি আর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি রোজকে। প্রথমে অনেকটা চমকে যাই কারন রোজের আর আমার বোনের চেহারা পুরো এক। কয়েকমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো আমার বোন পড়ে আছে। কাঁদতে কাঁদতে রোজের কাছে যাই।

সম্রাট : বোন,,, বোন চোখ খোলো। বোন
রোজ : আমাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। সবাইকে বলে দিন আমি মারা গেছি প্লিজ। প্লিজ বলুন।

সেদিন রোজের কথায় আমি বলেছিলাম রোজ মারা গেছে। রোজকে হসপিটালে ভর্তি করে জানতে পারি রোজের একটা কিডনি ড্যামেজ। ওকে বাঁচাতে হলে কিডনি ট্রান্সফার করতে হবে। আর জানো? সাদিয়াই সেদিন সবথেকে বেশি খুশি হয়েছিলো।

সাদিয়া : দেখলে তো দাভাই আল্লাহ তোমার বোনকে আবার ফিরিয়ে দিলো।আর আমার শেষ ইচ্ছার তালিকায় আরেকটা ইচ্ছা যোগ হলো।

সম্রাট : মানে.?
সাদিয়া : মেয়েটাকে আমি কিডনি দিবো। আমি যখন থাকবো না তখন নাহয় তুমি ওকেই বোন ডেকো। আমাকে যতটা ভালোবেসেছো ওকেও বেসো। আমাকে বাঁচাতে পারবে না তো কি হয়েছে ওকে বাঁচিও। ও তো বলেছে ওকে কেউ মারতে চায়।

সম্রাট : বোন চুপ কর তুই।
সাদিয়া : দাভাই আমার মাথা ব্যাথা করছে। আমি পারছি না সহ্য করতে। আমি মরে যাবো দাভাই।কিন্তু তুমি ওকে বাঁচাও । ওকে বাঁচাও দাভাই।

সেদিন আমার হাতে আর কোনো সুযোগ ছিলো না সাদিয়াকে বাঁচানোর। একজন ডক্টর হিসাবে আমি জানতাম আমার বোনকে আমি আর ফিরে পাবো না তাই সাদিয়ার কিডনি রোজের শরীরে ট্রান্সফার করি। বোনের শেষ কথা রাখার জন্যই রোজ আমার কাছে আমার সাথে থাকে।

সাদিয়া : রোজ জানো দাভাই আমাকে ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবতে পারে না। তবে সুমি আপু আলাদা। তলে তলে টেম্পু চালায় যে ওরা। হি হি আজকের পর হয়তো আমি থাকবো না তুমি আমার দাভাইকে একটু দেখে রাখবে.? আমি ছাড়া দাভাই এর কেউ নেই। তুমি আমার জায়গাটা নিয়ে দাভাই এর জীবনটা খুশিতে ভরিয়ে রাখবে.? আমি দাভাইকে কষ্ট ছাড়া কিছু দিতে পারিনি তুমি দাভাই এর সব ইচ্ছা পূরন করবে.? বিশ্বাস করো আমার দাভাই তোমাকে কখনো কষ্ট দেবে না শুধু আমাকে কম মিস করবে। হি হি তোমাকে দেখলে আমার জন্য কম কষ্ট পাবে। একটু হলেও ভালো থাকবে। তোমাকে আমার মতো ভালোবেসে নিজের বোনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করে যাবে আজীবন।

সম্রাট : বোন চুপ কর। তোর কিছু হবে না। আমার বোনের কিচ্ছু হবে না।

রোজ সাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
রোজ :তোমার দাভাই আজ থেকে আমারও দাভাই সাদিয়া। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমি দাভাই এর পাশে থাকবো। তোমার রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ আমি পূরণ করবো। তোমার জায়গা নিবো না নিজের জায়গা গুছিয়ে দাভাই এর স্নেহের পরশে থাকবো। তোমার ভূমিকা আগের মতোই থাকবে দাভাই এর জীবনে। আমি শুধু তোমার রেখে যাওয়া আমানতের খেয়াল রাখবো। তোমার সব দায়িত্ব পালন করবো। আজ হয়তো আমার জীবনটাও শেষ হতে পারতো,, হয়নি শুধু তোমাদের জন্য তাই তোমার দাভাইকে সঙ্গ দেওয়া আর দাভাই এর জীবন গুছিয়ে দেওয়ার সব দায়িত্ব আমার।

সাদিয়া : পাক্কা প্রমিজ.?
রোজ : পাক্কা প্রমিজ।
♠♠

ওই যে দাড়িয়ে যে মেয়েটা কাঁদছে ওটা তোমাদেরই রোজ। আমার আরেকটা বোন। যে এতোদিন আমার পাশে থেকে আমার সাদিয়ার দায়িত্ব পালন করে এসেছে। আজ থেকে আমান সব দায়িত্ব থেকে মুক্ত ও। আমার বেখেয়ালির জন্য একবোনকে হারিয়েছি। রোজকে আর কষ্ট দিতে চাইনা আমি। আমি চাই রোজ ভালো থাকুক নিজের ভালোবাসার কাছে থাকুক।

সাদিয়া : সাদিয়ার ইচ্ছার মধ্যে আরো একটা ইচ্ছা ছিলো দাভাই। সোহরাব। আমি ওকেই বিয়ে করবো। তোমাদের কাছে থাকবো।কারন এখানে তো আমার কিছুই নেই। আর একটা কথা ভালো করে শুনে+জেনে রাখো যে এই সাদিয়া নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।

চলবে।