তুমিময় অসুখ ২ পর্ব-০৭

0
2844

#তুমিময়_অসুখ ২
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৭

১৭.
আব্বু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে ইরু?’

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘ আব্বু আমাকে বাসায় নিয়ে চলো!’

অভ্র ভাইয়া শীতল গলায় বললেন, ‘না। তুই আমার সাথে যাবি!’

‘ না, আমি আমার বাসায় আব্বুর সাথে যাবো।’

‘ তোকে যেতে দেবোনা। তুই আমার বাসায় যাবি এবোরেশনের পর!’

মামা অবাক হয়ে বললেন, ‘ এবোরেশন মানে?’

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘মামু প্লিজ তুমি ওনাকে বুঝাও, ওনি আমার বাচ্চাকে খুন কর‍তে চাইছেন!’

‘ আমি খুন করতে চাইছিনা, তোকে বাঁচাতে চাইছি।’

‘ আমি আমার বাচ্চা ছাড়া বাঁচতে পারবোনা!’

‘ শোন ইরু, তুই ছোট কিছু বুঝিসনা। তাই এরকম বলছিস! তোকে এবোরেশন কর‍তেই হবে।’

মামা এবার আর ওনার বাড়াবাড়ি মেনে নিতে পারলেন না। নিজের ছেলে তাঁর অনাগত সন্তানকে মারতে চাইছে তাই মামা ঠাস করে ওনার গালে থাপ্পড় মারলেন। বললেন, ‘ছিহ। তুই এটা বলতে পারলি?’

‘ হুম। কারণ ইরুকে বাঁচাতে হবে।’

‘ একটা মেয়ের এ সময়ে সবচেয়ে বেশি দরকার হয় তাঁর স্বামীর। স্বামীর কেয়ারিং আর ভালোবাসাতেই যেকোনো মেয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে।’

‘ কিন্তু আব্বু ইরু পারবেনা। ওর কষ্ট হবে।’

‘ একদম চুপ। এ বয়সে হাজার হাজার মেয়ে মা হচ্ছে, সবার স্বামী তোমার মতো বেক্কল নয়। তুমি তো দেখছি এমনিতেই মেয়েটাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছো।’

অভ্র ভাই কিছুই শুনলেন না। বদ্ধ উন্মাদের মতো আচরণ করছেন। বলছেন,

‘ আমি ওকে নিয়ে যাবো এবং যাবোই।’ বলতে বলতে ওনি আমাকে ধরতে এলেই আমি মামানির হাত ধরে ফেললাম। মামানি অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকিয়ে আম্মুর উদ্দেশ্য বললো, ‘ইরুকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাও। এই ছেলের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় বিপদ ঘটিয়ে ফেলতে পারে!’

মামা আর ওনাকে এগুতে দিলেন না। অনেক কষ্টে ওনাকে আটকালেন। আমি কান্না কর‍তে করতে মাথাব্যথা বাঁধিয়ে ফেললাম, লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে নাকি? ওনি বলতে লাগলেন, ‘তোকে বাঁচতে হবে ইরু। নয়তো নিজেকে ক্ষমা কর‍তে পারবোনা। তোকে আমার কথা মানতেই হবে!’

আমি আর কিছু শোনার অপেক্ষা করলাম না। আম্মু আর মামানির কাঁধে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলাম আস্তে আস্তে হসপিটাল থেকে!

১৫.
দুদিন হলো আমাদের বাসায় এসেছি। এই দুইদিন মুড অফ ছিলো আমার। কোন মেয়ে চায় এরকম পরিস্থিতি ক্রিয়েট হোক? মামানি ফোন করে অনেক কেঁদেছেন। তাঁর ছেলেটা পুরো পাগলামি করছে ইভেন্ এখনো। ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর, চিৎকার চেঁচামেচি। আমি বুঝলাম না ওনার সমস্যাটা ঠিক কি? সেদিন রাতে বললো আমাকে ভালোবাসে না আর পরদিনই বলে আমাকে হারাতে পারবেনা, ভালোবাসে! আসলে ঠিক চায়টা কি ওনি? এসব ভেবে অনেক কান্না করেছি, মন খারাপ করেছি।

আর আমার মন খারাপের ঔষধ আমার বোন ইলহাম! সে এই দুইদিন আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে আমার মন ভালো করার জন্য। কত হাসানোর চেষ্টা করেছে বাট ফলাফল জিরো। আম্মু-আব্বু, ভাইয়াও অনেক বোঝালেন, তাতে বেবির জন্য হলেও নিজের মনটাকে রিফ্রেশ করতে চাচ্ছি!

পরদিন দুপুরে বান্দরবান থেকে ফোন এলো। ফোন করলো আব্বুর বড় ভাই মানে আমার চাচ্চু। তিনি একজন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। খবর এলো চাচ্চুর বড় মেয়ে মানে আমার কাজিন আনিশা আপুর বিয়ে! আনিশা আপু আমার দুইবছরের বড়, কিন্তু দুজন দুজনকে তুইতুই বলেই ডাকি।

আব্বু আর ভাইয়ার অফিসে কাজ পড়ে যাওয়ায় ঠিক করা হলো আমাদের একাই যেতে হবে। আমি প্রথমে যেতে না চাইলেও ইলহামের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল আর মানসিক প্রশান্তির জন্য রাজি হলাম। টিকিট কেটে আনা হলো। বাসে করে যাবো আমরা। মধ্যরাতের বাস!

আজ রাতে বাস ধরতে হবে৷ সব গোছগাছ করে নিলাম। বিকেলবেলা রুমে বসে আছি এমন সময় আম্মুর ফোন বেজে উঠলো। কাছেপিঠে কেউ না থাকায় আমি আস্তেধীরে উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম৷ আননোন নাম্বার ছিলো। ‘আসসালামু আলাইকুম’ বললাম। ওপাশ থেকে নিরবতা শোনা গেলো।

‘ কে বলছেন?’

‘ আমার কথা রাখবি না ইরু?’

চমকে উঠলাম! চারদিন পর অভ্র ভাইয়ার গলা শুনতে পেলাম।

‘ রাখবি না? আমাকে নিজের কাছে অপরাধী করে দিবি?’

আমি হালকা নিঃশ্বাস ফেললাম। বললাম, ‘বললামই তো একবার!’

‘ এরকম করার কোনো কারণ আছে কি?’

‘ আছে।’

‘ কি?’

‘ কারণ আমি খুনি হতে চাইনা, মা হতে চাই।’

‘ কিন্তু আমি তা চাইনা।’

‘ আপনার চাওয়া না চাওয়া দিয়ে আমার কিছু আসে যায় না।’

‘ ভালোবাসি তোকে ইরু!’

‘ হা হা! হাসালেন আমায়। একদিনেই প্রেমে কিভাবে পড়লেন মিস্টার অভ্র আহমেদ? মিথ্যা কথা কম বললে বোধহয় ভালো হতো।’

ওনি রেগে বললেন, ‘ আমি কোনো মিথ্যা বলিনি।’

‘ আপনার লেইম কথাগুলো প্লিজ আপনার কাছেই রাখুন আর এসব নাটক বন্ধ করে আমাকে শান্তিতে থাকতে দিন।’

ওনি আবারও অসহায় গলায় আবোলতাবোল কথা শুরু করলেন। আমার প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো। কি ভাবেটা কি ওনি নিজেকে? প্রিন্স চার্মিং নাকি বিল গেটস, যে ওনার সুন্দর চেহারা আর টাকার লোভে পড়ে আমি ওনার অন্যায় মেনে নেবো? হাউ?

আমি বিরক্ত গলায় বললাম, ‘আপনি আপনার বকবক অন্য কাউকে গিয়ে শোনান। একটা কথা মাথায় এবং মনে গেঁথে নিন। এই বাচ্চাটা শুধু এবং শুধুই আমার একার। আপনার কোনোকিছুই যেমন আমার নয় তেমনই এই সন্তানও শুধু আমার। কখনো বাবার অধিকার নিয়েও সামনে আসবেন না। নিজের মতো থাকুন আর আমাকেও থাকতে দিন। আমি মরি বা বাঁচি তাতে আপনার কোনোকিছুই হবেনা। সো এনজয় ইউ’র লাইফ। বাই!’ বলেই ফোন কেটে দিলাম। ঠিক করেছি কাঁদবো না। হাসবো, শুধু আমার বাচ্চাটার জন্য অভ্র আহমেদ নামক লোকটাকে ভুলে থাকতে হবে।

_______________

রাতেরবেলা আমরা রেডি হয়ে গেলাম। আব্বু আর ভাইয়া আমাদের বাসস্টপে দিয়ে আসবেন। প্রথমে একটা বাসে করে বান্দরবান পৌঁছাতে হবে। আর আনিশা আপুদের বাড়িতে আমরা কখনো যাইনি, ওদের বাড়ি নাকি পাহাড়ের অনেকটা উপরে। তো সেখানে যেতে হবে গাড়ি করে। আর সেই গাড়ি নিয়ে স্টপেজে আসবে আনিশা আপু। যাইহোক, আমরা বাসে উঠলাম। জানিনা মনটা কেন খচখচ করছে, মনে হচ্ছে অভ্র ভাইয়া আশেপাশেই আছেন। বাস চলছে নিরবে, নিঃশব্দে। যাত্রীরা অনেকেই ঘুমিয়ে কাদা, আম্মু আর ইলহামও ঘুমাচ্ছেন। যাত্রীদের মধ্যে একমাত্র আমিই ঘুমাইনি। ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাওয়ার অবস্থা!

১৬.
‘ভোর হতে তখনও বাকি। চারদিক অস্পষ্ট অন্ধকারে ঢাকা। শীতের ঠান্ডা হাওয়া বইছে।আকাশে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে সূর্যের লালিমা মাখা আলো! বোঝাই যাচ্ছে, সূর্য উঠতে বেশি দেরি নেই! শীতের রোদ যে মিষ্টি হয়, এটাই ভরসা। নইলে ঠান্ডায় মরেই যাবো।’

‘সবুজে ভরা আশেপাশের প্রকৃতি। অনিন্দ্য পরিবেশ। বাসে বসে এরকমই লাগছে। আমিও গায়ের পাতলা চাদরটা দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢেকে নিলাম। বাসটা নিরবে-নিঃশব্দে এগোচ্ছে, খোলা জানালা দিয়ে আসছে প্রথম সকালের নরম মিষ্টি রোদ। আমার পাশে ইলহাম সিটে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছে। আমি বুঝতে পারি না,’এই ভোরে বাসে মেয়েটা কিভাবে ঘুমিয়ে পড়তে পারে?এত ঘুম কোথা থেকে আসে এর? ঘুমকুমারীর মতো যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়া ইলহামের অভ্যেস! ‘

আমি বাসের খোলা জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি মেললাম! চারপাশটা ছবির মতো সুন্দর। যেনো কোনো চিত্রকরের নিপুণ হাতে আঁকা, এতটাই সুন্দর যে ভাবনায় হারিয়ে যাওয়া যায়! সবুজে ঘেরা পাহাড়, গাছগাছালি আর সুজলা-সুফলা তেপান্তর! প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনেকদিনের লালিত ইচ্ছেটা আজ মনে হচ্ছে পূরণ হবে আমার। দৃষ্টি অনেক দূরে!’

‘বাসটা হঠাৎ থেমে গেল। আমিসহ বাসের যাত্রীরা একটু সামনের দিকে হেলে পড়লো। কিন্তু সাথে বসে থাকা আমার ঘুমকুমারী বোনের ঘুম ভাঙলো না,শুধু একটু নড়েচড়ে বসলো । সামনের চেকপোস্ট পার করে পাঁচমিনিট পর গাড়িটা আবারো চলতে শুরু করলো। ততক্ষণে সূর্যদেব উঁকি দিলো পূর্বদিগন্তে। সূর্যের নরম আলো ছড়িয়ে পড়ছে গাছের পাতায় পাতায়। ডানা মেলে ভোরের আকাশে উড়ছে পাখিদের ঝাঁক!’

‘আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা সাপের মতো এঁকে-বেঁকে উপরের দিকে উঠছে। বাঁক নিতে হয় সাবধানে, একটু অসাবধান হলেই ভয়ংকর এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এইসব রাস্তাতে। আমি একটু পরপর মুগ্ধ হচ্ছি আর কল্পনায় নিজেকে হারাচ্ছি। বড় ভালো লাগছে, এভাবেই যদি জীবন কেটে যেতো কতই না ভালো হতো! অভ্র ভাই যদি সবকিছু মেনে নিতেন তাহলে এই খুশিটা দ্বিগুণ হতো, চাপা কষ্টটা আর থাকতোনা। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। লোকটা কি করছে কে জানে, শুধু আশেপাশে তাঁর অস্বস্তি টের পাচ্ছি! অনেকক্ষণ পর একটা স্টপেজের সামনে এসে বাসটা থামলো।’

‘বাস থেকে নেমেই আর আমরা দেখলাম স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে আনিশা আপু। আমাদেরকে বাস থেকে নামতে দেখেই আপু হাসিমুখে দৌড়ে এলো কাছে। খুশিতে গদগদ হয়ে আম্মুকে জড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেমন আছো তুমি ছোটচাচী?’

আম্মু হেসে বললো, ‘ভালো! তুই?’

‘ ভালো!’

তারপর আমাকে আর ইলহামকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেমন আছিস তোরা?’

আমি হাসিমুখে উত্তর দিলাম,’ভালো আছি।তুই কেমন আছিস? বাসার সবাই কেমন আছে?’

-ভালো আছে সবাই। আমিও ভালো আছি!

ইলহাম ফোঁড়ন কেটে বললো, ‘ভালো তো থাকবাই, বিয়ে করে জামাইয়ের সাথে রোমান্স করার সুযোগ পেয়ে গেলা না! আর হতভাগী আমার বিয়ে নিয়ে আব্বু-আম্মু ভাবেই না!’

আপু হাসতে হাসতে বললো, ‘ঠিক আছে,আমার একটা দেবর আছে,তোর সাথে ব্যাটার লাইন লাগিয়ে দিবো, তোর আব্বু-আম্মু রাজি না হলে দুজনেই পালিয়ে গিয়ে ফুটুস করে বিয়ে করে নিস!’

তারপর আম্মুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাদের আসতে অসুবিধে হয়নি তো?’

আম্মু বললো, ‘ না মা, একদমই অসুবিধা হয়নি।’

আমি বললাম, ‘না বইন! বাসে বসলাম আর সোজা চলে এলাম। কোনো অসুবিধেই হয়নি!’

আনিশা আপু ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো, ‘ওফফ…চল চল, এখনো দাঁড় করিয়ে রেখেছি তোমাদের! বাড়িতে গিয়ে কথা শুনবো। চল এখন! বেশ ঠান্ডা পড়েছে!গায়ে ওভারকোট জড়িয়ে নে!’

আমি সুটকেস হাতে নিয়ে বললাম, ‘হুম চল!’

আনিশা আপু চোখ বড়বড় করে বললো, ‘এই অবস্থায় জিনিসপত্র ক্যারি করা ঠিকনা। আমার কাছে দে ছাগল!’

আমি বললাম, ‘কিছু হবেনা।’

‘ চুপ। দে বলছি। বিয়ে করে ভাবছো ঢং দেখাবা? আমার সাথে ফর্মালিটি নট এলাউড!’

আমি আনিশা আপুর কথা শুনে হাসলাম।

আনিশা আপু আমাদেরকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। কুয়াশা ঘন হয়ে গেছে।গাড়ির কাচ অস্বচ্ছ। ড্রাইভার হেড লাইটের আলোতে ধীরেধীরে গাড়ি চালাচ্ছে।

আম্মু চারপাশে চোখ বুলালো। বললো, ‘তোদের এই জায়গাটা তো খুব সুন্দর আনু!’

‘ তাই নাকি? তোমার পছন্দ হয়েছে?’

‘ ভীষণ। আচ্ছা, তোদের এখানে তো অনেক পাহাড়-টাহাড় আছে, তাইনা?’

‘ হুম চাচী!’

এভাবেই নানান কথা বলতে বলতে একসময় বাড়ি পৌঁছলাম আমরা। লোহার গেট পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম আমরা। সুন্দর, ছিমছাম বাড়ি। সামনে বাগান,একপাশে মুরগীর খোঁয়াড় রয়েছে। রোদের আলো গাছের ফাঁক গলে এসে পড়ছে জানালার কার্নিশে,বাড়ির ছাদে। আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। বাতাসে আমার খোলা চুলগুলো উড়ছিলো। এত সুন্দর দৃশ্য শুধুমাত্র বইয়েই দেখা যায় বা কল্পনা করা যায়। চোখ বন্ধ করে সবকিছু অনুভব করার চেষ্টা করছি। আমি বাড়ির লনে দাঁড়িয়ে ভাবছি, ‘ আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নাকি বাস্তব?আনিশারা না জানি কত্ত মজা করে থাকে এখানে। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠার সুযোগই বা ক’জন পায়? এ যেন এক স্বপ্নের দেশ!’

আমার কল্পনায় হারালাম। মনে হলো,
‘পৃথিবীর পাড়ে হাঁটছি
সবকিছু অবান্তর, অবাস্তব
চারদিকে যেন নীলে নীল,
সবুজে সবুজ,হলুদে হলুদ!
চুলগুলো উড়ছে হাওয়ায়,
জাহাজের পালের মতো।
অনেকদিন এমন সুন্দর দৃশ্য দেখি না,
চোখগুলো লেগে আসছিল।
হঠাত চোখ মেলে দেখি,
চারদিক আলোর ঝিলিকে ভরে গেছে-
ফুলগন্ধি হাওয়ার মাঝে
আমি বুঝতে পারি,
ছিলাম স্বপ্নের দেশে!’

চোখ খুললাম, সামনে তাকিয়ে দেখি একজন কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

“কেউ কি হাদিস দেওয়াতে বিরক্ত হচ্ছেন বা ন্যাকামু ভাবছেন? এটা কি ন্যাকামির মধ্যে পড়ে? কয়েকজনের কথার ভিত্তিতে জিজ্ঞেস করেছি, কিছু মনে করবেন না।”

👉”প্রশ্নঃ একই পাপ বারবার করছি আর তওবা করছি। কিন্তু কোনক্রমেই ছাড়তে পারছি না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
_____________________________________

উত্তর : একই পাপ একাধিক বার করা জঘন্য অন্যায়। এতে এক সময় ব্যক্তি পাপের অনুভূতিশূন্য হয়ে যায় এবং তওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকবে এবং প্রতিমুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করবে ও তওবা-ইস্তিগফার করবে। যদি খালেছ নিয়তে তওবা করে তবে তা কবুলযোগ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘এক বান্দা গোনাহ করল। তারপর সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো গোনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন? (সে যদি জেনে-বুঝে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে) তাহ’লে আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল বিরত থাকার পর আবার গুনাহে লিপ্ত হ’ল এবং একইভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করল। তখন আল্লাহ একই জবাব দিয়ে আবারো তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তার কিছুদিন পর তৃতীয়বারের মত গোনাহ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ রাববুল আলামীন সেবারও তার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করলেন’
(বুখারী হা/৭৫০৭; মুসলিম হা/২৭৫৭; মিশকাত হা/২৩৩৩)।

উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, বান্দা যদি একশ’ বার বা হাযার বার বা তার চেয়ে বেশীবারও পাপ করে আর প্রত্যেকবার তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ (নববী, শরহ মুসলিম হা/২৭৫৭, ১৭/৭৫; ফাৎহুল বারী ১৩/৪৭২)।

অতএব নিরাশ না হয়ে পুনরায় পাপ না করার দৃঢ় ইচ্ছার সাথে তওবা করতে হবে। সাথে সাথে সৎ ও নেককার মানুষদের সাথে উঠা-বসা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে ডাকে তাঁর দীদার লাভের কামনায় এবং তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়।”

~(কাহফ ১৮/২৮)।

চলবে… ইনশাআল্লাহ! ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।