#তুমি_আছো_তাই
#পর্ব_০৭
#লেখিকা_তাসনিম
“কি খবর এক সপ্তাহ তো হয়ে গেল,তোমার হাতে একমাস সময় আছে মনে আছে তো”
“হুমমম মনে আছে,তুমি ভেবো না, আর কয়েকদিন”
“মনে থাকলেই ভালো,শাকিলের মা শুনো একটু”
“হ্যাঁ বলো”
“অনু কে যে রিং টা আমরা দিয়েছিলাম ওটা তো আফজাল ফেরত দিয়ে দিয়েছে, শাকিলের রিং টাও তুমি ফেরত দিয়ে আসো”
“কেন,আব্বু আমার রিং কেন দিব,আমি অনুকে বিয়ে করবো,অনুকে আবার রিং পড়াবো”
“সেটা যখন পড়াবে তখন দেখা যাবে,তোমার তো সেদিনই ফেরত দিয়ে আসার দরকার ছিলো”
“তুমিও চলো আমার সাথে”
“নাহহ,আফজালের মুখোমুখি আমি হতে পারবো না,সে মুখ রাখেনি তোমার ছেলে”
“আচ্ছা তাহলে আমিই যাবো”
“আম্মু আমিও যাবো তোমার সাথে”
“উহমম একদম না”
“কেন তুমি আমাকে যেতে দিচ্ছো না”
“তোমার ছেলেকে তুমি বোঝাও আমি যাচ্ছি”
“আম্মুউউ”
“শোন বাবা,আমি যাই অনুকেও বোঝাবো, আফজাল ভাইকে ও বোঝাবো,তুই চিন্তা করিস না,এখন রিং টা দে”
“ওকে,সাবধানে যেও,আমি একটু আহাদের সাথে দেখা করে আসি”
“আচ্ছা যা”
শাকিলের মা রেডি হয়ে অনুর বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো।অনুদের বাসায় এসে উনি অনুর মার সাথে কথা বলছিলেন, অনু রুম থেকে বেরিয়ে এলো,তাকে দেখে সালাম দিলেন,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি, কেমন আছেন?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,আলহামদুলিল্লাহ মা, তুমি কেমন আছো”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ”
“আপা,ভাই বাসায় নেই”
“একটু বাইরে গেছে,ওনার সাথে দরকার ছিল”
“হ্যাঁ একটু কথা বলতাম আর কি,আমাদের ছেলে টা একটা ভুল করে ফেলেছে এখন আমরা যদি বড়রা ওকে ক্ষমা না করি,তাহলে ও কিভাবে নিজেকে সুধরে নিবে বলেন”
“আমিও তো আপনার ভাইকে এই কথাটাই বোঝাতে চাচ্ছি,কিন্তু উনি কি আর আমাদের কথা শোনে,ছেলেমেয়ে দুটোর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে অনেকে শুনেছে এখন যদি বিয়ে টা না হয় তাহলে তো দুই পরিবারেরই দুর্নাম”
“হ্যাঁ,সেটাই তো,তাই একটু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে চাইছিলাম”
“শাহেদ ভাইকেও নিয়ে আসতেন তাহলে আরো ভালো হতো”
“ও তো লজ্জায় আসতে চাইলো না,আচ্ছা অনু মা তোমারও কি শাকিলকে বিয়ে করতে আপত্তি আছে,ওকে কি একটা সুযোগ দিবে না”
“আন্টি আমি কি বলবো,বাবা যা বলে তাই হবে,আমার কিছু বলার নেই”
“এত লক্ষী একটা মেয়ে কে আমরা কি করে হাত ছাড়া করি বলুন তো আপা”
“ওই তো অনুর বাবা চলে এসেছে,অনু রুমে যাও তুমি”
অনু রুমে চলে গেল, আফজাল সোফায় এসে বসলেন,
“আসসালামু আলাইকুম ভাই”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম”
“ভাই সেদিনের ঘটনার পর আজ আবার আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি, এতে আমরা অত্যন্ত লজ্জিত, ভাই আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি আপনার মেয়েটাকে আমাদের বাসার মেয়ে করে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি টা দিন”
“দেখেন আপা,এভাবে বলে আমাকে লজ্জা দিবেন না,আপনারা আমরা অনেক পুরোনো বন্ধু, শাহেদ আমার অনেক ভালো বন্ধু, ও আমার কাছে সব খুলে বললেও পারতো,কিন্তু ও জোর করে বিয়ে টা দিয়ে দিতে চাইছিলো,যেটা কারো জন্যই ভালো ছিল না,সেদিন শাকিলও এসেছিল জানেনই হয়তো,ওর সাথে বলতে গেলে আমি অনেকটা রূঢ় ব্যবহারই করেছি,তার জন্য আমি দুঃখিত”
“কি বলছেন ভাই,ও তো আপনারও ছেলে আপনি ওকে শাসন করবেন,আদর করবেন”
“আমি ওদের বিয়ে টা নিয়ে ভেবেছি অনেক কিন্তু আমার মনে হয় এখন যদি আমি মত দিয়ে দেয় তবে শাকিল যে সবাইকে ছেড়ে শুধু নিজের কথা ভেবে চলে যেতে চেয়েছিল সেটা ও ভুলে যাবে,ও ওর লাইফ ডিসিশন নিতে চেয়েছিল এটা ঠিক আছে কিন্তু ও শুধু ওর নিজের কথা ভেবেছিল,আর তার থেকেও বড় কথা ও ওর সিদ্ধান্তে ও অটুট থাকতে পারেনি,ওর যে আবার ইউএসএ যাওয়ার ইচ্ছা হবে নাহ সেটা আপনি বা আমি কেউই বলতে পারবো না,ওর আবার ইউএসএ যাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে ওকে আটকানো তখন আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না”
“ভাই তাহলে আপনি ফিরিয়ে দিচ্ছেন আমাদের”
“নাহহ ফিরিয়ে দিচ্ছি না তবে কথা টা যেন শুধু আমাদের মধ্যেই থাকে, অনুর পরীক্ষা শেষ হলে ওদের বিয়ে হবে,ততদিনে শাকিলকে বলুন আপনাদের বিজনেস জয়েন করতে,বর্তমানে তো ও বেকার তাই না”
“আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো,কিন্তু ভাই কথা টা যদি ছেলেমেয়ে দুজনকে জানাতাম তাহলে তো ওরা খুশি হতো”
“খুশি হওয়ার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে আপা”
“হ্যাঁ আপা,অনুর বাবা ঠিকই বলছে”
“ঠিক আছে তাহলে আজ উঠি,আপনাদের অনেক ধন্যবাদ”
“ধন্যবাদ দিয়ে আমাদের ছোট করবেন না”
শাকিলের মা খুশি মনে নিজের বাসায় চলে এলেন,বাসায় এসে এমন ভাব নিলেন যেন কোনো কিছু হয়নি,মা কে দেখে শাকিল কিছু টা চিন্তায় পড়ে গেল।রাতে শাকিলের মা শাকিলের বাবা কে সব বললেন,উনিও শুনে খুশি হলেন,খাবার টেবিলে বসে শাহেদ সাহেব বললেন
“এবার তুমি আমার বিজনেস জয়েন করো,আফজাল কে খুশি করতে হলে তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতেও হবে”
“আমি বিজনেসই দেখবো না আংকেল কেই মানাবো”
“ধরো যদি তুমি বিজনেসে লাভ করতে পারো আংকেল এমনি মেনে গেল,আর একজন সফল ব্যক্তি একসাথে সব করতে পারে,তুমিও পারবে যদি চাও”
“আরো কিছু করতে হলে বলে আমাকে”
“বাবা,খাবার টা তো শেষ করে যা”
শাকিল নিজের রুমে চলে গেল, পরেরদিন থেকে সে তার বাবার অফিসে গেল,কাজকর্ম দেখাশোনা করতে লাগলো।
পনেরো দিন পর………
অনুর শেষ পরীক্ষা আজকে,তার জন্য সে অনেক খুশি,ভার্সিটি থেকে এসে ঘুম যে দিয়েছে একটা পরেরদিন সকালে সে ঘুম থেকে উঠলো।তার মা এসে বললো নাস্তা করে রেডি হয়ে নিতে এক জায়গায় যাবে তারা,যেহেতু শুক্রবার ছিল তাই নামাজের আগেই যাবে ওর বাবা ওখানে গিয়ে নামাজ পড়বে,কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করলে অনু, রেহানা বেগম কোনো উত্তর দেয় না,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে বলে।
অনু নাস্তা করে,নিজের রুমে এসে বসে ছিল কিছুক্ষণ তারপর মার তাড়াহুড়োয় রেডি হয়ে নিলো।অনু আর অনুর মা পিছনের সিটে বসলো আর আফজাল সাহেব সামনের সিটে ড্রাইভারের সাথে বসলো।গন্তব্যে আসার পর ওরা গাড়ি থেকে নেমে গেল।আফজাল সাহেব বাসার ভিতরে প্রবেশ করলেন।অনুও ওর বাবার সাথে গেল।শাকিলের বাবা মা কে দেখে তো অনু বোকা হয়ে গেল মানে ওরা শাকিলদের বাসায় এসেছে, কিন্তু কেন??ওরা সোফায় বসলো,গল্পগুজব করতে লাগলো,অনু এদিকওদিক তাকাচ্ছিল কিন্তু শাকিলকে খুঁজে পাচ্ছিল না।আফজাল সাহেব আর শাহেদ বাসার বাইরে গেলে,শাকিলের মা এসে অনুর পাশে বসে বললো,
“শাকিল রুমে আছে তোমরা আসবে জানে না তো,যাও দেখে আসো রেডি হয়েছে কিনা নামাজে যাবে তো”
অনু আস্তে আস্তে উঠে শাকিলের রুমের দিকে গেল, ওর রুমের কাছে গিয়ে যেন অনুর বুকের ভেতর ধুপধাপ করা শুরু করলো। ও দরজায় নক করলো।
“খোলায় আছে আম্মু,ভিতরে আসো”
অনু ভিতরে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।কোনো শব্দ না পেয়ে শাকিল বললো,
“কি হয়েছে চুপ করে…..”
অনু কে দেখে ওর মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেল, এ চেহারা টা কতদিন পর দেখলো,আসলেও দেখলো নাকি স্বপ্ন এটা,কারো মুখে কোনো কথা নেই দুজনে দুজনের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে
(ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)