তুমি আছো তাই পর্ব-০২

0
332

#তুমি_আছো_তাই
#পর্ব_০২
#লেখিকা_তাসনিম

“এতো দেরি হলো কেন,কয়টা বাজে”

“বাবা,উনি আসতে একটু দেরি করেছিলেন”

“বিয়ের আগে আর দেখা করার কোনো দরকার নেই, বাসায় থাকবে,এখন এতো ভার্সিটিও যাওয়ার প্রয়োজন নেই”

“কিন্তু কয়েকদিন পর তো আমার ফাইনাল পরীক্ষা, এখন না গেলে”

“বাসায় বসে পড়বে,তুমি স্কুলে পড়ো না যে না গেলে পড়া জানতে পারবে না,পরীক্ষার সময় গিয়ে দিয়ে আসবে শুধু, আমার কথা যেন মাথায় থাকে,রুমে যাও”

অনু নিজের রুমে চলে।অনুর বাবা(আফজাল সাহেব)ড্রইয়িংরুমে বসে ছিলেন,অনুর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন বোধ হয়।অনু রুমে এসে বিছানায় বসে পড়লো।আর ভাবতে লাগলো,জীবনে কখনো বাবার ভয়ে প্রেম করলাম না,ভাবলাম বাবা মা যার সাথে বিয়ে দিবে, তাকেই বিয়ে করবো তারপর তার সাথে প্রেম করবো,কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস যাকে বাবা মা ঠিক করলো সে নাকি বিয়েতেই রাজি নই,আবার বিয়ে ভাঙার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে, আমি যদি এ কথা বাবাকে বলি বাবা যে আমাকে কি করবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।এমন সময় অনুর মা রুমে আসলো।

“কিরে বসে আছিস কেন,জামা কাপড় বদলে নে,খেতে দিচ্ছি”

“মা,শুনো”

“হুমম বল না”

“নাহ মানে আমি যদি বাবার কোনো ডিসিশন না মেনে নেয়,তাহলে কি বাবা বেশি রাগ করবে”

“কি বলতে চাইছিস তুই,তোর বাবা কেমন তুই জানিস তার মুখের উপর কেউ কথা বললে সে সেটা পছন্দ করে না,আর ডিসিশন না মানলে সে তো কিয়ামত লাগাই দিবে”

“হুমমম তা তো জানি”

“তো জানলে তো হলোই,বাবা যা বলে তাই কর,উনি তো আমাদের সবার ভালোর জন্যই সব করে তাই না”

“হুমমম”

“খেতে আয়,দেরি করিস না,আর একটা কথা কালকে আানিকা আর রায়হান আসবে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাসা একটু গুছিয়ে নিস”

“আপুই তো আসবে গুছানোর কি আছে”

“আরেহ জামাই আসবে না সাথে, পরিপাটি না করলে কি ভাববে জামাই”

“হা হা হা,জামাই আসবে”

“হ্যা কয়েকদিন পর যখন তোর জামাই আসবে তখনও সব পরিপাটি করে রাখবো এখন ওদের জন্য তুই করে দিস,যায় আমি এখন”

অনুর মা চলে গেল,অনুর আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমার জামাই আসবে,হাউ ফানি”

তারপর অনু জামা চেন্জ করে খেতে গেল।খাওয়ার সময় ও আফজাল সাহেব অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলেন অনুকে এটা না করতে ওটা না করতে।অনু শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

শাকিল বাসায় আসতেই ওর বাবা মা ওকে আটকালো,ওকে ঘিরে দুজনে বসলো।

“কেমন লাগলো বাবা,মেয়ে টা কিন্তু মাশাল্লাহ”

“হ্যা বাবা,তোর মনে যত কথা ছিল সব বলেছিস তো”

“হুমম বলেছি”

“কেমন লেগেছে সেটা তো বললি না”

“দেখিনি ভালো করে”

“কিহহ,তো এতোক্ষণ কি করলি”

“উমম নাহ মানে ভালোই মেয়ে ভালো”

“তোর মন মতো হয়েছে তো,আমরা বলেছিলামনা আমাদের ছেলের জন্য আমরা বেস্ট বউ নিয়ে আসবো,বাবা তোর কোনো আপত্তি নেই তো”

“সিরিয়াসলি আমাকে জিজ্ঞেস করছো,এঙ্গেজমেন্টের পর আমার আপত্তি আছে কিনা জিজ্ঞেস করছো তোমরা,এখন যদি আমি বলি না আমি এ বিয়ে করবো না,তাহলে কি বিয়ে ভেঙে দিবে”

“বাবা এমন কথা বলছিস কেন”

“তোমরা জানো আমি এ দেশে থাকতে চাই না,এখানে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না, তাও আমাকে জোর করছো”

“শাকিল,তুমি যদি ইউএসএ চলে যাও তাহলে আমার বিজনেস কে দেখবে,আমার তো বয়স হচ্ছে আমি একা কতদিক দেখবো,তোমার কি কোনো রেসপন্সিবিলিটি নেই আমাদের প্রতি”

“থাকবে না কেন অবশ্যই আছে,আমি কি ওখানে গিয়ো তোমাদের ভুলে যাবো নাকি,তোমাদের যা প্রয়োজন হয়,আমি সব দিবো”

“আমাদের তোমাকে প্রয়োজন,তুমি আমাদের সাথে থাকবে,এটাই লাস্ট কথা, আমার বিজনেস দেখবে অনুকে বিয়ে করবে, আর যদি তুমি এমন না করো তবে আমি অন্য ব্যবস্থা নিবো”

“মানেহহ কি করবে তুমি”

“সেটা সময়ই বলে দিবে”

“তুমি এভাবে ওর সাথে কথা বলো না,বাবা তুই আমাদের কথা রাখবি না,আমি তো তোর মা তোর কি আমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে না বাবা”

“আম্মু প্লিজ,কান্নাকাটি করো না আমি চলে যায়নি এখনো”

“তুই যাবি না আমাকে রেখে”

শাকিল আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলো।

পরেরদিন সকালে…….

অনুর মা রান্না করছিল,অনু ছিলো ঘুমে,তাই অনুর মা ওকে ডাকার জন্য ওর রুমে আসলো।

“এই অনু ওঠ,কালকে না বললাম আজকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার জন্য”

“আম্মু উঠছি তো”

“এখনই ওঠ,ওরা চলে আসবে তো”

“আনিকার মা”

“ওই যে তোর বাবা এদিকে আসার উঠে পড়,হ্যা আসছি দাড়ান”

অনুর মা চলে গেলে,অনু শোয়া থেকে উঠে বসলো।অনুর মা অনুর বাবার কাছে গিয়ে বললো,

“আপনি যদি রাগ না করতেন তাহলে একটা কথা বলতাম”

“হ্যা বলো”

“আজকে তো আানিকা আর বড় জামাই আসবে,শাকিল বাবা কেও যদি আসতে বলতেন,ওরা ছোটরা মিলে একটু আড্ডা দিতো,অনুরও ভালো লাগতো”

“বিয়ের আগে এতো মেলামেশার কি আছে,তোমার আমার বিয়ের দিন রাতে আমি তোমাকে দেখেছিলাম প্রথম”

“আপনি আমি বিয়ে করেছি ১৯৯০ সালে,আমাদের সাথে কি ওদের কোনো মিল আছে,এখন তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, দেখা হলে কথা হলে ওদের ভালো লাগবে”

“আচ্ছা, আমি শাহেদ কে বলছি”

“ঠিক আছে”

“ওদের খাতির যত্নের যেন কমতি না হয়”

“আরেহ না আপনি চিন্তা করবেন না,আমি সব দেখে নিবো”

“হুমমম”

আফজাল সাহেব,শাকিলের বাবা(শাহেদ রহমান) কে কল দিয়ে শাকিলকে আসতে বললো।শাকিল প্রথমে আসতে রাজি না হলেও পরে বিকালে আসতে রাজি হলো।

দুপুর নাগাদ আনিকা আর রায়হান চলে আসলো,খাওয়া দাওয়া করে আনিকা অনুর সাথে কথা বলতে গেল।

“কিরে জামাই কেমন”

“আর জামাই,আফজাল সাহেব বলে দিয়েছে বিয়ের আগে যেন দেখা না করি”

“আহারে,তা কাল যে দেখা করতে গেলি কি বললো”

“কি বললো,তোর মতো কপাল না রে আপু সবাই জানবে এরেন্জ কিন্তু আসলে যে কি”

“এই আস্তে কথা বল,দেয়ালেরও কান থাকে,তোর তো পছন্দ নেই আর না হয় তোকে কি অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতাম,যায় হোক ছেলে টা ভালো,দেখতে শুনতেও সুন্দর, ইউএসএ থেকে পড়ে এসেছে”

“হুমম সেটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে”

“কি হয়েছে”

“কিছু না”

“বিকেলে যাবি কোথাও”

“নাহ বাবা না করেছে কোথাও যেতে”

“ওও আল্লাহ,আচ্ছা বস তুই আমি একটু তোর দুলাভাই কে দেখে আসি”

অনু ফোন টিপতে লাগলো,কিছুক্ষণ পর আনিকা এসে নতুন জামা দিয়ে বললো,রেডি হতে,অনু কিছু বলার আগেই মার ডাক শুনে আনিকা চলে গেল, অনুকে রেডি হতে বললো।অনু ভাবলো হয়তো ঘুরতে যাবে,তাই রেডি হয়ে নিল। রেডি হয়ে অনু ছাদে গিয়ে ছবি তুললো,তারপর বাসায় আসার সময় সিঁড়িতে দেখলো একটা ব্ল্যাক শার্ট পড়া ছেলে উপরে আসছে আর ফোনে কথা বলছে, কাছে আসতেই বুঝতে পারল এটা শাকিল।অনুকে দেখে শাকিলও কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইল, অনু বললো

“আপপনি এখানে কেন”

“আসতে বলা হয়েছে আমাকে”

“কে আসতে বলেছে”

“আপনার বাবা”

“কিহহ,আসলে”

“আরেহহহ নতুন জামাই চলে এসেছে, আসো আসো ভিতরে আসো,অনু জামাই তো তোরই বাইরে দাঁড়িয়েই কথা বলতে হবে ভিতরে আসতে বলবি না”

“আসলে আপু..”

“তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন শাকিল আসো”

“জ্বি আপু,আসছি”

শাকিল ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলো।অনু ওর রুমে চলে গেল।

#চলবে

(ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)