তুমি আমারই পর্ব-০১

0
5722

#তুমি_আমারই
#Sumaia_Jahan
#পর্ব_১

বান্ধবীর বিয়েতে এসে নিজেরই বিয়ে হয়ে যাবে কখনো ভাবিনি। সবাই বান্ধবীর বিয়েতে কতো মজা করে আনন্দ করে আর আমি বান্ধবীর বিয়েতে নিজেই বউ সেজে ঘোমটা টেনে বসে আছি।আমি আসপিয়া অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। বাবা-মার একমাত্র মেয়ে। আজ আমার বান্ধবী দিয়ার বিয়ে ছিলো ও এই বিয়েতে রাজি ছিলো না। কারণ দিয়া একজনকে ভালোবাসাতো। দিয়া ওর বাবাকেও বলেছে ও একজনকে ভালোবাসে এ বিয়েতে ও রাজি না।কিন্তু ওর বাবা এক কথার মানুষ যখন একবার বলেছেন এ বিয়ে দিবেন তো দিবেনই।তারপর ও ওর হবু বরকেও বলেছে এ বিয়ে ওর পক্ষে করা সম্ভব না ও একজনকে ভালোবাসে।কিন্তু কে শুনে কার কথা সেই ছেলে ওকে বলে দিয়েছে, এ বিয়ে যখন একবার বলেছে করবে তো করবেই।
সোজা কথায় যখন বিয়ে ভাঙলো না তাই দিয়া ঠিক করলো ও পালাবে।ওর প্লানের সঙ্গে আমিও ছিলাম।তাই আজ সকাল সকাল ওর বাড়ি চলে এসেছি। সকাল থেকে সুযোগ খুঁজছি ওকে নিয়ে পালানোর কিন্তু সুযোগই পাচ্ছি না।সেই সকাল পার্লারের মেয়েরা দিয়াকে সজাচ্ছে তো সাজাচ্ছেই।তিন ঘন্টা যাবত এই সাজানোর কাজই চলছে আর আমি ঘরের এক কোনা থেকে আরেক কোনায় পায়চারি করে চলেছি।অবশেষে সাজানোর কাজ শেষ হয়েছে।পার্লারের মেয়েরা দিয়াকে সাজানো কমপ্লিট করে বাইরে মাত্র বেরিয়েছে।এতোক্ষণে আমি আর দিয়া হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। দিয়ার রুমটা ছিলো দোতালায় রুমে একটা বেলকনিও ছিলো। তাই আমাদের প্লান মাফিক একটা শাড়ি বেলকনিতে বেধে নিচে ফেলে দিলাম।দিয়া প্রথমে শাড়ি বেয়ে গেছে। ওকে আগেই বলে রেখেছি নিচে নামার পর কোনো দিকে না তাকিয়ে যেন সোজা পালিয়ে যায়। তাই ও নামার সাথে সাথে পালিয়ে গেছে। এবার আমার পালানোর পালা।যেই আমি শাড়ি বেয়ে নিচে নামবো ঠিক তখনি কেউ একজন আমার হাত ধরে ফেলে।আমি পিছন থেকে ঘুরে সামনে তাকিয়ে দেখি দিয়ার যার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিলো সে মানে রোদ্দুর ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমি রোদ্দুর ভাইয়াকে দেখে তো ভুত দেখার মতো চমকে যাই।নিজেকে সামলিয়ে ঠোটে জোরপূর্বক হাসি রোদ্দুর ভাইয়াকে বলি,

— এমা দুলাভাই দেখি বিয়ের আগে বউ দেখার জন্য চলে এসেছে।

রোদ্দুর ভাইয়া মুখে একটু চিন্তার ভাব এনে বললো,

— তা আর হতে দিলে কি করে বিয়ের আগেই তো বউকে ভাগিয়ে দিয়েছো!

তারমানে উনি সবই জানেন। এবার আমার কপালে শনি নাচছে। শুনেছি ওনি নাকি খুব জেদি যেটা বলেন সেটাই করে ছাড়েন। তাই বনিতা না করে সোজাসুজি বললাম,

— এমনটা তো হওয়ারই কথা। আপনাকে তো দিয়া আগেই বলেছিলো ও একজনকে ভালোবাসে ও এ বিয়ে করতে চায় না।আপনিই তো ওকে জোর করে বিয়েটা করার জন্য। এখন ওর পালানোটা কি স্বাভাবিক না!

রোদ্দুর ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

— এই রোদ্দুর খান যখন একবার বলেছে আজ এই বিয়ে করবে তো করবেই।

আমি তো পুরো অবাক এ ছেলে বলেকি।বউ পালিয়ে যাওয়ার পর বলে বিয়ে হবেই হবে।আমি অবাক হয়ে বললাম,

— মানে???

রোদ্দুর ভাইয়া একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

— আমি বলেছি আমি এ বিয়ে করবোই করবো।কিন্তু আমি একবারও বলিনি দিয়াকেই বিয়েটা করবো।দিয়া পালিয়েছে তো কি হয়েছে দিয়ার বান্ধবী আছে না তাতেই চলবে।আমার শুধু বিয়েটা হলেই চলবে।

কথাটা বলে রোদ্দুর ভাইয়া একটা চোখটিপ দিয়ে বাইরে চলে যায়। যাওয়ার আগে রুমের দরজাটাও লক করে যায়।ঘটনাটা এতো দ্রুত যে আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। বোকার মতো শুধু তাকিয়ে ছিলাম।যতোক্ষনে ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম ততক্ষণে রোদ্দুর ভাইয়া দরজা লক কর চলে গেছেন। আমি তারাতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে দরজা অনেক বার ধাক্কালাম রোদ্দুর ভাইয়ার নাম ধরেও ডাকলাম কিন্তু কেউ কোনো সারা দিলো না।আমার এবার খুব ভয় করতেছে। সত্যি সত্যি যদি এইলোকটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। না না আমি এসব কি ভাবছি।আমাকে এখন যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে।
আরে আমিতো ভুলেই গেছি বেলকনির কথা।যতো তারাতাড়ি হোক এখান থেকে পালাতে হবে।এখানে থাকলেই বিপদ। তাই তারাতাড়ি বেলকনির কাছে আসি।বেলকনির কাছে এসে দেখি নিচে বেলকনি বরাবর পাঁচ ছয় জন গার্ড পাহারা দিচ্ছে। আমি নিশ্চিত এটা রোদ্দুর ভাইয়ার কাজ।যাতে আমি না পালাতে পারি।আমার পালানোর সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি এখন কি করবো?আর যাই করি না কেন আমি ওই রোদ্দুর নামক মানুষটাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।আমার ভাবনার মাঝে রোদ্দুর ভাইয়া রুমে ঢুকলো সঙ্গে কয়েকজন মেয়েকেও নিয়ে এসেছে। তাদের হাতে শাড়ি গয়না আর মেকাপের সরঞ্জাম। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমাকে সাজানোর জন্য এসেছে। রোদ্দুর ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,

— লাভ নেই এখান থেকে কোথাও পালাতে পরবে না। এ বাড়ি থেকে বের হতে হলে আমার বউ হয়েই বের হতে হবে।

— কি ভেবেছেন আমি পালাতে না পারলে আপনাকে বিয়ে করে নিবো!কখনোই না আমি কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করবো না।

কথা গুলো একটু জোরেই বললাম।আমার কথার জবাব না দিয়ে মেয়ে গুলোকে ইশারা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে আমার কাছে এসে রোদ্দুর ভাইয়া বললো,

— তুমি চাও না দিয়া ওর ভালোবাসার মানুষটা কে বিয়ে করুক?

— অবশ্যই চাই! তাই তো ওকে এতো কষ্ট করে পালাতে সাহায্য করলাম।কিন্তু এটা কেনো জিজ্ঞেস করছেন।

ভ্রু কুঁচকে কথাটা বললাম। তারপর রোদ্দুর ভাইয়া মখে চিন্তার ভাব এনে বললো,

— আমার মনে হয় তুমি চাওই না ওদের বিয়েটা হোক।

— কি বলছেন এসব আমি কেনো চাইবো না ওদের বিয়েটা হোক।

— তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছো না কেনো?

— ওদের বিয়ের সঙ্গে আমার আপনাকে বিয়ে না কারার সম্পর্ক কি?

— সম্পর্ক তো অবশ্যই আছে।কারন ওরা দুজন এখন আমার লোকেদের কাছে বন্ধী।তুমি যদি আমাকে এখন না বিয়ে করো তাহলে ওদের দুজন বিয়ে তো হবেই না বরং ওদের আমি এমন ব্যবস্থা করবো যা ওদের জন্য কিন্তু ভালো হবে না।তাই চুপচাপ বিয়ের জন্য তৈরি হয়েও।

ওনার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। আমি এখন কি করবো? শেষেে এই লোকটাকে আমায় বিয়ে করতে হবে।আমি একটু সন্দেহের শুরে বললাম,

— আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো সত্যি সত্যি ওরা আপনার কাছে আছে?

— একমিনিট দাঁড়াও….

কথাটা বলে পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও ওন করলো।ভিডিও ওন হতেই দেখি দিয়া আর রাজিবকে মানে দিয়া যার সাথে পালিয়ে গিয়ে ছিলো তাকে দেখা যাচ্ছে একটা রুমে চেয়ারে হাত পা বেঁধে রাখা হয়ে।এটুকু দেখিয়েই রোদ্দুর ভাইয়া ফোনটা অফ করে পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— এবার নিশ্চয় তোমার এ বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।

কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তারপর ওই মেয়ে গুলো এসে আমাকে বউ সাজিয়ে চলে গেলো। আমি এখন ঘোমটা টেনে বউ সেজে বসে আছি। আর আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবছি।দরজা খোলার শব্দে আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।দরজা খুলে দিয়ার মা ভেতরে এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— মন খারাপ করো না আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

কথাটা বলে আমাকে বিয়ের আসোরে নিয়ে যায়।বিয়ের আসরে আমার সাথে রোদ্দুর ভাইয়ার বিয়ের সব নিয়ম শেষে আমাকে যখন কাজী সাহেব কবুল বলতে বললেন তখন আমি কাঁপা কাঁপা গলায় তিনবার কবুল বলি।আমার কবুল বলার পর সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে।
আমি চোখের পানি ফেলেই যাচ্ছি। আমি বাপিকে কি জবাব দিবো।বাপিতো এসবের কিছুই জানে না।বাপি কি আমায় ভুল বুঝবে?

চলবে,,,,,