তুমি আমারই পর্ব-০২

0
4673

#তুমি_আমারই
#পর্ব_২
#Sumaia_Jahan

না আমাকে এখন শক্ত হতে হবে। বাপি আমাকে অনেক বিশ্বাস করে। সবকিছু শুনলে বাপি ঠিক বুঝতে পারবে আমি কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি যে দিয়াকে নিজের বোনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। দিয়ার কোনো ক্ষতি হোক তা আমি কল্পনাও করতে পারিনা। আমার একটা সিদ্ধান্ত যদি ওদের এতো বড়ো ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় তাহলে আমার কি এটা করা ঠিক নয়?আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কি এটা করতো না?
আমি বসে বসে চোখের পানি ফেলছি আর এগুলো ভাবছি। হঠাৎ রোদ্দুর ভাইয়া এসে আমাকে বললো,

— আশপিয়া তুমি রেডি তো?আমাদের কে বেরোতে হবে এক্ষুনি।

আমি শুধু প্রশ্নবোদক দৃষ্টিতে রোদ্দুর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম যার অর্থ হলো আমারা কোথায় যাবো?
রোদ্দুর ভাইয়া আমাকে কোনো উত্তর না দিয়ে আমার হাত ধরে দিয়ার রুম থেকে ডুয়িং রুমে নিয়ে এসে সবার মাঝে এনে সবার উদ্দেশ্যে বললো,

— এখন বিদায়ের পর্ব চলবে সবাই একসাথে কান্না করো।

রোদ্দুর ভাইয়ার কথা শুনে সবাই সত্যি সত্যি কান্না শুরু করে দিয়েছে। সেকি কান্না একজনের গায়ের উপর পরে আরেকজন কান্না করতেছে। মনে হচ্ছে যেন কোনো সিনেমায় শুটিং চলছে। সেই সিনেমার পরিচালোক রোদ্দুর ভাইয়া। এদের কান্ড দেখে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।আমি শুধু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি এদের দিকে।

কিছুক্ষন পরে রোদ্দুর ভাইয়া আবার সবার উদ্দেশ্যে বললো,

— সবাই এবার চুপ করো বিদায়ের পর্ব শেষ আমরা এখন বেরোবো।

রোদ্দুর ভাইয়া কথার সাথে সাথে সবাই চুপ হয়ে গেছে। এবার এদের কান্ড দেখে আমার সত্যি হাসি পাচ্ছে। এখন সবার সামনে হাসা যাবে না তাই খুব কষ্টে ঠোঁট কামরে হাসি আটকালাম।
আমরা বেরিয়ে আসার সময় দিয়ার মা আমার কাছে এসে আমাকে বললো,

— আশপিয়া মা এই বিয়েটা হয়তো তোমার ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে।বিয়টা যেভাবেই হোক না কেন রোদ্দুর কিন্তু এখন তোমার স্বামী। রোদ্দুর খুব ভালো একটা ছেলে। ওকে কখনো ভুল বুঝো না।

আমি ওনার কথা পরিবর্তে একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে সম্মতি জানালাম। তবে মুখে সম্মতি জানালেও মনে মনে একটুও সম্মতি জানায়নি।এ নাকি ভালো ছেলে।এ যে কি বজ্জাত ছেলে তা আমি হারে হারেই টের পেয়েছি।

তারপর আমি আর রোদ্দুর ভাইয়া গাড়িতে ওটে পরি।গাড়িটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে ডেকোরেটেট করা ছিলো।গাড়িতে শুধু আমি আর রোদ্দুর ভাইয়াই ছিলাম।ওনি ড্রাইভিং শিটে বসে ড্রাইব করছিলেন আর আমি তার পাশে বসে জানলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না দিয়া দের বাড়ি আজ এতো বড়ো একটা ঘটনা ঘটলো অথচ ওদের বাড়ির সবাই স্বাভাবিক ছিলো। যেন সব কিছু ঠিকই আছে। শুধু দিয়ার মা আমাকে কয়েকবার শান্তনা দিচ্ছিলো।একটুই শুধু আলাদা ছিলো এছাড়া বাকি সবই স্বাভাবিক ছিলো।

আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি এটাতো আমার রাস্তা। এদিকে কেন যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী তো এখন আমাদের রোদ্দুর ভাইয়ার বাড়িতে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমার বাড়ির দিকে কেন যাচ্ছে। তবে কি ওনার বাড়ি এ রাস্তা দিয়ে যেতে হয়?কিন্তু দিয়া আমায় বলেছিলো আমার বাড়ির ওলটো পথে অনার বাড়ি।তাই আমি ওনাকে প্রশ্ন করেই ফেললাম,

— এ দিকে কোথায় যাচ্ছেন এদিকে তো আপনার বাড়ির রাস্তা না এদিকে তো আমার বাড়ির রাস্তা?

ওনি আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমার তো ভিষণ রাগ হচ্ছে। এবার আমি একটু জোরে বললাম,

— কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন? এখন আমরা আপনার বাড়ি যাবো না?এখন কোথায় যাচ্ছি আমরা?

গাড়ি চালাতে চালাতে আমাকে উত্তর দিলেন,

— তোমার দেখি শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার খুব তাড়া!

এবার আমার মেজাজ টা হাই লেবেলে পৌঁছে গেছে।আমি প্রস্তুত হলাম একটা ঝাঁঝালো উত্তর দেওয়ার।যেই আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তক্ষুনি ওনি গাড়িতে ব্রেক মারলেন। তাকিয়ে দেখি আমার বাড়ির গেইটের সামনে এসে দাড়িয়েছে গাড়িটা।তাই আমি আর কিছু বললাম না পরে সুযোগ পেলে ঠিক শুধে আসলে তুলে নিবো।
এখন আমার খুব ভয় করছে।বাপি আমাকে দেখে যদি রেগে যায়।
আমি খুব ভয়ে ভয়ে গেইট খুলে দরজার কাছে এসে দাড়ালাম।দরজার বেল দিকে হাত বারিয়েও হাত ঘুটিয়ে নিচ্ছি। খুব ভয় করছে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।
আমার এমন অবস্থা দেখে রোদ্দুর ভাইয়া নিজেই বেল বাজালেন। দুইবার বাজাতেই মা এসে দরজা খুলে দিলো।মা আমাকে দেখে একটা হাসি দিলেন তারপর আমার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে তারপর আমার পাশে থাকা রোদ্দুর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালো।আমি একটা জোরপুর্বক একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
এতোক্ষণে বাপিও চলে আসে রুম থেকে এসেই আমার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে ফেলে। তারপর আমার কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে,

— আশপিয়া তোমার সাথে ছেলেটা কে?

আমি কিছু বলার আগেই রোদ্দুর ভাইয়া বলে ওঠলেন,

— আরে শ্বশুর মশাই আমাকে চিনতে পারছেন না আমি আপনার একমাত্র জামাই।

বাপি রেগে বলে,

— জামাই মানে? আশপিয়া এই ছেলেটা এসব কি বলছে? তুমি তোমার বান্ধবীর বিয়েতে গেছিলে না তাহলে এসব কি?

আমি বাপিকে বললাম,

— বাপি তুমি একটু শান্ত হও আমি তোমায় সব বলছি।

তারপর আমি বাপিকে সব কিছু ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলি।বাপি সব শুনে রোদ্দুর ভাইয়া দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,

— তোমার সাহস তো কম না আামার মেয়েকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করেছো?

রোদ্দুর ভাইয়া শান্ত ভাবে বললো,

— শ্বশুর মশাই আপনি নতুন জামাই এর সাথে এভাবে কথা বলতে পারেন না।কোথায় আমাকে জামাই আদর করবেন তা না আপনি আমার সাথে কেমন রেগে রেগে কথা বলছেন।

রোদ্দুর ভাইয়ার এমন কথা শুনে বাপিতো আরো রেগে যায়।রোদ্দুর ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— বউ বাপের বাড়ির সাথে তো দেখা করা হয়ে গেছে এবার চলো শ্বশুর বাড়ি। নতুন বউ শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে এতক্ষণ বাইরে থাকতে নেই। লোকে তো মন্দ বলবে।

কথাটা বলেই

চলবে,,,,,,